পরবাসী কবিতার প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

পরবাসী কবিতার বিষয়সংক্ষেপ

সমগ্র কবিতাটির মধ্য দিয়ে কবি একদিকে যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা তুলে ধরেছেন, তেমনই তাঁর চির পরিচিত জগত ও মানুষের বদলে যাওয়ার কথাও বলেছেন। কবিতার শেষে কবি নিজের দেশেই বসবাস করে নিজেকে পরবাসী বলে মনে করেছেন। কবিতাটি পাঠ করলে দেখা যায়, দু-ধারে বন—মাঝখানে আঁকাবাঁকা পথে আলােছায়ার বিচিত্র নকশা তৈরি হয়েছে। রাতের অন্ধকারে বনের মধ্যে জীবজন্তুদের চোখ জ্বলজ্বল করছে। ছােটো খরগােশের দল খেলায় মেতে আছে। পলাশের ঝােপে বনময়ূর নৃত্য করছে। সেই নৃত্যকে কবি তুলনা করেছেন কখকের সঙ্গে। নদীতে তাঁবুর ছায়া পড়ে সূর্যের সােনালি রং উদ্ভাসিত হয়েছে। অতি সন্তর্পণে হরিণেরা নদীতে জল খেতে আসে, যা কবির কাছে মৌন আহ্বানের মতাে মনে হয়েছে। বন্যপ্রাণে চঞ্চলতা সৃষ্টি করে হিংস্র লােলুপ চিতা আনাগােনা করেছে।

কিন্তু এখন কোথায় সে অরণ্য ! মানুষ লােভের বশবর্তী হয়ে গ্রাম ধ্বংস করে শহর গড়ে তুলছে। চারিদিকে ধূধূ প্রান্তরে বাতাস যেন কেঁদে যায়। সৌন্দর্য-আধার ময়ূর পণ্যে পরিণত হয়েছে। কবি প্রশ্ন তুলেছেন—সব কিছু দেখেও এদেশের মানুষ নীরব কেন? নদী, গাছ, পাহাড়ের মর্যাদা নেই কেন? নিজের বাসভূমি থেকেও তাই কবির নিজেকে ‘পরবাসী’ বলে মনে হয়েছে।

পরবাসী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর | পরবাসী কবিতার প্রশ্ন উত্তর

কবি বিষ্ণু দে-র প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী ?

উঃ কবি বিষ্ণু দে-র প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘উর্বশী ও আর্টেমিস।

তাঁর লেখা দুটি প্রবন্ধের বইয়ের নাম লেখাে।

উঃ তাঁর লেখা দুটি প্রবন্ধের বইয়ের নাম—“রুচি ও প্রগতি এবং ‘সাহিত্যের ভবিষ্যৎ।

দুই দিকে বন, মাঝে ঝিকিমিকি পথ।

উঃ দুই দিকে বন, মাঝে আলােছায়া পথ।

এঁকে বেঁকে চলে প্রকৃতির তালে তালে।

উঃ এঁকে বেঁকে চলে প্রকৃতির আপন খেয়ালে।

তাঁবুর ছায়ায় নদীর সােনালি সেতারে।

উঃ তাঁবুর ছায়ায় নদীর গতির ছন্দে।

হঠাৎ পুলকে বনময়ূরের কথক।

উঃ হঠাৎ পুলকে বনময়ূরের নৃত্যভঙ্গি।

বন্য প্রাণের কথাকলি বেগ জাগিয়ে।

উঃ বন্য প্রাণের প্রলুদ্ধ বেগ জাগিয়ে।

পথ কীসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে ?

উঃ পথ প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে।

চিতার চলে যাওয়ার ছন্দটি কেমন ?

উঃ চিতার চলে যাওয়ার ছন্দটি লুদ্ধ ও হিংস্র।

ময়ূর কীভাবে মারা গেছে ?

উঃ ব্যবসায়িক ও নগর পত্তনের কারণে বনজঙ্গল কেটে পরিষ্কার করার ফলে এবং চোরা শিকার হওয়ার কারণেই ময়ূর মারা গেছে।

প্রান্তরে কার হাহাকার শােনা যাচ্ছে ?

উঃ প্রান্তরে শুকনাে হাওয়ার হাহাকার শােনা যাচ্ছে।

পলাশের ঝােপে কবি কী দেখেছেন ?

উঃ কবি পলাশের ঝােপে হঠাৎ পুলকে উল্লসিত ময়ূরের কত্থক নাচ দেখেছেন।

পরবাসী কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

জঙ্গলের কোন্ কোন্ প্রাণীর কথা কবি এই কবিতায় বলেছেন?

উঃ ‘পরবাসী’ কবিতায় কবি আমাদের দেশের নানান প্রাণীর উল্লেখ করছেন। প্রাণীদের মধ্যে প্রথমেই আছে। ছােটো খরগােশের কথা। এ ছাড়াও আছে বনময়ূর, হরিণ ও চিতার কথা।

সেতারের বিশেষণ হিসেবে কবি ‘সােনালি’ শব্দের ব্যবহার করেছেন কেন ?

উঃ ‘সেতার’ হল— তিন তারের সুরেলা বাদ্যযন্ত্র। দীর্ঘ তারে যন্ত্রটি বাঁধা, যা নদীর স্রোতের বহমানতার প্রতি ইঙ্গিত করে। আবার সেতার যে ধ্বনি তােলে, তাও নদীর কলধ্বনির সঙ্গে তুল্য। সােনালি আলােক যেমন মনের অবসাদ দূর করে সুন্দরভাবে ব্যক্তিকে শান্ত ও প্রশমিত করে, তেমনই সেতারের সুরও তাকে মােহিত-বিমুগ্ধ করে রাখে। একারণেই সেতারের বিশেষণে কবি ‘সােনালি’ শব্দের ব্যবহার করেছেন।

কথক ও কথাকলি-র কথা কবিতার মধ্যে কোন্ প্রসঙ্গে এসেছে ?

উঃ ‘পরবাসী’ কবিতায় কখক ও কথাকলির প্রসঙ্গ আলাদা আলাদা প্রাণীর প্রসঙ্গে এসেছে। ময়ূরের হঠাৎ পুলক জাগার কারণে কথকের মতাে নৃত্যশৈলীর কথা এসেছে। আর কথাকলি প্রসঙ্গ এসেছে চিতার লুদ্ধ হিংস্র ছন্দ বােঝাতে। একদিকে মনের সহজ- স্বাভাবিক আনন্দের প্রকাশ আর অন্যদিকে দুরন্ত গতিধর্মের আবেগ বর্ণনা প্রসঙ্গে কথাকলির কথা এসেছে।

‘ সিমুনির হরিণ-আহ্বান’ কবি কীভাবে শুনেছেন ?

উঃ পরবাসী কবি-মন বন-জঙ্গল, প্রান্তর, টিলা—সর্বত্রই ছুটে চলেছে। চলার আবেগে কবি নদীর কলনাদ শুনতে নদীর পাড়েও গিয়েছেন। জঙ্গলাকীর্ণ, নদীর কাছে গিয়ে কবি চিতার দুর্বার আবেগে লুদ্ধ হিংস্র ছন্দ লক্ষ করেছেন। আর সেখানেই বন্যপ্রাণীর প্রাণের বেগে কথাকলির নৃত্যের তালে সিধুমুনির আহ্বান শুনেছেন।

‘ময়ূর মরেছে পণ্যে’ —এই কথার অন্তর্নিহিত অর্থ কী ?

উঃ ময়ূর হল সৌন্দর্যের আধার। সে কলাপ বা পেখম মেলে যখন নৃত্য করে, তখন তা সবাইকে আকৃষ্ট করে। আবার এই ময়ূরকে বেসাতি করে লােভী মানুষ তাদের ধন-ঐশ্বর্য-সম্পদ বাড়িয়ে চলে। আজ বনজঙ্গল সাফ করে মানুষ নগর পত্তন করেছে। ময়ূর মেরে তার পালক দিয়ে ঘর সাজিয়েছে। বিক্রি করতেও দ্বিধাবােধ করেনি। ময়ূরের মাংসও মানুষ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করছে অর্থাৎ, ময়ূর আজ মানুষের ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হওয়ায় তার বিলুপ্তিও ঘটছে। একারণে কবি ময়ূরের অবলুপ্তি প্রসঙ্গে কথাটি বলেছেন।

পরবাসী কবে নিজবাসভূমি গড়বে কবির মনে এমন প্রশ্ন জেগেছে কেন

উত্তর :- আধুনিক যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি বিষ্ণু দে’পরবাসী’ কবিতায় এদেশের সাধারণ মানুষের অনিবার্য পরিণতি কে ব্যক্ত করেছেন। আধুনিক সভ্যতার করাল থাবায় এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিভাবে ধ্বংস হচ্ছে,নিজেদের প্রয়োজনে বনকে ধ্বংস করে, বন্যপ্রাণীদের ধরে বিক্রি করে দিচ্ছে লােভী মানুষের দল। অর্থাৎ বর্তমান সভ্যতা ও সংস্কৃতির যে জীবনধারা ও অভিরুচি তা আমাদের চিরাচরিত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিরােধী বলেই তা আমাদের কে নিজের দেশে পরবাসী করে রেখেছে। তাই কবি কার্যত আক্ষেপের সুরে প্রশ্ন করেছেন কবে আমরা আমাদের চিন্তা-চেতনা বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে প্রকৃত অর্থে নিজ বাসভূমি গড়ে তুলব।

পরবাসী কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

বিরামচিহ্ন ব্যবহারের দিক থেকে কবিতাটির শেষ স্তবকের বিশিষ্টতা কোথায় ? এর থেকে কবিমানসিকতার কী পরিচয় পাওয়া যায় ?

উঃ বিষ্ণু দে-র ‘পরবাসী’ কবিতাটির শেষ স্তবকের চারটি বাক্যে কবি চারটি জিজ্ঞাসা চিহ্ন ব্যবহার করেছেন, যা কবিতাটিকে বিশেষ মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।

বিরামচিহ্নের ব্যবহার ভাষার একক বাক্যের স্বরূপকে নির্দেশ করে। আবার এর মাধ্যমে কবি কাব্যালংকার, বিশেষ করে, শ্লেষ অলংকারের প্রয়ােগ করেন। ‘পরবাসী’ কবিতার শেষ স্তবকে সেই কাব্যালংকারের বিশিষ্ট প্রয়ােগ লক্ষ করা যায়। কবি যেন তির্যক, তীক্ষ্ণ প্রশ্নের কশাঘাতে মানুষের, বিশেষত ব্যাবসাজীবী, মানুষের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন। সভ্যতার আগ্রাসনে পৃথিবীর নদী, পাহাড়, গাছ লুপ্ত হচ্ছে। বনবাসী প্রাণীরা হারিয়ে যেতে বসেছে। নিজের দেশেই মানুষ উদ্বাস্তুর মতাে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হয়েছে। তারা স্থায়ী স্বাভাবিক, চিরপ্রত্যাশিত নিজস্ব বাসস্থান গড়ে তুলতে পারে না। কবি এখানেই প্রকৃতির স্বাভাবিকতাকে পেতে আগ্রহী। শেষ স্তবকে কবির একাধিক প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে আমরা তাঁর বন্যপ্রাণ, বণ্যপ্রাণী তথা প্রকৃতি প্রেমের পরিচয় পাই।

কবি নিজেকে পরবাসী বলেছেন কেন ?

উঃ প্রকৃতি ও মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে দিয়েই সভ্যতা টিকে আছে। কিন্তু পরবাসী’ কবিতায় কবি সৌন্দর্যময় বিশ্বপ্রকৃতির শ্বাশ্বত রূপের সঙ্গে স্বার্থপর মানুষের নির্লজ্জ অমানবিকতার ছবি তুলে ধরেছেন। এই বৈপরীত্য, এক অর্থে বিপর্যয়। প্রথম স্তবকে কবি দেখেছেন, প্রকৃতির স্বচ্ছন্দ্য বৈচিত্র্য। বাঁকা পথ, দুধারে বন, কচিকচি খরগােশ, পলাশের ঝােপ, উৎফুলিত বনময়ূরের কথক ভঙ্গি, নদীর জল, চুপিসারে হরিণের জল খাওয়া, কিংবা হিংস্রছন্দে বন্য চিতার যাতায়াত সব কিছুই যেন প্রকৃতির ক্যানভাসে এক একটি জীবন্ত ছবি। এটাই তাে কবির প্রিয় দেশ। কিন্তু চতুর্থ স্তবক থেকে কবির কণ্ঠে শােনা গিয়েছে, আশাহীণতার বাণী। গ্রামের অপমৃত্যু, ময়ূরের পণ্যে পরিণত হওয়া, হাওয়াও যেন হাহাকার রবে বয়ে যায়। কবির কাছে তাঁর প্রিয় দেশের এই পরিণতি সহ্য করা ছিল অসহ্য। আবেগহীন, ভালােবাসাহীন এই দেশকে কবি নিজের দেশ বলে আর ভাবতে পারছিলেন। আর এই মানসিক তথা সামাজিক বিপর্যয়গ্রস্ত সমাজে কবি সৌন্দর্যময় বিশ্ব প্রকৃতির চিরকালীন রূপের সন্ধান পান না বলেই নিজভূমে নিজেকে ‘পরবাসী বলেছেন।

“জঙ্গল সাফ, গ্রাম মরে গেছে, শহরের/পত্তন নেই…”-প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এই পঙক্তিটির প্রাসঙ্গিকতা বিচার করাে।

উঃ আলােচ্য উদ্ধৃতাংশটি বিষ্ণু দে-র লেখা ‘পরবাসী কবিতার থেকে গৃহীত হয়েছে ।

প্রকৃতি ও মানুষ একে অপরের অভিন্ন অংশ। পারস্পরিক সহচার্যে তারা প্রকৃতিকে সুন্দর করে তুলেছে। কিন্তু কবি বিষ্ণু দে প্রতিদিন প্রকৃতিকে একটু একটু করে ধ্বংস হতে দেখছেন। মানুষের অতিরিক্ত লােভই এর জন্য দায়ী। অরণ্য ধ্বংস হয়েছে। গ্রাম নষ্ট করে নগর তৈরি হলেও আদর্শ শহর গড়ে ওঠেনি, যেখানে সকলের স্থান হয়। পৃথিবীর আবহাওয়া ক্রমাগত বিষাক্ত হয়ে উঠছে। সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে মানুষ বন্যপ্রাণীদের পণ্যে পরিণত করেছে। সভ্যতার আগ্রাসনে নদী, পাহাড়, গাছ লুপ্ত হয়ে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যা কবির হৃদয়কে ক্ষুদ্ধ করে তুলেছে। এইভাবে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক বােঝাতে কবি আলােচ্য পঙক্তিটির অবতারণা করেছেন। এই পঙক্তিটির উপজীব্যই হল—প্রকৃতিও মানুষ একে অপরের পরিপূরক।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

পরবাসী কবিতার PDF

বাংলা ভাষায় বাংলা সাহিত্য পরিচয় ক্লাস ৮ম (আট)

বাংলা ভাষায় বাংলা সাহিত্য পরিচয় ক্লাস ৮ম (আট)

পরবাসী কবিতার প্রশ্ন উত্তর

কবি বিষ্ণু দে-র প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী ?
উঃ কবি বিষ্ণু দে-র প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘উর্বশী ও আর্টেমিস।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।