Site icon prosnouttor

ডিএনএ কী, ডিএনএ ফুল ফর্ম, আরএনএ কি, ডিএনএ ও আরএনএ এর মধ্যে পার্থক্য

ডিএনএ কী, ডিএনএ ফুল ফর্ম, আরএনএ কি, ডিএনএ ও আরএনএ এর মধ্যে পার্থক্য

ডিএনএ কী, ডিএনএ ফুল ফর্ম, আরএনএ কি, ডিএনএ ও আরএনএ এর মধ্যে পার্থক্য

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

ডিএনএ কী

ডিএনএ হলো ক্রোমোজমের প্রধান উপাদান এবং বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি। ডিএনএ-র পূর্নরুপ হচ্ছে ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড। জীবের বিকাশ, বাচা ও পুনরুৎপাদনে ডিএনএ অনেক নির্দেশাবলি ধারণ করে।এই নির্দেশাবলি প্রতিটি সেলের ভিতরে পাওয়া যায় এবং সেইটার মাধ্যমেই পিতামাতার অনেক বৈশিষ্ট্য তাদের বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও দেখা যায়।

অর্থাৎ, ডিএনএ-ই জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকৃত ধারক ও বাহক,যা জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সরাসরি বহন করে পিতামাতা থেকে তাদের বংশধরে নিয়ে যায়।

DNA হলো একটি অনু যা কোনো জীবের বিকাশ, বাঁচাতে বা পুনরূতপাদন করার প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী ধারণ করে।

এই নির্দেশাবলী গুলো প্রত্যেকটি কোষের মধ্যে পাওয়া যায় এবং এর মাধ্যমে পিতা মাতার কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য তাদের সন্তানদের দেওয়া হয়।

তাই, বলা যায় ডিএনএ হলো এমন এক ধরনের নিউক্লিক এসিড যা ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিনের রাসায়নিক একটি রূপ।

সমস্ত জীবকোশে DNA থাকে। DNA প্রধানত ক্রোমোজোমে থাকে। এছাড়া মাইটোকনড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাসটিডের ধাত্র এবং সেন্ট্রিওলের মধ্যেও DNA থাকে। এছাড়া প্যারামেশিয়াম ও ফার্মের সাইটোপ্লাজমে DNA থাকে।

ডিএনএ ফুল ফর্ম, ডিএনএ ফুল মিনিং

যে নিউক্লিক অ্যাসিড ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা দিয়ে তৈরি, সেই নিউক্লিয়াসের অ্যাসিড জিন গঠন করে জীবদেহের জৈবিক কার্য ও বংশগত বৈশিষ্ট্য পুরুষানুক্রমে বহন করে তাকে DNA বা ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বলে।

ডিএনএর বৈশিষ্ট্য

ডিএনএ কোথায় থাকে

ডিএনএ একটি নিউক্লিক এসিড। যা জীবদেহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণে জিনগত নির্দেশ ধারণ করে। সকল জীবের ডিএনএ জিনোম থাকে।

ডিএনএ কোষের ক্রোমোজোমে অবস্থিত থাকে। এটা জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জীব বহন করে। এর ফলে প্রজাতির বৈশিষ্ট্যের ধারা অক্ষুন্ন থাকে।

ডিএনএ গঠন, ডিএনএ এর গঠন

প্রত্যেক DNA অণু সুতোর মতো দুটি পলিনিউক্লিওটাইড শৃঙ্খল দ্বারা গঠিত। পলিনিউক্লিওটাইড এক একটি নিউক্লিওটাইড দ্বারা গঠিত। প্রতিটি নিউক্লিওটাইড আবার প্রধান তিন প্রকার উপাদান – (i) নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারক, (ii) শর্করা (iii) ফসফোরিক অ্যাসিড দিয়ে গঠিত।

ডিএনএ এর ভৌত গঠন

ডিএনএ এর রাসায়নিক গঠন

যেহেতু ডিএনএ এর মনোমার হলো নিউক্লিওটাইড তাই নিউক্লিওটাইড এর উপাদান হলো ডিএনএ এর উপাদান। নিউক্লিওটাইড / ডিএনএ এর গঠনগত উপাদান:

একটি পেন্টোজ শর্করা :
যা ডিঅক্সিরাইবোজ নামে পরিচিত। রাইবোজ শর্করা তে দুই নম্বর কার্বনের হাইড্রোক্সিল গ্রুপ থাকলেও ডিঅক্সিরাইবোজ গ্রুপে শুধু হাইড্রোজেন থাকে অর্থাৎ অক্সিজেন থাকে না। তাই ডিঅক্সি নামকরণ করা হয়েছে। এই শর্করার অনুতে পাঁচটি কার্বন পরমাণু থাকে বলে একে পেন্টোজ শর্করা বলে।

নাইট্রোজেন বেস :
ডিএনএতে পিউরিন ও পাইরিমিডিন এই দুই প্রকারের নাইট্রোজেন বেস থাকে। পিউরিন বেসে দুটি করে ষড়ভুজাকার গঠন থাকে অন্যদিকে পিরিমিডিন বেস একটি করে ষড়ভূজাকার গঠন থাকে।
পিউরিন বেস দুটি হলো অ্যাডেনিন ও গুয়ানিন এবং পিরিমিডিন বেস দুটি হল সাইটোসিন ও থাইমিন।

ফসফেট গ্রুপ : ডিএনএতে ফসফরিক এসিড ফসফেট গ্রুপ PO43- রূপে যুক্ত থাকে।

ডিঅক্সিরাইবো শর্করা ফসফেট ও নাইট্রোজেন বেস মিলে তৈরি হয় নিউক্লিওটাইড।শুধুমাত্র ডিঅক্সিরাইবোজ শর্করা ও নাইট্রোজেন বেস মিলে তৈরি হয় নিউক্লিওসাইড।
সুতরাং নিউক্লিওসাইড এর সাথে ফসফেট গ্রুপ যুক্ত হয়ে তৈরি হয় নিউক্লিওটাইড।

DNA এর প্রকারভেদ

  1. বি-ডিএনএ: ডবল-স্ট্র্যান্ডেড ডিএনএর সাধারণ ডাবল হেলিক্স গঠন; ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিডের চিত্র দেখুন।
  2. জেড-ডিএনএ: জেড-ডিএনএ হল এক ধরনের ডিএনএ যেখানে ফসফেট গোষ্ঠীগুলি একটি একক, গভীর খাঁজ সহ বাম-হাতের হেলিক্স বরাবর জিগজ্যাগ করে ডাইনিউক্লিওটাইড পুনরাবৃত্তিকারী ইউনিট গঠন করে; এটি বিকল্প পিউরিন এবং পাইরিমিডিনগুলির প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  3. A-DNA: প্রাথমিক সনাক্তকরণ 75% আপেক্ষিক আর্দ্রতায় ডিএনএ তন্তুগুলির এক্স-রে বিচ্ছুরণ অধ্যয়নের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল।
  4. ডি-ডিএনএ: একটি বিরল প্রকরণ যার প্রতি হেলিকাল টার্নে আটটি বেস জোড়া রয়েছে এবং এর গঠনে কোনো গুয়ানিন নেই।
  5. ই- ডিএনএ: বর্ধিত বা অস্বাভাবিক ডিএনএ।
  6. স্পেসারের ডিএনএ: নিউক্লিওটাইড সিকোয়েন্স যা জিনের মধ্যে ঘটে; ইউক্যারিওটে, এই ক্রমগুলি প্রায়শই দীর্ঘ হয় এবং বেশ কয়েকটি পুনরাবৃত্তি ক্রম গঠিত হয়; বিশেষ করে, ডিএনএ যা রাইবোসোমাল আরএনএ এনকোডিং জিনের মধ্যে ঘটে।
  7. পরিপূরক বা অনুলিপি DNA (cDNA): বিপরীত ট্রান্সক্রিপ্টেজ এনজাইম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট আরএনএ থেকে সিন্থেটিক ডিএনএ প্রতিলিপি করা হয়।
  8. নিউক্লিয়ার ডিএনএ (এনডিএনএ): ইউক্যারিওটিক কোষের নিউক্লিয়াসে পাওয়া ক্রোমোজোমের ডিএনএ।
  9. মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ (এমটিডিএনএ): মাইটোকন্ড্রিয়াল ক্রোমোজোমের ডিএনএ, যা শুধুমাত্র মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এবং প্রতি কোষে কয়েক হাজার কপিতে বিদ্যমান। এর কোড পারমাণবিক ডিএনএ এবং যেকোন জীবন্ত প্রোক্যারিওট থেকে আলাদা এবং এটি পারমাণবিক ডিএনএ থেকে পাঁচ থেকে দশ গুণ দ্রুত বিকশিত হয়।
  10. রিকম্বিন্যান্ট ডিএনএরিকম্বিন্যান্ট ডিএনএ হল একটি ডিএনএ অণু যা সংযুক্ত ক্রম দ্বারা গঠিত যা সাধারণত একই অণুতে ঘটে না, যেমন একটি ব্যাকটেরিয়া প্লাজমিড যার মধ্যে একটি দৈর্ঘ্যের ভাইরাল ডিএনএ ঢোকানো হয়েছে।
  11. একক অনুলিপি DNA (scDNA): ইউক্যারিওটে পলিপেপটাইড এনকোডিং জিন সিকোয়েন্সের বেশিরভাগই একক কপি ডিএনএ (scDNA)।
  12. পুনরাবৃত্তিমূলক ডিএনএ: পুনরাবৃত্তিমূলক ডিএনএ নিউক্লিওটাইড ক্রম নিয়ে গঠিত যা একটি জিনোমের মধ্যে কয়েকবার ঘটে; এগুলি ইউক্যারিওটের বৈশিষ্ট্য এবং সাধারণত পলিপেপটাইড এনকোড করে না। ক্লাস্টারড বা বিচ্ছুরিত ক্রমগুলি মাঝারিভাবে (প্রতি জিনোমে 10 থেকে 104 কপি) বা ব্যাপকভাবে (>106 কপি প্রতি জিনোমে) পুনরাবৃত্তিমূলক হতে পারে। রাইবোসোমাল আরএনএ এবং হিস্টোনগুলির জন্য কিছু কাঠামোগত জিন মাঝারিভাবে পুনরাবৃত্তিমূলক ডিএনএ ক্রম দ্বারা এনকোড করা হয়; উচ্চ পুনরাবৃত্তিমূলক ক্রম সংখ্যাগরিষ্ঠ স্যাটেলাইট DNA হয়.

ডিএনএ এর কাজ

ডিএনএ টেস্ট কি, ডিএনএ টেস্ট কিভাবে করে, ডিএনএ টেস্ট কিভাবে করা হয়

ডিএনএ টেস্ট বা ডিএনএ পরিক্ষা করে কাউকে সনাক্ত করা হয়। কারো পিতা-মাতা বা সন্তান সনাক্ত করার জন্যও DNA Test করা হয়।

ডিএনএ টেস্টের অনেক গুলো নাম রয়েছে যেমন – ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ডিএনএ টাইপিং, ডিএনএ প্রোফাইলিং সহ আরো বিভিন্ন ধরনের টেস্ট।

ডিএনএ টেস্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে করার প্রয়োজন হয় যেমন – খুন, ধর্ষন, পিতৃত্ব নির্ণয়, উত্তরাধিকার নির্ণয় সহ আরো বিভিন্ন বিষয় সনাক্ত করার জন্য ডিএনএ টেস্ট করা হয়।

একটি ডিএনএ টেস্ট হল এক ধরনের জেনেটিক টেস্ট যা কোন বংশগত অস্বাভাবিকতা মূল্যায়ন করতে বা আইনি ক্ষেত্রে পিতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ডিএনএ ক্রম পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। এবং এটি এমন এক ধরনের পরীক্ষা যা আপনার শরীরের জিন, ক্রোমোজোম বা প্রোটিনের পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে। আপনার রক্ত, ত্বক, চুল, টিস্যু বা অ্যামনিওটিক তরল জেনেটিক পরীক্ষার জন্য নমুনা হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। 

বিভিন্ন ধরনের ডিএনএ টেস্ট রয়েছে যার মধ্যে রয়েছেঃ

এবং, ডিএনএ পিতৃত্ব পরীক্ষার মাধ্যমে জৈবিক সম্পর্ক যেমন মা ও বাবার পরিচয় সনাক্ত করতে ডিএনএ টেস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে, অথবা এটি সাধারণভাবে একজন ব্যক্তির বংশ অনুমান করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাণী এবং গাছপালা মানুষের মতো একই উদ্দেশ্যে জেনেটিক্যালি পরীক্ষা করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে সম্পর্ক বা বংশ নির্ধারণ, জেনেটিক রোগের পূর্বাভাস বা নির্ণয় করা, নির্বাচনী প্রজননের জন্য ডেটা সংগ্রহ করা, বা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা জনসংখ্যার জিনগত বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করা। আশা করি তাহলে ডিএনএ টেস্ট কি এবং ডিএনএ টেস্ট কেন করা হয় সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। 

ডিএনএ টেস্ট কত দিনের মধ্যে করতে হয়

DNA এর কাজ হলো আমাদের বংশগতির ধারা বজায় রাখা । প্রত্যেক প্রাণী তাদের বংশগতির ধারা বজায় রাখতে চায় । মূলত মানুষের চোখের রং, গায়ের চামড়ার রং, বীর্য, চুল ইত্যাদি থেকে DNA সংগ্রহ করা হয় ।বর্তমানে অপরাধী ধরার জন্য DNA কার্যকর ভূমিকা পালন করে ।

ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পিতৃপরিচয় কিভাবে নিশ্চিত করা যায়

জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ডিএনএ টাইপিং এবং ডিএনএ প্রোফাইলিং সহ ডিএনএ টেস্টের জন্য অনেক নাম রয়েছে। একজন মানুষের ডিএনএ অন্যজনের সাথে ৯৯.৯% অভিন্ন। চুল, রক্ত, লালা ইত্যাদি সহ বিভিন্ন নমুনার উপর ডিএনএ টেস্ট করা যেতে পারে। চুইংগাম থেকে টিস্যু অপসারণ করে, রেজার, ট্রুথব্রাশ এবং অন্যান্য পণ্যের মতো কিছু ব্যক্তিগত জিনিসও নমুনা হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ডিএনএ টেস্টের পদ্ধতিটি বেশ চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশে, ডিএনএ টেস্ট এখনও ব্যাপকভাবে সহজলভ্য নয়। ডিএনএ টেস্ট বা ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য দেশের একমাত্র সুবিধা, জাতীয় ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি, ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

তবে বিভিন্ন কারণে পিতৃপরিচয় প্রমাণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আপনি যদি আইনি কারণে পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন তবে একটি আইনি ডিএনএ পিতৃপরিচয় টেস্ট অবশ্যই একটি মেডিকেল সেন্টারে করা উচিত। অন্যথায়, আপনি বাড়িতে ডিএনএ পিতৃপরিচয় পরীক্ষার জন্য একটি কিট ব্যবহার করতে পারেন যা আপনি ফার্মেসি বা অনলাইন থেকে কিনতে পারেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পিতৃপরিচয় কিভাবে নিশ্চিত করা যায়।

ডিএনএ টেস্ট কেন করা হয়

একটি ডিএনএ পরীক্ষা হল এক ধরনের ডায়াগনস্টিক পদ্ধতি যা আপনার জিন, ক্রোমোজোম বা প্রোটিনের পরিবর্তন খুঁজে পেতে পারে। এছাড়াও চিকিৎসা ও আইনগত কারণে একজন ব্যক্তির পিতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা ব্যবহার করা হয়। এবং সন্দেহজনক পরিস্থিতির ক্ষেত্রে ফরেনসিক সায়েন্সে তথ্য সংযুক্ত করা একজন ব্যক্তির পূর্বপুরুষ নির্ধারণ করতে গর্ভাবস্থায় শিশুর জেনেটিক ব্যাধি পরীক্ষা করা এবং অসুস্থতার জন্য ওষুধ নির্ধারণ করার জন্য ডিএনএ টেস্ট করা হয়।

ডিএনএ টেস্ট কিভাবে করে?

অনেকেই জানেন না ডিএনএ টেস্ট কিভাবে করে। ডিএনএ টেস্ট করতে প্রথমে আপনার লালা একটি পরীক্ষার কিট দ্বারা সংগ্রহ করা হয়, অতঃপর সেটিকে  ডিএনএ একটি ল্যাবে বের করা হয়, এবং আপনার ডিএনএ তথ্য আত্মীয়-স্বজন বা অন্য মানুষদের এর ডিএনএ নমুনার সাথে তুলনা করা হয়।

ডিএনএ টেস্ট খরচ কত?

ন্যাশনাল ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি, মহিলা ও শিশু মন্ত্রনালয় দ্বারা পরিচালিত এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে অবস্থিত, যেকোন ধরণের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষা করে, যার মধ্যে রয়েছে ধর্ষণ, খুন এবং পিতৃত্ব নির্ধারণ করে। ডিএনএ টেস্টের জন্য ৫ হাজার টাকা প্রয়োজন এবং ফি দেওয়া বাধ্যতামূলক।

আরো পড়ুনঃ চলন কাকে বলে, গমন কাকে বলে, অভিগমন কাকে বলে, চলন ও গমনের পার্থক্য

এবং বিভিন্ন আইন বা আদালতের অনুমতি নিয়ে ডিএনএ টেস্ট করাতে হবে। এবং আপনাকে আদালতে কিসের জন্য ডিএনএ টেস্ট করবেন তা উল্লেখ করতে হবে। তারপর যদি অনুমতি পান তবে তারাই আপনাকে ব্যবস্থা করে দিবে।

ডিএনএ টেস্ট কত দিনের মধ্যে করতে হয়

প্রতিটি ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক রাসায়নিক বা ডিএনএ পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

ঘটনা সংগঠনের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে, নমুনাগুলি অবশ্যই সংগ্রহ করতে হবে এবং ডিএনএ এবং অন্যান্য বিশ্লেষণের জন্য ফরেনসিক ল্যাব বা ডিএনএ প্রোফাইলিং দ্রুত পাঠাতে হবে।

ডিএনএ পরীক্ষা করতে কত দিন সময় লাগে

ডিএনএ শনাক্তকরণ শুধুমাত্র রক্ত বা মুখের লালা পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা যায় এবং ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। যাইহোক, একজন ব্যক্তির হাড় বা দাঁত থেকে তার ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করতে কমপক্ষে চার সপ্তাহ সময় লাগে। কোনো মিল না থাকলে নমুনা সংগ্রহ করে আবার পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে। দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতে পারে।

ডিএনএ রেপ্লিকেশন

DNA-এর ডাবল-হেলিক্স কাঠামোর উন্মোচনের পরপরই ওয়াটসন ও ক্রিক এই DNA-এর সম্ভাব্য প্রতিলিপি বা রেপ্লিকেশনের পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দেন। তাদের এই ধারণাটি অর্ধ-রক্ষণশীল বা সেমি-কন্সার্ভেটিভ (Semi conservative) মডেল নামে সুপরিচিত। তাদের সমসাময়িক আরো দুটি ধারণা ছিলো, রক্ষণশীল-প্রতিলিপি বা কন্সার্ভেটিভ-রেপ্লিকেশন (Conservative replication) মডেল এবং এলোমেলো-প্রতিলিপি বা ডেসপারর্সিভ-রেপ্লিকেশন (Despersive replication) মডেল। কন্সার্ভেটিভ মডেলে আদি DNA অক্ষত থাকে এবং এথেকে সম্পুর্ন নতুন DNA তৈরি করা হয়। ডেসপারর্সিভ মডেলে আদি DNA-কে ছোট ছোট টুকরোয় কেঁটে ফেলা হয়। এই ছোট ছোট টুকরোগুলো তাদের কমপ্লিমেন্টারী বা পরিপূরক নিউক্লিয়টাইডের সাথে যুক্ত হবার মাধ্যমে দুটি নতুন DNA তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ার আদি DNA-টি হারিয়ে যায়। অন্যদিকে, সেমি-কন্সার্ভেটিভ মডেল অনুসারে, রেপ্লিকেশন প্রক্রিয়ায় প্রথমে DNA-এর কমপ্লিমেন্টারি স্ট্র্যান্ড দুটি আলাদা হয়ে যায়, এরপর এই আলাদা আলাদা স্ট্র্যান্ডগুলো তাদের নতুন কমপ্লিমেন্টারি স্ট্র্যান্ড তৈরি করে নেয়।

DNA-রেপ্লিকেশনের তিনটি প্রস্তাবিত মডেল: কন্সার্ভেটিভ বনাম সেমি-কন্সার্ভেটিভ বনাম ডেসপারর্সিভ।

১৯৫৭ সালে ক্যালটেকের দুই গবেষক ম্যাথু মেসেলসন (Matthew Meselson) এবং ফ্রাঙ্কলিন স্টল (Franklin Stahl) নাইট্রোজেনের দুটি সমাণু বা আইসোটোপ ব্যবহার করে সেমি-কন্সার্ভেটিভ মডেলটির সত্যতা খুঁজে পান।

DNA রেপ্লিকেশনের জন্য দায়ী এনজাইমের নাম DNA-পলিমারেস। DNA-পলিমারেস প্রোক্যারিয়টিক এবং ইউক্যারিয়টিক কোষ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ধরণের হয়, এমনকি ইউক্যারিয়টিক কোষে একাধিক DNA-পলিমারেস এনজাইম রয়েছে যারা কার্যত একে অন্যের চেয়ে কিছুটা আলাদা। যা হোক, DNA-পলিমারেস তার কাজ শুরুর আগেই আরো কিছু প্রোটিন কাজে লেগে পরে। প্রথমে আসে হেলিকেস (Helicase) এনজাইম। হেলিকেসের কাজ হচ্ছে নিউক্লিয়টাইডের মধ্যকার হাইড্রোজেন বন্ধন খুলে ফেলা। কিন্তু, নিউক্লিয়টাইডদের খুলে রেখে দিলে তারা কিছুক্ষণ পর আবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে জোড়া লেগে যায়। তাই হেলিকেসের পরপরই আরেক ধরণের প্রোটিন আসে যারা এই খুলে যাওয়া নিউক্লিয়টাইডদের খোলা অবস্থায় ধরে রাখে। এই প্রোটিনগুলোকে বলে সিঙ্গেল-স্ট্র্যান্ড-বাইন্ডিং-প্রোটিন (Single strand binding protein)। হেলিকেস ও সিঙ্গেল-স্ট্র্যান্ড-বাইন্ডিং-প্রোটিনের কারণে খুলে যাওয়া DNA-কে দেখায় Y-আকৃতির মতো, যাকে বলে রেপ্লিকেশন-ফোর্ক (Replication fork)।

হেলিকেস এনজাইমের রেপ্লিকেশন-ফোর্ক তৈরি করতে থাকে। আর এই রেপ্লিকেশন-ফোর্ক ধরে রাখতে সাহায্য করে সিঙ্গেল-স্ট্র্যান্ড-বাইন্ডিং-প্রোটিন।

বোঝার সুবিধার্থে রেপ্লিকেশন-ফোর্কের সহজ রূপ।

রেপ্লিকেশন শুরু হয় DNA-এর একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে নাম, অরিজিন-অফ-রেপ্লিকেশন বা Ori (Origin of replication)। Ori-এর নিউক্লিয়টাইডগুলোর একটা বিশেষ বিন্যাস থাকে যেটা রেপ্লিকেশন প্রক্রিয়া শুরুতে সাহায্য করে। এই নিউক্লিয়টাইডগুলো প্রোটিন সংশ্লেষণে ব্যবহৃত হয় না। প্রোক্যারিয়টিক কোষের একটি মাত্র ক্রোমোসোম যার DNA-এর দুই প্রান্ত জোড়া লেগে থাকে, ফলে প্রোক্যারিয়টিক DNA হয় বৃত্তাকার। প্রোক্যারিয়টিক DNA-এর Ori মাত্র একটি। অন্যদিকে, ইউক্যারিয়টদের ক্রোমোসোমগুলো সুদীর্ঘ এবং রেখাকৃতির। ইউক্যারিয়টিক DNA-তে একাধিক Ori থাকে, ফলে একাধিক DNA-পলিমারেস একই সাথে DNA-এর বিভিন্ন অংশের রেপ্লিকেশন চালাতে থাকে। একাধিক Ori-এর কারণে ইউক্যারিয়টিক DNA-তে একাধিক রেপ্লিকেশন-ফোর্ক তৈরি হয় যেগুলো দেখতে বুদ্বুদের মতো দেখায়, তাই এই এদের বলে রেপ্লিকেশন-বাবল (Replication bubble)।

ইউক্যারিয়টিক DNA-তে একাধিক অরিজিন-অফ-রেপ্লিকেশনের জন্য রেপ্লিকেশন-বাবল তৈরি হয়।

রেপ্লিকেশন-ফোর্ক তৈরি হয়ে গেলে আশেপাশে ভেসে বেড়ানো নিউক্লিয়টাইডগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই খোলা স্ট্র্যান্ড দুটোর উন্মুক্ত নিউক্লিয়টাইডের সাথে হাইড্রোজেন বন্ধনে আবদ্ধ হয়। অর্থাৎ, DNA-পলিমারেসকে এক এক করে নিউক্লিয়টাইড ধরে এনে খোলা স্ট্র্যান্ডে বসাতে হয় না। DNA-পলিমারেসের কাজ শুরুর আগেই নতুন স্ট্র্যান্ডের নিউক্লিয়টাইডগুলো জায়গা মতো বসে যায়। তাই, DNA-পলিমারেস কাজ হলো এই নতুন স্ট্র্যান্ডের নিউক্লিয়টাইডগুলো মধ্যে ফসফেট বন্ধন তৈরি করার মাধ্যমে ফসফেট-সুগার ব্যাকবোন তৈরি করা। ফসফেট বন্ধন শক্তিশালী কোভেলেন্ট বন্ধন, এই বন্ধন তৈরিতে শক্তির প্রয়োজন। সাধারণ নিউক্লিইক-অ্যাসিডগুলোর মাত্র একটি ফসফেট-গ্রুপ থাকে।

সাধারণ নিউক্লিইক-অ্যাসিড ও তার ফসফেট-গ্রুপ। DNA-পলিমারেসের কাজ হলো, নতুন নিউক্লিয়টাইডগুলোর ৩’-প্রান্তের হাইড্রক্সিল-গ্রুপ সরিয়ে একটি ফসফেট-গ্রুপ যুক্ত করা।

নতুন স্ট্র্যান্ডের নিউক্লিয়টাইডগুলোর মাঝে ফসফেট বন্ধন তৈরিতে যে শক্তির প্রয়োজন সেটি আসে ওই ভেসে বেড়ানো নিউক্লিয়টাইডগুলো থেকে। কোষে যে নিউক্লিইক-অ্যাসিডগুলো ভেসে বেড়ায় তারা একটু বিশেষ ধরণের। এদের বলে dNTP বা ডিঅক্সিনিউক্লিয়টাইড-ট্রাইফসফেট। এই নিউক্লিইক-অ্যাসিডগুলো একটির বদলে থাকে তিনটি ফসফেট-গ্রুপ (α, β, ও ૪)। এডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন, ও থায়মিনের dNTP-গুলো যথাক্রমের, ATP বা এডেনোসিন-ট্রাইফসফেট (Adenosine triphosphate), GTP বা গুয়ানোসিন-ট্রাইফসফেট (Guanosine triphosphate), CTP সাইটিডিন-ট্রাইফসফেট(Cytidine triphosphate), ও TTP থায়মিডিন-ট্রাইফসফেট (Thymidine triphosphate)। নিচের ছবি।

তিন ফসফেট-গ্রুপযুক্ত নিউক্লিইক-অ্যাসিড বা dNTP। β ও ૪ ফসফেট-গ্রুপ দুটি শক্তির যোগান দেয় এবং α ফসফেট-গ্রুপটি ফসফেট-ব্যাকবোনে যুক্ত হয়।

DNA-পলিমারেস dNTP-এর β ও ૪ ফসফেট-গ্রুপ দুটি ভেঙ্গে ফেলে, এতে যে শক্তি নির্গত হয় তা দিয়ে সে ফসফেট বন্ধন তৈরি করে। ফলে, নুতন স্ট্র্যান্ডটি তার ফসফেট-সুগার ব্যাকবোন লাভ করে।

DNA-পলিমারেসের একটা সীমাবদ্ধতা হলো, এই এনজাইমের গতিপথ নির্দিষ্ট এবং একমুখী। DNA-পলিমারেস নিউক্লিয়টাইডের ৩’-প্রান্তের হাইড্রক্সিল-গ্রুপ সরিয়ে একটি ফসফেট-গ্রুপ যুক্ত করে। বলে রাখা ভালো, প্রতিটি নিউক্লিয়টাইডের ৫’-প্রান্তে এক বা একাধিক ফসফেট-গ্রুপ লাগানোই থাকে, তাই DNA-পলিমারেস এই ৫’-প্রান্ত স্পর্শ করে না (উচ্চারণ: ৩’ = থ্রি-প্রাইম, ৫’ = ফাইভ-প্রাইম)। সমস্যা হলো, DNA-তে কমপ্লিমেন্টারি স্ট্র্যান্ডগুলো বিপরীতমুখী।অর্থাৎ, একটি স্ট্র্যান্ডের মেরু ৩’—>৫’ এবং এর শুরুতেই খোলা ৩’-প্রান্ত থাকে। আর অন্যটির মেরু ৫’—>৩’ এবং এই স্ট্র্যান্ডের শুরুতে কোনো খোলা ৩’-প্রান্ত নেই। ফলে, ৫’—>৩’ স্ট্র্যান্ডটি DNA-পলিমারেসের কাজ শুরু করে রেপ্লিকেশন-ফোর্কের গোড়া থেকে।

DNA-এর ফসফেট-সুগার ব্যাকবোন দুটির মেরু ঠিক উল্টো।

ওপরের ছবিতে DNA-এর ডাবল-হেলিক্স কাঠামোকে সোজা করে রেললাইন মতো করে দেখানো হয়েছে। এই রেললাইনের ফসফেট-সুগার ব্যাকবোন দুটির মেরু ঠিক উল্টো। একটির ৩’ –>৫’ এবং অন্যটির ৫’—>৩’। ব্যাকবোন দুটি যুক্ত থাকে নিউক্লিয়টাইডগুলোর মধ্যকার হাইড্রোজেন বন্ধনের কারণে।

DNA-পলিমারেস ৩’—>৫’ স্ট্র্যান্ডের ৩’-প্রান্তের সাথে যুক্ত হয় এবং সামনে এগিয়ে যায়।

৩’—>৫’ স্ট্র্যান্ডে DNA-পলিমারেসের গতিপথের সোজা দিকে আর ৫’—>৩’ স্ট্র্যান্ডে ঠিক উল্টো দিকে।

৩’—>৫’ স্ট্র্যান্ডে DNA-পলিমারেসের সম্মুখ গতি।

DNA-পলিমারেস ৩’—>৫’ স্ট্র্যান্ড ধরে নির্বিঘ্নে এগিয়ে যায় এবং নতুন কমপ্লিমেন্টারি স্ট্র্যান্ড তৈরি করে (লাল রং)। এই নতুন স্ট্র্যান্ডটিকে বলে লিডিং-স্ট্র্যান্ড (Leading strand)।

৩’—>৫’ স্ট্র্যান্ডে DNA-পলিমারেসের সম্মুখ গতি। এবং ৫’—>৩’ স্ট্র্যান্ডে DNA-পলিমারেসের উল্টো গতি।

DNA-পলিমারেস ৫’—>৩’ স্ট্র্যান্ডের রেপ্লিকেশন-ফোর্কের Y-কোণ থেকে শুরু করে উল্টো পথে এগুতে থাকে। ৫’—>৩’ বরাবর তৈরি হওয়া নতুন স্ট্র্যান্ডকে বলে ল্যাগিং-স্ট্র্যান্ড (Lagging strand)।

৫’—>৩’ স্ট্র্যান্ডে DNA-পলিমারেস ভেঙ্গে ভেঙ্গে নতুন স্ট্র্যান্ড (লাল রং) তৈরি করে।

৫’—>৩’ স্ট্র্যান্ডের শেষ প্রান্তে পৌঁছানো সাথে সাথে DNA-পলিমারেস লাফ দিয়ে রেপ্লিকেশন-ফোর্কের নতুন খোলা অংশে চলে আসে এবং আবার উল্টো দিকে এগুতে থাকে। DNA-পলিমারেসের এই সোজা দিকে লাফ দেয়া এবং উল্টো দিকে এগুনোর জন্য ল্যাগিং-স্ট্র্যান্ডের মাঝে ফাঁক তৈরি হয়। জোড়া লাগার আগ পর্যন্ত এই ভাঙ্গা ল্যাগিং-স্ট্র্যান্ডগুলোকে বলে ওকাজাকি ফ্রাগমেন্ট (Okazaki fragments)।

লিডিং-স্ট্র্যান্ড, ল্যাগিং-স্ট্র্যান্ডে, এবং ওকাজাকি ফ্রাগমেন্ট।

DNA-পলিমারেস যখন পূর্ববর্তী ওকাজাকি ফ্রাগমেন্টে এসে পৌঁছে তখন সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রোটিন এসে ওকাজাকি ফ্রাগমেন্ট দুটোকে জোড়া লাগিয়ে দেয়। এবং DNA-পলিমারেস আবার রেপ্লিকেশন-ফোর্কের Y-কোণে লাফ দেয়। আর এভাবেই চলতে থাকে ৫’—>৩’ স্ট্র্যান্ডের রেপ্লিকেশন।

মানব DNA-এর নিউক্লিয়টাইড-বেসপেয়ার প্রায় ৩.২ বিলিয়ন। রেপ্লিকেশন শেষে যদি নতুন স্ট্র্যান্ডের সাথে আদি স্ট্র্যান্ডের তুলোনা করা হয় তবে রেপ্লিকেশনজনিত ভুল পাওয়া যাবে ১ বিলিয়ন বেসপেয়ারে মাত্র ১টি। এই অবিশ্বাস্য নির্ভুল রেপ্লিকেশন কিন্তু এক ধাপে হয় না। আগে বলা হয়েছে, DNA-পলিমারেস কখনোই নিউক্লিয়টাইডদের ধরে নিয়ে এসে নতুন স্ট্র্যান্ড তৈরি করে না। বরং, ভেসে বেড়ানো dNTP-রা রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের কারণে নিজেরাই আদি স্ট্র্যান্ডের নিউক্লিয়টাইডদের সাথে হাইড্রোজেন বন্ধনে আবদ্ধ হয়। যদি কোনো কারণে নিউক্লিয়টাইডগুলো তাদের আদি নিউক্লিয়টাইডদের কমপ্লিমেন্টারি বা পরিপূরক না হয়। অর্থাৎ, ভুলক্রমে যদি A ও T-এর বিপরীতে C বা G কিংবা, C ও G-এর বিপরীতে A বা T যুক্ত হয়। তবে, DNA-পলিমারেস যেটা করবে সেটা হলো, প্রথমে সে এই ভুল নিউক্লিয়টাইডকে ফসফেট-সুগার ব্যাকবোনে যুক্ত করবে। এরপর সে এগিয়ে যাবে পরের নিউক্লিয়টাইডে, কিন্তু, এই নিউক্লিয়টাইড জোড়া দেবার আগে সে একপ্রকার চোখ ঘুরিয়ে দেখে নেবে যে, পূর্ববর্তী বেসপেয়ারটি কমপ্লিমেন্টারি কিনা। যদি না হয় তবে, সে এক ধাপ পিছিয়ে গিয়ে ভুল নিউক্লিয়টাইডকে কেঁটে ফেলে দেবে এবং অপেক্ষা করবে কখন আরেকটি ভাসমান (সম্ভবত সঠিক) নিউক্লিয়টাইড উপস্থিত হবার জন্য। যখনই নতুন নিউক্লিয়টাইড এসে কাটা অংশে হাজির হবে, DNA-পলিমারেস সাথে সাথে বাছবিচার ছাড়াই নিউক্লিয়টাইডকে জোড়া লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

কোনো ধরণের সংশোধন ছাড়াই রেপ্লিকেশন জনিত ভুলের পরিমাণ অনেক বেশি, ১০হাজার বেসপেয়ারে প্রায় ১টি ভুল। DNA-পলিমারেসের কারণে এই ভুলের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ১০ মিলিয়ন বেসপেয়ারে ১টিতে। যা কিনা পুরো DNA রেপ্লিকেশনে প্রায় ৩০০টির ভুলের জন্য দায়ী। জাইগোট থেকে শুরু করে মানবদেহ কোষে অগণিত DNA রেপ্লিকেশন ঘটে। প্রতিবার ৩০০টি ভুল ঘটতে থাকলে সময়ের সাথে সাথে ভুলগুলো বিশাল অংকে পরিণত হবে যেটা হবে মানবদেহে জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই, কোষে জন্য DNA-পলিমারেসের এই ভুল সংশোধন প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট নয়।

DNA রেপ্লিকেশনের সময় যেই ভুলগুলো DNA-পলিমারেস এড়াতে পারে না, সেগুলোকে সংশোধন করার জন্য থাকে একদল প্রোটিন। এদের বলা হয় মিসম্যাচ-কারেকশন-এনজাইম (Mismatch correction enzyme)। মিসম্যাচ-কারেকশন-এনজাইমগুলো DNA-পলিমারেসের পিছু পিছু এগুতে থাকে আর কমপ্লিমেন্টারি নয় এমন বেসপেয়ার খুঁজতে থাকে। পাওয়া গেলে ওই বেসপেয়ারসহ DNA-এর কিছু অংশ কেঁটে বাদ দিয়ে দেয়। এরপর ভাসমান dNTP এসে শূন্যস্থান পূরণ করে, এবং DNA-পলিমারেস এসে এই নতুন বেসপেয়ারগুলোকে ফসফেট-সুগার ব্যাকবোনে যুক্ত করে।

মিসম্যাচ-কারেকশন-এনজাইম প্রথমে AA নন-কমপ্লিমেন্টারি বেসপেয়ার খুঁজে বের করে।

AA নন-কমপ্লিমেন্টারি বেসপেয়ারসহ কিছু সেকুয়েন্স কেঁটে ফেলা হয়।

কেঁটে ফেলা অংশে নতুন নিউক্লিয়টাইড এসে হাইড্রোজেন বন্ধন গঠন করে। এরপর DNA-পলিমারেস এদের ফসফেট-সুগার ব্যাকবোনে যুক্ত করে।

প্রশ্ন হলো, কোনটি ভুল নিউক্লিয়টাইড আর কোনটি সঠিক নিউক্লিয়টাইড সেটা মিসম্যাচ-কারেকশন-এনজাইমগুলো কিভাবে বুঝতে পারে? সময়ের সাথে সাথে DNA-এর রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। বিশেষ করে নিউক্লিইক-অ্যাসিডগুলোর নাইট্রোজেনাস বেসগুলোতে সময়ে সাথে সাথে একাধিক মিথাইল-গ্রুপযুক্ত হতে থাকে। মিথাইল-গ্রুপ (CH3) হলো একটি কার্বন ও তিনটি হাইড্রোজেনযুক্ত একটি যৌগ। এই মিথাইল-গ্রুপ যুক্তকরণ প্রক্রিয়াকে বলে মিথাইলেশন (Methylation)। DNA-এর মিথাইলেশনের পরিমাণ সময়ের ওপর নির্ভর করে। DNA যতো পুরোনো এর মিথাইলেশনও ততো বেশি। নতুন স্ট্র্যান্ডের নিউক্লিয়টাইডগুলোর মিথাইলেশন শুরু হতে একটু সময় লাগে, প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মতো। মিসম্যাচ-কারেকশন-এনজাইমগুলো নিউক্লিয়টাইডগুলোর মিথাইলেশনের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করে কোনটি নতুন আর কোনটি পুরোনো নিউক্লিয়টাইড। বেসপেয়ার কমপ্লিমেন্টারি না হলে, মিসম্যাচ-কারেকশন-এনজাইম মিথাইলেশনবিহীন নিউক্লিয়টাইডগুলোর কেঁটে বাদ দেয়।

আরএনএ কি

রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (অ্যাক্রোনিম বা সংক্ষিপ্তকরণে আরএনএ বা RNA) হল একটি নিউক্লিক অ্যাসিড যা সরাসরি প্রোটিন সংশ্লেষণের সাথে জড়িত এবং যার পলিনিউক্লিয়োটাইডের মনোমার এককগুলোতে গাঠনিক উপাদানরূপে রাইবোজ শুগার ও অন্যতম বেস বা ক্ষারক হিসেবে ইউরাসিল থাকে।

রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড হল একটি গুরুত্বপূর্ণ নিউক্লিওটাইড যা নিউক্লিক অ্যাসিডের দীর্ঘ শৃঙ্খলের ন্যায় সমস্ত জীবন্ত কোষে উপস্থিত রয়েছে। সাধারণত ডিএনএ থেকে প্রাপ্ত এই নিউক্লিক অ্যাসিড মানবদেহে নতুন কোষ তৈরির জন্য দায়ী। আরএনএ-কে কোন কোন সময় এনজাইম হিসাবেও উল্লেখ করা হয় কারণ এটি শরীরের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।

RNA-এর প্রধান ভূমিকা হল প্রোটিন সংশ্লেষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিএনএ থেকে নির্দেশাবলী বহনকারী একটি বার্তাবাহক হিসাবে কাজ করা। আরএনএতে শুগার রিবোজ, ফসফেট এবং নাইট্রোজেনাস বেস অ্যাডেনাইন (এ), গুয়ানিন (জি), সাইটোসিন (সি), এবং ইউরাসিল (ইউ) রয়েছে। ডিএনএ এবং আরএনএ নাইট্রোজেনাস বেস এ, জি এবং সি ভাগ করে নেয়, থাইমিন সাধারণত ডিএনএতে উপস্থিত থাকে এবং ইউরাসিল সাধারণত আরএনএতে উপস্থিত থাকে।

আরএনএ প্রকারভেদ

প্রোক্যারিওট এবং ইউক্যারিওট উভয় ক্ষেত্রেই তিনটি প্রধান ধরনের আরএনএ বিদ্যমান-

  1. rRNA (রাইবোসোমাল)
  2. tRNA (ট্রান্সফার)
  3. mRNA (বার্তাবহ)

এম-আরএনএ

mRNA বা বার্তাবাহী আর.এন.এ: যে সব RNA জিনের সংকেত অনুযায়ী প্রোটিন সংশ্লেষের ছাঁচ হিসেবে কার্যকর হয়ে নির্দিষ্ট অ্যামিনো অ্যাসিড অনুক্রম বাছাই করে তাই mRNA। DNA থেকে ট্রান্সক্রিপশনের মাধ্যমে mRNA সৃষ্টি হয়। mRNA চেইন এর মত। mRNA নির্দিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষণের বার্তা বহন করে। কোষের মোট RNA এর ৫-১০ ভাগ mRNA।

আর-আরএনএ

রাইবোজোমাল RNA বা rRNA : রাইবোজোম এর প্রধান গাঠনিক উপাদান হলো rRNA.কোষের শতকরা ৮০-৯০ ভাগ হলো rRNA. কোষের রাইবোজোম এদের অবস্থান।

টি-আরএনএ

যে সব RNA জেনেটিক কোড অনুযায়ী একেকটি অ্যামিনো এসিড কে mRNA তে স্থানান্তর করে প্রোটিন সংশ্লেষে সাহায্য করে সেগুলোকে tRNA বা ট্রান্সফার RNA বলে। প্রতিটি কোষে প্রায় ৩১-৪২ ধরনের tRNA থাকে। নিউক্লিয়াসের ভিতরে tRNA এর সৃষ্টি হয়। প্রতিটি tRNA তে মোটামুটি ৯০ টি নিউক্লি্উটাইড থাকে। প্রাথমিকভাবে প্রতিটি tRNA এক সূত্রক এবং লম্বা চেইনের মতো থাকে কিন্তু পরবর্তীতে এটি ভাঁজ হয়ে যায় এবং বভিন্ন বেস-এর মধ্যে জোডার সৃষ্টি হয়ে প্রতিটি tRNA-তে একাধিক ফাঁস সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাঁস হলো অ্যান্টিকোডন ফাঁস যা mRNA-এর কোডন এর সাথে মুখোমুখি বসে যেতে পারে। tRNA-৩ প্রান্ত এক সূত্রক এবং সব সময়ই CCA ধারায় বেস সজ্জিত থাকে। এখানে অ্যামিনো এসিড সংযুক্ত হয়। ফাঁস অবস্থায় সবসময়ই অ্যান্টিকোডন ফাঁস ও অ্যামিনো এসিড সাইট বিপরীত অবস্থানে থাকে। তিনটি বেস নিয়ে অ্যান্টিকোডন সৃষ্টি হয়।gRNA

বংশগতীয় RNA বা genetic RNA ভাইরাস এর বংশগতি উপাদান হিসেবে DNA থাকে না তাদের RNA কে gRNA বলে।miRNA

মাইনর RNA বা miRNA সিটোপ্লাজমীয় RNA ও নিউক্লীয় RNA নামের কিছু RNA আছে যা এনজাইম এর কাঠামো দান করে।

আরএনএ এর কাজ

RNA , DNA এর সংকেত অনুয়ায়ী প্রোটিন তৈরি করে। কিছু কিছু প্রাণির বংশগতির বৈশিষ্ট্য ধারন করে, যেমন কিছু প্রজাতির ভাইরাস।

ডিএনএ ও আরএনএ এর মধ্যে পার্থক্য, ডিএনএ এবং আরএনএ এর মধ্যে পার্থক্য

ডিএনএআরএনএ
DNA হল দ্বিসুত্রক বা double helics যুক্ত অর্থাৎ দুই পলিনিউক্লিওটাইড শৃঙ্খলবিশিষ্ট।RNA হল একসুত্রক বা single helics যুক্ত অর্থাৎ এক পলিনিউক্লিওটাইড শৃঙ্খলবিশিষ্ট ।
DNA তে deoxy-ribose sugar থাকে।অর্থাৎ এর পেন্টোজ সুগার গঠনের ২নং কার্বনে অক্সিজেন থাকেনা (deoxy অর্থ অক্সিজেন ছাড়া)।RNA তে শুধু ribose sugar থাকে। অর্থাৎ ২নং কার্বনে অক্সিজেন থাকে।
DNA তে ইউরাসিল (Uracil) থাকে না।RNA তে থাইমিন (thymine) থাকে না।
DNA রেপলিকেশনের মাধ্যমে নতুন DNA তৈরী করতে পারে।RNA তে রেপ্লিকেশন হয় না।
DNA থেকে ট্রান্সক্রিপশনের মাধ্যমে RNA তৈরী হয়।RNA থেকে ট্রান্সলেশনের মাধ্যমে প্রোটিন তৈরী হয়।
DNA প্রোটিন সরাসরি তৈরী করতে পারেনা।RNA প্রোটিন তৈরী করতে পারে।
DNA এর কোন প্রকারভেদ নেই।RNA প্রধানত তিন প্রকার- mRNA, tRNA, rRNA.
DNA বংশগতি বৈশিষ্ট্য বহন করে। অর্থাৎ জীবের মুল জেনেটিক বস্তু DNA।কতিপয় ভাইরাস ছাড়া অধিকাংশ জীবে RNA বংশগতি বৈশিষ্ট্য বহন করেনা।
DNA কার্যগতভাবে চিরস্থায়ী।RNA ক্ষণস্থায়ী।
DNA প্রধানত নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোমে পাওয়া যায়। এছাড়া কখনো মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্টেও পাওয়া যায়।RNA ক্রোমোজোম, নিউক্লিওলাস, সাইটোপ্লাজম ও রাইবোজোমে পাওয়া যায়।
 DNA তে নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা অনেক বেশি। RNA তে অনেক কম।
DNA এর আনবিক ওজন দশলক্ষ থেকে বহুকোটি পর্যন্ত হতে পারে।RNA এর আনবিক ওজন কয়েক লক্ষের বেশি হয়না।
ডিএনএ ও আরএনএ এর মধ্যে পার্থক্য
আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | ডিএনএ , আরএনএ

Q1. ডিএনএ কী

Ans – DNA এর পূর্ণরুপ হলো Deoxyribonucleic acid. ডিএনএ হলো একটি অণু যা কোনও জীবের বিকাশ, বাঁচতে এবং পুনরূত্পাদন করার প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী ধারণ করে। এই নির্দেশাবলী প্রতিটি সেল/কোষের ভিতরে পাওয়া যায় এবং এর মাধ্যমে পিতামাতাদের কিছু বৈশিষ্ট্য তাদের বাচ্চাদের কাছে দেওয়া হয়।

Q2. ডিএনএ কে আবিষ্কার করেন

Ans – জেমস ওয়াটসন এবং ফ্রান্সিস ক্রিক। আমেরিকার জীববিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন এবং ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিক 1950-এর দশকে ডিএনএ আবিষ্কার করেছিলেন। ডিএনএ একটি দীর্ঘ অণু যা একটি অনন্য জিনগত সঙ্কেত ধারণ করে। এটি আমাদের দেহে সমস্ত প্রোটিন তৈরির এবং জীবন্ত জিনিসের ক্রিয়াকলাপের নির্দেশাবলী ধারণ করে।

Q3. কোথায় আরএনএ জিন রূপে কাজ করে

Ans – RNA ভাইরাসের ক্ষেত্রে RNA জেনেটিক বস্তু হিসাবে থাকে।

Q4. আরএনএ কি

Ans – সজীব কোশে উপস্থিত রাইবোজ শর্করা যুক্ত একতন্ত্রী যে নিউক্লিক অ্যাসিড প্রধানত প্রোটিন সংশ্লেষে সহায়তা করে , তাকে আরএনএ বলে।

Q5. ডিএনএ-কে ‘বংশগতির ধারক বা বাহক’ বলা হয় কেন?

Ans – ডিএনএ কে বংশগতির ধারক বা বাহক বলা হয় কারণ এই ডিএনএ এর লোকাসে যে জিন রয়েছে সেখানে মানুষের বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে থাকে যা ডিএনএ এর সাহায্যে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বৈশিষ্ট্য গুলো সঞ্চালন হয়ে থাকে যার কারণে ডিএনএ কে বংশগতির ধারক বা বাহক বলা হয়

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version