ভগ্নাংশ কাকে বলে, প্রকৃত ভগ্নাংশ কাকে বলে, মিশ্র ভগ্নাংশ কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

ভগ্নাংশ কাকে বলে, ভগ্নাংশ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি

দুটি পূর্ণ সংখ্যাকে অনুপাত বা ভাগ করলে যে রাশি পাওয়া যায় তাকে ভগ্নাংশ বা Fraction বলে। ভগ্নাংশের উপরের সংখ্যাটিকে বলে লব আর নিচের সংখ্যাটিকে বলে হর।

অন্যভাবে বলা যায় কোন কিছু বা বস্তু যদি ভাঙ্গা হয়ে থাকে তবে তার ভগ্নাংশ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি উদাহরণস্বরূপ একটি কাঠের টুকরা হতে পারে যা ভাঙ্গা হয়ে গেছে, তাহলে সেই টুকরাটি ভগ্নাংশ হিসাবে উল্লেখ করা হবে।

ভগ্নাংশ শব্দটি দুটি শব্দ থেকে তৈরি। একটি হল ভগ্ন আর দ্বিতীয়টি হল অংশ। 

ভগ্ন কথার অর্থ হলো ভাঙ্গা এবং অংশ কথার অর্থ হলো কোন বস্তু বা পরিমানের অংশ।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, রামের কাছে 10টি আম আছে। রাম যদি রাজুকে 5 টি দিয়ে দেয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে রাজুর কাছে আম থাকবে 5/10 অংশ। একেই বলে ভগ্নাংশ।

এই ভগ্নাংশে 5 হল লব এবং 10 হল হল।

যেহেতু ভগ্নাংশ লব ও হর এই দুই সংখ্যা দিয়ে গঠিত, তাই ভগ্নাংশের উপরের সংখ্যাটিকে লব এবং নিচের সংখ্যাটিকে হর বলে।

ভগ্নাংশ লেখার নিয়ম, ভগ্নাংশ = লব/হর

মনে করি, দুটি পূর্ণ সংখ্যা যথাক্রমে X এবং Y। তাহলে ভগ্নাংশটি হবে X/Y

  • দুটি ভগ্নাংশের হর একই হলে, যে ভগ্নাংশের লব বড় সেই ভগ্নাংশটির মান বড় হয়। 5/6 অপেক্ষা 7/6 এর মান বড়।
  • দুটি ভগ্নাংশের লব একই হলে, যে ভগ্নাংশের হর ছোটো সেই ভগ্নাংশটি বড় হয়। 10/3 এর চেয়ে 10/2 এর মান বড়ো।
  • যেকোনো প্রকৃত ভগ্নাংশের মান 1 এর থেকে ছোটো হয়।
  • ভগ্নাংশের যোগ বা বিয়োগফল সর্বদা লঘিষ্ঠ আকারে প্রকাশ করতে হয়। যেমন 10/20 কে 1/2 হিসেবে লিখতে হয়।
  • যে কোনো ভগ্নাংশের লব কে হর এবং হর কে লব বানিয়ে দিলে ওই ভগ্নাংশের বিপরীত ভগ্নাংশ পাওয়া যায়।

ভগ্নাংশ কত প্রকার ও কি কি

ভগ্নাংশ প্রধানত দুই প্রকারের হয়। সেগুলি হল

  • সাধারণ ভগ্নাংশ
  • দশমিক ভগ্নাংশ

আবার প্রকৃতি বা গঠন অনুযায়ী সাধারণ ভগ্নাংশকে আরও তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা

  1. প্রকৃত ভগ্নাংশ
  2. অপ্রকৃত ভগ্নাংশ
  3. মিশ্র ভগ্নাংশ

সাধারণ ভগ্নাংশ কাকে বলে

কোনো সংখ্যাকে নির্দিষ্ট ভাগে বিভক্ত করে তাকে হর দ্বারা এবং নির্দিষ্ট অংশ হতে গৃহীত অংশকে লব দ্বারা চিহ্নিত করে গাণিতিকভাবে প্রকাশ করলে যে ভগ্নাংশ তৈরি হয় তাই সাধারণ ভগ্নাংশ বলে।

সামান্য ভগ্নাংশ কাকে বলে

কোন ভগ্নাংশকে লব ও হর দ্বারা প্রকাশ করলে তাকে সামান্য ভগ্নাংশ বলে । সাধারণ ভগ্নাংশকে সামান্য ভগ্নাংস বলা হয়। যেমন- 2/4, 5/3 ইত্যাদি

সাধারণ ভগ্নাংশ আবার তিনভাগে বিভক্ত। যথা :

প্রকৃত ভগ্নাংশ কাকে বলে, প্রকৃত ভগ্নাংশ কাকে বলে উদাহরণ, প্রকৃত ও অপ্রকৃত ভগ্নাংশ কাকে বলে

যে সকল ভগ্নাংশের লব ছোটো এবং হর বড়ো, সেই সকল ভগ্নাংশকে প্রকৃত ভগ্নাংশ বলে।

যেমন:- 2/5 , 4/7, 20/25 , 6/10 ইত্যাদি। অর্থাৎ প্রকৃত ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে হর > লব

কোন ভগ্নাংশের লব ছোট ও হর বড় হলে তাকে প্রকৃত ভগ্নাংশ বলা হয়।যেমন – ৫/৭ , ২/৭, ৩/১০

অপ্রকৃত ভগ্নাংশ কাকে বলে, অপ্রকৃত ভগ্নাংশ কাকে বলে উদাহরণ দাও

যে সকল ভগ্নাংশের লব বড়ো এবং হর ছোটো হয়, সেই সকল ভগ্নাংশগুলিকে অপ্রকৃত ভগ্নাংশ বলে।

যেমন:- 12/8, 5/3, 7/13, 11/8 ইত্যাদি অর্থাৎ ও প্রকৃত ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে হর < লব।

কোন ভগ্নাংশের লব বড় ও হর ছোট হলে তাকে অপ্রকৃত ভগ্নাংশ বলা হয়।যেমন – ৭/৩ , ৭/৫ , ৮/৭

মিশ্র ভগ্নাংশ কাকে বলে, মিশ্র ভগ্নাংশ কাকে বলে উদাহরণ দাও

যে সকল ভগ্নাংশ একটি অখন্ড সংখ্যা এবং একটি প্রকৃত ভগ্নাংশ দিয়ে গঠিত হয়, সেই সকল ভগ্নাংশকে মিশ্র ভগ্নাংশ বলে।

খুব সহজে মিশ্র ভগ্নাংশকে অপ্রকৃত ভগ্নাংশে এবং অপ্রকৃত ভগ্নাংশকে মিশ্র ভগ্নাংশে পরিণত করা যায়।

যে ভগ্নাংশটি একটি অখণ্ড সংখ্যা এবং একটি প্রকৃত ভগ্নাংশের সমন্বয়ে গঠিত হয় তাকে মিশ্র ভগ্নাংশ বলে।

দশমিক ভগ্নাংশ কাকে বলে

কোন ভগ্নাংশকে যখন দশমিক(.) চিহ্নের দ্বারা প্রকাশ করা হয়,তখন তাকে দশমিক ভগ্নাংশ বলে। যেমন – ৬/১২ = ০.২

দশমিক ভগ্নাংশকে আবার দু ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল-

  1. সসীম দশমিক ভগ্নাংশ
  2. অসীম দশমিক ভগ্নাংশ

সসীম দশমিক ভগ্নাংশ

যে সকল দশমিক ভগ্নাংশের দশমিক বিন্দুর ডান দিকে সসীম সংখ্যক অঙ্ক থাকে, সেই সকল ভগ্নাংশকে সসীম দশমিক ভগ্নাংশ বলে।

যেমন:- 15/2=7.5 । এই দশমিক ভগ্নাংশে দশমিক বিন্দুর ডান দিকে একটি সংখ্যা শুধুমাত্র 5 রয়েছে।

অর্থাৎ দশমিক সংখ্যাটি সসীমতায় রয়েছে। তাই এই ভগ্নাংশটিকে সসীম দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়।

অসীম দশমিক ভগ্নাংশ

যে সকল দশমিক ভগ্নাংশের দশমিক বিন্দুর পরবর্তী অংক গুলির পুনরাবৃত্তি ঘটে, ভগ্নাংশটিতে অসীমতার সৃষ্টি হয়, সেই সকল ভগ্নাংশকে অসীম দশমিক ভগ্নাংশ বলে।

যেমন:- 20 কে 6 দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল অর্থাৎ ভগ্নাংশটি তে 3 সংখ্যাটির বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটে। 

সে ক্ষেত্রে ভগ্নাংশটি হয় 3.333……। তাই এটি একটি অসীম দশমিক ভগ্নাংশের উদাহরণ।

আবৃত দশমিক ভগ্নাংশ কাকে বলে

যেসব দশমিক ভগ্নাংশে দশমিক বিন্দুর ডানে একটি অঙ্ক ক্রমান্বয়ে বারবার বা একাধিক অঙ্ক পর্যায়ক্রমে বারবার আসে, তাদের আবৃত বা পৌনঃপুনিক দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়। আবৃত বা পৌনঃপুনিক দশমিক ভগ্নাংশে যে অংশ বারবার অর্থাৎ পুনঃপুনঃ হয়, তাকে আবৃত অংশ বলে। যেমন: ৩.৩৩৩৩…, ১০.২৩৪৫৬৪৫৬… ইত্যাদি আবৃত বা পৌনঃপুনিক দশমিক ভগ্নাংশ।

# প্রথম পৌনঃপুনিক দশমিকে ৩ হলো আবৃতাংশ এবং দ্বিতীয় পৌনঃপুনিক দশমিকে ৪৫৬ হলো আবৃতাংশ। আবৃত অঙ্কগুলো বারবার উপস্থিতি বোঝানোর জন্য তাদের ওপর (.) চিহ্ন (আবৃত বা পৌনঃপুনিক বিন্দু) ব্যবহার করা হয়। যেমন: ৩.৩৩৩৩… =৩.৩.=৩.৩.

১০.২৩৪৫৬৪৫৬=১০.২৩(456)

সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশ কাকে বলে

দুইটি ভগ্নাংশে হর একই হলে তাকে সমহর ভগ্নাংশ বলে। যথা :১/৫,২/৫

সমলব ভগ্নাংশ কাকে বলে

দুইটি ভগ্নাংশে লব একই হলে তাকে সমলব ভগ্নাংশ বলে। যথা:২/৩,২/৫

বিপরীত ভগ্নাংশ কাকে বলে

একটি ভগ্নাংশের বিপরীত ভগ্নাংশ হল সেই ভগ্নাংশ যা মূল ভগ্নাংশের হরের এবং লবকে বিনিময় করে তৈরি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ভগ্নাংশ 2/3 এর বিপরীত ভগ্নাংশ হল 3/2। অন্যভাবে বলতে গেলে, দুটি ভগ্নাংশ বিপরীত ভগ্নাংশ হলে তাদের গুণফল 1 হবে। উদাহরণস্বরূপ, 2/3 এর বিপরীত ভগ্নাংশ হল 3/2, এবং তাদের গুণফল 2/3 * 3/2 = 1।

ভগ্নাংশের লব কে হরে  এবং হরকে লবে পরিণত করলে যে নতুন ভগ্নাংশ পাওয়া যায় তাকে বিপরীত ভগ্নাংশ বলে।
যেমনঃ ৩/৪  এর বিপরীত ভগ্নাংশ ৪/৩।

সমতুল ভগ্নাংশ কাকে বলে, সমতুল্য ভগ্নাংশ কাকে বলে

যদি দুইটি ভগ্নাংশের মধ্যে প্রথম ভগ্নাংশের হর ও দ্বিতীয় ভগ্নাংশের লব এবং দ্বিতীয় ভগ্নাংশের হর ও প্রথম ভগ্নাংশের লব এর গুনফল যদি সমান হয় তবে তাকে সমতুল ভগ্নাংশ বলে।

আংশিক ভগ্নাংশ কাকে বলে

যখন কোন ভগ্নাংশকে একাধিক ভগ্নাংশের যোগফলরূপে প্রকাশ করা হয়,তাহলে যাদের যোগফলরূপে প্রকাশ করা হয়,তাদের প্রত্যেকটিকে প্রথমোক্ত ভগ্নাংশটির আংশিক ভগ্নাংশ বলা হয়।

জটিল ভগ্নাংশ কাকে বলে

কোনো ভগ্নাংশের লব বা হর বা লব ও হরের উভয়েই ভগ্নাংশ হলে সেই ভগ্নাংশকে জটিল ভগ্নাংশ বলা হয়।

কোন ভগ্নাংশের লব বা হর অথবা উভয়েই ভগ্নাংশ রুপে প্রকাশ হলে সেই ভগ্নাংশকে জটিল ভগ্নাংশ বলে।

গর্ভিত ভগ্নাংশ কাকে বলে উদাহরণ দাও

ভগ্নাংশের ভগ্নাংশকে গর্ভিত ভগ্নাংশ বলে । যেমন 2/3 এর 4/5 ; এর অর্থ 2/3 কে 5 ভাগ করে।

লঘিষ্ঠ ভগ্নাংশ কাকে বলে

যে ভগ্নাংশের হর ও লবের ১ ব্যতীত অন্য কোনো সাধারণ উৎপাদক না থাকে, তাকে ওই ভগ্নাংশের লঘিষ্ঠ আকার বলে।

যে ভগ্নাংশের লব ও হরের এক ভিন্ন অন্য কোন সাধারণ গুনণীয়ক নেই তাকে লঘিষ্ঠ ভগ্নাংশ বলে।

ভগ্নাংশ বিষয়ক কিছু গাণিতিক সমস্যা ও সমাধান

১। কোনটি ক্ষুদ্রতম ভগ্নাংশ?
(ক) ১/১১ (খ) ৩/৩১
(গ) ২/২১ (ঘ) .০০২
উত্তরঃ (ঘ) .০০২ ।

২। কোনটি ক্ষুদ্রতম ভগ্নাংশ?
(ক) ১/৩ (খ) ৩/৬
(গ) ২/৭ (ঘ) ৫/২১
উত্তরঃ (ঘ) ৫/২১ ।

৩। নিচের কোনটি ক্ষুদ্রতম ভগ্নাংশ?
(ক) ৩/৪ (খ) ৫/৯
(গ) ৭/১২ (ঘ) ১১/১৮
উত্তরঃ (খ) ৫/৯ ।

৪। নিচের কোনটি ক্ষুদ্রতম ভগ্নাংশ?
(ক) ২/৩ (খ) ৩/৪
(গ) ৫/৯ (ঘ) ৭/১২
উত্তরঃ (গ) ৭/১২ ।

৫। নিচের কোনটি অপ্রকৃত ভগ্নাংশ?
(ক) ২/৩ (খ) ৩/৪
(গ) ৫/৯ (ঘ) ১২/৭
উত্তরঃ (ঘ) ১২/৭ ।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | ভগ্নাংশ

Q1. ভগ্নাংশ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি

Ans – ভগ্নাংশের ইংরেজী প্রতিশব্দ হচ্ছে Fraction। কোনো বস্তুকে সমান দুই বা ততোধিক ভাগে ভাগ করলে যে খন্ডাংশ পাওয়া যায় তাকে সমস্ত বস্তুর ভগ্নাংশ বলে।
অন্যভাবে, দুটি পূর্ণ সংখ্যাকে অনুপাত বা ভাগ করলে যে রাশি পাওয়া যায় তাকে ভগ্নাংশ বলে।

উদাহরন: ধরি, a ও b দুটি পূর্ণ সংখ্যা। তাহলে, a/b কে বলা হয় ভগ্নাংশ।

ভগ্নাংশ সাধারণত দুই প্রকার: ১। সাধারণ ভগ্নাংশ ২। দশমিক ভগ্নাংশ
প্রকৃতি/গঠন অনুসারে সাধারণ ভগ্নাংশ তিন প্রকার: – ১। প্রকৃত ২। অপ্রকৃত ৩। মিশ্র

Q2. ভগ্নাংশ অর্থ কি?

Ans – ভগ্নাংশ অর্থ হলো ভাঙ্গা অংশ । কোন পূর্ণ সংখ্যা অংশ বিশেষ ই হলো ভগ্নাংশ। 

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।