Site icon prosnouttor

ভূমিকম্প কাকে বলে, ভূমিকম্পের কারণ ও ফলাফল

ভূমিকম্প কাকে বলে

ভূমিকম্প কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

ভূমিকম্প কাকে বলে

পৃথিবীর কঠিন ভূত্বকের কোন কোন অংশ প্রাকৃতিক কোন কারণে কখনো কখনো অল্প সময়ের জন্য হঠাৎ কেঁপে ওঠে। ভূত্বকের এরূপ আকস্মিক কম্পনকে ভূমিকম্প বলে। ভূকম্পন সাধারণত কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়, আবার কখনো কিছু সময় পর পর অনুভূত হয়। এ কম্পন কখনো অত্যন্ত মৃদু আবার কখনো অত্যন্ত প্রচন্ড হয়।

ভূ-অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম ভাবে সৃষ্টি হওয়া কোন কম্পন যখন আকস্মিকভাবে ভূপৃষ্ঠের কিছু অংশকে ক্ষণিকের জন্য প্রচন্ড বা মৃদু আন্দোলিত করে তখন তাকে ভূমিকম্প বলে। ভূপৃষ্ঠ থেকে সাধারণত 5-700 কিমি গভীরতায় ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। পৃথিবীতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ লক্ষ বার ভূমিকম্প হয়।

একটি শান্ত পুকুরে টিল ছুড়লে যেভাবে ঢেউ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তেমনি পৃথিবীর অভ্যন্তরে যেখানে তরঙ্গ শক্তি উৎপত্তি হয় সেখানে থেকে মুক্ত শক্তি টেউয়ের মত শিলায় তরঙ্গের সৃষ্টি করে এবং চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

ভূমিকম্পের কারণ ও ফলাফল

ভূমিকম্পের কারণ

হু বছর ধরে ভূমিকম্পের কারণসমূহ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিম্নলিখিত কারণসমূহ সনাক্ত করেছেন। যথা

পাত সঞ্চালন

সঞ্চালনশীল মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় পাতসমূহের গতিশীলতার সময় যখন পরস্পরের সাথে সংঘর্ষ হয় তখন ভূমিকম্প হয়। তাই পৃথিবীর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলো পাতসীমা বরাবর অবস্থিত।

এছাড়া সঞ্চালনশীল পাত দুটি পরস্পর থেকে দূরে সরে যায় বা সামনে-পিছনে গতিশীল হয় তখন ভূ-গর্ভে চাপের তারতম্য ঘটে এবং ভূমিকম্প হয়।

ভূ-পাত

পাহাড়-পর্বত হতে বৃহৎ শিলাখন্ড ভূ-ত্বকের উপর বসে পড়লে ভূমিকম্প হয়। ভূ-পাত বা ভূমি ফলসের কারণ হলো নবীন ভাজ পর্বতের শিলাগুলো পরস্পর দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত নয়।

যেমন- ১৯১১ সালে তুরষ্কে ভূমিকম্প হওয়ার কারণ ছিল পামীর মালভূমিকে বিশাল ভূ-পাত।

শিলাচ্যুতি বা শিলাতে ভাঁজের সৃষ্টি

পৃথিবীর অভ্যন্তরে শিলাচ্যুতি বা শিলাতে ভাঁজের সৃষ্টি হলে ভূ-ত্বকের কোনো অংশ উপরে উত্থিত হয় বা নিচে বসে যায় এবং চ্যুতির সমতলে প্রবল ঘর্ষন সৃষ্টি হয় ও ভূমিকম্প হয়। ১৯৫০ সালে আসামে এ কারণেই ভূমিকম্প হয়েছিল।

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত

আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাতের সময় জ্বালামুখ দিয়ে প্রবলবেগে বাষ্প, লাভা প্রভৃতি বের হতে থাকে ও প্রবল ভূমিকম্প হয় ।

তাপ বিকিরণ

তাপ বিকিরণের ফলে ভূ-ত্বক সংকুচিত হয়। এই সংকোচনের দরুণ ভূ-ত্বকে ফাউল ও ভাঁজ সৃষ্টির সময় ভূমিকম্প হয়।

ভূ-গর্ভস্থ বাষ্প

ভূ-গর্ভে সৃষ্ট বাষ্প ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে তা ভূ-ত্বকের নিম্নভাগে ধাক্কা দেয় এবং এই সময় প্রবল ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

ভূ-গর্ভস্থ চাপের হ্রাস

ভূ-গর্ভে হঠাৎ চাপ হ্রাস পেলে পৃথিবীর মধ্যকার পদার্থ কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় পরিণত হয় এবং ভূ-গর্ভের নিচের দিকে নামতে থাকে। এতে ভূ-ত্বক কেঁপে ওঠে।

ভূ-অভ্যন্তরে ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি প্রবেশ

ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে বাষ্পে পরিণত হয়। কারণ ভূ-অভ্যন্তর এখনও প্রচন্ড উত্তপ্ত। এই বাষ্পের পরিমাণ অধিক হলে, ভূ-ত্বকের নিচে ধাক্কা দেয় এবং ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে।

হিমবাহের প্রভাব

পর্বতগাত্র থেকে বৃহৎ আকারের হিমবাহ হঠাৎ নিচে পতিত হলে ভূ-পৃষ্ঠ কেঁপে ওঠে এবং ভূমিকম্প হয়।

ভূমিকম্পের ফলাফল

ফাটল ও চ্যুতির সৃষ্টি

ভূমিকম্পের দরুন ভূ-ত্বকে অসংখ্য ফাটল ও চ্যুতির সৃষ্টি হয়। ভূ-ত্বকে চ্যুতি সৃষ্টির ফলে চ্যুতির মধ্যবর্তী ভূ-ভাগ নিচের দিকে নেমে যায়, যাকে গ্রস্ত উপত্যকা (Rift Valley) বলে এবং যখন উপরের দিকে ওঠে যায় তখন তাকে হর্স্ট (Horst) বা স্তুপ পর্বত বলে।

সমুদ্রতলের পরিবর্তন

ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রতলের অনেক স্থান ওপরে উত্থিত হয় এবং স্থলভাগের অনেক স্থান সমুদ্রতলে ডুবে যায়। যেমন- ১৯২১ সালের ভূমিকম্পের ফলে টোকিও উপসাগরের তলদেশ ৬০ মিটার উঁচু হয়। এছাড়া সমুদ্রগর্ভ হতে হিমালয় পর্বত উত্থিত হয়েছে। অপরদিকে ১৮৯৯ সালে ভারতে কাচ্ছ উপসাগরের ৫০০০ বর্গকিলোমিটার স্থান সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয়।

নদীর গতিপথ পরিবর্তন

ভূমিকম্পের ফলে নদীর গতি পরিবর্তিত হয়, নদী শুকিয়ে যায় কখনও জলাভূমির সৃষ্টি হয়।

যেমন- ১৯৫০ সালে আসামের ভূমিকম্পে দিবং নদীর গতি পথ পরিবর্তিত হয়। এছাড়া ১৭৮৭ সালে ভারতের আসাম রাজ্যে যে ভূমিকম্প হয় তার ফলে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যায়। এজন্য ব্রহ্মপুত্র নদীটি তার গতিপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনা খাত দিয়ে প্রবাহিত হয়।

ভূমির উত্থান ও অবনমন

ভূমিকম্পের ফলে উচ্চভূমি সমুদ্রের পানিতে নিমজ্জিত হয় অথবা সমভূমি অঞ্চল অবনমিত হয় এবং পানি জমে হ্রদের সৃষ্টি করে। সমুদ্রের তলদেশের কোনো স্থান উঁচু হয়ে সমুদ্রের মধ্যে দ্বীপের সৃষ্টি করে।

ভাঁজের সৃষ্টি

ভূমিকম্পের ফলে ভূ-পৃষ্ঠে ভাঁজের সৃষ্টি হয়।

হিমানী সম্প্রপাত

ভূ-কম্পনের ফলে পর্বতগাত্র থেকে বৃহৎ বরফ খন্ডগুলো নিচে পতিত হয়।

ভূ-পাত

ভূমিকম্পের ফলে পার্বত্য অঞ্চলের বিশাল শিলাখন্ড নিচে পতিত হয় এবং পর্বতের পাদদেশে ব্যাপক ক্ষতি হয়।

বন্যার সৃষ্টি

ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা কমে যায় অথবা সাথে সাথেই পানির উচ্চতা বেড়ে ১৫-২০ মিটার‌ উঁচু হয়ে ঢেউয়ের আকারে সমুদ্র উপকূলে বন্যার সৃষ্টি করে।

মানবীয় ক্ষয়ক্ষতি

সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাস ও সুনামির জন্য প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধ্বাসের দরুন পাহাড়ের পাদদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অনেক সময় ভূমিতে ফাটল সৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট অকেজো হয়ে পড়ে। নগর এবং গ্রামীন জনপদে বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে মারা যায় গৃহপালিত পশু ও মানুষ।

এছাড়া তড়িৎ বর্তক্ষেপ (Short Circuit) এর কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইনে আগুন ধরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। মূলত ভূমিকম্পের ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক।

ভূমিকম্পের প্রভাব

ভূমিকম্পের তীব্রতা সামান্য হলে তা বেশিরভাগ সময় অনুভূত হয় না। অপরদিকে ভূমিকম্পের তীব্রতা অধিক হলে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটার সাথে সাথে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণ সংকট দেখা দেয়।

তবে ভূমিকম্পের ফলে যেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়, তার পাশাপাশি কিছু গঠনমূলক প্রভাবো লক্ষণীয়। তাই ভূমিকম্পের ফলাফল কে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়, যথা (ক) ধ্বংসাত্মক প্রভাব এবং (খ) গঠন মূলক প্রভাব। 

ভূমিকম্পের ধ্বংসাত্মক প্রভাব

ভূমিকম্পের ধ্বংসাত্মক প্রভাবের ফলে ভূপ্রকৃতির পরিবর্তন ও মানব সভ্যতার প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়। ভূমিকম্পের একাধিক ধ্বংসাত্মক প্রভাবের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য ফলাফল হলো-

  1. ধস নামা

ভূমিকম্পের দরুন পাহাড়-পর্বত অঞ্চলে বহু বার ধস নামতে দেখা যায় যার ফলে ওই অঞ্চলে ঘরবাড়ি গুলির  বিনাশ ঘটে, প্রাণহানিও হয়।

  1. চ্যুতির সৃষ্টি

 ভূমিকম্পের ফলে ভূত্বকে চুক্তির সৃষ্টি হয়। বহু সময় শিলাস্তর নিচে নেমে যায় এবং ওপরে উঠে যায়। ভূত্বকে ফাটলের সৃষ্টি হয়। 

  1. নদীর গতিপথ পরিবর্তন

পার্বত্য অঞ্চলে নদীর পথে ধস নামলে নদীর গতি পরিবর্তিত হয়। ভূমিকম্পের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল ১৯৫০ সালে আসামে গঠিত ভূমিকম্পের প্রভাবে ডিবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন। 

  1. ভূমির উত্থান ও অবনমন

ভূমিকম্পের ফলে উচ্চভূমি সমুদ্রে নিচে চলে যেতে পারে আবার সমুদ্র তলদেশের কিছু স্থান ওপরে উঠে যেতে পারে। ফলে দ্বীপ সৃষ্টি হয়।

  1. সুনামি সৃষ্টি 

সমুদ্রের পাদদেশে ভূমিকম্প সৃষ্টি হলে সাগরে সুনামির সৃষ্টি হয়। বিশাল আকৃতির সমুদ্র ঢেউ উপকূলে আছড়ে পড়ে উপকূল বসতি ধ্বংস হয় এবং উদ্ভিদের নাশ ঘটে।

  1. মানবীয় ক্ষয়ক্ষতি 

উচ্চ তীব্রতা সম্পন্ন ভূমিকম্প কয়েক মুহূর্তের মধ্যে শহর, নগর, জনপদ ধ্বংস করে দেয়। বহু ঘর-বাড়ি, বিল্ডিং, সেতু নিমিষের মধ্যে মাটিতে মিশিয়ে যায়। ভূমিতে ফাটলের সৃষ্টি হয়, বিদ্যুৎ লাইনে শট সার্কিট লাগে, আগুন ধরে যায়।

ভূমিকম্পের গঠনমূলক প্রভাব

 প্রতিটি ধ্বংসাত্মক জিনিসের গঠনমূলক কিছু ভূমিকা থাকে। তেমনি ভূমিকম্পের উল্লেখযোগ্য কিছু গঠনমূলক প্রভাবের উদাহরণ হল-

  1. ভূ অভ্যন্তরীণ তথ্য প্রদান

 ভূ- অভ্যন্তরের গঠনমূলক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে একমাত্র উপায় হল ভূমিকম্প তরঙ্গ। ভূমিকম্পের P,S,L তরঙ্গ দ্বারা পৃথিবীর অভ্যন্তরের চাপ, তাপ, বিযুক্তি রেখা প্রভৃতি সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যায়।

  1. মৃত্তিকা গঠন

ভূমিকম্পের ফলে বহু শিলা পাহাড়-পর্বত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিচে পাতিত হয়। এই শিলা গুলিতে দীর্ঘ সময় ধরে আবহবিকার প্রক্রিয়া চলার তরুণ মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।

  1. খনিজ সম্পদের প্রাপ্তি 

ভূমিকম্পের ফলে ভূত্বকে ফাটলের উৎপত্তি ঘটে। এই ফাটল গুলি থেকে অগ্নুৎপাতের লাভা বেরিয়ে এসে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। বহু ধরনের খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়।

  1. হ্রদের সৃষ্টি

ভূমিকম্পের ফলে অবনমিত ভূমি সৃষ্টি হয়। এই স্থানে জল জমাট বাধার ফলে হ্রদের সৃষ্টি হয়।

ভূমিকম্পের ছবি

ভূমিকম্প মাপার যন্ত্রের নাম কি

ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্রের নাম সিসমোগ্রাফ।

ভূমিকম্প তরঙ্গ কাকে বলে

ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে সৃষ্ট কোন কম্পন যখন তরঙ্গের আকারে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাকে ভূমিকম্প তরঙ্গ বলে। তরঙ্গের বিস্তৃতি, দৈর্ঘ্য ও প্রকৃতি অনুসারে ভূমিকম্প তরঙ্গকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

পৃষ্ঠ তরঙ্গ দুই ধরনের হয়। যথা-

ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও উপকেন্দ্র কাকে বলে

কেন্দ্র: ভূগর্ভের অভ্যন্তরে যে স্থানে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় সেই স্থানকে ভূমিকম্প কেন্দ্র বলে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ঠিক জ্যামিতিক কেন্দ্র বা কোনো বিন্দু নয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ভূত্বকের নানা গভীরতায় হতে পারে। সাধারণত ভূমিকম্পের কেন্দ্র ভূপৃষ্ঠ থেকে নীচে ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করে। তবে স্থান বিশেষে এই গভীরতা ৩৫-৫০ কিলোমিটারও হতে পারে। সাধারণত ভূত্বকের পাললিক শিলা স্তরের নীচে গ্রানাইট ও ব্যাসল্ট শিলা স্তরে ভূমিকম্প ঘটে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে তরঙ্গের মতো চারদিকে ভূকম্পন ছড়িয়ে পড়ে এবং কঠিন ভূত্বককে আঘাত করে। এই কম্পন মৃদু হলে অনেক সময় তা বোঝা যায় না। কিন্তু ভূকম্পন প্রবল হলে তা ভূপৃষ্ঠে বিরাট ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

উপকেন্দ্র: ভূ-অভ্যন্তরে অবস্থিত ভূকম্পন কেন্দ্রের ঠিক সোজাসুজি ওপরে ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত স্থানকে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র বলা হয়। ভূকম্পের কেন্দ্র থেকে উঠে আসা ভূকম্পনের বেগ উপকেন্দ্র থেকে চারদিকে কমতে থাকলেও উপকেন্দ্রের তুলনায় তার কাছাকাছি স্থানে ভূ পৃষ্ঠের বেশি পরিবর্তন হয়— স্বাভাবিক ভাবেই উপকেন্দ্রের নিকটবর্তী স্থানে ভূমিকম্পজনিত ক্ষতিও হয় সবচেয়ে বেশি।

ভূমিকম্পের কেন্দ্র কাকে বলে

ভূ-অভ্যন্তরে যে স্থানে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বা ফোকাস বলে। ভূমিকম্পের এই কেন্দ্র ভূপৃষ্ঠ থেকে সাধারণত 5-700 কিমি গভীরতায় অবস্থান করে। তবে 15 থেকে 65 কিমি গভীরতায় ভূমিকম্পের কেন্দ্র অবস্থান করলে তার তীব্রতা সবথেকে বেশি হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ভূকম্পন তরঙ্গের আকারে স্থিতিস্থাপক ভূত্বকের মধ্য দিয়ে ভূ-পৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়।

ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র কাকে বলে

ভূমিকম্প কেন্দ্রের ঠিক সোজাসুজি উপরে অবস্থিত যে বিন্দুতে ভূমিকম্প তরঙ্গ প্রথম এসে পৌঁছায়, তাকে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র বলে। এই উপকেন্দ্রে ভূমিকম্পের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি হয় এবং সেখান থেকে দূরত্ব অনুসারে তীব্রতা ক্রমশ কমতে থাকে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও উপকেন্দ্র পার্থক্য

ভূমিকম্পের কেন্দ্র ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র
ভূপৃষ্ঠ থেকে নীচে কিছুটা গভীরে যে স্থান থেকে ভূকম্পন তরঙ্গ উত্পন্ন হয় তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র।কেন্দ্রের ঠিক সোজাসুজি উপরে ভূপৃষ্ঠের যে বিন্দুতে ভূকম্পিয় তরঙ্গ প্রথম পৌঁছায় তাকে উপকেন্দ্র বলে ।
ভূমিকম্পের কেন্দ্র সাধারণত ভূ-অভ্যন্তরে 16 কিঃমিঃর মধ্যে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে 700 কিঃমিঃ গভীরে গুরুমন্ডলে অবস্থান করে।উপকেন্দ্র কেন্দ্রের সোজাসুজি লিথোস্ফীয়ারের উপরি ভাগে অবস্থান করে ।
কেন্দ্র থেকে উত্পন্ন ভূকম্পন।উপকেন্দ্র থেকে তরঙ্গের আকারে চতুষ্পার্শে ছড়িয়ে পড়ে ।
ভূমিকম্প কেন্দ্রের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি হয়।ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ভূমিকম্প কেন্দ্রের সবচেয়ে নিকটে অবস্থিত হওয়ায়, এখানে ভূমিকম্পের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি হয় 
ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও উপকেন্দ্র পার্থক্য

ভূমিকম্পের সময় করণীয়

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | ভূমিকম্প

Q1. ভূমিকম্প কি

Ans – ভূ-অভ্যন্তরে আকস্মিক সৃষ্ট কম্পনের দরুণ আকস্মিকভাবে ভূমির যে কম্পন হয় তাকে ভূমিকম্প বলে।

Q2. ভূমিকম্প কেন হয়

Ans – ভূ-অভ্যন্তরে স্থিত গ্যাস যখন ভূ-পৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন সেই গ্যাসের অবস্থানটি ফাঁকা হয়ে পড়ে আর পৃথিবীর উপরের তলের চাপ ওই ফাঁকা স্থানে দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে। তখনই ভূ-পৃষ্ঠে প্রবল কম্পনের অনুভব হয় যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত। সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে—ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন জনিত কারণে, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও শিলাচ্যুতি জনিত কারণে।

Q3. ভূমিকম্পের দেশ কাকে বলা হয়

Ans – ভূমিকম্পের দেশ’ হিসেবে পরিচিত জাপান বারবার বড় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে ।

ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে, জাপান প্রশান্ত মহাসাগরীয় ‘রিং অব ফায়ার’ অঞ্চলে অবস্থিত। বাংলায় যার অর্থ হয় ‘আগুনের গোলা’। ‘রিং অব ফায়ার’ এমন একটি কাল্পনিক বেল্ট যা ঘোড়ার খুর আকৃতির মতো প্রধানত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ঘিরে রেখেছে। রিং অব ফায়ারে যেসব অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেগুলো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ।

এই রিং অব ফায়ারই ৯০ শতাংশ ভূমিকম্পের কারণ। ৪০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এই ‘রিং অব ফায়ার’ অঞ্চলে ৪৫২টি আগ্নেয়গিরি রয়েছে, যা পৃথিবীপৃষ্ঠে অবস্থিত মোট আগ্নেয়গিরির ৭৫ শতাংশ। এশিয়ার জাপান, পলিনেশিয়ার টোঙ্গো, দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর এই রিং অব ফায়ারের অন্তর্ভুক্ত। তাই এসব অঞ্চলেই বেশি ভূমিকম্প হয়ে থাকে।

Q4. ভারতের কোথায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প হয়

Ans – ভারতের কোথায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প হয় কাশ্মীরের অঞ্চল, পশ্চিম ও মধ্য হিমালয়, উত্তর ও মধ্য বিহার, উত্তর-পূর্ব ভারতীয় অঞ্চল, কচ্ছের রণ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এই জোনের অন্তর্ভুক্ত।

Q5. ভারতে ভূমিকম্পের কারণ

Ans – ভারতে ভূমিকম্পের উচ্চ মাত্রা ও উচ্চ তীব্রতার প্রধান কারণ হলো, ভারতীয় টেকটনিক পাত প্রতি বছর প্রায় ৪৭ মিমি হারে এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের দিকে প্রবেশ করছে। ভৌগোলিক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে ভারতের প্রায় ৫৪% এলাকা ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

Q6. বাংলাদেশে ভূমিকম্পের কারণ

Ans – মাটির নিচে থাকা টেকটনিক প্লেটের স্থান পরিবর্তনের ফলে ভূমিতে কম্পন অনুভূত হয়। নেপাল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া সহ এসব দেশে 5-8 মাত্রার ভূমিকম্প হলে এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে।

প্রকৃতিগত কারণেই বাংলাদেশর কোন অংশই দুই টেকটনিক প্লেটের উপরে পড়েনি। তাই বাংলাদেশে এখনো বড় কোন ভূমিকম্প উতপত্তি হয়নি। তবে বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকিমুক্ত নয়। বাংলাদেশের সিলেট, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার সবচেয়ে ভূমকম্পন ঝুঁকিতে রয়েছে। কারন এই উত্তর-পুর্বাঞ্চল ভারত, নেপাল এবং চীনে অবস্থিত টেকটনিক প্লেটের কাছেই।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version