দুর্যোগ কাকে বলে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাকে বলে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ ও প্রতিকার, দুর্যোগ ও বিপর্যয় পার্থক্য

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

দুর্যোগ কি

Hazard শব্দটি প্রাচীন ফরাসি শব্দ এবং Az-Zahr নামক আরবি শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ হল Chance or Luck | প্রাকৃতিক বা মানবিক কারণে সংঘটিত যে সকল ঘটনার দ্বারা মানবজীবনের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের স্বাভাবিক অবস্থা বিঘ্নিত হতে পারে বা হয়ে থাকে তাকে দুর্যোগ (Hazard) বলে।

গ্রিক জ্যোতির্বিদগণ মনে করতেন, আকাশে কোনো তারা খারাপ অবস্থানে থাকলে খারাপ ঘটনা ঘটবে। সুতরাং উৎপত্তিগতভাবে দুর্যোগ বলতে এমন একটি অবস্থা বুঝায় যা মানুষকে মন্দ বা অকল্যাণকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করে।

UN0র প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী দুর্যোগ বলতে বােঝায় প্রাকৃতিক এবং মানুষের কার্যাবলির মাধ্যমে সৃষ্ট যে সকল ঘটনাবলি জীবন ও সম্পত্তির হানি ঘটায়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি অথবা পরিবেশের গুণগত মানের অবনমন ঘটায়, তাদের দুর্যোগ বলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুর্যোগের সৃষ্টি হয় প্রকৃতিগতভাবে। দুর্যোগে তৎক্ষণাৎ জীবনহানি ও সম্পদহানির সম্ভাবনা কম থাকে।

কিন্তু দুর্যোগ হলেই যে সম্পদহানি বা প্রাণহানি হবে তার কোনাে মানে নেই। যেমন-সমুদ্রের মধ্যে যদি প্রবল ঘূর্ণবাত (টাইফুন, হ্যারিকেন) এর সৃষ্টি হয় এবং তা ঐ মাঝসমুদ্রেই মিলিয়ে যায় তবে তা দুর্যোগ হিসেবে প্রতিপন্ন হবে কিন্তু তাতে জীবনহানির ঘটনা থাকবে না। একইভাবে জনহীন মরু অঞ্চলে ভূমিকম্প বা ভূমিধস ঘটলে তা দুর্যোগরূপে পরিগণিত হবে কিন্তু সেক্ষেত্রে জীবনহানি বা সম্পদহানির কোনাে সম্ভাবনা থাকবে না। উদাহরণ- ভূমিকম্প ভূমিধস, অগ্ন্যুৎপাত হল দুর্যোগের উদাহরণ।

দুর্যোগ কাকে বলে

একটি বিপর্যয় যখন কোনো নির্দিষ্ট এলাকার জনগণের বেশির ভাগ মানুষকে বিপদাপন্ন করে তুলে এবং তাদের নিজস্ব মোকাবিলা ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তখন তাকে দুর্যোগ বলে।

দুর্যোগ বলতে এমন একটি বিপর্যয়কে বুঝায় যা কোনো নির্দিষ্ট এলাকার জনগণের বেশিরভাগ মানুষকে বিপদাপন্ন করে তোলে এবং উক্ত জনগোষ্ঠির তা মোকাবেলা করার ক্ষমতা সাধ্যের বাইরে চলে যায়।

এসব দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মানুষকে অনেক মূল্য দিতে হয়। দুর্যোগ কখনো হঠাৎ সংঘটিত হয় আবার কখনোবা এক বা একাধিক ঘটনা ধীরে ধীরে দুর্যোগ সৃষ্টি করতে পারে। আবার অনেক সময় একটি দুর্যোগ একাধিক দুর্যোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

যেমন- ভূমিকম্প থেকে সুনামি হতে পারে। আবার সুনামি থেকে জলোচ্ছ্বাস এবং জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা হতে পারে।

দুর্যোগের বৈশিষ্ট্য

  • দুর্যোগ প্রাকৃতিক, ভূমিরূপগত, ভূতাত্ত্বিক এবং সাংস্কৃতিক উপাদানের সংযুক্ত ব্রিয়া।
  • এটি সাধারণত ক্ষুদ্র স্কেলে সংঘটিত হয়।
  • দুর্যোগ পরিবেশের গুণগত মানের অবনমন ঘটায়।
  • দুর্যোগ সর্বদা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যহত না করলেও অল্প বিস্তর জীবনযাত্রার গতিকে রুদ্ধ করে দেয়।
  • ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব ব্যপক মাত্রায় না থাকলেও সামাজিক, প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পদের অল্পবিস্তর ক্ষতি করে।
  • দুর্যোগ হল বিপর্যয় এর কারণ, বৃহৎ স্কেলে দুর্যোগ সংঘটিত হলে সেটি বিপর্যয় হিসাবে পরিগণিত হয়।
  • দুর্যোগ উপযুক্ত আধুনিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

দুর্যোগ কত প্রকার

পৃথিবীব্যাপী যে সকল দুর্যোগ সংঘটিত হয় সেগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

যথা- প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানবসৃষ্ট দুর্যোগ।

১. প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাকে বলে | Natural Disaster

প্রাকৃতিক কারণে যে সকল দুর্যোগ সৃষ্টি হয়, সেগুলোকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে। এ ধরনের দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, নদীভাঙন, লবণাক্ততা, তুষারপাত ইত্যাদি।

২. মানবসৃষ্ট দুর্যোগ | Man-made Disaster

মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বলতে মানুষের অবহেলা, ভূলভ্রান্তি বা কোনো বিশেষ অভিপ্রায়ের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগকে বুঝায়। অর্থাৎ এ ধরনের দুর্যোগ মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্টি হয়।

যুদ্ধ, পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ, রাসায়নিক দূষণ, খাদ্যে কীটনাশক ব্যবহার, অপরিকল্পিত ও ত্রুটিপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ ইত্যাদি মানবসৃষ্ট দুর্যোগের অন্তর্ভুক্ত।

১৯৪৫ সালে আমেরিকা কর্তৃক জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণে অসংখ্য মানুষ, সম্পদ ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা নামে একটি ভবন ধ্বসে পড়ে বহু মানুষ হতাহত হয়। এগুলো মানবসৃষ্ট দুর্যোগের উদাহরণ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পর্যায় কয়টি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ধাপ কয়টি

বাংলাদেশ ও ভারত একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। প্রায় প্রতি বছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, কালবৈশাখী, নদীভাঙন, খরার মতো কোনো না কোনো দুর্যোগে আক্রান্ত হয়।

এসব দুর্যোগ মোকাবেলা করতে গিয়ে সরকার যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা একটি দক্ষ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন দেশে পরিণত করেছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত কার্যক্রমকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গৃহীত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

১. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় দেশের জনগণের দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যে কোনো প্রলয়ংকরী দুর্যোগ মোকাবেলায় একটি জরুরি সাড়া প্রদান পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।

২. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর দুর্যোগ সংক্রান্ত কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন, তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা, গবেষণা কর্ম পরিচালনা, গণসচেতনতা বৃদ্ধি, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে দুর্যোগ পূর্ব প্রস্তুতি এবং মোকাবেলায় কাজ করে থাকে।

৩. জাতীয় পর্যায়ে নীতি নির্ধারণ ও সমন্বয়

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে নীতি নির্ধারণ ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল, আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি এবং জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে।

৪. স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি

স্থানীয়ভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি রয়েছে। এসব কমিটির মধ্যে রয়েছে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রভৃতি। এসব কমিটি দুর্যোগ পূর্ববর্তী এবং দুর্যোগ পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ের উপর অনার্স, মাস্টার্স এবং ডিপ্লোমা কোর্স চালু করেছে। এছাড়া অন্যান্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের কারিকুলামে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ।

৬. প্রশিক্ষণ

সরকার দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদস্যগণকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। যেমন- পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং বিভিন্ন এনজিওর সহযোগিতায় জেলায় জেলায় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে।

৭. সতর্কীকরণ বার্তা প্রচার

দুর্যোগ পূর্ববর্তী সতর্কীকরণের জন্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দুর্যোগ বার্তা প্রচার, এসএমএস, ইন্টারেকটিভ ভয়েস রেসপন্স, কমিউনিটি রেডিও, উপকূলীয় অঞ্চলে পকেট রেডিও ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

দুর্যোগের ধরণ

দুর্যোগ দুই ধরনের হতে পারে। যথা- ধীর গতিসম্পন্ন দুর্যোগ এবং দ্রুত গতিসম্পন্ন দুর্যোগ।

১. ধীর গতিসম্পন্ন দুর্যোগ | Slow Onset Disaster

ধীর গতিসম্পন্ন দুর্যোগ হলো এমন একটি অবস্থা, যা মানুষের খাদ্য ও জীবিকানির্বাহের পণ্যসামগ্রী সংগ্রহের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত হয়। যেমন- খরা, শস্যহানি, কৃষিক্ষেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ ইত্যাদি। এ ধরনের দুর্যোগ সহজেই চিহ্নিত করা যায় বলে তা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়।

২. দ্রুত গতিসম্পন্ন দুর্যোগ | Rapid Disaster

এ ধরনের দুর্যোগ আকস্মিক ঘটে থাকে বলে তা সহজে প্রতিরোধ করা যায় না। দ্রুত গতিসম্পন্ন দুর্যোগের ফলে মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং জীবন ও সম্পদহানি ঘটে। যেমন ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত ইত্যাদি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কি

প্রাকৃতিক দুর্যোগ হ’ল এমন ঘটনা যা মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই ঘটে, যা জীবন ও মানুষের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে, প্রযুক্তিগত বিপর্যয়, অবহেলা বা খারাপ পরিকল্পনার পরিণতিগুলির জন্য মানুষ দায়ী।

সম্পর্কিত বিপর্যয় সৃষ্টিকারী প্রাকৃতিক ঘটনার প্রকার অনুসারে প্রাকৃতিক দুর্যোগের অনেক কারণ রয়েছে। সাধারণভাবে, একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় জলবায়ু ঘটনা, ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া, জৈবিক কারণ বা স্থানিক ঘটনা দ্বারা সৃষ্ট। চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে এই ঘটনাগুলি বিপর্যয় হিসাবে বিবেচিত হয়। জলবায়ু সম্পর্কিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, বন্যা আগুন, টর্নেডো, উত্তাপের তরঙ্গ এবং শীতল তরঙ্গ। অন্যদিকে, আমাদের মহাকাশ বিপর্যয়গুলি রয়েছে যা উল্কা এবং গ্রহাণুগুলির প্রভাবগুলির তুলনায় খুব কম ঘন ঘন হয়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাকে বলে

প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো একপ্রকারের প্রাকৃতিক ঘটনা, যাতে মানুষের আর্থ-সামাজিক ক্ষতি হয়ে থাকে। যদিও তা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবেই ঘটে থাকে, তবে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের কাজ-কর্মের প্রভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় এরকম ঘটনা ঘটে থাকে। সাধারণ ভাষ্যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম।প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন: বিপর্যয় কাকে বলে, পরিবেশ বিপর্যয় কাকে বলে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় কাকে বলে

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ ও প্রতিকার

যেকোনাে ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সাময়িকভাবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয় । অর্থনীতি হয়। নানাভাবে বিপর্যস্ত। ভূপ্রাকৃতিক বিন্যাস অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল। তাই সব ধরনের দুর্যোগ মােকাবিলার জন্য সরকারিভাবে বাস্তবসম্মত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

বেসরকারি উদ্যোগকেও দিতে হবে। প্রয়ােজনীয় পৃষ্ঠপােষকতা। স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে তুলতে হবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি জাতীয় দুর্যোগ। তাই দেশ ও দশের স্বার্থে দুর্যোগ মােকাবিলায় সকলকে দৃঢ়চিত্তে সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই দুর্যোগ পরবর্তী সমস্যা মােকাবিলা ও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানাে সম্ভব।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ

এই বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ার কারণগুলির মধ্যে আমাদের নিম্নলিখিত রয়েছে:

  • জলবায়ু কারণ: এগুলি তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বাতাস, বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ইত্যাদির বায়ুমণ্ডলীয় আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে ঘটে vari সাধারণত বায়ুমণ্ডলীয় ভেরিয়েবলের এই হঠাৎ পরিবর্তন ঘটে যা ঘূর্ণিঝড়, বৈদ্যুতিক ঝড়, টর্নেডো, ঠান্ডা বা উত্তাপের মতো তাত্পর্য সৃষ্টি করে।
  • ভূতাত্ত্বিক কারণ: এগুলি সাধারণত তখন ঘটে যখন টেকটোনিক প্লেটগুলির গতিশীলতা এবং পৃথিবীর ভূত্বকের গতিশীলতার কারণে ভূমিকম্প, সুনামিস এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত ঘটে।
  • জৈবিক কারণ: বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতা রোগজনিত জীব এবং তাদের ভেক্টরগুলির বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। এইভাবে, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলির বৃদ্ধি মহামারী বা মহামারী তৈরি করতে পারে।
  • মহাশূন্য: পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশকারী উল্কা এবং গ্রহাণু মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতিকার

প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পূর্ণভাবেই প্রাকৃতিক। এ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব নয়। তবে গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এবং পরিকল্পতভাবে দুর্যোগ মােকাবিলা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানাে যায়। যেমন-

১. জলােচ্ছ্বাস ও বন্যা সমস্যা মােকাবিলার জন্য উপকূলীয় অঞলে প্রচুর পরিমাণে বনায়ন ও নদীর পানি বহন ক্ষমতা বাড়ানাের জন্য নদী খনন করা যেতে পারে।

২. ঘূর্ণিঝড় ও জলােচ্ছাস মােকাবিলায় আবহাওয়া পূর্বাভাসের মাধ্যমে জনগণকে সতর্ক করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চল থেকে দুত লােকজনকে সরিয়ে নিতে হবে নিরাপদ স্থানে। প্রয়ােজনে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

৩. ভূমিকম্প হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোথায় আশ্রয় নিতে হবে সে সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে। ধ্বংসযজ্ঞ হলে।দুত উদ্ধার তৎপরতা চালানাের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লােকবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করতে হবে ।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রকারভেদ

চরম স্তরকে প্রভাবিত করে এমন কোনও ঘটনাটিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আসুন দেখুন তারা কি:

  • Avalancha: এটি মহাকর্ষের প্রভাবের কারণে খাড়া ভূখণ্ডের সাথে প্রচুর পরিমাণে তুষারপাত। যদি এটি মানুষের দখলে বা ভ্রমণ করা অঞ্চলগুলিতে ঘটে থাকে তবে এটি মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
  • ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়: তারা বিশাল আকারের ঘূর্ণি ঝড় তুলছে। এই ঘূর্ণিঝড়গুলি ভারী বৃষ্টিপাত এবং দ্রুতগতির বাতাসের সাথে রয়েছে। বাতাস সমুদ্র, বন্যার উপর অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে, অবকাঠামো ধ্বংস করতে পারে এবং এমনকি মানুষের মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
  • গ্রাউন্ড স্লাইডস: এটি একটি তুষারপাতের মতো একটি আন্দোলন তবে opালু স্থল জনসাধারণের সাথে এটি বেশ খাড়া। এটি সাধারণত তীব্র এবং দীর্ঘায়িত বৃষ্টিপাতের কারণে ঘটে যা জলে জলে মাটি ভরাট করে এবং ভূমিধসের কারণ হয়। এগুলি ভূমিকম্পের অস্তিত্বের কারণেও ঘটতে পারে।
  • মহামারী এবং মহামারী: সংক্রামক রোগ গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। মহামারী সংক্রামক দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে এবং মহামারী হতে পারে।
  • আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত: এগুলি হ’ল ম্যাগমা, ছাই এবং গ্যাসগুলির বহিষ্কার যা পৃথিবীর আচ্ছাদন থেকে আসে। ম্যাগমা একটি প্রবাহে প্রবাহিত হয় যা পৃথিবীর পৃষ্ঠতল জুড়ে বিস্তৃত হয় এবং তার পথে সমস্ত কিছু পুড়িয়ে দেয়।
  • শিলাবৃষ্টি: ৫-৫০ মিমি বরফ প্রস্তর বৃষ্টিপাতের সাথে ভারী শিলাবৃষ্টি প্রভাব ফেলতে পারে এবং যথেষ্ট ক্ষতি করতে পারে।
  • উল্কা এবং ধূমকেতু প্রভাব: এগুলি প্রায়শই কম তবে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। উল্কাটি 50 মিমি ব্যাসের আকারের একটি ছোট স্বর্গীয় দেহ।
  • বনের আগুন: বেশিরভাগ দাবানল মানবসৃষ্ট, যদিও অনেকগুলি প্রাকৃতিকভাবে ঘটে। চরম খরার পরিস্থিতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে শুকনো উদ্ভিদকে জ্বলতে এবং আগুন শুরু করতে পারে।
  • বন্যা: প্রচুর বৃষ্টিপাতের সময় এগুলি বড় নদী এবং হ্রদের উপচে পড়া দ্বারা উত্পাদিত হয়। দীর্ঘ কভারটি অবকাঠামো ধ্বংস করতে পারে, প্রাণী ও মানুষকে টেনে আনতে পারে, গাছকে উপড়ে ফেলতে পারে ইত্যাদি can
  • খরা: এটি একটি দীর্ঘ সময়ের জন্য বৃষ্টির অনুপস্থিতি এবং ফলস্বরূপ উচ্চ তাপমাত্রা। ফসল নষ্ট হয়, প্রাণী মারা যায় এবং ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কারণে মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।
  • ভূমিকম্প: অপ্রত্যাশিত হওয়ার কারণে তারা যথেষ্ট আশঙ্কা করছেন এবং এর গুরুতর পরিণতিও হতে পারে। এটি কোনও কাঠামো ভেঙ্গে ফেলতে পারে, বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, জলের পাইপ, বাঁধ এবং অন্যান্য দুর্ঘটনাগুলি ভেঙে দিতে পারে।
  • বালু এবং ধূলি ঝড়: এগুলি শুষ্ক এবং আধা শুকনো অঞ্চলে হয়। বিশেষত মরুভূমিগুলি প্রচণ্ড বাতাসের কারণে ঘটে যা বালু স্থানচ্যুত করে এবং মেঘ তৈরি করে যা দম বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ঘর্ষণজনিত কারণে জীবিত মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
  • স্থগিত কণা– বালু এবং ধূলিঝড়ের কারণে ঘটে এবং খুব শ্বাসকষ্টজনিত দূষণকারী হতে পারে যা শ্বাসকষ্টের গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে।
  • বৈদ্যুতিক ঝড়: এগুলি গরম এবং আর্দ্র বাতাসের আপডেটফ্রন্টগুলি জমা হওয়ার কারণে ঘটে যা বেশ অস্থির পরিবেশে প্রবেশ করে। ফলস্বরূপ, ভারী বৃষ্টিপাত, বাতাস এবং এমনকি শিলাবৃষ্টি সহ বজ্রপাত এবং বিদ্যুৎ উত্পাদিত হয়।
  • টর্নেডো: এটি মেঘের একটি এক্সটেনশন যা বিপ্লবে বাতাসের শঙ্কু তৈরি করে। তারা অবকাঠামো ধ্বংস করতে পারে, যোগাযোগের রুটের ক্ষতি করতে পারে এবং প্রাণী ও মানুষের জীবনকে হুমকিতে ফেলতে পারে।
  • সুনামিস: এগুলিকে জোয়ার তরঙ্গও বলা হয়। এগুলি ডুবো ভূমিকম্পের অস্তিত্বের ফলে ঘটে যা প্রচুর তরঙ্গ উচ্চ গতিতে চলে আসে। উপকূলে প্রভাব সহ তারা প্রভাব এবং বন্যার কারণে বড় বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।
  • তাপ তরঙ্গ: এটি নিয়মিত তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে একটি অঞ্চলের গড় উপরে থাকে যা এই একই স্থান এবং বছরের জন্য স্বাভাবিক। সাধারণত খরা সঙ্গে ভাল।
  • শীতল তরঙ্গ: বিপরীতে তাপ তরঙ্গ এবং এগুলি সাধারণত খারাপ আবহাওয়ার সাথে থাকে।
আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | প্রাকৃতিক দুর্যোগ

Q1. মানবসৃষ্ট দুর্যোগ কি কি

Ans – মানুষের অবহেলা ভুলভ্রান্তি অথবা ইচ্ছা করে যে দুর্যোগের সৃষ্টি হয় তাকে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বলে।

Q2. দুর্যোগ প্রশমন কি

Ans – দুর্যোগ বলতে দুর্ঘটনাকে বোঝায়, যা প্রাকৃতিকভাবে বা মনুষ্যসৃষ্ট কর্মের দ্বারা সংঘটিত হয় যার ফলে বিধ্বংসী ফলাফল ঘটে। তবে আগে থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা হলে এই দুর্ঘটনাগুলি এড়ানো যেতে পারে। দুর্যোগ প্রতিরোধ বা এর পরবর্তী প্রভাব পরিচালনার এই প্রক্রিয়াটিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলা হয়।

Q3. প্রাকৃতিক দুর্যোগ কি কি

Ans – ভূমিকম্প, সুনামি, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ইত্যাদি।

Q5. মানবসৃষ্ট দুর্যোগের নাম

Ans – মানবসৃষ্ট বিপর্যয় হল অপরাধ, অগ্নিসংযোগ, নাগরিক ব্যাধি, সন্ত্রাস, যুদ্ধ, জৈবিক/রাসায়নিক হুমকি, সাইবার-আক্রমণ ইত্যাদি।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।