- সামাজিক ইতিহাস কি, সামাজিক ইতিহাস বলতে কী বোঝো, সামাজিক ইতিহাস কাকে বলে
- সামাজিক ইতিহাসের সংজ্ঞা
- নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ
- নতুন সামাজিক ইতিহাস কি, নতুন সামাজিক ইতিহাস বলতে কী বোঝো
- জাতীয়তাবাদী ইতিহাস চর্চা বলতে কী বোঝো?
- স্থানীয় ইতিহাস বলতে কী বোঝ?
- স্থানীয় ইতিহাস চর্চা গুরুত্বপূর্ণ কেন?
- সামাজিক গোষ্ঠী কাকে বলে
- সামাজিক পরিবেশ কাকে বলে
- সামাজিকীকরণ কাকে বলে
- সামাজিকীকরণের গুরুত্ব
- সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে
- আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের জনক কে
- সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ
- সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি
- FAQ | মাধ্যমিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
সামাজিক ইতিহাস কি, সামাজিক ইতিহাস বলতে কী বোঝো, সামাজিক ইতিহাস কাকে বলে
উত্তর: নতুন সামাজিক ইতিহাস হল-সাধারণ মানুষের ইতিহাস। রাজা-মহারাজা বা অভিজাত সমাজের মানুষের আলোচনা ছাড়াও বর্তমান কালে সাধারণ মানুষের মর্যাদা, অস্তিত্ব ও অবদানকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েই ইতিহাস চর্চা করা হয়। বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হওয়া এরূপ ইতিহাস চর্চাকে নতুন সামাজিক ইতিহাস বা সামাজিক ইতিহাস বলে।
সামাজিক ইতিহাসের সংজ্ঞা
সামাজিক ইতিহাসের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা ইতিহাসের সংজ্ঞায়নের মতই কঠিন। কেননা বিভিন্ন ঐতিহাসিক, দার্শনিক, তাত্ত্বিকগণ সামাজিক ইতিহাসকে বিভিন্ন ভাবে সংজ্ঞায়নের চেষ্টা করেছেন। ইতিহাসের জনক গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের হাত ধরে ইতিহাসের উৎপত্তি হয় আর সামাজিক ইতিহাসকে ইতিহাস থেকে আলাদা করেছেন সমাজবিজ্ঞানীর ভিকো । তিনি তার The New Science গ্রন্থে বলেছেন সমাজে প্রচলিত প্রথা, রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান, জীবনধারা ইত্যাদি অতীতের বিবরণের নামই সামাজিক ইতিহাস ।
সামাজিক ইতিহাসের সংজ্ঞায় জি. এম. ট্রিভেলিয়ন বলেন, সামাজিক ইতিহাস কোন সমাজের সেই ইতিহাস যেখানে শুধুমাত্র রাজনৈতিক ঘটনাবলী বর্ণনা নয় বরং সমুদয় সামাজিক বিষয়াবলী বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়।
নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ
উত্তর: বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হওয়া নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চার দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো-
- ১) নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চায় সমাজের নিম্নবর্গের তথা প্রান্তিক ও সাধারণ মানুষের ইতিহাস আলোচনা করা হয়।
- ২) নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চায় সাধারণ মানুষের আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, বিনোদন ইত্যাদি সম্পর্কে এবং সমাজ ও সংস্কৃতির বিকাশে তাদের অবদান আলোচনা করা হয়।
নতুন সামাজিক ইতিহাস কি, নতুন সামাজিক ইতিহাস বলতে কী বোঝো
উত্তর: নতুন সামাজিক ইতিহাসের আলোচনায় সমাজের মুষ্টিমেয় উচ্চ বর্গকে নয়, বৃহত্তর সাধারণ নিম্নবর্গের প্রান্তিক মানুষকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। তাদের মর্যাদা ও অস্তিত্ব এবং সমাজ-সংস্কৃতির বিকাশে এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অবদান গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এটাই নতুন সামাজিক ইতিহাসের নতুনত্ব।
জাতীয়তাবাদী ইতিহাস চর্চা বলতে কী বোঝো?
উত্তর: নিজ দেশ ও দেশবাসীর স্বার্থে দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে যে ইতিহাস চর্চা করা হয়, তাকে জাতীয়তাবাদী ইতিহাস চর্চা হলে। এই ধরনের ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র একটি দেশ এবং সেই দেশের জনগণের কথা আলোচিত হয়। যদুনাথ সরকার, রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রমুখ হলেন ভারতের কয়েকজন বিখ্যাত জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক।
স্থানীয় ইতিহাস বলতে কী বোঝ?
উত্তর: কোন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন সমাজের নিজস্ব ইতিহাসকে স্থানীয় ইতিহাস বলা হয়। স্থানীয় ইতিহাসের মাধ্যমে কোন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়। কল্হন বিরচিত রাজতরঙ্গিনী হল কাশ্মীরের স্থানীয় ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ।
স্থানীয় ইতিহাস চর্চা গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তর: স্থানীয় ইতিহাস চর্চা বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ-
- ১) স্থানীয় ইতিহাস থেকে কোন অঞ্চলের প্রাচীন সমাজ, অর্থনীতি, শিল্পকলা ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়।
- ২) স্থানীয় ইতিহাস থেকে জাতীয় ইতিহাস চর্চার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান পাওয়া যায়।
সামাজিক গোষ্ঠী কাকে বলে
সামাজিক গোষ্ঠী একটি sociological Term,অর্থাৎ কোনো একটি নির্দিষ্ট সামাজিক প্রেক্ষাপটে যে নির্দিষ্ট আর্থিক,রাজনৈতিক,প্রাক্ষোভিক তথা সার্বিক ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠে সেটাই সামাজিক গোষ্ঠী নামে অভিহিত।
এবার গোষ্ঠী বিষয়টি একাধিক মানুষ তথা নিম্ম শ্রেণীর বুদ্ধিবৃত্তিক জীবের মধ্যে গড়ে উঠে নির্দিষ্ট কতকগুলি চাহিদা তথা লক্ষ্যভিত্তিক পর্যায়ে.বিভিন্ন রাষ্ট্রের নিজস্ব ভৌগলিক,সামাজিক,আর্থনৈতিক এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের উপর দাঁড়িয়ে সামাজিক গোষ্ঠী রচিত হয়।
প্রাচীন যুগে অর্থাৎ বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণ,হ্মত্রিয়,বৈশ্য,শুদ্র প্রভৃতি সম্প্রদায় তৎকালীন যুগোপযোগী দাবী এবং প্রবৃত্তি অনুসারে নিজস্ব গোষ্ঠী রচনা করেছিলেন এবং যুগের পরিবর্তনের সাথে এই দাবী এবং প্রবৃত্তি অবশ্যম্ভাবী ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী সামাজিক গোষ্ঠী রচনা হয়েছে ।
যদি European History র দিকে নজর রাখি তাহলে দেখা যায় শিল্পবিল্পব বা Industrial revelution এর সময় মূলত দুটি সামাজিক গোষ্ঠীর উদ্ভব হয় যেমন মালিক অর্থাৎ পুজিঁপতি বা Capitalist শ্রেণী এবং শ্রমিক শ্রেণী বা সর্বহারা শ্রেণী ।
যদি ভারত ভাগের সময়টা লক্ষ্য করা যায় দেখবো পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে মূলত দুটি সামাজিক শ্রেণী রাষ্ট্র ব্যবস্থার propeller হয়ে উঠেছেন :
- একটি ধর্মনিরপেক্ষ(Secularistic) ভাবধারার অপরটি
- মৌলবাদী বা ধর্মভিত্তিক(Extremist) ভাবধারার
সামাজিক পরিবেশ কাকে বলে
একটি দেশের সমাজের বা জাতির মানুষের সংখ্যা, ধর্ম, বিশ্বাস, চিন্তা-চেতানা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, দৃষ্টিভঙ্গি, মতামত, জীবন শৈলী ও দেশীয় ঐতিহ্য এসব মিলিয়ে যে পারিপার্শ্বিকতা গড়ে ওঠে তাকে সামাজিক পরিবেশ বলে।
সমাজে বসবাসরত মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে এমনসব উপাদানের (জনসংখ্যা, শিক্ষাব্যবস্থা, বেকারত্ব, জাতীয়তা, রীতিনীতি প্রভৃতি) সমষ্টি হল সামাজিক পরিবেশ।
সামাজিক পরিবেশ বলতে সংঘবদ্ধ মানুষের বহুমুখী জীবনের সমষ্টিগত রূপ ও অবস্থাকে বুঝায়। জীবন বিকাশের তাগিদে, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ইত্যাদি বিষয়ে মানুষ যে পারিপার্শ্বিক সম্পর্ক ও সংগঠন রচনা করে তাকে সামাজিক পরিবেশ বলে।
ক্লাব, সমিতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, নাট্যসমিতি, সাহিত্য ও বিতর্কসভা, লেখক সমিতি ইত্যাদি সামাজিক পরিবেশের উপাদান। সভ্য জীবন যাপনের জন্য সামাজিক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরবরাহ করে।
সামাজিকীকরণ কাকে বলে
সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি মূলত: সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত হয়।
সামাজিকীকরণ প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানী বোগারডাস (Bogardus) বলেছেন, “সামাজিকীকরণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ব্যক্তি জনকল্যাণের নিমিত্তে একত্রে নির্ভরযোগ্য আচরণ করতে শেখে। এটি করতে গিয়ে সামাজিক আত্মনিয়ন্ত্রণ, দায়িত্ব ও সুসামঞ্জস্য ব্যক্তিত্বের অভিজ্ঞতা লাভ করে।”
উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে একটা মেয়ে শিশু তার মা দাদিমা কিংবা বোনকে অনুকরণ করে এবং কীভাবে কন্যা, বোন, বান্ধবী, স্ত্রী কিংবা মা হয়ে উঠবে সেটা ধীরে ধীরে রপ্ত করে। তার চারিপাশের ঘনিষ্ঠ জনও সেভাবেই তাকে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে।
সামাজিকীকরণের গুরুত্ব
সামাজিকীকরণ হলো একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। প্রত্যেক মানব শিশু এই সামাজিকীকরণের ভেতর দিয়ে যায়। সামাজিকীকরণ একজন শিশুকে পারিপর্শ্বিক পরিবেশ, সংস্কৃতি ও সমাজের উপযোগী হয়ে উঠে।
সামাজিকীকরণের মাধ্যমে শিশুর সামাজিক সত্ত্বার বিকাশ হয়ে থাকে। সামাজিকীকরণের ভেতর দিয়ে মানব শিশু আদব কায়দা, ব্যবহার, নৈতিকতা, মূল্যবোধ শিখে থাকে। ফলে মানব শিশু অথবা একজন ব্যক্তি তার ব্যক্তি সত্তার সাথে এবং সে গোষ্ঠী সত্ত্বার সাথে আবদ্ধ হয়ে থাকে। সামাজিকীকরণে পরিবার, সমাজ, বিদ্যালয়, প্রতিবেশি সাথী , ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে।
সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে
সমাজবিজ্ঞান এমন একটি পূর্ণাঙ্গ বিষয় যা মানুষ এবং মানুষের সমন্বয়ে সৃষ্ট সমাজের সকল দিককে অন্তর্ভুক্ত করে।
সমাজবিজ্ঞান শব্দটি একটি যৌগিক শব্দ যা সমাজ ও বিজ্ঞান দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত।
সমাজ একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ, সমাজের সাথে মানব জীবনের সকল দিক সম্পর্কিত, যেমন, পরিবার, ধর্ম, সাংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক।
অন্যদিকে বিজ্ঞান হচ্ছে যুক্তি ও বাস্তবিকতার নিরিখে সব কিছু পর্যালোচনা করা। সুতরাং সমাজবিজ্ঞান শব্দের শাব্দিক অর্থ দ্বারায়, যুক্তি ও বাস্তবিকতার নিরিখে মানুষ এবং সমাজের পর্যালোচনা।
যে শাস্ত্র সমাজের উৎপত্তি, বিকাশ, প্রত্যয় ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সকল দিক থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে অধ্যয়ন করে, সেই বিজ্ঞানময় শাস্ত্রকে সমাজবিজ্ঞান বলে।
সমাজবিজ্ঞানীগণ সমাজবিজ্ঞানকে নানা ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, যেমন ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী ডুর্খেইম বলেছেন,”সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজিক প্রতিষ্ঠান সমূহের বিজ্ঞান”।
ম্যাকাইভারের মতে,“সমাজবিজ্ঞানই একমাত্র বিজ্ঞান যা সমাজ এবং মানুষের মধ্যাকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে”।
সমাজবিজ্ঞান সমাজের আদি হতে অন্ত সকল দিক পর্যালোচনা করার মাধ্যমে মানব সমাজ এবং মানুষের ব্যাপারে সম্যক ধারণা প্রদান করে।
আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের জনক কে
আধুনিক সমাজ বিজ্ঞানের জনক কার্ল মার্কস।
সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ
অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের তুলনায় সমাজবিজ্ঞান সর্বকণিষ্ঠ। অগাস্ট কোঁৎ-এর সমাজবিজ্ঞান প্রত্যয় ব্যবহারের মধ্য দিয়ে এটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য যে, চিন্তার আদি উন্মেষ থেকেই সমাজ সম্পর্কে মানুষ ভাবতে থাকে। যেমন হ্যারি এলমার বার্নস বলেন, ‘লােককাহিনী থেকে বৈজ্ঞানিক যুগ পর্যন্ত সামাজিক চিন্তাধারার ব্যাপ্তি।’ নিম্নে সমাজচিন্তার পটভূমি তুলে ধরা হলাে:
(১) হামুরাবি সনদঃ খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে মানুষের লিখিত সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রাচীন হামুরাবি সনদে প্রাচীন ব্যাবিলােনিয়ান সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন বিধৃত আছে। এতে সমাজের বিভিন্ন মানুষের অধিকার ও কর্তব্যের সংক্ষিপ্ত অথচ পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায়, যা সমাজদর্শনের পরিচয় দান করে।
(২) প্লেটোঃ গ্রিক দার্শনিক প্লেটো তার ‘Republic’ গ্রন্থে সমাজ সম্পর্কে যেসব তত্ত্বের অবতারণা করেন তার মাধ্যমে সমাজের বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। তার কল্পিত আদর্শ রাষ্ট্রের সামাজিক গড়ন ও শ্রেণি সম্পর্কে চিন্তা ছিল সমাজতাত্ত্বিক এবং সমাজ মনস্তাত্ত্বিক গবেষণার গুরুত্বপূর্ন উপাদান।
(৩) এরিস্টটলঃ প্লেটোর সুযােগ্য ছাত্র এরিস্টটল তার ‘Politics’ গ্রন্থে প্লেটোর তুলনায় অনেকটা বাস্তবভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্রিয় কাঠামাের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন, যা সমাজবিজ্ঞানের জগতে গুরুত্বপূর্ন উপাদান হিসেবে বিবেচিত।
(8) ম্যাকিয়াভেলিঃ ইটালির দার্শনিক ম্যাকিয়াভেলি তার “Prince’ গ্রন্থে একজন শাসকের যে গুণাবলি এবং রাষ্ট্রের পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী শাসকের যে কার্যাবলির সুপারিশ করেন তা খুবই বাস্তবধর্মী। সমাজ সম্পর্কিত তার বাস্তবভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে আধুনিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় চিন্তাবিদ হিসেবে গণ্য করা হয়।
(৫) ভিকোঃ সমাজ যে একটি নির্দিষ্ট ধারায় বিবর্তিত হয় এ কথার বৈজ্ঞানিক রূপদান করেন ভিকো। তিনি তার দর্শনের নাম দেন ‘The New Science’ বা নতুন বিজ্ঞান। এজন্য অনেকে ভিকোকেই পাশ্চাত্য জগতে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলেন। তিনি সমাজ বিবর্তনের ধারায় তিনটি যুগ লক্ষ্য করেন। যথা: (১) দেবতাদের যুগ (২) যােদ্ধাদের যুগ ও (৩) মানুষের যুগ।
(৬) ইবনে খালদুনঃ মুসলিম জগতের মনীষী ইবনে খালদুন তার ‘মুকাদ্দিমা’ গ্রন্থে ঐতিহাসিক শক্তিসমূহের ব্যাখ্যা দেন। ইতিহাসের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে তার আলােচনা এতটাই সমাজতাত্ত্বিক যে তাকে অনেকে সমাজবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা বলেন।
(৭) হেগেলঃ হেগেল সর্বপ্রথম সমাজ ও রাষ্ট্রের পার্থক্য দেখিয়ে বলেন, মানুষের আর্থিক তাগিদে সমাজ সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্র ও সমাজের ধারণার এভাবে পৃথকীকরণের মাধ্যমেই সমাজ সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তার বিকাশ হতে থাকে।
(৮) মন্টেস্কুঃ সমাজচিন্তায় ফরাসি দার্শনিক মন্টেস্কুর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বিজ্ঞানের পটভূমি থেকে ইতিহাস রচনা করেন। ‘The spirit of the laws’ গ্রন্থে তিনি দেখাতে চেয়েছেন যে, কীভাবে ভৌগােলিক পরিবেশ বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সমাজচেতনার ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
(৯) অগাস্ট কোঁৎঃ ফ্রান্সের সমাজব্যবস্থা ও সমাজকাঠামােতে ফরাসি বিপ্লবের প্রতিক্রিয়া ও ফলশ্রতি অগাস্ট কোঁৎ-এর চিন্তা ও তত্ত্বকে প্রভাবিত করে। তিনি তৎকালীন ফ্রান্সের বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতাকে অবলােকন করে সমাজ পুনর্গঠনের চিন্তায় মনােনিবেশ করেন। এবং সমাজ বিশ্লেষণের জন্য ‘Social Physics’ নামে এক স্বতন্ত্র বিজ্ঞানের জন্ম দেন। পরে ১৮৩৯ সালে এটিকে ‘Sociology’ নাম দিয়ে এক নবতর বিজ্ঞানের গােড়াপত্তন করেন । তিনি তার ‘Positive Philosophy’ গ্রন্থে সমাজের তিনটি স্তরের কথা বলেন। যথা: ধর্মতান্ত্রিক স্তর, দার্শনিক স্তর এবং দৃষ্টবাদ। মূলত অগাস্ট কোঁৎ হলেন সমাজবিজ্ঞানের জনক।
(১০) হার্বার্ট স্পেনসারঃ একটি পৃথক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভবের ক্ষেত্রে ইংরেজ সমাজচিন্তাবিদ স্পেনসারের নাম বিশেষভাবে প্রণিধানযােগ্য। তিনি বিজ্ঞানের দুটি ভিন্নতর শাখা পদার্থবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান এই দুই ক্ষেত্র হতে ভিন্ন ভিন্ন সূত্র গ্রহণ করে সমাজকে একটি সচেতন ও ক্রমবিকাশমান সত্তা হিসেবে প্রমাণ করেন এবং সমাজবিজ্ঞানে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়ােগের ভিত স্থাপন করেন।
(১১) কাল মার্কসঃ কার্ল মার্কস ফরাসি বিপ্লব ও শিল্পবিপ্লবােত্তর ইউরােপীয় সমাজকাঠামাের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দ্বারা প্রভাবিত হন। মার্কসের ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ, শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব ও বিচ্ছিন্নতাবােধের তত্ত্ব মার্কসীয় সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভবের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখে। সমাজের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা তথা সমাজবিজ্ঞানের বিকাশের ক্ষেত্রে মার্কর্সীয় চিন্তাধারাই সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী এবং স্থায়ী।
(১২) ডুরখেইমঃ একটি পৃথক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠায় ডুরখেইমের অনন্য অবদান রয়েছে। ডুরখেইম তাঁর “The Division of Labour in Society’ এবং ‘Suicide’ গ্রন্থে সমাজ বিশ্লেষণে বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেন। তিনি সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার সূত্রপাত ঘটান। তাই সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে তার অবদান অনস্বীকার্য।
(১৩) ম্যাক্স ওয়েবারঃ ওয়েবার ব্যক্তিকে সমাজ গবেষণার একক হিসেবে চিহ্নিত করেন। তার ‘The Protestant Ethic and the Spirit of Capitalism’ গ্রন্থটি সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় এক নতুন মাত্রা যােগ করে। ওয়েবারের আমলাতন্ত্রের ও নেতৃত্বের সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা সমাজবিজ্ঞানের নবদিগন্ত উন্মােচন করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞান একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পেছনে বিভিন্ন যুগের সমাজচিন্তাবিদ ও দার্শনিকদের চিন্তা-চেতনা ও কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। মানবসভ্যতার উষালগ্ন থেকে সমাজচিন্তার উদ্ভব হলেও সমাজবিজ্ঞানের জন্ম হয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে। বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মত সমাজবিজ্ঞানকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করা গেলেও সমাজবিজ্ঞান একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে ক্রমবিকাশের সূত্র ধরে স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে আছে।
সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি
কোনা বিষয় বা বস্তুর প্রকৃতি বলতে ওই বিষয় বা বৈশিষ্ট্য বা স্বভাব বা পরিচয়কে বাঝায। অতএব সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি বলতে সমাজবিজ্ঞান বিষষের বৈশিষ্ট্য বা পরিচয়কে বোঝায়। সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, স্বভাব নিচে আলোচনা করা হল।
১. বিজ্ঞানভিত্তিক আলাচনা ও বিশ্লেষণঃ সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি তথা এর উদ্দেশ্য। হলা সমাজে বসবাসকারী মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কেও বিজ্ঞানভিত্তিক আলাচনা ও বিশ্লেষণ করা।
২. সমাজকে পূর্ণাঙ্গরূপে অধ্যয়ন করে: রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা অর্থনীতি সে ক্ষেত্রে সমাজের এক একটা দিক সম্পর্কে পাঠ করে সে ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান গা টা সমাজের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ প্রদান করে।
৩. সমাজের গঠনপ্রকৃতি ও সামাজিক কাঠামা সম্পর্কে আলাচনা করে: কিসের ভিত্তিতে এবং কিভাবে সমাজ গড়ে ওঠে এবং কিভাবেই বা সমাজ একটা কাঠামা গত রূপ নেয় তা সমাজবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয়।
এখানে বলা প্রযােজন, সমাজের তথা তার কাঠামাের ভিত্তি হচ্ছে মানব সম্পর্ক। ব্যক্তি, গােষ্ঠী এবং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সমাজবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয়।
৪. সমাজবিজ্ঞান সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ: সমাজবিজ্ঞান সমাজ গবেষণায়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং কৌশল অবলম্বন করে। সমাজের ব্যাখ্যা ও গবেষণায় হোলি, কল্পনা এবং আবেগের স্থান নেই। সমাজের বাস্তবতা নির্ণয় এর অন্যতম লক্ষ্য।
৫. সমাজবিজ্ঞান একটি বিশ্লেষণধর্মী বিজ্ঞান : সমাজবিজ্ঞান নেহায়েত সমাজের ঘটনাবলির বর্ণনাই কেবল নয়, এটি ঘটনাসমূহের কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ে যুক্তিভিত্তিক বিচার-বিশ্লেষণ করার প্রয়াস পায়। অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞান কেবল সমাজের আলােচনা ন্য, পর্যালােচনাও বটে।
৬. নৈতিকতার প্রশ্নে সমাজবিজ্ঞান নিরপেক্ষ: সমাজের বাস্তব ভালাে কি মন্দ, সমাজ কেমন হওয়া উচিত কি অনুচিত, এসব বিষয়ে নিরপেক্ষ অবলম্বন করে অর্থাৎ এ বিষয়ে সুস্পষ্ট রায় দেওয়া থেকে সমাজবিজ্ঞান বিরত থাকে।
৭. সমাজবিজ্ঞান সর্বদাই নিরপেক্ষ অবলম্বন করতে পারে না যদিও তাত্ত্বিকভাবে এবং আদর্শগতভাবে সমাজবিজ্ঞান মূল্যবােধনিরপেক্ষ বিজ্ঞান, তথাপি উন্নয়নকামী সমাজে সমাজবিজ্ঞান চর্চার অন্য লক্ষ্য হচ্ছে সমাজের সমস্যাবলি চিহ্নিতকরণ এবং তার সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া।
৮. পরিবর্তনশীল সমাজের দিকনির্দেশনা প্রদান: পরিবর্তনশীল সমাজের দিকনির্দেশনা প্রদানও সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম কাজ।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | মাধ্যমিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
Q1. ইতিহাসের জনক ‘ নামে পরিচিত হলেন
Ans: হেরোডোটাস
Q2. পেশাদারি ইতিহাস রচনা শুরু করেন
Ans: লিওপোল্ড র্যাঙ্কে
Q3. ঐতিহাসিক তথ্য বলতে বোঝায়
Ans: অতীতের নথিবদ্ধ তথ্য
Q4. অ্যানালস পত্রিকার মূল উদ্দেশ্য ছিল
Ans: সামাজিক ইতিহাস
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।