- অব্যয় কাকে বলে
- অব্যয় পদ কাকে বলে
- অব্যয় পদ কত প্রকার, অব্যয় পদের শ্রেণীবিভাগ
- পদান্বয়ী অব্যয় কাকে বলে
- সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে
- অনন্বয়ী বা ভাববাচক অব্যয়, অনন্বয়ী অব্যয় কাকে বলে
- অনুকার অব্যয় কাকে বলে
- ভাবপ্রকাশক অব্যয় কাকে বলে
- সম্মতি বা অসম্মতিসূচক অব্যয় কাকে বলে
- সম্বোধনসূচক অব্যয় কাকে বলে
- উপমাবাচক অব্যয় কাকে বলে
- সংযোজক অব্যয় কাকে বলে, সংযোজক অব্যয় কাকে বলে উদাহরণ দাও
- বিয়োজক অব্যয় কাকে বলে
- সংকোচক অব্যয় কাকে বলে
- সিদ্ধান্তবাচক অব্যয় কাকে বলে
- নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় কাকে বলে
- অনুসর্গ অব্যয় কাকে বলে
- আলংকারিক অব্যয় কাকে বলে
- অব্যয় পদ চেনার উপায়
- FAQ | অব্যয়
অব্যয় কাকে বলে
অব্যয় পদ কাকে বলে
ন + ব্যয় = অব্যয়। যার পরিবর্তন বা ব্যায় হয় না, অর্থাৎ যা অপরিবর্তনীয় শব্দ তাই অব্যয়।
অর্থাৎ যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থেকে কখনো বাক্যের শোভা বর্ধন করে, কখনো একাধিক পদের / বাক্যাংশের / বাক্যের সংযোগ বা বিয়োগ সম্বন্ধ ঘটায়, তাকে অব্যয় পদ বলে।
যে সকল শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত না হলেও লিঙ্গ, বচন, বিভক্তিভেদে রূপান্তরিত হয় না, অর্থাৎ যাদের মূল রূপের পরিবর্তন হয় না, তাদের বলা হয় অব্যয় পদ। যেমন- ও, বরং, হ্যাঁ, না, তবে, নতুবা, তথাপি, আর, নচেৎ ইত্যাদি।
অব্যয়ের সাথে কোনো বিভক্তি চিহ্ন যুক্ত হয় না, সেগুলোর একবচন বা বহুবচন হয় না এবং সেগুলোর স্ত্রী ও পুরুষবাচকতা নির্ণয় করা যায় না।
অন্যভাবে বলা যায়, যে পদে বচনে-লিঙ্গে-বিভক্তিতে কোনো পরিবর্তন ঘটে না, তা অব্যয়।
বাংলা ভাষায় তিন প্রকার অব্যয় শব্দ রয়েছে, যথা-
- বাংলা অব্যয় শব্দ – আর, আবার, ও, হ্যাঁ, না ইত্যাদি।
- তৎসম অব্যয় শব্দ – এবং, সুতরাং, যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্তুত ইত্যাদি।
- বিদেশি অব্যয় শব্দ – আলবাত, বহুত, খুব, শাবাশ, খাসা, মাইরি, মারহাবা ইত্যাদি।
অব্যয় পদ এর উদাহরণ
যেমন – কর্ম ব্যতীত সুখ লাভ সম্ভব নয়। রাকেশ ও তপন আজকে বেড়াতে যাবে। বিয়েতে আপনার কিন্তু আসা চাই।
ওপরে কথিত বাক্য তিনটিতে ব্যতীত, ও, কিন্তু এই অব্যয়গুলি বাক্যের মধ্যে বসে এক পদের সঙ্গে অন্য পদকে যুক্ত করেছে। এগুলোই অব্যয় পদ এর উদাহরণ।
- বাংলা এবং সংস্কৃত সাহিত্য থেকে বিভিন্ন শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।
- ছেলেটি গরিব কিন্তু সৎ।
- ওমা! আমার কী ভাগ্য।
উপরিউক্ত উদাহরণগুলিতে এবং, কিন্তু, ওমা পদগুলির লিঙ্গ, বচন কিংবা বিভক্তিভেদে রূপের কোনরকম পরিবর্তন হয়নি। বলা যায় ওদের মূল রূপের পরিবর্তন বা ব্যয় হয়নি। সেজন্য ওই পদগুলিকে অব্যয় বলা হয়।
অব্যয় শব্দের গঠন
বিবিধ উপায়ে অব্যয় শব্দ গঠিত হতে পারে। যথা-
১. একটিমাত্র বর্ণ বা শব্দখণ্ড বা শব্দ দ্বারা তো, বটে, হু, হা ইত্যাদি।
২. একাধিক অব্যয় শব্দযোগে কদাপি, নতুবা, অতএব, অথবা ইত্যাদি।
৩. আনন্দ বা দুঃখ প্রকাশক একই শব্দের দুইবার প্রয়োগ: ছি ছি, ধিক্ ধিক্, বেশ বেশ ইত্যাদি।
৪ . দুটি ভিন্ন শব্দযোগে মোটকথা, হয়তো, যেহেতু, নইলে ইত্যাদি।
৫. অনুকার শব্দযোগে কুহু কুহু, গুন গুন, ঘেউ ঘেউ, শন শন, ছল ছল, কন কন ইত্যাদি।
৬. তৎসম প্রত্যয়ের সাথে ‘ত’ প্রত্যয় যোগ করে ধর্মত, প্রথমত, স্পষ্টত ইত্যাদি।
অব্যয় পদ কত প্রকার, অব্যয় পদের শ্রেণীবিভাগ
একই অব্যয় সব ক্ষেত্রে একই অর্থে ব্যবহৃত হয় না, কখনো বাক্যে সংযোজন আর কখনো বা বাক্যে অনন্বয়ের ভূমিকা গ্রহণ করে। যেমন- তুমি কাজটি করবে, না আমি করব। তাছাড়া বাস্তব ধোনির অনুকরণে সৃষ্ট অনুকারবাচক শব্দও অব্যয় রূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন কলকল, ঝমঝম ইত্যাদি।
যাইহোক, অব্যয় একাধিক পদ বা একাধিক বাক্য বা বাক্যাংশ কে যুক্ত করে, বাক্য পদের মধ্যে সম্বন্ধ সম্পর্ক স্থাপন করে, মনের বিস্ময়, ঘৃণা, হর্ষ, ইত্যাদি ভাব প্রকাশ করে, কখনো বা বাস্তব ধ্বনির ভাব ফুটিয়ে তোলে। তাই বৈচিত্রের দিকে তাকিয়ে অব্যয়কে প্রধানত চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল- পদান্বয়ী অব্যয়, সমুচ্চয়ী অব্যয়, অনন্বয়ী অব্যয় এবং অনুকার অব্যয়।
আরো পড়তে: উপভাষা কি, উপভাষা কাকে বলে, ভাষা ও উপভাষার মধ্যে পার্থক্য
পদান্বয়ী অব্যয় কাকে বলে
পদান্বয়ী অব্যয় বাক্য বিভিন্ন পদের মধ্যে অন্বয় বা সম্পর্ক স্থাপন করে। যেমন: সহিত, নিমিত্ত, জন্য, সহ, মত, মতন ইত্যাদি।
পদান্বয়ী অব্যয় উদাহরণ
কর্ম ব্যতীত সুখ লাভ সম্ভব নয়। রাকেশ ও তপন আজকে বেড়াতে যাবে। বিয়েতে আপনার কিন্তু আসা চাই।
ওপরে কথিত বাক্য তিনটিতে ব্যতীত, ও, কিন্তু এই অব্যয়গুলি বাক্যের মধ্যে বসে এক পদের সঙ্গে অন্য পদকে যুক্ত করেছে। সুতরাং এগুলি পদান্বয়ী অব্যয়।
পদান্বয়ী অব্যয় বাক্যে প্রয়োগ
- ‘দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?’
- ‘বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া আমরা বাঁচিয়া আছি।’
প্রথম বাক্যে ‘বিনা’-র পূর্ববর্তী ‘দুঃখ’ পদে কোন বিভক্তি নেই। আবার দ্বিতীয় বাক্যে ‘ শব্দের সঙ্গে ‘এর’ বিভক্তি চিহ্ন যুক্ত আছে। অর্থাৎ এই উদাহরণ দ্বারা প্রমাণিত হয় পদান্বয়ী অব্যয়ের প্রয়োগ ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী পদে বিভক্তি চিহ্ন থাকতেও পারে আবার না-ও থাকতে পারে।
পদান্বয়ী অব্যয়কে প্রয়োগ অনুযায়ী কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) উপমা বাচক: মত, মতন, যেন, যেমন ইত্যাদি। উদা: ‘ভূতের মতন চেহারা যেমন নির্বোধ অতি ঘোর।’
খ) ব্যতীত অর্থবাচক: বিনা, ব্যতীত, বিহনে, ভিন্ন, ছাড়া ইত্যাদি। উদা: ‘এক সীতা বিহনে সকল অন্ধকার।’
গ) অনুসর্গরূপে প্রযুক্ত: সহিত, সঙ্গে, উপরে, নিচে, সামনে, পাশে, ভিতরে, বাইরে ইত্যাদি। উদা: ‘নূতনের জন্য ইচ্ছা খুবই হইতেছে।’
সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে
যে অব্যয় একাধিক পদ, বাক্যাংশ বা বাক্য সংযোজন ও বিয়োজন করে, তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বলা হয়।
সমুচ্চয়ী অব্যয় বাক্যে প্রয়োগ
- ‘অস্ত্র নির্মাণ তথা সৈন্য সমাবেশের প্রচুর ব্যয় হইবে।’
- সুখ বা দুঃখ কোন কিছু সে গ্রাহ্য করে না।
উপরিউক্ত উদাহরণগুলিতে তথা এবং বা অব্যয় পদ দুটি বাক্যের সংযোজন বা বিয়োজনের কাজ করেছে।
এই শ্রেণীর অব্যয়কে বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) সংযোজক: এবং, ও, আরো, তথা ইত্যাদি।
যেমন:
- তিনি এবং আমি সান্ধ্য ভ্রমণে যাব।
- শিক্ষিত মানুষ দেশ তথা সমাজের জন্য উপযোগী।
খ) বৈকল্পিক: অথবা, কিংবা, না, বা ইত্যাদি।
যেমন:
- অজয় অথবা বিজয় কেউ একজন যাবে।
- ভালো কিংবা মন্দ কিছু একটা হতে পারে।
গ) সংকোচক: কিন্তু, পরন্তু, অথচ, অধিকন্তু, তবু, তথাপি, বটে ইত্যাদি।
যেমন:
- “তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।”
- সে মুখ খুলল কিন্তু বলতে পারল না।
ঘ) ব্যতিরেকাত্মক: নতুবা, না হইলে, যদি না ইত্যাদি।
যেমন:
- তাড়াতাড়ি যেতে হবে, নইলে গাড়ি ধরতে পারবো না।
- অদৃষ্ট যদি না খারাপ হবে, তাহলে এমন কেন হবে!
ঙ) প্রশ্নবাচক: কি? না? নাকি? তাই নাকি? বটে? ইত্যাদি।
যেমন:
- বড্ড দূর, তাই না?
- মারবে নাকি?
চ) কারনাত্মক: যেহেতু, কারণ, বলিয়া ইত্যাদি।
যেমন:
- মানুষের শান্তি নাই, কারন মানুষ লোভী।
- আমি যেহেতু ক্লান্ত তাই আর হাঁটতে পারব না।
ছ) সংশয়বাচক: যদি, যদি বা, যদি নাকি, যদি না হয় ইত্যাদি।
যেমন:
- আর যদি এসেই পড়েন তাহলে?
জ) সিদ্ধান্ত বাচক: তবে, তাই, সুতরাং, তার জন্য, কাজেই, সেইজন্য ইত্যাদি।
যেমন:
- মধু বাড়ি গেলে তবে যদু আসবে।
- বৃষ্টি নেমেছে, সুতরাং বিকেলে ঠান্ডা পড়বে।
ঝ) হেতু বাচক: এই জন্য, এই হেতু, এই কারণে, তাহাতে, তাতেই ইত্যাদি।
যেমন:
- যে ভাত রান্না করেছো, তাতেই হবে।
- বাঙালি অলস, এই জন্য বাঙালির উন্নতি নাই।
ঞ) বাক্যালংকার: কতকগুলি অব্যয় আছে যাদের কোনো অর্থ নেই। এরা কেবলমাত্র বাক্যে প্রযুক্ত হয়ে বাক্যের শোভাবর্ধন করে এবং অলংকার রূপে বিরাজ করে। এদের বাক্যালংকার অব্যয় বলে।
যেমন:
- কি ছেলে কি বুড়ো সবাই এসেছে।
- ‘কত না দিনের দেখা, কত না রূপের মাঝে।’
ট) সমাপ্তিসূচক: শেষে, শেষটায়, যাহাতে ইত্যাদি।
যেমন: শেষটায় সভা পন্ড হবে কে জানত।
ঠ) নিত্য–সম্বন্ধী: কতকগুলি অব্যয় আছে, যেগুলি জোড়ায় জোড়ায় ব্যবহৃত হয়। একটি ভিন্ন অপরটি একা ব্যবহৃত হতে পারে না। এদের মধ্যে নিত্য সম্বন্ধ থাকে। এগুলিকে নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় বলে।
যেমন: তাজমহল এত সুন্দর যে, পৃথিবীর নানা দেশ থেকে লোক দেখতে আসে।
অনন্বয়ী বা ভাববাচক অব্যয়, অনন্বয়ী অব্যয় কাকে বলে
বাক্যস্থ পদের সাথে যে সকল অব্যয়-এর সরাসরি সম্পর্ক নেই, মনের বিষয়, হর্ষ, ঘৃণা, ভয়, ইত্যাদি ভাবপ্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়, সেই সকল অব্যয়কে অনন্বয়ী বা ভাববাচক অব্যয় বলা হয়ে থাকে। যেমন- ছি ছি, হায় হায়, আজ্ঞে, আহা, মরি মরি ইত্যাদি।
উদাহরণ:
- আজ্ঞে, আপনি যা বলেছেন সবই সত্যি।
- আহা, লোকটা অকালে মরল।
উপরিউক্ত উদাহরণগুলিতে আজ্ঞে, আহা এই অব্যয়গুলির সাথে বাক্যের কোন পদের সরাসরি সম্পর্ক নেই। এরা যথাক্রমে সম্মতিজ্ঞাপক এবং করুণা অর্থ প্রকাশক অব্যয় রূপে ব্যবহৃত হয়েছে।
অর্থানুসারে অনন্বয়ী বা ভাববাচক অব্যয়কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) প্রশংসাসূচক: বলিহারি, বাহবা, সাবাস, সুন্দর, আহা, চমৎকার, বেশ ইত্যাদি। উদা: কি সুন্দর মালা আজ গলায় পড়েছ তুমি।
খ) সম্মতি জ্ঞাপক: হ্যাঁ, আচ্ছা, বটে, আজ্ঞে, যথা আজ্ঞা, যা বলেন, তাই বটে, বেশ তো ইত্যাদি। উদা: আমি বললুম, আজ্ঞে হ্যাঁ।
গ) অসম্মতি জ্ঞাপক: না, আদপে না, আদৌ না, মোটেই না, একদম না, একেবারেই না, না তো, কখনো না ইত্যাদি। উদা: না মোটেই না, সব মিথ্যা।
ঘ) বিরক্তি ব্যঞ্জক: ছি, ছি, ছি, দুরদুর, ধিক ধিক, ওয়াক থু, রামো রামো, কি আপদ, কি মুশকিল, দুত্তর, কি জ্বালা, দূর ছাই, আ মলো ইত্যাদি। উদা: “ধিক ধিক, ওরে শত ধিক্ তোরে নিলাজ কুলটা ভূমি।”
ঙ) ভয়, যন্ত্রণা ও দুঃখ সূচক: ওহ, ইস, বাপরে বাপ, মা রে, বাবাগো, মাগো, হায় হায়, মরে গেলাম, ওরে বাবা, ওমা ইত্যাদি। উদা: বাপরে বাপ, কত বড় সাপ।
চ) বিস্ময় সূচক: বাহ, ওমা, আহা, কি বা, ওমা কোথা যাব, হরি হরি, করো কি ইত্যাদি। উদা: ওমা; কি সুন্দর সূর্যোদয়।
ছ) করুণা, স্নেহ ও আদর সূচক: বেচারা, আহা, আহা রে, বাছা আমার, বাপ আমার, মানিক আমার, সোনা আমার, গোপাল আমার, মরে যাই ইত্যাদি। উদা: বাছা আমার, হতভাগিনীকে ফেলে চলে গেলি।
জ) সম্বোধন সূচক: এই, ওহে, এইযে, ওগো, ওরে, হ্যাঁগো বাছা, হে ইত্যাদি। উদা: হে ভগবান, তুমি সকলের মঙ্গল কর।
অনুকার অব্যয় কাকে বলে
অনুকার অব্যয় সম্পর্কে মতপার্থক্য আছে। কেউ মনে করেন, বাস্তব ধ্বনির অনুকরণে সৃষ্ট অব্যয় পদ গুলি অনুকার অব্যয় হয়। কেউ ভাবেন, অবস্থা বা ভাবের দ্যোতক কিংবা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় হলো অনুকার অব্যয়। আবার কেউ কেউ অনুকার অব্যয়-এর অস্তিত্বকেই স্বীকার করেন না।
তাদের যুক্তি হলো ধ্বন্যাত্মক অব্যয় ও অনুকার অব্যয় এক হতে পারেনা। তাছাড়া তথাকথিত অনুকার অব্যয়ে বিভক্তির প্রয়োগ হয়ে রূপান্তর ঘটে, সেজন্য অনুকার শব্দ হতে পারলেও অনুকার অব্যয় হতে পারে না। ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় অনুকার বাচক অব্যয় এর অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন।
অনুকার অব্যয়-এর দৃষ্টান্ত স্বরূপ তিনি বলেছেন- “কোকিল কুহু কুহু করিতেছে।” সেই সঙ্গে তিনি মেঘের ডাক, কামানের গর্জন, প্রবাহিত গঙ্গার তরঙ্গের ধ্বনি প্রভৃতির উল্লেখ করেছেন। যাইহোক অনুকার অব্যয়কে বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।
১) বাস্তব ধ্বনির অনুকরণে সৃষ্ট ধ্বন্যাত্মক অব্যয় অনুকার অব্যয়-এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন- কল কল, ঝমঝম, ঝনঝন, বকবক, টুপ টুপ, গুরুগুরু ইত্যাদি। যেমন: ক) “গুরু গুরু মেঘ গুমরি গুমরি গরজে গগনে গগনে।” খ) “ঝমঝম” শব্দ করে বৃষ্টি পড়ে চলেছে।
২) অনুভূতি গ্রাহ্য বিভিন্ন প্রকার ভাবপ্রকাশ করতেও অনুকার অব্যয়-এর ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন- ক) মাথাটা টন টন করছে। খ) সকাল থেকে চোখটা খচখচ করছে। গ) ভয়ে বুকটা ঢিপ ঢিপ করছিল।
৩) অবস্থা, গতি, শূন্যতা, পূর্ণতা ইত্যাদি অর্থ অনুকার অব্যয় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন- ক) কুচকুচে কালো রংয়ের কুকুরটা দেখতে বাঘের মতন। খ) খোলা দরজাটা হা হা করছে। গ) বিলে জল থইথই করছে।
৪) কথার মাত্রা স্বরূপ কিছু বিকৃত ধ্বনিমূলক অব্যয়ও অনুকার অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- কাপড়চোপড়, রকমসকম ইত্যাদি।
ভাবপ্রকাশক অব্যয় কাকে বলে
যে অব্যয় বক্তার মনের ভাব প্রকাশ করে, তাকে ভাব প্রকাশক অব্যয় বলে। যেমন – মরি মরি! একি লজ্জা! ধন্য ধন্য। বাংলাদেশ।
এখানে মরি মরি, ধন্য ধন্য বিশেষ ভাব প্রকাশ করেছে। তাই এগুলি ভাব প্রকাশক অব্যয়।
সম্মতি বা অসম্মতিসূচক অব্যয় কাকে বলে
যে অব্যয় পদের দ্বারা বক্তার মনের ইচ্ছা বা অনিচ্ছা প্রকাশ পায়, তাকে সম্মতি বা অসম্মতিসূচক অব্যয় বলে। যেমন – হ্যাঁ, আমি তো যাবই। না, কথাটা সত্যি নয়।
এখানে হ্যাঁ সম্মতিসূচক অব্যয় এবং না অসম্মতিসূচক অব্যয়।
সম্বোধনসূচক অব্যয় কাকে বলে
যে অব্যয়ের দ্বারা কাউকে সম্বোধন করা বোঝায়, তাকে সম্বোধনসূচক অবায় বলে। যেমন – হ্যাঁগো, আজ কলকাতা যাবে কি? ওরে, একবার এদিকে আয়।
উপমাবাচক অব্যয় কাকে বলে
যে সব অব্যয়ের দ্বারা উপমা বা তুলনাকে বোঝায় তাকে, উপমাবাচক অব্যয় বলে। যেমন – চাঁদের মতো সুন্দর। মিছরির ন্যায় মিষ্টি। তুলোর মতো নরম।
সংযোজক অব্যয় কাকে বলে, সংযোজক অব্যয় কাকে বলে উদাহরণ দাও
যে অব্যয় পদ বাক্যের সঙ্গে বাক্যের বা পদের সঙ্গে পদের সংযোগ সাধন করে, তাকেই সংযোজক অব্যয় বলে।
সংযোজক অব্যয় এর উদাহরণ
যেমন – আমি খেলার মাঠে গিয়েছিলাম; কিন্তু তোমায় দেখতে পাইনি। বাবা এবং মায়ের কথা শোনা উচিত।
বিয়োজক অব্যয় কাকে বলে
বিকল্প বোঝাতে বাক্যের মধ্যে যে অব্যয় ব্যবহৃত হয়, তাকেই বিয়োজক অব্যয় বলে। যেমন – হয় তুমি একাজ কর নয় তাকে কাজটি করতে দাও। তুমি অথবা সমর সেখানে যাবে।
সংকোচক অব্যয় কাকে বলে
যে অব্যয় একটি বিষয়কে সংকুচিত করে কিন্তু অন্য বিষয়কে প্রাধান্য দেয়, তাকে সংকোচক অব্যয় বলে।
যেমন – এখন খেলা বন্ধ করে বরং পড়াশোনায় মন দাও। ভালো খেলোয়াড় হয়েছ জানি; তবুও মন দিয়ে পড়াশোনা করো।
হেতুবাচক অব্যয় কাকে বলে
কারণ বোঝাতে যে অব্যয় বাক্যে ব্যবহৃত হয় তাকে হেতুবাচক অব্যয় বলে। যেমন – বাবা আমাকে মেরেছেন কারণ আমি তাঁর কথা শুনিনি। আপনি তাড়াতাড়ি আসবেন কেননা আমি পড়তে যাবো।
সিদ্ধান্তবাচক অব্যয় কাকে বলে
যে অব্যয়ের দ্বারা সিদ্ধান্ত বোঝায় তাকে সিদ্ধান্তবাচক অব্যয় বলে। যেমন – মশায় কামড়েছে তাই ম্যালেরিয়া হয়েছে। শ্যাম আসবে বলে রাম বসেছিল।
নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় কাকে বলে
এমন কতগুলো অব্যয় আছে যারা একে অপরের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত একটি বসলে অপরটি বসবেই, একে নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় বলে।
যেমন – বটে কিন্তু, যেমন-তেমন, যখন-তখন, যেমনি কর্ম তেমনি ফল।
অনুসর্গ অব্যয় কাকে বলে
যে সকল অব্যয় শব্দ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের বিভক্তির ন্যায় বসে কারকবাচকতা প্রকাশ করে, তাদের অনুসর্গ অব্যয় বলে।
যেমন- ধন অপেক্ষা মান বড় (‘অপেক্ষা’ অনুসর্গ অব্যয়)। ওকে দিয়ে এ কাজ হবে না (‘দিয়ে’ অনুসর্গ অব্যয়)। অনুসর্গ অব্যয় দুই প্রকার। যথা- বিভক্তিসূচক অব্যয় এবং বিভক্তি রূপে ব্যবহৃত অনুসর্গ।
আলংকারিক অব্যয় কাকে বলে
যে অব্যয় বাক্যের মধ্যে বসে বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, তাকে বাক্যালঙ্কার বা আলংকারিক অব্যয় বলে।
যেমন – এ গাড়ি তো গাড়ি নয়। দেখে মনে হয় যেন উরজাহাজ। ‘তো’ ‘যেন’ এগুলি বাক্যালঙ্কার অব্যয়। কারণ এগুলি বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।
অব্যয় পদ চেনার উপায়
অব্যয় পদ চেনার কিছু উপায় নিম্নে তুলে ধরা হল:
1. শব্দগুচ্ছের শেষে ‘ব্যয়’ যুক্ত হলে সেগুলো অব্যয় পদ। যেমন: অনব্যয়, অবিব্যয়, অসম্ভব্যয় ইত্যাদি।
2. ‘মাত্র’ শব্দটি যুক্ত থাকলে সেগুলো অব্যয় পদ। যেমন: শুধুমাত্র, কেবলমাত্র, প্রায়মাত্র ইত্যাদি।
3. ‘বিনা’ উপসর্গ যুক্ত শব্দগুলোও অব্যয় পদ। যেমন: বিনামূল্যে, বিনাশর্তে, বিনাবিলম্বে ইত্যাদি।
4. এছাড়াও কিছু নির্দিষ্ট শব্দ যেমন ‘অতি’, ‘অতিশয়’, ‘অত্যন্ত’ ইত্যাদি অব্যয় পদ।
একটি বাক্যের উদাহরণ দেওয়া হল:
“সে অত্যন্ত দরিদ্র ছিল বিনামূল্যে ওষুধ পেয়ে গেল।”
এখানে ‘অত্যন্ত’, ‘বিনামূল্যে’ এবং ‘ওষুধ’ শব্দগুলো অব্যয় পদ।
এভাবে অব্যয় পদ চেনার কিছু উপায় বিবেচনা করা যেতে পারে।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | অব্যয়
Q1. অব্যয় কি
Ans – বাক্যে বা শব্দের সাথে ব্যবহৃত যে সকল ধ্বনি-বিভক্তি, বচন, লিঙ্গ ও কারকভেদে কোনোভাবে পরিবর্তন হয় না, সেসকল পদকে অব্যয় বলে।
Q2. অব্যয় মানে কি
Ans – বাক্যে বা শব্দের সাথে ব্যবহৃত যে সকল ধ্বনি-বিভক্তি, বচন, লিঙ্গ ও কারকভেদে কোনোভাবে পরিবর্তন হয় না, সেসকল পদকে অব্যয় বলে।
Q3. অব্যয় এর ইংরেজি কি
Ans – অব্যয় এর ইংরেজি preposition।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।