সুভা গল্পের প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

অষ্টম শ্রেণীর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখিত সুভা গল্পের সারসংক্ষেপ

উঃ । মেয়েটি জন্মাবার সময় বড়ো দুই বোনের সঙ্গে নাম মিলিয়ে তার নাম রাখা হয়েছিল সুভাষিণী । কিন্তু সকলে তাকে আদর করে ডাকত সুভা বলে । যতদিন যায় মেয়েটির কথা না বলে অনুভব করা দেখে সকলে চিন্তায় পড়ে গেল এবং ক্রমশ বোঝা গেল যে মেয়েটি বোবা হয়েই জন্মেছে । তার মা তাকে নিজের ত্রুটি স্বরূপ দেখলেও পিতা বাণীকণ্ঠ কিন্তু মেয়েকে খুবই ভালোবাসত । সুভার কথা ছিল না । সে সকল কিছু অনুভব করত আর তার ঠোঁট নবীন কিশলয়ের মতো কেঁপে উঠত । সুভার সকল অভাব পূরণ করে দিত চণ্ডীপুর গ্রামের প্রকৃতি । সেই গ্রামের নদীর কলধ্বনি , মাঝির গান , পাখির কোলাহলে সে আত্মীয়তা অনুভব করত ।

তার বন্ধু ছিল তাদের গোয়ালের দুটি গাভী সর্বশী এবং পাঙ্গুলি । সুভার ব্যথা – বেদনা সবই তারা অনুভব করত । একসময় সুভার সাথে গোঁসাইদের ছেলে প্রতাপের পরিচয় হয় । সে তাকে ‘ সু ’ বলে ডাকত । তার ছিপে মাছ ধরার নিত্যসঙ্গী ছিল এই সুভা । ক্রমশ সুভার বয়স বেড়ে উঠলে কলিকাতার তার জন্য পাত্র দেখা হয় । অবশেষে পত্রিকা মিলিয়ে শুভলগ্নে সুভার বিবাহ সম্পন্ন হয় । কিন্তু কিছুদিন পরেই সকলে বুঝতে পারে নববধূ বোবা । ফলস্বরূপ তার জীবনে নেমে আসে ভাগ্যের কুঠারাঘাত । যা অন্তর্যামী ছাড়া সকলের কাছেই অজ্ঞাত থেকে যায় । আর তার স্বামী পরীক্ষা করে ভাষাবিশিষ্ট এক কন্যাকে দেখেশুনে বিবাহ করে আনে ।

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

সুভার প্রকৃত নাম কী ?

উঃ । সুভার প্রকৃত নাম সুভাষিণী ।

সুভার বাবা কে ?

উঃ । সুভার বাবা হলেন বাণীকণ্ঠ ।

মুডা কোন্ গ্রামে বাস করত ?

উঃ । সুভা চণ্ডীপুর গ্রামে বাস করত ।

গল্পে সুভার কোন্ কোন্ বন্ধুর কথা রয়েছে ?

উঃ । গল্পে সুভার বাড়ির গোয়ালের দুটি গাভী সর্বশী ও পাঙ্গুলি নামে বন্ধুর কথা রয়েছে । এছাড়া গোঁসাইদের ছোটো ছেলে প্রতাপের সঙ্গেও সুভার বন্ধুত্ব ছিল ।

কে সুভাকে ‘ সু ‘ বলে ডাকত ?

উঃ । গোঁসাইদের ছোটো ছেলে প্রতাপ সুভাকে ‘ সু ‘ বলে ডাকত ।

সুভা গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

‘ সে নির্জন দ্বিগ্রহরের মতো শব্দহীন এবং সঙ্গীহীন ‘ — সূভা সম্পর্কে এরকম উপমা লেখক ব্যবহার করেছেন কেন ?

উঃ । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ সুভা ‘ গল্পের মূল চরিত্র । সুভা কথা বলতে পারে না । সকল অভিব্যক্তিতেই তার ঠোঁট নবীন কিশলয়ের মতো কেঁপে উঠত । তার মুখের মধ্যে ছেয়ে থাকত অসীম উদারতা ও গভীরতার অতল স্পর্শ । তাই বালক – বালিকারা একপ্রকার ভয়ে তার সাথে খেলা করত না । দ্বিপ্রহর অর্থাৎ দুপুরবেলায় যেমন পথঘাট নির্জন এবং শব্দহীন হয় সেভাবেই সুভার ভাষা ব্যবহারের অক্ষমতাকে লেখক নির্জন দ্বিপ্রহরের মতো শব্দহীন এবং সঙ্গীহীন এই উপমা ব্যবহার করেছেন ।

চণ্ডীপুর গ্রামের বর্ণনা দাও ।

উঃ । চন্ডীপুর গ্রামটি এক তন্বী নদী দিয়ে ঘেরা । নদীটি বাংলাদেশের একটি ছোটো নদী । গৃহস্থ ঘরের মেয়েটির মতো , বহুদূর পর্যন্ত তার প্রসার নয় । গ্রামের দু – ধারের সকলের সঙ্গেই তার একটা – না – একটা সম্পর্ক আছে । দু – ধারে লোকালয় এবং তরুছায়াঘন উচ্চতট , নিম্নতল দিয়ে গ্রামলক্ষ্মী স্রোতস্বিনী আত্মবিস্মৃত দ্রুত পদক্ষেপে প্রফুল্ল হৃদয়ে আপনার অসংখ্য কল্যাণকর্ম করে চলেছে । সুভার বাবা কালীপ্রসন্ন চণ্ডীপুর গ্রামেই বাস করতেন ।

‘ এইজন্য প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝিত — প্রতাপের কাছে সুভা কীভাবে মর্যাদা পেত , তা গল্প অবলম্বনে লেখো ।

উঃ । চণ্ডীপুর গ্রামের গোঁসাইদের ছোটো ছেলেটির নাম প্রতাপ । তার প্রধান শখ ছিল ছিপ ফেলে মাছ ধরা । কারণ এতে অনেকটা সময় কাটানো যায় । আর প্রতাপ যেকোনো কাজে একটা সঙ্গী পেলে ভালো থাকে । মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বশ্রেষ্ঠ , এই জন্যই প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝিত । সে সুভাকে ‘ সু ‘ বলে ডাকত । প্রতাপ পান খেত তাই সুভা নিজে সেটি সেজে এনে তাকে দিত ।

তাহাদের জাতি ও পরকাল রক্ষা হইল ‘ – কাদের সম্পর্কে এ কথা লেখক বলেছেন ? তাঁর এরূপ মন্তব্যের কারণ বিশ্লেষণ করো ।

উঃ । ‘ সুভা ‘ গল্পে সুভার মা – বাবার সম্পর্কে একথা লেখক বলেছেন । সুভা জন্ম থেকেই বোবা ছিল । এই বোবা মেয়ের বিয়ের বয়স হওয়ায় সুভার বাবা মা চিন্তিত ছিলেন । তাছাড়া লোকে নিন্দা করা শুরু করেছিল , তাদের একঘরে করা হতে পারে এমন প্রস্তাবও উঠেছিল । কিন্তু তার মা – বাবা সেকথা কলিকাতার পাত্রের কাছে অঙ্গতি রেখে সুভার বিবাহ দিল এতে তাদের জাতি ও পরকাল রক্ষা হলো বলে লেখক কটাক্ষ করেছেন ।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

সুভা গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর

সুভার সঙ্গে মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব কেমন ছিল তা লেখো ।

উঃ । সুভার সঙ্গে মানুষের খুব একটা সম্পর্ক না থাকলেও মনুষ্যতর প্রাণীর সম্পর্ক তথা বন্ধুত্ব খুব ভালোই ছিল । সর্বশী ও পাঙ্গুলি নামে দুটি গাভী এবং একটি বিড়াল শাবক ও একটি ছাগল ছিল সুভার অন্তরঙ্গ বন্ধু । তারা যেমন সুভার দুঃখে দুঃখিত হতো তেমনি সুভার আদর , ভৎসনা , মিনতি সবই তারা বুঝতে পারত । সুভা যখন দুহাত দিয়ে সর্বশীর গলা জড়িয়ে তার কানের কাছে নিজের গাল ঘষত , তখন পাঙ্গুলি স্নেহের দৃষ্টিতে দেখে তার গা চেটে দিত । বাড়িতে কেউ কোনো কঠিন কথা বললে সুভা এই মুক বন্ধু দুটির কাছে চলে আসত , আর তারাও যেন সহিয়ু শাস্ত্র দৃষ্টিতে কোনও এক অনুমান বলে সুভার মনোবেদনা বুঝতে পারত । তার কাছে এসে হাতে শিং ঘষে তাকে সান্ত্বনা দিত । গোয়ালের গাভী ছাড়াও ছাগল এবং বিড়ালছানাও ছিল সুভার বন্ধু । বিড়ালশিশুটি সুভার কোলে ঘুমোতে এলে সে তার ঘাড়ে ও পিঠে আঙুল বুলিয়ে ঘুমের সহায়তা করত ।

শুক্লা দ্বাদশীর রাত্রিতে সুভার মনের অবস্থা কেমন ছিল ? তার মনের অবস্থা এরকম হওয়ার কারণ কী ?

উঃ । শুক্লা দ্বাদশীর রাত্রিতে সুভার মন বেদনায় ভারাক্রান্ত ছিল । সে তার শয়নকক্ষ থেকে বাইরে এসে তার চিরপরিচিত নদীর তীরে ঘাসের শয্যায় লুটিয়ে পড়ে সেই নীরব ধরণীমাতাকে জড়িয়ে ধরে বলতে চেয়েছিল যে মা যেন তাকে যেতে -না দেন , দুই বাহু বাড়িয়ে তিনি যেন তাকে ধরে রাখেন । কারণ , কলিকাতায় সুভার বিবাহের জন্য পাত্র দেখা হয়েছিল । তাই তাকে কলিকাতায় যেতে হতো । সে তার এই গ্রাম ও বাল্যসঙ্গীদের ছেড়ে যেতে চায়নি । সে কথা বলতে পারে না । নিজের অক্ষমতা সে জানত তাই বড়ো হয়ে ওঠার ফলে সমাজের কঠিন দৃষ্টিও সে বুঝতে পেরেছিল । তার চেনা পরিবেশ ছেড়ে সম্পূর্ণ অন্য জগতে সে ভালো থাকবে না এই কথা সে বুঝতে পেরে মানসিক বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল ।

গল্পের একেবারে শেষ বাক্যটি গল্পের ক্ষেত্রে কতখানি প্রয়োজন আলোচনা করো ।

উঃ । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ সুভা ‘ গল্পের একেবারে শেষ বাক্যাটি হলো ‘ এবার তাহার স্বামী চক্ষু এবং কর্মেন্দ্রিয়ের দ্বারা পরীক্ষা করিয়া একভাষা বিশিষ্ট কন্যা বিবাহ করিয়া আনিল । ‘ সুভা ‘ গল্পে বোবা মেয়ে সুভার জীবনের অনিশ্চয়তার কথা না ভেবে নিজেদের জাতি ও পরকাল রক্ষার জন্য পাত্রপক্ষকে লুকিয়ে সুভার বাবা বাণীকণ্ঠ তার বিয়ে দেন । তাঁরা বোঝার চেষ্টাই করলেন না যে কথা বলতে না পারার অক্ষমতার কথা না জানালে সুভার জীবনে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে । আসলে লেখক শেষের এই বাক্যটির মাধ্যমে আমাদের সমাজকে ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপ করেছেন । কারণ আমাদের সমাজ অনুশাসন অনুযায়ী পাত্র মেয়ে তথা পাত্রীকে চক্ষু কর্ণের দ্বারা পরীক্ষা করেই তবে বিবাহ করেন । কিন্তু সুভা কথা বলতে না পারায় তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিদায় দেওয়া হয় । তাই সমাজের অবস্থা বোঝাতে বাক্যটির প্রয়োজন অনিবার্য ছিল । শেষ বাক্যটির মধ্যে দিয়ে লেখক সুভার স্বামীর মানসিকতাকে কটাক্ষ করেছেন এবং এতে পাঠকের কাছে সুভার জীবনের করুণ পরিণতির এক ভবিষ্যত চিত্রও তুলে ধরেছেন । এই কারণেই গল্পের শেষ বাক্যটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করে এনেছে ।

সুভা গল্পের প্রশ্ন উত্তর, সুভা গল্পের PDF

বাংলা ভাষায় বাংলা সাহিত্য পরিচয় ক্লাস ৮ম (আট)

বাংলা ভাষায় বাংলা সাহিত্য পরিচয় ক্লাস ৮ম (আট)

সুভা গল্পের প্রশ্ন উত্তর

সুভার প্রকৃত নাম কী ?
উঃ । সুভার প্রকৃত নাম সুভাষিণী ।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।