শারীরিক শিক্ষা কাকে বলে
শারীরিক শিক্ষা সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে শিক্ষা সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। শিক্ষা মানবজীবনের মৌলিক চাহিদাগুলোর অন্যতম একটি দিক। জন্মের পর থেকে মানুষ নানারকম শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে উপলব্ধি করে এবং উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে চায়। শিক্ষা মানুষকে মহান করে এবং মানবিক গুণাবলি অর্জনের মাধ্যমে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়।
শিক্ষা অর্জনের জন্য কোনো সময় নির্ধারিত নেই। মানব জীবনে শিক্ষার ক্ষেত্র বিশাল এবং ব্যাপক। সুতরাং বলা যায় শিক্ষা জীবনব্যাপী একটি প্রক্রিয়া। শিক্ষা শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের চৌহদ্দির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, শিক্ষা অর্জিত হয় বাড়িতে, পরিবারে সমাজে, বহিরাঙ্গন তথা খেলার মাঠে এবং সর্বত্র।
প্রাচীনকালে শারীরিক শিক্ষা কাকে বলে তা বলতে শুধুমাত্র দৈহিক বা শারীরিক উন্নতিকেই বোঝানো হতো। এ ধারণা সঠিক ছিল না। দৈহিক বা শারীরিক উন্নতিকে শারীরিক শিক্ষা নয়, শরীরচর্চা বলে।
মন ছাড়া শরীর এককভাবে কোনো কাজ করতে পারে না। অতএব, যে শিক্ষা দেহ ও মনের যুগপৎ পরিবর্তন সাধন করে সে শিক্ষাকেই শারীরিক শিক্ষা বলে।
শারীরিক শিক্ষার ব্যবহারিক দিক হচ্ছে খেলাধুলা। শারীরিক শিক্ষা সাধারণ শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় নয়। বস্তুত, মানুষ শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য অর্জন, সুন্দর মন ও পরিমিত আবেগ লাভ এবং সামাজিক কর্তব্য সচেতন হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে থাকে।
শারীরিক শিক্ষার সংজ্ঞা
শারীরিক শিক্ষা কাকে বলে এ সম্পর্কে সি.এ বুচার (C.A. Bucher) বলেছেন- ‘শারীরিক শিক্ষা হলো শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ, শারীরিক শিক্ষা সুনির্বাচিত শারীরিক কাজকর্মের মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক, আবেগিক এবং সামাজিক দিক দিয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা।
- ডি.কে. ম্যাথস (D.K. Mathews ) বলেছেন– ‘শারীরিক কার্যকলাপের দ্বারা অর্জিত শিক্ষাই শারীরিক শিক্ষা। বেসিক ও সিডেল (Resick and Seidel) বলেছেন- শারীরিক শিক্ষা হলো মানব গতিকার্যের বিজ্ঞান ও কলা।
- জে.বি ন্যাশ (J. B. Nash) এর ভাষায় শারীরিক শিক্ষা কাকে বলে? তা হলো- ‘শারীরিক শিক্ষা গোটা শিক্ষার এমন এক দিক যা মাংসপেশির সঠিক সঞ্চালন ও এর প্রতিক্রিয়ার ফল হিসেবে ব্যক্তির দেহের ও স্বভাবের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করে।”
আরও পড়ুন: দ্বিজাতি তত্ত্ব, দ্বিজাতি তত্ত্ব কি, দ্বিজাতি তত্ত্ব বলতে কি বুঝ, দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রবক্তা কে
শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
শারীরিক শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ব্যক্তির সর্বাত্মক উন্নতি সাধন করা, সুস্থ দেহে সুন্দর মন গড়া। শারীরিক শিক্ষার প্রধান কাজ হলো শিশুকে আনন্দ ও খেলাধুলার মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা ও কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা।
এম.জি.ম্যাসন ও এ.জি.এল ভেন্টার শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে বলেছেন—
- শিশুকে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্যে তাকে সুস্থভাবে গড়ে তোলা।
- শিশুর সৃজনশীল প্রতিভার উন্মেষ ঘটানো।
- সামাজিক ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করা।
- নৈতিক, আবেগিক, মানসিক ও সাংস্কৃতিক গুণাবলি জাগ্রত করা।
- খেলাধুলার মাধ্যমে নেতৃত্বদানের গুণাবলি অর্জন করা।
শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্য কি
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে আমরা অনেক সময় একই অর্থে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। লক্ষ্য হলো চূড়ান্ত গন্তব্যস্থল আর উদ্দেশ্য হলো সেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর সংক্ষিপ্ত ও নির্দিষ্ট কর্মকান্ড।
যেমন কোনো শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে ভর্তি হতে পারা হলো লক্ষ্য, আর প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়াটা হলো উদ্দেশ্য। লক্ষ্যের অস্তিত্ব মানুষের কল্পনায়, কিন্তু উদ্দেশ্য হলো বাস্তব।
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতামত থেকে শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব। বিভিন্ন চিন্তাবিদদের মতামত বিবেচনা করে শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্যকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা
১. শারীরিক সুস্থতা অর্জন।
২. মানসিক বিকাশ সাধন।
৩. চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন।
৪. সামাজিক গুণাবলি অর্জন।
১. শারীরিক সুস্থতা অর্জন
ক. সুস্বাস্থ্য গঠনে আগ্রহী করে তোলা।
খ. স্নায়ু ও মাংসপেশির সমন্বয় সাধনমূলক কর্মকান্ড দ্বারা কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
গ. দেহ ও মনের সুষম উন্নতি সাধন করা।
ঘ. কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলনের মাধ্যমে কাঙ্খিত ফল লাভ করা।
ঙ. নিয়মকানুন মেনে ভালো করে খেলতে পারা।
চ. শারীরিক নিরাপত্তা বিধানের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করা।
ছ. দক্ষতার সাথে অঙ্গ সঞ্চালন ও নিয়ন্ত্রণের কলাকৌশল রপ্ত করা।
২. মানসিক বিকাশ সাধন
ক. পর্যবেক্ষণ ও বিচার ক্ষমতার উন্মেষ ঘটানো।
খ. কল্পনা ও সৃজন শক্তির বিকাশ সাধন।
গ. নীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।
ঘ. সেবা ও আত্মত্যাগে উদ্ধুদ্ধ হওয়া।
ঙ. বিভিন্ন দলের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি করা।
চ. সহিষ্ণুতা ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করা।
৩. চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন
ক. শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ ও দেশাত্মবোধ জাগ্রত করা।
খ. আনুগত্যবোধ ও নৈতিকতা বৃদ্ধি পাওয়া।
গ. খেলোয়াড়ি ও বন্ধুত্বসুলভ মনোভাব গড়ে ওঠা।
ঘ. জাতিয় ঐতিহ্য ও কৃষ্টির প্রতি মমত্ববোধ জাগানো।
ঙ. খেলাধুলার মাধ্যমে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
চ. আত্মসংযমী হওয়া ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা অর্জন করা।
ছ. প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মনোভাব গড়ে ওঠা।
৪. সামাজিক গুণাবলি অর্জন
ক. খেলাধুলার মাধ্যমে বিশ্রাম ও আনন্দ উপভোগে উৎসাহিত করা।
খ. নেতৃত্বদানের যোগ্যতা অর্জন করা।
গ. সকলের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ ও সেবামূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করা।
ঘ. বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করা।
ঙ. বিনোদনমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অবসর সময় কাটানোর উপায় জানা।
শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর
মানবসত্তার দুটি মূল দিক হলো শরীর ও মন। এই দুটির সর্বোচ্চ ও সুষম উন্নয়ন ঘটে শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমে। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক বিকাশের উপর সমভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছে। শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করা হলো:
১. শারীরিক সুস্থতা রক্ষা ও দেহের সুষম বৃদ্ধি
আমাদের দেহ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন- হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, পাকস্থলী, যকৃত কিডনি, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত, অগ্নাশয়
ইত্যাদি নিয়ে গঠিত। এছাড়াও রয়েছে হাড়, মাংসপেশি, শিরা ও ধমনী। মাংসপেশির প্রধান কাজ হচ্ছে শরীর নড়াচড়া ও গতি প্রদান করা। গতি হলো প্রাণের ভিত্তি। নিয়মিত ব্যায়াম ও খেলাধুলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দৈহিক তন্ত্রসমূহের সুস্থতা বৃদ্ধি ও কর্মক্ষমতা বজায় থাকে। পেশিসমূহ শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
ফলে শিক্ষার্থীরা অধিকতর শক্তি, দম ও উৎসাহের সাথে প্রাত্যহিক সমস্ত কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারে। দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক বৃদ্ধির জন্য সুষম আহার, সঠিক স্বাস্থ্যবিধি পালন, বিশ্রাম ও নিদ্রা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে সুস্থতার সাথে জীবনযাপন করা যায়। শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমেই কেবলমাত্র তা সম্ভব হয়।
২. মানসিক উন্নতি
স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে মন ভালো থাকে না। মন ভালো না থাকলে কোন কাজে আগ্রহ জন্মায় না। মানবদেহের সার্বিক উন্নতির জন্য শরীর ও মন উভয়ই যেমন ভালো থাকা দরকার, তেমনি উভয়ের সুষম উন্নতিও প্রয়োজন।
শারীরিক শিক্ষা তথা খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মানসিক জড়তা, অশান্তি, একাকীত্ব ও পড়াশোনার একঘেয়েমি দূর হয়ে যায়; পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলার মানসিকতা, আত্মসচেতনতা, আত্মনির্ভরতা এবং আত্মপোলব্ধি বাড়িয়ে তোলে।
৩. আবেগ-অনুভূতির উন্নতি
শারীরিক শিক্ষার ব্যবহারিক দিক তথা খেলাধুলার ক্ষেত্রে জয় বা কৃতকার্যতা সকলের মনে তৃপ্তি, উদাম ও বিপুল আনন্দ এনে দেয়। কোনো কোনো সময় আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে। আবার পরাজয় বা ব্যর্থতা এনে দেয় হতাশা। কারণ, একজন শিক্ষার্থী জানে খেলাধুলায় জয় ও পরাজয় আছে। বিজয়ে অতি উল্লসিত হয়ে খেলোয়াড়রা দিশেহারা হয়ে যায় না। এমনিভাবে শিক্ষার্থী বিভিন্ন সময়ে খেলাধুলার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে তার আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে শেখে। পরবর্তীতে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে তার এই আবেগ নিয়ন্ত্রণের অভ্যাস কাজে লাগাতে পারে।
৪. সামাজিক উন্নতি
শারীরিক শিক্ষা তথা খেলাধুলার মাধমে শিক্ষার্থীরা বহুবিধ সামাজিক গুণাবলি অর্জন করে থাকে। দলবদ্ধ হয়ে খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচি পালনের সময় স্বীয় দলকে বিজয়ী করার জন্য সহযোগিতা, সমন্বয়, সহমর্মিতা, দলীয় একাত্মতা ও সদ্ভাব রক্ষা করে চলতে শেখে।
খেলাধুলার মাধ্যমে নেতৃত্বদানের ক্ষমতার বিকাশ ঘটে। কারণ, খেলাধুলার সময় দলীয় নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়। পরবর্তীকালে সমাজ জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অন্যদের সাথে চলাফেরা, ওঠাবসা, আচার আচরণে এবং সামাজিক কোনো কর্মকান্ডে এই গুণগুলো প্রতিফলিত হয়। এছাড়াও শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মাঝে দেশপ্রেম, জাতীয় চেতনাবোধ, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ জাগ্রত হয়।
৫. নৈতিক উন্নতি
শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বহুবিধ কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে শৃংঙ্খলা এবং বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনে চলতে শেখে। ফলে শিক্ষার্থী মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারে না। ন্যায় ও অন্যায় বিচার করে সে কাজ করতে অভ্যস্ত হয়। শিক্ষক ও বড়দের কথা মেনে চলে। নিয়ম মেনে খেলতে গিয়ে বিপক্ষ দলের সাথে খারাপ আচরণ করার সুযোগ থাকে না। এ অভ্যাসের কারণে অপরাধ প্রবণতা থেকে সরে গিয়ে শিক্ষার্থী উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হয়।
৬. অঙ্গ সঞ্চালন ও খেলাধুলার কলাকৌশল অর্জন
শারীরিক শিক্ষার ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে বসা, দাঁড়ানো, হাঁটা, দৌড়ানো, লাফানো এবং খেলাধুলার বিভিন্ন কলাকৌশল শেখানো হয়। খেলাধূলার পূর্বে ওয়ার্ম-আপ করা খুবই জরুরী। শরীরকে ব্যায়ামের মাধ্যমে নির্দিষ্ট খেলার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে উপযুক্ত করার নাম ওয়ার্ম-আপ। এর ফলে অঙ্গ সঞ্চালনের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়। খেলাধুলার কৌশল শেখার মাধ্যমে খেলাধুলায় পারদর্শিতা অর্জন করা সম্ভব হয়।
৭. সৃজনশীলতার উন্মেষ ঘটে
খেলার সময়কালীন সহযোগী ও প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের অবস্থানের দ্রুত পরিবর্তন হয়। প্রতিযোগিতায় কাঙ্খিত ফল লাভের জন্য প্রত্যেক খেলোয়াড়কে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।
খেলাধুলার মাধ্যমে অর্জিত এই অভ্যাসের ফলে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বিকাশ লাভ করে।
৮. অবসর ও চিত্তবিনোদন
শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন প্রকারের ব্যায়াম ও খেলাধুলা করে অফুরন্ত আনন্দ লাভ করে। ফলে তারা প্রতিটি মুহূর্তকে সঠিকভাবে ব্যবহার এবং বিভিন্ন খেলাধুলার মাধ্যমে অবসর সময়গুলোকে আনন্দদায়ক করে তুলতে পারে।
খেলাধুলাবিহীন তরুণ সমাজ অবসর সময়ে বিভিন্নভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। একমাত্র আনন্দময় খেলাধুলাই পারে এ অবস্থা থেকে তরুণ সমাজ তথা জাতিকে মুক্ত করতে।
শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব
শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শিক্ষার্থীদেরকে সুস্থ, সুখী এবং সফল জীবনযাপন করতে সহায়তা করে। শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব নিম্নরূপ:
- শারীরিক সুস্থতা অর্জনে সহায়তা: শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতা অর্জনে সহায়তা করে। এটি শিক্ষার্থীদের শক্তি, ক্ষমতা, গতি, সমন্বয়, নমনীয়তা এবং সহনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। শারীরিক সুস্থতা একটি সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য।
- মানসিক বিকাশ সাধনে সহায়তা: শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ সাধনে সহায়তা করে। এটি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ, স্মৃতি, চিন্তাভাবনা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মানসিক বিকাশ একটি সুস্থ ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য অপরিহার্য।
- আবেগিক বিকাশে সহায়তা: শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের আবেগিক বিকাশে সহায়তা করে। এটি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সহনশীলতা এবং মানসিক চাপ মোকাবেলায় সহায়তা করে। আবেগিক বিকাশ একটি সুখী জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য।
- সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা: শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব, সহযোগিতা, সহানুভূতি এবং অন্যদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সামাজিক দক্ষতা একটি সফল জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য।
- নেতৃত্ব গুণাবলী বিকাশে সহায়তা: শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব গুণাবলী বিকাশে সহায়তা করে। খেলাধুলা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, এবং দলগত কাজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- দেশপ্রেম ও নাগরিকত্বের চেতনা জাগ্রত করা: শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম ও নাগরিকত্বের চেতনা জাগ্রত করতে সহায়তা করে। খেলাধুলা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম, ঐক্য এবং সহযোগিতার চেতনা জাগ্রত করতে সহায়তা করে।
শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদেরকে একটি সুস্থ, সুখী এবং সফল জীবনযাপন করতে প্রস্তুত করে। এটি শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক, আবেগিক এবং সামাজিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শারীরিক শিক্ষা কত প্রকার
শারীরিক শিক্ষাকে বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। সাধারণত শারীরিক শিক্ষাকে নিম্নলিখিত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়:
- শারীরিক সুস্থতা-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতা অর্জনে সহায়তা করা। এটি শিক্ষার্থীদের শক্তি, ক্ষমতা, গতি, সমন্বয়, নমনীয়তা এবং সহনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- মানসিক বিকাশ-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করা। এটি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ, স্মৃতি, চিন্তাভাবনা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- আবেগিক বিকাশ-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের আবেগিক বিকাশে সহায়তা করা। এটি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সহনশীলতা এবং মানসিক চাপ মোকাবেলায় সহায়তা করে।
- সামাজিক বিকাশ-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিকাশে সহায়তা করা। এটি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব, সহযোগিতা, সহানুভূতি এবং অন্যদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
এছাড়াও, শারীরিক শিক্ষাকে নিম্নলিখিত উপায়ে ভাগ করা যেতে পারে:
- খেলাধুলা-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক, আবেগিক এবং সামাজিক বিকাশে সহায়তা করা।
- ব্যায়াম-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের ব্যায়াম করার মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতা অর্জনে সহায়তা করা।
- যোগব্যায়াম-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের যোগব্যায়াম করার মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক বিকাশে সহায়তা করা।
- স্বাস্থ্যবিধি শিক্ষা-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পদ্ধতিতে অভ্যস্ত করা।
শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যগুলির উপর নির্ভর করে এটি বিভিন্নভাবে ভাগ করা যেতে পারে।
আরো পড়তে: সুষম খাদ্য কি, সুষম খাদ্য কাকে বলে, সুষম খাদ্যের উদাহরণ, সুষম খাদ্যের তালিকা
শারীরিক সক্ষমতা কাকে বলে
শারীরিক শিক্ষার উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো শারীরিক সক্ষমতা যে যোগ্যতা দিয়ে শারীরিক শিক্ষার যেসব কর্মসূচি সুন্দর ও যথার্থভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তাকেই শারীরিক সক্ষমতা বলে।
শারীরিক শিক্ষার ব্যবহারিক দিক হচ্ছে খেলাধুলা। তাই শারীরিক সক্ষমতার বৈশিষ্ট্য, খেলাধুলার সাথে এর সম্পর্ক, শারীরিক সক্ষমতার মূল্যায়ন ইত্যাদি সম্পর্কে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষার্থীদের স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন।
ব্যায়ামের মাধ্যমে শারীরিক সক্ষমতা অর্জনের পদ্ধতি, লিঙ্গভেদে ব্যায়ামের ধরন ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান লাভ করতে পারবে। শারীরিক সক্ষমতা অর্জনে শক্তি, গতি, ক্ষিপ্রতা ও নমনীয়তার প্রয়োজনীয়তা এবং খেলার ভিন্নতা অনুযায়ী কোনটির ভূমিকা কীরূপ তা জানতে পারবে। শারীরিক সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে সুস্থ ও কর্ম জীবনযাপনে সক্ষম হবে।
কোনো কাজ করার সামর্থ্যকে সাধারণভাবে শারীরিক সক্ষমতা বলে। ব্যাপক অর্থে সক্ষমতা বলতে জৈবিক অস্তিত্ব রক্ষা করে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনধারণ করার সামর্থ্যকে বোঝায়। ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, আবেগময় ও সক্ষমব্যক্তি শারীরিক সুস্থতার সাথে সাথে মানসিক সুস্থতা, আবেগীয় ভারসাম্য ও সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন।
সুতরাং সক্ষমতা বলতে ব্যক্তির সার্বিক শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্যকে বোঝানো হয়েছে। সামগ্রিক সক্ষমতার বিভিন্ন দিকের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বাস্তব, প্রয়োজনীয় এবং প্রাথমিক দিক হলো শারীরিক সক্ষমতা। শারীরিক সক্ষমতা হলো শারীরিক কাজকর্ম করার সামর্থ্য। দৈহিক কাজের ভিন্নতা অনুসারে শারীরিক সক্ষমতার স্বরূপ বদলায়। তাই সাধারণ জীবনের হাঁটা, চলা, বসা ও অন্যান্য কাজের জন্য শারীরিক সক্ষমতা এবং বিশ্বমানের খেলোয়াড়ের শারীরিক সক্ষমতা এক নয়। কালের ধরনের উপর শারীরিক সক্ষমতার ধরনও ভিন্ন হয়।
শারীরিক সক্ষমতার সংজ্ঞা হিসেবে ক্লার্ক বলেছেন- “অত্যধিক ক্লান্ত হয়ে শক্তি ও সচেতনতার সাথে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করা, আনন্দ ও উৎসাহের সাথে অবসর সময় কাটানো এবং সংকট মোকাবেলার সামর্থ্য হলো শারীরিক সক্ষমতা।”
শারীরিক সক্ষমতার গুরুত্ব
একজন ব্যক্তি শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করলে দৈনন্দিন জীবনের প্রতিকূলতা কাটিয়ে সুস্থ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হবে। যেমন
১. যেকোনো শারীরিক কার্যক্রম অনায়াসে করতে পারবে।
২. দৈব-দুর্ঘটনা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
৪. শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করলে মন ভালো ফলে লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে পারবে।
৫. যেকোনো ধরনের খেলাধুলায় পারদর্শিতা অর্জন করতে পারবে।
আরো অন্যান্য প্রশ্নোত্তরের সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | শারীরিক শিক্ষা
Q1. শারীরিক শিক্ষা কি
Ans – শারীরিক শিক্ষা হলো দেহ ও মনের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুষম উন্নয়ন, মানসিক বিকাশ সাধন, সামাজিক গুণাবলি অর্জন ও খেলাধুলার মাধ্যমে চিত্তবিনোদন।
শরীর সম্বন্ধীয় শিক্ষা বা শারীরিক কসরতকে শারীরিক শিক্ষা নয় শরীরচর্চা বলে। শারীরিক শিক্ষা শুধু শরীর নিয়েই আলোচনা করে না, এর সাথে মানসিক বিকাশ ও সামাজিক গুণাবলি কীভাবে অর্জিত হয় সে ব্যাপারেও সহায়তা করে।
Q2. শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচি কি
Ans – শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা, ব্যায়াম, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ও বিনোদনমূলক যেসব কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয় তাকে শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচি বলে।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।