- চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কে প্রবর্তন করেন
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কোথায় চালু হয়
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এর ছবি, ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছবি
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণ ও ফলাফল
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল ও কুফল
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব
- FAQ | চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সদস্য 1765 সালে দিল্লির মুঘল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে বার্ষিক 26 লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যায় রাজস্ব আদাই করার অধিকার পায়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উদ্দেশ্য ছিল এদেশ থেকে মুনাফা লুণ্ঠন করা।অতঃপর তারা ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাকে স্থায়ী করার জন্য তারা বিত্তবানদের মধ্য একশালা,পাঁচশালা দশশালা বন্দোবস্ত করেন। কিন্তু এত তারা ব্যর্থ হয়। তখন তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস ভূমি রাজস্ব বিষয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিকট এক নতুন ব্যবস্থার প্রস্তাব করেন। উক্ত প্রস্তাবই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক 1793 সালে অনুমোদিত হয়। এটি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বা Parmanent Settlement নামে পরিচিত।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কে প্রবর্তন করেন
১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস সর্বপ্রথম চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত যার অপর নাম স্থায়ী ভূমি ব্যবস্থা চালু করেন।
রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং স্থায়ী অনুরক্ত সৃষ্টির মাধ্যমে ১৭৮৯ সালে ১০ সালা বন্দোবস্ত চালু করেন। লর্ড কর্নওয়ালিস ২২ মার্চ ১৭৯৩ সালে ১০ সালা বন্দোবস্ত কে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে ঘোষণা করেন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে সূর্যাস্ত আইন নামে যে আইন ছিল তিনি সে আইনের বলবৎ করেন।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কোথায় চালু হয়
সর্বপ্রথম ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস পাঁচশালা বন্দোবস্ত চালু করেছিলেন। এই পাঁচশালা বন্দোবস্ত উদ্দেশ্য ছিল উচ্চ হারের ডাক নিয়ে কৃষকদের হতে রাজস্ব আদায় করা। রাজস্ব আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট সময় সীমা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হলে অর্থাৎ কৃষকরা রাজস্ব কর দিতে ব্যর্থ হলে তাদের উপর নেমে আসত অমানবিক নির্যাতন। কিন্তু কৃষকদের আর্থিক উন্নয়ন কিংবা জমির উন্নয়নের ব্যাপারে জমিদারে কোনো লক্ষ্য ছিল না।
এত নির্যাতনের কারণে কৃষকরা চাষাবাদ না করেই পালিয়ে যেত। যার পরিপ্রেক্ষিতে বছরের-পর-বছর জমিগুলো অনাবাদি হয়ে থাকতো। বাংলা বিহার, উড়িষ্যার রাজস্ব সমস্যা সমাধানের জন্য ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে তৎকালীন সময়ে নতুন আইনে ব্যবস্থা উদ্ভাবনের দরকার বলে মনে করেন। এরই প্রেক্ষিতে ১৭৮৪ সালে পিটের ইন্ডিয়া অ্যাক্ট প্রবর্তিত হয়। ফলে আইন পরিবর্তন করে ১৭৮৬ সালে ১০ সালা ব্যবস্থা কে চেঞ্জ করা হয়। ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করা হয়।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য
- নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের শতে জমিদার জমিদারের চিরস্থায়ী অধিকার লাভ করে।
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হওয়ায় জমিদারদের প্রশাসনিক ক্ষমতা বিলুপ্তি হয়। যার জন্য জমি তাদের অত্যাচার থেকে সাধারণ কৃষক, সাধারণ মানুষ রক্ষা পায়
- সরকার স্বয়ং শান্তিরক্ষা এবং জনগনের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করে। যার বিনিময় সাধারণ শ্রেণীর লোক কৃষিজমি চাষবাস করতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
- খাজনা বকেয়া পড়লে জমিদার’দের ভূমির কিছু অংশ বিক্রি করে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করা যেত।
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত মাধ্যমে জমিদারগণ জমির মালিক হিসেবে পরিগণিত হয়। যার ফলে জমিদারগণ জমির মালিকানা হিসেবে বিবেচিত হতো।
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বৃহৎ জমিদারি গুলিকে খন্ড খন্ড করে দেয় যার ফলে সামাজিক বিপ্লব ঘটতে শুরু করে।
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বিত্তবানদের মধ্যে বাৎসরিক নির্দিষ্ট রাজস্বের বিনিময় জমিদারি হস্তান্তর করা হয়। বংশানুক্রমে এই জমিদারি করা হস্তান্তর করতে পারেন।
- প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে না হলে জমিদারের কোন ভূ সম্পত্তি দান বা বিধান চালু হয়।
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণে সরকারি রাজস্ব নিশ্চিত স্থায়ী করা হয় অর্থাৎ জমিদারকে রাজস্ব অবশ্যই দিতে হবে না হলে সরকার তার জমির একাংশ বিক্রি করে রাজস্ব আদায় করবে।
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণে জমিদারের স্বার্থ নিশ্চিত ও স্থায়ী হলেও প্রজাদের স্বার্থ অনিশ্চিত হয়ে পরে।
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণে জমিদারগন তাদের সম্পত্তির কৃষি উন্নয়নের একক সুবিধা পায় যার ফলে কৃষির উন্নতি দেখা যায়।
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে সরকার বিত্তবানদের জমিদারি মালিকানা প্রদান করে।
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণে জমিদারগণ ব্যক্তিগত অধিকার ভোগ করতে পারতেন।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এর ছবি, ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছবি
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণ ও ফলাফল
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণ ও ফলাফল গুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো :-
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণ
জমিদারদের জমির স্থায়ী মালিকানা নিশ্চিতকরন :
ব্রিটিশ সরকার মনে করতো ভূমি রাজস্ব সফল ও সঠিকভাবে আদায় না হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল জমিদারদের জমিতে স্থায়ী মালিকানা না থাকা। তাই জমিদারদের জমিতে স্থায়ী মালিকানা প্রদান এর জন্য এই ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
অর্থনৈতিক ক্ষতি হ্রাসকরণ
জানা যায় অনেক জমিদার কোম্পানিকে সঠিকভাবে কাজ না না দিয়ে অনেক তথ্য গোপন করে খাজনা কম দিতে। তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে এই ব্যবস্থা প্রবর্তন হয়।
ভূমির উন্নয়ন ও রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি
কোম্পানি অনুমান করতো জমিদারদেরকে জমির স্থায়ী মালিকানা করে দিলে তারা জমির উন্নয়ন ঘটাবে ও প্রজাদের মঙ্গল সাধন চেষ্টা করবে যার ফলস্বরূপ রাজস্ব আয় বাড়বে।
অনুগত জমিদার সম্প্রদায় সৃষ্টি
কোম্পানি চেয়েছিল এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে জমিদাররা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে জমির মালিকানা পেলে জমিদাররা কোম্পানির প্রতি অনুগত হবে।
নিলাম ব্যবস্থা থেকে মুক্তি
রাজস্ব ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে মধ্যস্থ ভোগীদের নিয়োগ করে কোম্পানি অনেক সময় রাজস্ব আদাই করত আবার অনেক ক্ষেত্রে নিলাম ডাকে সময় যে অর্থমূল্য উঠতো তা কোম্পানির রাজস্বে ঠিকমতো জমা হতো না। তাছাড়া বছর বছর নিলাম দর পরিবর্তনের ঝামেলার কারণে নিলাম ব্যবস্থা নিঃষ্পত্তি ঘটে।
স্থায়ী ও নিশ্চিত আয়
স্থায়ী ও নিরবচ্ছিন্ন নিশ্চিত আয়ের ব্যবস্থা পাকাপাকি হয়ে যায় সম্পূর্ণভাবে।
প্রজাদের রক্ষা
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পূর্বে জমিদাররা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমির মালিকানা পেয়েছেন এতে অনেক সময় তারা অত্যাচারী ও বিলাসী জমিদাররা কৃষকদের উপর নিপীড়িত অত্যাচার করত। কৃষকদের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষার জন্যই এই ব্যবস্থার প্রচলন।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষে যে সকল ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাগুলির প্রচলন করেছিলেন তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুগান্তরকারী ছিল লর্ড কর্নওয়ালিস প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফলের দুটি দিক ছিল যথা সুফল ও কুফল।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল ও কুফল
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল ও কুফল গুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো :-
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল
বার্ষিক আয় নিশ্চিতকরণ
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হওয়ার ফলে সরকারের বার্ষিক আয় নিশ্চিত হয়। ফলে কোম্পানির বাজেট প্রস্তুত করতে সুবিধা হয়।
জমির উন্নতি প্রচেষ্টা
জমিদার নির্দিষ্ট খাজনা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য দিয়ে বংশানুক্রমিকভাবে জমি ভোগ করার ফলে তারা তাদের জমিদারি হারানোর ভয় থেকে মুক্তি হয়।
কৃষির উন্নতি
এই বন্দোবস্তের ফলে কৃষিতে উন্নতি ঘটে ফলে কৃষি যৌগ্য জমির পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।
অনুগত জমিদার শ্রেণীর উদ্ভব
কোম্পানির উপর নির্ভরশীল এক জমিদার শ্রেণী সৃষ্টি হয় যারা কোম্পানিকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে থাকে
সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এদেশের জমিদার শ্রেণীকে বৃত্তবান করেছিল। এই সব বৃত্তবান জমিদাররা এদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন টরেছিল।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল গুলি হল –
পুরনো জমিদারদের উচ্ছেদ
এই ব্যবস্থায় সূর্যাস্ত আইন অনুসারে নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের মধ্যে সরকারি কোশাগারে রাজস্ব জমা দিতে না পেরে পুরনো বহু জমিদার তাদের জমিদারি হারায়।
সরকারের লোকসান
সরকারের রাজস্ব সুনির্দিষ্ট হওয়ার ফলে পরবর্তীকালে জমির মূল্য বা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও কোম্পানির কোন রাজস্ব বৃদ্ধি হয়নি ফলে কোম্পানি লোকসানের সম্মুখীন হয়।
কৃষকদের দুরাবস্থা
জমিদাররা কৃষকদের উপর প্রবল অত্যাচার চালিয়ে নির্ধারিত রাজস্বের চেয়ে অনেক বেশি রাজস্ব আদায় করার ফলে কৃষকদের অবস্থা খুবই করুণা হয়ে ওঠে।
পত্তনি প্রথার উদ্ভব
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অন্যতম কুফল ছিল পত্তনি প্রথার উদ্ভব। কোন কোন জমিদার প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকার জন্য নির্দিষ্ট মূল্যের পরিবর্তে জমিদারি অংশ ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে মধ্যস্বত্ব ভোগী শ্রেনীকে দিতেন।একেই পত্তনি প্রথা বলা হয়।
মুসলিমদের দুর্দশা
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে মুসলমানরা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হল। সরকারি রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বহু পুরনো মুসলমান জমিদার তাদের জমিদারি রক্ষা করতে পারলেন না।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদারগণ নিজস্ব ভূমির মালিক হয় এবং কৃষকগণ কিছু ক্ষেত্রে বঞ্চিত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুবিধা ভোগ করে ক্ষেত্রে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং জমিদার শ্রেণীর মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি হয়। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষিত অংশ আস্তে আস্তে সচেতন হয়ে বৈষম্য দূরীকরণের জন্য জেগে উঠতে থাকে। এর মাধ্যমে ব্রিটিশ রাজ উৎখাতের জন্য স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়। সমগ্র ভারত উপমহাদেশে নতুন জাতীয়তাবাদ বিকশিত হয়।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
Q1. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী
Ans – চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হলো নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব পরিষদের মাধ্যমে জমিদারদের নিজ নিজ জমির ওপর মালিকানা দান করে যে বন্দোবস্ত চালু করা হয় তাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলা হয়।
Q2. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্ত
Ans – লর্ড কর্নওয়ালিশ বিলাতের পরিচালক সভার অনুমােদন পেয়ে দশসালা বন্দোবস্তকে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে (২২ মার্চ) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করেন। প্রথমে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় এবং পরে বারাণসী, উত্তর পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির কোনাে কোনাে অঞ্চলে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়। চিরস্থায়ী ব্যবস্থায় বলা হয় যে一
[1] জমির প্রাপক জমিদার-তালুকদাররা বংশানুক্রমিকভাবে জমি ভােগদখল করতে পারবেন।
[2] জমিদার ইচ্ছামতাে জমি দান, বিক্রি বা বন্ধক রাখতে পারবেন।
[3] ভূমিরাজস্বের পরিমাণ ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের হারেই বহাল থাকবে।
[4] নির্ধারিত ভূমিরাজস্বের শতকরা ৮৯ ভাগ সরকার ও ১১ ভাগ জমিদার পাবেন।
[5] সূর্যাস্ত আইন অনুসারে জমিদাররা সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের মধ্যে পরিশােধ করতে বাধ্য থাকবে।
[6] নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজস্ব পরিশােধে ব্যর্থ হলে তাকে সমগ্র জমিদারি বা তার অংশ বিক্রি করে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব মেটাতে হবে। অন্যথায় জমিদারি বাজেয়াপ্ত হবে।
[7] ভবিষ্যতে খরা, বন্যা, মহামারি বা অন্য কোনাে প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও রাজস্ব মকুব করা হবে না।
Q3. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উদ্দেশ্য
Ans – কর্নওয়ালিশ বড়ােলাট হয়ে ভারতে এসে (১৭৮৬ খ্রি.) ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তন করেন। তার শাসনকালে এটি ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পেছনে বেশ কিছু উদ্দেশ্য ছিল, যেমন一
[1] সমর্থক গােষ্ঠীর উদ্ভব: চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের মাধ্যমে ভারতে ইংরেজদের অনুগামী একটি নতুন অভিজাত শ্রেণির উত্থান ঘটবে।
[2] সুনিশ্চিত আয়: কোম্পানির আশা ছিল যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করলে তারা নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট হারে রাজস্ব পাবে। এর ফলে তাদের আয়ের অনিশ্চয়তা দূর হবে।
[3] বাজেট তৈরির সুবিধা: রাজস্ব থেকে প্রতি বছর সুনিশ্চিত আয় হলে সরকারের পক্ষে বার্ষিক আয়ব্যয়ের বাজেট তৈরির কাজ সহজ হবে।
[4] দেশের সমৃদ্ধি: জমিতে স্থায়ী অধিকার পেয়ে জমিদাররা কৃষি ও কৃষকের উন্নতির জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করবেন। এতে দেশের সমৃদ্ধি বাড়বে এবং পরােক্ষে কোম্পানিরই লাভ হবে।
Q4. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রেক্ষাপট
Ans – চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রেক্ষাপট : –
[1] হেস্টিংসের ভূমিব্যবস্থার ত্রুটি: ওয়ারেন হেস্টিংসের ‘পাঁচসালা বন্দোবস্ত (১৭৭২ খ্রি.) এবং একসালা বন্দোবস্ত (১৭৭৭ খ্রি.) যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ ছিল। এই ব্যবস্থার দ্বারা সরকারের বার্ষিক আয়ের কোনাে নিশ্চয়তা ছিল না। এসব ত্রুটি দূর করার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের পরিচালক সভা বাংলায় স্থায়ীভাবে ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনের নির্দেশ দিয়ে কর্নওয়ালিশকে ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে পাঠান।
[2] দশসালা বন্দোবস্ত: কর্নওয়ালিশ জন শােরের কিছু বক্তব্যে আকৃষ্ট হন। বন্দোবস্ত সম্পর্কে দীর্ঘ আলােচনার পর তিনি ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলা ও বিহারের এবং ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যার জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য জমি বন্দোবস্তের কথা ঘােষণা করেন। এই ব্যবস্থা দশসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।
Q5. বাংলার কৃষক সমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব
Ans – চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলার রায়ত বা কৃষক সম্প্রদায় । জমির উপর জমিদারের মালিকানা স্বত্ব স্বীকৃত হলেও জমির উপর কৃষকের কোনাে মালিকানা স্বত্ব ছিল না । জমিদার প্রজাকে ইচ্ছে মতাে জমি থেকে উৎখাত করতে পারতেন এবং প্রজার অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে জমিদারের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল ছিল । এম . জে বিভিরাজি বলেন যে , প্রজাদের স্বার্থ উপেক্ষা করে কেবলমাত্র জমিদারদের সঙ্গে চুক্তি করা হয় — এটা একটা ভ্রান্তি ও চরম অন্যায় ।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।