Site icon prosnouttor

বিভক্তি কাকে বলে, তির্যক বিভক্তি কাকে বলে, শূন্য বিভক্তি কাকে বলে

বিভক্তি কাকে বলে, তির্যক বিভক্তি কাকে বলে, শূন্য বিভক্তি কাকে বলে

বিভক্তি কাকে বলে, তির্যক বিভক্তি কাকে বলে, শূন্য বিভক্তি কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

বিভক্তি কাকে বলে

বাক্যের শব্দগুলোর নির্দিষ্ট বিন্যাস থাকে। বিন্যাসই সমগ্র বাক্যের অর্থ স্পষ্ট করে দেয়। দেখা যায়, বাক্যের যথাযথ অর্থ জ্ঞাপনের জন্য বাক্যস্থিত নাম শব্দগুলোর সঙ্গে কখনো কখনো বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে থাকে। এই বর্ণ বা বর্ণসমষ্টির নাম বিভক্তি

বাংলা বাক্যের পদগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে কারক নির্দেশের জন্য এই বিভক্তিগুলোর সবিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অনেক সময় বিভক্তির প্রয়োজন পড়ে না। বিভক্তি না থাকলে শূন্য বিভক্তি (০) ধরে নিতে হয়। যেমন :

সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ উঠেছে।

এই বাক্যে তিনটি নাম শব্দ আছে – সন্ধ্যা, আকাশ, চাঁদ। আর ‘উঠেছে’ হলো ক্রিয়াপদ। সমগ্র বাক্যটির অর্থগ্রাহ্যতার জন্য ‘সন্ধ্যা’ শব্দের সঙ্গে ‘য়’, ‘আকাশ’ শব্দের সঙ্গে ‘এ’ যুক্ত হয়েছে। ‘য়’, ‘এ’ হলো বিভক্তি। চাঁদ-এর সঙ্গে কোনো বর্ণ যুক্ত হয়নি প্রয়োজন নেই বলে। কিন্তু ব্যাকরণমতে, সেখানেও বিভক্তি আছে, তবে তা শূন্য (০) বিভক্তি। শূন্য (০) বিভক্তিকে অ-বিভক্তিও বলা হয়। সমগ্র বাক্যটির বিন্যাস এই রকম:

সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ উঠেছে।

সন্ধ্যা+য় আকাশ+এ চাঁদ+০ উঠেছে।

এই বাক্যের বিভক্ত অংশগুলোই (য, এ, ০) বিভক্তি।

বিভক্তির সংজ্ঞা

এককথায় বিভক্তি কাকে বলে এর উত্তরে বলা যায়, শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হলেই তাকে বলা হয় বিভক্তি।

“অথবা আমরা বলতে পারি, যে সব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি বা চিহ্ন দ্বারা বাক্যের এক পদের সঙ্গে অন্য পদের সম্বন্ধ নির্ধারিত হয়, তাকে বলা বিভক্তি।”

অথবা বাক্যে ব্যবহৃত যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি বাক্যের অর্থগ্রাহ্যতায় সাহায্য করে, তাদের বিভক্তি বলা হয়।

বিভক্তি কত প্রকার, বিভক্তি কয় প্রকার ও কি কি

বাংলা বাক্যে ব্যবহৃত বিভক্তি দুই প্রকার। যথা-

  1. ক্রিয়া বিভক্তি এবং
  2. শব্দ বিভক্তি বা কারক বিভক্তি বা নাম বিভক্তি।

ক্রিয়া বিভক্তি কাকে বলে

ধাতু বা ক্রিয়াপদের সঙ্গে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয়, তাদেরকে ক্রিয়া বিভক্তি বলে।

যেমন: তিনি বাড়ি যাবেন (যা +ইবেন = যাইবেন / যা +বেন = যাবেন)।

শব্দ বিভক্তি কাকে বলে, শব্দ বিভক্তি কাকে বলে উদাহরণ দাও

নাম পদের সঙ্গে বা বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সঙ্গে যেসব বিভক্তি যোগ করা হয় তাকে বলা হয় শব্দ বিভক্তি বা কারক বিভক্তি।

শব্দ বা নাম পদের সঙ্গে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয়, তাদেরকে শব্দ বিভক্তি বা নাম বিভক্তি বলে।

যেমন: ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও। (ভিক্ষুক + কে)

বাংলায় সাত রকম শব্দ বা কারক বিভক্তি ব্যবহৃত হয়- প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী এবং সপ্তমী।

ধাতু বিভক্তি কাকে বলে

ধাতুর সঙ্গে যে সমস্ত বিভক্তি যুক্ত হয়, তাদের ধাতু-বিভক্তি বলে। যেমন :

আমি ব্যাকরণ পড়িতেছি। (পড় +ইতেছি)। ‘পড়িতেছি’ ক্রিয়াপদটিতে ‘পড়’ একটি ধাতু। এই ধাতুর সঙ্গে ‘ইতেছি’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।

শূন্য বিভক্তি কাকে বলে

যে বিভক্তি অদৃশ্য থেকে শব্দকে পদে পরিণত করে, সেই জাতীয় বিভক্তিকে শূন্য বিভক্তি বলে।

যেমন: পাগল কিনা বলে। এই বাক্যে ব্যবহৃত ‘পাগল’ (পাগল+অ) শব্দে ‘অ’ বিভক্তি হয়েছে; যেহেতু ‘অ’ দৃশ্যমান নয়, তাই একে শূন্য-বিভক্তি বলা হয়েছে।

যে শব্দ বিভক্তি পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দকে পদে পরিণত করে কিন্তু নিজে অপ্রকাশিত অবস্থায় থাকে এবং মূল শব্দটির কোন পরিবর্তন ঘটায় না, তাকে শূন্য বিভক্তি বলে।

যেমন: বুলবুলিতে ধান খেয়েছে

ধান পদে সাধারণ দৃষ্টিতে মনে হয় কোনো বিভক্তি চিহ্ন নেই । কিন্তু আছে । যেমন : ধান + অ । এখানে ‘অ’ শূন্য বিভক্তি হিসাবে কাজ করছে ।

তির্যক বিভক্তি কাকে বলে

বাংলা ব্যাকরণে কিছু কিছু মৌলিক বা যথার্থ বিভক্তি আছে, যে সব বিভক্তি গুলো শুধুমাত্র সম্বন্ধপদ ছাড়া সব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়,তাদের তির্যক বিভক্তি বলে।

তির্যক বিভক্তির উদাহরণ

  1. দাদা নিজের চোখে ঘটনাটি দেখেছে।      করণ কারকের “এ” বিভক্তি ।
  2. তিনি কলমে ছবি আঁকলেন।        করণ কারকের  “এ” বিভক্তি ।
  3. ওরে, ভাই মায়ে তোকে ডাকে।      কর্তৃকারকের “য়ে” বিভক্তি।
  4. সুবলকে সবাই ভালোবাসে।             কর্তৃকারকের “কে” বিভক্তি।
  5. ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে”     অধিকরণ কারকের “তে ” বিভক্তি।
  6. রাজু নৌকাতে করে সুন্দরবন বেড়াতে গেল।       করণ কারকের”তে ” বিভক্তি।

বিভক্তি যোগের নিয়ম

বিভক্তি ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে। এগুলো সম্পর্কে এখন আলোচনা করব –

১. অপ্রানী বা ইতর প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে ‘রা’ যুক্ত হয় না। গুলি, গুলো যুক্ত হয় যেমন-পাথরগুলো, গরুগুলো।

২. অপ্রাণিবাচক শব্দের উত্তর ‘কে’ বা ‘রে’ বিভক্তি হয় না, শূন্য বিভক্তি হয়। যথা- কলম দাও।

৩. স্বরাস্ত শব্দের উত্তর ‘এ’ বিভক্তির রূপ হয় ‘য়’ বা ‘যে’। ‘এ’ স্থানে ‘তে’ বিভক্তিও যুক্ত হতে পারে।

যেমন – মা+এ = মায়ে, ঘোড়া + এ = ঘোড়ায়।

৪. অ-কারান্ত ও ব্যঞ্জনায় শব্দের উত্তর প্রায়ই ‘রা’ স্থানে ‘এরা’ হয় এবং ষষ্ঠী বিভক্তির ‘র’ স্থানে ‘এর’ যুক্ত হয়।

যেমন – লোক+রা = লোকেরা, মানুষ+এর = মানুষের। লোক + এর লোকের।

কিন্তু অ-কারান্ত, আ-কারান্ত এবং এ-কারান্ত খাঁটি বাংলা শব্দের ষষ্ঠীর এক বচনে সাধারণ ‘র’ যুক্ত হয়, ‘এর’ যুক্ত হয় না। যেমন- মামার, ছেলের।

বিভক্তির প্রয়োজনীয়তা

বাংলায় এমন অনেক বাক্য রয়েছে, যেগুলোতে ক্রিয়াপদ নেই। যেমন :

মাঠে মাঠে অজস্র ফসল। ছোট ছোট ডিঙি নৌকাগুলো নদীতে ভাসমান।

এ জাতীয় ক্রিয়াহীন অনেক বাক্য বাংলায় রয়েছে। ক্রিয়া নেই বলে এই বাক্যগুলোর অন্তর্গত নাম শব্দগুলোর কারকও নেই। সে জন্য বলা হয় বাংলা বাক্য কারক প্রধান নয়।

কিন্তু বিভক্তি ছাড়া বাংলা বাক্য ঠিকভাবে গঠিত হতে পারে না এবং বাক্যও অর্থগ্রাহ্য হয় না। ওপরের দুটি বাক্যের বিভক্তি তুলে নিলে বাক্যগুলো যথাযথ অর্থ প্রকাশ করবে না।

মাঠ মাঠ অজস্র ফসল’ কিংবা ‘ছোট ছোট ডিঙি নৌকা নদী ভাসমান’ বাক্য হিসেবে ত্রুটিপূর্ণ।

প্রথম বাক্যে ‘এ’ বিভক্তি (মাঠ+এ), দ্বিতীয় বাক্যে ‘তে’ বিভক্তি (নদী+তে) বাক্য দুটির বিন্যাস ও অর্থ ঠিক করে দিয়েছে।

গাছের পাতায় রাতের শিশির লেগে আছে’ –এই বাক্যেও আমরা দেখছি এর বিভক্তি [গাছ+এর, রাত+এর] ও ‘য়’ বিভক্তি [পাতা+য়] বাক্যটিকে সম্পূর্ণ অর্থগ্রাহ্য করেছে। নতুবা ‘গাছ পাতা রাত শিশির’ কোনো বাক্য নয়।

তাহলে বোঝা যাচ্ছে, বিভক্তি বাক্যের অন্তর্গত শব্দ অর্থাৎ পদগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে এবং বাক্যের অর্থ নির্দিষ্ট করে। সে জন্য বাংলা বাক্য বিভক্তি প্রধান। এর থেকে বাংলা বাক্যে বিভক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করা যায়।

অবশ্য সব সময় বিভক্তি দিয়ে বাংলা ভাষা ভাব প্রকাশ করতে পারে না, সেসব ক্ষেত্রে বিভক্তির স্থানে বিভক্তি-স্থানীয় কিছু শব্দ যেমন ‘খারা’, ‘দিয়ে’, ‘কর্তৃক’, ‘হতে’, ‘থেকে’, ‘চেয়ে’ ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।

আরো পড়তে: কারক কাকে বলে

বিভক্তিহীন নাম শব্দকে কি বলে

বিভক্তিহীন নামশব্দকে প্রাতিপদিক বলে। নামপদের যেই অংশকে আর বিশ্লেষণ করা বা ভাঙা যায় না, তাকেই প্রাতিপদিক বলে। যেমন – ‘হাত’। এই নাম শব্দের সঙ্গে কোনো বিভক্তি নেই।

যে পদ দ্বারা নাম বুঝায় থাকে নামপদ বলে। যে পদের পরবর্তী ক্রিয়ামূলের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে উপপদ বলে। বিভক্তিহীন নাম শব্দকে বলা হয় প্রাতিপদিক।

কারক ও বিভক্তি নির্ণয়ের সহজ কৌশল

কারক ও বিভক্তি নির্ণয়ের সহজ কৌশল নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো : –

বিভক্তি 

বাক্যের একটি শব্দের সঙ্গে আরেকটি শব্দের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য শব্দগুলোর সঙ্গে কিছু শব্দাংশ যুক্ত করতে হয়। এই শব্দাংশগুলোকে বলা হয় বিভক্তি।

মা শিশু চাঁদ দেখা।

উপরের বাক্যটিতে কোন শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত করা হয়নি। ফলে বাক্যের শব্দগুলোর মধ্যে কোন সম্পর্ক সৃষ্টি হয়নি, এবং এগুলো বাক্যও হয়ে উঠতে পারেনি। এখন শিশু’র সঙ্গে কে বিভক্তি আর দেখা’র সঙ্গে চ্ছেন’ বিভক্তি যোগ করলে বাক্যটি হবে-

মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।

অর্থাৎ, শব্দগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে একটি বাক্য সম্পূর্ণ হলো এবং এখন আর এগুলো শব্দ নয়, এগুলো প্রত্যেকটি একেকটি পদ।

শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হলে তখন সেগুলোকে বলা হয় পদ। বাক্যে বিভক্তি ছাড়া কোন পদ থাকে না বলে ধরা হয়। তাই কোন শব্দে কোন বিভক্তি যোগ করার প্রয়োজন না হলেও ধরে নেয়া হয় তার সঙ্গে একটি বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। এবং এই বিভক্তিটিকে বলা হয় শূণ্য বিভক্তি। উপরের বাক্যটিতে ‘মা’ ও ‘চাঁদ’ শব্দদুটির সঙ্গে কোন বিভক্তি যোগ করার প্রয়োজন হয়নি। তাই ধরে নিতে হবে এই শব্দদুটির সঙ্গে শূণ্য বিভক্তি যোগ হয়ে এগুলো বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছে, এবং এই দুটিও এখন পদ।

মৌলিক বাংলা শব্দ বিভক্তিগুলো হলো- শূণ্য বিভক্তি (০), এ, য়, তে, কে, রে, র(এর)। তবে এছাড়াও কিছু কিছু অব্যয় শব্দ কারক সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলো হলো- দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, হতে, থেকে, চেয়ে, ইত্যাদি।

বাংলা শব্দ বিভক্তি ৭ প্রকার-

বিভক্তির নামবিভক্তি
প্রথমা বা শূণ্য বিভক্তি০, অ
দ্বিতীয়া বিভক্তিকে, রে
তৃতীয়া বিভক্তিদ্বারা, দিয়া (দিয়ে), কর্তৃক
চতুর্থী বিভক্তিকে, রে*
পঞ্চমী বিভক্তিহইতে (হতে), থেকে, চেয়ে
ষষ্ঠী বিভক্তির, এর
সপ্তমী বিভক্তিএ, য়, তে
বাংলা শব্দ বিভক্তি ৭ প্রকার

কারক

কারক শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘যা ক্রিয়া সম্পাদন করে’।

বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ককে কারক বলে। অর্থাৎ, বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্যান্য পদের যে সম্পর্ক, তাকে কারক বলে।

কারক ৬ প্রকার-     

১. কর্তৃকারক
২. কর্মকারক
৩. করণকারক
৪. সম্প্রদান কারক
৫. অপাদান কারক
৬. অধিকরণ কারক

কর্তৃকারক 

বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে ক্রিয়ার কর্তা বা কর্তৃকারক বলে।
ক্রিয়াকে ‘কে/ কারা’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটিই কর্তৃকারক। (কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যের বাক্যে এই নিয়ম খাটবে না। সেক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।)
উদাহরণ-
গরু ঘাস খায়। (কে খায়) : কর্তৃকারকে শূণ্য বিভক্তি

কর্ম কারক 

যাকে অবলম্বন করে কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে ক্রিয়ার কর্ম বা কর্মকারক বলে।
ক্রিয়াকে ‘কী/ কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটিই কর্মকারক।

বাক্যে দুইটি কর্ম থাকলে বস্ত্তবাচক কর্মটিকে প্রধান বা মুখ্য কর্ম ও ব্যক্তিবাচক কর্মটিকে গৌণ কর্ম বলে। তবে দুইটি একই ধরনের কর্ম থাকলে প্রথম কর্মটিকে উদ্দেশ্য কর্ম ও দ্বিতীয়টিকে বিধেয় কর্ম বলে।

যেমন- ‘দুধকে মোরা দুগ্ধ বলি, হলুদকে বলি হরিদ্রা’। এখানে ‘দুধ’ ও ‘হলুদ’ উদ্দেশ্য কর্ম, ‘দুগ্ধ’ ও ‘হরিদ্রা’ বিধেয় কর্ম।

কর্তা নিজে কাজ না করে কর্মকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিলে তাকে প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম বলে।
ক্রিয়াপদ ও কর্মপদ একই ধাতু থেকে গঠিত হলে তাকে সমধাতুজ কর্ম বলে। [ক্রিয়াপদ]

উদাহরণ-

করণ কারক

করণ শব্দের অর্থ যন্ত্র, সহায়ক বা উপায়।

যে উপাদান বা উপায়ে ক্রিয়া সম্পাদন করা হয়, তাকে করণ কারক বলে।

ক্রিয়াকে ‘কী দিয়ে/ কী উপায়ে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই করণ কারক।

উদাহরণ

সম্প্রদান কারক

যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে কিছু দেয়া হয়, তাকে সম্প্রদান কারক বলে।

‘কাকে দান করা হল’ প্রশ্নের উত্তরই হলো সম্প্রদান কারক।

সম্প্রদান কারকের নিয়ম অন্যান্য নিয়মের মতোই সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকেই এসেছে। তবে অনেক বাংলা ব্যাকরণবিদ/ বৈয়াকরণ একে আলাদা কোন কারক হিসেবে স্বীকার করেন না। তারা একেও কর্ম কারক হিসেবেই গণ্য করেন। কর্মকারক ও সম্প্রদান কারকের বৈশিষ্ট্যও একই। কেবল স্বত্ব ত্যাগ করে দান করার ক্ষেত্রে কর্মকারক হিসেবে গণ্য না করে কর্মপদটিকে সম্প্রদান কারক হিসেবে গণ্য করা হয়।

সম্প্রদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তির বদলে চতুর্থী বিভক্তি যুক্ত হয়। চতুর্থী বিভক্তি আর কোথাও যুক্ত হয় না। অর্থাৎ, ‘কে/ রে’ বিভক্তি দুটি সম্প্রদান কারকের সঙ্গে থাকলে তা চতুর্থী বিভক্তি। অন্য কোন কারকের সঙ্গে থাকলে তা দ্বিতীয়া বিভক্তি।

তবে কোথাও নিমিত্তার্থে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হলে তা চতুর্থী বিভক্তি হয়। যেমন- বেলা যে পড়ে এল, জলকে চল। (নিমিত্তার্থে চতুর্থী বিভক্তি)

উদাহরণ-

অপাদান কারক

যা থেকে কোন কিছু গৃহীত, বিচ্যুত, জাত, বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত, রক্ষিত, ভীত হয়, তাকে অপাদান কারক বলে।

অর্থাৎ, অপাদান কারক থেকে কোন কিছু বের হওয়া বোঝায়।

‘কি হতে বের হল’ প্রশ্নের উত্তরই অপাদান কারক।

উদাহরণ-

অধিকরণ কারক

ক্রিয়া সম্পাদনের কাল এবং আধারকে (সময় এবং স্থানকে) অধিকরণ কারক বলে।

ক্রিয়াকে ‘কোথায়/ কখন/ কী বিষয়ে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই অধিকরণ কারক।

উদাহরণ-

অপাদান-অধিকরণ কারকের পার্থক্য

অপাদান ও অধিকরণ কারক আলাদা করতে গিয়ে অনেকেরই সমস্যা হয়। অপাদান ও অধিকরণ কারককে আলাদা করে চেনার সহজ উপায় হলো, অপাদান কারক থেকে কোন কিছু বের হয় বোঝায়। আর অধিকরণ কারকের মাঝেই ক্রিয়া সম্পাদিত হয়।

যেমন- ‘তিলে থেকে তেল হয়’ আর ‘তিলে তেল আছে’।

প্রথম বাক্যে তিলের ভেতর ক্রিয়া সংঘটিত হয়নি। বরং তিল থেকে তেল বের হওয়ার কথা বোঝাচ্ছে।
আর দ্বিতীয় বাক্যে তিলের ভেতরই তিল থাকার কথা বলছে। এই ‘আছে’ ক্রিয়াটি তিলের ভেতরে থেকেই কাজ করছে।

নিচে কারক নির্ণয়ের উপায় সংক্ষেপে ছক আকারে দেয়া হলো

ক্রিয়াকে প্রশ্নউত্তর যে কারক
কে, কারা?কর্তৃকারক
কী, কাকে?কর্মকারক
কী দিয়ে?করণকারক
কাকে দান করা হল?সম্প্রদান কারক
কি হতে বের হল?অপাদান কারক
কোথায়, কখন, কী বিষয়ে?অধিকরণ কারক
কারক নির্ণয়ের উপায় সংক্ষেপে ছক

কারক বিভক্তি নির্ণয় করো

1. সায়ংকালে উপস্থিত হইল = অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি

2. ‘বিরত সতত পাপে দেবকূল’ = অপাদান কারকে ‘এ’ বিভক্তি

3. আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন = করণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি

4. বাড়িটা আগুনে পুড়াতে লাগলো = করণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি

5. আমি তখন দুয়ারে ভিক্ষা নিতে যাই = অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি

6. তাহা পন্ডিতে ও বলতে পারে না = কর্তৃ কারকে ‘এ’ বিভক্তি

7. করুণ নয়নে চায় = কারণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি

8. বক্ষে জুড়িয়া পাণি = অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি

9. স্বচক্ষে দেখছি = করণকারকে ‘এ’ বিভক্তি

10. যেমন আগুনে ধুনো পড়লে = করণকারকে ‘এ’ বিভক্তি

11. তরলের মিশ্রণে ভূ – গর্ভস্থ জল দূষিত হয় = করণকারকে ‘এ’ বিভক্তি

12. দুই নয়নের জলে = করণকারকে ‘এ’ বিভক্তি

13. বিরত সতত পাপে দেবকুল = অপাদান কারকে ‘এ’ বিভক্তি

14. গাছের সেই বর উঠেছে বনে বনে = অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি

15. বাম হস্তে পিস্তল লইলেন = করণকারকে ‘এ’ বিভক্তি

16. সকলে আসিয়া কাঁদিয়া পড়িল = কর্তৃকারকে ‘এ’ বিভক্তি

17. দয়া কর দীনজনে = নিমিত্ত কারকে ‘এ’ বিভক্তি

18. সেই বংশে জন্ম = অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি

19. মরা লোকে তো কথা কয় না = কর্তৃ কারকে ‘এ’ বিভক্তি

20. পাছে লোকে কিছু বলে = কর্তৃ কারকে ‘এ’ বিভক্তি

21. পাঠাইব রামানুজে শমন ভবনে = কর্মকারকে ‘এ’ বিভক্তি

22. বড় হরফে লেখা = করণকারকে ‘এ’ বিভক্তি

23. পাতাটিত বাহিরের আঘাতে বিচলিত হয় না = করণকারকে ‘এ’ বিভক্তি

24. গুরুজনে শ্রদ্ধা করো = কর্মকারকে ‘এ’ বিভক্তি

25. দশে মিলি করি কাজ = কর্তৃকারকে ‘এ’ বিভক্তি

26. মৃতজনে দেহ প্রাণ = নিমিত্ত কারকে ‘এ’ বিভক্তি

27. বাংলাদেশে বহু মানুষের বাস = অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি

28. এ কলমে ভালো লেখা যায়। = করণকারকে ‘এ’ বিভক্তি

29. পদ্মকোশের বজ্রমণি = সম্বন্ধ পদে ‘এর’ বিভক্তি

30. লক্ষ্মীলাভের করতেছে ভাগ-বাঁটোয়ারা = নিমিত্ত কারকে ‘এর’ বিভক্তি

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | বিভক্তি

Q1. বিভক্তি কি

Ans – যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে ঐ শব্দটিকে বাক্যে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে, সেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে বিভক্তি বলে। যেমনঃ শিশুরা খেলছে। এখানে ‘শিশু’ শব্দের শেষে ‘রা’ যুক্ত হয়ে ‘শিশুরা’ হয়েছে এবং ‘খেল্’ ক্রিয়ামূলের শেষে ‘ছে’ যুক্ত হয়ে ‘খেলছে’ হয়েছে। এই ক্ষেত্রে ‘রা’ এবং ‘ছে’ হলো বিভক্তি।

Q2. বিভক্তি শব্দের অর্থ কি

Ans – বিভক্তি শব্দের অর্থ বিভাগ বা বিভাজন ।

Q3. সম্বন্ধ পদে কোন বিভক্তি যুক্ত হয়

Ans – সম্বন্ধ পদের বিভক্তি :

(ক) সম্বন্ধ পদে ‘র’ বা ‘এর’ বিভক্তি (ষষ্ঠী বিভক্তি) যুক্ত হয়ে থাকে। যথা: আমি + র = আমার (ভাই), খালিদ + এর = খালিদের (বই) ইত্যাদি।

(খ) সময়বাচক অর্থে সম্বন্ধ পদে কার> কের বিভক্তি যুক্ত হয়। যথা –
আজি + কার = আজিকার > আজকের (কাগজ)।
পূর্বে + কার = পূর্বেকার (ঘটনা)।
কালি + কার = কালিকার > কালকার > কালকের।
কিন্তু ‘কাল’ শব্দের উত্তর শুধু ‘এর’ বিভক্তিই যুক্ত হয়। যেমন – কাল + এর = কালের। উদাহরণ – সে কত কালের কথা।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version