Site icon prosnouttor

কলা কাকে বলে, টিস্যু কাকে বলে

কলা কাকে বলে, টিস্যু কাকে বলে

কলা কাকে বলে, টিস্যু কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

কলা কাকে বলে, টিস্যু কাকে বলে

প্রতিটি জীবদেহ বিভিন্ন আকৃতির অসংখ্য কোষ দ্বারা গঠিত। এসব কোষের কাজও বিভিন্ন রকমের। কাজের বিভিন্নতার জন্যই কোষগুলো পরিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে। তবে একই আকার ও আকৃতির কিছু সংখ্যক কোষ গুচ্ছবদ্ধ হলে একই ধরনের কাজ করতে দেখা যায়। এদের উৎসও এক। এ গুচ্ছবদ্ধ কোষগুলোকে টিস্যু বলা হয়।

অর্থাৎ অবিচ্ছিন্ন ও সুসংগঠিত একগুচ্ছ কোষ যাদের উৎপত্তি এবং প্রধান প্রধান কাজ একই প্রকার সে কোষগুচ্ছকে টিস্যু বলা হয়।

কাজেই টিস্যু বলতে আমরা এমন একগুচ্ছ কোষকে বুঝি যে কোষগুলো একই স্থান থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং সংঘবদ্ধভাবে অবস্থান করে একই কাজ সম্পন্ন করে।

জীবদেহের গঠন ও কাজের একককে কোষ বলে। বহুকোষী জীবে বিভিন্ন ধরনের কোষ থাকে। প্রাণীর জীবন ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সকল প্রকার কোষের পারস্পারিক সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। জীবের সমস্ত জৈবনিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনের জন্য কোষ বিশেষায়িত হয়ে শ্রম বিভাজনের অবতারণা করে।

ফলশ্রুতিতে জীব দেহে বিভিন্ন ধরনের কলার আবির্ভাব ঘটে। টিস্যু বা কলাকে নিম্নোক্তভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়:

“যেসব কোষ একই স্থানে থেকে উৎপত্তি লাভ করে একই ধরনের কার্য সম্পাদন করে এরুপ কোষগুচ্ছকে কলা বা টিস্যু বলে।”

কলার প্রকারভেদ, টিস্যু কত প্রকার, টিস্যু কত প্রকার ও কি কি

এই টিস্যু উদ্ভিদ ও প্রাণীর উভয়ের মধ্যে রয়েছে। গঠন ও কাজের ভিত্তিতে প্রাণিদেহে কলাসমূহকে নিম্নোক্তভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

১। আবরনী কলা

২। যোজক কলা

৩। পেশী কলা

৪। স্নায়ু কলা এবং

৫। জনন কলা

উদ্ভিদ টিস্যু প্রধানত দু’প্রকার। যথা-

১. ভাজক টিস্যু এবং

২. স্থায়ী টিস্যু।

টিস্যুর কাজ কি

আরও পড়ুন :- কোষ কাকে বলে

উদ্ভিদ টিস্যু কত প্রকার ও কি কি

উদ্ভিদ টিস্যু প্রধানত দু’প্রকার। যথা-

১. ভাজক টিস্যু এবং

২. স্থায়ী টিস্যু।

ভাজক টিস্যু কাকে বলে

বিভাজনে সক্ষম কোষ দ্বারা গঠিত টিস্যুকেই ভাজক টিস্যু বলা হয়। ভাজক টিস্যুর কোষগুলোকে ভাজক কোষ বলা হয়।

গঠন :-

ভাজক টিস্যু সাধারণত অত্যন্ত ক্ষুদ্র, আয়তাকার, ডিম্বাকার বা বহুভুজাকার। এদের কোষে অধিক পরিমান সাইটোপ্লাজম থাকে এবং এতে কোন গহ্বর থাকে না অথবা থাকলেও অত্যন্ত ক্ষুদ্র। এদের নিউক্লিয়াস বেশ বড় কোষ প্রাচীর অত্যন্ত পাতলা এবং দুটি কোষের মধ্যে আন্তকোষীয় ফাঁক থাকেনা।

ভাজক টিস্যুর অবস্থান :-

সাধারণত উদ্ভিদ দেহের যে স্থানে উদ্ভিদ বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ মূল, কান্ড ও পাতার অগ্রভাগে থাকে।

ভাজক টিস্যুর কাজ :-

১. ভাজক টিস্যুর বিভাজনের ফলে উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ এরা লম্বা হয় এবং এদের ব্যাস বৃদ্ধি পায়।

২. ভাজক টিস্যু থেকে স্থায়ী টিস্যু সৃষ্টি হয়।

ভাজক টিস্যুর শ্রেণীবিভাগ :-

উৎপত্তি, অবস্থান, কাজ, বিভাজন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ভাষক টিস্যুতে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়।

১. উৎপত্তি অনুসারে ভাজক টিস্যুর প্রকারভেদ :-

উৎপত্তি অনুসারে ভারাক টিস্যু দুই প্রকার

ক) প্রাথমিক ভাজক টিস্যু ও

খ) সেকেন্ডারী ভাজক টিস্যু।

ক) প্রাথমিক ভাজক টিস্যু (Primary Tissue) :

যে ভাজক টিস্যু উদ্ভিদের প্রভাবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে প্রাথমিক ভাজক টিস্যু বলে। উদ্ভিদের মূল, কান্ড ও পাতার অভাগে ভাজক টিস্যু থাকে। এদের বিভাজনের ফলে উদ্ভিদ দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায়। প্রাথমিক ভাজক টিস্যু থেকে প্রাইমারী স্থায়ী টিস্যুর সৃষ্টি হয়।

খ) সেকেণ্ডারী ভাজক টিস্যু (Secondary Tissue) :

সাধারণভাবে স্থায়ী টিস্যু বিভাজনক্ষম না। উদ্ভিদের সেকেন্ডারী বৃদ্ধির জন্য কোন কোন স্থায়ী টিস্যুর কোষগুলি বিভাজন ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে যে ভাজক টিস্যু সৃষ্টি করে তাকে সেকেন্ডারী ভাজক টিস্যু বলে। যেহেতু এর যেসব কোষের বিভাজন ক্ষমতা নেই, সেসব টিস্যু থেকে উৎপন্ন হয় সেজন্যে এদের সেকেন্ডারী ভাজক টিস্যু বলা হয়।

সেকেন্ডারী ভাজক টিসু সবসময় পার্শ্বীয়। ইন্টার ফ্যাসিকুলার ক্যামবিয়াম, ফেলোজেন বা কর্ক ক্যামবিয়াম হচ্ছে সেকেন্ডারী ভাজক টিস্যু।

২. অবস্থান অনুসারে ভাজক টিস্যুর প্রকারভেদ :-

অবস্থান অনুসারে প্রাথমিক ভাজক টিস্যুকে তিনভাগে ভাগ করা হয়।

ক) শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যু

খ) ইন্টারক্যালারী বা নিবেশিত ভাজক টিস্যু ও

গ) পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যু।

ক) শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যু (Apical Meristems) :

যে ভাজক টিস্যু উদ্ভিদের মূল, কান্ড বা শাখা প্রশাখার শীর্ষে থাকে তাদের শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যু বলে। এরা প্রাইমারি টিস্যু এদেরকে আদি ভাজক টিস্যুৎ (pro-meristem) বলা হয়।

এ টিস্যুর বিভাজনের ফলে উদ্ভিদের মূল, কাণ্ড ইত্যাদি দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায়। এরা প্রাথমিক স্থায়ী টিস্যু তৈরি করে। উন্নত শ্রেণীর উদ্ভিদের শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যু একাধিক কোষ দিয়ে গঠিত।

খ) ইন্টারক্যালারী বা নিবেশিত ভাজক টিস্যু (Intercalary Meristems) :

যে ভাজক টিস্যু দুটি স্থায়ী টিস্যুর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে তাকে ইন্টারক্যালারী বা নিবেশিত ভাজক টিস্যু বলে।

এরা শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যুর অংশ কিন্তু এর নিম্নে বা উর্ধে স্থায়ী টিস্যু উৎপন্ন হওয়ার ফলে এরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এরা প্রাইমারী টিসু উদ্ভিদের পত্রমূলে, মধ্যপর্বের গোড়ায় বা পর্বসন্ধির নীচে থাকতে পারে। Equisetum গাছে, পাইন গাছ, ঘাসসহ একবীজপত্রী অনেক উদ্ভিদের পাতায় ও কাজে এই প্রকার ভাজক টিস্যু পাওয়া যায়।

গ) পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যু (Lateral Meristems) :

যে ভাজক টিস্যু উদ্ভিদের মূল বা কান্ডের পার্শ্ব বরাবর লম্বাভাবে অবস্থান করে তাদেরকে পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যু বলা হয়।

এ টিস্যুগুলিও দুটি স্থায়ী টিস্যুর মাঝখানে অবস্থিত এ টিস্যুর বিভাজনের ফলে উদ্ভিদের দেহ গ্রন্থে বৃদ্ধি পেয়ে মোটা হয়। ক্যাম্বিয়াম ও কর্ক ক্যামবিয়াম পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যু।

পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যু দুই প্রকারের যথা :

(১) প্রাথমিক পার্শ্বীয় ভায়াক টিস্যু ও

(২) সেকেন্ডারী পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যু

ভাজক টিস্যুর বৈশিষ্ট্য

১. এই টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে সক্ষম।

২. কোষগুলো জীবিত এবং অপেক্ষাকৃত ছোট।

৩. এরা আয়াতাকার,ডিম্বাকার,পঞ্চভুজ বা ষড়ভুজ আকার হয়ে থাকে।

৪. কোষের মধ্যে কোনো আন্তঃকোষীয় ফাঁক থাকে না৷

৫. কোষের নিউক্লিয়াস অপেক্ষাকৃত বড় এবং ঘন সাইটোপ্লাজমে পূর্ণ।

স্থায়ী টিস্যু কাকে বলে, স্থায়ী টিস্যু কাকে বলে

ভাজক টিস্যু থেকে উৎপন্ন যে টিস্যুগুলো বিভাজনে অক্ষম তাদেরকে বলা হয় স্থায়ী টিস্যু।

ভাজক টিস্যুগুলো বিভাজন ক্ষমতা লোপ পাওয়ার পর তা বৃদ্ধি পেয়ে একটি নির্দিষ্ট আকার ধারণ করে এবং স্থায়ী টিস্যুতে পরিণত হয়। স্থায়ী টিস্যুর কোষগুলো বিভাজন ক্ষমতাহীন, পূর্ণভাবে বিকশিত এবং সঠিক আকৃতিপ্রাপ্ত। এদের কোষ প্রাচীর অপেক্ষাকৃত পুরু, নিউক্লিয়াস আকারে ছোট এবং সাইটোপ্লাজম কম। এদের কোষ গহবর থাকে এবং পাশাপাশি কোষের মাঝে আন্তঃকোষীয় ফাঁকা স্থান থাকতে পারে।

গঠন এবং কাজের উপর নির্ভর করে স্থায়ী টিস্যুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

ক) সরল টিস্যু

খ) জটিল টিস্যু এবং

গ) ক্ষরণকারী টিস্যু।

সরল টিস্যু কাকে বলে

যে স্থায়ী টিস্যু একই প্রকার কোষ দ্বারা গঠিত, একই উৎসস্থল থেকে উৎপন্ন হয় এবং একই ধরনের কাজ সম্পন্ন করে তাকে সরল টিস্যু বলা হয়।

আকৃতি ও প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে সরল টিস্যুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

i. প্যারেনকাইমা,

ii. কোলেনকাইমা এবং

iii. স্ক্লেরেনকাইমা।

স্থায়ী টিস্যুর বৈশিষ্ট্য

১৷ খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবহন করা।

২। দেহ গঠন ও উদ্ভিদ কে দৃঢ়তা প্রদান করা।

জটিল টিস্যু কাকে বলে

এ টিস্যুর আসল কাজ মাটি থেকে পানি ও অজৈব লবণ পরিবহন করে পাতায় পৌঁছানো এবং পাতায় যে খাদ্য প্রস্তুত হয় তা পরিবহন করে উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন অংশে পৌঁছানো। এদের কাজ পরিবহন বলে এ টিস্যুকে পরিবহন টিস্যুও বলা হয়।

জটিল টিস্যু দু’প্রকার। যথা-

i. জাইলেম টিস্যু ও

ii. ফ্লোয়েম টিস্যু।

গ) ক্ষরণকারী টিস্যু :

উদ্ভিদদেহে সরল ও জটিল টিস্যু ছাড়াও বিশেষ ধরনের কাজ করার জন্য বিশেষ কিছু টিস্যু আছে। যে সব টিস্যু থেকে নানা রকম উৎসেচক, বর্জ্য পদার্থ ইত্যাদি নিঃসৃত হয় তাদেরকে ক্ষরণকারী টিস্যু বলা হয়।

ক্ষরণকারী টিস্যু দু’প্রকার। যথা-

i. তরুক্ষীর টিস্যু ও

ii গ্রন্থি টিস্যু।

সরল টিস্যু ও জটিল টিস্যুর মধ্যে পার্থক্য

পার্থক্যের বিষয়সরল টিস্যুজটিল টিস্যু
১। গঠনসরল টিস্যু একই ধরনের কোষ দ্বারা গঠিত।জটিল টিস্যু বিভিন্ন ধরনের কোষ দ্বারা গঠিত।
২। প্রকৃতিএ টিস্যু সমসত্ত্ব প্রকৃতির।এ টিস্যু অসমসত্ত্ব প্রকৃতির।
৩। নালিকা বান্ডিলএ টিস্যু নালিকা বান্ডিল গঠন করে না।এ টিস্যু নালিকা বান্ডিল গঠন করে। 
৪। প্রকারভেদসরল টিস্যু তিন প্রকার। যথা-প্যারেনকাইমা, কোলেনকাইমা ও স্ক্লেরেনকাইমা।জটিল টিস্যু দুই প্রকার। যথা-জাইলেম ও ফ্লোয়েম।
৫। তন্ত্র গঠনত্বক, অধঃত্বক, অন্তঃত্বক, কর্টেক্স, মজ্জা ইত্যাদি তন্ত্র গঠন করে।জটিল টিস্যু মিলিতভাবে উদ্ভিদের পরিবহন অঙ্গ গঠন করে।
৬। কাজদৃঢ়তা প্রদানে সহায়তা করে।পানি ও খাদ্যরস সংবহন করে ও দৃঢ়তা প্রদান করে। 
সরল টিস্যু ও জটিল টিস্যুর মধ্যে পার্থক্য

প্রাণী কলা কাকে বলে

আকৃতি, উৎপত্তিস্থান ও কার্যপ্রণালী এক, প্রাণীদেহে এরূপ কোশ সমষ্টিকে প্রাণী কলা বলে। ‘কলা’ শব্দটি জীব বিজ্ঞানে প্রথম প্রচলন করেন Bichet যদিও Marcello Malpighi কলার উপর পড়াশোনার জন্য হিস্টোলজি নামে একটি শাখা খোলেন। Histology শব্দটি প্রবর্তন করেন– Meyer 1819 সালে।

প্রাণী টিস্যু কত প্রকার ও কি কি

কলা প্রধানত চার প্রকার যথা- 1.আবরণী বা এপিথেলীয় কলা- আচ্ছাদনকারী এবং গ্রন্থিময় কলা। 2. যোগ কলা -বহনকারী কলা। 3. পেশি কলা- সংকোচনশলী কলা। 4. স্নায়ু কলা- স্পন্দন সৃষ্টি ও পরিবহণ কলা।

কলার উৎস

1. এপিথেলিয়াম কলা- এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম এবং এন্ডোডার্ম থেকে। 2.  যোগ কলা বা যোজক কলা- মেসোডার্ম থেকে। 3. পেশিকলা- মেসোডার্ম থেকে। 4. স্নায়ুকলা- এক্টোডার্ম থেকে।

আবরণী কলা, আবরণী কলা কাকে বলে

এপিথেলিয়াম শব্দটি গ্রিক শব্দ epi = upon এবং thelio = grows থেকে সৃষ্টি হয়েছে। ডাচ anatomist Ruysch প্রথম এই কলা পর্যবেক্ষণ করেন। এপিথিলিয়াম কলা কোশের চাদর যা দেহ-পরিধিকে এবং অঙ্গাদির মুক্ত তলকে ঢেকে রাখে। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গে এপিথেলীয় কলার নিরবচ্ছিন্ন আবরণ থাকে শুধু তাই নয়, দেহের বহিঃতলও এপিথেলীয় কলা দ্বারা আবৃত। এই কলার কোশগুলি এক বা একাধিক স্তরে সজ্জিত থাকে। আন্তঃকোশীয় শূন্যস্থান থাকে না। কোশগুলি অকোশীয় ভিত্তিপর্দার উপর সজ্জিত থাকে। রাসায়নিক ভাবে ভিত্তিপর্দা হলো মিউকোপলিস্যাকারাইড। ব্যাপন পদ্ধতিতে এপিথেলীয় কলার মাধ্যমে বিভিন্ন বস্তুর বিনিময় ঘটে। এই কলার কোশগুলি পরপর এক প্রকার খুব অল্প পরিমাণ সংযোজক পদার্থ দ্বারা যুক্ত থাকে। এই কলায় সংবহন তন্ত্র অনুপস্থিত, তবে কিছু স্নায়ুসূত্র এবং সঞ্চারণশীল কোশ থাকে। ধাত্র বস্তু খুবই কম। এই কলায় খাদ্যবস্তু বহন করে আন্তঃকোশ তরলই।

আবরণী কলা কাকে বলে

যে কলা প্রাণীদেহের ত্বক ও বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের মুক্ত তলে আবরণী বা আচ্ছাদন তৈরি করে, তাকে আবরণী কলা বা এপিথেলীয় কলা বলে।

আবরণী কলার বৈশিষ্ট্য

এই কলার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য গুলি হলো –

i. এই কলা তিনটি জৈবিক স্তর থেকে অর্থাৎ এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম এবং এন্ডোডার্ম থেকে উৎপন্ন হয়।

ii. এই কলার কোশগুলি ঘন সন্নিবিষ্ট থাকে এবং একে অপরকে স্বল্প আন্তঃকোশীয় ধাত্র দ্বারা ধরে রাখে; আবার অনেক ক্ষেত্রে আন্তঃকোশীয় ধাত্র নাও থাকতে পারে।

iii. এপিথেলীয় কোশ স্বচ্ছ অকোশীয় ভিত্তিপর্দার উপর অবস্থান করে। এতে কোলাজেন নামে একপ্রকার বিশেষ ধাত্র-প্রোটিন থাকে।

iv. এই কলার কোশগুলি বিভিন্ন আন্তঃকোশীয় সন্ধি দ্বারা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে।

v. এপিথেলীয় কোশ কোশতলের বিশিষ্টতা প্রদর্শন করে, যথা- মাইক্রোভিল্লি, সিলিয়া, ফ্ল্যাজেলা, স্টিরিওসিলিয়া, কাইনোসিলিয়া ইত্যাদি।

vi. এপিথেলীয় কোশ বিনষ্ট হতে পারে, ছিঁড়ে যেতে পারে, আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে।

vii. এর কোশগুলি মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত কোশগুলির স্থানে নতুন কোশ উৎপাদন করে।

viii. কোশগুলি এক বা একাধিক স্তরে সজ্জিত থেকে কোন অঙ্গ বা দেহগহ্বরের গাত্র বা বিভিন্ন অঙ্গের লুমেনকে আবৃত করে।

ix. পাশাপাশি কোশগুলি আন্তঃকোশীয় ফিলামেন্ট দ্বারা পরস্পর সংলগ্ন থাকে।

যোজক কলা বা যোগ কলা

যোজক কলা বা যোগ কলা দেহের বিভিন্ন অঙ্গসমূহের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে, এজন্য একে binding tissue বলে। যোজক কলা সমগ্র দেহের শতকরা 30 ভাগ। মেসোডার্ম থেকে যোজক কলা উৎপন্ন হয়।

যোগ কলা কাকে বলে

যে কলা দেহের বিভিন্ন কলা ও অঙ্গসমূহের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে, তাকে যোগ কলা বলে।

যোগ কলার বৈশিষ্ট্য

এই কলার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য গুলি হলো-

i. যোজক কলা আদি ভ্রূণের মেসোডার্ম থেকে উৎপন্ন হয়।

ii. এই কলার ধাত্রের (অন্তঃকোশীয় পদার্থ) পরিমাণ বেশি এবং কোশের সংখ্যা কম।

iii. অন্তঃকোশীয় পদার্থ তরল, অর্ধকঠিন বা কঠিন হতে পারে।

iv. অন্তঃকোশীয় পদার্থে বিভিন্ন প্রকার তত্ত্বজাতীয় উপাদান থাকতে পারে।

যোগ কলার কাজ

এই কলার কাজ গুলি হলো –

i. যোজক কলা বিভিন্ন কলাকে একত্রে বন্ধন ঘটায় এবং যথাযথ অবস্থান বজায় রাখে।

ii. মৃত এবং বিনষ্ট কলাকে প্রতিস্থাপিত করতে সাহায্য করে এবং এভাবে পুনরুৎপাদন এবং কলা মেরামতিতে সাহায্য করে।

iii. ইহা দেহের প্রতিরক্ষায় সাহায্য করে এবং দেহের প্রবেশ করে এমন ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া এবং বিষাক্ত বস্তু থেকে দেহকে রক্ষা করে।

iv. দেহ ধারণ বা অবলম্বন করার জন্য কঙ্কাল তৈরি করে।

v. জেলির মতো ধাত্র shock- absorber-এর কাজ করে।

vi. দেহের কোনো কোনো অংশে ফ্যাট সঞয়ে সাহায্য করে।

পেশি কলা, পেশি টিস্যু কী, পেশি টিস্যু কাকে বলে

পেশি কলা দেহের গমন এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গের আকারের পরিবর্তনের জন্য দায়ী। এর বিশেষত্ব হল এটি বিশেষ ধরনের কোশগুচ্ছ নিয়ে গঠিত, যাকে পেশি কোশ বলে, এবং যাদের প্রাথমিক ভূমিকা হচ্ছে সংকোচন। পেশি কোশগুলি লম্বাটে এবং সমান্তরাল ভাবে থাকে এবং কার্যকারী এককরূপে কাজ করে। পেশি কোশের সাইটোপ্লাজমে বেশিরভাগ অংশই দখল করে থাকে দু-ধরনের মায়োফিলামেন্ট যারা সংকোচন কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত।

মায়োফিলামেন্ট দু-রকমের, যথা-

a. পাতলা ফিলামেন্ট  : এগুলি 6-9 nm ব্যাসযুক্ত এবং প্রাথমিকভাবে অ্যাকটিন প্রোটিন দ্বারা গঠিত।

b. পুরু ফিলামেন্ট : এগুলি প্রায় 15 nm ব্যাসযুক্ত এবং মায়োসিন প্রোটিন দ্বারা গঠিত।

পেশি কলার উৎস

i. পেশি কলা উৎপন্ন হয় মেসোডার্ম নামক ভ্রূণস্তর থেকে।

ii. এক্টোডার্ম নামক ভ্রূণস্তর থেকে উৎপন্ন হয় লোমকূপের গোড়ার পেশি, স্ফিংটার, ডায়ালেটর পিউপিলী এবং আইরিশ, ঘর্মগ্রন্থির মায়োএপিথেলীয় কোশ।

পেশি কলা কাকে বলে

মায়োফাইব্রিলযুক্ত পেশি কোশ দ্বারা গঠিত সংকোচনশীল কলাকে পেশি কলা বলে।

পেশি কলার বৈশিষ্ট্য

এই কলার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য গুলি হলো

i. পেশি কলা পেশি কোশ (পেশিতন্তু), যোগ কলা, স্নায়ু এবং স্নায়ুপ্রান্ত দ্বারা গঠিত।

ii. পেশি কোশগুলি লম্বাকৃতি হওয়ার জন্য এদের পেশিতন্তুও বলে।

iii. পেশি কলা কতকগুলি পেশি কোশ দ্বারা গঠিত।

iv. কোশে একাধিক নিউক্লিয়াস থাকে।

v. স্থিতিস্থাপকতা, সংবহনশীলতা পেশি কলার ধর্ম।

vi. পেশি কলার শক্তির উৎস খাদ্যের বিপাকজনিত শক্তি থেকে।

vii. পেশি কোশের সাইটোপ্লাজমকে বলে সারকোপ্লাজম এবং কোশাবৃত পর্দাকে বলে সারকোলেমা। সারকোমিয়ার হল পেশি কোশের সংকোচনশীল একক।

viii. পেশি কলা রাসায়নিক শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে।

স্নায়ুকলা

উচ্চশ্রেণির প্রাণীতে যেসব কোশ স্নায়ুকলা গঠন করে সেগুলির গঠন বৈশিষ্ট্য হল দেহের এক অংশের সংবাদ গ্রহণ এবং অপর দেহাংশে সংবাদ প্রেরণ। পরিবেশের যে-কোনো পরিবর্তন বা দেহের ভেতরের কোনও পরিবর্তন উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। কোনো প্রদত্ত উদ্দীপনায়, এই কোশগুলি উত্তেজিত হয় এবং উদ্দীপনা স্নায়ু তন্তু মারফত নির্দিষ্ট অঙ্গে পরিবাহিত হয়। সুতরাং উত্তেজিতা এবং সংবাহিতা এই দুটি হল স্নায়ুকলার প্রাথমিক ধর্ম। স্নায়ুকলা প্রধানত স্নায়ুকোশ ও স্নায়ুতন্তু দিয়ে গঠিত।

স্নায়ুকলা কাকে বলে

স্নায়ুকোশ দ্বারা গঠিত যে কলা যা প্রাণীদেহে বিভিন্ন উদ্দীপনা গ্রহণ, উদ্দীপনা প্রেরণ, উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়া ইত্যাদি কাজগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত,তাকে স্নায়ু কলা বলে।

স্নায়ুকলার কাজ

এই কলার কাজ গুলি হলো – 

i. তড়িৎ রাসায়নিক পদ্ধতিতে জীবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ এবং তাদের কাজের মধ্যে সংহতি সাধন করে স্নায়ু কলা।

ii. অ্যাক্সন অপর নিউরোনের ডেনড্রনের কাছে বিন্যস্ত হয়, বা অ্যাক্সন পেশিতন্তুর মধ্যে প্রবেশ করে। এই সংযোগস্থলকে সাইন্যাপস বলে।

iii. এক প্রকার রাসায়নিক বস্তু সাইন্যাপসের ডেনড্রন ও অ্যাক্সনের শাখা-প্রশাখার মধ্যে যোগসূত্র ঘটায়। এই রাসায়নিক পদার্থটিকে নিউরোহিউমর বলে। বিভিন্ন স্নায়ুপ্রেরক পদার্থ, যথা- অ্যাসিটাইল কোলিন, নর-অ্যাড্রিনালিন স্নায়ুকলাতে সর্বদা একই দিকে স্নায়ু সংবেদ ইত্যাদি পরিবাহিত করে।

ভাজক টিস্যু ও স্থায়ী টিস্যুর পার্থক্য

পার্থক্যের বিষয়ভাজক টিস্যুস্থায়ী টিস্যু
১। টিস্যুর ধরনউদ্ভিদের ভ্রূণাবস্থাতেই প্রাথমিক ভাজক টিস্যুর জন্ম হয়। কাজেই এ টিস্যু উদ্ভিদ দেহের আদি টিস্যু।ভাজক টিস্যু থেকেই স্থায়ী টিস্যুর  জন্ম হয়। কাজেই হয়। এ টিস্যু কখনই আদি টিস্যু নয়।
২। বিভাজন ক্ষমতাএ টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে সক্ষমএ টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে অক্ষম।
৩। কোষের ধরনএ টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে সক্ষমএ টিস্যুর কোষগুলো পরিণত।
৪। টিস্যুর অবস্থানপ্রাথমিক ভাজক টিস্যুর অবস্থান উদ্ভিদের বর্ধিষ্ণু অঞ্চলে।বর্ধিষ্ণু অঞ্চলে স্থায়ী টিস্যু থাকে না। বর্ধিষ্ণু অঞ্চলের পেছনে এদের অবস্থান।
৫। নিউক্লিয়াসকোষের নিউক্লিয়াস আকারে বড়।কোযের নিউক্লিয়াস আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট।
৬। নিউক্লিয়াসের অবস্থাননিউক্লিয়াস কোষের কেন্দ্রে অবস্থান করে এবং সাইটোপ্লাজম ঘনীভূত অবস্থায় থাকে।নিউক্লিয়াস কোষের এক পার্শ্বে অবস্থান করে এবং সাইটোপ্লাজম ততটা ঘনীভূত অবস্থায় থাকে না
৭। উদ্ভিদ দেহে অবস্থাননিউক্লিয়াস কোষের কেন্দ্রে অবস্থান করে এবং সাইটোপ্লাজম ঘনীভূত অবস্থায় থাকে।উদ্ভিদ দেহের বৃদ্ধিতে এ টিস্যুর ভূমিকা কম।
৮। যান্ত্রিক দূরত্বযান্ত্রিক কাজে এ টিস্যুর ভূমিকা সামান্য।এ টিস্যু উদ্ভিদ দেহের যান্ত্রিক দৃঢ়তা বাড়ায়।
৯। খাদ্য তৈরিএ টিস্যু কখনো খাদ্য তৈরি করে না।ক্লোরোপ্লাস্টযুক্ত স্থায়ী টিস্যু খাদ্য তৈরি করে।
১০। পরিবহনখাদ্য পরিবহনে এ টিস্যুর কোন ভূমিকা নেই।ভাস্কুলার বান্ডল গঠনকারী জাইলেম ও ফ্লোয়েম নামক স্থায়ী টিস্যু যথাক্রমে পানি ও উৎপাদিত খাদ্য পরিবহন করে।
১১। কোষাবকাশটিস্যুতে সাধারণত কোষাবকাশ  থাকে না।টিস্যুতে সাধারণত কোষাবকাশ  থাকে।
ভাজক টিস্যু ও স্থায়ী টিস্যুর পার্থক্য
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | টিস্যু, কলা

Q1. কলা কি, টিস্যু কি

Ans – উৎপত্তির দিক থেকে কতগুলো কোষ আয়তনে ও আকৃতিতে অভিন্ন বা ভিন্ন হওয়া সত্তেও যদি দলগত ভাবে একই ধরনের কাজ করে তখন সেই দলবদ্ধ কোষগুলোকে টিস্যু বলে।

Q2. টিস্যু কালচার এর জনক কে

Ans – টিস্যু কালচার এর জনক গট্টিলিয়েব হ্যাবারল্যান্ড।

Q3. প্যারেনকাইমা টিস্যুর কাজ কি

Ans – খাদ্য প্রস্তুত, খাদ্য সঞ্চয় ও খাদ্য পরিবহন প্যারেনকাইমা টিস্যুর কাজ।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version