WBBSE Class 9 Bangla | Ilias Bengali Story, ইলিয়াস | Model Activity Task Class 9 Bengali Part 5
নিম্নলিথিত প্রশ্ন এবং তার যথাযত সমাধান ছোটো প্রশ্ন এবং বড়ো (LA) প্রশ্নের উত্তর সমাধান হিসাবে পাঠ করা যেতে পারে।
প্রশ্নোত্তর এবং সমাধান
“ইলিয়াসের তখন খুব বােলবােলাও’—’বােলবােলাও’ শব্দের অর্থ উল্লেখ করে উধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে। অথবা, ইলিয়াসের বােলবােলাও কীভাবে হয়েছিল?
উত্তর: লিও তলস্তয় রচিত ‘ইলিয়াস’ গল্পে ব্যবহৃত উধৃতাংশে ‘বােলবােলাও শব্দের অর্থ হল নামডাক বা খ্যাতি।
দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছরের কঠোর পরিশ্রম এবং সুব্যবস্থাপনায় ইলিয়াস বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠে। দুশাে ঘােড়া, দেড়শো গােরু-মােষ এবং বারােশাে ভেড়া-সহ ভাড়াটে মজুর-মজুরনির মনিবে পরিণত হয় ইলিয়াস৷ ক্রমশ তার খ্যাতি এবং পরিচিতি দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
এই কারণেই, আশেপাশের সকলেই তাকে হিংসা করতে থাকে ।
ইলিয়াস গল্পের সারসংক্ষেপ, ইলিয়াস গল্পের সারাংশ
ধনী হওয়া : ইলিয়াসের বাস উফা প্রদেশে। ইলিয়াসের বিয়ের এক বছর পরে তার বাবা মারা যায়। তখন তার যা বিষয়সম্পত্তি তাতে তাকে ধনী বা গরিব বলা যায় না। তার সম্বল তখন সাতটি ঘােটকী, দুটি গােরু, কুড়িটা ভেড়া মাত্র। তাদের স্বামীস্ত্রীর পরিশ্রমের ফলে প্রতি বছর অবস্থার উন্নতি হতে হতে পঁচিশ বছরে তারা প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়ে যায়। দুশাে ঘােড়া, দেড়শাে গােরু-মােষ, বারােশাে ভেড়া। সেগুলি দেখভালের জন্য মজুর, আর দুধ দোয়া, কুমিস, মাখন, পনির বানানাের জন্য মজুরানি রাখতে হয়। পড়শিরা তাকে ঈর্ষা করে, আবার ভাগ্যবান বলে ইলিয়াসের মনও জোগায়।
সব হারিয়ে হতদরিদ্র : অবস্থা ভালাে হলে যা হয়, ভালাে লােকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে, দূর দূর থেকে অতিথিরা আসে। তাদের পরিচর্যায় খানাপিনার ধুম চলে। ইলিয়াসের দু-ছেলে এক মেয়ে। ধনী হওয়ায় তারা আয়েশি হয়ে পড়ে। বড়াে ছেলে মারামারিতে পড়ে মারা যায়। ছােটো ছেলে বাপের আদেশ অমান্য করায় বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়। অবশ্য ইলিয়াস তাকে একটা বাড়ি ও কিছু গােরু-ঘােড়াও দেয়, কিন্তু শেষমেশ সে দূরদেশে চলে যায়। মেয়েটিও মারা যায়। মড়কে- দুর্ভিক্ষে পালিত পশুগুলি মরতে থাকে, ভালাে ঘােড়া চুরি হয়ে যায়। অবশিষ্ট পশু বিক্রি হয়ে যায়। সম্বল বলতে থাকে এক লােমের টুপি, কোট আর জুতাে।
ভাড়াটে মজুৱ-মজুৱানি : বুড়াে ইলিয়াস আর বুড়ি শামশে মাগি পড়শি মহম্মদ শার বাড়িতে ভাড়াটে মজুর ও মজুরানি হয়ে কাজ করতে থাকে। প্রথমে কাজ করতে বেশ কষ্ট হতাে, পরে পরে সব সয়ে যায়। এদের রেখে মহম্মদ শার সুবিধেই হয়। এরা কর্মঠ ও অভিজ্ঞ ।
ইলিয়াসদেৱ বর্তমান জীবন সম্পর্কে জ্ঞাতব্য : মহম্মদ শার বাড়িতে একদিন অনেক দূর থেকে আত্মীয়রা এল। তারা খাওয়াদাওয়ার পর কুশনে বসে কুমিস পান করছিলেন, এমন সময় ইলিয়াস কাজ শেষ করে দরজার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তার পরিচয় দেয় মহম্মদ শা। বলে যে, ওই বুড়াে হলাে এই অঞ্চলের একসময়ের ধনী ও নামকরা মানুষ ইলিয়াস। দুঃখ প্রকাশ করে অতিথি মন্তব্য করেন যে, ভাগ্যচক্রে কার কখন কী ঘটে বলা যায় না। অতিথি ইলিয়াসের সঙ্গে কথা বলতে চান। মহম্মদ শার ডাকে ইলিয়াস ও তার স্ত্রী আসে। অতিথি জানতে চান, ইলিয়াস অতীতের সুখসমৃদ্ধি আর এখনকার দুরবস্থার কথা ভেবে কষ্ট পায় কি না। ইলিয়াস সবিনয়ে বলে যে, তাঁর এ কথার যথার্থ উত্তর দিতে পারবে তার বৃদ্ধা স্ত্রী শাম-শেমাগি।
দুশ্চিন্তামুক্ত সুখী জীবন : বৃদ্ধার উত্তর হলাে তারা পাশ বছর একসঙ্গে বাস করছে। যখন তাদের সমৃদ্ধি ছিল তখন তারা সুখ খুঁজে সুখ পায়নি। এখন ভাড়াটে মজুর-জীবনে পেয়েছে। সুখ। বুড়ি পর্দা সরিয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে হাসল, তার স্বামীও হাসল। ফের বলল, তারা যথার্থ সুখ পেয়েছে, আর কিছুই চায় না। যখন তারা ধনী ছিল, তখন উদবেগ ছিল, দুশ্চিন্তা ছিল, দিন-রাত্তির খেটে মরতে হতাে, রাতে ঘুম হতাে না, বুড়াের সঙ্গে মতবিরােধ হওয়ায় দ্বন্দ্ব-কলহ হতাে। এক দুর্ভাবনা থেকে আরএক দুর্ভাবনায় দিন কাটত, এক পাপ থেকে আর-এক পাপে জড়িয়ে যাওয়া হতাে। এখনকার সুখী জীবনে সেগুলির স্পর্শমাত্র নেই। এখন তাদের একমাত্র কাজ মালিকের সেবা করা। তাতে বুড়াে-বুড়ির লাভ বই ক্ষতি নেই। তাদের এখন আত্মা-বিষয় ভাববার, ঈশ্বরের প্রার্থনা করার সময় আছে। পঞ্চাশ বছরের চাওয়া সুখ এতদিনে মিলেছে।
ইলিয়াস গল্পের নামকরণের সার্থকতা
গল্পের নামকরণ নানাভাবে হয় । ‘ইলিয়াস’ গল্পের ইলিয়াস প্রধান চরিত্র। সে নাম-ভূমিকায়। তার নাম অনুসারে গল্পের নাম দেওয়া যথাযথ ও সার্থক হয়েছে কী , তা বিচার্য বিষয়।
উফা প্রদেশের বাসিন্দা ইলিয়াসের বিয়ের এক বছর পরে তার বাবা মারা যায়। তখন সে ধনী বা গরিব ছিল না। ছিল মােটামুটি সম্পত্তির মালিক। তারপর স্বামী-স্ত্রীর কঠোর পরিশ্রমে আর সুব্যবস্থায় তারা ক্রমশ উন্নতি করে ধনী হয়ে যায়। আবার ভাগ্যচক্রে তারা সম্পদ হারাতে হারাতে একসময় সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। প্রতিবেশী মহম্মদ শার কৃপায় তার বাড়িতে ভাড়াটে মজুর ও মজুরানি হয়ে তারা জীবন চালাতে থাকে। মহম্মদ শার আত্মীয় অতিথিদের কাছে তাদের বর্তমান জীবনের ছবিটি তুলে ধরে। প্রকৃতপক্ষে তারা সম্পদহীন ও নিঃস্ব হয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছে। তাদের অবসর আসায় তারা জীবন চালাতে আত্মা নিয়ে ভাববার ফুরসত পেয়েছে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার অবকাশ মিলেছে। তারা এতদিন সুখ খুঁজে পায়নি, এখন সুখ পেয়েছে। ঈশ্বর তাদের কাছে সত্য উন্মুক্ত করেছেন।
ইলিয়াস গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর, ইলিয়াস গল্প, ইলিয়াসের প্রশ্ন উত্তর
ইলিয়াস গল্পে দেখানো হয়েছে আসল সুখ কী ? অর্থই সুখের একমাত্র সোপান নয় , এই সত্যই প্রতিষ্ঠা দিলেন লিও তলস্তয় ।
লিও তলস্তয়ের ইলিয়াস নামক গল্পখানি মানবজীবনের একটি সার্বিক সত্য প্রস্ফুটিত হয়েছে । অর্থ আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ , যার মধ্যে দিয়ে সব কিছু বশ করা সম্ভব হয় । তবে এই অর্থ কী চিরস্থায়ী ? অর্থাৎ আজ যিনি অর্থবান , কালকেও থাকবেন এমন তো নয় । ইলিয়াস গল্পটি গভীর অভিনিবেশে পাঠ করে একটা মহৎ সত্য অনুধাবিত হয় মনের গভীর কোনে , অর্থ নয় জীবনের সবটুকু , হয়তো মূল্যবান অংশ , তবে সবটুকু নয় । একথাখানিই যেন তলস্তয়ে বলতে চেয়েছেন ।
ছোট করে গল্পটির বিষয়বস্ত্ত একটু শুনিয়ে দিই , তাহলে বিষয়টি হৃদয়জাত হবে । ইলিয়াস নামক একজন কৃষক ছিলেন , উফা প্রদেশের বাসকির নামক গ্রামে তাঁর বাস । অত্যন্ত কর্মঠ একজন মানুষ । বাবা মারা যাবার সময় তাঁর সম্পদ ছিল সাতটা ঘোটকী, দুটো গরু , কুড়িটা ভেড়া । এই সম্পদ নিয়েই শুরু হয় ইলয়াসের জীবনের লড়াই । পরবর্তী ৩৫ বছর কঠোর পরিশ্রম করে তিনি প্রচুর সম্পত্তির মালিক বনে যান । দুশ ঘোড়া , দেড়শ গরু মোষ , বারটা ভেড়া , ছেলে মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার । অর্থর সঙ্গে সঙ্গেই সমান্তরাল ভাবে সমাজিক প্রতিপত্তি বাড়লো ইলিয়াসের । সন্মান সাথে সাথে ঈর্ষাও জুটলো কপালে । সবাই বলতে থাকল ইলিয়াস ভাগ্যবান মানুষ , কোন কিছুর অভাব নেই ।
ছেলে মেয়েরা বড় হওয়ায় বিয়ের ব্যবস্থা করলেন ইলিয়াস । এই বিয়ের পরপরই যেন শনি ঢুকল তাঁর পরিবারে । ছেলেদের মধ্যে শুরু হলো মারামরি । অতিষ্ট হয়ে ইলিয়াস তাঁদেরকে দিলেন বাড়ি থেকে তাড়িয়ে । নিজের সম্পত্তি থেকে কিছু অংশ তাঁদের দিলেন ইলিয়াস , ফলে সম্পত্তিতেও পড়লো টান । মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা সেই বছরেই নামল দুর্ভিক্ষ । মোড়ক লাগলো গোশালায় । মারা গেল একে একে ইলিয়াসের গরু ছাগল মোষ । আবার গরীব হয়ে গেলেন এবার ইলিয়াস । বিতাড়িত পুত্র দুই চলে গেছে অনেক দূর । মেয়েটি গেছে মরে । কে দেখবে , নেবে ভরণপোষনের দায় ! শেষে মহম্মদ শা নামক একজন সহৃদয় মধ্যবিত্ত মানুষ আশ্রয় দিলেন ইলিয়াস ও স্ত্রীকে ।
একদিন মহম্মদ শার বাড়িতে এলো দূর দেশ থেকে একদল আত্মীয়স্বজন । ইলিয়াসকে দেখিয়ে মহম্মদ শা অতিথিদের উদ্দেশ্য বললেন , ইনি হলেন মান্যবর ইলিয়াস , একসময় তিনি ছিলেন এ তল্লাটের সবচেয়ে সেরা ধনী । অতিথিরা অবাক হলেন , তারা ইলিয়াসকে চোখে না দেখলেও নাম শুনেছে অনেক । জীবন সম্পর্কে ইলিয়াস ও তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে কিছু শুনতে চাইলেন অতিথিরা । তাঁদের উদ্দেশ্য ইলিয়াস যে কথাখানি বলেছিলেন , তা আমাদেরকে ভাবায় , বিচলিত করে । আগে ধনী ছিলেন , এখন তো গরীব , কোন অবস্থা ভাল ছিল এ কথার উত্তরে ইলিয়াসের স্ত্রী জনান –
”অর্ধশতাব্দী ধরে আমরা সুখ খুঁজেছি ; যতদিন ধনী ছিলাম , কখনও সুখ পাইনি । কিন্তু আজ এমন সুখের সন্ধান আমরা পেয়েছি যে আর কিছুই চাই না । ‘
কথাটি গভীর অর্থবহ । যতদিন ধনী ছিলেন ইলিয়াস , জীবনে ব্যস্ততা ছিল হয়তো , তার সঙ্গে ছিল হিংসা , অহংকারের চোরাস্রত । স্বামী স্ত্রীর মাঝেও তা একটা ব্যবধান করে রেখেছিল । সে কথায় গল্পের একত্র বলেছেন ইলিয়াসের স্ত্রী –
”যখন ধনী ছিলাম , বুড়ো বা আমার এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি ছিল না , কথা বলবার সময় নেই । অন্তরের কথা ভাববার সময় নেই , ঈশ্বরের কাছে প্রাথনার সময় নেই । দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না । ‘ ‘
সত্যই বাংলার একখানা প্রবাদের কথা মনে পড়ে গল্পটি পাঠ করতে গিয়ে , অর্থ অনর্থর কারণ । পুরো গল্পে এই বোধটাই বিচলিত করে আমাদের ।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আরো বিশদে পড়ার জন্য
শেখার ফলাফলের জন্য 5E মডেল.
ডাঃ উজ্জ্বল কুমার মজুমদার (লেখক)
FAQ | ইলিয়াস গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
Q১. ‘ইলিয়াস নামে একজন বাসকির বাস করত’ – ইলিয়াস বাস করত —
Ans – উফা প্রদেশ
Q২. ‘এই তার যা কিছুই বিষয়-সম্পত্তি’-কার কথা বলা হয়েছে?
Ans – ইলিয়াস
Q3. পাশেপাশের সকলেই তাকে ঈর্ষা করে’ – ঈর্ষা করার কারণ
Ans – ইলিয়াসের তখন খুব বোলবোলাও