- তরঙ্গ কাকে বলে
- তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য
- তরঙ্গের প্রকারভেদ, তরঙ্গ কত প্রকার
- অনুপ্রস্থ তরঙ্গ কাকে বলে
- অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ কাকে বলে
- তির্যক তরঙ্গ কাকে বলে
- তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কাকে বলে
- তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ও কম্পাঙ্কের সম্পর্ক
- তরঙ্গের বিস্তার কাকে বলে
- শব্দ তরঙ্গ কাকে বলে
- তরঙ্গ বেগ কাকে বলে
- তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ কাকে বলে
- যান্ত্রিক তরঙ্গ কাকে বলে
- তরঙ্গ সংখ্যা কাকে বলে
- তরঙ্গ মুখ কাকে বলে
- ভূমিকম্পের তরঙ্গ কাকে বলে
- FAQ | তরঙ্গ
তরঙ্গ কাকে বলে
যে পর্যাবৃত্ত আন্দোলন কোনো জড় মাধ্যমের একস্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি সঞ্চারিত করে কিন্তু মাধ্যমের কণাগুলোকে স্থানান্তরিত করে না তাকে তরঙ্গ (Wave) বলে।
তরঙ্গ বা ঢেউ হলো এক ধরনের কম্পনরত আন্দোলন যা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে শক্তি সঞ্চারিত করে। মাধ্যম ব্যতিরেকে তরঙ্গ শূন্যস্থান দিয়েও সঞ্চারিত হতে পারে। এ ধরনের তরঙ্গ হলো
তাড়িতচ্চৌম্বক তরঙ্গ এবং মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। জড় মাধ্যমের কণার আন্দোলনের ফলে বা কোনো বস্তুর কলাকৌশলের ফলে যে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় তাকে যান্ত্রিক তরঙ্গ বলে।
পুকুরের স্থির পানিতে ঢিল ফেলা হলে ঢিলটি পানি স্পর্শ করলে ঐ স্থানের পানির কণাগুলো আন্দোলিত হয়। এ কণাগুলো আবার পার্শ্ববর্তী স্থির পানির কণাগুলোকে আন্দোলিত করে। এভাবে কণা থেকে কণাতে স্থানান্তরিত আন্দোলন অবশেষে পুকুরের পাড়ে পৌঁছে। কিন্তু এই আন্দোলনের ফলে পানির কোনো কণাই তার সাম্যাবস্থান থেকে বেশি দূরে যায় না।
তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য
- তরঙ্গ শক্তি সঞ্চালন করলেও মাধ্যমের কণাগুলোকে স্থানান্তরিত করে না।
- তরঙ্গের প্রতিফলন, প্রতিসরণ ও উপরিপাতন ঘটে এবং এর বেগ মাধ্যমের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে।
- প্রকারভেদের ওপর নির্ভর করে তরঙ্গ সঞ্চালনে মাধ্যমের প্রয়োজন হতে পারে, যেমন, যান্ত্রিক তরঙ্গ; তবে তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গসমূহ সঞ্চালনে মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না।
- মাধ্যমের কণাগুলোর স্পন্দন গতির ফলে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় কিন্তু কণাগুলোর স্থায়ী স্থানান্তর হয় না।
- যান্ত্রিক তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন।
- তরঙ্গের বেগ মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
- তরঙ্গ একস্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি সঞ্চালন করে।
- তরঙ্গের প্রতিফলন, প্রতিসরণ ও উপরিপাতন ঘটে।
তরঙ্গের প্রকারভেদ, তরঙ্গ কত প্রকার
তরঙ্গ দুই প্রকার। যথা– ১) তীর্যক তরঙ্গ বা অনুপ্রস্থ তরঙ্গ ২) অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ।
- তীর্যক তরঙ্গ বা অনুপ্রস্থ তরঙ্গ : যে তরঙ্গ কম্পনের দিকের সাথে লম্বভাবে অগ্রসর হয় তাকে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বলে। পানির তরঙ্গ অনুপ্রস্থ তরঙ্গের উদাহরণ।
- অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ : যে তরঙ্গ কম্পনের দিকের সাথে সমান্তরালভাবে অগ্রসর হয় তাকে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে। বায়ু মাধ্যমে শব্দের তরঙ্গ অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের উদাহরণ।
অনুপ্রস্থ তরঙ্গ কাকে বলে
যে তরঙ্গ মাধ্যমের কণাগুলো কম্পনের দিকের সাথে সমকোনে অগ্রসর হয় তাকে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বলে।
যে তরঙ্গ মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পনের দিকের সাথে সমকোণে অগ্রসর হয়, তাকে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ (Transverse wave) বলে। একে আড় তরঙ্গ বলা হয়।
অনুপ্রস্থ তরঙ্গের উদাহরণ
পানির তরঙ্গ, আলোক তরঙ্গ, বেতার তরঙ্গ ইত্যাদি অনুপ্রস্থ তরঙ্গের উদাহরণ।
পুকুরের পানিতে ঢিল ছুড়ে মারলে,পুকুরের পানি আন্দোলিত হয় । এই আন্দোলন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পানির কণাগুলো তরঙ্গ বিস্তারের অভিমুখের সাথে লম্বভাবে আন্দোলিত হয়।
সুতরাং এ ধরনের তরঙ্গকে তীর্যক তরঙ্গ বা অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বলা হয়।
অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ কাকে বলে
কোন স্থিতিস্থাপক মাধ্যমে তরঙ্গ বিস্তারের সময় মাধ্যমিক কনাগুলি যদি তরঙ্গের গতির অভিমুখের সঙ্গে সমান্তরালভাবে কম্পিত হয় তবে ওই তরঙ্গ কে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে।
কোন সমসত্ত্ব স্থিতিস্থাপক মাধ্যমে কণাগুলোর কম্পনের ফলে, মাধ্যমে যে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় এবং তার কণাগুলোর গতি যদি তরঙ্গের গতির অভিমুখের সমান্তরাল হয়। তবে ওই তরঙ্গকে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলা হয়।
অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ উদাহরণ
একটি স্প্রিং এর তরঙ্গ হলো অনুদৈর্ঘ্য এর উদাহরণ।
একটি স্প্রিংকে টেনে ছেড়ে দিলে তা উঠানামা শুরু করে। স্প্রিং এর সংকোচন ও প্রসারণের সময় স্প্রিং এক কণাগুলোর তরঙ্গের অভিমুখের সমান্তরালে উঠানামা করে।
আবার, বাতাসের মধ্য দিয়ে শব্দ সঞ্চালনের সময় স্থিতিস্থাপক বায়ুস্তর গুলো সংকোচন ও প্রসারণের সময় কণার গতি তরঙ্গ বিস্তারের অভিমুখের সমান্তরালে হয়ে থাকে।
সুতরাং বায়ু মাধ্যমে শব্দের তরঙ্গ হলো, একটি অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের উদাহরণ।
অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ ও অনুপ্রস্থ তরঙ্গের পার্থক্য, অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ ও তির্যক তরঙ্গের পার্থক্য
অনুপ্রস্থ তরঙ্গ ও অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ–
অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ | অনুপ্রস্থ তরঙ্গ |
---|---|
যে তরঙ্গ মাধ্যমের কণাগুলোর স্পন্দনের দিকের সাথে সমান্তরালে অগ্রসর হয়, তাকে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে। | যে তরঙ্গ মাধ্যমের কণাগুলোর স্পন্দনের দিকের সাথে সমকোণে অগ্রসর হয়, তাকে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বলে। |
তরঙ্গ প্রবাহে মাধ্যমে সংকোচন ও প্রসারণ সৃষ্টি হয়। | তরঙ্গ প্রবাহে মাধ্যমে তরঙ্গ শীর্ষ এবং তরঙ্গ পাদ সৃষ্টি হয়। |
একটি সংকোচন ও একটি প্রসারণ নিয়ে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য গঠিত। | একটি তরঙ্গশীর্ষ ও একটি তরঙ্গপাদ নিয়ে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য গঠিত। |
মাধ্যমে এর সমবর্তন বা পোলারণ ঘটে না। | মাধ্যমে এর সমাবর্তন বা পোলরণ ঘটে। |
কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় মাধ্যমে এই তরঙ্গ উৎপন্ন হয়। | কঠিন মাধ্যমে এই তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। |
তির্যক তরঙ্গ কাকে বলে
কোন স্থিতিস্থাপক মাধ্যমে তরঙ্গ বিস্তারের সময় মাধ্যমের কণাগুলি যদি তরঙ্গের গতির অভিমুখের সঙ্গে লম্বভাবে কম্পিত হয়, তবে ওই তরঙ্গকে তির্যক তরঙ্গ বলে।
কোন স্থিতিস্থাপক মাধ্যমে তরঙ্গ বিস্তারের সময় মাধ্যমের কণাগুলি যদি তরঙ্গের গতির অভিমুখের সঙ্গে লম্বভাবে কম্পিত হয়, তবে ওই তরঙ্গকে তির্যক তরঙ্গ বলে। তির্যক তরঙ্গের উদাহরণ: একটি লম্বা দড়ির এক প্রান্ত দৃঢ় অবলম্বনে আটকে অপর প্রান্তে আড়াআড়ি ভাবে ঝাঁকুনি দিলে দড়িতে তির্যক তরঙ্গের সৃষ্টি হয়।
তির্যক তরঙ্গের উদাহরণ
একটি লম্বা দড়ির এক প্রান্ত দৃঢ় অবলম্বনে আটকে অপর প্রান্তে আড়াআড়ি ভাবে ঝাঁকুনি দিলে দড়িতে তির্যক তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। আবার পুকুরের জলে ঢিল ফেললেও তির্যক তরঙ্গের সৃষ্টি হয়।
তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কাকে বলে
কোনো তরঙ্গের পরপর দুটি, একই দশা সম্পন্ন কণার মধ্যকার দূরত্বকে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য (Wave length) বলা হয়। অর্থাৎ, পরপর দুটি তরঙ্গচূড়া বা পর পর দুটি তরঙ্গখাঁজের মধ্যবর্তী দূরত্ব হলো তরঙ্গদৈর্ঘ্য। অর্থাৎ, পরপর দুটি তরঙ্গচূড়া বা পর পর দুটি তরঙ্গখাঁজের মধ্যবর্তী দূরত্ব হলো তরঙ্গদৈর্ঘ্য।
তরঙ্গস্থিত স্পন্দিত একটি বস্তুকণা যে সময়ে একটি পূর্ণ কম্পন সম্পন্ন করে সে সময়ে তরঙ্গ যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে ঐ তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বলে।
তরঙ্গ দৈর্ঘ্যকে λ (ল্যাম্বডা) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের একক কি
তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের একক মিটার (m)।
তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ও কম্পাঙ্কের সম্পর্ক
একবার পূর্ণ তরঙ্গ সম্পন্ন হতে যতটুকু পথ অতিক্রম করে তাকে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য (lambda) বলা হয়।
আর একক সময়ে বা এক সেকেন্ডের মধ্যে যতবার পূর্ণতরঙ্গ সম্পন্ন করে তাকে কম্পাঙ্ক (n) বলা হয় l
বা, একবার পূর্ণ কম্পন সম্পূর্ণ হতে যে সময় লাগে তাকে বলে পর্যায় কাল (T)।
এক সেকেন্ডে কোন তরঙ্গ যে দুরত্ব যায় তাকে বলে বেগ (v)।
তাহলে, যে সম্পর্ক গুলো দাঁড়ালো,
- n = 1/T
- v= n. ল্যামডা।
- v =n/T
তরঙ্গ দৈর্ঘ্য × কম্পাঙ্ক = মাধ্যমে তরঙ্গের গতিবেগ
কম্পাঙ্ক = তরঙ্গের গতিবেগ/ তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ; এই দুটি পরস্পরের সাথে ব্যাস্তানুপাতে আছে।
তরঙ্গের বিস্তার কাকে বলে
তরঙ্গস্থিত স্পন্দিত একটি বস্তু কণার সাম্যাবস্থান থেকে পরিমাপিত যেকোন এক দিকের সর্বাধিক সরণকে ঐ তরঙ্গের বিস্তার বলে।
তরঙ্গের বিস্তার কে পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় (ল্যামডা) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটি হল তরঙ্গ যখন কাঁপতে কাঁপতে সামনে অগ্রসর হতে থাকে, তখন আড়াআড়ি ভাবে যতটুকু দূরত্বে ছড়ায় সেই মান।
শব্দ তরঙ্গ কাকে বলে
কঠিন, তরল ও বায়বায়ীয় মাধ্যমে শব্দের তরঙ্গ সঞ্চালন যা আমাদের শ্রবণের অনুভুতি জাগায়, তাই শব্দ তরঙ্গ ।
বা, শব্দ তরঙ্গ হলো তরল, কঠিন বা বায়বীয় মাধ্যম দিয়ে সঞ্চারিত যান্ত্রিক তরঙ্গ যা আমাদেরকে শ্রবণের অনুভূতি দেয়। শব্দ তরঙ্গ হলো তরল, কঠিন বা বায়বীয় মাধ্যম দিয়ে সঞ্চারিত যান্ত্রিক তরঙ্গ যা আমাদেরকে শ্রবণের অনুভূতি দেয়।
বা, শব্দ এক প্রকার শক্তি যা শ্রোবনের অনুভুতি জাগায় ৷ শব্দ কম্পনের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় এবং তরঙ্গ আকারে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সঞ্চারিত হয়৷
শব্দ তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য
- শব্দ একটি যান্ত্রিক তরঙ্গ কারণ বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি হয়।
- এটি সঞ্চালনের জন্য স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের প্রয়োজন হয়।
- শব্দ তরঙ্গ একটি অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ কারণ এই তরঙ্গের প্রবাহের দিক এবং মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পনের দিক একই দিকে ।
- শব্দ তরঙ্গের বেগ মাধ্যমে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে, বায়বীয় মাধ্যমে এর বেগ কম, তরলে তার চেয়ে বেশি, কঠিন পদার্থে আরো বেশি।
- শব্দের বেগ মাধ্যমের তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে।
- শব্দের তীব্রতা অন্যান্য তরঙ্গের মতো তার বিস্তারের বর্গের সমানুপাতিক। অর্থাৎ তরঙ্গের বিস্তার বেশি হলে শব্দের তীব্রতা বেশি হবে এবং তরঙ্গের বিস্তার কম হলে শব্দের তীব্রতা কম হবে।
- যেকোনো তরঙ্গের মতোই শব্দ তরঙ্গের প্রতিফলন, প্রতিসরণ এবং উপরিপাতন হতে পারে।
তরঙ্গ বেগ কাকে বলে
নির্দিষ্ট দিকে তরঙ্গ একক সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে তরঙ্গ বেগ বলে।
নির্দিষ্ট দিকে, প্রতি সেকেন্ড সময়ে তরঙ্গ যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকে ঐ তরঙ্গের তরঙ্গ বেগ বলে।
তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ কাকে বলে
1845 খ্রিষ্টাব্দে ফ্যারাডে আবিষ্কার করেন যে একটি প্রবল চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাব সমবর্তন তল ঘুরে যায়। এ ঘটনা ফ্যারাডে ক্রিয়া নামে পরিচিত।
কোন তড়িৎক্ষেত্রে চুম্বক বলরেখার মধ্যে ইলেক্ট্রন আধানের দ্রুত পর্যাবৃত্ত আন্দোলন বা হ্রাসবৃদ্ধি ঘটলে ইলেক্ট্রনগুলাে অতিরিক্ত শক্তি অর্জন করে বলরেখার সমান্তরালে শক্তি বিকিরন যা তরঙ্গাকারে চারদিকে দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়ে । একে তাড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ বলে ।
তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গগুলি ত্বরণশীল বৈদ্যুতিক আধানযুক্ত কণা দ্বারা নির্গত হয় এবং এই তরঙ্গগুলি পরবর্তীতে অন্যান্য আধানযুক্ত কণাগুলির সাথে যোগাযোগ করতে পারে, বা তাদের উপর বল প্রয়োগ করে।
উল্লেখ্য তাড়িত চুম্বকীয় তরঙ্গ একটি বিশাল ব্যাখ্যাযুক্ত ঘটনা যা এক কথায় পুরাপুরি সঙ্গায়িত করা যায়না । তাই বিভিন্ন বিজ্ঞানী , শিক্ষক নানা ভাবে সঙ্গায়িত করতে চেষ্টা করেন ।
তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য
- তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ (Electromagnetic wave) তড়িৎ ক্ষেত্র ও চৌম্বক ক্ষেত্র এর পর্যায়বৃত্ত পরিবর্তনের ফলে উৎপন্ন হয়।
- ২। তরঙ্গ সঞ্চালনের অভিমুখ ও উভয়ের ওপর লম্ব। তাই তড়িচুম্বকীয় তরঙ্গ (Electromagnetic wave) আড় তরঙ্গ।
- তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের সঞ্চালনের জন্য কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না।
- তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণের তীব্রতা দুরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতে হ্রাস পায়। অর্থাৎ এখানে E হলে তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণের তীব্রতা এবং r হলো উৎস হতে দুরত্ব। সুতরাং, দূরত্ব দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলে তীব্রতা চারগুণ হ্রাস পাবে।
যান্ত্রিক তরঙ্গ কাকে বলে
যান্ত্রিক তরঙ্গ হলো একটি শ্রেণি বিশেষ তরঙ্গ । এই তরঙ্গ কঠিন, তরল বা বায়বীয় মাধ্যম ব্যবহার করে সঞ্চালিত হয়। যেমন শব্দ তরঙ্গ, পানির তরঙ্গ।
যখন কোনো মাধ্যমে কোনো শক্তি আঘাত করে, তখন ওই মাধ্যমের কণাগুলো স্থায়ীভাবে স্থানচ্যুত হয় না, কিন্তু কিছুটা বিচলিত হয়। মাধ্যমের কণার এই সামান্য বিচলনে কণাগুলো তার অবস্থান থেকে তাৎক্ষণিকভাবে একটু সরে গেলেও কণাটি আগের অবস্থানে ফিরে আসতে থাকে।
স্থিতিস্থাপকতার কারণে কণাগুলো একটি সাম্যবস্থানকে কেন্দ্র করে আন্দোলিত হয় এবং একটি পর্যায়বৃত্ত গতি লাভ করে। একটি কণাতে যখন এরূপ আন্দোলনের সৃষ্টি হয়, তখন সে পার্শ্ববর্তী কণাকে প্রভাবিত করে, ফলে পার্শ্ববর্তী কণাও আলোড়িত হয়।
এই ভাবে ক্রমিক পর্যায়ে আলোড়ন সঞ্চালিত হতে থাকে। এর ফলে শক্তির উৎসমুখ থেকে, একটি তরঙ্গ নির্দিষ্ট বেগে এগিয়ে যায়।
এই কারণে যান্ত্রিক তরঙ্গের বিশদ সংজ্ঞায় বলা হয়- ‘স্থিতিস্থাপক জড় মাধ্যম কণা থেকে কণাতে স্থানান্তরিত বা অগ্রসরমান পর্যায়বৃত্ত আন্দোলনকেই যান্ত্রিক তরঙ্গ বলা হয়।
বস্তু বা মাধ্যমের কণাগুলোর স্থিতিস্থাপকতা গুণের কারণেই এই তরঙ্গ সঞ্চালিত হয়।
তরঙ্গ সংখ্যা কাকে বলে
তরঙ্গ সংখ্যা শব্দ তরঙ্গ দ্বারা একক দূরত্বে ভ্রমণের তরঙ্গ সংখ্যা হিসাবে সংজ্ঞায়িত হয় । এর ইউনিটটি মিটার (1/m) পরিমাপ করা হয়।
তরঙ্গ মুখ কাকে বলে
কোন তরঙ্গের উপরিস্থিত সমদশাবিশিষ্ট সকল বিন্দুর মধ্য দিয়ে অঙ্কিত তলকে তরঙ্গ মুখ বলে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, পানির তরঙ্গশীর্ষে অবস্থিত সকল কণা সমদশাবিশিষ্ট। তেমনি এর তরঙ্গপাদে অবস্থিত সকল কণার দশাও একই। কাজেই তরঙ্গশীর্ষ বরাবর অঙ্কিত তল হবে একটি তরঙ্গ মুখ এবং তরঙ্গপাদ বরাবর অঙ্কিত তল হবে আরেকটি তরঙ্গ মুখ।
ভূমিকম্পের তরঙ্গ কাকে বলে
ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে সৃষ্ট কোন কম্পন যখন তরঙ্গের আকারে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাকে ভূমিকম্প তরঙ্গ বলে। তরঙ্গের বিস্তৃতি, দৈর্ঘ্য ও প্রকৃতি অনুসারে ভূমিকম্প তরঙ্গকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
যথা- দেহ তরঙ্গ ও পৃষ্ঠ তরঙ্গ বা পার্শ্ব তরঙ্গ।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | তরঙ্গ
Q1. তরঙ্গ কি
Ans – যে প্রকিয়ায় একটি একটি মাধ্যমের ভিতরে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে শক্তি প্রবাহিত হয় তাকে তরঙ্গ বলে।
Q2. দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কত
Ans – দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পরিসর ৩৮০-৭৬০ ন্যানোমিটার। দৃশ্যমান আলো বলতে আমরা বুঝি বেগুনী, নীল, আসমানী, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল।
Q3. কোন আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি
Ans – দৃশ্যমান আলোকরশ্মির মধ্যে লাল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি ।
Q4. কোন আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম
Ans – বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম।
Q5. শব্দ কি ধরনের তরঙ্গ
Ans – শব্দ অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ।
Q6. আলোর তরঙ্গ তত্ত্বের উদ্ভাবক কে
Ans – আলোর তরঙ্গ তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন হাইগেন।
দীপ্তিমান বস্তু থেকে আলো কীভাবে আমাদের চোখে আসে তা ব্যাখ্যার জন্য বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত চারটি তত্ত্ব প্রদান করেন। এর মধ্যে ১৬৭৮ সালে আলোর তরঙ্গ তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন বিজ্ঞানী হাইগেন।
Q7. লাল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কত
Ans – লাল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য প্রায় ৬২৫-৭৪০ nm।
Q8. বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয় কোন স্তরে
Ans – বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার স্তরে আয়নের আধিক্যের ফলে বেতার তরঙ্গগুলাে এ স্তরে প্রতিফলিত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে।
Q9. গামা রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কত
Ans – গামা রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 1×10^(-15) —• 1×10^(-12) মিটার।
Q10. আলো কি ধরনের তরঙ্গ
Ans – আলো হল তাড়িত চৌম্বক তরঙ্গ। এ তরঙ্গ উৎপন্ন বা সঞ্চালনের জন্য কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। তবে কেবলমাত্রা আলোকীয় স্বচ্ছ মাধ্যমের ভিতর দিয়েই এ তরঙ্গ অতিক্রম করতে পারে। মাধ্যমভেদে আলোক তরঙ্গের বেগ ভিন্ন হয় এবং শূন্য মাধ্যমে আলোর বেগ 3×108ms−1।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।