ভরবেগ কাকে বলে
চিরায়ত বলবিদ্যায় ভরবেগ হলো কোনো গতিশীল বস্তুর ভর ও বেগের গুণফল। একে রৈখিক ভরবেগও বলা হয়ে থাকে। বেগের ন্যায় রৈখিক ভরবেগ বা ভরবেগও একটি ভেক্টর রাশি, অর্থাৎ এর মান এবং দিক উভয়ই আছে। এস্ আই পদ্ধতিতে ভরবেগের একক হলো কিলোগ্রাম-মিটার/সেকেন্ড (kg m/s), বা নিউটন-সেকেন্ড।
ভরবেগ হলো কোনো গতিশীল বস্তুর ভর ও বেগের গুণফল। একে রৈখিক ভরবেগও বলা হয়ে থাকে। বেগের ন্যায় রৈখিক ভরবেগ বা ভরবেগও একটি ভেক্টর রাশি, অর্থাৎ এর মান এবং দিক উভয়ই আছে। এস্ আই পদ্ধতিতে ভরবেগের একক হলো kg m/s, বা নিউটন-সেকেন্ড (N s)।
ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র
ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র পদার্থ বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। একটি ব্যবস্থার মোট ভরবেগের কোন পরিবর্তন হয় না ভরবেগের এ সংরক্ষণ সূত্রকে কাজে লাগিয়ে রকেটের উড্ডয়ন থেকে শুরু করে উচ্চ শক্তি ত্বরক যন্ত্রে উৎপাদিত অনেক মৌলিক কণার আবিষ্কারও সম্ভব হয়েছে। নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্রের সাহায্যে এ সূত্র প্রতিপালন করা যায়।
ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র : “একাধিক বস্তুর মধ্যে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ছাড়া অন্য কোন বল কাজ না করলে কোন নির্দিষ্ট দিকে তাদের মোট ভরবেগের কোন পরিবর্তন হয় না।”
ভরবেগ হল ভর ও বেগ সম্বলিত রাশি। কোনো সংঘর্ষের আগে দুইটি মোট ভরবেগ ও সংঘর্ষের পরে মোট ভরবেগ সমান থাকে এটাকেই বলে ভরবেগের সংরক্ষণের সুত্র।
ব্যাখ্যা : ভিন্ন ভিন্ন বেগে চলমান ভিন্ন ভিন্ন ভরের দুটি বস্তু একই দিকে ধাবিত হতে থাকলে এক সময় একটি বস্তু অপর বস্তুকে ধাক্কা দিবে। কিন্তু এ ধাক্কা সম্পন্ন হওয়ার অর্থাৎ ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পূর্বের ও পরের ভরবেগের সমষ্টি সর্বদাই সমান থাকবে। এটিই ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র।
ভরবেগের মাত্রা কোনটি
কোন বস্তুর ভর ও বেগের গুণফলকেই ভরবেগ বলে। একে P দ্বারা সূচিত করা হয়। অর্থাৎ, m ভরবিশিষ্ট কোন বস্তু v বেগে চললে, ভরবেগ, P = mvi
ভরবেগ একটি ভেক্টর রাশি। SI পদ্ধতিতে ভরবেগের একক kgms-1। ভরবেগের মাত্রা সমীকরণ, [p] = [MLT-1]।
ভরবেগ কত প্রকার ও কি কি
বস্তুর গতির উপর ভিত্তি করে ভরবেগ দুই প্রকার। যথা:-
- (১) রৈখিক ভরবেগ (Linear Momentum)
- (২) কৌণিক ভরবেগ (Angular Momentum)
রৈখিক ভরবেগ কাকে বলে
ভর ও বেগ এর সমন্বয়ে গতিশীল বস্তু তে যে ধর্মের সৃষ্টি হয় তাকে ঐ বস্তুর ভরবেগ বলে। বস্তুর বেগ যদি রৈখিক হয় তাহলে বস্তুর ভরবেগ কে রৈখিক ভরবেগ বলে।
রৈখিক ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র
বাইরে থেকে কোন বল প্রযুক্ত না হলে কতকগুলি বস্তুর পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে যেকোনো নির্দিষ্ট দিকে বস্তু গুলির মোট রৈখিক ভরবেগের কোনো পরিবর্তন হইনা অর্থাৎ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার আগে কোন নির্দিষ্ট দিকে বস্তুগুলো ছিল ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার পরেও তাই থাকবে।
ব্যাখ্যা:
ধরা যাক M ও mভরবিশিষ্ট দুটি বস্তুকণারA and B যথাক্র Uওu গতিবেগ নিয়ে চলাকালীন তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হলো। সংঘর্ষের পর তারা যথাক্রমে Vও v গতিবেগ নিয়ে চলতে থাকলো। তাহলে রৈখিক ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র অনুসারে
সংঘর্ষের পূর্বে মোট ভর বেগ=সংঘর্ষের পড়ে মোট ভর বেগ or, MU+mu=MV+mv
কোন বস্তুর সংস্থার ওপর বাইরে থেকে কোন বল প্রযুক্ত না হলে বস্তু সংস্থার মোট রৈখিক ভরবেগ (মান ও অভিমুখ) অপরিবর্তিত থাকে।
ব্যাখ্যা: নিউটনের দ্বিতীয় গতি সূত্র অনুযায়ী, বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক।
বস্তুর ভরবেগ p হলে প্রযুক্ত বল F∝∆p÷∆t
বস্তু সংসার বাইরে থেকে কোন বল প্রযুক্ত নাহলে F=0
তখন, ∆p÷∆t=0
বা ∆p=0 অর্থাৎ ভরবেগ ধ্রুবক থাকে।
সুতরাং বাইরে থেকে কোন বল প্রযুক্ত না হলে বস্তু সংস্থার রৈখিক ভরবেগ সংরক্ষিত থাকবে (পরিবর্তন হবে না)।
কৌণিক ভরবেগ কাকে বলে
ঘূর্ণন গতির ক্ষেত্রে ঘূর্ণায়মান বস্তুর ঘূর্ণন অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণন জড়তা ও কৌণিক বেগের গুণফলকে ঐ অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণায়মান বস্তুটির কৌণিক ভরবেগ বলে। কৌণিক ভরবেগকে সাধারণত L দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটি একটি ভেক্টর রাশি।
কৌণিক ভরবেগের নিত্যতা
কৌণিক গতির জন্য নিউটনের প্রথম সূত্র হতে আমরা জানি বাহ্যিক টর্কের ক্রিয়াতেই কেবলমাত্র বস্তুর কৌণিক বেগের তথা কৌণিক ভরবেগের পরিবর্তন হয়। টর্কের ক্রিয়া না থাকলে বস্তুটি সমকৌণিক বেগে ঘুরতে থাকে। অর্থাৎ সময়ের সাপেক্ষে কৌণিক বেগ ধ্রুব হয়। ফলে কৌণিক ভরবেগও ধ্রুব হয়। একে কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র বা নিত্যতা বলে।
সুতরাং বলা যায়, কোনো বস্তুর উপর টর্কের লব্ধি শূন্য হলে বস্তুটির কৌণিক ভরবেগ সংরক্ষিত থাকে।
কৌণিক ভরবেগের একক
এস. আই. পদ্ধতিতে কৌণিক বেগ পরিমাপের একক হলো রেডিয়ান প্রতি সেকেন্ড।
কৌণিক ভরবেগ সূত্র
ঘূর্ণন গতি সংক্রান্ত নিউটনের গতির প্রথম সূত্র থেকে আমরা জানি, বাহ্যিক টর্ক যদি শূন্য হয়, তাহলে বস্তু সমকৌণিক বেগে ঘুরতে থাকবে। সময়ের সাপেক্ষে কৌণিক বেগ ধ্রুব হলে কৌণিক ভরবেগও ধ্রুব থাকে।
অন্য কথায়, কোনো বস্তুর ওপর প্রযুক্ত টর্ক শূন্য হলে, বস্তুটির কৌণিক ভরবেগ সংরক্ষিত থাকে। এ কথা বহু কণার সমন্বয়ে গঠিত একটি ব্যবস্থার জন্যও প্রযোজ্য। একে কৌণিক ভরবেগের নিত্যতা বা সংরক্ষণ সূত্র বলে
কৌণিক বেগ কাকে বলে
সময়ের সাথে সাথে কোন বস্তুকণার কৌণিক সরণের হারকে তার কৌণিক বেগ বলে। একে w অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এটিও একটি ভেক্টর রাশি এবং কৌণিক সরণের মত এর দিকও ডানহাতি স্ক্র বিধির সাহায্যে একই স্ক্রু ভাবে নির্ণয় করা হয়।
সাধারণত কৌণিক বেগকে রেডিয়ান/সেকেন্ড (radian / sec বা সংক্ষেপে rad/s) এককে প্রকাশ করা হয়। যন্ত্রবিদ্যা বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ আরেকটি একক প্রচলিত আছে। এর নাম আবর্তন/মিনিট (revolution per minute, সংক্ষেপে rpm)।
- গড় কৌণিক বেগ: যে কোন সময় ব্যবধানে কোন বস্তুর কৌণিক সরণের হারকে উক্ত বস্তুর গড় কৌণিক বেগ বলে।
- তাৎক্ষণিক কৌণিক বেগ: সময় ব্যবধান শূন্যের কাছাকাছি হলে কোন বস্তুর কৌণিক সরণের হারকে উক্ত বস্তুর তাৎক্ষণিক কৌণিক বেগ বলে। তাৎক্ষণিক কৌণিক বেগকে কোন বস্তুকণার প্রকৃত কৌণিক বেগ বলে।
কৌণিক ত্বরণ কাকে বলে
সময়ের সাথে সাথে কোন বস্তুকণার কৌণিক বেগের পরিবর্তনের হারকে তার কৌণিক ত্বরণ বলে। কৌণিক ত্বরণকে সাধারণত গ্রীক অক্ষর a (আলফা) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
- গড় কৌণিক ত্বরণ : যে কোন সময় ব্যবধানে কোন বস্তুর কৌণিক বেগের পরিবর্তনের হারকে উক্ত বস্তুর গড় কৌণিক ত্বরণ বলে।
- তাৎক্ষণিক কৌণিক ত্বরণ : সময় ব্যবধান শূণ্যের কাছাকাছি হলে কোন বস্তুর কৌণিক বেগের পরিবর্তনের হারকে উক্ত বস্তুর তাৎক্ষণিক কৌণিক ত্বরণ (instantaneous angular acceleration) বলে। তাৎক্ষণিক কৌণিক ত্বরণকে কোন বস্তুকণার প্রকৃত কৌণিক ত্বরণ বলে।
গতিশক্তি ও ভরবেগের সম্পর্ক
গতিশক্তি ভরবেগের বর্গের সমানুপাতিক, অর্থাৎ ভরবেগ বাড়লে গতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | ভরবেগ
Q1. ভরবেগ কি
Ans – ভরবেগ কাকে বলে বলতে বোঝায় বস্তুর ভর ও বেগের গুনফলকে ভরবেগ বা Momentum বলে।
Q2. ভরবেগ কি রাশি
Ans – ভরবেগ=ভর×বেগ =>ভরবেগ=ভর×(দুরত্ব/সময়)
এখানে,ভর স্কেলার রাশি।যাকে আর ভেঙে একাধিক মৌলিক রাশিতে প্রকাশ করা যায়না।কিন্তু বেগ কে ভেঙে একাধিক মৌলিক রাশিতে প্রকাশ করা যায়।তাই বেগ হচ্ছে ভেক্টর রাশি।ভেক্টর রাশির সাথে স্কেলার রাশি গুণ হয়ে ভরবেগ ভেক্টর রাশি হয়ে গেছে।
Q3. ভরবেগের পরিবর্তনের হারকে কি বলে
Ans – বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন হওয়ার মানেই হলো ওর বেগের পরিবর্তন। বেগের পরিবর্তনের হারকে বলে ত্বরণ, যেমন জ্যামে পড়তে শুরু করলে গাড়ির বেগ কমতে থাকে, আর জ্যাম ছাড়তে শুরু করলে গাড়ির বেগ বাড়তে থাকে। ত্বরণ মাপা হয় মিটার পার সেকেন্ড স্কয়ারে।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।