WBBSE Geography Class 9 | ভারতের জলবায়ু
- WBBSE Geography Class 9 | ভারতের জলবায়ু
- নবম শ্রেণীর অ্যাসাইনমেন্ট ভূগোল ও পরিবেশ উত্তর 2022
- মৌসুমি বায়ু কাকে বলে
- মৌসুমি বায়ুর বৈশিষ্ট্য
- ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব
- পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব
- সুউচ্চ হিমালয় পর্বত কিভাবে ভারতের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে
- ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব, ভারতের জলবায়ুর উপর মৌসুমী বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো, প্রধানত কোন বায়ু প্রবাহ ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে
- ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য, ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রক গুলি কি কি
- উপযুক্ত উদাহরণের সাহায্যে ভারতের জলবায়ু পরিস্থিতির আঞ্চলিক পরিবর্তনগুলি বর্ণনা করুন
- বর্ষার প্রক্রিয়া আলোচনা কর।
- আবহাওয়ার অবস্থা এবং ঠান্ডা ঋতুর বৈশিষ্ট্যগুলির একটি বিবরণ দিন।
- FAQ | মৌসুমি বায়ু
নবম শ্রেণীর অ্যাসাইনমেন্ট ভূগোল ও পরিবেশ উত্তর 2022
মৌসুমি বায়ু কাকে বলে
স্থল ও জলভাগের মধ্যে চাপের তারতম্য জনিত কারণে প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে জলভাগ ও স্থলভাগের মধ্যে যে বিপরীতমুখী বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে মৌসুমি বায়ু বলে।
মৌসুমি বায়ুর বৈশিষ্ট্য
- স্থল ও জলভাগের মধ্যে চাপের তারতম্য জনিত কারণে মৌসুমি বায়ু প্রবাহের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
- শীত ও গ্রীষ্মকালে বায়ুর বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে থাকে। যেমন – গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়।
- মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রধানত গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে এবং শীতকাল শীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির হয়।
- মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয় তা সাধারনত শৈলোৎক্ষেপ শ্রেনীর হয়ে থাকে ।
- মৌসুমি বায়ু কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রবাহিত হয়, অন্য সময় এই বায়ুর স্থায়িত্ব থাকে না বলে, মৌসুমি বায়ুকে সাময়িক বায়ু বলা হয়।
- মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ অনেক গুলো কারনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় বলে মৌসুমি বায়ু প্রবাহের কোন সুনিশ্চয়তা নেই। তাই কোন কোন বছর মৌসুমি বায়ু সময়ের আগে আবার কোন কোন বছর সময়ের পরে প্রবাহিত হয়ে থাকে।
- মৌসুমি বায়ু গ্রীষ্মকালে স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে এবং শীতকালে জলভাগ থেকে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় বলে, মৌসুমি বায়ুকে স্থলবায়ু ও সমুদ্র বায়ুর বৃহৎ সংস্করন বলা হয়ে থাকে।
- যে অঞ্চল গুলিতে মৌসুমি বায়ু প্রবাহের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়, সেই অঞ্চল গুলিকে মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলা হয়ে থাকে। যেমন – ভারতে এই বায়ুর প্রভাব সর্বাধিক থাকায় ভারতবর্ষকে আদর্শ মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলা হয়ে থাকে।
ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব
ভারতের জলবায়ু মূলত মৌসুমি বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ভারতে শীত ও গ্রীষ্মকালে স্থলভাগ ও জলভাগের মধ্যে বায়ুচাপের তারতম্য জনিত কারণে যে ঋতু ভিত্তিক বায়ু প্রবাহ দেখা যায়, তাকে মৌসুমী বায়ু বলে। এই মৌসুমী বায়ুকে স্থল বায়ু ও সমুদ্র বায়ুর বৃহৎ সংস্করণ বলা হয়। ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো : –
1) ভারতের অধিকাংশ বৃষ্টিপাত মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হয়ে থাকে। ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮০ শতাংশ দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হয়ে থাকে।
2) জলীয় বাষ্প পূর্ণ দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবেই ভারতের গ্রীষ্মকাল উষ্ণ ও আর্দ্র এবং জলীয় বাষ্প হীন উত্তর পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে শীতকাল শীতল ও শুষ্ক হয়।
3) কোন কোন বছর মৌসুমী বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা ভারতের খরা সৃষ্টির অন্যতম কারণ এবং একটানা অতিরিক্ত মৌসুমি বৃষ্টিপাত ভারতে বন্যার প্রধান কারণ।
4) জুন-জুলাই মাসে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনের ফলে ভারতে গ্রীষ্মকালে উষ্ণতার তীব্রতা কিছুটা হ্রাস করে।
5) প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারতের করমন্ডল উপকূলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
6) দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আরব সাগরীয় শাখার প্রভাবে দক্ষিণ থেকে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে থাকে।
পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব
পশ্চিমবঙ্গের প্রায় মধ্যভাগ দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে কটক্রান্তিরেখা বিস্তৃত থাকায় এখানকার জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রকৃতির। পশ্চিমবঙ্গে প্রধানত দু প্রকার মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়—
- (ক) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও
- (খ) উত্তর-পূর্ণ মৌসুমি বায়ু।
এই দুই প্রকার বায়ুপ্রবাহজনিত কারণে এই রাজ্যের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর উপর মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের প্রভাব আলোচনা করা হল—
(১) সারা বছর মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ:
পশ্চিমবঙ্গে সারা বছরই মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। শীতকাল ও শরৎকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু এবং গ্রীষ্মকাল ও বসন্তকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু।
(২) শীতল ও শুষ্ক শীতকাল:
শীতকালে স্থলভাগ থেকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু আসে বলে এতে জলীয় বাষ্প থাকে না। ফলে শীতকাল শুষ্ক। এই বায়ু উত্তরের তুষারাবৃত পার্বত্য অঞ্চল থেকে আসে বলে এবং সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে থাকে বলে এই সময় সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে শীতল আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়।
(৩) উষ্ণ ও আর্দ্র বর্ষাকাল:
এই সময় উষ্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে আসে বলে স্থলভাগে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং সূর্যের অবস্থানজনিত কারণে বর্ষাকাল উম্ম প্রকৃতির।
(৪) শরৎকালের সূচনা:
সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তন শুরু হয় বলে শরৎকালে আকাশ নির্মল থাকে ও ভোরে শিশির পড়ে।
(৫) বৃষ্টিপাতের উপর প্রভাব:
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে বার্ষিক ১৭৫-২০০ সেমি বৃষ্টিপাত হয়। কোথাও কোথাও ৩০০ সেমি-র অধিক বৃষ্টিপাত হয়। উত্তরবঙ্গের বক্সাদুয়ার অঞ্চলে সবাধিক প্রায় ৪৫৫ সেমি বৃষ্টিপাত হয়।
(৬) মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের অনিশ্চয়তা:
পশ্চিমবঙ্গের মৌসুমি বায়ুর আগমন সব বছর সমান থাকে না। কোনো কোনো বছর আগে আবার কোনো কোনো বছর পরে ঘটে।
(৭) মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা:
পশ্চিমবঙ্গে মৌসুমি বায়ুর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সব বছর সমান নয়। কোনো কোনো বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা আবার কোনো কোনো বছর কম বৃষ্টিপাতের কারণে খরার সৃষ্টি হয়।
(৮) ঋতু পরিবর্তনে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের প্রভাব:
মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের উপর পশ্চিমবঙ্গের ঋতুবৈচিত্র্য নির্ভরশীল।
সুউচ্চ হিমালয় পর্বত কিভাবে ভারতের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে
উঃ-আমাদের দেশ ভারতবর্ষের সমগ্র উত্তরভাগ জুড়ে অবস্থান করছে পৃথিবীর উচ্চতম পর্বত হিমালয় পর্বত। এই সুউচ্চ হিমালয় পর্বত আমাদের দেশের জলবায়ুকে বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করে। যেমন-
- ১)বৃষ্টিপাত সংঘটন-জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয় বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। ভারতের উত্তর সীমানায় অবস্থিত হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ ঢালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাধাপ্রাপ্ত হয়ে উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
- ২)শীতের তীব্রতা হ্রাস-সুউচ্চ পর্বত প্রাচীরের মতো উষ্ণ ও শীতল বায়ু প্রবাহকে বাধা প্রদান করে। ভারতের উত্তর সীমানায় প্রাচীরের মতো অবস্থিত সুউচ্চ হিমালয় পর্বত শীতকালে মধ্য এশিয়া তথা সাইবেরিয়ার তীব্র শীতল বায়ুকে প্রবেশে বাধা দিয়ে এদেশে শীতের তীব্রতা হ্রাস করে।
ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব, ভারতের জলবায়ুর উপর মৌসুমী বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো, প্রধানত কোন বায়ু প্রবাহ ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে
ভারতের জলবায়ুর ওপর মৌসুমী বায়ুর প্রভাব সর্বাধিক। তাই ভারতকে মৌসুমী জলবায়ুর দেশ বলা হয়। ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব গুলি হল নিম্নরুপ:-
ঋতু পরিবর্তন
মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের ওপর নির্ভর করে ভারতের জলবায়ুতে ঋতু পরিবর্তন হয়ে থাকে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীত- পর্যায়ক্রমে এই চারটি ঋতু সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।
গ্রীষ্মকাল আর্দ্র ও শীতকাল শুষ্ক
জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র প্রকৃতির ও জলীয় বাষ্পহীন উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে শীতকাল শুষ্ক প্রকৃতির হয়।
প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারতের করমন্ডল উপকূলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
বৃষ্টিপাত
ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের অধিকাংশ (প্রায় 85% থেকে 90%) বৃষ্টিপাতই ঘটে থাকে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে। সমুদ্র থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতে প্রবেশ করে এবং সারা ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
ভারতের অধিকাংশ বৃষ্টিপাত মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হয়ে থাকে। ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮০ শতাংশ দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হয়ে থাকে।
বৃষ্টিপাতের অসম বন্টন
মৌসুমী বায়ুর প্রভাব ভারতের সর্বত্র সমানভাবে পড়ে না। তাই ভারতে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের বন্টনও সর্বত্র সমান নয়। ভারতের পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে।
কোন কোন বছর মৌসুমী বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা ভারতের খরা সৃষ্টির অন্যতম কারণ এবং একটানা অতিরিক্ত মৌসুমি বৃষ্টিপাত ভারতে বন্যার প্রধান কারণ।
দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আরব সাগরীয় শাখার প্রভাবে দক্ষিণ থেকে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে থাকে।
খরা ও বন্যার প্রাদুর্ভাব
মৌসুমী বায়ু খামখেয়ালী চরিত্রের হওয়ায় কোনো বছর অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা এবং কোনো বছর স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে খরার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
বায়ুপ্রবাহ
গ্রীষ্মকালে সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়।
জুন-জুলাই মাসে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনের ফলে ভারতে গ্রীষ্মকালে উষ্ণতার তীব্রতা কিছুটা হ্রাস করে।
ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি
প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে শরৎকালে বঙ্গোপসাগরে যে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে পূর্ব উপকূল বরাবর মাঝে মাঝে প্রবল ঝড় বৃষ্টি হয়।
বছরে দু’বার বৃষ্টি
তামিলনাড়ুর করমন্ডল উপকূলে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বছরে দুবার বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়, একবার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকালে ও আর একবার উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে শীতকালে।
প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারতের করমন্ডল উপকূলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য, ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রক গুলি কি কি
ভারতের সুবিশাল আয়তনের কারণে ভারতের জলবায়ু বৈচিত্র্যময়। ভারতের এই বৈচিত্র্যময় জলবায়ুর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো। ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য গুলি হল:-
- জলবায়ুর প্রকৃতি – ক্রান্তীয় অঞ্চলের অন্তর্গত ভারতের জলবায়ু মৌসুমী বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায়, ভারত কে ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ুর দেশ বলা হয়।
- ঋতু পরিবর্তন – বছরের বিভিন্ন সময় ঋতু পরিবর্তন হল ভারতের জলবায়ুর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। ভারতের প্রধান 4 টি ঋতুর চক্রাকার অবস্থান দেখা যায়, যথা – গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, শীতকাল ও বসন্তকাল।
- তাপমাত্রার বৈশিষ্ট্য – গ্রীষ্মকালীন ভারতের তাপমাত্রা 35 ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয় এবং শীতকালীন গড় তাপমাত্রা থাকে 10 থেকে 15 ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে। তবে উত্তর ভারতের জলবায়ু দক্ষিণ ভারতের তুলনায় অনেক বেশী চরমভাবাপন্ন। উত্তর ভারতে শীত ও গ্রীষ্ম দুটির খুব তীব্র। শীতকালে পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত হয়।
- বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্য – দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারতে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ভারতে সর্বাধিক পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়। আর উত্তর পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে শীতকাল প্রায় শুষ্ক থাকে। কেবলমাত্র তামিলনাড়ুর উত্তর পূর্ব দিকে শীতকালে সামান্য বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে। ভারতে মোট বৃষ্টিপাতের 84% বর্ষাকালে, 13% শরৎকালে এবং 3% শীতকালে সংঘটিত হয়।
- বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন – বৃহৎ দেশ ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের ব্যাপক তারতম্য দেখা যায়, যেমন – উত্তর পূর্ব ভারতের অসম, মিজোরাম, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও কেরালা উপকূলে ভারতের সর্বাধিক পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়, 250 সেমির বেশি। ভারতের মৌসিনরাম ভারত তথা বিশ্বের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চল। অন্য দিকে রাজস্থানের মরু অঞ্চল, লাদাখ অঞ্চলে বছরে 20 সেন্টিমিটার এর কম পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
- খরা ও বন্যার প্রাদুর্ভাব – ভারতের বেশির ভাগ বৃষ্টিপাত মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হয়ে থাকে কিন্তু এই মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত অনিশ্চিত। তাই যে বছর মৌসুমী বায়ুর আগমন নির্দিষ্ট সময়ের আগে এবং প্রত্যাবর্তন পরে ঘটে অর্থাৎ মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত বেশি সময় ধরে সম্পন্ন হয়, সে বছর গুলোতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আবার যে বছর গুলিতে আগমন বিলম্বিত হয় ও প্রত্যাবর্তন নির্দিষ্ট সময়ের আগে সম্পন্ন হয়, সেই বছর গুলিতে বৃষ্টিপাতের অভাবে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
- বায়ু প্রবাহ – সারা ভারতে একটি মাত্র বায়ু প্রবাহের প্রাধান্য দেখা যায়, তা হল মৌসুমী বায়ু। ঋতু ভেদে মৌসুমী বায়ুর দিক প্রবাহের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন – গ্রীষ্মকালে মৌসুমী বায়ুর দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে এবং শীত কালে উত্তর পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে থাকে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে স্থানীয় কিছু বায়ু প্রবাহ দেখা যায় , যেমন – কালবৈশাখী, লু, আঁধি প্রভৃতি।
- ঋতুকালীন বায়ুপ্রবাহ– গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে উত্তর পূর্ব দিকে এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়।
- স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ – গ্রীষ্মকালে উত্তর পূর্ব ভারতে কালবৈশাখী, উত্তর ও মধ্য ভারতে উষ্ণ বায়ু লু, রাজস্থানে আঁধি, অসমে বরদৈছিলা প্রভৃতি স্থানীয় বায়ুর আবির্ভাব ঘটে।
- ঘূর্ণিঝড় – গ্রীষ্মকাল ও শরৎকালে উপকূলীয় অঞ্চলে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের আগমন ঘটে এবং শীতকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়।
উপযুক্ত উদাহরণের সাহায্যে ভারতের জলবায়ু পরিস্থিতির আঞ্চলিক পরিবর্তনগুলি বর্ণনা করুন
উত্তর: উত্তর ভারতে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শীতল আবহাওয়া শুরু হয় এবং ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকে। ভারতের উত্তরাঞ্চলে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি সবচেয়ে ঠান্ডা মাস। দক্ষিণ থেকে উত্তরে তাপমাত্রা কমছে।
পূর্ব উপকূলে চেন্নাইয়ের গড় তাপমাত্রা 24° – 25° সেলসিয়াসের মধ্যে, যখন উত্তরের সমভূমিতে এটি 10°C থেকে 15° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। দিনগুলি উষ্ণ, এবং রাতগুলি ঠান্ডা। উত্তরে তুষারপাত সাধারণ, এবং হিমালয়ের উচ্চ ঢালে তুষারপাত হয়
মার্চ মাসে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় 38° সেলসিয়াস, যা ডেকান মালভূমিতে রেকর্ড করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে, গুজরাট এবং মধ্যপ্রদেশে তাপমাত্রা প্রায় 42 ডিগ্রি সেলসিয়াস। মে মাসে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে 45° সেলসিয়াস তাপমাত্রা সাধারণ। উপদ্বীপীয় ভারতে, মহাসাগরের মধ্যপন্থী প্রভাবের কারণে তাপমাত্রা কম থাকে।
বর্ষার প্রক্রিয়া আলোচনা কর।
উত্তর:
(ক) ভূমি ও জলের পার্থক্যগত উত্তাপ এবং শীতলকরণ ভারতের স্থলভাগে নিম্নচাপ সৃষ্টি করে যখন চারপাশের সমুদ্র তুলনামূলকভাবে উচ্চ চাপ অনুভব করে।
(b) গ্রীষ্মকালে আন্তঃ ক্রান্তীয় অভিসারী অঞ্চল (ITCZ) এর অবস্থানের স্থানান্তর, গঙ্গা সমভূমির উপর (এটি নিরক্ষীয় ট্রফ সাধারণত বিষুব রেখার প্রায় 5°N অবস্থানে থাকে। এটি বর্ষাকাল-ট্রফ হিসাবেও পরিচিত। বর্ষাকাল).
(c) মাদাগাস্কারের পূর্বে, ভারত মহাসাগরের উপর প্রায় 20° সে-এ উচ্চ-চাপ অঞ্চলের উপস্থিতি। এই উচ্চ-চাপ এলাকার তীব্রতা এবং অবস্থান ভারতীয় বর্ষাকে প্রভাবিত করে।
(d) তিব্বত মালভূমি গ্রীষ্মকালে তীব্রভাবে উত্তপ্ত হয়, যার ফলে শক্তিশালী উল্লম্ব বায়ু প্রবাহ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 9 কিলোমিটার উপরে মালভূমিতে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
(ঙ) হিমালয়ের উত্তরে পশ্চিমী জেট স্রোতের গতিবিধি এবং গ্রীষ্মকালে ভারতীয় উপদ্বীপের উপর গ্রীষ্মমন্ডলীয় ইস্টারলি জেট স্রোতের উপস্থিতি।
আবহাওয়ার অবস্থা এবং ঠান্ডা ঋতুর বৈশিষ্ট্যগুলির একটি বিবরণ দিন।
উত্তর: উত্তর ভারতে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শীতল আবহাওয়া শুরু হয় এবং ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকে। ভারতের উত্তরাঞ্চলে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি সবচেয়ে ঠান্ডা মাস। দক্ষিণ থেকে উত্তরে গেলে তাপমাত্রা কমে যায়। পূর্ব উপকূলে চেন্নাইতে গড় তাপমাত্রা 24° – 25° সেলসিয়াসের মধ্যে। যেখানে উত্তরের সমভূমিতে, এটি 10°C থেকে 15° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।
এখানে, দিনগুলি উষ্ণ, এবং রাতগুলি ঠান্ডা। উত্তরে তুষারপাত সাধারণ, এবং হিমালয়ের উচ্চ ঢালে তুষারপাত হয়। এই মৌসুমে দেশের ওপর উত্তর-পূর্ব বাণিজ্য বায়ু প্রবাহিত হয়। তারা স্থল থেকে সমুদ্রে প্রবাহিত হয়, এবং তাই, দেশের বেশিরভাগ অংশে এটি একটি শুষ্ক মৌসুম। এই বায়ু থেকে তামিলনাড়ু উপকূলে কিছু পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় কারণ এখানে সমুদ্র থেকে স্থলভাগে প্রবাহিত হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলে, একটি দুর্বল উচ্চ-চাপ অঞ্চল গড়ে উঠেছে, এই এলাকা থেকে হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে।
ত্রাণ দ্বারা প্রভাবিত, এই বায়ু পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে গঙ্গা উপত্যকা দিয়ে প্রবাহিত হয়। আবহাওয়া সাধারণত পরিষ্কার আকাশ, নিম্ন তাপমাত্রা এবং কম আর্দ্রতা এবং দুর্বল, পরিবর্তনশীল বাতাস দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। উত্তর সমভূমিতে শীতল আবহাওয়ার একটি বৈশিষ্ট্য হল পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি।
এই নিম্নচাপ ব্যবস্থাগুলি ভূমধ্যসাগর এবং পশ্চিম এশিয়ার উপর দিয়ে উৎপন্ন হয় এবং পশ্চিমী প্রবাহের সাথে ভারতে চলে যায়। তারা সমতল ভূমিতে শীতকালীন বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ে তুষারপাত ঘটায়। যদিও শীতকালীন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ (স্থানীয়ভাবে ‘মহাওয়াত’ নামে পরিচিত) কম, তবুও ‘রবি’ ফসল চাষের জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম। উপদ্বীপীয় অঞ্চলে একটি সুসংজ্ঞায়িত ঠান্ডা ঋতু নেই।
সমুদ্রের মাঝারি প্রভাবের কারণে শীতকালে তাপমাত্রার প্যাটার্নে খুব কমই লক্ষণীয় ঋতু পরিবর্তন হয়।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পশ্চিমবঙ্গ এসএসসি শিক্ষাবিদ্যা স্ক্যানার
FAQ | মৌসুমি বায়ু
Q1. মৌসুমি বায়ু কী
Ans – ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে যে বায়ুর দিক পরিবর্তন হয় তাকে মৌসুমী বলে।
Q2. মৌসুমি বায়ুর ওপর জেট বায়ুর প্রভাব
Ans – ভারতের মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের উপর দুই ধরনের জেট বায়ুপ্রবাহ প্রভাব বিস্তার করে। যথা-
1.উপক্রান্তীয় জেট বায়ুপ্রবাহ।
2.ক্রান্তীয় জেট বায়ুপ্রবাহ।
তবে, ক্রান্তীয় জেট বায়ুপ্রবাহ অপেক্ষা উপক্রান্তীয় জেট বায়ুপ্রবাহ বিস্তরতর অঞ্চল অধিকার করে থাকে।
1.উপক্রান্তীয় জেট বায়ুপ্রবাহ:- (a)ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রবাহকালে উপক্রান্তীয় জেট বায়ুপ্রবাহের উপস্থিতি ধরা না গেলেও শীতকালে এটি ভারতের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে ।
(b) উপক্রান্তিয় জেট বায়ুপ্রবাহ যখন বিশাল হিমালয় পর্বতের সুউচ্চ শিখর শ্রেণীর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন এটি কখনো কখনো দুটি শাখায় বিভক্ত হয় । একটি শাখা হিমালয় পর্বতের উত্তরে এবং অন্যটি দক্ষিণ আংশ দিয়ে প্রবাহিত হয় । হিমালয় পর্বত অতিক্রম করে দুটি জেট বায়ুপ্রবাহ কখনো কখনো চীনের উপরে গিয়ে একত্রিত হয় । মিলিত জেট বায়ুপ্রবাহের গতি বিভক্ত জেট বায়ুপ্রবাহ আপেক্ষা অধিক হয় ।
(c) উপক্রান্তিয় জেট বায়ুস্রোত ভারতীয় উপমহাদেশে অক্টোবর মাসে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রত্যাবর্তনের পর আবির্ভূত হয় এবং দক্ষিণ দিকে শীতের আগমনে ক্রমশঃ স্থানান্তরিত হয়। ফেব্রুয়ারি মার্চে এই জেট বায়ুস্রোত এর দক্ষিণতম অবস্থানে আসে। এর পর এটি উত্তর দিকে পুনরায় ফিরে যায়। মে মাসের শেষাশেষি এই বায়ুস্রোত ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে অপসৃত হয়।
(d) ভারতে উপক্রান্তীয় জেট বায়ুপ্রবাহ অদৃশ্য হবার ঘটনাটি দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আগমণের সঙ্গে অংশত মিলে যায়।
2. ক্রান্তীয় জেট বায়ুপ্রবাহ:-
(a) ক্রান্তীয় জেট বায়ুপ্রবাহ ভারতীয় উপদ্বীপের ওপর জুন মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত অবস্থান করে।জুলাই আগস্টে এটি 12°-15° উত্তরে অবস্থান করে। সেপ্টেম্বর মাসে এটি ভারত থেকে অপসৃত হয়।
(b)ক্রান্তীয় জেট বায়ুপ্রবাহ দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর উপরে দেখা যায় এবং উপক্রান্তীয় উচ্চচাপের শীর্ষদেশ থেকে দক্ষিণে অবস্থান করে। চীনের দক্ষিন উপকূল থেকে আরম্ভ করে এই পূর্বালি বায়ুস্রোত 15° উত্তর অক্ষাংশ বরাবর থাইল্যান্ড, দক্ষিণে অবস্থিত ভারত উপদ্বীপ অতিক্রম করে অবশেষে সুদান ও সাহারায় গিয়ে ক্ষিয়মান হয়। ক্রান্তীয় পূর্বালি জেট বায়ুপ্রবাহ মালয়েশিয়া থেকে ভারতীয় উপদ্বীপ পর্যন্ত তীব্রতর হয় (সর্বাধিক গতি ঘণ্টায় 100-200km ) এবং পরে পশ্চমদিকে তীব্রতা ক্রমশঃ কমে আসে ।
(c) ক্রান্তীয় জেট বায়ুপ্রবাহের ক্ষেত্রে মৌসুমী বায়ুর ছেদ অনেক ক্ষেত্রেই এই জেট বায়ুপ্রবাহের স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি উত্তরে অবস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত দেখা যায়।
(d) ক্রান্তীয় জেট বায়ুপ্রবাহ টি সাধারণত মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের ওপরে অবস্থান করার ফলে উপক্রান্তীয় জেট বায়ুর থেকে ক্রান্তীয় জেট বায়ু মৌসুমী বায়ুকে বেশি মাত্রায় প্রভাবিত করে।
Q3. মৌসুমি বায়ু কি ধরনের বায়ু
Ans – মৌসুমি বায়ু দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ুতে সর্বাপেক্ষা প্রভাব বিস্তারকারী বায়ুপ্রবাহ। গ্রীষ্ম ও শীত মৌসুমে সমুদ্র ও ভূ-পৃষ্ঠের উত্তাপ এবং শীতলতার তারতম্যের ফলে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের দিকও পরিবর্তিত হয়। শীত মৌসুমে শুষ্প মৌসুমি বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক (ভূভাগ) থেকে সমুদ্র অভিমুখে প্রবাহিত হয় এবং গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম (সমুদ্রভাগ) থেকে ভূমি অভিমুখে প্রবাহিত হয়। মৌসুমি বায়ুর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘মনসুন’ (Monsoon) মূলত আরবি শব্দ ‘মাওসিম’ (mawsim) থেকে এসেছে। আরবিতে ‘মাওসিম’ শব্দের অর্থ কাল বা ঋতু। ধারণা করা হয়, এই মৌসুমি বায়ুচক্রটির সূত্রপাত ঘটে ১ কোটি ২০ লক্ষ বৎসর পূর্বে (মধ্য মায়োসিন) হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টির সময় থেকে।
গ্রীষ্মকালে ভারতের পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ভূখণ্ডে প্রচণ্ড তাপের কারণে নিম্নচাপ কেন্দ্রের উৎপত্তি হয়, কিন্তু একই সময়ে তুলনামূলকভাবে শীতলতর ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হয় উচ্চচাপ কেন্দ্রের। বায়ুচাপের প্রকৃতিগত ভিন্নতাই উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ুকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত করে এবং মৌসুমি বায়ু সমুদ্র থেকে ভূমির দিকে প্রবাহিত হয়। বায়ুপ্রবাহের এই ধরনটি গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু হিসেবে পরিচিত। ভারতীয় উপমহাদেশে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাস্প বহন করে আনে। তাই এ অঞ্চলে সে সময় ভারি বৃষ্টিপাত হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিবেশী দেশসমূহে এই বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে।
ভারত মহাসাগর অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু দুটি শাখায় বিভক্ত: আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর প্রবাহ। আরব সাগরের বায়ুপ্রবাহটি ভারতের কেন্দ্রভূমি এবং ভারতীয় উপদ্বীপের আবহাওয়ার প্রকৃতির ওপর অধিক প্রভাব বিস্তার করে। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ুপ্রবাহটি মূলত বাংলাদেশ, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল এবং হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণাংশের পাহাড়ি ঢাল ও পাদদেশীয় অঞ্চলের আবহাওয়ার প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। জুন মাসের প্রথম দিকে এই বায়ুপ্রবাহ বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করে এবং ভারতের কেন্দ্র-অঞ্চল জুড়ে অবস্থানরত নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে।
শীত মৌসুমে ভারত মহাসাগরের পানির তুলনায় এর সংলগ্ন ভারতীয় ভূখণ্ড দ্রুত শীতল হয়ে আসে। পরিণতিতে ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশ জুড়ে একটি উচ্চচাপ কেন্দ্র গড়ে ওঠে এবং অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত উষ্ণতর ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এই চাপ বিভাজনের ফলে ভারতের অভ্যন্তর ভাগ থেকে বায়ুপ্রবাহ ভারত মহাসাগর অভিমুখে প্রবাহিত হয়, যা শীতকালীন মৌসুমি বায়ু নামে পরিচিত। এই বায়ুপ্রবাহের একটি ধারা মোটামুটি গঙ্গার প্রবাহপথ ধরে গাঙ্গেয় সমভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় বাংলাদেশ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগর অভিমুখে ধাবিত হয়। এই মৌসুমে বায়ুপ্রবাহের বৈশিষ্ট্য হলো ভূমি থেকে সমুদ্র অভিমুখী, স্বভাবতই পুরো মৌসুম জুড়ে শুষ্প আবহাওয়া বিরাজ করে। এ সময় বৃষ্টিপাতের ঘটনা খুব কম।