- পুষ্টি কি, পুষ্টি কাকে বলে
- পুষ্টি উপাদান কয়টি ও কি কি
- পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি
- অতিপুষ্টি কাকে বলে
- অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ, অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ
- পুষ্টি সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের স্লোগান
- খাদ্য ও পুষ্টি কাকে বলে
- স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কি
- খাদ্য ও পুষ্টি তালিকা, পুষ্টিকর খাবারের তালিকা, দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের তালিকা
- FAQ | পুষ্টি, পুষ্টি বিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর
পুষ্টি কি, পুষ্টি কাকে বলে
যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় জীব খাদ্যবস্তু গ্রহণ, পরিপাক, পরিশোধন ও আত্তীকরণের মাধ্যমে দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি সাধন ও শক্তি উৎপাদিত হয় তাকে পুষ্টি বলে।
যে ধারাবাহিক ও সম্মিলিত উপচিতি বিপাক পদ্ধতিতে খাদ্য গ্রহণ, পরিপাক, শোষণ, আত্তীকরণ ও বহিষ্করণ অথবা সংশ্লেষণ ও আত্মীকরণ এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় শক্তির অর্জন, দেহের ক্ষয় পূরণ বৃদ্ধির বিকাশ ঘটানো, প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠা এবং মৌলিক ধর্ম গুলি পালন করাকে পুষ্টি বা Nutrition বলে।
কোন খাবারের মধ্যে অবস্থিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার অবস্থাকে বা যে খাবার খেলে শরীর সুগঠিত সুন্দর ও মন ফুরফুরে থাকে সেই খাবারকে আমরা পুষ্টিকর খাবার বলতে পারি।
খাবারের মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে তাকে পুষ্টি বলে।
পুষ্টি হল খাদ্য হতে প্রাপ্ত এমন উপাদান যা দেহের বৃদ্ধি এবং শরীরের সমস্ত ফাংশন যেমন শ্বাসপ্রশ্বাস, খাদ্য হজম এবং দেহ উষ্ণ রাখার জন্য শক্তি প্রদান করে । খাদ্যে পুষ্টি রয়েছে – শরীরের টিস্যুগুলির বৃদ্ধি, মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলির নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় পদার্থ। পুষ্টি আমাদের শরীরের কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে।
পুষ্টির ধরন
খাদ্যের বিভিন্ন পুষ্টি রয়েছে ৷ আমরা সেগুলিকে দুইভাগে ভাগ করি:
১. ম্যাক্রো (বড়) পুষ্টি যা আমাদের প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজন। এইগুলো:
- কার্বোহাইড্রেট (স্টার্চ, শর্করা এবং খাদ্যতালিকাগত ফাইবার)
- চর্বি – চর্বি এবং তেলে বিভিন্ন ‘চর্বি-পুষ্টি’ থাকে। এর মধ্যে রয়েছে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড, সম্পৃক্ত বা স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড এবং কোলেস্টেরল।
- প্রোটিন – শত শত বিভিন্ন প্রোটিন আছে।
২. মাইক্রো (ছোট) পুষ্টি যা আমাদের অল্প পরিমাণে প্রয়োজন। এর মধ্যে অনেকগুলি রয়েছে তবে ডায়েটে যেগুলির অভাব হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তা হল:
- খনিজ – লোহা , আয়োডিন এবং দস্তা
- ভিটামিন – ভিটামিন এ, বি-গ্রুপের ভিটামিন (ফোলেট সহ) এবং ভিটামিন সি
পুষ্টির গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- পুষ্টির ফলে দেহের ক্ষয় পূরণ বৃদ্ধি এবং পরিস্ফুটন ঘটে।
- পুষ্টির মাধ্যমে খাদ্যস্ত স্থৈয়ৈতিক শক্তি ব্যবহার উপযোগী শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ফলে জীব দেহের চলন গমন রেচন জনন ইত্যাদি শারীরবৃত্তি ও প্রক্রিয়াগুলি সম্পূর্ণ হওয়ার মাধ্যমে জীবনের মৌলিক ধর্ম গুলি সুষ্ঠুভাবে পালিত হয়।
- পুষ্টির মাধ্যমে জীবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
- পুষ্টির মাধ্যমে জীবদেহে ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য সঞ্চিত থাকে যা থেকে ভবিষ্যতে খাদ্যের অভাব ঘাটলে ওই খাদ্য জীবদেহে শক্তি উৎপাদন করে।
- প্রাণীদেহে তাপ উৎপাদন এবং সংরক্ষণেও পুষ্টির বিশেষ ভূমিকা আছে।
পুষ্টি উপাদান কয়টি ও কি কি
পুষ্টির ছয়টি উপাদান থাকে। শরীরে এই প্রতিটি উপাদানের চাহিদা এক রকম নয়। বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির সংক্রমণ, শরীরের গঠন প্রকৃতি এবং দৈহিক পরিশ্রমের উপর ভিত্তি করে আমাদের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের চাহিদা ভিন্নরুপ হয়।
পুষ্টির উপাদানসমুহ নিচে এক এক করে উল্লেখ করা হল:
- কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা: ইহা আপনার শরীরে শক্তি যোগানের প্রধান উৎস। কার্বোহাইড্রেট আবার তিন প্রকার হতে পারে-
- সুগার: এর উদাহারণ – সিম্পল সুগার যা খুব দ্রুত হজম হয়ে শক্তি তৈরি করে।
- স্টার্চ: এরা হল কমপ্লেক্স বা জটিল কার্বোহাইড্রেট যার হজম প্রক্রিয়া ধীরগতি সম্পন্ন।
- ফাইবার: এরা সাধারণত: হজম হয় না, শরীরে শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় না। শুধু শারীরিক কার্যক্রমে সহায়তা করে।
- প্রোটিন বা আমিষ: প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের একক হল এমাইনো এসিড। সম্পূর্ণ প্রোটিনে ২০ ধরণের এ্যমাইনো এসিড থাকে যার মধ্যে ৯ টি প্রয়োজনিয় এবং ১১টি অপ্রয়োজনিয়। প্রোটিনের কাজ নিম্নরুপ-
- শরীরে শক্তির যোগান দেয়,
- পেশী ও কোষ গঠনে কাজ করে,
- হরমোনের কাজে সহায়তা করে,
- রোগ প্রতিরোধে কাজ করে,
- হজম প্রক্রিয়ার কাজে লাগে এমন এনজাইম তৈরিতে কাজ করে।
- ফ্যাট বা চর্বি: শরীরে শক্তি যোগানের দ্বিতীয়তম প্রধান উৎস। এছাড়াও, এরা শরীরে ভিটামিন শোষণে সহায়তা করে এবং দেহের আভ্যন্তরিণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুরক্ষা কাজে ভূমিকা রাখে। এরা আবার তিন প্রকার হয়-
- অসম্পৃক্ত বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল;
- সম্পৃক্ত বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট
- ট্র্যানস ফ্যাট যা ক্ষতিকর ফ্যাট হিসাবে বিবেচিত।
- ভিটামিন বা খাদ্যপ্রান: এদের মোট সংখ্যা ১৩ টি। এরা আবার দুই প্রকারের হয়-
- পানিতে দ্রবনিয় ভিটামিন যেমন ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি
- চর্বিতে দ্রবনিয় ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে
- মিনারেলস বা খনিজ লবন: মোট ১৫ টি। এর দুই ধরণের-
- Trace minerals যেমন কপার, জিন্ক, আয়রন
- Major minerals যেমন সোডিয়াম, পটাসিয়াম
- পানি: শরীরে পানির ভূমিকা-
- দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে;
- দেহের হারের জয়েন্টের লুব্রিকেন্ট এর মত কাজে সাহয্য করে;
- শরীরের বর্জ অপসারণে কাজ করে;
- খাদ্য হজম, শোষণ এবং পরিবহনে কাজ করে।
এই উপাদানের মধ্যে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট থেকে আমাদের দৈনিক ক্যালরি চাহিদার শতকরা প্রায় ৮৫% পুরা হয় এবং প্রোটিন থেকে পুরা হয় ১৫%।
পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি
পুষ্টি সাধারণত দুই প্রকার- ১. উদ্ভিদ পুষ্টি ২. প্রাণী পুষ্টি ।
উদ্ভিদ পুষ্টি :
উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষের সাহায্যে নিজের খাবার নিজেই তৈরি করতে পারে এদের অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন হয় না, কিন্তু এমন কিছু উদ্ভিদ ও আছে যারা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে অক্ষম । উদ্ভিদ পুষ্টি সাধারণভাবে দুই প্রকার যথা- ১. স্বভোজী পুষ্টি ২. পরভোজী পুষ্টি ।
- স্বভোজী পুষ্টি : যে সকল উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষের সাহায্যে নিজের দেহের পুষ্টি উৎপাদন করে তাদের স্বভোজী পুষ্টি বলা হয় । যেমন – আম, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি ।
- পরভোজী পুষ্টি : যে সকল উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে না পারায় অন্যের ওপর বা মৃত জৈব পদার্থ থেকে পুষ্টি রস শোষণ করে তাদের পরভোজী পুষ্টি বলে । যেমন – স্বর্ণলতা ।
প্রাণী পুষ্টি :
ব্যতিক্রমী কিছু প্রাণী ছাড়া অন্য প্রাণীরা নিজেদের খাদ্য নিজেরায় তৈরিতে অক্ষম অর্থাৎ খাদ্যের ব্যাপারে স্বনির্ভরশীল নয় , তাই প্রাণীদের মধ্যে পরভোজী পুষ্টি দেখা যায় । ইউগ্লিনা ক্লাইস্যামিবা প্রাণী পুষ্টিতে সক্ষম প্রাণী । প্রাণীদের বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি পদ্ধতি দেখা যায় সেগুলি হল-
- হ্যালোজোইক পুষ্টি : যে পদ্ধতির দ্বারা কঠিন ও জটিল খাদ্যবস্তু গ্রহণের মাধ্যমে পুষ্টি উৎপন্ন হয় তাকে হ্যালোজোইক পুষ্টি বলে। যেমন- মানুষ।
- মৃতজীবি পুষ্টি : এই পদ্ধতিতে প্রাণী মৃত বস্তু থেকে তরল পুষ্টি শোষণের মাধ্যমে নিজের পুষ্টি সম্পন্ন করে । যেমন – ইউগ্লিনা ।
- মিথোজীবি পুষ্টি : এই পুষ্টি পদ্ধতিতে একটি প্রাণী অপর একটি প্রাণীর সহবস্থানের থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে । যেমন – রোমারা ।
- পরজীবী পুষ্টি : এই পুষ্টিতে একটি প্রাণী অপর একটি প্রাণীর তরল পুষ্টির মাধ্যমে পুষ্টি শোষণ করে । যেমন – গোলকৃমি।
অতিপুষ্টি কাকে বলে
অতিপুষ্টির বলতে খাবারের সাথে অত্যধিক পুষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণ করাকে বুঝায়, বিশেষ করে ক্যালোরি যা শক্তি তৈরি করে এবং ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার দিকে পরিচালিত করে। এমনটি ঘটে থাকে যখন একজন স্বাভাবিক মানুষের পুষ্টি উপাদান যে পরিমাণে প্রয়োজন তার চেয়ে যেকোনো একটি পুষ্টি উপাদান অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তাহলে তার অতি পুষ্টি সমস্যা দেখা দিবে।
যদিও অপুষ্টি মানে অপরিহার্য পুষ্টির অপর্যাপ্ত প্রধানকে বুঝায় অন্যদিকে অত্যধিক পুষ্টির সাথে অত্যাধিক খাওয়া জড়িত প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয় এর ফলে।
অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ, অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ
অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ
- ওজন বৃদ্ধি এবং স্থূলতা: অতিপুষ্টির প্রাথমিক শারীরিক লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হল ওজন বৃদ্ধি, যার ফলে স্থূলতা দেখা দেয়। অত্যধিক ক্যালোরি খরচ শরীরে সঞ্চিত চর্বি জমার দিকে পরিচালিত করে,অতিরিক্ত ক্যালোরি খরচ করার ফলে চর্বি জমতে থাকে যার ফলে ব্যক্তির আদর্শ ওজনের মাত্রা অতিক্রম করে। স্থূলতা একটি জটিল অবস্থা যা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা, ডায়াবেটিস এবং জয়েন্টে ব্যথা সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- উচ্চ্ রক্তচাপ: অতিরিক্ত পুষ্টি উচ্চ রক্তচাপও হতে পারে, যা হাইপারটেনশন নামেও পরিচিত। অতিরিক্ত সোডিয়াম যুক্ত খাবার যেমন প্রক্রিয়াজাত এবং পাসপোর্ট পানির ভারসাম্য ব্যাহত করতে পারে এবং রক্তচাপের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে
- উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা: অতিরিক্ত পুষ্টি গ্রহণ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে । স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ একটি খাদ্য LDL (লো-ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন) কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে কাজ করে , যাকে প্রায়ই “খারাপ” কোলেস্টেরল বলা হয়।
- টাইপ 2 ডায়াবেটিস: অত্যধিক পুষ্টি, বিশেষ করে যখন একটি আসীন জীবনধারার সাথে মিলিত হয়, টাইপ 2 ডায়াবেটিসের বিকাশ ঘটাতে পারে। অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণ, বিশেষত চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীয় থেকে, ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণ হতে পারে, রক্তে শর্করার মাত্রা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার শরীরের ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
- হৃদরোগ: অত্যধিক পুষ্টি হৃদরোগের বিকাশে অবদান রাখে, করোনারি ধমনী রোগ এবং হার্ট অ্যাটাক সহ। অস্বাস্থ্যকর চর্বি, সোডিয়াম এবং যুক্ত শর্করার অত্যধিক ব্যবহার, ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্যের অপর্যাপ্ত ভোজনের সাথে হার্টের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- জয়েন্ট সমস্যা: অত্যধিক পুষ্টির কারণে অতিরিক্ত ওজন বহন করা জয়েন্টগুলিতে অতিরিক্ত চাপ দেয়, অস্টিওআর্থারাইটিসের মতো জয়েন্টের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত ওজন জয়েন্টগুলিতে পরিধান এবং ছিঁড়ে যেতে পারে, যার ফলে ব্যথা, প্রদাহ এবং গতিশীলতা হ্রাস পায়।
- ক্লান্তি এবং শক্তির অভাব: অত্যধিক পুষ্টি, বিশেষ করে যখন প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবের খাদ্যের সাথে মিলিত হয়, তখন ক্লান্তি এবং শক্তির অভাব হতে পারে। প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট না পেয়ে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করলে শরীরে অত্যাবশ্যক শক্তি-উৎপাদনকারী যৌগগুলির ঘাটতি হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অলসতার অনুভূতি হয়।
- ত্বকের সমস্যা: অতিরিক্ত পুষ্টি ত্বকের স্বাস্থ্য এবং চেহারাকেও প্রভাবিত করতে পারে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অস্বাস্থ্যকর চর্বি এবং পরিশ্রুত শর্করা সমৃদ্ধ খাবার ব্রণ, প্রদাহ এবং দ্রুত বার্ধক্যের মতো ত্বকের সমস্যায় অবদান রাখতে পারে। ফল, শাকসবজি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অপর্যাপ্ত পরিমাণ এই সমস্যাগুলিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির লক্ষণ
অপুষ্টি | অতিপুষ্টি |
১। শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে। ২। চর্মরোগ হয়। ৩। পেট ফুলে যায় ৪। অত্যান্ত রোগাটে দেখায় ৫। শিশুর ঠোঁটের কোণে ঘা দেখা যায়। ৬। বৃদ্ধি কমে যায়। | ১। ডায়রিয়া হওয়া। ২। উচ্চ রক্ত চাপ। ৩। মাথা ব্যাথা। ৪। চর্মরোগ মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায়। ৫। পেট ফুলে যায়। ৬। শরীলের বিভিন্ন অংশে ঘা দেখা যায়। |
অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ
অপুষ্টি এবং অত্যধিক পুষ্টির লক্ষণগুলি বোঝা এই সমস্যাগুলি সনাক্তকরণ এবং সমাধানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন উভয় সম্পর্কিত শারীরিক লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
অপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ
অপুষ্টি বিভিন্ন শারীরিক লক্ষণে প্রকাশ পেতে পারে
যেমন:
- অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাস
- পেশী দুর্বলতা এবং অপচয়
- ক্লান্তি এবং শক্তির অভাব
- ভঙ্গুর চুল এবং নখ
- শুষ্ক এবং ফ্যাকাশে ত্বক
- দাঁতের সমস্যা
- প্রতিবন্ধী ক্ষত নিরাময়
- দুর্বল ইমিউন সিস্টেম
- শিশুদের বৃদ্ধি এবং বিকাশ বিলম্বিত হয়
অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ
অপুষ্টি | অতিপুষ্টি |
১। হাড়ের বৃদ্ধি মন্দা। ২। হজমে সমস্যা। ৩। স্মৃতি শক্তি হ্রাস। ৪। শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে। ৫। চর্মরোগ হয়। ৬। পেট ফুলে যায়। ৭। অত্যান্ত রোগাটে দেখায়। ৮। শিশুর ঠোঁটের কোণে ঘা দেখা যায়। ৯। বৃদ্ধি কমে যায়। | ১। ঘন ঘন সর্দি এবং অন্য সংক্রমনও হয় । ২। ক্লান্তি হওয়া। ৩। ক্যান্সার হওয়া। ৪। ডায়রিয়া হওয়া। ৫। উচ্চ রক্ত চাপ। ৬। মাথা ব্যাথা। ৭। চর্মরোগ মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায়। ৮। পেট ফুলে যায়। ৯। শরীলের বিভিন্ন অংশে ঘা দেখা যায়। |
অপুষ্টি এবং অতিপুষ্টি দ্বারা ভাগ করা সাধারণ লক্ষণ
যদিও অপুষ্টি এবং অত্যধিক পুষ্টির আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা উভয় অবস্থাতেই লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে:
- ক্লান্তি এবং শক্তির অভাব
- ক্ষুধা পরিবর্তন
- হজমের সমস্যা যেমন ফোলা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য
- দুর্বল ইমিউন সিস্টেম
- দরিদ্র ক্ষত নিরাময়
- প্রতিবন্ধী জ্ঞানীয় ফাংশন
পুষ্টি সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের স্লোগান
ক্রমিক | পুষ্টি সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের স্লোগান |
১ | অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার ও জাঙ্কফুড পরিহার করি। সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি। |
২ | পুষ্টিমূলক খাবার খেলে শারীরিক ও মানকিস উন্নতি হবে। |
৩ | সঠিক খাদ্য সেবা একটি সুস্থ জীবনের চাবি কাঠি। |
৪ | খাদ্যে পুষ্টি আমাদের কাঙ্খিত তুষ্টি। |
৫ | রাঁধি ও খাই পুষ্টি ভুলি নাই । |
৬ | শুধু খাদ্য নয় পুষ্টিও চাই। |
৭ | খাবার নিয়ে সতর্ক থাকুন এবং শরীরের প্রতি সচেতন হোন। |
৮ | পুষ্টিমূলক খাবার না খেলে শরীল অসম্পূর্ণ থাকে। |
খাদ্য ও পুষ্টি কাকে বলে
খাদ্য: যেসব জৈব উপাদান জীবের দেহ গঠন, ক্ষয়পূরণ এবং শক্তি উৎপাদনে ব্যবহূত হয় সেগুলোকে খাদ্য বলে। অর্থাৎ দেহের কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে দেহকে সুস্থ, সবল করার জন্য যেসব খাদ্য উপাদান প্রয়োজন সেসব উপাদানকেই খাদ্য বলা হয়।
খাদ্য গ্রহণের ফলে আমাদের দেহের পুষ্টিসাধন হয়। তবে আমরা যা কিছু খাই তার সবই খাদ্য নয়। যেসব দ্রব্য আহারের পর দেহের গঠন, বৃদ্ধি, ক্ষয়পুরণ, রক্ষণাবেক্ষণ, তাপ ও শক্তি উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি ইত্যাদি কাজ সম্পাদন করে দেহকে সুস্থ, সবল, কর্মক্ষম ও রোগমুক্ত রাখে তাকেই খাদ্য বলে।
আমরা নানা ধরনের খাদ্য খাই । যেমন- ভাত, রুটি, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, শাক-সবজি, ফল-মূল, পানি ইত্যাদি। খাদ্য গ্রহদের ফলে আমাদের স্বাস্থ্য ঠিক থাকে। একে আমরা দেহের পুষ্টিসাধনও বলে থাকি। আসলে পুষ্টি হলো একটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া।
পুষ্টি: যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় খাদ্যদ্রব্য আহারের পর দেহের চাহিদা পূরণ করে দেহকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখে তাকে পুষ্টি বলে।
যে ধারাবাহিক ও উপচিতি বিপাক পদ্ধতিতে খাদ্যগ্রহণ, পরিপাক, শোষণ, আত্তীকরণ ও বহিষ্করণের মাধ্যমে (প্রাণীদের ক্ষেত্রে) অথবা সংশ্লেষ ও আত্তীকরণের মাধ্যমে (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে) জীব তার প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করে, দেহের ক্ষ্য়পূরণ, বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটায়, জীবের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা গড়ে ওঠে এবং জীবনের মৌলিক ধর্মগুলি সুষ্ঠভাবে পালিত হয়, তাকে পুষ্টি বা নিউট্রিশন বলে।
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কি
খাদ্য ও পুষ্টি তালিকা, পুষ্টিকর খাবারের তালিকা, দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের তালিকা
সকালের খাবার
দিনের ভালো শুরুর জন্য সকালের খাবার খুব গুরুত্বপূর্ণ। সারা রাত ঘুমিয়ে থাকার পর সকালে পাকস্থলী খালি থাকে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে তাই খাবার খেতে হবে। খালি পেটে থাকা যাবে না। সবার খাদ্যাভ্যাস এক রকম নয়। সকালে ভাত খান অনেকে। এতে শর্করার প্রয়োজন পূরণ হয়। খেতে পারেন রুটি, পরোটা, খিচুড়ি, পাউরুটি কিংবা মুড়ি। আমিষের জন্য সঙ্গে ডিম, ডাল, এক থেকে দুই টুকরা মাংস ও সবজি খেতে হবে।
১। খাদ্যশস্য শ্রেণী | আটার রুটি |
২। মাছ-মাংস শ্রেণী | ডিম |
৩। শাক-সবজি শ্রেণী | আলু ভাজি |
৪। দুধ ও দুগ্ধজাত শ্রেণী | পনির/মিষ্টি/১ কাপ দুধ/ দুধ মিশ্রিত চা |
দুপুরের খাবার
সকালের খাবার ৮টার মধ্যে খেয়ে নিলে দুপুরের খাবার ২টার মধ্যে খেয়ে নেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। দুপুরে এক কাপ ভাত কিংবা রুটির সঙ্গে ডাল, ডিম কিংবা এক থেকে দুই টুকরা মাছ অথবা মাংস ও সবজি খেতে হবে। এতেই শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে।
১। খাদ্যশস্য শ্রেণী | ভাত |
২। মাছ-মাংস শ্রেণী | মাছের তরকারি |
৩। শাক-সবজি শ্রেণী | পুঁইশাক/পালংশাক |
৪। দুধ ও দুগ্ধজাত শ্রেণী | দই/পায়েস |
রাতের খাবার
রাতে অনেকের মধ্যে খাবার কম খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এটা আদৌ ঠিক নয়। রাত ৮টার মধ্যে রাতের খাবার খেতে হবে। রাতের খাবারে এক কাপ ভাত কিংবা রুটির সঙ্গে ডাল, ডিম কিংবা এক থেকে দুই টুকরা মাছ অথবা মাংস ও সবজি খেতে হবে। অনেকেই মাছ কিংবা মাংস খেতে চান না। এই অভ্যাস থেকে সরে আসতে হবে। দিনের পর দিন মাছ-মাংস থেকে দূরে থাকলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়। শরীরে শক্তি কমতে শুরু করে। এ জন্য নিয়মিত প্রাণিজ প্রোটিন খেতে হবে।
১। খাদ্যশস্য শ্রেণী | ভাত/রুটি |
২। মাছ-মাংস শ্রেণী | মাংস |
৩। শাক-সবজি শ্রেণী | নিরামিষ |
৪। দুধ ও দুগ্ধজাত শ্রেণী | দুধ/মিষ্টি |
সারা দিনে কতটুকু পানি
আমাদের শরীরের সিংহ ভাগই পানি। শরীরের জন্য পানি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সারা দিনে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। এর বেশি পানি পান করলে অবশ্য তা শরীরের কোনো উপকারে আসে না। গরমের দিনে শরীর থেকে পানি বেশি বের হয়ে যায়। তাই এ সময় সারা দিনে তিন লিটার পানি পান করলেই প্রয়োজন মিটে যাবে।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | পুষ্টি, পুষ্টি বিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর
Q1. উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান কয়টি
Ans – উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য মোট ২০টি অপরিহার্য বা উপকারী খনিজ পদার্থ (পুষ্টি উপাদান) আছে।
এই তিনটি উপাদান বাতাস এবং পানিতে পাওয়া যায়।
কার্বন (C)
হাইড্রোজেন (H)
অক্সিজেন (O)
এই ৬টি পুষ্টিদায়ক পদার্থ উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রচুর পরিমাণে লাগে।
নাইট্রোজেন (N)
ফসফরাস (P)
পটাসিয়াম (K)
ক্যালসিয়াম (Ca)
ম্যাগনেসিয়াম (Mg)
সালফার (S) বা গন্ধক
এ ছাড়াও কিছু পুষ্টিদায়ক পদার্থ সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয়। এ ধরনের উপাদানগুলির মধ্যে যেগুলি অপরিহার্য, সেগুলি হল– বোরন (B), ক্লোরিন (Cl), কপার (Cu) বা তামা, আয়রন (Fe) বা লোহা, ম্যাঙ্গানিজ (Mn), সোডিয়াম (Na), জিঙ্ক (Zn) বা দস্তা, মলিবডেনাম (Mo) ও নিকেল (Ni)। অন্যান্য উপকারী উপাদানগুলি হল সিলিকন (Si) ও কোবাল্ট (Co)।
Q2. উদ্ভিদের অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান কয়টি
Ans – উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য ৪টি বেসিক উপাদান দরকার। সেগুলো হলো, মাটি, পানি, বায়ু ও সূর্যালোক। প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি মাটি ছাড়া আপনি গাছ লাগাতে পারবেন, কিন্ত বাকি ৩টি ছাড়া উপায় নেই।
Q3. পুষ্টি স্তর কাকে বলে
Ans – খাদ্য-খাদক সম্পর্কে উৎপাদক থেকে বিয়ােজক পর্যন্ত ধাপে ধাপে প্রত্যেক স্তরে শক্তি প্রবাহের জন্য খাদ্যের জোগান বজায় থাকে এবং প্রতিটি স্তরের জীবগােষ্ঠী সরবরাহকৃত খাদ্য থেকে পুষ্টি সাধন করে । জীবগােষ্ঠীর এরূপ খাদ্যের জোগান-সংক্রান্ত স্তরকে পুষ্টি স্তর বা খাদ্যস্তর বা ট্রফিক স্তর বলে ।
Q4. প্রোটিনের তিনটি পুষ্টিগত গুরুত্ব
Ans – প্রোটিনের তিনটি পুষ্টিগত গুরুত্ব
১৷ প্রোটিন কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত।
২৷ প্রোটিনের একক হল অ্যামাইনো অ্যাসিড।
৩৷ প্রোটিওলাইটিক উৎসেচক দ্বারা বিশ্লিষ্টও হয়।
Q5. হলোফাইটিক পুষ্টি কাকে বলে
Ans – সাধারণত উদ্ভিদে যে পুষ্টির ধরন পাওয়া যায় তাকে হলোফাইটিক পুষ্টি বলে। তারা শক্তি এবং জৈব পদার্থের বিল্ডিং উপাদান উত্পাদন করতে সালোকসংশ্লেষণ ব্যবহার করে। এগুলি হজম ব্যবস্থা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয় উদ্ভিদ, তাই তাদের বেঁচে থাকার জন্য সূর্যালোকের প্রয়োজন হয়।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।