ইলবার্ট বিল কি
ইলবার্ট একটি আইনের খসড়া রচনা করেন, যা ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত। 1883 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ইলবার্ট বিলের খসড়া অনুযায়ী ভারতীয় বিচারপতিদের ইউরোপীয় বিচারপতিদের সমতুল মর্যাদা ও ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয় এবং বলা হয় যে ভারতীয় বিচারপতিরাও শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচার করতে পারবেন।
ফৌজদারী বিধি অনুযায়ী কোনো ভারতীয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোনো শ্বেতাঙ্গ আসামীর বিচার করতে পারতো না । এই বৈষম্য দূর করার জন্য বড়োলাট লর্ড রিপণের আইন সচিব স্যার ইলবার্ট ভারতীয় বিচারকদের ইংরেজ বিচারকদের নায় সমান ক্ষমতা দিয়ে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে একটি আইন পাশ করেন, যা ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত।
ইলবার্ট বিল কবে পাস হয়
ইলবার্ট বিল 1883 সালে প্রবর্তিত হয়েছিল যে আইনের শর্ত ছিল যে ভারতীয় বিচারকরা ইউরোপীয়দের বিচার করতে পারেন।
ইলবার্ট বিল ছিল একটি বিল যা 9 ফেব্রুয়ারী 1883 সালে ভারতের ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে পেশ করা হয়েছিল যা ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়রা বিচারকদের “ইউরোপীয় ব্রিটিশ প্রজাদের” বিরুদ্ধে অভিযোগের বিচারের এখতিয়ার পরিচালনা করে যদি তারা নিজেরাই ইউরোপীয় না হয়। মার্কেস অফ রিপনের ভাইসরয়শিপের সময় ভারতের গভর্নর-জেনারেল কাউন্সিলের আইনী সদস্য স্যার কোর্টেন পেরেগিন ইলবার্ট এই বিলটির খসড়া তৈরি করেছিলেন ।
এটি ভাইসরয় রিপনের আমলে প্রবর্তিত হয়েছিল এবং স্যার কোর্টেনে পার্গিন ইলবার্ট লিখেছেন। এই বিলের প্রবর্তনের পিছনে মূল উদ্দেশ্য হল ভারতীয় বিচারকদের ব্রিটিশদের জড়িত সেশন কোর্টে মামলার বিচার করার অনুমতি দেওয়া।
ইলবার্ট বিল এর মূল উদ্দেশ্য কি ছিল
ব্রিটিশ শাসিত ভারতের বিচার ব্যবস্থায় এরূপ জাতিগত বৈষম্য দূর করার সহিত ইউরোপীয় ও ভারতীয় বিচারকদের সম মর্যাদা ও ক্ষমতা প্রদানের উদ্দেশ্যে উদারপন্থী বড়োলাট লর্ড রিপনের আইনসচিব স্যার কোটনি পেরিগ্রিন ইলবার্ট 1883 খ্রিস্টাব্দে যে বিল তৈরি করেন তা ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত।
ইলবার্ট বিল এর মূল উদ্দেশ্য ছিল: –
- ভারতের বিচার ব্যবস্থায় জাতিগত বৈষম্য দূর করা।
- বিচার ব্যবস্থায় ভারতীয় বিচারকদের সম পদমর্যাদা ও ক্ষমতা প্রদান করা।
- এই বিলে ভারতীয় বিচারকদের ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।
- এই বিলের ফলে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় জাতিগত বৈষম্য দূর হয়েছিল।
- এই বিলের ফলে ভারতীয়দের মধ্যে আইনি শাসন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
ইলবার্ট বিল বিতর্ক কি
ভারতের বড়লাট লর্ড রিপন এর শাসনকালের পূর্বে এদেশে কোন ভারতীয় বিচারক কোন শ্বেতাঙ্গের বিচার করতে পারত না ।
এই বিষয়কে কেন্দ্র করে ভারতীয়দের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয় । বড়লাট লর্ড রিপন ও তাঁর আইনসচিব কোর্টনি ইলবার্ট ইলবার্ট বিল প্রণয়নের মাধ্যমে ভারতীয়দের এই ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করেন ।
ইলবার্ট বিলের বিষয়বস্তু
(ক) ১৮৭৩ খ্রি: ফৌজদারী বিধি অনুযায়ী কোনো ভারতীয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোনো শ্বেতাঙ্গ আসামীর বিচার করতে পারতো না।
(খ) এই বৈষম্য দূর করার জন্য বড়োলাট লর্ড রিপণের আইন সচিব স্যার কোর্টনি ইলবার্ট ভারতীয় বিচারকদের ইংরেজ বিচারকদের নায় সমান ক্ষমতা দিয়ে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে একটি আইন পাশ করেন, যা ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত।
ইউরোপীয়দের ক্ষোভ ও আন্দোলন
(ক) ইলবার্ট বিলের মাধ্যমে ভারতীয়দের ইংরেজদের বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হলে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়রা এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় এবং এই বিলের বিরুদ্ধে মিলিত হয়ে তীব্র আন্দোলন শুরু করে ।
(খ) কারণ ইউরোপীয়রা মনে করত যে তাঁরা শাসক জাতি আর ভারতীয়রা শোষিত জাতি । তাই ভারতীয় বিচারকদের ইউরোপীয়দের বিচার করার কোনো অধিকার বা যোগ্যতা নেই ।
(গ) তাই তারা কলকাতা হাইকোর্টের ব্যারিস্টার ব্রানসনের নেতৃত্বে ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করে আন্দোলন চালাতে থাকে।
(ঘ) আন্দোলন চালানোর উদ্দেশ্যে তারা দেড় লক্ষ টাকার বেশি চাঁদা সংগ্রহ করে ।
(ঙ) আন্দোলন বহু স্থানে হিংসাত্মক রূপ নেয়, ফলে লর্ড রিপন এই বিলটি নিয়ে নতুন করে ভাবতে থাকেন।
ইলবার্ট বিলের পক্ষে আন্দোলন
(ক) ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়রা আন্দোলন শুরু করলে লালমোহন ঘোষ , সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভারতসভা ইলবার্ট বিলের সমর্থনে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন ।
(খ) ইলবার্ট বিল এর সমর্থনে অমৃতবাজার পত্রিকা , বেঙ্গলি পত্রিকা প্রভৃতি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রচার চলতে থাকে ।
(গ) বিলের সমর্থনে দেশের নানা প্রান্তে সভা অনুষ্ঠিত হয় ।
(ঘ) ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ইলবার্ট বিলের সমর্থনে আন্দোলনে যোগদান করতে থাকে ।
ইলবার্ট বিলের গুরুত্ব
ইলবার্ট বিলের প্রকৃত উদেশ্য ব্যর্থ হলেও ভারতের জাতীয়তাবোধ জাগরণে এর গুরুত্ব ছিল তাৎপর্যপূর্ণ ।
(ক) সংঘবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি :
ইলবার্টবিল বিতর্ক থেকে ভারতীয়রা উপলব্ধি করে যে , একমাত্র সংঘবদ্ধ আন্দোলনই ভারতবাসীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারে ।
(খ) নিজস্ব অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা :
ইংরেজ জাতি ভারতবাসীকে যে ঘৃণা বা অবজ্ঞার চোখে দেখে তা ইলবার্ট বিল বিরােধী আন্দোলন থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় । এর ফলে ভারতবাসীরা তাদের নিজস্ব অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে ।
(গ) ইংরেজ শাসনের মােহমুক্তি :
ব্রিটিশ শাসনের বৈষম্যমূলক চরিত্র সম্পর্কে ভারতীয়দের ধারণা স্পষ্ট হয়। শিক্ষিত ভারতবাসীদের ইংরেজ শাসনের প্রতি মােহ কমতে থাকে ।
(ঘ) জাতীয় সম্মেলন প্রতিষ্ঠার প্রেরণা :
ইলবার্ট বিল আন্দোলনের ফলস্বরূপ ভারতীয়রা সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জাতীয় সম্মেলন আহ্বানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ।
(ঙ) তহবিল গঠনের প্রয়োজনীয়তা :
ইলবার্ট বিল আন্দোলন পরিচালনা করতে স্বেতাঙ্গরা প্রায় ১ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছিল । এর থেকে ভারতীয়রাও তহবিল গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ।
ইলবার্ট বিল আন্দোলন, ইলবার্ট বিল আন্দোলন কি
১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ফৌজদারি আইন বিধি অনুসারে ইউরােপীয়দের বিচার করার ক্ষমতা ভারতীয় বিচারকদের ছিল না । অথচ তাদের অধস্তন ইউরােপীয় বিচারকগণ ওই ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন । জাতিভেদ সৃষ্টিকারী এই জঘন্য আইন পরিবর্তন করার জন্য ভাইসরয় লর্ড রিপনের পরামর্শে তাঁর আইন সচিব কোর্টনে ইলবাট একটি খসড়া আইন প্রস্তুত করেন যা ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত ।
ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থায় আগাগােড়াই বর্ণ বৈষম্য নীতি বজায় ছিল । এই জাতিগত বৈষম্যের অবসান ঘটানাের জন্যই লর্ড রিপন এই আইন প্রণয়ন করেন । এই আইনের বিষয় বস্তুরুপে বলা হয় এখন থেকে ভারতীয় বিচারকগণ শ্বেতাঙ্গ অপরাধীদের বিচার করতে পারবেন ।
ইউরোপীয় বিচারকরা ভারতীয় বিচারকদের আংশিক স্বাধীনতাটুকুও মেনে নিতে পারেননি। এর ফলে তুমুল হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।
ইউরোপীয়রা ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে, যা শ্বেত বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
বিল প্রত্যাহারের দাবিতে ইউরোপীয় আইনজীবী মিলার, ব্রানসন প্রমুখকরা প্রতিবাদস্বরূপ যে সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন তা “ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন” নামে পরিচিত।
প্রত্যুত্তরে ইলবার্ট বিলের সমর্থনে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বে ভারত সভা প্রতি আন্দোলন গড়ে তোলে। বিলের পক্ষে মিটিং, মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
ভারত সভা ইলবার্ট বিলের বিরোধিতা করেছিল, ভারত সভা ইলবার্ট বিলের বিরোধিতা করেছিল কেন
- ১৮৮৩-৮৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতসভার পরিচালনায় ইলবার্ট বিল আন্দোলন শুরু হয় ।
- ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে ইউরোপীয়দের আন্দোলন ও বিক্ষোভের প্রত্যুত্তরে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতসভা প্রতি আন্দোলন গড়ে তোলে । ইলবার্ট বিলের সমর্থনে ভারতসভা দেশের নানা স্থানে জনসভা করে এবং সংবাদপত্রে মতামত জানাতে থাকে । কিন্তু সরকার শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয়দের দাবির কাছে মাথা নত করে । প্রস্তাবিত আইনের খসড়াটি বাতিল করা হল না বটে, কিন্তু তার কয়েকটি উদারনৈতিক ধারার সংশোধন করা হয় । এতে ইলবার্ট বিলের আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায় । ভারত সভার উদ্যোগে ইলবার্ট বিল আন্দোলনকে উপলক্ষ করে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ তীব্র হয় ।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | ইলবার্ট বিল
Q1. ইলবার্ট বিল প্রণয়ন করেন কে
Ans – ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড রিপণের আইন সচিব স্যার ইলবার্ট ।
Q2. ইলবার্ট বিলের বিরোধিতা করেছিল কোন সভা
Ans – ইলবার্ট বিল বিতর্ক মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল ভারতসভা ।
Q3. কোন ভাইসরয়ের সময় ইলবার্ট বিল আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল
Ans – লর্ড রিপনের সময় ইলবার্ট বিল আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল ।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।