ভূগোল ও পরিবেশ, ভূগোল ও পরিবেশ নবম শ্রেণী, ভূগোল ও পরিবেশ নবম শ্রেণী প্রশ্ন উত্তর
ভূগোল ও পরিবেশের মধ্যকার সম্পর্ক বিষয়ক প্রতিবেদন | ভূগোল ও পরিবেশের উপাদান সমূহের আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ, ভূগোল ও পরিবেশের উপাদানসমূহের আন্তঃসম্পর্ক
পরিবেশ বলতে বাহ্যিক অবস্থাকে বোঝায় যেখানে একটি জীব বাস করে। ভূগোল মানুষ এবং তাদের পরিবেশের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক অধ্যয়ন করে। ভূগোল এবং পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ।
ভূগোল হল পরিবেশ সম্পর্কে। আপনি আপনার চারপাশে যা দেখছেন তা হল পরিবেশ যেমন – নিজের চারপাশে দেখুন আপনি দেখতে পাবেন চেয়ার, সোফা, দোলনা, আপনার পরিবারের সদস্যরা এগুলো সবই পরিবেশের অংশ।
ভূগোলে আমরা বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্র এবং স্থান এবং প্রাণী সম্পর্কে অধ্যয়ন করি এগুলি আমাদের পরিবেশের একটি অংশ। তাই আমরা বলি যে ভূগোল হল পরিবেশের অধ্যয়ন। তাই আমরা ভূগোলকে কখনও কখনও পরিবেশগত অধ্যয়ন বা পরিবেশ বিজ্ঞান বলে থাকি ।
পরিবেশ কাকে বলে
পরিবেশ হলো এমন একটি জিনিস যা আমাদের পারিপাশ্বিকত তৈরি করে এবং পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য আমাদেরকে ক্ষমতা প্রদান করে। যদি এক কথায় বলি তাহলে, আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা সব মিলিয়েই তৈরি হয়ে আমাদের পরিবেশ।
অর্থাৎ আমাদের চারপাশের গাছপালা, পশুপাখি, জীবজন্তু, মাটি, পানি, বায়ু, সূর্যের আলো, বন্ধুবান্ধব এসব কিছু মিলিয়েই তৈরি হয় পরিবেশ। আমাদের পরিবেশের প্রধান তিনটি উপাদন হচ্ছে —মাটি, পানি ও বায়ু। আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে।
উপাদান অনুযায়ী পরিবেশকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথাঃ
- প্রাকৃতিক পরিবেশ
- মানুষের তৈরি পরিবেশ
প্রাকৃতিক পরিবেশ
আমাদের চারপাশে প্রকৃতির সব উপাদান নিয়েই প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যেমন: গাছপালা, পশুপাখি, সূর্যের আলো, মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদি। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারবে না, মানুষ বাঁচার জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল।
প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান হলো: গাছপালা, সূর্যের আলো, মাটি, পানি, বায়ু, সমুদ্র, পাহাড়, নদী, ফুল ইত্যাদি।
মানুষের তৈরি পরিবেশ
মানুষের তৈরি সকল উপাদান নিয়ে মানুষের তৈরি পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যেমন: ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়, রাস্তা-ঘাট, বাস, ট্রেন, নৌকা ইত্যাদি, এসকল উপাদান নিয়েই গড়ে উঠেছে মানুষের তৈরি পরিবেশ।
মানুষের তৈরি উপাদান হলো: ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়, বিদ্যালয়, যানবাহন ইত্যাদি।
ভূগোল ও পরিবেশ পাঠের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর
ভূগোল ও পরিবেশ পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ পৃথিবীর জন্ম এবং এর ভৌত পরিবেশ যেমন পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, সাগর, মহাসাগর, বায়ুমন্ডল এবং মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের প্রায় সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানা যায় ভূগোল অধ্যয়নের মাধ্যমে।
অপরদিকে এই সকল বিষয়ের সাথে মানুষ কীভাবে খাপ খাওয়ায় এবং পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তারও বিস্তারিত জানা যায় ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়টি পাঠের মাধ্যমে। নিম্নে ভূগোল ও পরিবেশ পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো।
- ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়টি অধ্যয়নের মাধ্যমে পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে কীভাবে জীবজগতের উদ্ভব হয়েছে এই বিষয়ক বিজ্ঞান সম্মত ধারণা পাওয়া যায়।
- পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা, ভূ-ত্বক, ভূ-আলোড়ন, বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ, নদ-নদীর উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ, খনিজ ও শিলার উৎপত্তি প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় ।
- পৃথিবীর যে কোনো স্থানের প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে জানা যায়।
- পাহাড়, পর্বত, সাগর, মালভূমি, সমভূমি, মরুভূমি প্রভৃতির উৎপত্তির কারণ ও বৈশিষ্ট্য জানা যায়।
- ভূ-পৃষ্ঠের পরিবর্তনের বিভিন্ন শক্তিসমূহ যেমন- ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি, বিচূর্ণীভবন, নগ্নীভবন ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।
- বায়ুমন্ডলের গভীরতা, বায়ুর স্তরবিন্যাস, বায়ুর উপাদান, তাপ, চাপ, আর্দ্রতা বায়ুপ্রবাহের কারণ, বৃষ্টিপাত, আবহাওয়া, জলবায়ু প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। এই সকল বিষয় ভূগোলের জলবায়ুবিদ্যা নামক শাখায় আলোচনা করা হয়।
- পৃথিবীর মহাসাগরসমূহের অবস্থান, আকৃতি, তলদেশীয় ভূমিরূপ, জোয়ার-ভাটা, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানা যায়।
- পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণি এবং এদের আচার-আচরণ, খাদ্যাভাস ও জীবন ধারার বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানা যায়।
- কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, বাণিজ্য, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের কী ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে এবং পরিবর্তনের ধারা কীরূপ তা জানা যায়।
- প্রাকৃতিক ভূগোলের বিভিন্ন নিয়ামকের উপর নির্ভর করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টির কারণ এবং দুর্যোগ পূর্বাভাস নিরূপণ করা যায়। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণপূর্বক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম প্রণয়ন করা যেতে পারে।
- পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অনুযায়ী ভূমি ব্যবস্থাপনার কৌশল প্রণয়ন করা যায়।
- পৃথিবীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সমুদ্র। বিভিন্ন মহাদেশের মধ্যে সমুদ্র পথে যোগাযোগ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান, অবনমন, সমুদ্রের পানির রাসায়নিক গুণাগুন ও লবণাক্ততা নির্ধারণ, সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় ।
- ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থাপনা (GIS) সফটওয়্যারটি ব্যবহারের মাধ্যমে যে কোনো স্থানের তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে সংগৃহীত তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণপূর্বক সংশিষ্ট স্থানের বিস্তারিত বিষয়াদি মানচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়।
- প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা যায়।
সুতরাং বলা যায়, ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়টি পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা এখানে মানুষ এবং মানুষের সাথে সম্পর্কিত প্রাকৃতিক, মানবিক এবং সামাজিক পরিবেশের সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আরো বিশদে পড়ার জন্য
পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (WB-SSC), মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন (WBMSC), ত্রিপুরা সার্ভিস কমিশন (T-SSC), WBCS(Main & Prelim), PSC, CGL-SSC, RRB এবং UGC-NET, UGC-SET প্রভৃিত Competitive Exam Preparation -এর জন্যই “ভূগােল Gateway” -রচিত
Q1. প্রাকৃতিক পরিবেশ কি
Ans – প্রাকৃতিক পরিবেশ (natural environment) মানুষের জীবনযাত্রাকে গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাবিত করে থাকে। যেসব অবস্থা, শক্তি এবং বস্তুসমূহ জীবকে প্রভাবিত করে তাই পরিবেশ। মানুষের সার্বিক অবস্থা যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, আচার আচরণ, কর্মদক্ষতা, রীতিনীতি, জীবনযাত্রা প্রভৃতি প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের চারপাশের সবকিছুই প্রাকৃতিক পরিবেশ।
Q2. সামাজিক পরিবেশের উপাদান কি কি
Ans – সামাজিক পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত উপাদানসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: বিভিন্ন সামাজিক প্রথা, লোকাচার-লোকনীতি; সামাজিক আচার-ব্যবহার, নিয়ম-নীতি; সাংস্কৃতিক পরিবেশ; মানুষের জীবনধারা, ধ্যান-ধারণা, মূল্যবোধ, শিক্ষা দীক্ষা, ধর্মীয় চেতনা প্রভৃতি।
Q3. সামাজিক পরিবেশ কি
Ans – আমাদের চারপাশে যেসব মানুষ রয়েছে তাদের নিয়ে গঠিত পরিবেশকে সামাজিক পরিবেশ বলে।