Site icon prosnouttor

তেজস্ক্রিয়তা কাকে বলে, তেজস্ক্রিয়তা কে আবিষ্কার করেন

তেজস্ক্রিয়তা কাকে বলে, তেজস্ক্রিয়তা কে আবিষ্কার করেন

তেজস্ক্রিয়তা কাকে বলে, তেজস্ক্রিয়তা কে আবিষ্কার করেন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

তেজস্ক্রিয়তা কাকে বলে

তেজস্ক্রিয়তা হলো কোন কোন ভারী মৌলিক পদার্থের একটি গুণ যেগুলোর নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি বিকরীত হয়।

তেজষ্ক্রিয়তা সংজ্ঞা

তেজষ্ক্রিয় মৌলের তেজষ্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণের ঘটনাকে তেজষ্ক্রিয়তা বলে ।

তেজস্ক্রিয়তা হলো যেসকল মৌলের পারমাণবিক স্ংখ্যা ৮২ এর বেশি, তাদের নিউক্লিয়াস দ্রুত গতির নিউটন দ্বারা আঘাত করলে নিউক্লিয়াস থেকে স্বঃতঃস্ফূর্ত ভাবে উচ্চভেদন সম্পূর্ণ বিকিরণ নির্গত হওয়ার ঘটনা।

যার একক হলো বেকেরেল(Bq)। এটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত নিউক্লীয় ও স্বাবাবিক ঘটনা।

তেজস্ক্রিয়তার প্রকারভেদ (Kinds of radioactivity)

তেজস্ক্রিয়তা দুই প্রকার। যথা – 

(১) প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা (Natural radioactivity) ও 

(২) কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা (Artificial radioactivity)

কোনো পদার্থ হতে স্বতঃসফুর্তভাবে যে তেজস্ক্রিয়তা ঘটে, তাকে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা বলে। যেমন ইউরেনিয়াম, রেডিয়াম, থোরিয়াম প্রভৃতি মৌল হতে যে তেজস্ক্রিয়া ঘটে তা প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা।

কৃত্রিম উপায়ে কোনো মৌলকে তেজস্ক্রিয় মৌলে পরিণত করলে যে তেজস্ক্রিয়তা ঘটে তাকে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা বলে। 

তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রকারভেদ (Kinds of radioactive ray)

1899 খ্রিস্টাব্দে রাদারফোর্ড (Rutherford) এবং 1900 খ্রিস্টাব্দে উইলার্ড (Willard) পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে দেখান যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ হতে তিন প্রকার রশ্মি নির্গত হয়; যথা-

যেসব মৌল নিজ থেকে অন্য মৌলে রূপান্তরিত হয় তারা মূলত তেজস্ক্রিয় মৌল। তেজস্ক্রিয় পদার্থ হতে যে ধরনের কণা ও রশ্মি নির্গত হয় তা হলো- আলফা কণা, বিটা কণা, গামা রশ্মি।

বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা তিন রকম তেজস্ক্রিয় রশ্মি আবিষ্কার করেন। ১৮৯৯ সালে রাদারফোর্ড এবং ১৯০০ সালে ভিলার্ডের পরীক্ষা থেকে এসব রশ্মির সন্ধান পাওয়া যায়। তেজস্ক্রিয় রশ্মি তিন প্রকার ।

১। আলফা রশ্মি, ২। বিটা রশ্মি এবং ৩। গামা রশ্মি।

মাদাম কুরীর পরীক্ষা

উপরিউক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মাদাম কুরী তিন প্রকার রশ্মির অস্তিত্ব নিঃসন্দেহে প্রমাণ করেন। তিনি একটি সীসার ব্লকের সরু লম্বা ছিদ্র করে ঐ ছিদ্রে রাখলেন রেডিয়ামঘটিত তেজস্ক্রিয় পদার্থ। ছিদ্র হতে সামান্য দূরে লম্বালম্বিভাবে একটি ফটোগ্রাফিক প্লেট রাখা। হলো যাতে রশ্মি প্লেটের ওপর পড়তে পারে। তারপর সমগ্র ব্যবস্থাকে আবদ্ধ করলেন একটি বায়ুনিরোধী প্রকোষ্ঠে এবং পার্শ্বের সাহায্যে ভিতরের বাতাস বেরা করে নিলেন এবং চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করলেন। ফটোগ্রাফিক প্লেট পরিস্ফুটিত করে পাওয়া গেল তিনটি! পৃথক স্থানে তিনটি দাগ। চুম্বকের প্রভাবে এক জাতের রশ্মি গেল সামান্য বেঁকে, অপরটি গেল উল্টোদিকে অপেক্ষাকৃত অধিক বেঁকে। তৃতীয়টি মোটেই বাঁকেনি

আলফা কণা

এটি একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস। এটি ধনাত্নক চার্জযুক্ত কণা, যার আধান 3.2* 10 -19 কুলম্ব। এ কণার ভর হাইড্রোজেন পরমাণুর চার গুণ(6.694*10 -27 kg) আর ভর বেশি হওয়ায় এর ভেদন ক্ষমতা কম। এ কণা জিংক- সালফায়েড পর্দায় প্রতিপ্রভা সৃস্টি করে।

আলফা (α) কণাগুলো দু’টি নিউট্রন ও দু’টি প্রোটনের সমন্বয়ে গঠিত। তুলনামূলকভাবে এটি ভারী ও ধনাত্মক চার্জযুক্ত বিকিরণ। গঠনানুসারে একে হিলিয়ামের নিউক্লিয়াস বলা যেতে পারে। আলফা বিকিরণ বায়ুর মধ্যে ২-৩ সেন্টিমিটারের বেশি যেতে পারে না। এমনকি সামান্য কাগজের বাধাও আলফা অতিক্রম করতে পারে না। তাই দুরত্বের দিক দিয়ে এটি মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে আলফা বিকরিত হচ্চে এমন কোন বস্তু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে মারাত্মক ক্ষতি (যা অন্যান্য রশ্মি অপেক্ষা প্রায় ৩ থেকে ২০ গুণ বেশি) হওয়ার সম্ভাবণা থাকে।

আলফা রশ্মির ধর্ম

১. আলফা রশ্মি ধনাত্মক আধানযুক্ত। এর আধান 3.2 x 10-19 C

২. এ রশ্মি চৌম্বক ও তড়িৎক্ষেত্র দ্বারা বিচ্যুত হয়।

৩. এ রশ্মি তীব্র আয়নায়ন সৃষ্টি করতে পারে।

৪. এর ভর বেশি হওয়ায় ভেদন ক্ষমতা কম ।

৫. সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রার কয়েক সেন্টিমিটার বায়ু বা ধাতুর খুব পাতলা পাত দ্বারা এর গতি থামিয়ে দেওয়া যায়।

৬. এ কণা ফটোগ্রাফিক প্লেটে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

৭. এ রশ্মি জিঙ্কসালফাইড পর্দায় প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করতে পারে।

৮. এ কণা প্রচণ্ড বেগে নির্গত হয়

৯. এটি একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস ।

১০. এ কণার ভর হাইড্রোজেন পরমাণুর চারগুণ।

বিটা কণা

এটি ঋণাত্নক আধানযুক্ত কণা, যার আধান 1.6*10 -19 কুলম্ব। এর ভর ইলেক্ট্রনের সমান। এটি চৌম্বক ও তড়িৎক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়। এটিও প্রতিপ্রভা সৃস্টি করতে পারে।

বিটা (β) কণাগুলো খুবই হালকা যার ওজন প্রায় নেই বললেও চলে। চারিত্রিক বৈশিষ্টের দিক দিয়ে এগুলো ইলেকট্রনের মত। এরা প্রকৃতপক্ষে তীব্র গতিসম্পন্ন ইলেকট্রোন। বিটা কণাগুলো ঋণাত্মক চার্জযুক্ত এবং এদের ছেদন করার ক্ষমতা আলফা কণা থেকে ১০০০ গুণ বেশি। এরা বায়ুর মধ্যে কয়েক ফুট পর্যন্ত যেতে পারে এবং মানুষের ত্বকের বহিরাবরণ ভেদ করতে পারে। অতি মাত্রায় বিটা রশ্নির প্রভাবে চর্মরোগ জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে, এমনকি স্কীন ক্যান্সারও হতে পারে।

বিটা রশ্মির ধর্ম

১. এ রশ্মি ঋণাত্মক আধানযুক্ত। এর আধান 1.6 x 10-19 C

২. এ রশ্মি চৌম্বক ও তড়িৎক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়।

৩. এ রশ্মি অত্যন্ত দ্রুত নির্গত হয়। এর দ্রুতি আলোর দ্রুতির শতকরা 98 ভাগ হতে পারে।

৪. এ রশ্মি অতি উচ্চ দ্রুতি সম্পন্ন ইলেকট্রনের প্রবাহ। এর ভর ইলেকট্রনের সমান অর্থাৎ 9.1 x 10-31 kg.

৫. ফটোগ্রাফিক প্লেটে এর প্রতিক্রিয়া আছে।

৬. এ রশ্মি প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করতে পারে।

৭. এর ভেদন ক্ষমতা আলফা রশ্মির চেয়ে বেশি এবং এটি 1 cm অ্যালুমিনিয়াম পাত ভেদ করতে পারে।

৮. গ্যাসে যথেষ্ট আয়নায়ন সৃষ্টি করতে পারে।

৯. কোনো পদার্থের মধ্য দিয়ে যাবার সময় এই রশ্মি বিক্ষিপ্ত হয়।

গামা রশ্মি

এটি নিরেপেক্ষ আধানবিশিষ্ট রশ্মি এবং তরিতচৌম্বক তরঙ্গ। এর কোনো ভর নেই। এটি চৌম্বক তড়িৎক্ষেত্র দ্বারা বিচ্যু্ত হয় না। এর বেগ আলোর বেগের সমান তথা 3*10 8 ms-1

গামা (γ) রশ্নি কোন কণিকা নয়, এটি সাধারণ আলোকের ন্যায় তড়িৎ-চৌম্বক (electro-magnetic) তরঙ্গ। তাই এদের গতিবেগ সেকেন্ডে প্রায় ৩০০০০০ কিলোমিটার (১৮৬০০০ মাইল)। এদের ছেদন ক্ষমতা খুবই বেশি। এরা রঞ্জন রশ্মির ন্যায় বিভিন্ন পদার্থের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে। একমাত্র লিড বা কংক্রিটের তৈরি প্রশস্ত দেওয়াল দিয়েই গামা রশ্নিকে আটকে রাখা সম্ভব। এরা জীবন্ত কোষের ক্ষতি সাধন করে।

তেজস্ক্রিয়তার ফলে বিস্তীর্ন এলাকায় জীব ও উদ্ভিদ জগতের উপর সুদুরপ্রসারী যে ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তারজন্য প্রধানতঃ এই গামা রশ্মিই দায়ী। তাছাড়া যে কোন পদার্থ গামা রশ্মি গ্রহণ করার পর অস্বাভাবিক কিছু কণা বিকিরন করে যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

গামা রশ্মির ধর্ম

১. এ রশ্মি আধান নিরপেক্ষ।

২. এ রশি তড়িৎ ও চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা বিচ্যুত হয় না।

৩. এর বেগ আলোর বেগের সমান অর্থাৎ 3 x 108ms-1

৪. আলফা ও বিটা রশ্মির চেয়ে এ রশ্মির ভেদন ক্ষমতা খুব বেশি। এটি কয়েক সেন্টিমিটার সীসার পাত ভেদ করে যেতে পারে।

৫. স্বল্প আয়নায়ন ক্ষমতা সম্পন্ন।

৬. এ রশ্মি প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করতে পারে।

৭. ফটোগ্রাফিক প্লেটে এ রশ্মি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

৮. এর কোনো ভর নেই।

৯. এটি তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ।

১০. এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ক্ষুদ্র, তাই শক্তি খুব বেশি ।

ভরের বিবেচনায় তিনটি কণা বা রশ্মির মাঝে সম্পর্ক হবে (বেশি হতে কম) আলফা কণা>বিটা কণা> গামা রশ্মি। ভেদন ক্ষমতার বিবেচনায় তিনটি কণা বা রশ্মির সম্পর্ক হবে

= গামা রশ্মি> বিটা রশ্মি> আলফা রশ্মি

মহাজাগতিক, গামা, রঞ্জন, অতিবেগুনি, দৃশ্যমান ও অবলোহিত রশ্মি এবং মাইক্রো, রেডিও ও টেলিভিশন তরঙ্গ প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় বিকিরনের তরঙ্গ। সবগুলো মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। এদের মূল পার্থক্য হচ্ছে তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য ও স্পন্দন সংখ্যায়। দৃশ্যমান আলো হল বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ রশ্মির সামান্য অংশ মাত্র। সমগ্র বিকিরণ শক্তির অধিকাংশই অদৃশ্য।

তেজস্ক্রিয়তার এস আই একক কি, তেজস্ক্রিয়তার একক কি, তেজস্ক্রিয়তার si একক

বেকেরেল (প্রতীক: Bq) হলো তেজস্ক্রিয়তার এসআই লব্ধ একক। তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রতি সেকেন্ডে একটি নিউক্লিয়াসের ক্ষয় হওয়ার সক্রিয়তাকে এক বেকেরেল হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

তেজস্ক্রিয়তার এস. আই একক বেকেরেল (Bq)। প্রতি সেকেন্ডে একটি তেজস্ক্রিয় ভাঙ্গন বা ক্ষরকে এক বেকেরেল বলে।

1 Bq = 1 decay s-1

আগে কুরী (Ci) নামে তেজস্ক্রিয়তার একটি একক ব্যবহৃত হতো।

1Ci = 3.7 x 1010 decay s-1 = 3.7 x 1010 Bq

তেজস্ক্রিয়তা কে আবিষ্কার করেন

ফরাসি বিজ্ঞানী হেনরি বেকেরেল ( 1852-1908) তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন। ১৮৯৬ সালে তিনি দেখতে পান যে, ইউরেনিয়াম যৌগের নিকটে রাখা ফটোগ্রাফিক প্লেট কুয়াশাচ্ছন্ন বা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। তিনি অনুধাবন করেন যে, ইউরেনিয়াম থেকে নির্গত বিকিরণের দরুন ফটোগ্রাফিক প্লেট ঝাপসা হয়েছে। এ ঘটনাকে বলা হয় তেজস্ক্রিয়তা বা তেজস্ক্রিয় ক্ষয়। তিনি দেখান যে, ইউরেনিয়ামের নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত এই বিকিরণ নির্গত হয়।

এই বিকিরণ অতি উচ্চ ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন এবং সাধারণ আলফা কণা বা বিটা কণা। আলফা কণা বা বিটা কণা যে কণাই নির্গত হোক না কেন আদি (parent) মৌলটি (জনক) সম্পূর্ণ নতুন মৌলে (জাতক) রূপান্তরিত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি স্থায়ী মৌলে রূপান্তরিত হয় ততক্ষণ এই রূপান্তর প্রক্রিয়া চলতে থাকে। তেজস্ক্রিয়তা ঘটনাটি স্বতঃস্ফূর্ত এবং সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতি নিয়ন্ত্রিত। এটি তাপ, চাপ, বৈদ্যুতিক বা চৌম্বক ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হয় না।

পরবর্তীকালে রেডিয়াম, পোলোনিয়াম, থোরিয়াম, অ্যাকটেনিয়াম ইত্যাদি ভারী মৌল থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বা কণার নির্গমন আবিষ্কৃত হয়। যে সকল মৌল থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয় তাদেরকে তেজস্ক্রিয় মৌল বলে।

যে সব মৌল হতে তেজষ্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয় তাদেরকে তেজষ্ক্রিয় মৌল বলে। তেজষ্ক্রিয় রশ্মি নির্গমনের এই ঘটনাকে তেজষ্ক্রিয়তা(Radioactivity) বলে।

তেজস্ক্রিয়তার উৎস

তেজস্ক্রিয়তার উৎসকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: ১। প্রাকৃতিক, ২। মানুষের সৃষ্ট ও ৩। পারিপার্শ্বিক পরিবেশগত।

প্রাকৃতিক উৎস

পৃথিবীর সবদিকে মহাশূন্য থেকে ইলেকট্রন, প্রোটন ও কয়েকটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস প্রায় আলোর বেগে পৃথিবীতে আঘাত হানে। এদেরকে মহাজাগতিক রশ্মি (Cosmic rays) বলে। এই রশ্মিগুলো বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত এবং অল্প মাত্রায় বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে চলে আসে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা যত বেশি হয়, এর মাত্রা ততই বাড়তে থাকে। পার্থিব বিকিরণ অর্থ্যাৎ পৃথিবী এবং তার বায়ুমন্ডল থেকে উদ্ভুত বিদ্যুৎ-চৌম্বক বিকিরণও তেজস্ক্রিয়তার একটি উৎস। পৃথিবী সৃষ্টির সময় যেসব তেজস্ক্রিয় মৌল বিদ্যমান ছিল তার কিছু পরিমাণ এখনো আছে। কারণ এদের জীবনকাল খুবই দীর্ঘ।

যেমন K-40, U-238 and Th-232 ইত্যাদি। প্রাকৃতিক উৎসের মধ্যে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ হচ্ছে রেডন গ্যাস। এটি বাতাস থেকে ৮ গুণ ভারী। এর তিনটি প্রাকৃতিক আইসোটোপ রয়েছে। এগুলো রেডিয়াম, ইউরানিয়াম ও থোরিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা থেকে সৃষ্টি হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক শিলা, উদ্ভিদ, প্রাণী ও বিভিন্ন শিল্প থেকে প্রচুর রেডিয়ান গ্যাস বায়ুমন্ডলে যোগ হয়। সাধারণভাবে একজন মানুষ বছরে তিন মিলি সিভার্ট প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার সম্মুখীন হয়।

মানুষের সৃষ্ট

মানুষের সৃষ্ট তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা স্থান-কাল-পাত্র ভেদে বিভিন্ন রকমের হয়। চিকিৎসায় এক্স-রে ও অন্যান্য বিকিরণ থেরাপির মেশিন তেজস্ক্রিয়তার উল্লেখযোগ্য উৎস। শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি ও দ্রব্যের মান যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন কমপোনেন্ট ব্যবহার হয় যেগুলো থেকে বিপজ্জনক বিরণের সৃষ্টি হয়। নিউক্লিয়ার চুল্লী এবং যেসব পারমাণবিক মারণাস্ত্র জনবিরল এলাকায় পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা হয় সেখান থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয়তা বিরাট এলাকার মানুষের জন্য বিপজ্জনক। এছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লী থেকে বিভিন্ন দূর্ঘটনায় (চেরনোভিল ও ফুকুশিমা)বিপুল পরিমানে তেজস্ক্রিয় পদার্থ আশেপাশের বিরাট এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

পারিপার্শ্বিক পরিবেশ

আমাদের আশেপাশের প্রায় প্রত্যেক বস্তু থেকেই কমবেশি বিকিরণ হচ্ছে। আমাদের বাড়িঘর, খাদ্য, পানীয় এমনকি আমাদের নিজের শরীর থেকেও তেজস্ক্রিয় রশ্মির বিকিরণ হচ্ছে।

এই বিকিরণ খুবই কম মাত্রার যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর ভিত্তি করে এর হার কমবেশি হতে পারে। যেমন ইট-পাথরের তৈরি ঘরের বিকিরণের মাত্রা কাঠের ঘরের চেয়ে বেশি।

তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহার

গত কয়েক দশক ধরে মানুষ বিজ্ঞানের পারমাণবিক শাখায় যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছে অনেক কৃত্রিম আইসোটোপ। পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে, জটিল চিকিৎসায় এবং শিল্প-কারখানায় পারমাণবিক শক্তি তথা এইসব বিকিরণকে কাজে লাগানো হচ্ছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থেকে ফিশন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তাপ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে টারবাইন ও জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য

১) যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা 82-এর বেশি, কেবল সে সকল পরমাণু প্রাকৃতিকভাবে তেজস্ক্রিয় হতে পারে। এর ব্যতিক্রমও আছে যেমন  তেজস্ক্রিয় মৌল।

(২) তেজস্ক্রিয় পদার্থ সাধারণত আলফা, বিটা ও গামা —এই তিন প্রকারের তেজস্ক্রিয় রশি নিঃসরণ করে। 

(৩) তেজস্ক্রিয়তা একটি সম্পূর্ণ নিউক্লিয়ার ঘটনা এবং এর মাধ্যমে নিউক্লিয়াসের ভাঙনের ফলে একটি মৌল আর একটি নতুন মৌলে রূপান্তরিত হয়।

(৪) তেজস্ক্রিয়া একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও উদ্দেশ্যবিহীন ঘটনা এবং এটা চাপ, ভাপ, বিদ্যুৎ বা চৌম্বকক্ষেত্রের ন্যায় বাইরের কোনো প্রক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয় না।

আরো পড়তে: রশ্মি কাকে বলে, আপতিত রশ্মি কাকে বলে, প্রতিসরিত রশ্মি কাকে বলে

তেজস্ক্রিয়তার কারণ কি

তেজস্ক্রিয়তা একটি স্বতঃস্ফূর্ত স্বীয় বিচ্ছিন্নকারী (disruptive) অবিরাম প্রক্রিয়া। প্রকৃতিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রোটনসমৃদ্ধ স্থায়ী নিউক্লিয়াস হলো বিসমাথ (Bismuth)।

মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নিউট্রন ও প্রোটন সংখ্যার অনুপাত (n/p)-এর মান 1.5 অপেক্ষা বেশি হলে পোটন প্রোটন (p-p) বিকর্ষণধর্মী বল অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ফলে নিউক্লীয় বল প্রোটন ও নিউট্রনগুলিকে একত্রে ধরে রাখতে পারে। কাজেই নিউক্লিয়াস অস্থায়ী হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভাঙ্গতে শুরু করে এবং তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করে। সাধারণত কোনো মৌলের ভর সংখ্যা 210 বা তার বেশি হলে n/p−এর মান 15 অপেক্ষা বেশি হয়, ফলে এদের মধ্যে তেজস্ক্রিয় ধর্ম প্রকাশ পায়। তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণের সঙ্গে সঙ্গে তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াসটির প্রোটনের সংখ্যা পরিবর্তিত হতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণের পর এক সময় নিউক্লিয়াসটির নিউট্রন ও প্রোটন সংখ্যার অনুপাত 1.5 বা এর কাছাকাছি হয়। তখন নিউক্লিয়াসটি স্থিত হয় এবং পরমাণুর তেজস্ক্রিয়তা থাকে না।

তেজস্ক্রিয়তা একটি নিউক্লিয় ঘটনা ব্যাখ্যা কর, তেজস্ক্রিয়তা একটি নিউক্লিয় ঘটনা কেন

কোনো মৌল থেকে স্বতস্ফূর্তভাবে তেজস্ক্রিয় কণা বা আলফা, বিটা, গামা নির্গত হওয়াকে তেজস্ক্রিয়তা বলে। তেজস্ক্রিয়তা একটি নিউক্লীয় ঘটনা কারণ তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াসের ভাঙনের ফলে তেজস্ক্রিয় রশ্নি নির্গত হয়। এতে মৌলের ইলেক্ট্রন বিন্যাসের কোনো পরিবর্তন হয় না শুধুমাত্র ক্রমাগত তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ফলে নিউক্লিয়াসের পরিবর্তন ঘটে তাই তেজস্ক্রিয়তা একটি নিউক্লিয় ধর্ম।

তেজস্ক্রিয়তা একটি নিউক্লিয় ঘটনা।  পর্যায় সারণির ৮২- পারমাণবিক সংখ্যার পরের মৌলগুলোর কক্ষপথ, ইলেকট্রন ও প্রোটন সংখ্যা অত্যাধিক হওয়ায় এরা অস্থিতিশীল আচরণ করে। ফলে এদের নিউক্লিয়াসে বিটাক্ষয়ের মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয়ে মৌলটি কিছুটা স্থিতিশীল হয়। যেহেতু তেজস্ক্রিয় মৌলসমূহের নিউক্লিয়াস থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয়, তাই তেজস্ক্রিয়তা একটি নিউক্লিয় ঘটনা।

ভারী মৌলিক পদার্থের নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি নির্গমনের প্রক্রিয়াই হচ্ছে তেজস্ক্রিয়তা।প্রকৃত পক্ষে, যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ৮২ এর চেয়ে বেশি, সে সব মৌলগুলা উক্ত তিন প্রকার শক্তিশালী রশ্মি নির্গত করে কালক্রমে ভেঙে অন্যান্য লঘুতর মৌলে রূপান্তরিত হয়ে থাকে।যেমনঃ রেডিয়াম ধাতু তেজস্ক্রিয়তার ফলে ধাপে ধাপে পরিবর্তিত হয়ে শেষে সীসায় পরিণত হবে।মূলত এর ফলে নিউক্লিয়াসের ভাঙনে একটি মৌল আর একটি নতুন মৌলে রূপান্তরিত হয়।

তেজস্ক্রিয়তার ক্ষয় সূত্র

তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের তিন বছর পরে এলস্টার (Elster) ও পাইটেল (Geitel) নামক দু’জন বিজ্ঞানী লক্ষ করেন যে, কোনো তেজস্ক্রিয় বন্ধুর তেজস্ক্রিয়তা সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে কমতে থাকে এবং এই ক্ষয় সূচক নিয়ম (exponential law) মেনে চলে। তেজস্ক্রিয়তা বলতে একটি স্বতন্ত্র পরমাণুর পরিবর্তন বোঝায় এবং সমগ্র বস্তুখণ্ডের পরিবর্তন বোঝায় না। তেজস্ক্রিয়তা একটি স্বতঃস্ফূর্ত আকস্মিক ঘটনা। কোন্ মুহূর্তে কোন্ পরমাণুটি ভেঙে যাবে তা নির্দিষ্ট করে বলা অসম্ভব। এর ক্ষয় পরিসংখ্যানের নিয়ম মেনে চলে। পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণিত হয়েছে, তেজস্ক্রিয় পরমাণুর ভাঙনের বা ক্ষয়ের হার ঐ সময়ে উপস্থিত অক্ষত পরমাণুর সংখ্যার সমানুপাতিক ।

তেজস্ক্রিয় বিঘটনের বিভিন্ন পরীক্ষালব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণ করে বিখ্যাত বিজ্ঞানী সডি (Soddy) ও ফাজান্স (Fajans) দুটি সূত্র উদ্ভাবন করেন। এগুলোকে সডি-ফাজানস-এর সরণ সূত্র বলে।

(i) α-বিঘটনের সূত্র (α–disintegration law): কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের পরমাণুর α-বিঘটন হলে যে নতুন মৌল পরমাণু সৃষ্টি হয় তার ভর সংখ্যা ও পারমাণবিক সংখ্যা জনক তেজস্ক্রিয় মৌলটির ভর সংখ্যা ও পারমাণবিক সংখ্যা অপেক্ষা যথাক্রমে 4 একক ও 2 একক কম হয়।

(ii) β-বিঘটনের সূত্র (B-disintegration law) : কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের পরমাণুর β-বিঘটন হলে যে মৌল পরমাণু সৃষ্টি হয় তার ভর সংখ্যা জনক তেজস্ক্রিয় মৌলটির ভর সংখ্যার সমান হয় এবং পারমাণবিক সংখ্যা জনক মৌলটির পারমাণবিক সংখ্যা অপেক্ষা 1 বেশি হয়।

উল্লেখ্য, এখানে পারমাণবিক সংখ্যা 1 বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো যে β বিঘটনের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরের 1টি নিউট্রন ভেঙ্গে 1টি প্রোটনে পরিণত হয়। β বিঘটনে জনক ও দুহিতার ভর সংখ্যা সমান থাকে।

তেজস্ক্রিয়তার ক্ষতিকর দিক

নিচে তেজস্ক্রিয়তার ক্ষতিকর দিক গুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো : –

জীবজগতের উপর তেজস্ক্রিয়তার প্রতিক্রিয়া

অল্প মাত্রার তেজস্ক্রিয়তা আমাদের কোন ক্ষতি করে না। কারণ আমাদের শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া আমাদের শরীরের কোন কোষ আঘাতপ্রাপ্ত হলে অনেক ক্ষেত্রেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুস্থ হয়ে উঠে, কোষের মৃত্যু হলে আবার বায়োলোজিক্যাল প্রসেসে নতুন কোষের সৃষ্টি হচ্ছে। কত মাত্রা থেকে তেজস্ক্রিয়তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর তা একদম সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না। কারণ তা একেকজনের জন্য একেক রকম হতে পারে।

মানুষের উপর তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব ও মাত্রা তিনটি পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে: তেজস্ক্রিয়তা এলাকায় অবস্থানকালীন সময়, তেজস্ক্রিয়তার উৎস থেকে দুরত্ব এবং প্রতিরোধক ব্যবস্থা। এখনও পর্যন্ত কোনো নিরাপদ-মাত্রা আবিস্কৃত বা স্বীকৃত হয়নি, কারণ বিভিন্ন ব্যক্তির সহন-মাত্রা বিভিন্নরকম।

তবে সাধারণভাবে কোনো মানুষের একবারে ১ (এক) মিলি-সিভার্ট-এর বেশি রেডিয়েশন গ্রহণ নয় বলেই মনে করা হয়।

স্বাভাবিকভাবে একবার X-ray-তে যে পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা নির্গত হয় তার পরিমাণ ২০ মাইক্রো-সিয়েভার্ট। সাধারণভাবে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন থেরাপীতে তেজস্ক্রিয়তার যে মাত্রা ব্যবহার করা হয়, তা প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার তুলনায় অনেক বেশি।

একবার এক্স-রে করালে একটা মানুষ যে পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে আসে, তা প্রায় ১০ দিনের প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার সমান, যার কার্যকর মাত্রা প্রায় ০.১ মিলি সিভার্ট। কিডনি ও মূত্রাশয় পরীক্ষার জন্য আইভিপি বা ইন্ট্র্রাভেনাস পাইলোগ্রাম পরীক্ষায় ব্যবহূত তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ এক বছরের প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার সমান।

মানবদেহে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব

সকল তেজস্ত্রিয় পদার্থের প্রতিক্রিয়া সমান নয়। অতিরিক্ত মাত্রার তেজস্ক্রিয় পদার্থ শরীরে প্রবেশ করলে বা স্পর্শে এলে আমরা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুক্ষীণ হতে পারি। তেজস্ক্রিয় রশ্মি মানুষের সংস্পর্শে এলে শরীরের জীবিত কোষ ধ্বংস হয় কিংবা কোষের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণের সৃষ্টি হয়। আলফা ও বিটা রশ্মি শরীরের বাহ্যিক অংশে এবং গামা রশ্মি কোষের গঠনের ওপর প্রতিক্রিয়া করে।

বিকিরণের পরিমাণ সামান্য হলেও এতে বেশি সময় অবস্থানের ফলে তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আবার বিকিরণের পরিমাণ একটু বেশি হলেও এতে অল্প সময় অবস্থানের ফলে তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নাও হতে পারে। তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে ক্যানসার ও লিকোমিয়া রোগের সম্ভাবনা বেশি।

তাছাড়া নবজাতক ও শিশুদের শারীরিক ও মানসিক পঙ্গুত্বের জন্যও তেজস্ক্রিয়তা অনেকাংশে দায়ী। আমাদের মানবদেহে একদিনে বিভিন্ন মাত্রার তেজস্ক্রিয়তা গ্রহণের ফলে অসংখ্য প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এটা যদিও শারীরিক সক্ষমতার উপর ভিন্ন ভিন্ন হয় তবুও সাধারণ সক্ষমতার হিসেবে আনুমানিক ধারনার জন্য নিচের দু’টি তালিকা গ্রহণ করা যেতে পারে।

কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা কাকে বলে

কৃত্রিম উপায়ে কোন মৌলকে তেজস্ক্রিয় মৌলের পরিণত করলে যে তেজস্ক্রিয় তা ঘটে তাকে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় তা বলা হয়।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | তেজস্ক্রিয়তা

Q1. তেজস্ক্রিয়তা কি

Ans – তেজস্ক্রিয়তা হলো যেসকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ৮২ এর বেশি, তাদের নিউক্লিয়াস দ্রুত গতির নিউটন দ্বারা আঘাত করলে নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে উচ্চভেদন সম্পূর্ণ বিকিরণ নির্গত হওয়ার ঘটনা।ভারী মৌলিক পদার্থের নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি নির্গমনের প্রক্রিয়াকে তেজষ্ক্রিয়তা (Radioactivity) বলে।

Q2. ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন কে

Ans – ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন বেকেরেল।

Q3. তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপের একক কি

Ans – তেজষ্ক্রিয়তা পরিমাপ করার জন্য যে একক ধরা হয় তাকে বলা হয় বেকেরেল। প্রতি সেকেন্ডে একটি তেজষ্ক্রিয় বিভাজন বা তেজষ্ক্রিয় ক্ষয়কে এক বেকেরেল বলে।

Q4. তেজস্ক্রিয়তার একটি ক্ষতিকারক প্রভাব

Ans – ফুসফুস, যকৃতের ক্ষত, ক্যান্সার, রক্তাল্পতা ও রক্ত ক্যান্সার, অস্বাভাবিক, অপূর্ণাঙ্গ ও মৃত শিশুর জন্ম, জরায়ুর ক্যান্সার, স্নায়বিক বৈকল্য ও স্মৃতিশক্তির হ্রাস, দৃষ্টি হীনতা, চামড়া ও হাড়ের ক্যান্সার ইত্যাদি ।

Q5. তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপক যন্ত্র

Ans – তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপক যন্ত্র গাইগার কাউন্টার।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version