Site icon prosnouttor

রামকৃষ্ণ মিশন কে প্রতিষ্ঠা করেন, কলকাতা মাদ্রাসা কে প্রতিষ্ঠা করেন, জমিদার সভা কে প্রতিষ্ঠা করেন, ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে

রামকৃষ্ণ মিশন কে প্রতিষ্ঠা করেন, কলকাতা মাদ্রাসা কে প্রতিষ্ঠা করেন, জমিদার সভা কে প্রতিষ্ঠা করেন, ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে
আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

রামকৃষ্ণ মিশন কে প্রতিষ্ঠা করেন, রামকৃষ্ণ মিশন কে কবে কেন প্রতিষ্ঠা করেন, কে কবে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন

১৮৬৩ সালে স্বামী বিবেকানন্দ কর্তৃক রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এ মিশন ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দী প্রথম দিক পর্যন্ত সময়ে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মানবসেবার মাহাত্ন্য ঘোষণা, শিক্ষার্থীর জন্য অন্ন-বস্ন্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা ও হিন্দুধর্ম প্রচার করা ছিল রামকৃষ্ণ মিশনের মূল কাজ।

রামকৃষ্ণ মিশন হল একটি ভারতীয় ধর্মীয় সংগঠন। এই সংগঠন রামকৃষ্ণ আন্দোলন বা বেদান্ত আন্দোলন নামক বিশ্বব্যাপী আধ্যাত্মিক আন্দোলনের প্রধান প্রবক্তা। এটি একটি জনকল্যাণমূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

১৮৯৭ সালের ১ মে রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন।
মিশন স্বাস্থ্য পরিষেবা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণকার্য, গ্রামোন্নয়ন, আদিবাসী কল্যাণ, বুনিয়াদি ও উচ্চশিক্ষা এবং সংস্কৃতির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণকরেছে। এটি শতাধিক সংঘবদ্ধ সন্ন্যাসী ও সহস্রাধিক গৃহস্থ শিষ্যের একটি যৌথ উদ্যোগ।

রামকৃষ্ণ মিশন কর্মযোগের ভিত্তিতে কাজকর্ম চালায়। রামকৃষ্ণ মিশন সংক্ষেপে আর.কে.এম. নীতিবাক্যআত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ — “আত্মার মোক্ষ ও জগতের কল্যাণের নিমিত্ত”
গঠিত ১ মে ১৮৯৭; আগে কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত প্রতিষ্ঠাতা স্বামী বিবেকানন্দ ধরণ ধর্মীয় সংগঠন
আইনি অবস্থা প্রতিষ্ঠান উদ্দেশ্য শিক্ষাবিস্তার, মানবসেবা, ধর্মীয় গবেষণা, আধ্যাত্মিকতা ইত‍্যাদি।

সদরদপ্তর.. বেলুড়মঠ, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত অবস্থান রামকৃষ্ণ মিশন এবং রামকৃষ্ণ মঠের সারা বিশ্বে ২০৫ টি কেন্দ্র রয়েছে (উপ-কেন্দ্র বাদে): ভারতে ১৫৬ টি, বাংলাদেশে ১৫ টি, যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ টি, রাশিয়ায় ২ টি এবং আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, ফিজি, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, মালয়েশিয়া, মরিশাস, নেপাল, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং জাম্বিয়াতে একটি করে।

রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার নিকটবর্তী হাওড়া জেলায় অবস্থিত বেলুর মঠে অবস্থিত।

এই সংগঠন প্রাচীন হিন্দু দর্শন বেদান্তের অনুগামী। এটি সন্ন্যাসী সংগঠন রামকৃষ্ণ মঠ কর্তৃক অনুমোদিত। রামকৃষ্ণ মঠের সদস্যরা রামকৃষ্ণ মিশনেরও সদস্য।

১৯শ শতাব্দীর ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস কর্তৃক অনুপ্রাণিত এবং তার প্রধান শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দকর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় ও সামাজিক রামকৃষ্ণ আন্দোলনের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য দুটি প্রধান সংগঠন হল রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন।

এই দুটিকে রামকৃষ্ণ সংঘও বলা হয়ে থাকে। রামকৃষ্ণ মঠ হল একটি সন্ন্যাসী সংঘ। ১৮৮৬ সালে রামকৃষ্ণ পরমহংস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মঠ প্রধানত আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ ও সংঘের শিক্ষা প্রসারের জন্য কাজ করে।

১৮৯৭ সালে বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি একটি জনকল্যাণমূলক সংগঠন। এটির কাজ স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ বণ্টন ও শিক্ষাবিস্তার।

দুটি সংগঠনের প্রধান কার্যালয়ই বেলুড় মঠ। ১৯০৯ সালে রামকৃষ্ণ মিশন ১৮৬০ সালের একুশ সংখ্যক আইন অনুসারে বৈধ স্বীকৃতি লাভ করে।

একটি পরিচালন পরিষদ রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালনা করে। রামকৃষ্ণ মিশন ও তার শাখাকেন্দ্রগুলির পৃথক আইনি সত্ত্বা থাকলেও এগুলি রামকৃষ্ণ মঠের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মঠের নির্বাচিত অছি পরিষদ মিশনের পরিচালন পরিষদ হিসেবে কাজ করে।

বেলুড় মঠ কে কবে প্রতিষ্ঠা করেন

স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৯ সালে গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে হাওড়ায় বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠা করেন।

মন্দির, মসজিদ ও গির্জা — তিন ধর্মের উপাসনাস্থলের গঠনশৈলির মিশ্রণে তৈরি এই অসাধারণ মন্দিরটি। এটি সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদেরও একটি অনুপম নিদর্শন। মন্দিরের ভিতরে বিশাল উপাসনা কক্ষ। বেদীর উপর উপবিষ্ট শ্রীরামকৃষ্ণের শ্বেতমর্মর মূর্তি।

স্বামী বিবেকানন্দ – মাত্র ৩৯টা বছর ছিল তাঁর পরমায়ু। এই ক্ষণজন্মা মানুষটি সারা বিশ্বে কী ব্যাপক আলোড়নই না তুলে দিয়ে গেলেন। ধর্মাচরণকে নতুন ভাবে দেখতে শেখালেন, নতুন ভাবে করতে শেখালেন। গঙ্গার পশ্চিম কূল, বারাণসী সমতুল। এই সেই জায়গা, যেখানে শ্রীরামকৃষ্ণের পূত অস্থি কাঁধে করে বয়ে এনে প্রতিষ্ঠা করেন স্বামী বিবেকানন্দ। গোড়াপত্তন হল বেলুড় মঠের। স্বামী বিবেকানন্দের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৩৬-এ। ১৯৩৮ সালের ১৪ জানুয়ারি উদ্বোধন হয়।

কালক্রমে গড়ে উঠল রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের মূল দফতর। এই প্রতিষ্ঠান স্বামী বিবেকানন্দের সমাজচিন্তাকে ছড়িয়ে দেওয়া ও আধ্যাত্ম-চর্চার পবিত্র কেন্দ্র হিসেবে বাঙালি সমাজ জীবনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ৪০ একর জমির উপর অবস্থিত মূল মঠপ্রাঙ্গনে রামকৃষ্ণ পরমহংস, সারদা দেবী, স্বামী বিবেকানন্দের দেহাবশেষের উপর অবস্থিত মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনের সদর কার্যালয় অবস্থিত। এছাড়াও রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ইতিহাসকে তুলে ধরার লক্ষ্যে একটি সংগ্রহশালাও এখানে স্থাপিত হয়েছে। বেলুড় মঠ-সন্নিহিত একটি প্রাঙ্গনে গড়ে উঠেছে রামকৃষ্ণ মিশন অনুমোদিত বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্র। স্বামী বিবেকানন্দের পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে মন্দিরের নকশা নির্মাণ করেছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসের অপর সাক্ষাতশিষ্য স্বামী বিজ্ঞানানন্দ। হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত এই মঠের ধারেই এক দু’তলা বড়িতে স্বামী বিবেকানন্দ থাকতেন। এই বাড়িতেই তিনি দেহ রাখেন। বিবেকানন্দর ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখতে বহু মানুষ এই বাড়িটিতে যান। ফলে একে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। গঙ্গার পাড় ধরে দক্ষিণ দিকে এগোতে একে একে পড়ে ব্রহ্মানন্দ মন্দির, মা সারদার মাতৃমন্দির, স্বামীজির মন্দির ও মহারাজদের সমাধি।

রামকৃষ্ণের স্মৃতিধন্য এই মন্দিরের শোভা দেখতে দেশবিদেশ থেকে বহু পর্যটক এখানে আসেন।

কলকাতা মাদ্রাসা কে প্রতিষ্ঠা করেন

কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন ওয়ারেন হেস্টিংস (ব্রিটিশ গভর্নর ১৭৭২-৮৫)। প্রতিষ্ঠাকাল ১৭৮১; মতান্তরে, ১৭৮০। প্রথম দেড় বছর প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব খরচে চালান হেস্টিংস।

বাঙ্গালী মুসলিমরা শিক্ষা-দীক্ষায় অনেক পিছিয়ে ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে(১৭৫৭-১৯৪৭) ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮০ সালের অক্টোবর মাসে কলকাতায় মুসলিমদের উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথম কলকাতা আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।কলকাতা আলিয়া মাদরাসার আদলে ১৭৮০ সালে বকশীবাজার, ঢাকাতে বাংলাদেশে প্রথম “ঢাকা আলিয়া মাদরাসা “নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়।

জমিদার সভা কে প্রতিষ্ঠা করেন

জমিদার সভার প্রতিষ্ঠাতা হলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং রাধাকান্ত দেব। এই জমিদার সভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৩৮ সালে (১২ই নভেম্বর)।

জমিদার সভার প্রথম পত্তন হয় 1838 খ্রিস্টাব্দে 21 শে মার্চ, রাজা রাধাকান্ত দেবের সভাপতিত্বে কোলকাতার টাউন হলে।

এই সভা থেকে প্রথম সভাপতি হন রাজা রাধাকান্ত দেব। এই সভায় সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রসন্ন কুমার ঠাকুর ও ইংলিশম্যান উইলিয়াম হ্যারি।

এই সভার সদস্য হতে চাঁদা ধার্য করা হয়েছিল :

সদস্যপদ পেতে লাগবে 5 টাকা এবং বার্ষিক 20 ( কুড়ি ) টাকা। বলা বাহুল্য , সাধারণ ব্যক্তি এই সভার সদস্যপদ লাভ করতে পারতো না।

এই সভার উদ্দেশ্য ছিল :

(1) বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার জমিদারদের স্বার্থ রক্ষা করা।

(2) ভারতীয়দের আশা – আকাঙ্ক্ষার প্রতি সহানুভূতিশীল ইংরেজদের সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ।

(3) ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রকে স্বপক্ষে আনা।

(4) ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে মৈত্রী স্থাপন ও বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের সাথে যোগাযোগে উদ্যোঘী হওয়া ।

এর ফলে প্রতি প্রান্তে জমিদার সভার তৈরি হয় । দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রচেষ্টায় মাদ্রাজ ও পুনায় এই সভার শাখা তৈরি হয়েছিল।

জমিদারগণ প্রতি বছর প্রতি গ্রামে 50 বিঘা নিষ্কর জমি ভোগ করতো, তবে প্রতি জমিদার 10 বিঘার বেশি জমিতে এই সুবিধা পেত না।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে চিরস্থায়ী রূপদান করা। বলা যেতে পারে, জমিদার সভার উদ্যোগ মোটামুটি সফল হয়েছিল।

আরো পড়তে: লোদী বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে, চোল বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে, পল্লব বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে

ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে

ন্যায় দর্শন বস্তুর জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বাধীন সত্তায় বিশ্বাসী, তাই এটি বস্তুবাদী দর্শন। এটি বেদকে প্রামাণ্য বলে স্বীকার করে বলে ন্যায়দর্শনকে আস্তিক দর্শন ও বলা হয়৷ তবে ন্যায় দর্শন বেদকে প্রামাণ্য বলে মেনে নিলে এটির মতবাদ স্বাধীন চিন্তা ও বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত। ন্যায় দর্শনে যুক্তিতর্ক এবং জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনা প্রাধান্য লাভ করলেও এই আলোচনা ন্যায়দর্শনের চরম উদ্দেশ্য নয়। ভারতের অন্যান্য দার্শনিক সম্প্রদায়ের মত ন্যায়দর্শন মোক্ষকে জীবনের পরম পুরুষার্থ বলে মনে করেন, এবং কিভাবে এই চরম পুরুষার্থ বা মোক্ষকে লাভ করা যায়, সেই সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করে। সুতরাং ন্যায়দর্শন কেবল তর্কশাস্ত্র এবং প্রমাণশাস্ত্র নয়, এটি মোক্ষশাস্ত্র ও বটে।

ন্যায়দর্শন হচ্ছে ভারতীয় ষড়দর্শনের অন্যতম একটি দর্শন। ন্যায়দর্শন হল সেই ভিত্তি যার উপর ভারতের উচ্চতর দর্শনগুলি নির্মিত হয়েছে। ন্যায় দর্শনের প্রবক্তা বা প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম, তার অপর নাম- অক্ষপাদ (মহর্ষি গৌতম অক্ষপাদ)। তিনি ন্যায় সূত্র রচনা করেছিলেন।

আমাদের জীবনের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট আমাদের অজ্ঞতার কারণে, তাই সঠিক জ্ঞান অর্জন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ন্যায় দর্শন ষােলটি বিভাগকে স্বীকৃতি দেয় অর্থাৎ ন্যায় দর্শনের শাখা ষােলটি। প্রথম বিভাগটি ‘প্রমান’ নামে পরিচিত যা ন্যায় ব্যবস্থার যৌক্তিক এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
এটি দাবি করে যে চারটি স্বাধীন প্রমান (বৈধ জ্ঞানের উৎস) আছে। এগুলাে হলাে উপলব্ধি, অনুমান, তুলনা, এবং মৌখিক সাক্ষ্য বা শব্দ ন্যায়িকদের মতে, উপলব্ধি হল বস্তু এবং ইন্দ্রিয়-অঙ্গের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া দ্বারা উৎপাদিত প্রত্যক্ষ এবং তাৎক্ষণিক জ্ঞান। উপলব্ধিগত জ্ঞানের জন্য, চারটি উপাদান প্রয়ােজন। এগুলাে হলাে- আত্ম, মন, ইন্দ্রিয় এবং বস্তু।

ন্যায়দর্শনের প্রাচীনতম গ্রন্থ ন্যায়সূত্র (খ্রি ২০০-৪৫০)। এতে ৫২৮টি সূত্রে অতি সংক্ষেপে আত্মতত্ত্ব ব্যাখ্যাত হয়েছে; ফলে অনেক সময় তার প্রকৃত তাৎপর্য নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে বিষয়বস্তুকে সহজবোধ্য করার জন্য এই সূত্রগ্রন্থের অনেক টীকা-টিপ্পনী রচিত হয় এবং সেসবের মাধ্যমে ন্যায়দর্শনের ব্যাপ্তি ঘটে। এর প্রথম ব্যাখ্যা হলো বাৎস্যায়নের ভাষ্য। এরপর উদ্দ্যোতকর (ন্যায়বার্তিক, ৬ষ্ঠ-৭ম খ্রি), বাচস্পতি মিশ্র (তাৎপর্যটীকা, ৯ম খ্রি), উদয়নাচার্য (তাৎপর্যপরিশুদ্ধি, ১০ম খ্রি), জয়ন্ত ভট্ট (ন্যায়মঞ্জরী), বিশ্বনাথ (ন্যায়সূত্রবৃত্তি, ১৭শ খ্রি), রাধামোহন গোস্বামী (ন্যায়সূত্রবিবরণ, ১৮শ খ্রি) প্রমুখ এর টীকা রচনা করে আলোচ্য বিষয়কে আরও সহজবোধ্য করে তোলেন।

হিন্দু মেলা কে প্রতিষ্ঠা করেন

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আর্থিক সাহায্যে ও নবগোপাল মিত্রের সম্পাদনায় “The National Paper ” সাপ্তাহিকটিতে “Prsopectus of society for the Promotion of National Fealing among the Educated Native of Bengla” নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন যা পুস্তিকা আকারে মুদ্রিত হয় ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায়’।
১৮৬৭ খ্রিঃ মার্চ মাসে নবগোপাল মিত্রের ‘A National Gathering’ শীর্ষক আবেদনে আসন্ন চৈত্র সংক্রান্তির দিন একটি সম্মেলনের আয়োজনের কথা লেখা হয় । জাতীয় মেলার প্রথম অধিবেশন হয় ১৮৬৭খ্রিঃ ১২ই এপ্রিল ।

নব গোপাল মিত্রের ‘ন্যাশনাল পেপারে’ ১৭ই এপ্রিল ১৮৬৭ তারিখে মেলার প্রথম অধিবেশনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পাওয়া যায় । অধিবেশন হয়েছিল চৈত্র সংক্রান্তির দিন চিৎপুরে রাজা নরসিংহ রায়ের বাগান বাড়িতে ।

মেলার প্রথম অধিবেশন হয়েছিল ১৮৬৭ খ্রিঃ চৈত্র সংক্রান্তিতে । প্রথম তিন বছর একে চৈত্র মেলা বলাহত । ১৮৭৬খ্রিঃ থেকে মেলার অধিবেশন মাঘ সংক্রান্তিতে হতো । তৃতীয় বৎসরের কার্যবিবরণে এই মেলার নাম হিন্দু মেলা বলে স্বীকৃত হলেও চতুর্থ বৎসর থেকে এটি হিন্দু মেলা নামে পরিচিত হয়ে ওঠে ।

উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে নব্য হিন্দুবাদ এবং জাতীয় গৌরব বৃদ্ধির প্রবণতা সভা সমিতি গঠনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল ।

ডিরোজিও এর শিষ্যদের জনপ্রিয়তায় আশঙ্কিত হয়ে রাজনারায়ণ বসু মেদিনীপুরে থাকাকালীন ‘জাতীয় গৌরব সম্পাদনী বা গৌরবেচ্ছা সঞ্চারণী সভা’ স্থাপন করেন । এরই সূত্রধরে হিন্দু মেলার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ।

ডন সোসাইটি কে প্রতিষ্ঠা করেন

ডন সোসাইটি (১৯০২-১৯০৬) জাতীয় শিক্ষা নীতির প্রস্তাবক সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কর্তৃক ১৯০২ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে ১৮৯৬ সালে সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় স্থাপন করেন ভাগবৎ চতুষ্পাঠী। এটি ছিল প্রধানত ভারতীয় ধর্ম ও দর্শন চর্চা এবং সামগ্রিকভাবে ভারত বিষয়ক গবেষণায় নিবেদিত। প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় পরিচয় অন্বেষণে একান্তভাবে রত ছিল। এর পাঠদান কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হতো সন্ধ্যায় মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজে)। একই সময়ে বিখ্যাত ‘ডন’ ম্যাগাজিন প্রকাশিত হতো। ১৯০২ সালে ডন সোসাইটির মুখপাত্রে পরিণত হওয়ার সময় পর্যন্ত এ ম্যাগাজিনে ভারতীয় ইতিহাস, সভ্যতা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, শিল্পকলা সংক্রান্ত অনেক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় একজন জনপ্রিয় শিক্ষক এবং সমসাময়িক তরুণ প্রজন্মের বিজ্ঞ পরামর্শদাতা ছিলেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিনয়কুমার সরকার, রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়, হারাণ চন্দ্র চাকলাদার, রবীন্দ্রনারায়ণ ঘোষ, কিশোরী মোহন গুপ্ত এবং আরও অনেকে তাঁর সাথে যোগ দেন এবং তাঁরা ডন সোসাইটির প্রধান অবলম্বনে পরিণত হন। এ সোসাইটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুসৃত উপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করে। তাঁদের মতানুসারে, এ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রকৃতি ছিল অতিমাত্রায় সাহিত্যনির্ভর, অতি প্রাতিষ্ঠানিক, অবৈজ্ঞানিক এবং অনুৎপাদনমুখী। ডন সোসাইটি মানব-সম্পদ উন্নয়ন এবং জাতি গঠনের উদ্দেশ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে চেয়েছিল। সে কারণে, তাদের পাঠ্যসূচিতে কলা বিভাগে ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি, রাষ্ট্র-বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগও চালু করা হয়। সতীশচন্দ্রের উপরিউল্লিখিত অনুসারিগণ ছাড়াও জগদীশচন্দ্র বসু, নীলরতন সরকার, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর মতো বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও এখানে বক্তৃতা প্রদান করতেন। রামকান্ত রায় এবং কুঞ্জ বিহারী সেন প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তৃতা দিতেন।

ছাত্ররা শিক্ষকদের বক্তৃতা থেকে নোট গ্রহণ এবং সেগুলি নিরীক্ষণের জন্য শিক্ষকদের কাছে পেশ করত। এরপর ছাত্র অংশগ্রহণে আগ্রহী এমন বিষয়ের উপর আলোচনার ব্যবস্থা করা হতো। ডন ম্যাগাজিনে প্রকাশের জন্য লেখা পেশ করতে ছাত্রদেরকে উৎসাহ দেওয়া হতো। প্রযুক্তি সেকশনে ছিল একটি প্রাথমিক ও অপ্রধান কোর্স যা কর্মশালা কার্যক্রমের সাহায্যে পরিচালিত হতো। এসব কর্মশালায় রাসায়নিক প্রক্রিয়া যেমন সাবান ও তেল প্রস্ত্তত প্রণালিসহ সব ধরনের যান্ত্রিক কাজের শিক্ষা দেওয়া হতো। আধুনিক বুনন কৌশলও শিখানো হতো। ছাত্রদের উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রি হতো বড় বাজারস্থ স্বদেশী দোকানে। ডন সোসাইটিতে স্বদেশী শিক্ষার একটি অন্যতম মূলনীতি ছিল প্রযুক্তি সংক্রান্ত জ্ঞান লাভ। বিজ্ঞান চর্চাই ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স এর মূল উদ্দেশ্য হলেও সোসাইটি এখানে অভিনবত্ব যুক্ত করেছিল।

থিওসফিক্যাল সোসাইটি কে প্রতিষ্ঠা করেন

উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের ধর্ম, সমাজ সংস্কার আন্দোলনে থিওসফিক্যাল সোসাইটির প্রতিষ্ঠা একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। মাদাম ব্লাভাটস্কি ও কর্ণেল অলকট মার্কিন দেশ থেকে ভারতে আসেন এবং ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে মাদ্রাজের কাছে অ্যাডিয়ার নামক স্থানে এই প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। কালক্রমে এই সোসাইটির প্রাণ পুরুষ হলেন অ্যানি বেসান্ত। তার উদ্যোগে ভারতের বিভিন্ন স্থানে থিওসফিক্যাল সোসাইটির শাখা কেন্দ্র স্থাপিত হয়। বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। থিওসফিক্যাল সোসাইটির অভিমত ছিল প্রাচীন হিন্দু ধর্ম, সংস্কৃতির পুনঃ জাগরণের মাধ্যমে ভারতের সামাজিক সমস্যা ও রাজনৈতিক পরাধীনতার অবসান ঘটানো যাবে।

অনুশীলন সমিতি কে কবে প্রতিষ্ঠা করেন

১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ (সোমবার ১০ চৈত্র ১৩০৮) এই সমিতি তৈরি হয়েছিল সতীশচন্দ্র বসু ও প্রমথনাথ মিত্রের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।

১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ উপন্যাসের সূত্রে তৎকালীন বাঙালি তরুণ সমাজ বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জীবীত হয়ে উঠেছিলেন। সতীশচন্দ্র বসু এঁদেরই একজন ছিলেন। বিশেষ করে দেশের সেবা করার জন্য শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক চর্চার ভিতর গড়ে ওঠ তরুণ প্রকৃত যোদ্ধা হয়ে উঠতে পারেন। এই আদর্শকে সামনে রেখে তৎকালিন জেনারেল এ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশানের (পরবর্তী সময়ের স্কটিশচার্চ কলেজ) ব্যায়ামাগারে সতীশচন্দ্র বসু প্রথম একটি ‘কাশীনাথ সাহিত্য সমিতি’ গড়ে তুলেছিলেন। এটি ছিল মূলতঅনুশীলন’ প্রবন্ধের আদর্শে এই গড়ে ওঠা একটি সংগঠন। তাঁরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখানে শরীর চর্চার পাশাপশি মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক চর্চাকেন্দ্র হিসেব গড়ে উঠেছিল।

১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ড থেকে সদ্য প্রত্যাগত প্রমথনাথ মিত্রের সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে। উল্লেখ্য প্রমথনাথ মিত্র আয়ারল্যান্ড এবং রাশিয়ার বিপ্লবীদের কথা জানতে পারেন এবং এ সব আন্দোলোনের মতো করে- ভারতকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্য তিনি বিপ্লবী দল গঠনের সংকল্প করেন। ভারতে ফিরে আসার পর তিনি দেখলেন স্বাধীনতার জন্য ইতিমধ্যে ছোটো ছোটো গুপ্ত সংগঠন তৈরি হয়েছে। প্রথম দিকে তিনি এসকল গুপ্ত সমিতিগুলোর ভিতরে সমন্বয় করার উদ্যোগ নেন। এ সকল দলের সার্বিক কর্মকাণ্ডে তিনি সন্তুষ্ট হতে না পেরে নিজেই ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে ‘নিখিল বঙ্গ বৈপ্লবিক সমিতি’ গঠন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রায় একই সময়ে সতীশচন্দ্রের কাশীনাথ ‘কাশীনাথ সাহিত্য সমিতি’ এবং ‘নিখিল বঙ্গ বৈপ্লবিক সমিতি’র সমন্বয়ে একটি গুপ্ত বিপ্লবী দল গঠন করার উদ্যোগ নেন। ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ (সোমবার ১০ চৈত্র ১৩০৮) উভয়ের প্রচষ্টায় গড়ে উঠেছিল অনুশীলন সমিতি’। এর কার্যালয় ছিল কলকাতার ১২ নং মদন মিত্র লেন। এর সভাপতি ছিলেন ব্যারিষ্টার প্রমথনাথ মিত্র, সহ-সভাপতি ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ ও অরবিন্দ ঘোষ আর কোষাধ্যক্ষ ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

প্রায় একই সময় বরোদায় অরবিন্দ ঘোষ একটি গুপ্ত বিপ্লবী দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য তিনি ১৯০১ খিষ্টাব্দে যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কলকাতায় পাঠান। ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে অরবিন্দের নির্দেশ অনুসরণ করে যতীন্দ্রনাথ একটি গুপ্ত দল গঠন করতে সক্ষম হন। ইতিমধ্যে ব্যারিষ্টার প্রমথনাথ মিত্র কলকাতায় বিপ্লবী দল হিসেবে ‘অনুশীলন সমিতি’ স্থাপন করেন। উল্লেখ্য এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মার্চ। এই সমিতির কথা যতীন্দ্রনাথ দূত মারফত অরবিন্দকে জানান। এরপর অরবিন্দের নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা ‘অনুশীলন সমিতি’-তে যোগদান করেন। ধীরে ধীরে এই সংগঠনের সাথে কলকাতার ছোট ছোট ক্লাব ও সংগঠন যোগদান করে। সংগঠনের কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য একটি পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়। এর সভাপতি ছিলেন ব্যারিষ্টার প্রমথনাথ মিত্র, সহ-সভাপতি ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ ও অরবিন্দ ঘোষ আর কোষাধ্যক্ষ ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সংগঠনের প্রথমাবস্থায় এই দলের অন্যতম মন্ত্রণাদাতা ছিলেন সতীশচন্দ্র বসু ও অরবিন্দ ঘোষ। বরোদার মহারাজার আর্মি বাহিনী থেকে সামরিক ট্রেনিং প্রাপ্ত তরুণ বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ ব্যানার্জী ও অরবিন্দ ঘোষের ছোট ভাই বারীন্দ্রকুমার ঘোষ তাঁকে এটি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন। পরবর্তী সময়ে এই সংগঠনের সাথে যুক্ত হন− বিপিনচন্দ্র পাল, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমন্দ্রচন্দ্র মল্লিক, সরলাদেবী, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। এই সমিতির প্রথম দিকে শরীরচর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও, পরে সেনাবাহিনীর মতো করে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীতে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এই সমিতিতে আগত যুবকদের অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে এদের নিয়ে তৈরি করা হয়, ‘জাতীয় স্বেচ্ছাসৈন্যবাহিনী’।

চার্বাক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে

চার্বাক দর্শন ভারতীয় দর্শনের প্রধান শাখাগুলোর অন্যতম। এটি আধ্যাত্মবাদবিরোধী নিরীশ্বরবাদী ও বস্তুবাদী দর্শন। ‘প্রমাণ’ই এ-দর্শন অনুসারে যথার্থ জ্ঞানের উৎস। পারলৌকিক নয়, ইহজাগতিক সুখ ভোগই মানুষের একমাত্র কাম্য বলে চার্বাকগণ মনে করত। চার্বাক দর্শনের প্রভাব বুদ্ধের সময় ও প্রাক-বুদ্ধ যুগে উপস্থিত ছিল বলে অনেকে মনে করে থাকেন।

কেউ কেউ মনে করেন চর্ব ধাতু থেকেই চার্বাক শব্দটির উৎপত্তি। চর্ব ধাতুর অর্থ চর্বণ বা খাওয়া । এই দর্শন খাওয়া দাওয়াকেই জীবনের চরম লক্ষ্য বলে মনে করে । তাই এ দর্শনের নাম চার্বাক দর্শন । আর একদলের মতে চা্বাক শব্দের অর্থ চারু+বাক্ , অর্থাৎ মধুর কথা ।

অবশ্য খাওয়া নিয়ে চার্বাকদের দারুন একটা কথা আছে:

“ যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ

ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ।

ভস্মীভূতস্য দেহস্য পুনরাগমনং কুতাঃ।

অর্থ্যাৎ যতো দিন বাঁচো সুখে বাঁচো। ঋণ করেও ঘি খাও। আগুনে ছাই-হওয়া দেহের পুনরাগমন কোথায়?”

চার্বাক দর্শন এক প্রকার অনৈশ্বরিক বা নাস্তিক দর্শন। চার্বাকপন্থিরা জগতের কর্তা হিসেবে কোনো চেতন-সর্বজ্ঞ ঈশ্বরকে স্বীকার করেন না। তাঁরা জড়বাদে বিশ্বাসী। দার্শনিক সমস্যার সমাধানে স্বাধীন যুক্তি কীভাবে সহায়তা করে এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় জড়বাদে। বৃহস্পতি এ দর্শনের আদি প্রবক্তা বলে স্বীকৃত। ‘চারু’ বা ‘বৃহস্পতি’ প্রবর্তিত দর্শন বলে একে ‘চার্বাক’ বা ‘বার্হস্পত্য’ বলে। বার্হস্পত্যসূত্র চার্বাকগণের মূল গ্রন্থ। চার্বাকদর্শনকে ‘লোকায়ত দর্শন’ও বলা হয়, যেহেতু তা কেবল ইহলোকেরই অস্তিত্ব স্বীকার করে। চার্বাকরা প্রাকৃতজনের মতো ব্যবহার করে বলে তাদেরকে লোকায়ত বা লোকায়তিকও বলা হয়।

চার্বাক দর্শনের মতে প্রত্যক্ষই (Perception) একমাত্র প্রমান অর্থাৎ যথার্থ জ্ঞান লাভের উপায় । চার্বাক দর্শন অনুমান ও শব্দকে প্রমাণরুপে গ্রহন করে নাই । অনুমান (Inference) ও শব্দের (Testimony) দ্বারা কোন নিঃসন্দিগ্ধ ও যথার্থ জ্ঞান লাভ করা যায় না । চার্বাকপন্থীরা বলেন যা ইন্দ্রিয়প্রত্যক্ষ লব্ধ নয় তা বিশ্বাসযোগ্য নয় । যে বস্তুকে ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে প্রত্যক্ষ করা যায় বা অনুভব করা যায় , একমাত্র সে বস্তুরই অস্তিত্ব স্বীকার করা যায় ।

চরমপন্থি চার্বাকরা বলেন, প্রত্যক্ষই জ্ঞানের একমাত্র উৎস। তাঁরা অনুমানের প্রামাণ্য মানেন না, কারণ সাধ্য ও হেতুর ব্যাপ্তি নির্ণয়যোগ্য নয়। তাঁরা শাস্ত্রবাক্যের প্রামাণ্য সযুক্তিক খন্ডন করেন। যা প্রত্যক্ষযোগ্য নয়, তার অস্তিত্ব নেই। পরলোক, পাপ ও পুণ্য বলে কিছু নেই, যেহেতু এগুলি প্রত্যক্ষযোগ্য নয়। চার্বাকগণ স্বভাববাদী, হেতুবাদী নন। তাঁদের মতে উৎপত্তির জন্য কার্য পূর্ববর্তী কোনো কারণের অপেক্ষা করে না। উৎপত্তি হওয়াই কার্যের স্বভাব। কিন্তু শিক্ষিত চার্বাকগণ বলেন, স্বভাব হতে কার্য উৎপন্ন হয় (তত্ত্বসংগ্রহ)। তাঁদের স্বভাববাদ বস্ত্তত হেতুবাদের নামান্তর (ন্যায়কুসুমাঞ্জলি ১/৫)। শিক্ষিত চার্বাকগণ প্রত্যক্ষ ও অনুমান উভয়েরই প্রামাণ্য স্বীকার করেন।

চার্বাকগণ ভূতচতুষ্টয়বাদী। তাঁরা ক্ষিতি, জল, তেজ ও বায়ু এ চার প্রকার মৌলিক পদার্থ স্বীকার করেন। এ কটি ভূত পদার্থ থেকেই যাবতীয় ভৌতিক পদার্থ উৎপন্ন হয়। শরীর, ইন্দ্রিয় ও বাহ্য বিষয় চার প্রকার মৌলিক পদার্থের সমুদয় মাত্র। তাঁরা ভূতচৈতন্যবাদ প্রবর্তন করেন। জড় থেকে চৈতন্যের পৃথক সত্তা নেই। তাঁরা বলেন, চারটি ভূত পদার্থের সংমিশ্রণে দেহে চৈতন্য জন্মায়; যেমন, কিণ্বাদির সংমিশ্রণে মাদকতা শক্তি জন্মায়। সুতরাং চৈতন্যবিশিষ্ট দেহই আত্মা (দেহাত্মবাদ)। স্থূল শরীরটাই জীবের সর্বস্ব; তার তুষ্টি ও পুষ্টি বিধান করেই সে কৃতার্থ হয়। অন্য এক শ্রেণীর চার্বাক ইন্দ্রিয়কে (ইন্দ্রিয়াত্মবাদ), কেউ প্রাণকে (প্রাণাত্মবাদ) ও অপর শ্রেণী মনকে (মন-আত্মবাদ) আত্মা বলেন।

চার্বাক মতে ইন্দ্রিয়জ সুখই মানুষের জীবনে একমাত্র কাম্য। পার্থিব দুঃখই নরক। দেহের উচ্ছেদই হচ্ছে মুক্তি। মৃত্যুতেই সব কিছুর সমাপ্তি ঘটে। মৃত্যুর পর শরীর ও চৈতন্য কোনোটিই থাকে না। চার্বাকগণ মানুষের দৃষ্টি অসীম থেকে সসীমের দিকে, আধ্যাত্মিকতা থেকে বাস্তবের দিকে আকৃষ্ট করতে প্রয়াসী। পরম আনন্দে জীবন উপভোগ করার জন্য তাঁরা সকলকে উপদেশ দেন।

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন কে প্রতিষ্ঠা করেন

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন বা ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল অ্যাসোসিয়েশন (বাংলা নাম ”ভারত সভা”), ১৮৭৬ সালে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আনন্দ মোহন বোস দ্বারা প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশ ভারতে প্রথম প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী সংস্থাটি ছিল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন। এই সমিতির উদ্দেশ্য ছিল “প্রতিটি বৈধ উপায়ে জনগণের রাজনৈতিক, বৌদ্ধিক এবং বৈষয়িক অগ্রগতি” প্রচার করা। সমিতিটি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষিত ভারতীয় এবং নাগরিক নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল এবং স্বাধীনতার জন্য ভারতের আকাঙ্ক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোরামে পরিণত হয়েছিল। ভারত সভার প্রথম সভাপতি ছিলেন রেভারেন্ড কৃষ্ণ মোহন বন্দ্যোপাধ্যায় । এটি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে মিশে যায়।

আরো অন্যান্য প্রশ্নোত্তরের সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ |

Q1. নব্য ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা

Ans – নব্য ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন অক্ষপাদ গৌতম , যিনি ন্যায় সূত্র রচনা করেছিলেন। এটি বলে যে আমাদের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট আমাদের অজ্ঞতার কারণে, তাই সঠিক জ্ঞান অর্জন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

Q2. পুষ্যভূতি বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে

Ans – পুষ্যভূতি ছিলেন বর্ধন বংশের প্রতিষ্ঠাতা। বানভট্ট তাঁর পৌরাণিক বিবরণ ‘ হর্ষচরিত’ -এ বর্ধন রাজবংশের উৎপত্তির বিবরণ দিয়েছেন।

Q3. নারী সত্যাগ্রহ সমিতি কে প্রতিষ্ঠা করেন

Ans – ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের অধিবেশনের উদ্বোধনে সুভাষচন্দ্র বসু নির্দেশে এবং লতিকা ঘোষ এর নেতৃত্বে প্রায় ৩00 মহিলা মূলত ছাত্রী তার সুনির্দিষ্ট পোশাকে মার্চ পাস্টে অংশ নেন। অন্যদিকে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে উর্মিলা দেবী নেতৃত্বে জ্যোতির্ময়ী গাঙ্গুলী, শান্তি দেবী, প্রতিমা দেবী প্রমুখরা গড়ে তুলেছিলেন “নারী সত্যাগ্রহ সমিতি”।

Q4. স্বদেশ বান্ধব সমিতি কে প্রতিষ্ঠা করেন

Ans – স্বদেশ বান্ধব সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন অশ্বিনী কুমার দত্ত। এর উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় পণ্যের ব্যবহারকে উন্নীত করা এবং বিদেশী পণ্য বর্জন করা।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version