পৃথিবীর বয়স কত
পৃথিবীর বয়স সম্প্রতি প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পর্যন্ত হয়েছে। এটি বীজগণিতিক গণনা এবং সাংস্কৃতিক ধারণার উপর ভিত্তি করে। প্রথম পৃথিবীর গঠন হয়েছিল প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে, এবং একটি প্রসারিত বিশ্বের মাঝে এই সময়ে পৃথিবী অতিরিক্ত সময় সংকটের মুখে পরে।
এটি অতিক্রান্ত সময়ে পরিস্থিতিগত ও জীবনগত পরিবর্তনের ফলে পরিবর্তিত হয়েছে। মানব সভ্যতা ও বিজ্ঞানের উদ্ভাবনের সাথে সাথে এর জীবনপদার্থ ও সাংস্কৃতিক বদলের গতি এগিয়ে আসেছে। এখনও বৃহত্তর পরিবেশ ও জীবনযাপনের অধিকার দাবি করছে মানুষ। পৃথিবীর বয়স সম্পর্কে নতুন আবিষ্কার ও গবেষণা চলছে, এবং সেগুলো নতুন তথ্য ও বুদ্ধিমত্তা দ্বারা আমাদের জ্ঞানের ক্ষেত্রে পরিবেশন করা হবে।
পৃথিবীর বয়স সম্পর্কে সঠিক তথ্য খুঁজে বের করা মানুষের পক্ষে সহজ কাজ ছিলো না। ১৬শ শতাব্দীর ইংরেজ স্কলার জন লাইটফুটের কথাই ধরা যাক। জন লাইটফুট হঠাৎ একদিন বিজ্ঞান মহলে ঘোষণা করলেন পৃথিবী খ্রিস্টপূর্ব ৪০০৪ সালের ২৬ অক্টোবর ঠিক রাত ৯টায় সৃষ্টি হয়েছিলো।
কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মানুষ যখন সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কে আরো বেশি জানতে পারল, তখন লাইটফুটের দাবি আর টিকে থাকেনি। কারণ, আজ থেকে প্রায় ২০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে ছিলো ডায়নোসরদের বসবাস।
পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫৪ ± ৫ কোটি বছর (৪.৫৪ × ১০৯ বছর ± ১%)। এই বয়স উল্কার রেডিওমেট্রিক বয়স নির্ণয় থেকে প্রাপ্ত এবং প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন পার্থিব ও চাঁদের পাথরের রেডিওমেট্রিক বয়সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে রেডিওমেট্রিক বয়স নির্ণয় পদ্ধতি আবিষ্কারের পর ইউরেনিয়াম-সীসা বয়স নির্ণয় পদ্ধতিতে দেখা যায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ খনিতে এমন সীসা বিদ্যমান যার বয়স প্রায় ১০০ কোটি বছরের বেশি হবে। এই ধরনের খনি থেকে প্রাপ্ত সবচেয়ে পুরনো ছোট ও স্বচ্ছ বস্তু হল গোমেদ-মণি, যা পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার জ্যাক হিলস নামক স্থানে পাওয়া যায়, যার বয়স কমপক্ষে ৪৪০.৪ কোটি বছর।
সৌরজগতে গঠিত উল্কাপিন্ডের মধ্যে ক্যালসিয়াম-অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ সবচেয়ে প্রাচীন কঠিন বস্তুর বয়স প্রায় ৪৫৬.৭ কোটি বছর।
পৃথিবীর ভর কত
সৌরজগতে আটটি গ্রহের মধ্যে সূর্যের সবচেয়ে নিকটে রয়েছে বুধ, তারপর রয়েছে শুক্র এবং এরপর পৃথিবী। অর্থাৎ সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ হল আমাদের পৃথিবী। আয়তনে পৃথিবী সৌরজগতের পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ। আবার ভরের দিক দিয়ে পৃথিবী সৌরজগতের ষষ্ঠ গ্রহ।
পৃথিবীর ভর 5.972 x 10 ^ 24 কেজি বা প্রায় 6,000,000,000,000,000,000,000,000 কেজি। এত বড় একটি সংখ্যা আমরা বুঝতে পারলেও অনুমান করা কিন্তু খুবই কঠিন যে এই ভর কতটা বেশি। চলুন পৃথিবীর ভর কে বিভিন্ন এককে রূপান্তরিত করে দেখা যাক।
পৃথিবীর ভর = 6,000,000,000,000,000,000,000,000 কেজি বা, ৬ ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন কিলোগ্রাম
= 6,000,000,000,000,000,000,000 মেট্রিক টন
= 6,000,000,000,000,000 মেগা টন
= 6,000,000,000,000 গিগা টন
নিউটনের সময়ে মানুষ জ্যামিতি ব্যাবহার করে পৃথিবী থেকে চাদের দূরত্ব নির্ণয় করতে শিখেছিল। আর পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে চাদের কত সময় লাগত তা চন্দ্রমাসের মাধ্যমেই জানা যেত। এসব তথ্যের সাহায্যে নিউটনের Me = (4 π^2 d^3 / G T^2) সূত্র ব্যাবহার করে পৃথিবীর ভর সেই একই রকম পাওয়া গিয়েছিল।
পৃথিবীর ভর ৫.৯৭২২ × ১০২৪ কেজি। পৃথিবী তো কিছু খায় না যে তার ওজন বা ভর বাড়বে। কিন্তু প্রতিদিন অজস্র বস্তুপিণ্ড আকাশ থেকে পৃথিবীতে পড়ে। বলা যায় পৃথিবীর ওজন প্রতিদিন বাড়ছে বটে কিন্তু তার পরিমাণ পৃথিবীর ওজনের ১ শতাংশের শত শত কোটি ভাগের এক ভাগ মাত্র। এই ভর বৃদ্ধি হিসাবে না ধরলে কিছু যায়-আসে না।
পৃথিবীর ভর (৫.৯৭২২±০.০০০৬)×১০^২৪কেজি। একটি সৌর ভর 333,000 পৃথিবী ভর কাছাকাছি হয়। পৃথিবীর ভর চাঁদের ভর কে বাদ দেয়। চাঁদের ভর পৃথিবীর প্রায় 1.2% হয়, যাতে পৃথিবী+চন্দ্র সিস্টেমের ভর ৬.০৪৫৬×১০^ ২৪কেজির কাছাকাছি হয়।
ভরের অধিকাংশই লোহা এবং অক্সিজেন (c. 32% প্রতিটি), ম্যাগনেসিয়াম এবং সিলিকন (c. 15% প্রতিটি), ক্যালসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম এবং নিকেল (c. 1.5% প্রতিটি) দ্বারা হিসাব করা হয়।
পৃথিবীর ভরের সঠিক পরিমাপ কঠিন, যেহেতু এটি মহাকর্ষীয় ধ্রুবক পরিমাপের সমতুল্য, যা ন্যূনতম নির্ভুলতাসঙ্গে পরিচিত মৌলিক ভৌত ধ্রুবক, মহাকর্ষীয় শক্তির আপেক্ষিক দুর্বলতার কারণে। পৃথিবীর ভর প্রথম 1770 সালে শ্যাহেলিয়ন (Schiehallion) পরীক্ষায় যে কোন নির্ভুলতা (সঠিক মানের প্রায় 20% মধ্যে) এবং 1798 সালের কেভেন্ডিশ পরীক্ষায় আধুনিক মানের 1% মধ্যে পরিমাপ করা হয়।
পৃথিবীর ব্যাসার্ধ কত
পৃথিবীর ব্যাসার্ধ হল পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে তার উপরিভাগে একটি বিন্দু পর্যন্ত দূরত্ব। এর মানের তারতম্য নিরক্ষরেখায় ৬,৩৭৮ কিমি (৩,৯৬৩মাইল) থেকে মেরু অঞ্চলে ৬৩৫৭ কিমি (৩৯৫০ মাইল) পর্যন্ত হয়ে থাকে। পৃথিবীর ব্যাসার্ধ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ভূপ্রকৃতিবিদ্যায় একটি শিল্প-পদের এবং উভয়ক্ষেত্রেই একটি পরিমাপের একক। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানে R🜨 দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
ব্যাসার্ধ মেরুতে সর্বনিম্ন প্রায় ৬৩৫৭ কিমি এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বাধিক প্রায় ৬৩৭৮ কিমি (৩৯৫০ থেকে ৩৯৬৩ মাইল)।
পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বিভিন্ন উপায়ে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যেহেতু পৃথিবী নিখুঁত গোলক নয়। সাধারণত যে পৃষ্ঠে কোনো ব্যাসার্ধ এসে প্রসারিত হয় তাকে পৃথিবীর আকৃতি প্রতিনিধিত্বকারী একটি উপবৃত্ত হিসেবে ধরা হয়। পৃষ্ঠের মতো, পৃথিবীর কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত বিন্দুর ভিত্তিতেও সংজ্ঞা প্রদান করা যায় এবং তাই পৃথিবীর ব্যাসার্ধ নির্ধারণের বিভিন্ন উপায়ে অবদান রাখে।
আন্তর্জাতিক ভূগণিত ও ভূপদার্থবিজ্ঞান জোট (আইইউজিজি) তিনটি গ্লোবাল গড় ব্যাসার্ধ নির্ধারিণ করে:
- উপবৃত্তের ব্যাসার্ধের গাণিতিক গড় (R1);
- প্রকল্পিত ব্যাসার্ধ, যা উপভৃত্তের পৃষ্ঠের সমান ক্ষেত্রফ্অল বিশিষ্ট পৃষ্ঠের একটি গোলকের ব্যাসার্ধ (R2);
- এবং আয়তনিক ব্যাসার্ধ, যা উপভৃত্তের আয়তনের সমান আয়তন বিশিষ্ট একটি গোলকের ব্যাসার্ধ (R3)।
এই তিনটি ব্যাসার্ধই প্রায় ৬,৩৭১ কিলোমিটার (৩,৯৫৯ মাইল)।
আরো পড়তে: বিবর্তন কাকে বলে
পৃথিবীর ব্যাস কত
পৃথিবীর ব্যাস ১২৮৭২ কিঃ মিঃ (প্রায়)। পৃথিবী এর পূর্ব পশ্চিম এর ব্যাস ১২,৭৫২ কিলোমাটার এবং উওর-দক্ষিণে ১২,৭০৯ কিলোমাটার।
পৃথিবীর আয়তন কত
পৃথিবীর মোট আয়তন ৫১,১০,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে জলভাগের আয়তন ৩৬,২৮,৫৩,১৪০ বর্গকিলোমিটার এবং স্থলভাগের আয়তন ১৪,৮১,৪৬,৮৬০ বর্গকিলোমিটার।
পৃথিবীর মোট পৃষ্ঠভূমি প্রায় ১৯৭ মিলিয়ন বর্গমাইল (৫১০মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার)। প্রায় ৭১ শতাংশ জলে এবং ২৯শতাংশ জমি দ্বারা আচ্ছাদিত।
পৃথিবীর আয়তন ৫১ কোটি বর্গ কিলোমিটার (১৯.৭ কোটি বর্গামাইল)। বরফমুক্ত জমির পরিমাণ ১৪৩০ কোটি হেক্টেয়র (১৪.৩ কোটি বর্গ কিলোমিটার)। চাষের অধীনে আছে মাত্র ১৪০ কোটি হেক্টেয়র, যা থেকে ২০১৮ সালে উৎপাদন হয়েছে ২৬৬ কোটি টন খাবার, কিন্তু বিশ্বের ৭৭০ কোটি লোকের দরকার মাত্র ১৫৪ কোটি টন খাবার।
পৃথিবীর থেকে সূর্যের দূরত্ব কত, সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব কত
এক কথায় সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দুরত্ব ৯৩২০৫৬৭৮.৮ মাইল বা ১৪.৯৬ কোটি কি. মি.। সাধারণত এই দুরত্বকে ১৫ কোটি কি.মি ধরা হয়। এই দুরত্বটি জ্যোতিবিজ্ঞানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কারণ একে ১ নভো একক(1 A.U) বিবেচনা করা হয়।
১ নভো একক বা ১ অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল ইউনিট(1 A.U) = সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যকার দুরত্ব (১৫ কোটি কি.মি)
আলো ১ সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। এই গতিতে পৃথিবী থেকে সূর্যে পৌছুতে আমাদের ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড লেগে যাবে।
পৃথিবী থেকে সূর্য প্রায় ৯২,৯৫৫,৮০৭ মাইল দূরে অবস্থিত। নাসার হিসাব মতে,প্রায় ৯২,৯০০,০০০ মাইল দূরে অবস্থিত।কিলোমিটার হিসাবে,পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ১৪.৯৬ কোটি কিলোমিটার বা ১৫ কোটি দূরে অবস্থিত। তবে অবস্থান ভেদে এই দূরত্ব পরিবর্তিত হয়। যেমন অনুসূর অবস্থানে পৃথিবী সূর্য থেকে ১৪.৭ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আবার অপসূর অবস্থানে এই দূরত্ব বেড়ে হয় ১৫.২ কোটি কিলোমিটার।
জ্যোতির্বিদ্যায় পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে।সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহের দূরত্ব হিসাব করতে এটি কাজে লাগে।পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্বের এই গড়কে ১ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট (1 A.U.) ধরা হয়।
অর্থাৎ,১ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট(1 A.U.)=সূর্য থেকে পৃথিবীর মধবর্তী দূরত্ব
মহাজাগতিক বস্তুর দূরত্বের পরিমাপে আলোকবর্ষের মতো এই এককটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | পৃথিবী
Q1. পৃথিবীর ওজন
Ans – প্রায় ৬,৬৯৭ x ১০১৮ টন ।
Q2. পৃথিবীর ক্ষেত্রফল
Ans – ৫১,০১,০০,৫০০ বর্গ কিমি.।
Q3. পৃথিবীর স্থলভাগ
Ans – ১৪,৮৯,৫০,৮০০ বর্গ কিমি. ।
Q4. পৃথিবীর জলভাগ
Ans – ৩৬,১১,৪৯,৭০০ বর্গ কিমি.।
Q5. পৃথিবীর মেরু বরাবর পরিধি
Ans – ৪০,০০০ কিমি. ।
Q6. পৃথিবীর বিষুবরেখা বরাবর পরিধি
Ans – ৪০,০৬৭ কিমি.।
Q7. পৃথিবীর মেরু ব্যাস
Ans – প্রায় ১২,৭১৪ কিমি.।
Q8. পৃথিবীর বিষুব বরাবর ব্যাস
Ans – প্রায় ১২,৭৫৭ কিমি.।
Q9. পৃথিবীপৃষ্ঠের অভিকর্ষ
Ans – ৩২.০৪১ ফিট/সেকেন্ড2 ।
Q10. উপরিতলের উষ্ণতা
Ans – -৮৮/৫ (সর্বনিম্ন/সর্বোচ্চ)° সেন্টিগ্রেড ।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।