জারন বিজারন, জারন ও বিজারন কাকে বলে
আধুনিককালে ইলেকট্রন বর্জন ও গ্রহণের ভিত্তিতে জারণ বিজারণ বিক্রিয়ার ব্যাখ্যাকে জারণ বিজারণের মতবাদ বলে।
জারণ কাকে বলে
ইলেকট্রনীয় মতবাদ অনুসারে যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোন পরমাণু বা মূলক বা আয়ন এক বা একাধিক ইলেকট্রন দান করে সেই বিক্রিয়াকে জারণ বলে।
কিন্তু যে রাসায়নিক সত্ত্বা −e− দান করে তাকে বিজারক পদার্থ বলে।
বিজারণ কাকে বলে
ইলেকট্রনীয় মতবাদ অনুসারে যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোন পরমাণু বা মূলক বা আয়ন এক বা একাধিকইলেকট্রন গ্রহণ করে সেই বিক্রিয়াকে বিজারণ বলে।
কিন্তু যে রাসায়নিক সত্ত্বা −e− গ্রহণ করে তাকে জারক পদার্থ বলে।
জারণ বিজারণ বিক্রিয়ার উদাহরণঃ
সোডিয়াম ও ক্লোরিন এর পারস্পারিক বিক্রিয়ায় NaCl উৎপন্ন হয়।
2Na+Cl2⟶2NaCl2Na+Cl2⟶2NaCl
কোন অনু বা পরমানু ইলেকট্রন ত্যাগ করলে তাকে জারন বলে। কোন অনু বা পরমানু ইলেকট্রন গ্রহন করে তাকে বিজারন বিক্রিয়া বলে।
জারন বিজারন বিক্রিয়া
ইলেকট্রনীয় মতবাদ অনুসারে, এই বিক্রিয়ায় প্রত্যেক সোডিয়াম (Na) পরমাণু এর সর্ববহিঃস্থ স্তর হতে একটি ইলেকট্রন দান করে নিজে জারিত হয়ে সোডিয়াম আয়নে (Na+Na+) পরিণত হয়।
অপরদিকে প্রত্যেক ক্লোরিন পরমাণু সোডিয়াম প্রদত্ত একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে নিজে বিজারিত হয়ে ক্লোরাইড আয়নে (Cl−Cl−) পরিণত হয়। অতঃপর ভিন্নধর্মী উভয় আয়ন যুক্ত হয়ে NaCl গঠন করে।
জারণঃ 2Na2Na (বিজারক) ⟶2Na++2e−⟶2Na++2e−
বিজারণঃ Cl2Cl2 (জারক) +2e−⟶2Cl−+2e−⟶2Cl−
(+) করে, 2Na+Cl2⟶2Na+Cl−2Na+Cl2⟶2Na+Cl−বা 2NaCl2NaCl
কাজেই দেখা যায় যে, কোন পদার্থ জারিত হওয়ার সময় ইলেকট্রন ত্যাগ করে এবং বিজারিত হওয়ার সময় ইলেকট্রন গ্রহণ করে।
জারণ বিক্রিয়ায় বিজারক যতটি ইলেকট্রন দান করে বিজারণ বিক্রিয়ায় জারক ততটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে। অর্থাৎ জারণ ও বিজারণ বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন আদান প্রদান ঘটে।
জারন বিজারন বিক্রিয়া কাকে বলে
কোনো মৌলের জারণ সংখ্যা, যৌগে বিদ্যমান অন্যান্য মৌলের জারণ বিজারন বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক থেকে ইলেকট্রন বর্জন করাকে জারন বিক্রিয়া বলে। এক কথায়, যে বিক্রিয়ায় ইলেকট্রনের আদান-প্রদান ঘটে তাকে জারণ-বিজারণ বা রেডক্স বিক্রিয়া বলে। তবে এই জারণ ও বিজারণ একই সাথে সংঘটিত হয়। কারণ কোন বিক্রিয়ক ইলেকট্রন ত্যাগ করার পর সেই ইলেকট্রন গ্রহণ করার মতো কোন বিক্রিয়ক থাকে।
জারন-বিজারন বিক্রিয়ায় যে বিক্রিয়ক ইলেকট্রন ত্যাগ করে তাকে বিজারক ও যে বিক্রিয়ক ইলেকট্রন গ্রহণ করে তাকে জারক বলে।
জারন সংখ্যা কি
যৌগ গঠনের সময় কোনো মৌল যত সংখ্যক ইলেকট্রন বর্জন করে ধনাত্মক আয়ন উৎপন্ন করে অথবা যত সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়ন উৎপন্ন করে তাকে ঐ মৌলের জারণ সংখ্যা (Oxidation Number) বলে। অর্থাৎ আয়নে সৃষ্ট চার্জের সংখ্যাই ঐ মৌলের জারণ সংখ্যা। যেমন : Na+, Al³⁺, Cl−, O2– এর জারণ সংখ্যা যথাক্রমে +1, +3, -1, -2.
জারণ সংখ্যা ধনাত্মক, ঋণাত্মক এমনকি ভগ্নাংশ হতে পারে।
জারন সংখ্যা কাকে বলে, জারণ সংখ্যা কাকে বলে
যৌগ গঠনের সময় কোনো মৌল যে পরিমাণ ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋনাত্মক বা বর্জন করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় তাকে ঐ মৌলের জারন সংখ্যা বলে।
কোন যৌগে একটি পরমাণু যে অবস্থায় আছে, মৌলের মুক্ত অবস্থা হতে সে অবস্থায় আসতে পরমাণুটিকে যতসংখ্যক ইলেকট্রক বর্জন বা গ্রহণ বা শেয়ার করতে হয়, সেই সংখ্যাকে ঐ যৌগে ঐ পরমাণুর জারণ সংখ্যা বলে। কোন যৌগে কোনো মৌলের উপরিস্থিত চার্জ সংখ্যাকে ঐ যৌগে মৌলটির জারণ সংখ্যা বলে।
ইলেকট্রন দান করলে জারণ সংখ্যা ধনাত্মক এবং ইলেকট্রন গ্রহণ করলে জারণ সংখ্যা ঋণাত্মক হয়। প্রকৃতপক্ষে কোন যৌগে কোন মৌল কতসংখ্যক কিরূপ তড়িৎ আধানযুক্ত, জারণ সংখ্যা তাই নির্দেশ করে।
উদাহরণঃ আয়নিক যৌগে NaCl গঠনকালে Na পরমাণু থেকে একটি ইলেকট্রন অপসারিত হয়েছে। সুতরাং এই যৌগে Na এর জারণ সংখ্যা +1 । অপরদিকে Cl পরমাণু একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করেছে। অপসারণের বিপরীত প্রক্রিয়া ঘটেছে বলেই এই যৌগে Cl এর জারণ সংখ্যা -1 । অবশ্য সমযোজী যৌগের ক্ষেত্রে জারণ সংখ্যা নির্ণয়ের সময়, শেয়ারকৃত ইলেকট্রনের প্রতি যে মৌলের আসক্তি বেশি তার জারণমান “-” চিহ্ন এবং যে মৌলের আসক্তি কম তার জারণ মান “+” চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন – HCl এ H এর জারণ মান +1 এবং Cl এর জারণ সংখ্যা -1
জারন সংখ্যা নির্নয়
জারণ সংখ্যা নির্ণয়ের পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলো :
১. ধাতুসমূহের জারণ সংখ্যা ধনাত্মক এবং অধাতুসমূহের জারণ সংখ্যা ঋণাত্মক হয়। যেমন : NaCl এ Na এর জারণ সংখ্যা + 1 এবং Cl এর জারণ সংখ্যা – 1।
২. নিরপেক্ষ পরমাণু বা মুক্ত মৌলের জারণ সংখ্যা শূন্য হয়। যেমন : Fe, H2 যৌগে Fe এর জারণ সংখ্যা 0। আবার H এর জারণ সংখ্যাও 0।
জারণ সংখ্যার ব্যবহার
জারণ সংখ্যার প্রধান ব্যবহারসমূহ নিচে দেওয়া হলো:
- আয়নিক যৌগের সংযুক্তি ও সংকেত নির্ণয়ে জারণ সংখ্যা ব্যবহৃত হয়।
- অজৈব যৌগের নামকরণে জারণ সংখ্যার ব্যবহার ব্যাপক। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মৌলের জারণ সংখ্যা রোমান সংখ্যা দ্বারা মৌলের বা আয়নের নামের পর ব্র্যাকেটসহ লেখা হয়।
- জারণ সংখ্যার সাহায্যে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ায় জারক ও বিজারকের মোলার অনুপাত নির্ণয় করা যায়।
- জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার সমীকরণের সমতাকরণের ক্ষেত্রেও জারণ সংখ্যার ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়।
জারন সংখ্যা ও যোজনীর মধ্যে পার্থক্য
জারণ সংখ্যা ও যোজনীর মধ্যে পার্থক্য নিম্নে দেওয়া হলঃ
যোজনী (Valency)
অণু গঠনকালে কোনো মৌলের একটি পরমাণুর সাথে অপর একটি মৌলের কোনো পরমাণু যুক্ত হবার সামর্থ্যকেই যোজনী বলে। আবার অন্যভাবে বলা যায়, কোন মৌলের একটি পরমানু যতগুলো হাইড্রোজেন(H) অথবা তার সমতুল্য (যেমনঃ- ক্লোরিন(Cl), সোডিয়াম(Na) ইত্যাদি) অন্য মৌলের যত সংখ্যক পরমাণুর সাথে সংযুক্ত হতে পারে তাকে যোজনী বলে। হাইড্রোজেনের যোজনী সবসময় ১ ধরা হয়। অন্যদিকে ক্লোরিনের একটি পরমাণু হাইড্রোজেনের একটি পরমাণুর সাথে মিলে HCl গঠন করে বলে ক্লোরিনের যোজনীও ১, কেননা এটি কেবল একটি হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত হয়েছে।
জারণ সংখ্যা (Oxidation Number):
যৌগ গঠনের সময় কোনো মৌল যত সংখ্যক ইলেকট্রন বর্জন করে ধনাত্বক আয়ন উৎপন্ন করে বা যত সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্বক আয়ন উৎপন্ন করে তাকে মৌলের জারণ সংখ্যা বলে। অর্থাৎ যৌগ গঠনের সময় কোনো মৌল যত সংখ্যক ইলেকট্রন বর্জন করে ধনাত্মক আয়ন উৎপন্ন করে বা যত সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্বক আয়ন উৎপন্ন করে তাকে মৌলের জারণ সংখ্যা বলে। নিরপেক্ষ বা মুক্ত বা পরমাণু অবস্থায় মৌলের জারণ সংখ্যা শূন্য(০) ধরা হয়। ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে মৌলের জারণ সংখ্যাকে ঋণাত্মক জারণ সংখ্যা এবং ইলেকট্রন বর্জন করেধনাত্মক আয়নে পরিণত হলে একে ধনাত্মক জারণ সংখ্যা বলে।
ধাতু সমুহের জারণ সংখা ধনাত্বক এবং অধাতু সমু্হের জারণ সংখা ঋণাত্বক এবং যৌগ মূলক সমুহের জারণ সংখ্যা তাদের আধান অনুসারে হয়। যৌগ ভেদে অর্থাৎ বিভিন্ন যৌগে একই মৌলের জারণ সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যেমন: HCl অণুতে H-এর জারণ সংখ্যা +1 আবার H2 অণুতে এর জারণ সংখ্যা ০। একই ভাবে,HCl অণুতে Cl-এর জারণ সংখ্যা -1 এবং Cl2 অণুতে জারণ সংখ্যা ০। Cu এর জারণ সংখ্যা +2
যোজনী ও জারণ সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য
যৌগ গঠনের সময় কোনো মৌল যত সংখ্যক ইলেকট্রন বর্জন করে ধনাত্বক আয়ন উৎপন্ন করে। যোজনী ও জারণ সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-
যোজনী | জারণ সংখ্যা |
---|---|
অণু গঠনকালে কোনো মৌলের একটি পরমাণুর সাথে অপর একটি মৌলের কোনো পরমাণু যুক্ত হবার সামর্থ্যকেই যোজনী বলে। | যৌগ গঠনের সময় কোনো মৌল যত সংখ্যক ইলেকট্রন বর্জন করে ধনাত্বক আয়ন উৎপন্ন করে বা যত সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্বক আয়ন উৎপন্ন করে তাকে মৌলের জারণ সংখ্যা বলে। |
যোজনী হলো কোন মৌল অপর মৌলের সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতা। | অন্যদিকে, জারণ সংখ্যা হল, যৌগ গঠনে অংশগ্রহণকৃত মৌলসমূহের ইলেকট্রন আদান-প্রদানের সংখ্যা। |
যোজনী সাধারনত স্থির, তবে কিছু মৌলের পরিবর্তনশীল যোজনী রয়েছে। তবুও তা পূর্ব নির্ধারিত থাকে। | অন্যদিকে, একই মূলকের ভিন্ন ভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটনের সময় জারন মান ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। |
জারন সংখ্যা ধনাত্বক বা ঋনাত্বক হতে পারে। | অন্যদিকে, যোজনী সব সময় ধনাত্বক । |
মৌলের যোজনী সব সময় পূর্ণ সংখ্যা বা শূন্য হতে পারে। যেমনঃ নিষ্ক্রিয় গ্যাসের যোজনী শূন্য হয়। | অন্যদিকে, জারণ সংখ্যা পূর্ণসংখ্যা, ভগ্নাংশ বা শূন্য হতে হতে পারে। |
যোজনীর উদাহরণ- Cu2SO4 এ Cu এর যোজনী +২ । | অন্যদিকে, জারন সংখ্যার উদাহরণ- KMnO4 এ Mn এর জারন মান +৭ । |
FAQ | জারন সংখ্যা
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
Q1. cu এর জারন সংখ্যা কত
Ans – Cu এর জারণ মান +২।
Q2. zn এর জারন সংখ্যা কত
Ans – zn এর জারন সংখ্যা ২।
Q3. c এর জারন সংখ্যা কত
Ans – C এর জারন সংখ্যা শূন্য।
Q4. n এর জারন সংখ্যা কত
Ans – নাইট্রোজেন যৌগস্থ নাইট্রোজেনের সর্বোচ্চ জারণ মান 5 হতে পারে। কারণ নাইট্রোজেন এর 2টি জারণ মান 3, 5।
Q5. hno3 এর জারন সংখ্যা
Ans – hno3 এর জারণ সংখ্যা +5
Q6. h3po4 এর জারন সংখ্যা
Ans – h3po4 এর জারণ সংখ্যা +5
Q7. mno2 এর জারন সংখ্যা
Ans – mno2 এর জারণ মান ০।
Q8. cl এর জারন সংখ্যা কত
Ans – Cl র জারন সংখ্যা +1 ও –1.
Q9. fe এর জারন সংখ্যা কত
Ans – Fe এর জারণ সংখ্যা 0 হয়।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।