পালকির গান কবিতা আবৃত্তি
পালকি চলে!
পালকি চলে!
গগন-তলে
আগুন জ্বলে!
স্তব্ধ গাঁয়ে
আদুল্ গায়ে
যাচ্ছে কারা
রৌদ্রে সারা
ময়রা মুদি
চক্ষু মুদি’
পাটায় ব’সে
ঢুলছ ক’ষে!
দুধের চাঁছি
শুকছে মাছি,_
উড়ছে কতক
ভন্ ভনিয়ে।_
আসছে কা’রা
হন্ হনিয়ে?
হাটের শেষে
রুক্ষ বেশে
ঠিক্ দুপুরে
ধায় হাটুরে!
কুকুরগুলো
শুঁকছে ধুলো,_
ধুঁকছে কেহ
ক্লান্ত দেহ।
ঢুকছে গরু
দোকান-ঘরে,
আমের-গন্ধে
আমোদ করে!
পালকি চলে,
পালক চলে_
দুল্কি চালে
নৃত্য তালে!
ছয় বেহারা,_
জোয়ান তারা,_
গ্রাম ছাড়িয়ে
আগ্ বাড়িয়ে
নামলো মাঠে
তামার টাটে!
তপ্ত তামা;_
যায় না থামা,_
উঠ্ছে আলে
নামছে গাঢ়ায়,_
পালকি দোলে
ঢেউয়ের নাড়ায়!
ঢেউয়ের দোলে
অঙ্গ দোলে!
মেঠো জাহাজ
সামনে বাড়ে,_
ছয় বেহারার
চরণ-দাঁড়ে!
কাজ্লা সবুজ
কাজল প’রে
পাটের জমী
ঝিমায় দূরে!
ধানের জমী
প্রায় সে নেড়া,
মাঠের বাটে
কাঁটার বেড়া!
‘সামাল্’ হেঁকে
চলল বেঁকে
ছয় বেহারা,_
মর্দ্দ তারা!
জোর হাঁটুনি
খাটনি ভারি;
মাঠের শেষে
তালের সারি।
তাকাই দূরে,
শূন্যে ঘুরে
চিল্ ফুকারে
মাঠের পারে।
গরুর বাথান,_
গোয়াল-থানা,_
ওই গো! গাঁয়ের
ওই সীমানা!
বৈরাগী সে,_
কণ্ঠী বাঁধা,_
ঘরের কাঁথে
লেপছে কাদা
মটকা থেকে
চাষার ছেলে
দেখছে, ডাগর
চক্ষু মেলে!
দিচ্ছে চালে
পোয়াল গুছি;
বৈরাগীটির
মূর্ত্তি শুচি।
পরু জাপতি
হলুদ বরণ,_
শশার ফুলে
রাখ্ছে চরণ!
কার বহুড়ি
বাসন মাজে?_
পুকুর ঘাটে
ব্যস্ত কাজে,_
এঁটো হাতেই
হাতের পোঁছায়
গায়ের মাথায়
কাপড় গোছায়!
পালক দেখে
আসছে ছুটে
ন্যাংটা খোকা,_
মাথায় পুঁটে!
পোড়ার আওয়াজ
যাচ্ছে শোনা,_
খোড়ো ঘরে
চাঁদের কোণা!
পাঠশালাটি
দোকান-ঘরে,
গুরুমশাই
দোকান করে!
পোড়া ভিটের
পোতার ‘পরে
শালিক নাচে
ছাগল চড়ে।
গ্রামের শেষে
অশথ-তলে
বুনোর ডেরায়
চুল্লী জ্বলে;
টাটকা কাঁচা
শাল-পাতাতে
উড়ছে ধোঁয়া
ফ্যান্সা ভাতে।
গ্রামের সীমা
ছাড়িয়ে, ফিরে
পাল্কী মাঠে
নামলো ধীরে;
আবার মাঠে,_
তামার টাটে,_
কেউ ছোটে, কেউ
কষ্টে হাঁটে;
মাঠের মাটি
রৌদ্রে ফাটে,
পালকি মাতে
আপন নাটে!
শঙ্খচিলের
সঙ্গে, যেচে_
পাল্লা দিয়ে
মেঘ চলেছে!
তাতারসির
তপ্ত রসে
বাতাস সাঁতার
দেয় হরষে!
গঙ্গাফড়িং
লাফিয়ে চলে,
বাঁধের দিকে
সূর্য্য ঢলে।
পালকি চলে রে!
অঙ্গ ঢলে রে!
আর দেরী কত?
আরো কত দূর?
”আর দূর কি গো?
বুড়ো-শিবপুর
ওই আমাদের;
ওই হাটতলা,
ওরি পেছুখানে
ঘোষেদের গোলা।”
পালকি চলে রে,
অঙ্গ টলে রে;
সূর্য্য ঢলে,
পালকি চলে!
পালকির গান কবিতার ব্যাখ্যা, মূলভাব
পালকি চলে কবিতাটি ছন্দের জাদুকর সতেন্দ্রনাথ দত্তের অন্যতম শ্রেষ্ঠ lyrical poem | যদি কবিতার মূল ভাবের আলোচনা করা যায় তাহলে গোটা কবিতা জুড়ে মৃদুমন্দ দুলকি চালে চলে যাওয়া একটি পালকি গ্রামবাংলার পল্লীজীবনের বিভিন্ন কোলাজ জীবনের নানান অঙ্গিকে পরিবেশন করা হচ্ছে জীবন এবং সময় একে অপরের সাথে সংযুক্ত |
সময় এবং জীবনের চোরাস্রোতের অন্তরালে একটা চিরন্তন সুর এবং সঙ্গীত পরিব্যপ্ত হয়ে আছে যুগযুগান্ত ধরে, পালকি চলে নামটির মধ্যে যে ‘চলে’ শব্দটি আছে সেটি হল আসলে Eternal journey of our soul into the way of freedom, truth and niceties এবং পালকির প্রতীকি অর্থ হিসাবে পালকি হল আমাদের soulful life |
জীবন গতিময় ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া কে তোয়াক্কা না করেই সময় নানান সুখ,দুঃখ,হাসি,কান্না,পাওয়া না পাওয়ার পথ অতিক্রম জীবনকে এগিয়ে নিয়ে চলে |
আবার Ancient Philosophy বলে এই যাত্রায় দেহ ক্লান্ত হয়ে পরিত্যক্ত হলেও আত্মার গতি অসীম এবং চিরন্তন | কবি ছন্দের মূর্ছনায় একদিকে যেমন ‘জীবন রূপ’পালকির চূড়ান্ত অগ্রগমন কে তুলে ধরেছেন |তেমনই পল্লীবাংলার বিভিন্ন চলমান ঘটনার টুকরো টুকরো ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের ছবি তুলে ধরে চলমান জীবনের চলমান vagrant gypsies of Life পরিবেশন করেছেন এবং শেষে কিন্তু পালকির গতিকে স্তব্ধ করেননি!! অর্থাৎ জীবনের চলার গানই হল পালকি চলের প্রধান ভাববস্তু যেখানে পল্লীগ্রামের ‘Authentic life resource’কে আশ্রয় করে কবি সতেন্দ্রনাথ আত্মিক দৃষ্টি দিয়ে গতিময় জীবনের philosophical vision পাঠকদের কাছে পরিবেশন করেছেন |
পালকির গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর
‘পালকির গান’ কবিতার লেখক কে?
উত্তর: পালকির গান কবিতার লেখক সতেন্দ্রনাথ দত্ত্ব
দুপুরের রোদে পালকির বেহারাদের কী অবস্থা হয়েছে?
উত্তর:দুপুরের রোদে ক্লান্তিতে পালকির বেহারাদের শরীর কাঁপছে। তাদের সারা শরীর থেকে অবিরাম ঘাম ঝরছে। মনে হচ্ছে যেন তারা ঢলে পড়ে যাবে।
পাটায় বসে ময়রা কী করছে?
উত্তর: পাটায় বসে ময়রা চোখ বন্ধ করে ঝিমুচ্ছে।
হাটুরে কোথায় যাচ্ছে?
উত্তর: হাটুরে হনহনিয়ে বাড়ি ফিরছে।
কুকুরগুলো ধুঁকছে কেন?
উত্তর:দুপুরের রোদে ক্লান্ত হয়ে কুকুরগুলো ধুঁকছে।
গঙ্গা ফড়িং কী করছে?
উত্তর: গঙ্গা ফড়িং লাফিয়ে চলছে।
শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করে, অর্থ বলো।
গগন, আদুল, পাটা, ভনভনিয়ে, কষে, হাটুরে, ধুঁকছে, অঙ্গ, স্তব্ধ, ধায়, শুষছে।
উত্তর:
- শব্দ অর্থ
- গগন – আকাশ।
- আদুল – খালি গায়ে বা জামাকাপড় ছাড়া।
- পাটা – তক্তা।
- ভনভনিয়ে – ভনভন শব্দ করে।
- কষে – জোরে।
- হাটুরে – জিনিসপত্র বেচাকেনার জন্যে যে হাটে যায়।
- ধুঁকছে – হাঁপাচ্ছে।
- অঙ্গ – দেহ, শরীরের অংশ।
- স্তব্ধ – নীরব।
- ধায় – ছোটে।
- শুষছে – তরল পদার্থ টেনে নেওয়া।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পালকির গান কবিতার Pdf
কথা হে কাহিনী প্রকাশনী প্রাইভেট লিমিটেড কর্তৃক বাংলা সাহিত্য পরিচয়, ক্লাস 4
পালকির গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর
‘পালকির গান’ কবিতার লেখক কে?
উত্তর: পালকির গান কবিতার লেখক সতেন্দ্রনাথ দত্ত্ব
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।