Site icon prosnouttor

অর্থনৈতিক উন্নয়ন কি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কি

অর্থনৈতিক উন্নয়ন কি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কি

অর্থনৈতিক উন্নয়ন কি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কি

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

অর্থনৈতিক উন্নয়ন কি

কোনো দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতের একযোগে উন্নতির অগ্রগতিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলে। 

বলা যায় যে, একটি দেশের আর্থসামাজিক অবকাঠামো, জাতীয় আয়, মাথাপিছু আয়, উৎপাদন ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার মানেরক্রমোন্নতির এক দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া হলো উন্নয়ন। অর্থাৎ উন্নয়ন হলো একটি দীর্ঘকালীন চলমান প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একটি দেশের আর্থসামাজিক অবকাঠামোগত অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকে। তবে অর্থনীতিতে উন্নয়ন বলতে অর্থনৈতিক উন্নয়নকেই বুঝায়।

তাই বলা যায়, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি ও শিল্পপণ্য, খনিজ দ্রব্য, সাংস্কৃতিক অবস্থা, কুসংস্কারমুক্ত সামাজিক অবস্থা প্রভৃতি ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটলে তাকে উন্নয়ন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলে।

তাই বলা যায়, কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়নই হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন। উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেবল একটি দেশের দেশজ আয় বা জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় না, বরং এর সাথে দেশের আর্থসামাজিক অবকাঠামোরও মৌলিক পরিবর্তন সাধিত হয়। এর ফলে মানব উন্নয়ন ঘটে এবং শ্রমিকের কর্মক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় ।

বর্তমানে ‘উন্নয়ন’ ও ‘প্রবৃদ্ধি’ শব্দ দুটিকে প্রায় একই অর্থে ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। একটি দেশের অধিক উৎপাদন এবং একই সাথে কারিগরি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে উৎপাদন ও বণ্টনের পরিবর্তনকে উন্নয়ন হিসেবে অভিহিত করা যায়। তবে প্রবৃদ্ধি বলতে অধিক উৎপাদনকে বা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিকে নির্দেশ করা হয় । তাই কোনো দেশের উন্নয়ন হচ্ছে কি না তা বুঝাতে হলে নিম্নোক্ত শর্তসমূহ মনে রাখা দরকার,

তাই উন্নয়ন বলতে শুধুমাত্র প্রবৃদ্ধিকে বুঝায় না। কেননা উন্নয়নের একটি অংশ হিসেবে অর্থনীতি বা কোনো খাতের সম্প্রসারণের ফলে প্রবৃদ্ধির সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু এ সম্প্রসারণ অন্যান্য খাতে প্রভাব সৃষ্টি করতে না পারলে অথবা এর সুফল জনগণের কাছে না পৌঁছলে প্রবৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও উন্নয়ন হবে না। অর্থাৎ উন্নয়ন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত করে । কিন্তু প্রবৃদ্ধি আবশ্যিকভাবে উন্নয়ন নির্দেশ করে না। অর্থাৎ কোনো দেশে উন্নয়ন সংঘটিত হলে প্রবৃদ্ধি হতে পারে, আবার উন্নয়ন না হলেও সেদেশে প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

পরিশেষে বলা যায় যে, উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। কোনো দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি, বেকার সমস্যার সমাধান, আর্থসামাজিক অবকাঠামোর উন্নতি, জ্ঞানবিজ্ঞানের বিকাশ, সম্পদের সুসম বণ্টন, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারকে উন্নয়ন বুঝায়। অর্থাৎ উন্নয়ন দ্বারা একটি দেশের পরিপূর্ণ চিত্র প্রদান করা হয়।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন কাকে বলে

অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যার মাধ্যমে দীর্ঘকালব্যাপী কোন দেশের প্রকৃত জাতীয় আয় অব্যহতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে৷

উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা দ্বারা একটি দেশের আর্থসামাজিক উপাদান যেমন- অবকাঠামো, জাতীয় আয়, মাথাপিছু আয়, উৎপাদন ক্ষমতা, জীবনযাত্রার মান ইত্যাদির সম্মিলিত অবস্থার ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে। কোনো দেশ বা জাতির উন্নয়ন সেদেশের সামাজিক মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনযাত্রার মান ইত্যাদির ইতিবাচক পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। একটি দেশের সামগ্রিক চিত্র ঐদেশের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমেই ফুটে ওঠে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদাহরণ

অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে সমাজ বা দেশের জনসাধারণের আর্থিক দিক , যেমন — খাদ্য , কাপড় , বাসস্থান, যাতায়াত পরিবহণ , শিক্ষা , স্বাস্থ্য ইত্যাদি দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনসমূহ আগের থেকে অধিক পরিমাণে এবং গুণগতভাবে অধিক উন্নত হওয়াকে বুঝায় ।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান সূচক কি

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সর্বোত্তম সূচক হল মাথাপিছু আয়।

মাথাপিছু আয় বলতে কোন দেশের মোট আয়কে জনপ্রতি ভাগ করে দিলে যা হয়, তাকে বোঝায়| জনগনের সর্বমোট ব্যক্তিগত আয়কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়| সাধারণতঃ মাথাপিছু আয়কে টাকা প্রতিবছর এককে প্রকাশ করা হয়।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তগুলো কি কি

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সেদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রভৃতি অবস্থার দ্বারা প্রভাবিত হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত যেদেশে অধিক পরিমাণে বিদ্যমান থাকে সেদেশের উন্নয়ন দ্রুত হয়। কারণ বিভিন্ন শর্ত একে অপরের ওপর নির্ভরশীল হয়। যেমন লাগসই শিক্ষাব্যবস্থা না থাকলে কারিগরি উন্নতি কম হবে, যা আবার কম বিনিয়োগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

নিম্নে একটি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্তগুলো বর্ণনা করা হলো।

১. সহজলভ্য প্রাকৃতিক সম্পদ

অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সহজলভ্য প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক সম্পদ না থাকলে উৎপাদন বাড়ে না, উন্নয়নও হয় না (যেমন- উত্তর মেরু বা দক্ষিণ মেরু, সাহারা বা গোবি অঞ্চল)। প্রাকৃতিক সম্পদই মূল উপকরণ। এরাই উৎপাদনের ভিত্তি। প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি থাকলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়া কেউ এত বেশি উন্নত হতে পারত না।

২. মূলধন সংগ্রহ

উন্নয়নের মূল কথা মূলধন সংগ্রহ। উপকরণকে সঠিকভাবে পরিবর্তিত করে শ্রম। কিন্তু শুধু হাতে সে কাজ করে না। অনেক নিপুণ যন্ত্রপাতির সাহায্য দরকার হয়। এ ধরনের মূলধন না থাকলে উৎপাদন কম হয়।

৩. দক্ষ জনশক্তি

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কেবল প্রাকৃতিক সম্পদই যথেষ্ট নয়; সব প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগানোর জন্য দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। দেশের জনশক্তি দক্ষ হলে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভবপর হবে।

৪. প্রযুক্তিগত উন্নতি

উৎপাদন ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও কলাকৌশল ব্যবহারের ফলে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায় এবং উৎপাদনের পরিমাণগত ও গুণগতমান বৃদ্ধি পায়। সুতরাং সমাজে বিদ্যমান প্রযুক্তিগত স্তরের ওপর উন্নয়নের হার নির্ভরশীল।

৫. দক্ষ উদ্যোক্তা শ্রেণি

অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে দক্ষ উদ্যোক্সা শ্রেণি উৎপাদনশীল ও সৃজনশীল ভূমিকা পালন করে। অর্থনীতিবিদ সুম্পিটারের মতে, আধুনিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় উদ্যোক্তা শ্রেণির ভূমিকা সর্বাধিক।

৬. অবকাঠামোগত অবস্থা

কোনো দেশের উন্নয়নের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রারম্ভেই প্রয়োজন। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে সহজেই শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়ন হবে এবং ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমেই উন্নয়ন সম্ভব। তাই উন্নত অবকাঠামোই পারে উন্নত অর্থনীতির ভিত্তির সূচনা করতে।

৭. জনসংখ্যার প্রভাব

অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেশে জনাধিক্য থাকবে না। জনসংখ্যা কাম্য স্তরে থাকা উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত । যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে অর্থনৈতিক হার বেশি হয় তবে উন্নয়ন অর্জন সম্ভব।

৮. আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি

দেশের উন্নয়নে বলিষ্ঠ কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের যথোপযুক্ত উপস্থিতি থাকা বাঞ্ছনীয়। এরূপ আর্থিক প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত মূলধন সরবরাহ করতে পারে। এছাড়া ব্যবসা বাণিজ্য সহজসাধ্য করতে এরূপ প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই উন্নয়নের প্রয়োজনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের উপস্থিতি একান্তভাবে প্রয়োজন।

৯. শিক্ষাবিস্তার

শিক্ষা অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। উন্নয়নশীল দেশের অধিকাংশ জনসাধারণ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের সক্রিয় সহযোগিতা পাওয়া যায় না। সুতরাং অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে হলে জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার একান্ত প্রয়োজন। এর ফলে জনগণের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে এবং এদেশের উন্নয়নে নিজস্ব ভূমিকা সম্বন্ধে তারা সচেতন হয়ে ওঠে।

১০. প্রতিযোগিতামূলক বাজার

প্রতিযোগিতামূলক বাজারের অস্তিত্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য থাকলে উৎপাদন হ্রাস করে বেশি দামে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে একচেটিয়া প্রতিষ্ঠান পূর্ণ দক্ষতায় কাজ করে না। বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং সম্পদের পূর্ণ নিয়োগ লাভের পথ সুগম হয়। এতে দেশের কর্মনিয়োগ স্তর ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়।

১১. বৈদেশিক মুদ্রার প্রভাব

দেশে প্রয়োজনীয় শিল্প স্থাপনের জন্য বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি এবং কলাকৌশল আমদানি করতে হয়। কিন্তু রপ্তানি বাণিজ্য শক্তিশালী না হওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার অভাব রয়েছে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

১২. বিশেষায়ন

শ্রমবিভাগের মাধ্যমে বিশেষায়ন সম্ভবপর হয় এবং এর ফলে শ্রমের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। বৃহদায়তন উৎপাদনে শ্রম বিভাজন সম্ভবপর হয়। বিশেষায়ন ও বৃহদায়তন উৎপাদনে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক।

১৩. জনগণের আগ্রহ

অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের জন্য জনগণের চেষ্টা ও আগ্রহের একান্ত প্রয়োজন। উন্নয়নের ভার নিয়তির ওপর ছেড়ে দিলে সমাজে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে না।

১৪. প্রশাসনিক দক্ষতা

সম্পদ বা মূলধন থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে এমন কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। কারণ মূলধন অথবা সম্পদের বণ্টন হতে হবে। দক্ষ বণ্টন ব্যবস্থা থাকলে নিয়োগ, জাতীয় আয় ইত্যাদি দ্রুত বাড়বে। এর জন্য দরকার দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা। দক্ষ প্রশাসন আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে। ফলে দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুত হতে পারে।

১৫. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একান্ত আবশ্যক। গণতান্ত্রিক সরকার অথবা জনগণের সমর্থনে যেকোনো সরকার রাষ্ট্রপরিচালনায় নিয়োজিত থাকলে রাজনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা বিদ্যমান থাকে। এ অবস্থায় শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যে দ্রুত উন্নতি সাধন সম্ভবপর হয়ে ওঠে। বিদেশি অশুভ চক্র কোনোরূপ ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। সামগ্রিক অর্থে অর্থনীতি উন্নয়নের পথ ধরে এগোতে পারে।

১৬. জাতীয় নেতৃবৃন্দের ভূমিকা

কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জাতীয় নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা নিতান্ত অপরিহার্য। জাতীয় নেতৃবৃন্দ যেমনঃ সমাজের রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, ডাক্তার, প্রকৌশলী যদি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে অর্থনীতিতে উন্নয়নের পথ অনেকটা প্রশস্ত হবে।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এমন একটি জটিল ও ব্যাপক প্রক্রিয়া যা অর্থনৈতিক উপাদান ছাড়াও বহুমুখী সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়। ওপরে বর্ণিত কোনো শর্ত এককভাবে দ্রুত উন্নয়নের নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে না। কারণ বিভিন্ন শর্ত একে অপরের ওপর নির্ভরশীল হয়।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কি

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কোনো দেশের উন্নয়নকে বেগবান বা ত্বরান্বিত করে। সাধারণত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলতে একটি দেশের দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনের ক্ষমতার ক্রমপ্রসারতাকে বুঝায়। যদিও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রকৃতপক্ষে পরিমাণগত ধারণা প্রকাশ করে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলতে ঐ প্রক্রিয়াকে বুঝায়, যা দ্বারা দেশের জাতীয় আয় ও মাথাপিছু প্রকৃত আয়ের অপরিবর্তনীয় বাৎসরিক বৃদ্ধি হয়। প্রকৃতপক্ষে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি অর্থনীতিতে উৎপাদিত মোট দ্রব্য ও সেবা বৃদ্ধির হারকে বুঝায়। 

প্রবৃদ্ধি বলতে পরিবর্তনের হারকে বুঝায়। প্রবৃদ্ধি তিন ধরনের হতে পারে। যথা :

মোট দেশজ উৎপাদন(জিডিপি) আগের বছরের তুলনায় শতকরা যে হারে বাড়ে, তাই প্রবৃদ্ধি।

অনুন্নত দেশের প্রবৃদ্ধি হার অনেক কম হয়, উন্নয়নশীল দেশের প্রবৃদ্ধি হার সবচেয়ে বেশি হয়, আর উন্নত দেশের প্রবৃদ্ধির হার সাধারণত স্থির হয়, কারণ উন্নত দেশের অর্থনীতি সেক্ষেত্রে বড় বা কাঙ্খিত আকারে পৌছানোর পর প্রবৃদ্ধি খুব কমহারে বাড়ে এমনকি প্রবৃদ্ধি হার তখন শূন্যে বা ঋণাত্মকেও পৌঁছাতে পারে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কাকে বলে

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোন দেশের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন না ঘটিয়েই জাতীয় আয় বা উৎপাদন ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করা যায় তাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলে । অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিই হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি । অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য জাতীয় আয় বা উৎপাদন বৃদ্ধি করাই যথেষ্ট, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর কোনরূপ পরিবর্তন সাধনের প্রয়োজন পড়ে না। অতএব অর্থনৈতিক বিভিন্ন শক্তিগুলোর ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে মোট জাতীয় আয় বা উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে তাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলে। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কাকে বলে

যে সমস্ত সামাজিক ও আইনগত কাঠামোর মধ্য থেকে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলী পরিচালিত হয় তাকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে ।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসমূহকে চার ভাগে ভাগ করা যায় । যথা :

আরো পড়ুন: লর্ড মাউন্টব্যাটেন কে ছিলেন, মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কি, মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব কি

অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে কি বুঝ

দেশের প্রাপ্ত সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা বন্টন অর্থাৎ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যাবলীর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে। 

যখন কোন সমাজ বা দেশ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সামাজিক ও আইনগত রীতিনীতি গড়ে তোলে, তখন তাকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে। 

নাগরিকের সম্পত্তি অর্জনের অধিকার, উৎপাদন পদ্ধতি, বিনিময় মাধ্যম, বন্টন পদ্ধতি, ভোগ, শ্রম নিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রকৃতি ইত্যাদি কার্যাবলীর প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত কাঠামোকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে।

মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিতসা, কর্মসংস্থান ইত্যাদি সকল দেশের জন্য একই, কিন্তু এগুলো পূরণ করতে বিভিন্ন দেশ তার প্রাপ্ত সম্পদের সাপেক্ষে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। এরুপ অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীতে বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে নিম্মে আলোচনা করা হল।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রকার

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানারকম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কিছু বিখ্যাত ও প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিম্মে আলোচনা করা হল। 

1. ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি ব্যবস্থা

2. কমান্ড বা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ব্যবস্থা

3. মিশ্র অর্থনীতি ব্যবস্থা

4. অন্যান্য

১. ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি

যে অর্থনীতি ব্যবস্থায় উৎপাদন উপকরণগুলো ব্যক্তি মালিকায় থাকে, এবং সরকারি হস্তক্ষেপ বিহীন অবাধ দাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাজার পরিচালিত হয়, তাকে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি বা পুঁজিবাদী অর্থনীতি বলে। 

পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হল যেখানে উৎপাদনের উপকরণগুলো সরকারের পরিবর্তে ব্যক্তিগত উদ্যোগের মালিকানাধীন এবং নিয়ন্ত্রিত হয়। 

ভি আই লেনিন ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি সম্পর্কে বলেন, ‘‘ধনতন্ত্র বলতে উৎপাদনের ঐ উন্নত স্তরকে নির্দেশ করে যেখানে মনুষ্য শ্রমের উৎপাদন নয়, মনুষ্য শ্রমশক্তি নিজেই পণ্যে পরিণত হয়।’’

সর্বপ্রথম ইউরোপে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি ব্যবস্থার সূত্রপাত হয়। মূলত ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ইউরোপ অঞ্চলে এই ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা পায়। এই অর্থনীতি ব্যবস্থাকে বলা হয় স্বাধীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, কারণ প্রত্যেক ব্যক্তি উৎপাদন, বন্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। অর্থাৎ এতে কোনরুপ সরকারের হস্তক্ষেপ থাকে না। 

ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য

পুঁজিবাদ বা ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল মুক্তবাজার বা লাইসেজ-ফায়ার অর্থনীতি। এখানে ব্যক্তিরা থাকে অবাধ। তারা নির্ধারণ করতে পারে কোথায় বিনিয়োগ করতে হবে, কি উৎপাদন বা বিক্রি করতে হবে এবং কোন মূল্যে পণ্য ও সেবা বিনিময় করতে হবে। laissez-faire বাজারে কোনরুপ চেক বা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কাজ করে। এছাড়াও এই অর্থনীতির অন্যন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন,

২. সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি

কমান্ড অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা নামেও পরিচিত। এই অর্থনৈতিক কাঠামোর অধীনে উৎপাদন যাবতীয় উপকরণের  ক্ষমতা সরকার বা একমাত্র শাসকের কাছে কেন্দ্রীভূত থাকে।

বিভিন্ন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত যেমন কোন পণ্য উৎপাদন করতে হবে, কতটা উৎপাদন করতে হবে এবং এর দাম কি হবে, সব কেন্দ্রীয় ক্ষমতা দ্বারা নির্ধারিত হয়। 

অর্থনীতিবিদ র‌্যাগান এর মতে, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হলো এমন একটি অর্খব্যবস্থা যেখানে সম্পত্তির রাষ্ট্রীয় বা কেন্দ্রীয় মালিকানায় বিদ্যামান থাকে এবং কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

চীন, রাশিয়া, কিউবা, ভেনিজুয়েলা এবং পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে।

সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য

৩. মিশ্র অর্থনীতি

যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুঁজিবাদী ও সমাজতন্ত্রের দুর্বলতাগুলো পরিত্যাগ করে এবং এর গুণগুলো গ্রহণ করে গড়ে ওঠে, তাকে মিশ্র অর্থনীতি বলে।

অর্থনীতিবিদ র‌্যাগান এর মতে, ‘‘মিশ্র অর্থনীতি হল এমন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে বিশুদ্ধ ধনতন্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির সংমিশ্রণ ঘটে। কিছু সম্পদ ব্যক্তি মালিকানায় এবং কিছু সম্পদ রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকে। এছাড়া অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত বাজার ব্যবস্থা ও কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে।’’

মিশ্র অর্থনীতি বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সবচেয়ে সাধারণ রূপগুলোর মধ্যে একটি। অনেক উন্নত দেশ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, বাংলাদেশ, ভারত এবং বেশিরভাগ ইউরোপে এই অর্থনীতি ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। এটি পুঁজিবাদী ও কমান্ড অর্থনীতির সংমিশ্রণ ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে।

মিশ্র অর্থনীতি ব্যবস্থায় প্রায়শই উৎপাদনের উপকরণগুলো কিছু ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্র্রীয় মালিকানায় থাকে। যাইহোক, মিশ্র অর্থনীতিতে কিছু শিল্প কলকারখানা সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, অন্যগুলো ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্যসেবা ও বিবিসির সম্প্রচার সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। 

মিশ্র অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য

অর্থনৈতিক কূটনীতি কি

অর্থনৈতিক কূটনীতি বলতে আমরা বুঝি অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে প্রচলিত বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক পরিচালিত কলাকৌশল।

অর্থনৈতিক কূটনীতি বৈদেশিক নীতির সেই অংশ, যেখানে প্রত্যেক দেশ নিজ দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করে। অর্থনৈতিক কূটনীতিতে বাণিজ্যিক দূতগণই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক কূটনীতির প্রকাশ ঘটে।

অর্থনৈতিক কূটনীতিকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে ড. রবিউল ইসলাম ও আব্দুল মালেক বলেন, “যে কূটনীতি দেশের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণোত্তর উদ্বৃত্ত অর্থনৈতিক সম্পদকে অর্থনৈতিক মুনাফা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখে তাকে অর্থনৈতিক কূটনীতি বলে।”

ড. এম. এ মান্নানের মতে, “অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত যে কূটনৈতিক ব্যবস্থা সেটাকে আমরা অর্থনৈতিক কূটনীতি বলে আখ্যায়িত করতে পার।”

ভারনন ভ্যান ডাইক এর মতে, “বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির বিকাশের যুগে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা প্রাপ্ত হলো অর্থনৈতিক কূটনীতি।”

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, অর্থনৈতিক কূটনীতি বলতে আমরা বুঝি কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জন।

মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা কি, অর্থনৈতিক সমস্যা কি

অর্থনৈতিক সমস্যা, কখনও কখনও মৌলিক বা কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক সমস্যা বলা হয় – একটি অর্থনীতির সীমাবদ্ধ সম্পদগুলো সমস্ত মানুষের চাহিদা ও চাহিদাগুলি পূরণ করতে অপর্যাপ্ত। এটা অনুমান করে যে মানুষ চায় সীমাহীন, কিন্তু মানুষের চাহিদা পূরণের উপায় সীমিত। অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পদগুলির যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থাপনা বা সংস্থার সর্বোত্তম ব্যবহার সমস্যা।

মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার লক্ষ্য হলো অভাব পূরণ। সেই লক্ষ্য অর্জনের উপায় হেলা সীমিত সম্পদের যথাযথ প্রয়োগ। সীমিত সম্পদ ও অসীম অভাব এ দুয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে যেসব সমস্যার সৃষ্টি হয় তাকে মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা বলে। যেমন- অভাবের বিবিধত্ব ও সম্পদের স্বল্পতা থেকে পছন্দ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়।

সুতরাং অভাবের অসীমতা ও সম্পদের স্বল্পতার জন্যই মানবজীবনের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যার উদ্ভব হয়। নোবেল বিজয়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদ পল এ. স্যামুয়েলসন এর মতে, প্রত্যেক সমাজের মৌলিক বা কেন্দ্রীয় তিনটি সমস্যা হলো-

১. কী উৎপাদন করা হবে? (What to produce?)

২. কীভাবে উৎপাদন করা হবে? (How to produce?)

৩. কার জন্য উৎপাদন করা হবে? (For whom to produce?)

এ তিনটি প্রধান সমস্যার সাথে আরও ৩টি সমস্যা জড়িত। তা হলো-

অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কি

কোন আর্থিক ব্যবস্থাতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কয়েকটি পূর্বে নির্ধারিত লক্ষতে উপনীত হওয়ার উদ্দেশ্যে এক কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা দেশের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও দিগদর্শনই হল অর্থনৈতিক পরিকল্পনা । 

অর্থনৈতিক মন্দা কি

অর্থনৈতিক মন্দা হচ্ছে অর্থনীতির সেই অবস্থা, যখন চাহিদার ঋণাত্বক প্রভাবে উৎপাদন হ্রাস পায় এবং বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়।

স্মরণকালের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দা ঘটে ১৯২৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিউইয়র্ক স্টক একচেঞ্জ’এ শেয়ার মূল্য ধ্বসের মাধ্যমে। মন্দার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, যা কাটিয়ে উঠতে কোন কোন দেশের ত্রিশের দশক লেগে যায়।

অর্থনৈতিক দ্রব্য কাকে বলে

যে দ্রব্যের সমস্ত উপযোগ রয়েছে, জোগান চাহিদার তুলনায় সীমাবদ্ধ যা হস্তান্তরযোগ্য এবং বাহ্যিক সত্তার অধিকারী তাকে অর্থনৈতিক দ্রব্য বলে।

অর্থনৈতিক অধিকার কি

অর্থনৈতিক অধিকার বলতে আমরা সেইসব অধিকারকে বুঝি যেগুলি। মানুষকে দারিদ্র্য এবং অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দিয়ে দৈনন্দিন জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও নিরাপদ করে গড়ে তােলে| অধ্যাপক ল্যাম্কির মতে, প্রতিদিনের অন্নসংস্থানের ক্ষেত্রে মানুষের ন্যায়সংগত মজুরি পাওয়ার নিরাপত্তা ও সুযােগকে অর্থনৈতিক অধিকার বলা যায়। অর্থনৈতিক অধিকারের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল一

[1] কর্মের অধিকার: অর্থনৈতিক অধিকারগুলির মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল কর্মের অধিকার। কর্মের অধিকার অনুসারে প্রত্যেক ব্যক্তি তার যােগ্যতা অনুযায়ী যে-কোনাে কাজ পাওয়ার অধিকারী। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক যাতে তার যোগ্যতা অনুসারে উপযুক্ত কাজ পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সমাজতান্ত্রিক গণসাধারণতন্ত্রী রাষ্ট্র চিনে কর্মের অধিকার মৌলিক অধিকাররূপে স্বীকৃত।

[2] উপযুক্ত পারিশ্রমিকের অধিকার: উপযুক্ত কাজের জন্য উপযুক্ত মজুরি পাওয়ার অধিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অধিকার জীবনধারণের জন্য প্রতিটি কর্মরত ব্যক্তির পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক পাওয়া একান্ত অপরিহার্য। অর্থনৈতিক অধিকারে কাজের গুণগত ও পরিমাণগত মান যাচাই করে উপযুক্ত মানদণ্ডে পারিশ্রমিক নির্ধারণের কথা বলা হয় এ ছাড়া একই কাজে নারীপুরুষনির্বিশেষে সকলের সমান পারিশ্রমিক পাওয়ার বিষয়টিও অর্থনৈতিক অধিকারের মধ্যে স্বীকৃত।

[3] বিশ্রামের অধিকার: কাজের অধিকারের পাশাপাশি বিশ্রামের অধিকারও অত্যন্ত জরুরি। নিরবচ্ছিন্ন কাজের পরে অবসরযাপনের অবকাশ না থাকলে মানুষের পক্ষে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব নয়। অ্যারিস্টটলের মতে, সুন্দর জীবনের জন্য অবকাশ একান্তভাবে আবশ্যক।

[4] বার্ধক্যে ও অক্ষমতায় প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার: বৃদ্ধ ও অক্ষম অবস্থায় রাষ্ট্র কর্তৃক প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অধিকার। এ ছাড়াও কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত পঙ্গুত্ব বা অক্ষমতার দরুন আর্থিক নিরাপত্তা পাওয়া শ্রমিকদের অধিকার।

অর্থনৈতিক সাম্য বলতে কী বোঝ

অর্থনৈতিক সাম্য বলতে আমরা বুঝি, অর্থ উপার্জন ও বণ্টন বিষয়ে বৈষম্য দূর করে সকলকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমান সুযােগ-সুবিধা প্রদান করা। অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত রাজনৈতিক সাম্য অর্থহীন। নিঃস্ব ও নিরাশ্রয়দের নিকট রাজনৈতিক সাম্য ও স্বাধীনতার কোনাে মূল্য নেই।

অর্থনৈতিক সাম্য বলতে এটা বুঝায় না যে দেশের সম্পদকে সমানভাবে সকলের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে। দার্শনিক হিউম বলেন, “যদি প্রত্যেককে সমান সম্পদ বণ্টন করে দেয়া হয়, তাহলে বিভিন্নজনের শিল্পকর্মের দ্বারা-পরিশ্রমের মাধ্যমে, যত্ন ও কলাকৌশলে তা পুনরায় বৈষম্য রূপ লাভ করবে।” অর্থনৈতিক অসাম্য থাকলে সমাজে সম্পদশালী একটি শ্রেণির সৃষ্টি হয় এই শ্রেণিই বিশেষ সুযােগ-সুবিধা ও স্বাধীনতা ভগ করে।

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | অর্থনৈতিক উন্নয়ন

Q1. একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপাদান কয়টি

Ans – কৃষি, শিল্প, বানিজ্য, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম অপরিহার্য উপাদান ।

Q2. কে ভারতের নতুন অর্থনৈতিক নীতি ঘোষণা করেন

Ans – উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ এবং বিশ্বায়নের নীতিকে প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও নতুন অর্থনৈতিক নীতি হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।

Q3. অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি প্রধান সূচক হল

Ans – অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হল GDP বা Gross. Domestic Production।

Q4. অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা কে ছিলেন

Ans – রমেশ চন্দ্র দত্ত অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের প্রবর্তক।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version