- ভাষা কাকে বলে, ভাষা কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
- ভাষার লক্ষণ কি কি
- ভাষা কত প্রকার ও কি কি :-
- সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য
- ভাষার মূল উপকরণ কি
- ভাষার মূল উপাদান কি
- উপভাষা কাকে বলে
- ভাষা ও উপভাষার পার্থক্য
- মাতৃভাষা কাকে বলে
- মাতৃভাষার সংজ্ঞা
- মিশ্র ভাষা কাকে বলে
- সমাজ ভাষা কাকে বলে, ভাষাবিজ্ঞান ও তার বিভিন্ন শাখা
- ভাষার ক্ষুদ্রতম একক কি
- ভাষার মৌলিক অংশ কয়টি
- বাংলা ভাষার উৎপত্তি, বাংলা ভাষার উদ্ভব
- FAQ | বাংলা ভাষা
ভাষা কাকে বলে, ভাষা কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
যে ধ্বনি মানুষের বাক যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত হয় এবং যার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করা হয় তাকে ভাষা বলে। এক কথায় ভাষা হল ভাব প্রকাশের মাধ্যম।
আধুনিক চিন্তাবিদেরা মনে করেন –
ভাষা মানুষের সৃষ্টি, ঈশ্বরের নয়। ভাষা হল মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের সেতু।
আচার্য সুকুমার সেন ভাষা (bhasha kake bole) সম্পর্কে বলেছেন –
মানুষের উচ্চারিত বহুজনবোধ্য ধবনি সমষ্টিই ভাষা
ভাষাচার্য সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষা কাকে বলে এ সম্পর্কে বলেছেন –
“মনের ভাব প্রকাশের জন্য, বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন কোন বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত, শব্দ সমষ্টিকে ভাষা বলে।”
অর্থাৎ ভাষা হল মানুষের উচ্চারিত প্রণালীবদ্ধ ধ্বনি-সংকেত, যা দিয়ে এক একটি বিশিষ্ট সমাজ পরস্পরের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে পারে।
যেমন, বাংলা ভাষায় রাম মাকে বললো, ‘মা খিদে পেয়েছে।’ মা বললেন, ‘চল দিচ্ছি।’ রামের কথায় মা তার মনের ভাব জানতে পারলেন। এখানে রাম ও মা দুটি পৃথক মানুষ। তারা কতকগুলি ধ্বনি বা শব্দ যথাযথ ব্যবহার করে তার সাহায্যে পারস্পরিক ভাববিনিময় করলো, একে বলা হয় ভাষা।
ভাষার লক্ষণ কি কি
- যে কোন ধ্বনি বা শব্দ ভাষা নয়। যা বোধগম্য ধ্বনি, তা হল ভাষা।
- একমাত্র অর্থ যুক্ত ধ্বনি হলো ভাষা। তাই পাগলের বকে যাওয়া ভাষা নয়।
- ভাষা পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করে।
- বক্তব্যের অন্তরঙ্গ রূপ প্রকাশ করে।
- মানুষের স্বভাব ও সংস্কৃতিকে প্রকাশ করে ভাষা।
ভাষা কত প্রকার ও কি কি :-
ভাষা সাধারণত দুই প্রকার যথা –
১ – সাধু ভাষা ও
২ – চলিত ভাষা।
সাধু ভাষা কি বা কাকে বলে :-
যে ভাষা রীতিতে ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হয়, তা-ই সাধু ভাষা। যেমন: উহারা ঘুমাইয়া রহিয়াছে। তাহারা খেলিতেছে।
সাধু ভাষা কাকে বলে এ সম্পর্কে ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন –
“সাধারণ গদ্য সাহিত্যে ব্যবহৃত বাঙ্গালা ভাষাকে সাধু ভাষা বলে।”
সাধু ভাষার উদাহরণ
নদীতে স্নান করিবার সময় রাজদত্ত অঙ্গুরীয় শকুন্তলার অঞ্চলকোণ হইতে সলিলে পতিত হইয়াছিল। পতিত হইবামাত্র এক অভিবৃহৎ রোহিত মৎস্যে গ্রাস করে। সেই মৎস্য, কতিপয় দিবস পর, এক ধীবরের জালে পতিত হইল। ধীবর, খণ্ড খণ্ড বিক্রয় করিবার মানসে ঐ মৎস্যকে বহু অংশে বিভক্ত করিতে করিতে তদীয় উদরমধ্যে অঙ্গুরীয় দেখিতে পাইল। ঐ অঙ্গুরীয় লইয়া, পরম উল্লসিত মনে, সে এক মণিকারের আপণে বিক্রয় করিতে গেল।…….. [ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : শকুন্তলা]
সাধু ভাষার বৈশিষ্ট্য
১. সাধু ভাষায় ক্রিয়াপদের পূর্ণাঙ্গ রূপ। যেমন : করিয়াছি, গিয়াছি।
২. সাধু ভাষায় সর্বনাম পদের পূর্ণাঙ্গ রূপ। যেমন: তাহারা, তাহার, তাহাদের।
৩. সাধু ভাষায় অনুসর্গের পূর্ণরূপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন: হইতে, দিয়া প্রভৃতি।
৪. সাধু ভাষায় তৎসম শব্দের (সংস্কৃত শব্দ) প্রয়োগ বেশি। যেমন: হস্ত, মস্তক, ঘৃত, ধৌত।
৫. সাধু ভাষার উচ্চারণ গুরুগম্ভীর।
৬. সাধু ভাষার কাঠামো সাধারণত অপরিবর্তনীয়। এটি সুনির্ধারিত ব্যাকরণের অনুসারী।
৭. সাধু ভাষা বক্তৃতা ও নাট্য সংলাপের অনুপযোগী।
চলিত ভাষা কি বা কাকে বলে :-
যে ভাষা রীতিতে বা ব্যবহারে ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যবহৃত হয়, তাকে চলিত ভাষা বলে।
যেমন : ওরা ঘুমিয়ে রয়েছে। তারা খেলছে।
চলিত ভাষার উদাহরণ
সাহিত্যের সহজ অর্থ যা বুঝি সে হচ্ছে নৈকট্য, অর্থাৎ সম্মিলন। মানুষ মিলিত হয় নানা প্রয়োজনে, আবার মানুষ মিলিত হয় কেবল মেলারই জন্যে, অর্থাৎ সাহিত্যেরই উদ্দেশে। শাকসবজির খেতের সঙ্গে মানুষের যোগ ফসল ফলানোর যোগ। ফুলের বাগানের সঙ্গে যোগ সম্পূর্ণ পৃথক জাতের। সবজি খেতের শেষ উদ্দেশ্য খেতের বাইরে, সে হচ্ছে ভোজ্যসংগ্রহ। ফুলের বাগানের যে উদ্দেশ্য তাকে এক হিসাবে সাহিত্য বলা যেতে পারে। অর্থাৎ, মন তার সঙ্গে মিলতে চায় সেখানে গিয়ে বসি, সেখানে বেড়াই, সেখানকার সঙ্গে যোগে মন খুশি হয়।………. [রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যের তাৎপর্য]
চলিত ভাষার বৈশিষ্ট্য
১. চলিত ভাষায় ক্রিয়াপদের রূপ সংক্ষিপ্ত। যেমন : করেছি, গিয়েছি।
২. চলিত ভাষায় সর্বনাম পদের রূপ সংক্ষিপ্ত। যেমন তারা তাদের।
৩. চলিত ভাষায় ব্যবহৃত হয় অনুসর্গের সংক্ষিপ্ত রূপ। যেমন : হতে, দিয়ে।
৪. চলিত ভাষায় অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি প্রভৃতি শব্দের ব্যবহার বেশি। যেমন : ঘি, হাত, ধোয়া, মাথা ।
৫. চলিত ভাষার উচ্চারণ হালকা ও গতিশীল।
৬. চলিত ভাষা পরিবর্তনশীল।
সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য
সাধু ভাষা | চলিত ভাষা |
---|---|
সাধু ভাষারীতি সর্বজনগ্রাহ্য লেখার ভাষা। | চলিত ভাষারীতি সর্বজনবোধ্য মুখের ও লেখার ভাষা। |
সাধু ভাষারীতি সমস্ত ব্যাকরণের নিয়ম-কানুন মেনে চলে। | চলিত ভাষা ব্যাকরণের সব নিয়ম মেনে চলে না। |
সাধু ভাষায় পদবিন্যাস রীতি সুনির্দিষ্ট। | চলিত ভাষায় পদবিন্যাস রীতি অনেক সময় পরিবর্তিত হয়। |
সাধু ভাষায় তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার বেশি। | চলিত ভাষায় তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার কম। |
সাধু ভাষা যে কোনো বক্তৃতা, ভাষণ ও নাটকের সংলাপের ক্ষেত্রে উপযোগী নয়। | চলিত ভাষা যে কোন বক্তৃতা, ভাষণ ও নাটকের সংলাপের ক্ষেত্রে উপযোগী। |
সাধু ভাষায় সব সর্বনাম, ক্রিয়া ও অব্যয় পদের ক্ষেত্রে পূর্ণরূপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। | চলিত ভাষায় সর্বনাম, ক্রিয়া ও অব্যয়পদের সংক্ষিপ্তরূপ ব্যবহৃত হয়। |
সাধু ভাষা গুরুগম্ভীর, দুর্বোধ্য ও মন্থর। | চলিত ভাষা চটুল, সরল ও সাবলীল। |
সাধু ভাষারীতি অপরিবর্তনীয়, তাই কৃত্রিম। | চলিত ভাষারীতি পরিবর্তনশীল, তাই জীবন্ত। |
ভাষার মূল উপকরণ কি
ভাষার মূল উপকরণ হচ্ছে ধ্বনি। আবার অনেকের মতে ভাষার মূল উপকরণ হচ্ছে বাক্য যা একেবারেই সঠিক নয়।
কেননা ধ্বনি ব্যতীত একটি ভাষা কখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। যতক্ষণ না কণ্ঠস্বর থেকে কোন প্রকার ধ্বনি বের হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত মনের ভাব সম্পূর্ণ বাক্য সহকারে প্রকাশ করা যায় না।
তাই বাক্য নয় ভাষার মূল উপকরণ হচ্ছে ধ্বনি।
ভাষার মূল উপাদান কি
কণ্ঠধ্বনির সহায়তায় মানুষ মনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবও প্রকাশ করতে সমর্থ হয়। কণ্ঠধ্বনি বলতে মুখগহ্বর, কণ্ঠ, নাক ইত্যাদির সাহায্যে উচ্চারিত বোধগম্য ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে বোঝায়। এই ধ্বনিই ভাষার মূল উপাদান।
মূলত ভাষার মূল উপাদান হচ্ছে ৪ টি। ভাষার মূল উপকরণ গুলি হচ্ছে ধ্বনি, শব্দ, বাক্য, অর্থ। এই উপকরণগুলোর সমন্বয়ে একটি ভাষা পরিপূর্ণতা পায়।
ভাষার মূল উপাদান ধ্বনি আর উপকরণ বাক্য।
মূল উপাদান হচ্ছে | ধ্বনি |
ভাষার মূল উপকরণ গুলি কি | ধ্বনি , শব্দ , বাক্য , অর্থ |
উপভাষা কাকে বলে
উপভাষা হল একটি ভাষার অন্তর্গত এমন একটি বিশেষ রূপ যা একটি বিশেষ অঞ্চলের মুখে প্রচলিত থাকে যার সঙ্গে সেই আদর্শ ভাষার বেশ কিছু পার্থক্য থাকে।
উপভাষার বৈশিষ্ট্য
- উপভাষা একটি আদর্শ ভাষা একান্ত একটি আঞ্চলিক রূপ সুতরাং আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যগুলি প্রধানভাবে প্রতি লক্ষিত হয়।
- পৃথিবীর সব ভাষারই উপভাষা থাকে।
- উপ ভাষায় লিখিত সাহিত্য কে লোক সাহিত্য বলে।
ভাষা ও উপভাষার পার্থক্য
ভাষা | উপভাষা |
---|---|
ভাষা বৃহত্তর অঞ্চলে প্রচলিত | উপভাষা ক্ষুদ্রতর অঞ্চলে প্রচলিত। |
ভাষা হল কোন ভাষা সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ভাব বিনিময়ের নিরাকার ব্যবস্থা | উপভাষা হলো সেই ব্যবস্থার প্রত্যক্ষ ব্যবহারিক রূপ। |
সাহিত্য ও শিক্ষায় সংবাদপত্রে ইত্যাদিতে আদর্শ ভাষা ব্যবহৃত হয়। এই ভাষায় লিখিত সাহিত্য কে আদর্শ মান্দনিক সাহিত্য বা ক্লাসিকাল সাহিত্য বলে। | উপভাষায় লেখা সাহিত্যকে লোকসাহিত্য বলে। |
মাতৃভাষা কাকে বলে
মাতৃভাষা হলো মায়ের ভাষা। আমরা আমাদের মায়ের কাছ থেকে যে ভাষা শিখেছি তাই মাতৃভাষা (Mother tongue)। অথ্যাৎ একটি শিশু জন্মের পর তার মায়ের মুখ থেকে শুনে যে ভাষা শিখে তাই হলো মাতৃভাষা।
মায়ের কাছে থেকে শুধুমাত্র ভাষা শিখলেই যে তা মাতৃভাষা হবে এমনটি নয় বরং একজন শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে যে ভাষা শিখে তাই মাতৃভাষা (Mother Language)
একজন বাঙালি মায়ের সন্তান জন্মের পর জাপানি ভাষা শিখে বড় হলে তার প্রথম ভাষা বা মাতৃভাষা কখনো বাংলা হবে না বরং প্রথম যে ভাষা শিখেছে অথ্যাৎ জাপানি ভাষাই হবে তার মাতৃভাষা।
মাতৃভাষার সংজ্ঞা
- উৎপত্তির ভিত্তিতে সংজ্ঞা:- প্রথম শেখা ভাষা যেগুলিতে প্রথম দীর্ঘস্থায়ী মৌখিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে মাতৃভাষা বলে।
- অভ্যন্তরীণ পরিচয়ের ভিত্তিতে সংজ্ঞা :- যে ভাষাকে স্থানীয় ভাষাভাষী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তাকে মাতৃভাষা বলে।
- বাহ্যিক পরিচয়ের ভিত্তিতে সংজ্ঞা:- ভাষার ভাষাগুলিকে অন্যান্য মানুষ স্থানীয় ভাষাভাষী হিসেবে চিহ্নিত করে, তখন একে মাতৃভাষা বলে।
- সামর্থ্যের ভিত্তিতে সংজ্ঞা :- যে ভাষায় যে কোন মানুষ সবচেয়ে ভালো কথা বলতে জানে তাকে মাতৃভাষা বলে।
- ব্যবহার অনুসারে সংজ্ঞা :- যে সকল ভাষা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় তাকে মাতৃভাষা বলে।
মিশ্র ভাষা কাকে বলে
একাধিক ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ পেশাগত বা ও ঔপনিবেশিক কারণে পরস্পরের সান্নিধ্যে আসায় তাদের ভাষার আদানপ্রদান ঘটে। এভাবে একটি ভাষার সৃষ্টি হলে তাকে মিশ্র ভাষা বলে।
ভাষাবিজ্ঞানীরা মিশ্রভাষা কে দুই ভাগে ভাগ করেছেন—
- ১) পিজিন ও
- (২) ক্রেওল।
- পিজিন সবসময় সংযোগ-সংস্পর্শের ফলে উদ্ভূত ভাষা, কখনোই মাতৃভাষা নয়। কাছাকাছি আসা ভাষাগোষ্ঠীর মানুষগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে পিজিন ভাষা লুপ্ত হয়ে যায়। যেমন—পিজিন ইংরেজি, পিজিন ফরাসি, চিনুক।বিচ-লা-মার ইত্যাদি।
- আর মিশ্র ভাষা লুপ্ত না-হয়ে কোনো গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পরিণত হলে বা দীর্ঘস্থায়ী হলে তাকে ক্রেওল বলে। যেমন—মরিশাস ক্রেওল, সোয়াহিলি, উর্দু ক্রেওল ইত্যাদি।
মিশ্র ভাষার বৈশিষ্ট্য :
(১) মিশ্র ভাষায় একাধিক ভাষার উপস্থিতি থাকবেই। তবে সেই ভাষার মধ্যে তুলনামূলকভাবে উন্নত ভাষার প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়।
(২) মিশ্র ভাষায় ব্যাকরণের কোন সুষ্ঠু নিয়ম বজায় থাকে না। কোনো একটি ভাষার নিয়ম সরাসরি ব্যবহৃত হয়। তবে প্রধান ভাষার নিয়মই সাধারনত অনুসৃত হয়।
(৩) মিশ্র ভাষার শব্দভাণ্ডার খুবই সীমিত। কথা বলার জন্য ন্যূনতম যতগুলি শব্দ দরকার ততগুলি নিয়ে মিশ্র ভাষার শব্দভান্ডার।
(৪) মিশ্র ভাষা মূলত কথ্য ভাষা। তাই এই ভাষায় লিখিত সাহিত্যের বিকাশ সম্ভাবনা কম থাকে।
সমাজ ভাষা কাকে বলে, ভাষাবিজ্ঞান ও তার বিভিন্ন শাখা
একই ভাষাসম্প্রদায়ের অন্তর্গত মানুষের মধ্যে সামাজিক অবস্থানভেদে ভাষার যে বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়, তাই-ই সমাজভাষা। সমাজ-ভাষাবিজ্ঞান সেই সমাজভাষারই বিজ্ঞান।
সমাজভাষাবিজ্ঞানের মূল ভাগ তিনটি
- (১) বর্ণনাত্মক সমাজভাষাবিজ্ঞান (Descriptive Socio linguistics)
- (২) পরিবর্তমান বা সচল সমাজভাষাবিজ্ঞান (Dynamic Socio linguistics) ও
- (৩) প্রয়ােগমূলক সমাজভাষাবিজ্ঞান (Applied Socio linguistics)।
বর্ণনাত্মক সমাজ ভাষা বিজ্ঞান
বর্ণনাত্মক সমাজভাষাবিজ্ঞান ভাষার বৈচিত্র্যের বর্ণনা করে। এই ভাষাবিজ্ঞান বলে যে, বক্তা (Sender), শ্রোতা (Receiver) এবং উপলক্ষ্য (অর্থাৎ পরিস্থিতি ও বক্তার উদ্দেশ্য) (Setting)এই তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে সমাজভাষার রূপ।
পরিবর্তমান বা সচল সমাজ ভাষা বিজ্ঞান
পরিবর্তমান সমাজভাষাবিজ্ঞানে কোনাে বিশেষ সমাজভাষার উদ্ভব, বিবর্তন এবং বিস্তার বা সংকোচনের ধারাটি আলােচিত হয়। দ্বিভাষিকতা (Bilingualism), দ্বিবাচন (Diglossia), মিশ্রভাষা (Mixed Language) ( পিজিন ও ক্রেওল)-ইত্যাদি বিষয় এই ভাষাবিজ্ঞানের অন্তর্গত।
প্রয়ােগমূলক সমাজ ভাষা বিজ্ঞান
প্রয়ােগমূলক সমাজভাষাবিজ্ঞানে সামাজিক কল্যাণের লক্ষ্যে সমাজভাষাকে ব্যবহার করা হয়। এখানে মাতৃভাষা ও দ্বিতীয় ভাষা শেখানাের পদ্ধতি, অনুবাদ- নীতি নির্ধারণ, লিপি-প্রণালীর উদ্ভাবন, পরিমার্জনা ও সংশোধন, বানান-সংস্কার, বহুভাষী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা ও সংযােগকারী ভাষা নির্ধারণ—প্রভৃতি আলােচিত হয়।
ভাষার ক্ষুদ্রতম একক কি
- ভাষার ক্ষুদ্রতম একক হলো ‘ধ্বনি’ । এটা ভাষার মৌলিক অংশ ।
- ধ্বনির লিখিত রুপ হলো ‘বর্ণ’ । শব্দের অংশ হলো অক্ষর।
- বাক্যের ক্ষুদ্রতম একক বা অংশকে শব্দ বলে।
ভাষার মৌলিক অংশ কয়টি
প্রত্যেক ভাষারই ৪ টি মৌলিক অংশ থাকে। যথা : ১ .ধ্বনি ২. শব্দ ৩. অর্থ ৪. বাক্য।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি, বাংলা ভাষার উদ্ভব
ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকে উদ্ভূত হয়েছে বাংলা; আর আসামি ও ওড়িয়া ভাষা। তাই বাংলার সাথে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আসামি ও ওড়িয়ার। আর কয়েকটি ভাষার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা রয়েছে বাংলার সঙ্গে; কেননা সেগুলোও জন্মেছিল মাগধী অপভ্রংশের অন্য দুটি শাখা থেকে। ওই ভাষাগুলো হচ্ছে মৈথিলি, মগহি, ভোজপুরিয়া।
আমাদের দেশের সবচেয়ে পুরোনো ভাষার নাম ‘প্রাচীন প্রাকৃত’। কালক্রমে ‘প্রাচীন প্রাকৃত’ অভিহিত হয় ‘আধুনিক প্রাকৃত’রূপে। আধুনিক প্রাকৃত ভাষা থেকে শাখা-প্রশাখা গড়ে উঠে ‘গৌড়ী প্রাকৃত’, ‘মাগধী প্রাকৃত’ ইত্যাদি নামে আরো কয়েকটি প্রাকৃত ভাষার জন্ম হয়। কালের বিবর্তনে প্রাকৃত ভাষার আরো পরিবর্তন ঘটে যায় এবং নাম হয় অপভ্রংশ। এই অপভ্রংশ থেকে জন্মলাভ করে আসামের ‘অহমিয়া’ ভাষা, উড়িষ্যার ‘উড়িয়া’ ভাষা, ভারতের ‘হিন্দী’ ভাষা এবং এতদাঞ্চলের ‘বাংলা’ ভাষা ইত্যাদি।
মনে হয় প্রাচীনকালের কোন ভাষার সংস্কার করেই ‘সংস্কৃত’ নাম রাখা হয়েছে। কেননা, যা সংস্কার করা হয় সেটাই সংস্কৃত। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় প্রাচীন প্রাকৃত বা আধুনিক প্রাকৃত জনগণের মুখের ভাষা। কিন্তু সংস্কৃত ভাষা কখনও জনগণের মুখের ভাষা ছিল না। এখনও জনগণের মুখের ভাষা নয়। এটা হচ্ছে হিন্দুদের ধর্মীয় ভাষা।
ইংরেজ আমলেই ১৯১১ সালে সর্বপ্রথম বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব দেন নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী। বাংলাকে শিক্ষার বাহন করার জন্যও তিনি জোর দাবি জানান। এরপর ১৯১৮ সালে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে শান্তিনিকেতনে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় সম্মেলনে ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত ড. মুহম্মদ শহীদউল্লাহ ঘোষণা করেছিলেন:”শুধু ভারত কেন, সমগ্র এশিয়া মহাদেশেই বাংলা ভাষার স্থান হবে সর্বোচ্চ। ভাব-সম্পদ ও সাহিত্যগুণে বাংলা ভাষা এশিয়ার ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে অদ্বিতীয়।”
বাংলা ভাষার ইতিহাস
- খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বছর আগের ঋগ্বেদের ‘ঐতরেয় আরণ্যক’গ্রন্থে প্রথম ‘বঙ্গ’ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়।
- মোগল সম্রাট আকবরের সভাসদ বিখ্যাত ঐতিহাসিক আবুল ফজল তাঁর ‘আইন-ই-আকবরী’গ্রন্থে সর্বপ্রথম দেশবাচক ‘বাঙ্গালা‘(বঙ্গ+আল)শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
- সমগ্র বাঙালি জনগোষ্ঠীকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়-
- (ক) প্রাক-আর্য বা অনার্য নরগোষ্ঠী (নেগ্রিটো,অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ও মঙ্গোলীয় বা ভোটচীনীয়)
- (খ) আর্য নরগোষ্ঠী
- অস্ট্রিক গোষ্ঠী থেকে বাঙালি জাতির প্রধান অংশ গড়ে উঠেছে। কেউ কেউ তাদের ‘নিষাদ’জাতিও বলেন।তাই বলা হয়, বাংলার আদিম অধিবাসীদের ভাষা ছিল অস্ট্রিক।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | বাংলা ভাষা
Q1. বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্রের নাম কি
উত্তর: বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদ পত্র সমাচার দর্পন। এটি সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসাবে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে জন ক্লার্ক মার্শম্যান এর সম্পাদনায় বাংলার শ্রীরামপুরে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। এটি শুধু এই বঙ্গ নয়, সমগ্র ভারতবর্ষের ইতিহাসের প্রথম পত্রিকা।
Q2. ভাষা কি, বাংলা ভাষা কাকে বলে
উত্তর: প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ভাষা আছে। বাঙালিরা যে ভাষায় কথা বলে তাকে বাংলা ভাষা বলে । পূর্ববাংলা, পশ্চিমবাংলা, ত্রিপুরা , কাছাড়, বারাক উপত্যকায় বাঙালিরা যে ভাষায় কথা বলে তাকেই বাংলা ভাষা বলে।
Q3. তারিখ কোন ভাষার শব্দ
উত্তর: তারিখ আরবি ভাষার শব্দ।
Q4. বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম চিত্রিত গ্রন্থের নাম কি
উত্তর: বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম চিত্রিত গ্রন্থের নাম “প্রকৃতির প্রতিমা”। এটি 1848 সালে বিখ্যাত বাঙালি পলিম্যাথ, রাজা রামমোহন রায় দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল। বইটি ছিল উদ্ভিদ ও প্রাণীর চিত্রের একটি সংগ্রহ, যার সাথে বাংলায় বর্ণনাও ছিল।
এটি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল কারণ এটি বাংলা সাহিত্যে লিখিত শব্দের পরিপূরক হিসাবে ব্যবহৃত চিত্রের প্রথম উদাহরণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল।
বাংলা পাঠকদের মধ্যে পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও পদ্ধতি জনপ্রিয় করতে সাহায্য করার কারণে বইটিও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি বাংলার নবজাগরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বইটি প্রাকৃতিক ইতিহাস, উদ্ভিদবিদ্যা এবং প্রাণীবিদ্যার ক্ষেত্রে মানুষকে শিক্ষিত করার একটি উদ্যোগ ছিল।
বইটি লিথোগ্রাফিক প্রিন্ট দিয়ে চিত্রিত করা হয়েছিল যা বাংলা ভাষায় তার ধরণের প্রথম। বইটি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একটি বড় কৃতিত্ব ছিল, কারণ এটি লিখিত শব্দের পরিপূরক হিসাবে প্রথমবারের মতো চিত্রগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল।
Q5. ভাষা পরিকল্পনা কাকে বলে
উত্তর: যে ভাষা আছে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা বা উন্নত করা বা একটি নতুন সাধারণ আঞ্চলিক ভাষা বা জাতীয় ভাষা বা আন্তর্জাতিক ভাষা তৈরী করার প্ৰণালীবদ্ধ কার্যকলাপ হচ্ছে ভাষা পরিকল্পনা।
Q6. বাংলা ভাষার জনক কে
উত্তর: বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন হচ্ছে চর্যাপদ। যেখানে কাহ্নপা, লুইপা, ভুসুকুপাসহ কবির চরণ রয়েছে। এদের মধ্যে সর্বপ্রথম পদ রচনা করেছিলেন কাহ্নপা। অর্থাৎ বাংলা ভাষার প্রথম কবি এবং আদি কবি বলা হয় কাহ্নপা কে।
সেই বিচারে কাহ্নপার কে বাংলা ভাষার জনক বলা যেতে পারে।
Q7. বাংলা ভাষার আদি নিদর্শনের নাম কি
উত্তর: বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন হলো চর্যাপদ।
Q8. বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত ধ্বনির সংখ্যা কয়টি
উত্তর: বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত ধ্বনির সংখ্যা ৪১টি ।বাংলা ভাষাতে ৭টি পূর্ণ স্বরধ্বনি আছে; এগুলিকে অ, আ, ই, উ, এ, ও এবং অ্যা বর্ণ দিয়ে নির্দেশ করা যায়।বাংলা ভাষায় ব্যঞ্জনধ্বনি আছে মোটামুটিভাবে ৩৪টি ক্, খ্, গ্, ঘ্, ঙ্, চ্, ছ্, জ্, ঝ্, ঞ্, ট্, ঠ্, ড্, ঢ্, ণ্, ত্, থ্, দ্, ধ্, ন্, প্, ফ্, ব্, ভ্, ম্, য়্, র্, ল্, শ্, ষ্, স্, হ্, ড়্, ঢ়্;।
Q9. বাংলা ভাষা পৃথিবীর কততম ভাষা
উত্তর: মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পঞ্চম ও মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা।
Q10. বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বরধ্বনি কয়টি
উত্তর: বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা ২৫টি।
যৌগিক স্বরবর্ণ ২টি। আর ২৩ টি যৌগিক স্বরধ্বনি অাছে। যাদের লিখিত রূপ নেই। তাই এরা বর্ণ নয় | যেমন – ইঅা (দিয়া), এই (এই), এঅা (খেয়া) ইত্যাদি | সুতরাং মোট যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা ২৫টি (২ + ২৩)টি।
Q11. বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি কয়টি
উত্তর: বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনির সংখ্যা সাতটি । যথা : অ, আ, ই, উ, এ, ও , অ্যা।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।