সত্যজিৎ রায়

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

সত্যজিৎ রায় জীবনী, সত্যজিৎ রায়ের জীবনী, স্পটলাইট সত্যজিৎ রায়, সত্যজিৎ রায় প্রবন্ধ রচনা Class 12, সত্যজিৎ রায় রচনা

সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন, সত্যজিৎ রায় এর জন্মদিন

এই মহান ব্যক্তির জন্ম হয় ২রা মে ১৯২১ সালে, কোলকাতা শহরে | তার পিতা ছিলেন সুকুমার রায় এবং মা ছিলেন সুপ্রভা রায় ।সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন বিখ্যাত লেখক ও চিত্রকর।ভারত সেই সময় ব্রিটিশ শাসনত্বের অধীনে ছিল । তাঁর বয়স যখন মাত্র তিন বছর, তখন তাঁর বাবা সুকুমার রায় মারা যান, তখন তাঁকে সুপ্রভা দেবী অনেক কষ্টে বড় করেন।

সত্যজিৎ রায়ের জন্ম ও বংশ পরিচয়

তার পিতা বাংলা শিশু সাহিত্যে খেয়ালরসের স্রষ্টা সুকুমার রায় , মাতা সুপ্রভাদেবী ।

এই বংশেরই উপেন্দ্রকিশাের রায়চৌধুরী ছিলেন শিশু সাহিত্যিক , সংগীত , চিত্রশিল্পী ও যন্ত্রকুশলী । সত্যজিৎ ছিলেন তারই পৌত্র ।

কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের মতই মসুয়ার রায়চৌধুরী পরিবারও বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ অবদানের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছে ।

সত্যজিৎ রায়ের শৈশব, সত্যজিৎ রায়ের ছেলেবেলা

তার যখন আড়াই বছর বয়স তখন তিনি পিতৃহারা হন , মাতা সুপ্রভাদেবীর সঙ্গে সত্যজিৎ ছয় বছর বয়স থেকে মামার বাড়িতে থাকেন । মায়ের কাছেই প্রাথমিক পড়াশুনা আরও । সংসারের প্রয়ােজনে সুপ্রভাদেবীকে একসময়ে বিদ্যাসাগর বানীভবন বিদ্যাশ্রমে সেলাইয়ের কাজও করতে হয়েছিল ।

সত্যজিৎ রায়ের শিক্ষা জীবন, সত্যজিৎ রায় শিক্ষা জীবন

তাঁর শিক্ষা জীবন কিন্তু শুরু হয় ১৯২৯ সাল থেকে এবং তখন তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ৮ বছর ।

দশ বছর বয়সে বালিগঞ্জ হাইস্কুলে ফিথ ক্লাসে অর্থাৎ এখনকার মতে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হন । এখান থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করার পর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স নিয়ে বি . এ পাশ করেন ১৯৩৮ খ্রিঃ ।

বাবা এবং ঠাকুরদার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রেই শিল্প সাহিত্যের প্রতিভা লাভ করেছিলেন সত্যজিৎ । স্কুলে থাকতে বাড়ির সংগ্রহের রেকর্ড শুনে পাশ্চাত্য সঙ্গীতে দীক্ষিত হয়ে যান । ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান হিসেবে এর পাশাপাশি ব্রহ্মসঙ্গীত , রবীন্দ্রসঙ্গীত ও ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের প্রতিও অনুরাগ জন্মেছিল ।

চিত্রশিল্পের চর্চা বাল্যবয়স থেকেই ছিল । বি . এ পাশ করার পর শিল্প শিক্ষার জন্য ভর্তি হন রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে । কিন্তু আধুনিকমনা সত্যজিতের পক্ষে এখানকার পরিবেশ মনঃপুত না হওয়ায় শিক্ষা অসমাপ্ত রেখেই কলকাতায় চলে আসেন ।

সত্যজিৎ রায়ের কর্মজীবন

১৯৪৩ সালে তিনি শান্তিনিকেতন ছেড়ে কলকাতায় ফিরে আসেন এবং সেখানে ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি জে কিমারে মাত্র ৮০ টাকা বেতনের বিনিময়ে “জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার” হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। এই ভাবে কাজ করতে করতে তিনি ফিল্ম জগতে সর্ট হিসেবে কাজ পাইতেন | ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়ে যাওয়ার পরে তিনি নিজেই একটি ফিল্ম সোসাইটি তৈরি করেন “ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি” নামে । এরপর ১৯৪৯ সালে ফরাসি চলচ্চিত্রকার জঁ রেনোর তাঁর “দ্য রিভার” ছবি নির্মাণের জন্য কলকাতায় আসেন | তখন সত্যজিৎকেই তিনি তাঁর সিনেমার উপযোগী স্থান খোঁজার জন্য সহকারী হিসাবে খুঁজে নিয়েছিলেন | ১৯৪৯ সালেই সত্যজিৎ রায় তাঁর দূরসম্পর্কের, বহু দিনের বান্ধবী বিজয়া দাসকে বিয়ে করেন | বিজয়া দেবীই ছিলেন একমাত্র নারী যাঁকে সত্যজিৎ রায় নিজের প্রিয় বন্ধু ও তাঁর তৈরী সিনামার সবচেয়ে বড় সমালোচক বলে মনে করতেন | এরপর সত্যজিৎ রায় অবশেষে একদিন সিনেমা তৈরী করার সিদ্ধান্ত নেন |

ভারতে ফিরে এসে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তাঁর নতুন-সন্ধানের কাজ শুরু করেছিলেন। একদল অনভিজ্ঞ স্টাফ এবং অপেশাদার অভিনেতাদের পাশাপাশি তিনি ‘পথের পাঁচালী’ থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তিনি বছর ধরে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার পর সত্যজিৎ রায় অবশেষে ১৯৫৫ সালে ছবিটি রিলিজ করেন। সত্যজিৎ রায়ের “পথের পাঁচালী” একটি অসাধারণ ডেবিউ ছিলেন এবং সমালোচক এবং শ্রোতাদের মনে কাছে দুর্দান্তভাবে সাড়া ফেলে এবং প্রচুর প্রশংসা অর্জন করেন। দেশের বাইরেও এই ছবি বিশেষভাবে ইতিবাচক সাড়া পায়।

পথের পাঁচালি তার ক্যারিয়ার জীবনকে অনেকটাই সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং তার পরবর্তী ছবি ‘অপরাজিতা’ সংস্কৃত চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবে তাঁর অবস্থান দৃঢ় করে তোলে। এটি ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তাকে সোনার সিংহ অর্জন করার সুযোগ করে দেয়। এরপর তার কমেডি ফিল্ম ‘পরশ পাথর’ এবং জলসা ঘর’। এমন একটি ফিল্ম যা জমিদারদের সামাজিক অবক্ষয়কে চিত্রিত করে।

অপুর যে চরিত্রটি তিনি ‘পথের পাঁচালী’ তে প্রবর্তন করেছিলেন এবং অপরাজিতার মাধ্যমে এগিয়ে এসেছিলেন। অবশেষে ১৯৫৯ সালে তার মুক্তি প্রাপ্ত ছবি ‘অপুর সংসার’। এই ছবিটি চূড়ান্ত সাফল্যে পেয়েছিল এবং মুভিটি সর্বোচ্চ শীর্ষে স্থান পেয়েছে। এটি পর্যন্ত প্রদর্শিত ক্লাসিক চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে।

তিনি কেবল পরিচালক এবং স্ক্রিপ্ট-লেখক হিসাবেই নয় বরং ক্যামেরাম্যান এবং সংগীত স্কোরার হিসাবেও কাজ করেছেন। তিনি তার ছবিতে নতুন এবং বিভিন্ন থিম তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। ১৯৬১ সালে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি বাচ্চাদের ম্যাগাজিন সন্দেশকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন।

তথ্যবহুল এবং বিষয়বস্তুতে মজাদার এই ম্যাগাজিনটি তাকে লেখার এবং চিত্রণে একটি ক্যারিয়ার শুরু করতে সহায়তা করেছিল। ১৯৬৪ সালে তিনি তাঁর সবচেয়ে দক্ষ ও স্বীকৃত চলচ্চিত্র ‘চারুলতা’ নিয়ে এসেছিলেন। তার ক্যারিয়ারে এটি ম্যাগনাম ওপাস ফিল্ম হিসাবে চিহ্নিত, এটি সমালোচক এবং দর্শকদের দ্বারা ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।

১৯৬৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণের বিভিন্ন ধারায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন, কথাসাহিত্য, কল্পনা, গোয়েন্দা চলচ্চিত্র এবং ঐতিহাসিক নাটকগুলি করেছিলেন। এমনকি তিনি সমসাময়িক ভারতের ইস্যু তুলে ধরে অন স্ক্রিনে চিত্রিত করেছিলেন।

দ্য এলিয়েন’ চলচ্চিত্রের মার্কিন-ভারত সহ-প্রযোজনার ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি একটি সংগীত কল্পনা নিয়ে এসেছিলেন ‘গুপি জ্ঞান বাঘা বাইনে’। এটি আজ অবধি তার বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে সফল চলচ্চিত্র হয়ে উঠেছে। আজ অবধি মানুষ মনে এই ছবিটি জাগ্রত রয়েছে। চলচ্চিত্রের সাফল্য তাকে একই শিরোনামের একটি সিক্যুয়াল নিয়ে আসে হিরাক রাজার দেশ। যা ইন্দিরা গান্ধীর জরুরী সময়কালীন সময়ে কার্যকর হয়।

১৯৮৪ সালে তার শেষ ছবি ‘ঘরে বাইরে’ মুক্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল যা সত্যজিৎ রায়ের অসুস্থতায় আক্রান্ত হওয়ার আগে শেষ ছবি। উৎসাহী জাতীয়তাবাদের ঝুঁকি নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাসের উপর নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের কাজে প্রশংসা পেয়েছে।

চিকিত্সা সংক্রান্ত জটিলতা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলি সমাধান করার সঙ্গে সঙ্গে তার কেরিয়ারের গ্রাফটি হ্রাস পেয়েছে। জীবনের শেষ নয় বছরে তিনি কেবল তিনটি ছবি নিয়ে এসেছিলেন গণশত্রু, শাখা প্রশাখা, আগন্তুক এগুলি সবই তার আগের প্রযোজনার সাথে সামঞ্জস্য ছিল না।

তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’ একটি রেকর্ড ব্রেকিং ফিল্ম ছিল এবং একটি সংস্কৃত মর্যাদা পেয়েছিল। একটি আধা-আত্মজীবনমূলক সিনেমাটি এগারোটি আন্তর্জাতিক পুরষ্কার জিতেছে। ছবিটির সাফল্য এবং গ্র্যান্ড রিসেপশনের মাধ্যমে ‘অপরাজিতা’ এবং ‘অপুর সংসার’ মুক্তি পেয়েছিল। ১৯৬৪ সালে তার মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি চারুলতা’ তাঁর কেরিয়ারের সবচেয়ে সফল চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে। ছবিটি ব্যাপক সমালোচনামূলক স্বীকৃতি এবং দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছে। ছবিটি তাঁর কেরিয়ারের একটি ম্যাগনাম অপস হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।

সত্যজিৎ রায় পরিবার

১৯৪৯ সালে তার দীর্ঘকালীন প্রিয়তম বিজয়া দাশের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির একটি সন্দীপ রায় নামে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। যিনিও চলচ্চিত্র নির্মাণে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন।

সত্যজিৎ রায় মৃত্যু, জীবনাবসান

১৯৮৩ সালে তিনি প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়েছিলেন যা কেবল তার চিকিত্সা এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা আরও খারাপ করেছিল। ১৯৯২ সালে তিনি বড় হার্টের জটিলতায় ভুগছিলেন যা থেকে তিনি কখনই পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেননি। অবশেষে ১৯৯২ সালে ২৩ শে এপ্রিল তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।

সত্যজিৎ রায় পুরস্কার ও সম্মান

১৯৬৭ খ্রিঃ প্রফেসর শঙ্কু বছরের শ্রেষ্ঠ শিশুসাহিত্য গ্রন্থরূপে আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে । সাহিত্যিক হিসেবে এছাড়াও তিনি আরও সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন ।

চলচ্চিত্রকার হিসেবে সত্যজিৎ দেশের ও বিদেশের বহু পুরস্কার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডি . লিট উপাধি লাভ করেন । বিশ্বভারতীর দেশিকোত্তম সম্মান এবং ভারত সরকারের ভারতরত্ন উপাধিতে ভূষিত হন ।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট সােয়া মিতের কলকাতায় এসে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান লেজিয় দ’নর – এর স্বর্ণপদক প্রদান করেন । চলচ্চিত্র শিল্পের সর্বোচ্চ পুরস্কার অস্কার লাভ করেন ১৯৯২ খ্রিঃ ।

সত্যজিৎ রায়ের উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলি

  • ১৯৫৮ সাল: পদ্মশ্রী পুরস্কার
  • ১৯৫৯ সাল: সংগীত নাটক একাডেমী পুরস্কার
  • ১৯৬৫ সাল: পদ্ম ভূষণ পুরস্কার
  • ১৯৭১ সাল: স্টার অফ যুগোস্লাভিয়া পুরস্কার
  • ১৯৭৬ সাল: পদ্ম বিভূষণ পুরস্কার
  • বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দেশি দেশিকোত্তম পুরস্কার
  • ১৯৭৮ সাল: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডক্টর অফ লেটারস পুরস্কার
  • ১৯৮১ সাল: বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডক্টরেট ডিগ্রী পান
  • ১৯৮২ সাল: গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার, বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার
  • ১৯৮৫ সালে তিনি মর্যাদাপূর্ণ দাদাসাহেব ফালকে পুরষ্কার পেয়েছিলেন এবং দু’বছর পরে ফ্রান্সের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ পুরষ্কার, ‘ লেজিওঁ দনরে’ পেয়েছিলেন।
  • ১৯৮৭ সাল: দাদাভাই নওরোজী স্মৃতি পুরস্কার
  • ১৯৮৭ সাল: কমান্ডার অফ দ্য লিজিয়ন অফ অনার পুরস্কার
  • ১৯৯১ সাল: অস্কার পুরস্কার (পথের পাঁচালী সিনেমার জন্য)
  • ১৯৯২ সাল: আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার, ভারত সরকার তাকে সর্বোচ্চ সম্মান ‘ভারতরত্ন’ দিয়েছিল।
  • চার্লি চ্যাপলিন পরে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব যিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিলিট পেয়েছিলেন।
  • সত্যজিৎ রায়কে তার জীবনকালে, তাকে ৩২ টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার এবং গোল্ডেন লায়নের তো অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মান প্রদান করা হয়েছিল।
  • ১৯৯২ সালে তিনি মৃত্যুর ঠিক কয়েকদিন আগে একাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের দ্বারা সম্মানসূচক অস্কার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন।

সত্যজিৎ রায় যুক্ত ছিলেন, সত্যজিৎ রায় যুক্ত ছিলেন কোন ইতিহাসে

1950 সালের দিকে ফরাসি পরিচালক জন রেনোয়া ‘ দি রিভার ‘ সিনেমার শুটিং করতে কলকাতায় আসেন। সত্যজিৎ রায় সেই শুটিং এক বন্ধুর সাথে প্রায় প্রতি দিন দেখতে যেতেন, এমনকি সিনেমা নিয়েও অনেক কথা তার সাথে আলোচনা করতেন। এমন সময় তিনি একটি বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করতেন, সেই সূত্রে তিনি লন্ডনে যাবার সুযোগ পেলেন। সাথে সাথে তার জীবনের একটি অধ্যায় শুরু হলো এখন থেকে। এখন থেকেই সিনেমার নানান বিষয়ে তিনি জ্ঞান অর্জন করলেন এবং দেশে ফিরে বিভূতি ভূষণ বন্দোপাধ্যায় এর পথের পাচালিকে বেছে নিলেন জীবনের প্রথম কর্ম হিসাবে।

জীবনের প্রথম এই সিনেমা কে প্রযোজনা করতে গিয়ে তাকে অনেক সমস্যার মুখে পড়তে হয় বলে জানা যায়। এমন কি নিজের সখের বই প্রিন্টিং পর্যন্ত তাকে বিক্রি করতে হয়েছিলো। শুটিং করতে করতে টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে যায় এই সিনেমা। পরে মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের সহায়তায় 1955 সালে প্রকাশ পায় পথের পাঁচালী।

এই ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন রবিশঙ্কর ও কামেরা ম্যান ছিলেন সুব্রত মিত্র। এই সিনেমা কান চলচ্চিত্র অনুষ্ঠানে মানবতার শ্রেষ্ট দলিল ( দা বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট ) নামে পরিচিতি পায়।

সত্যজিৎ রায় বিখ্যাত কেন

  • প্রথমত, সত্যজিৎ রায় ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী, সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক ও বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য অস্কার পুরস্কার প্রাপক।
  • দ্বিতীয়ত, বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বাগ্রগণ্য, কারণ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে তিনি ‘পথের পাঁচালি’ নামক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে স্বীকৃত ও প্রশংসা লাভ করে।
  • তৃতীয়ত, তাঁর অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘অপুর সংসার’, ‘শাখাপ্রশাখা’, ‘নায়ক’, ‘আগন্তুক’।

বাংলা চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায়ের অবদান, সত্যজিৎ রায়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদান

বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় সত্যজিৎ রায়ের অবদান অসামান্য। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় এক মাইল ফলক রূপে পরিগণিত হন। শুধু বাংলা নয় তিনি সমস্ত বিশ্বের চলচ্চিত্রে এক মর্যাদার সম্মান দাবি করেন। 1955 সালে তার কৃতকর্ম কান ফ্লিম ফেস্টিভালে আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পায়, এবং ভারত সরকার তাকে সিনেমার শ্রেষ্ঠ প্রযোজক এর কারণে ভারতরত্ন উপাধিতে ভূষিত করেন ।

১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে সিনেমা বা চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি বাংলা ভাষাতেও চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রথম বাংলা ছবি ‘বিল্বমঙ্গল’ ছিল নির্বাক ছবি, কিন্তু ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পায় ‘জামাইষষ্ঠী’ নামক সবাক ছবি। পরবর্তীকালে সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিককুমার ঘটক, মৃণাল সেনের হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্র পরিণত হয়ে ওঠে এবং সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ দেশ ও আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতি লাভ করে।

পথের পাঁচালী ছিল তার জীবনের প্রথম অভিজ্ঞান। গ্রাম্য জীবনের রহস্যে ঘেরা পথের পাঁচালী ছিল উদার মানবিক জীবনের এক প্রতিচ্ছবি। সেই কারণে এই সিনেমা দেশ ছেড়ে ইউরোপে এমন কি আমেরিকাতেও জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।

পথের পাঁচালীর অপুর কাহিনী কে সম্পূর্ণ করার জন্য তিনি পরবর্তী সময়ে প্রযোজনা করেন – অপরাজিত, অপুর সংসার, এই সিনেমা দুটিকে। এছাড়াও তার কয়েক্তি বিখ্যাত সিনেমা হলো – নায়ক, জলসাঘর, দেবী, তিন কন্যা, কাঞ্চনজঙ্ঘা, মহানগর, গুপিগাইন বাঘাবাইন, অরণ্যের দিনরাত্রি, প্রতিদ্বন্দ্বী, ওসনি সংকেত, ও আগন্তুক ইত্যাদি।

জীবিত সময় কালের মধ্যে সত্যজিৎ রায় প্রায় 36 টি সিনেমা তৈরি করেছিলেন। বিচিত্র বিষয়ের সমাহারে তিনি যে নতুন সিনেমার নতুন ধারণা সৃষ্টি করেছিলেন সেই কারণেই তিনি আজও সিনামে জগতে স্বতন্ত্র হলে আছেন। 1992 সালে সত্যজিৎ রায় অস্কার বিজয়ী পরিচালক হিসাবে স্বীকৃতি পান। পরবর্তী কালের কিছু বিখ্যাত পরিচালক – আইভরি, আব্বাস কাইরস্তমি, ইলিয়ানাক জল প্রমুখ তাকে অনুসরণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়।

সত্যজিৎ রায়ের ছবি, সত্যজিৎ রায়ের Photo

সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা, সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্র, সত্যজিৎ রায় যুক্ত ছিলেন কিসের, সত্যজিৎ রায় যুক্ত ছিলেন কিসের সাথে

বস্তুতঃসত্যজিৎ ভারতীয় চলচ্চিত্রের গােত্রান্তর ঘটিয়েছিলেন । তার পরিচালিত উল্লেখযােগ্য ছবি ‘ অপরাজিত , অপুর সংসার । জলসাঘর , কাঞ্চনজঙ্ঘা , অভিযান , মহানগর , চারুলতা এবং শেষ দিককার ঘরেবাইরে , গণশত্রু , শাখাপ্রশাখা , আগন্তুক প্রভৃতি ।

১৯৭৭ খ্রিঃ পরিচালনা করেন প্রথম হিন্দিছবি শতরঞ্জকে খিলাড়ি । তার তৈরি তথ্যচিত্র হল রবীন্দ্রনাথ , সিকিম , সুকুমার রায় প্রভৃতি ।

১৯৬০ খ্রিঃ কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের সঙ্গে সত্যজিৎ রায় তার পিতামহ ও পিতার প্রিয় সন্দেশ পত্রিকা নতুন করে প্রকাশ শুরু করেন । সম্পাদনা ও অলঙ্করণের পাশাপাশি নিজেও লেখা শুরু করেন । এভাবেই একে একেসৃষ্টি হয় ফেলুদা , তপশে , জটায়ু , প্রফেসর শঙ্কুর মত বাঙালি শিশু – কিশােরদের প্রিয় কিছুসাহিত্যচরিত্র।

লিয়রের ছড়া অবলম্বনে পাপাঙ্গুল তার প্রথম রচনা । ১৯৬৯ খ্রিঃ বাদশাহী আংটি প্রকাশিত হয় । সেই থেকে ১৯৯১ খ্রিঃ পর্যন্ত নয়না রহস্য তার সর্বশেষ বই প্রকাশিত হয় ।

অন্যান্য জনপ্রিয় সিনেমাগুলি নামঃ

  • পরশপাথর(১৯৫৮)
  • জলসাঘর(১৯৫৮)
  • অপুর সংসার(১৯৫৯)
  • তিন কন্যা(১৯৬১)
  • চারুলতা(১৯৬৪)
  • গুপি গাইন বাঘা বাইন(১৯৬৯)
  • সোনার কেল্লা(১৯৭৪)
  • জয় বাবা ফেলুনাথ(১৯৭৯)
  • হীরক রাজার দেশে(১৯৮০)
  • শাখা প্রশাখা(১৯৯০)

সত্যজিৎ রায় কিন্তু শুধু একজন চলচ্চিত্রকর ছিলেন না | তিনি কিন্তু একজন ভালো সাহিত্যিকও ছিলেন | তাঁর সৃষ্ট সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্রগুলি হল- গোয়েন্দা ফেলুদা, মহান বিজ্ঞানী শ্রী ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু ও তারিণী খুঁড়ো । এবং তিনি একজন সঙ্গীতকারও ছিলেন |

সত্যজিৎ রায় রচনা সমগ্র, সত্যজিৎ রায়ের বই

সাহিত্যের আসরেও গল্পবলার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য অল্পসময়ের মধ্যেইসত্যজিৎ প্রশংসা ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেন । তার রচিত কয়েকটি উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ:

  • প্রােফেসর শঙ্কুর কান্ডকারখানা
  • সােনারকেল্লা
  • বান্মরহস্য
  • জয়বাবা ফেলুনাথ
  • গােরস্থানে সাবধান
  • যত কান্ড কাঠমান্ডুতে
  • তারিণী খুড়াের কীর্তিকলাপ
  • দার্জিলিং জমজমাট প্রভৃতি ।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

সত্যজিৎ রায়ের বর্তমান কালের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিকতা

আসলে, চিন্তার স্ফুরণ, সময়ের তুলনায় এগিয়ে থাকা সামাজিক চেতনা, ভবিষ্যতের দিক-নির্ণয়, কালজয়ী কর্মজীবন এবং ক্ষণজন্মা প্রতিভার সমন্বয়ে গোটা উনিশ শতক ও বিংশ শতাব্দী জুড়ে বাংলার মননে যে বৈপ্লবিক আলোড়ন ঘটে গিয়েছিল, যাকে আমরা অনেকেই ‘বাংলার নবজাগরণ’ বলে থাকি, তার অভিমুখ রামমোহনে আরম্ভ হয়ে যদি রবীন্দ্রনাথে উৎকর্ষ লাভ করে, তা হলে সত্যজিৎ রায়ের বহুমুখী প্রতিভা সেই ‘বেঙ্গল রেনেসাঁ’র সম্ভবত শেষতম অধ্যায়।

চলচ্চিত্রকার সত্যজিতের মূল্যায়ন করতে গিয়ে জাপানি চিত্র পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া একবার বলেছিলেন— ‘শ্রীরায়ের ছবি না দেখা আর পৃথিবীতে চাঁদ আর সূর্য না দেখে বেঁচে থাকা একই ব্যাপার।’ সাঁইত্রিশ বছরের কর্মজীবনে পরিচালক হিসেবে সত্যজিৎ রায়ের ৩৬টি ছবির (২৯টি পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র, পাঁচটি তথ্যচিত্র ও দু’টি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি) বিস্তৃতি ও গভীরতা নিঃসন্দেহে পৃথক এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণমূলক আলোচনার দাবি রাখে। ছবির প্রয়োজনে হোক কিংবা স্বাধীন শিল্পী হিসেবে— অলঙ্করণ, কস্টিউম ও গ্রাফিক ডিজাইনিং, চিত্রনাট্য ও সাহিত্যরচনা, সম্পাদনা অথবা সুরসৃষ্টির মতো চারুকলার বিভিন্ন পরিসরে তাঁর অবাধ ও দক্ষ চলাচল, রায়চৌধুরী/রায় পরিবারের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তাঁর স্বতন্ত্র ও সফল পরিচিতি, জনমানসে তাঁর প্রগাঢ় ব্যক্তিত্ব ও উপস্থিতি জন্মশতবার্ষিকীর দোরগোড়ায় এসেও সত্যজিৎ রায়কে আজও সমান প্রাসঙ্গিক, সমান আধুনিক করে রেখেছে।

সত্যজিতের ছবির যে কোনও একটা দৃশ্য, একটা ছোটখাটো মুহূর্ত নিয়েই একটা গোটা নিবন্ধ লিখে ফেলা যায়, এমনটাই মনে করতেন ইংরেজ চলচ্চিত্র সমালোচক রবিন উড। নাতিদীর্ঘ পরিসরে সত্যজিতের সমস্ত ছবির পর্যাপ্ত বিশ্লেষণ সম্ভব না হলেও প্রথম থেকেই তাঁর সৃষ্টির মূল সুরটি যে ‘মানবজীবনের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ, শান্ত অথচ গভীর জীবনবোধ এবং মানবপ্রেম’-এর সুরে বয়ে চলা ‘বহমান নদীর বিশালতা ও প্রশান্তি’রই প্রতিধ্বনি (প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’ প্রসঙ্গে কুরোসাওয়া), তার রেশ মেলে জীবনের শেষ প্রান্তে পাওয়া অস্কার সম্মাননার বয়ানেও। সত্যজিতের ছবির আখ্যান ঘটনার ক্রমবিবরণের পরিবর্তে ঘটনার আড়ালে অলক্ষিত, উপেক্ষিত আবেগ-আকাঙ্ক্ষা-চেতনা-প্রবৃত্তিকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতেই বেশি আগ্রহী। হয়তো সেই কারণেই সত্যজিতের ছবির প্রধান চরিত্রেরা বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও এবং দু’টি বাদে বাদবাকি সমস্ত ছবির ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, ঐতিহাসিক আঞ্চলিকতায় সীমাবদ্ধ না থেকে ছবিগুলি বিশ্বজনীনতায় আচ্ছন্ন।

ছবি তৈরির একেবারে গোড়ার সময় থেকেই সত্যজিৎ তাঁর চিত্রনাট্যের উপাদান বেছে নিয়েছেন ধ্রুপদী বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডার থেকে। পরবর্তী কালে যেখানে এসে মিশেছে সমকালীন সাহিত্য আর স্বরচিত লেখা। উনিশ আর বিংশ শতকের ঔপনিবেশিক গ্রাম-বাংলা আর অনাগত শহর-সভ্যতার পটভূমিতে নির্মিত ‘অপু ট্রিলজি’, ‘পরশ পাথর’, ‘জলসাঘর’, ‘দেবী’ বা ‘তিন কন্যা’র পরিচালক মূল টেক্সটের প্রতি অনুগত থেকেও সামাজিক পালাবদলের ‘ইমেজ’ নির্মাণে ইতিহাসের নৈর্ব্যক্তিকতার প্রতি সমান ভাবে দায়বদ্ধ থাকার চেষ্টা করেছেন। আবার, ‘চারুলতা’র মতো কালনির্ভর ছবি বাদ দিলে ষাটের দশকের বেশির ভাগ ছবিতেই সত্যজিৎ কঠোর বাস্তববাদী ও সমসাময়িক। তবে, জীবনের অন্তর্নিহিত কল্যাণময়তার প্রতি তাঁর অগাধ আস্থা। ‘অভিযান’ ছবিতে ট্যাক্সিচালক নরসিংহের জীবন যেমন ভুলের মাশুল দিতে দিতে আচম্বিতে একেবারে শেষ মুহূর্তে নেওয়া সিদ্ধান্তে মুক্তি বা ‘রিডেম্পশন’ লাভ করে, তেমনই ‘নায়ক’ ছবির ‘দেবতুল্য’ ম্যাটিনি আইডল অরিন্দম ট্রেনে চেপে কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে ‘বিবেক’রূপী সহযাত্রীর কাছে নিজের গ্লানি স্বীকার করে দায়মুক্ত হয়। এ দিকে ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’ ছবিতে রচিত হয় নৈতিকতা-অনৈতিকতা, সংকল্পবদ্ধতা-সিদ্ধান্তহীনতার দোলাচলে আবদ্ধ করুণ ও হাস্যরসাত্মক দু’টি আখ্যানের দ্বন্দ্বসমাস।

নরেন্দ্রনাথ মিত্রের গল্প ‘অবতরণিকা’য় স্বামীর আচমকা চাকরি চলে যাওয়ার পর সকলের আপত্তি এড়িয়ে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত ও দৃঢ়চেতা গৃহবধূ আরতির চাকরি করা এবং কর্মস্থলে মহিলা সহকর্মীকে অন্যায় ভাবে ছাঁটাই হতে দেখে প্রতিবাদ করে চাকরি ছেড়ে আসাকে আমরা প্রশংসিত হতে দেখি না, বরং কাহিনি শেষ হয় ঘরে ফেরার পর স্বামী সুব্রতের বিদ্রুপ, শাশুড়ির কটূক্তি ও আরতির ভেঙে পড়া কান্নায়। অন্য দিকে, ‘মহানগর’ ছবির শেষে দেখি, অফিস থেকে বেরিয়েই আরতির সঙ্গে সুব্রতের হঠাৎ দেখা হয়ে যায় এবং পুরোটা শুনে সুব্রত বলে— ‘তুমি যা পেরেছ, তা হয়তো আমি পারতামই না। আমার সে সাহসই হত না। রোজগারের তাগিদে আমরা ভীতু হয়ে গিয়েছি… জানো, আজ আমাদের এত দুর্দিন, আজ বাদে কাল কী হবে কিছু ঠিক নেই… তবু আমার ভাল লাগছে।’ আরতি বলে— ‘এত বড় শহর! এত রকম চাকরি— দু’জনের একজনও কি পাব না একটা?’ সুব্রত উত্তর দেয়— ‘আমার বিশ্বাস দু’জনেই পাব।’ শেষ দৃশ্যে পড়ন্ত বিকেলের আলোয় দু’জনে হাত ধরাধরি করে হাঁটতে হাঁটতে মিশে যায় শহরের অগুন্তি মানুষের ভিড়ে। জ্বলে উঠেছে ল্যাম্পপোস্ট, আরতি-সুব্রত এক সময় ফোকাসের বাইরে অদৃশ্য হয়ে যায়, ক্যামেরা ফোকাস করছে স্ট্রিটল্যাম্পে।

এই আশাবাদ এক দিকে সত্যজিতকে যেমন তাঁর ভাবগুরু জঁ রেনোয়াঁ ও ভিত্তোরিও ডি’সিকার সঙ্গে একাত্ম করে, তেমনই ‘চারুলতা’র শেষ দৃশ্যে ‘ফ্রিজ’শটের ব্যবহার যেন ত্রুফোর ‘দি ৪০০ ব্লোজ’-এর শেষ দৃশ্যে পরিস্ফুট অদম্য আর্তি ও অসহায়তাকেও মনে করিয়ে দেয়। এই অস্বস্তি-বেদনাই হয়তো পরবর্তী সময়ে সত্যজিতের ‘ক্যালকাটা ট্রিলজি’তে যথাক্রমে শহর ছেড়ে মুক্তির সন্ধান, মুক্তিহীন পাপবোধে জর্জরিত ‘সাফল্য’ এবং চরম পচনশীল নাগরিক সভ্যতার তীব্র তিরস্কারে রূপ নেবে অথবা ‘অশনি সঙ্কেত’ ছবিতে প্রকৃতির অপরূপ প্রাচুর্যের মধ্যেও মানবিকতার কদর্য অধঃপতনে। দার্জিলিঙের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ সফল বাণিজ্য করতে না পারলেও সত্যজিৎ মনে করতেন, ছবিটি সময়ের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে— ‘কাঞ্চনজঙ্ঘার কাঠামো ছিল একেবারেই চলচ্চিত্রের কাঠামো, যেটা আমার আগের কোনও ছবি সম্বন্ধেই বলা চলে না।’ অনেকের মতেই ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ বর্তমানের ‘হাইপারলিঙ্ক’ ছবি ঘরানার পূর্বসূরি।
সত্যজিৎ রায়ের শিল্পমাধ্যম আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় (‘শাখাপ্রশাখা’), ব্যক্তি বনাম সমাজ (‘গণশত্রু’), বর্ণভেদ ও জাতপাতের ভয়াবহতা (‘সদ্‌গতি’), রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও ফ্যাসিবাদ (‘হীরক রাজার দেশে’), উগ্র জাতীয়তাবাদ বনাম মানবতাবাদ (‘ঘরে-বাইরে’) এবং সভ্যতার সামগ্রিক সঙ্কটের (‘আগন্তুক’) সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে, ভাবতে শিখিয়েছে। তাই সত্যজিতের উপস্থিতি তাঁর প্রসঙ্গ ফুরায় না, কেবল এগিয়েই চলে।

সত্যজিৎ রায়ের আঁকা ছবি, সত্যজিৎ রায়ের আঁকা শেষ ছবি

সত্যজিৎ রায়ের কবিতা

সত্যজিৎ রায়ের উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলি

  • সে রাতে চাঁদ ওঠে নি
  • বিষন্নতা
  • মগজের খাঁচায়
  • হয়নিতো বাঁচা
  • অপরূপ বাংলা
  • সোডিয়াম বাতি আর অমানিশা
  • একদিন হারাবো মধ্যরাতে
  • নারী, কে বলে সে পিছিয়ে আছে?
  • ভালোবাসার তান্ডব
  • একরাশ বৃষ্টি
  • কিভাবে ভালবাসতে হয়?
  • স্মৃতির কৃষ্ণগহ্বরে
  • ঈর্ষান্বিত ভালোবাসা
  • ঋতুরা আর করে না খেলা
  • বেঁচে থাকবে তুমি

যখন ছোট ছিলাম সত্যজিৎ রায় pdf

যখন ছোট ছিলাম

যখন ছোট ছিলাম – সত্যজিৎ রায় এর লেখা একটি বাংলা আত্মজীবনী বই.

সত্যজিৎ রায়ের উপর সচরাচর জিজ্ঞাস্য (FAQ) প্রশ্ন উত্তর

সত্যজিৎ রায় কবে জন্মগ্রহণ করে?

উঃ সত্যজিৎ রায় ১৯২১ সালে ২রা মে জন্মগ্রহণ করেন।

সত্যজিৎ রায় কোথায় জন্মগ্রহণ করে?

উঃ সত্যজিৎ রায় কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

সত্যজিৎ রায়ের প্রথম ফিল্ম কোনটি?

উঃ তার প্রথম ফিল্ম পথের পাঁচালি।

সত্যজিৎ রায়ের পিতার নাম কী ?

উঃ সুকুমার রায় ।

সত্যজিৎ রায়ের মাতার নাম কী ?

উঃ সুপ্রভা দেবী ।

সত্যজিৎ রায় কবে অস্কার পান ?

উঃ ১৯৯২ সালে ।

সত্যজিৎ রায় কবে ভারতরত্ন পেয়েছিলেন?

উঃ ১৯৯২ সালে তিনি ভারতরত্ন লাভ করেন।

সত্যজিৎ রায় কীভাবে মারা যান?

উঃ হার্টের অসুখে মারা যান।

সত্যজিৎ রায় কবে মারা যান?

উঃ সত্যজিৎ রায় ১৯৯২ সালে ২৩ শে এপ্রিল মারা যান।

সত্যজিৎ রায়

সত্যজিৎ রায় কি জন্য বিখ্যাত?
সত্যজিৎ রায় একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক এবং লেখক। তাঁকে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়।


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।