Site icon prosnouttor

ভৌত পরিবর্তন কাকে বলে, ভৌত পরিবর্তনের ৫ টি উদাহরণ, ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য

ভৌত পরিবর্তন কাকে বলে, ভৌত পরিবর্তনের ৫ টি উদাহরণ, ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য

ভৌত পরিবর্তন কাকে বলে, ভৌত পরিবর্তনের ৫ টি উদাহরণ, ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

ভৌত পরিবর্তন কাকে বলে

যে পরিবর্তনের ফলে পদার্থের শুধু বাহ্যিক আকার বা অবস্থার পরিবর্তন হয়, কিন্তু তা কোনো নতুন পদার্থে পরিণত হয় না তাকে ভৌত পরিবর্তন বলে।

ভৌত পরিবর্তন হল এমন এক ধরনের পরিবর্তন যেখানে পদার্থের রূপ পরিবর্তিত হয় কিন্তু একটি পদার্থ অন্য পদার্থে রূপান্তরিত হয় না। বস্তুর আকার বা আকৃতি পরিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া সংগঠিত হয় না।

পদাৰ্থ এর ভৌত পরিবর্তন বলতে বোঝায়, পদাৰ্থ এর রূপ পরিবর্তনের পরেও আগের অবস্থায় ফিড়িয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। যেমন জল বাষ্প করলেও সেই বাষ্পকে আবার জলে ফিড়িয়ে আনা যায়।

ভৌত পরিবর্তনে কোনো নতুন পদার্থ তৈরি হয় না, যদিও পদার্থের রূপ পরিবর্তিত হয় যেমন, আকার, আকৃতি, আয়তন, চেহারা, রঙ, অবস্থা (যেমন কঠিন, তরল, গ্যাস) ইত্যাদি।

যেমন – বরফকে বায়ুতে মুক্ত অবস্থায় রেখে দিলে পরিবেশ থেকে তাপ শোষণ করে তরল পানিতে পরিণত হয় এবং তরল পানিকে 100°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হয়। বরফ, তরল পানি এবং জলীয় বাষ্পের রাসায়নিক সংকেত H2O। প্রত্যেকটি উপাদানে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের শতকরা সংযুতিও একই।

ভৌত পরিবর্তনের উদাহরণ, ভৌত পরিবর্তনের ৫ টি উদাহরণ

যে পরিবর্তনের ফলে পদার্থের শুধু বাহ্যিক আকার বা অবস্থার পরিবর্তন হয় কিন্তু নতুন কোন পদার্থে পরিনত হয় না, তাকে ভৌত পরিবর্তন বলে। যেমন: পানিকে ঠান্ডা করে বরফে এবং তাপ দিয়ে জলীয় বাষ্পে পরিণত করা, একটি লোহার টুকরাকে ঘর্ষণ করে চুম্বকে পরিণত করা ও তাপ দিয়ে মোম গলানো।

ভৌত পরিবর্তনের উদাহরণগুলোর মধ্যে রয়েছে যেমন : –

১. পানি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। কিন্তু পানির তাপমাত্রা পরিবর্তন করে 0º সেলসিয়াস এ নিয়ে আসলে পানি তরল থেকে কঠিনে পরিণত হয়। অর্থাৎ বরফ তৈরি করে। আবার, বরফের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে, বরফ গলে পানিতে পরিণত হয়। আবার পানির তাপমাত্রা 100º সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি করলে পানি ফুটতে শুরু করে। অর্থাৎ পানি তরল অবস্থা থেকে গ্যাসীয় অবস্থায় বা জলীয় বাষ্পে রূপান্তর ঘটে। জলীয়বাষ্পকে ঠান্ডা করলে তা আবার পানিতে পরিণত হয়। বরফ, পানি ও জলীয় বাষ্প একই পদার্থের তিনটি ভিন্ন ভৌত অবস্থা। কিন্তু বরফ, পানি ও জলীয় বাষ্পে পানির রাসায়নিক গঠন অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ এ তিন অবস্থাতেই একটি অক্সিজেন পরমাণু ; দুটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। সুতরাং পানি হতে বরফ বা জলীয় বাষ্প তৈরি হওয়া পদার্থের একটি ভৌত পরিবর্তন।

২. মোমের দহন একটি ভৌত পরিবর্তন। মোমের সলতেতে আগুন জ্বালালে তাপে কিছু মোম গলে তরল হয়। এই তরল মোম, মোমের গা বেয়ে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ে। তরল মোমকে ঠান্ডা করলে তা আবার কঠিন মোমে পরিণত হয়। সুতরাং এটি একটি ভৌত পরিবর্তন।

৩. চিনির দানাকে গুড়া করলে বড় দানা হতে ক্ষুদ্র দানার সৃষ্টি হয়। কিন্তু চিনির অন্য কোন পদার্থে রূপান্তর ঘটে না। মুখে দিলে দেখা যায় ছোট-বড় উভয় প্রকার চিনির দানা সমান মিষ্টি। সুতরাং বড় দানাকে গুড়া করে ছোট দানা তৈরি করা পদার্থের একটি ভৌত পরিবর্তন।

৪. একটি লোহার টুকরাকে চুম্বক দ্বারা ঘর্ষণ করলে লোহার টুকরাটি চুম্বুকত্ব প্রাপ্ত হয়। কিন্তু এ সময় লোহা অন্য কোন পদার্থে পরিণত হয় না। আবার চুম্বুকত্ব প্রাপ্ত লোহার টুকরাকে উত্তপ্ত করলে তা চুম্বকত্ব হারিয়ে আবার সাধারণ লোহায় পরিণত হয়। সুতরাং এটি একটি ভৌত পরিবর্তন।

৫. খাবার লবণকে পানিতে দ্রবীভূত করলে লবণ অদৃশ্য হয়ে যায়। লবণের দ্রবণকে বাষ্পীভূত করলে পানি সহজেই বাষ্পে পরিণত হয়ে উড়ে যায় এবং লবণকে পূর্বের অবস্থায় ফিরে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে লবণের শুধু অবস্থাগত পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু লবনের আণবিক গঠনের কোন পরিবর্তন হয় না। সুতরাং এটি একটি ভৌত পরিবর্তন।

৬. একটি লোহার টুকরাকে চুম্বক দ্বারা ঘর্ষণ করলে লোহার টুকরাটি চুম্বুকত্ব প্রাপ্ত হয় কিন্তু লোহা অন্য কোন পদার্থে পরিণত হয় না। আবার চুম্বকত্ব প্রাপ্ত লোহার টুকরাকে উত্তপ্ত করলে তা চুম্বকত্ব হারিয়ে আবার সাধারণ লোহায় পরিণত হয়। সুতরাং এটি একটি ভৌত পরিবর্তন।

৭. কঠিন সালফার গলিয়ে তরল সালফারে পরিণত করলে সালফারের রঙ পরিবর্তন হয়। কিন্তু সালফারের রাসায়নিক গঠন একই থাকে।

একমুখী ভৌত পরিবর্তনের উদাহরণ

তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন একটি একমুখী ভৌত পরিবর্তনের উদাহরণ।

ভৌত পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য

ভৌত পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য যেমন : –

  1. ভৌত পরিবর্তন হল একটি পদার্থের এমন পরিবর্তন যা তার রাসায়নিক গঠন পরিবর্তন না করে ঘটে।
  2. ভৌত পরিবর্তনে পদার্থের আকার, আকৃতি, অবস্থা বা রঙ পরিবর্তন হতে পারে। তবে, পদার্থের উপাদানগুলির মধ্যে কোনও নতুন বন্ধন গঠিত হয় না বা ভাঙা হয় না।
  3. ভৌত পরিবর্তনগুলি সাধারণত রাসায়নিক পরিবর্তনগুলির চেয়ে সহজ।
  4. ভৌত পরিবর্তনগুলিকে সাধারণত বিপরীত করা যেতে পারে, যেমন বরফকে গলিয়ে জল করা বা জলকে বাষ্প করে তরল করা। তবে, কিছু ভৌত পরিবর্তনকে বিপরীত করা যায় না, যেমন কাঠকে পুড়িয়ে ছাই করা।
  5. ভৌত পরিবর্তনের মাধ্যমে কোন নতুন বস্তুর সৃষ্টি হয় না। 
  6. ভৌত পরিবর্তনের মাধ্যমে বস্তুর শুধু ভৌত ধর্মের পরিবর্তন হয়।
  7. ভৌত পরিবর্তনে বস্তুর অণু গঠনের কোন পরিবর্তন হয় না। 
  8. ভৌত পরিবর্তনে বস্তুর রাসায়নিক সংযুতির পরিবর্তন হয় না।
  9. ভৌত পরিবর্তনে তাপ শক্তির শোষণ বা উদগীরণ ঘটতে পারে, নাও পারে।
  10. ভৌত পরিবর্তন অস্থায়ী।

মোমের দহন ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন ব্যাখ্যা কর, মোমের ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন

মোমবাতির প্রধান উপাদান হাইড্রোকার্বন অ্যালকেন। মোমবাতির দহন করলে ভৌত পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তন উভয়ই ঘটে।

ভৌত পরিবর্তনঃ  যে পরিবর্তন শুধু পদার্থের বাহ্যিক অবস্থার (কঠিন, তরল ও গ্যাস) পরিবর্তন ঘটায় তাকে ভৌত পরিবর্তন বলে।

মোমবাতির দহন করলে ভৌত পরিবর্তন ঘটে। মোমের সলতে আগুন দিলে তাপের প্রভাবে সলতের নিচের অংশে কঠিন মোম গলে তরলে পরিণত হয়। 

আবার এই তরল মোম, মোমের গা বেয়ে নিচের দিকে পড়লে তরল মোম আবার কঠিন মোমে রূপান্তরিত হয়। আবার তাপের প্রভাবে কিছু মোম গ্যাসে পরিণত হয়। 

অর্থাৎ মোমকে দহন করলে কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থার পারস্পারিক রূপান্তর ঘটে। 

অর্থাৎ ভৌত পরিবর্তন সংঘটিত হয়। 

রাসায়নিক পরিবর্তনঃ কোন পদার্থ যখন  তার নিজস্ব ধর্ম সম্পূর্ণ হারিয়ে ভিন্ন ধর্ম বিশিষ্ট অন্য  কোন পদার্থে পরিণত  হয়  হওয়াকে  রাসায়নিক পরিবর্তন বলে।
মোমকে দহন করলে মোমের হাইড্রোকার্বন অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO₂)  জলীয় বাষ্প (H₂O)  এবং তাপ ও আলো শক্তি উৎপন্ন করে। এতে মোম এর সম্পূর্ণ ধর্ম হারিয়ে ভিন্ন ধর্ম বিশিষ্ট কার্বন- ডাই- অক্সাইড ও জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। 

এজন্য মোমবাতির দহনে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে।

মোম + O₂ —–>CO₂ (g) + H₂O (g) + তাপ + আলো

অতএব বলা যায়,  মোমবাতির দহন করলে ভৌত পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তন উভয়ই ঘটে।

ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য

বৈশিষ্ট্যভৌত পরিবর্তনরাসায়নিক পরিবর্তন
সংজ্ঞাযে পরিবর্তনের ফলে পদার্থের অবস্থার বা আকার-আকৃতির পরিবর্তন হয় কিন্তু নতুন কোনো পদার্থ উৎপন্ন হয় না, তাকে ভৌত পরিবর্তন বলে।যে পরিবর্তনের ফলে পদার্থ পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থে পরিণত হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে।
অবস্থাভৌত পরিবর্তনের মাধ্যমে পদার্থের শুধু ভৌত ধর্মের পরিবর্তন হয়।রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন হয়।
গঠনভৌত পরিবর্তনের ফলে পদার্থের অণু গঠনের কোন পরিবর্তন হয় না। রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে পদার্থের গঠন পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন অণুর সৃষ্টি হয়।
স্থায়ীত্বভৌত পরিবর্তন একটি সাময়িক পরিবর্তন। রাসায়নিক পরিবর্তন একটি স্থায়ী পরিবর্তন।
শক্তিভৌত পরিবর্তনে শক্তির শোষণ বা  উৎপন্ন হতেও পারে বা নাও হতে পারে।রাসায়নিক পরিবর্তনে শক্তির শোষণ এবং বিবর্তন ঘটে।
পুনরুদ্ধার ভৌত পরিবর্তনে সহজে মূল পদার্থ পুনরুদ্ধার করা যায়।রাসায়নিক পরিবর্তন অপরিবর্তনীয় অর্থাৎ মূল পদার্থ পুনরুদ্ধার করা যায় না।
সৃষ্টিভৌত পরিবর্তনের ফলে কোন নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয় নারাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট পদার্থের সৃষ্টি হয়।
সংযুক্তিভৌত পরিবর্তনের ফলে পদার্থের রাসায়নিক সংযুক্তির পরিবর্তন হয় না। রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে পদার্থের রাসায়নিক সংযুক্তির পরিবর্তন হয়।
পরিবর্তনবস্তুর রাসায়নিক সংযুক্তির পরিবর্তন হয় না।রাসায়নিক সংযুক্তির পরিবর্তন হয়।
তাপশক্তিতাপশক্তির শোষণ বা উদগিরণ ঘটতে পারে, নাও ঘটতে পারে।তাপশক্তির শোষণ বা উদগিরণ অবশ্যই ঘটবে।
উদাহরণ ভৌত পরিবর্তনের উদাহরণ হল, পানি বরফ হওয়া, মোম গলে যাওয়া,রাসায়নিক পরিবর্তনের উদাহরণ হল খাবার হজম হওয়া, লোহায় মরিচা পড়া ইত্যাদি।
ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | ভৌত পরিবর্তন

Q1. ভৌত পরিবর্তন কি

Ans – কোন বস্তু বা পদার্থের বাহ্যিক যে পরিবর্তন তাই ভৌত পরিবর্তন। অর্থ্যাৎ দৃশ্যমান কোন কিছু যেমন পানি তরল থেকে কঠিন হওয়া এটা হলো ভৌত পরিবর্তন।

Q2. ভৌত অবস্থা কি, পদার্থের ভৌত অবস্থা কি

Ans – পদার্থবিদ্যার ভাষায়,একটি পদার্থের চিহ্নযোগ্য অবস্থাকেই পদার্থের অবস্থা বলা হয়। আমরা আমাদের রোজকার জীবনে পদার্থের ৩ ধরনের অবস্থা দেখে থাকি: কঠিন,তরল, গ্যাসীয়। এছাড়াও আরও কিছু অবস্থা আছে, যা কেবলমাত্র চরম পরিস্থিতিতেই পাওয়া যায়।

Q3. ভৌত ধর্ম কাকে বলে

Ans – রাসায়নিক ধর্মের বিপরীতে পদার্থের আরও এক শ্রেণীর ধর্ম আছে, যাদেরকে পদার্থের ভৌত ধর্ম বলে। ভৌত ধর্মগুলিকে পদার্থের নমুনার গাঠনিক কাঠামো পরিবর্তন না করেই পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপ করা সম্ভব। এগুলির মধ্যে আছে রঙ (বর্ণ), চাপ, দৈর্ঘ্য, ঘনমাত্রা, ইত্যাদি।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version