Site icon prosnouttor

Mahabharat Bangla, মহাভারতের রচয়িতা কে, মহাভারত বাংলা সকল পর্ব

Mahabharat Bangla, মহাভারতের রচয়িতা কে, মহাভারত বাংলা সকল পর্ব

Mahabharat Bangla, মহাভারতের রচয়িতা কে, মহাভারত বাংলা সকল পর্ব

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

মহাভারত কাকে বলে, Mahabharat Bangla

মহাভারত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ সমূহের অন্যতম একটি মহাগ্রন্থ। মহাভারতের মূল উপজীব্য বিষয় হল কৌরব ও পাণ্ডবদের গৃহবিবাদ এবং কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনাবলি। তবে এই আখ্যানভাগের বাইরেও দর্শন ও ভক্তির অধিকাংশ উপাদানই এই মহাকাব্যে সংযোজিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ – এই চার পুরুষার্থ-সংক্রান্ত একটি আলোচনা (১২।১৬১) সংযোজিত হয়েছে এই গ্রন্থে। মহাভারত-এর অন্তর্গত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা ও উপাখ্যানগুলি হল ভগবদ্গীতা, দময়ন্তীর উপাখ্যান, রামায়ণ-এর একটি সংক্ষিপ্ত পাঠান্তর ইত্যাদি; তবে এগুলিকে মহাভারত-রচয়িতার নিজস্ব সৃষ্টি বলে মনে করা হয়।

মহাভারতের রচয়িতা ব্যাসদেব( কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস )। অনেক গবেষক এই মহাকাব্যের ঐতিহাসিক বিকাশ ও রচনাকালীন স্তরগুলি নিয়ে গবেষণা করেছেন। অধুনা প্রাপ্ত পাঠটির প্রাচীনতম অংশটি মোটামুটি ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ গুপ্তযুগে রচিত হয়।মহাভারতের মূলপাঠটি তার বর্তমান রূপটি পরিগ্রহ করে গুপ্তযুগের প্রথমাংশে (খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দী)।

মহাভারত কথাটির অর্থ হল ভরত বংশের মহান উপাখ্যান। গ্রন্থেই উল্লিখিত হয়েছে যে ভারত নামে ২৪,০০০ শ্লোকবিশিষ্ট একটি ক্ষুদ্রতর আখ্যান থেকে মহাভারত মহাকাব্যের কাহিনিটি বিস্তার লাভ করে। তবে ব্যাস প্রথমে ৮৮০০ শ্লোক বিশিষ্ট জয়া (বিজয়) নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন।

পরে ব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন সেই গ্রন্থকে বৃদ্ধি করে ২৪০০০ শ্লোক বিশিষ্ট ভারত গ্রন্থ রচনা করেন। পরে অপর এক শিষ্য উগ্রশ্রবাঃ ভারত গ্রন্থকে বৃদ্ধি করে এক লাখ শ্লোক বিশিষ্ট “মহাভারত” গ্রন্থ রচনা করেন।মহাভারতে এক লক্ষ শ্লোক ও দীর্ঘ গদ্যাংশ রয়েছে। এই মহাকাব্যের শব্দসংখ্যা প্রায় আঠারো লক্ষ।

মহাভারত মহাকাব্যটির আয়তন ইলিয়াড ও ওডিসি কাব্যদ্বয়ের সম্মিলিত আয়তনের দশগুণ এবং রামায়ণের চারগুণ।

মহাভারতের রচয়িতা কে, মহাভারত কে রচনা করেন

মহাভারতের রচয়িতা মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস । বেদব্যাস প্রথমে কুরু-পান্ডবের যুদ্ধে পান্ডবদের জয়সূচক ‘জয়’ নামক এক ঐতিহাসিক কাব্য রচনা করেন । তাই মহাভারতের আদি নাম হলো জয় । বৈশম্পায়ন তাকে বাড়িয়ে নাম দেন ‘ভারত’ । অবশেষে সৌতি এখানে আরো কথার সমাবেশ ঘটিয়ে নামকরণ করেন “মহাভারত” ।

মহাভারত রচনার কাহিনী অতিব বিচিত্র । মহারাজ পরীক্ষিতের পুত্র জনমেজয় একবার ব্রহ্মহত্যা করে বসেন ।

“দ্বিজ ক্ষত্র বৈশ্য শুদ্র ছিল যত জন ।

সবে গেল একমাত্র রহিল রাজন ।।

তখন রাজা জনমেজয় বড় অনুতপ্ত হলেন । এই সময় মুণিশ্রেষ্ঠ ব্যাসদেব তখন তার সভায় আগমন করলেন । এবং বললেন :

“ব্রহ্মবধ-আদিপাপ সব হৈবে ক্ষয় ।

অশ্বমেধ ফল পাবে নাহিক সংশয় ।।

এক লক্ষ শ্লোকে মহাভারত রচন ।

শুচি হইয়া একমনে করহ শ্রবণ ।।”

সরলার্থ : হে মহারাজ জনমেজয়, আপনি যদি শুদ্ধচিত্তে মহাভারত শ্রবণ করেন তাহলে আপনার ব্রহ্মহত্যার পাপ তো দূরীভূত হবেই, সেইসাথে আপনি একটি অশ্বমেধ যজ্ঞের ফলও লাভ করতে পারবেন

মহাভারতের প্রচার-প্রসার

অতঃপর মুণি তার শিষ্য বৈশম্পায়নের নিকট জনমেজয়কে মহাভারত আখ্যান শ্রবণ করতে বললেন । মহারাজ জনমেজয় তখন মহাভারত শ্রবণ করতে লাগলেন । সেই সময় জনমেজয়ের সভায় উপস্থিত ছিলেন লোমহর্ষণ মুণির পুত্র সৌতি । তিনিও বৈশম্পায়নের মুখে মহাভারত শুনলেন ।

ঋষি সৌতি আবার নৈমিষারণ্যে অবস্থানরত বহু মুণি-ঋষিদের মাঝে বৈশম্পায়ন কথিত মহাভারত বর্ণনা করেছিলেন । অতএব এটা বলা যায় যে মহাভারতের আদি রচয়িতা ব্যাসদেব হলেও এর প্রবক্তা বৈশম্পায়ন এবং প্রচারক সৌতি মুণি ।

মহাভারত বাংলায় অনুবাদ করেন কে, মহাভারত বাংলা রচয়িতা কে

বাংলাভাষায় কে সর্বপ্রথম মহাভারত অনুবাদ করেন, তা ঠিক করে বলা কঠিন । তবে যে প্রাচীন কবি সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবেই কিছু বলা যায়, তিনি ‘পরাগলী’ মহাভারতের কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর । তৎকালীন সময়ে পরাগল খান ছিলেন চট্রগ্রামের শাসনকর্তা । এই পরাগল খানের অনুরোধেই কবীন্দ্র পরমেশ্বর মহাভারত অনুবাদ করেন । এই গ্রন্থকেই বলা হয় ‘পরাগলী মহাভারত’ বা ‘পান্ডববিজয় পাঞ্চালিকা’ ।

পরাগল খানের পুত্র ছুটি খানও পিতার মতই মহাভারত রচনা চেষ্টায় সহায়তা করেছিলেন । তার অনুরোধেই শ্রীকর নন্দী জৈমিনি মহাভারত থেকে অশ্বমেধ পর্বের বিস্তৃতি ব্যাখ্যা করেন ।

কবীন্দ্র পরমেশ্বর মধ্যযুগীয় (১৬শ শতাব্দী) বাঙালি কবি। তিনিই সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় সংস্কৃত মহাকাব্য মহাভারত অনুবাদ করেন। তিনি হোসেন শাহের সেনাপতি ও চট্টগ্রামের শাসনকর্তা পরাগল খাঁ-র সভাকবি ছিলেন।

বাংলাতে মহাভারতের অনেকগুলি অনুবাদ আছে । এর মধ্যে কাশীরাম দাসের অনুবাদিত গ্রন্থটিকে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে গণ্য করা হয়।

মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কাশীরাম দাস সপ্তদশ শতকে বর্তমান ছিলেন বলে মনে করা হয় । বাংলাভাষায় সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থের মধ্যে কাশীরাম দাস রচিত মহাভারত অন্যতম । কাশীরাম দাস ষোড়শ শতকের শেষার্ধে জন্মগ্রহণ করে সপ্তদশ শতকের প্রথমভাগেই মহাভারত রচনা করেছিলেন ।

মহাভারতের অপর নাম কি

মহাভারতের একাধিক নাম রয়েছে। এখানে নামগুলির তালিকা রয়েছে যার সাথে এটি পরিচিত।

মহাভারতের আদি নাম কি ছিল

মহাভারতের আদি নাম ছিল জয়াসংহিতা।

প্রথম অবস্থায় (আকারেও তখন খুব ছোট ছিল) তার নাম ছিল জয় (জয় সংহিতা)।

তারপরে (তখন তার আকার ক্রমে বৰ্দ্ধিত হচ্ছে) নাম ক্ৰমে বদলে গিয়ে ‘ভারত’ আর একসময় ‘মহাভারত’ নাম হয়েছিল।

মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে

মহাভারতে যখনই কোন চরিত্রের বীরত্বকে বর্ণিত করেছেন, সেটা এমন ভাবে করেছেন যেন, সেই চরিত্রটিই মহাভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর চরিত্র! বাকি সবাই তাঁর বীরত্বের কাছে তুচ্ছ।

যখন কর্ণ চরিত্রটির বীরত্বের বর্ণনা দিয়েছেন, তখন মনে হয় যেন কর্ণ চরিত্রটিই মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা চরিত্র! যখন কৃপাচার্য চরিত্রটির বর্ণনা দিয়েছেন, তখন মনে হয় ঐ চরিত্রটিই শ্রেষ্ঠ, যখন দ্রোণাচার্যের বীরত্বের বর্ণনা দিয়েছেন, তখন মনে হয় দ্রোণাচার্য্য চরিত্রটিই শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা চরিত্র।

আবার যখন ভীষ্মদেব চরিত্রটির বীরত্বের বর্ণনা করেছেন, তখন মনে হয় উনিই সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা চরিত্র, উনার চেয়ে বড় যোদ্ধা আর নাই।

আর অর্জুনে চরিত্রটির বীরত্ব সম্পর্কে মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস নিজে তো বলেছেনই, মহাভারতে বাকি যে সকল শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা চরিত্র গুলো আছে তাঁদেরকে দিয়েও বলিয়েছেন! তার কারণও আছে! মহাভারতের কাহিনী অনুযায়ী স্বয়ং বিষ্ণুর যুগল অবতার হচ্ছেন নর ও নারায়ণ ঋষিদ্বয়! এবং সেই নর-নারায়ণের নারায়ণ-ই হচ্ছেন স্বয়ং কৃষ্ণ এবং নর হচ্ছেন স্বয়ং অর্জুন।

তার অর্থ হল কৃষ্ণের মত অর্জুনও স্বয়ং বিষ্ণুর অংশ! আর এই কথাটি মহাভারতের রচিয়তা মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস বিভিন্ন সময়ে স্বয়ং কৃষ্ণকে দিয়েও বলিয়ে নিয়েছেন! আর পুরো মহাভারত জুড়েই সেই অর্জুনেরই বীরত্বের কাহিনী বর্ণিত আছে!

কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধে কর্ণের সাথে একবার যুদ্ধ শুরুর পূর্বে অর্জুন কৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন – “হে মাধব, আজকের যুদ্ধে যদি কর্ণ আমাকে নিহত করে তাহলে তুমি কী করবে?” উত্তরে কৃষ্ণ বলেছিলেন –

“হে পার্থ, যদি সূর্য তাঁর স্থান হতে নিপতিত হয়, মহাসাগর শুকিয়েও যায় এবং যদি অগ্নি শীতল হয়ে যায়, তবুও কর্ণ তোমাকে নিহত করিতে সমর্থ হবেন না।”

পুরো মহাভারত জুড়ে অর্জুনের বীরত্ব সম্পর্কে এরকম বহু উপমার বর্ণন থাকার পরেও আবার যখন আপনি কর্ণ সম্পর্কে পড়বেন তখন মনে হবে কর্ণের চেয়ে বড় বীর আর নাই।

আবার এমন এমন কিছু যোদ্ধার নিকট কর্ণ এমন বাজে ভাবে পরাজিত হয়েছেন যে, সেই ঘটনা যখন পড়বেন তখন আপনার মনে হবে যে, কর্ণ খুবই সাধারণ মানের একজন যোদ্ধা।

আবার কর্ণ এমন কিছু যোদ্ধাকে পরাজিত করেছেন যাদেরকে স্বয়ং অর্জুনও পরাজিত করতে পারেন নি।

মহাভারতের কয়টি পর্ব ও কি কি

মহাভারতের কাহিনী আঠারটি পর্বে লিপিবদ্ধ। সংক্ষেপে সে কাহিনী বলবার চেষ্টা করছি। মহাভারতে আঠারোটি পর্ব আছে। সেগুলি হল যথাক্রমে- আদিপর্ব, সভাপর্ব, বনপর্ব, বিরাটপর্ব, উদোগ পর্ব, ভীষ্ম পর্ব, দ্রোন পর্ব, কর্ন পর্ব, শল্যপর্ব, সৌক্তিক পর্ব, স্ত্রীপর্ব, শান্তি পর্ব, অনুশাসন পর্ব, অশ্বমেধিক পর্ব, আশ্রমবাসিক পর্ব, মহাপ্রস্থানিক পর্ব, স্বর্গারোহন পর্ব।

মহাভারত বাংলা সকল পর্ব, মহাভারত বাংলা সকল পর্ব ১ থেকে ২৮৮, মহাভারতের কাহিনী, মহাভারত বাংলা

মহাভারত একটি সুবিশাল কাহিনী যা ১৮ টি পর্বে বিভক্ত।

মহাভারত আদি পর্ব

বর্তমান দিল্লীর কাছেই হস্তিনাপুরের রাজা শান্তনু। ধার্মিক, রূপবান, মহাবীর সেই রাজা গঙ্গাদেবীর মানবী মূর্তিকে বিয়ে করেন একটি শর্তে। গঙ্গার কোন কাজে তিনি বাধা দেবেন না কখনও। প্রতি বছর গঙ্গার গর্ভে এক একটি করে পুত্রের জন্ম হয়, গঙ্গাদেবী সেই পুত্রগুলিকে এক এক করে গঙ্গায় ভাসিয়ে মেরে ফেলেন।

শান্তনুর বড় দুঃখ কিন্তু কিছু বলতে পারছেন না। এক এক করে সাতটি পুত্রকে ফেলে দেবার পর অষ্টমবারে রাজা গঙ্গার এই কাজে বাধা দিলেন। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জন্য গঙ্গা শান্তনু রাজাকে ত্যাগ করে চলে গেলেন। তবে তিনি তাঁর অষ্টম পুত্রকে রাজাকে দিয়ে গেলেন। স্বর্গের আটজন বসুই অভিশপ্ত হয়ে গঙ্গার পুত্ররূপে জন্মেছিলেন। বশিষ্ঠদেবের কামধেনু চুরি করার ফলেই তাঁরা এইভাবে অভিশপ্ত ছিল।

তাঁদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশী দোষী ছিলেন, তিনি গঙ্গার এই অষ্টম সন্তান। মহারাজ শান্তনু সেই পুত্রের নাম রাখলেন দেবব্রত। একদিন মহারাজ মৃগয়ায় গিয়ে এক অপরূপা রমণীকে দেখতে পেয়ে বিচলিত হলেন, তারপর তাকে অনুসরণ করে পৌঁছে গেলেন ধীবররাজের ঘরে। প্রস্তাব দিলেন ধীবরের কন্যাকে বিয়ে করতে চান তিনি। ধীবর একটি শর্ত দিলেন – তার কন্যার গর্ভের পুত্র হবে হস্তিনাপুরের ভাবী সম্রাট।

শান্তনু সে প্রস্তাবে রাজী হতে পারলেন না। কারণ তাঁর প্রথম পুত্র দেবব্রতকে তিনি প্রাণাপেক্ষাও ভালবাসেন। বিশেষ করে সর্বগুণে ভূষিত সেই পুত্র। দুঃখিত মনে ফিরে এল মহারাজ । পুত্র দেবব্রত জানতে পারলেন পিতার দুঃখের কারণ। তারপর ধীবরের ঘরে গিয়ে প্রতিজ্ঞা করলেন জীবনে তিনি কখনও বিয়ে করবেন না আর রাজত্বও নেবেন না। এই প্রতিজ্ঞার জন্য তাঁর নাম হল ‘ভীষ্ম’।

পুত্রের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে মহারাজ শান্তনু তাঁকে ইচ্ছামৃত্যুর বর দিলেন। অর্থাৎ আপন ইচ্ছায় হবে তাঁর মৃত্যু। মহারাজ শান্তনু ধীবরকন্যা সত্যবতীকে বিয়ে করলেন। কালক্রমে তাঁর গর্ভে চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্য্যের জন্ম হল। তাদের বাল্যাবস্থায় মহারাজের মৃত্যু হল। কাজে কাজেই ভীষ্মই প্রতিনিধি হয়ে রাজকার্য পরিচালনা করলেন। পরে রাজা হলেন চিত্রাঙ্গদ। কিন্তু এক গন্ধর্বরাজের সঙ্গে যুদ্ধে তাঁর মৃত্যু হয়। তখন রাজা হলেন বিচিত্রবীর্য্য।

কাশীরাজের তিন কন্যা—অম্বা, অম্বিকা ও অম্বালিকা। তাদের স্বয়ম্বরে ভীষ্ম গিয়ে রথে তুলে নিয়ে আসেন, সেখানে উপস্থিত সকল রাজাদের পরাস্ত করে । উদ্দেশ্য বিচিত্রবীর্য্যের সঙ্গে বিয়ে দিবেন। কিন্তু তাদের মধ্যে অম্বা শাল্বরাজের বাকদত্তা। সে তার গলাতেই মালা দিয়ে চায়। ভীষ্ম এই কথা জানতে পেরে অম্বাকে ছেড়ে দেন। তখন অম্বা শাম্বের কাছে ফিরে গেলেও শাল্ব তাকে গ্রহণ করল না।

অম্বা তখন ভীষ্মকেই বিয়ে করতে চায়। কিন্তু ভীষ্ম প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই অম্বা অগ্নিকুণ্ডে প্রাণ দিল। বিচিত্রবীর্য্যের সঙ্গে বিয়ে হল অম্বিকা ও অম্বালিকার। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যে বিচিত্রবীর্য্যের মৃত্যু হল এক কঠিন রোগে। তিনি তখন পুত্রহীন। বংশরক্ষা হবে কেমন করে? সত্যবতীর কুমারী অবস্থায় এক পুত্র ছিলেন, তিনি হলেন সেই মহামুনি ব্যাসদেব। মায়ের ইচ্ছায় তিনি ভ্রাতৃবধূদের গর্ভে দুই পুত্র সৃষ্টি করলেন।

অম্বিকার গর্ভে হল অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র আর অম্বালিকার গর্ভে জন্মাল পাণ্ডু। পরে সেই ব্যাসদেবের ঔরসে এক দাসীর গর্ভে জন্মালেন বিদুর সেই বিদুর পরবর্তীকালে এক মহান ধার্মিক হলেন । অন্ধত্বের জন্য ধৃতরাষ্ট্রকে রাজা না করে পাণ্ডুকেই রাজা করা হল। ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহ হয় গান্ধারীর সঙ্গে।

রাজা পাণ্ডুর দুই ভার্য্যা। একজন কৃষ্ণের পিতা বসুদেবের ভগ্নী কুন্তী আর একজন মদ্রদেশের রাজা শল্যের ভগ্নী মাদ্রী।

কুন্তীর কুমারী অবস্থায় সূর্য্যের বরে এক পুত্র ছিল, তার নাম কর্ণ। অধিরথ নামে এক সারথির ঘরে সেই কর্ণ বড় হয়। যুদ্ধবিদ্যায় মহাবীর হয়ে উঠেন। বিদুর বিবাহ করেন সুদেব নামে এক রাজার কন্যা পরাশরীকে। পাণ্ডুরাজার পাঁচ পুত্র। কুন্তীর গর্ভে ধর্মরাজের বরে যুধিষ্ঠির, পবনের বরে ভীম আর ইন্দ্রের বরে অর্জুন। মাদ্রীর গর্ভে অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের বরে নকুল ও সহদেব। পাণ্ডুর এই পাঁচ পুত্ৰ ‘পাণ্ডব’ নামে পরিচিত।

ধৃতরাষ্ট্রের একশ পুত্র, এক কন্যা। পুত্রদের জ্যেষ্ঠ দুর্যোধন, পরে দুঃশাসন ইত্যাদি। আর কন্যার নাম দুঃশলা। ধৃতরাষ্ট্রের এই শত পুত্র ‘কৌরব’ নামে পরিচিত। রাজা পাণ্ডুর হল অকালমৃত্যু। মাদ্রী গেলেন সহমরণে।

তারপর রাজা হলেন অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র। পাণ্ডুপুত্র ও নিজের পুত্রদের বিদ্যাশিক্ষা দিলেন কৃপাচার্য্যের কাছে। অস্ত্রবিদ্যায় পাণ্ডবরা কৌরবদের থেকে এগিয়ে। বিশেষ করে অর্জুন। এর ফলে দুৰ্য্যোধন পাণ্ডব বিদ্বেষী হয়ে উঠল—বিশেষ করে ভীমের উপর।

কারণ ভীমের কাছে দুর্যোধন কখনই এঁটে উঠতে পারত না। একদিন গঙ্গাস্নানে গিয়ে দূৰ্য্যোধন গোপনে ভীমকে খাবারের সঙ্গে বিষ খাইয়ে নদীতে ফেলে দেয়। কিন্তু রাখ হরি মারে কে। ভীম জলে ডুবে গিয়ে নাগলোকে চলে গেল। সেখানে সাপের দংশনে বিষে বিষে বিষক্ষয় হল। বাসুকি নাগ ভীমকে অমৃত খাইয়ে আগের থেকে আরও বেশী বলবান করে তুলল।

কৃপাচার্য্যের পর কুরু-বালকদের অস্ত্রগুরু হলেন দ্রোণাচার্য্য। একদিন পরীক্ষা নিলেন সবার। সেই পরীক্ষায় ধনুর্বিদ্যায় জিতলেন কেবল অর্জুন। আর গদাযুদ্ধে ভীম আর দুর্য্যোধন প্রায় সমান । কিছুদিন পরে আর এক পরীক্ষাতেও অর্জুন হলেন সবার সেরা। কর্ণ ছিলেন সেখানে। তিনি অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাইলেন। কিন্তু তিনি সারথির পুত্র হওয়ায় সে যুদ্ধের মহড়া শেষ পৰ্য্যন্ত হল না।

কর্ণের তাই খুব দুঃখ, দুর্য্যোধন তাঁকে অঙ্গরাজ্য দান করে সেখানকার রাজা করে দিলেন। তখন কর্ণ প্রতিজ্ঞা করল চিরকাল দুর্য্যোধনের বন্ধু হয়েই থাকবে। দুর্যোধনের মামা শকুনি মহাকূটবুদ্ধিদাতা। তার বাবার নাম ছিল সুবল। সুবল মারা যাওয়ার পর তার হাড় দিয়ে পাশাখেলার গুটি তৈরি করে, সেই গুটির দ্বারা পাশাখেলায় সব সময় সে জিতে যেত।

পাণ্ডবদের প্রতি দুর্য্যোধনের সদাই হিংসা, কেমন করে তাঁদের বিনাশ করা যায় – এই চিন্তা তার সবসময়। মামা শকুনি, সখা কর্ণ আর ভাই দুঃশাসনকে নিয়েই তার শলা-পরামর্শ।

একবার এই রকম এক যুক্তি করে বারাণাবতে সহজে জ্বলে উঠে এমন সব জিনিস দিয়ে ঘর বানিয়ে দুর্য্যোধন পাণ্ডবদের পাঠিয়ে দিল সেখানে পুড়িয়ে মারবার জন্য। সঙ্গে তাঁদের মা কুন্তীদেবীও ছিলেন। বিদুর দুর্যোধনের সেই কৌশল জানতে পেরে গোপনে সেই ঘরটি থেকে একটা সুড়ঙ্গ কেটে রাখলেন।

তারপর পঞ্চপাণ্ডব সেই ঘরটিতে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যান সেই পথ দিয়ে। তারপর তাঁরা গঙ্গা পার হয়ে এক বনের মধ্যে আশ্রয় নিলেন। সেখানে এক রাক্ষস হিড়িম্ব আর তার বোন হিড়িম্বা থাকে। হিড়িম্ব তাঁদেরকে খাওয়ার চেষ্টা করলে ভীম তাকে বধ করে। ভীম তার বোন হিড়িম্বাকে বিয়ে করেন। তার গর্ভে ভীমের এক পুত্র জন্মায় – তার নাম ঘটোৎকচ। সে মায়ের কাছে বনেই রয়ে গেল।

তারপর পঞ্চপাণ্ডব ব্রাহ্মণবেশে নানা স্থানে ঘুরতে ঘুরতে একচক্রা গ্রামে এসে এক ব্রাহ্মণের বাড়ীতে আশ্রয় নেন। সেই গ্রামের পাশে এক বনে বক নামে এক রাক্ষস থাকত। গ্রামের শান্তির জন্য প্রতিদিন তার কাছে একটি করে মানুষ পাঠিয়ে দেওয়া হত। একদিন পড়ল সেই ব্রাহ্মণ বাড়ীর পালা। কাঁদতে বসেছে সবাই। একজনকে হারাতে হবে। কিন্তু ভীম সেই বক রাক্ষসকে মেরে সারা গ্রামেরই উপকার করলেন।

সেই সময় পাঞ্চালরাজ দ্রুপদ তাঁর কন্যা দ্রৌপদীর স্বয়ংবরের ব্যবস্থা করলে, অর্জুন লক্ষ্যভেদ করে তাকে লাভ করেন। কিন্তু মা কুন্তীর ইচ্ছায় পঞ্চপাণ্ডবই হলেন তার স্বামী। পরে পঞ্চপাণ্ডবের ছদ্মবেশ প্রকাশ পেল। তখন ধৃতরাষ্ট্র সংবাদ পেয়ে পাণ্ডবগণকে নিজ রাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে এলেন। তারপর সমগ্র রাজ্যকে দু’ভাগ করে, এক ভাগ পাণ্ডবদের আর এক ভাগ নিজের পুত্রদের দিলেন।

পাণ্ডবরা রাজ্য স্থাপন করলেন ইন্দ্রপ্রস্থে। পাঁচ ভাই এর এক স্ত্রী। তাই একটা নিয়ম করা হল—যখন দ্রৌপদীর সঙ্গে কোন এক ভাই গোপনে আলাপ করবেন, তখন কেউ সেখানে যাবে না। কিন্তু অর্জুন এক ব্রাহ্মণের গোরু চোরকে শাস্তি দেবার জন্য অস্ত্রাগারে প্রবেশ করার জন্য সেই নিয়ম লঙ্ঘন করায় তাঁকে বারো বছরের জন্য দেশত্যাগী হতে হল।

অর্জুন প্রথমে পাতালরাজ্যে গিয়ে নাগকন্যা উলুপীকে বিয়ে করেন। তারপর মণিপুরে গিয়ে সেখানকার রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদাকে বিয়ে করেন। তার গর্ভে বজ্রবাহনের জন্ম হয়। এই দুই রাজকন্যা সেই রাজার কাছেই রয়ে গেলেন। তারপর অর্জুন দ্বারকায় গিয়ে শ্রীকৃষ্ণের ভগ্নী সুভদ্রাকে হরণ করে ইন্দ্রপ্রস্থে নিয়ে এলেন তাঁকে সঙ্গে করে।

ক্ষুধাতুর অগ্নিদেবের ইচ্ছা হল খাণ্ডববন দহন করবার। তখন তিনি কৃষ্ণ ও অর্জুনের সাহায্য চাইলেন। দারুণভাবে বাধা দিলেন ইন্দ্র। ব্রহ্মার পরামর্শমত অগ্নি তখন অর্জুনকে দিলেন গাণ্ডীব ধনুক, অক্ষয় তৃণ আর একটি দিব্য রথ – যার নাম কপিধ্বজ। কৃষ্ণকে দিলেন কৌমোদকী গদা ও সুদর্শন চক্র। খাণ্ডববন পুড়তে লাগল, ইন্দ্র বাধার সৃষ্টি করলেও শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের কাছে হার স্বীকার করে ফিরে গেলেন। রক্ষা পেল মাত্র চারটি বকের ছানা, তক্ষকের পুত্র অশ্বসেন আর ময়দানব।

মহাভারত বাংলা সভা পৰ্ব

ময়দানব একজন দক্ষ শিল্পী। অর্জুন তার দ্বারায় ইন্দ্রপ্রস্থে একটি সুন্দর সভাগৃহ তৈরি করালেন। অপরূপ তার কারুকার্য্য। ইতিমধ্যে দ্রৌপদীর গর্ভে পঞ্চপাণ্ডবের পাঁচটি পুত্র জন্মেছে। তারা হল যথাক্রমে— প্রতিবিন্ধ্য, সুতসোম, শ্রুতবর্মা, শাতনীক ও সুতসেন।

মহারাজ যুধিষ্ঠির দেবর্ষি নারদের পরামর্শে রাজসূয় যজ্ঞ করবেন। তার আগে সকল রাজাদের পরাজিত করে কর আদায় করার বিধান আছে। সকল রাজাই নত মস্তকে কর দিলেন। একমাত্র জরাসন্ধই বাধ সাধলেন। ভীম শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শে জরাসন্ধকে মল্লযুদ্ধে বিনাশ করলেন। মহারাজ যুধিষ্ঠির রাজসূয় যজ্ঞ শুরু করবেন।

শ্রীকৃষ্ণকেই যজ্ঞেশ্বর-শ্রেষ্ঠ হিসাবে ঘোষণা করা হলে, শিশুপাল সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে শ্রীকৃষ্ণকে কটাক্ষ করে বহু কটূক্তি করল। শিশুপালের মায়ের কাছে কৃষ্ণ প্রতিশ্রুত ছিলেন যে, তিনি তার শত অপরাধ ক্ষমা করবেন। তাই শিশুপালের শত অপরাধ পূর্ণ হওয়ার পর আরও অপরাধ করলে শ্রীকৃষ্ণ সুদর্শন চক্রের দ্বারায় তার মস্তক ছেদন করলেন। তারপর নির্বিঘ্নে শেষ হল যজ্ঞের কাজ।

পাণ্ডবদের ঐশ্বর্য্য দেখে দুর্য্যোধনের চোখ ঠিকরে গেল। হিংসায় জ্বলতে লাগল। তাঁদের স্ফটিক নির্মিত প্রাসাদটিতে জলকে স্থল আর স্থলকে জল জ্ঞান করে লজ্জিতও হল। ফিরে এল হস্তিনায়। মামা শকুনির পরামর্শে যুধিষ্ঠিরকে পাশা খেলতে ডাকলে ধর্মভীরু যুধিষ্ঠির না বলতে পারলেন না। খেলতে শুরু করলেন।

শকুনির পাশার জুয়াচুরির জন্য যুধিষ্ঠির তাঁর সমস্ত ঐশ্বর্য্য, সৈন্য-সামন্ত, রাজধানীও হারালেন। শেষে চার ভাই, নিজে এমন কি দ্রৌপদীকেও পণ রাখলেন আর হেরেও গেলেন। দুৰ্য্যোধনের মনোবাসনা পূর্ণ হল। দুঃশাসনকে আদেশ করলেন দ্রৌপদীকে সভামাঝে ধরে নিয়ে আসার জন্য। আনা হল তাঁকে। তারপর আদেশ করল তাঁকে উলঙ্গ করবার জন্য।

দুঃশাসন দ্রৌপদীর শাড়ী ধরে টানছে। তখন দ্রৌপদী শ্রীকৃষ্ণের শরণাপন্ন হলে, ভগবান অজস্র বস্ত্র জোগান করে তাঁর লজ্জা নিবারণ করলেন। পঞ্চপাণ্ডবের সামনে এতসব কাণ্ড হয়ে গেল কেউ মাথা তুলতে পারছে না লজ্জায়। কিন্তু ভীম সবার সামনে প্রতিজ্ঞা করলেন – দুঃশাসনের বুক চিরে রক্তপান করবেন, আর কুরুকুল ধ্বংস করবেন।

তারপর দুর্য্যোধন ঊরু দেখিয়ে দ্রৌপদীর প্রতি কুৎসিত ইঙ্গিত করলে, ভীম আবার পণ করলেন – গদাঘাতে তার ঊরু ভাঙবেন। ভীমের পরাক্রম সবাই জানে। তাই তাঁর প্রতিজ্ঞা শুনে সবাই আতঙ্কিত। তাই ধৃতরাষ্ট্র ভীষ্মের সঙ্গে পরামর্শ করে পাণ্ডবদের পাশা খেলায় হারানো সকল সম্পদ ফিরিয়ে দিলেন।

দুৰ্য্যোধন কিন্তু হিংসায় জ্বলতে লাগল। আবার পাশা খেলার জন্য যুধিষ্ঠিরকে ডেকে পাঠালেন। সেই খেলার পরিণাম জেনেও যুধিষ্ঠির যোগ দিলেন খেলায়। শকুনির চক্রান্তে আবারও পরাজিত হলেন। পণ রাখলেন—বারো বছর বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাতবাস। সেই অজ্ঞাতবাসকালে প্রকাশ হলে, আবার হবে বারো বছর বনবাস। এই পণে খেলায় আবার হারলেন পঞ্চপাণ্ডব।

তারপর পঞ্চপাণ্ডব মা-কুন্তীকে বিদুরের কাছে রেখে দ্রৌপদীকে নিয়ে চললেন বনবাসে। তারপর একদিন দেবর্ষি নারদ কৌরবসভায় এসে ধৃতরাষ্ট্রকে বহু তিরস্কার করে জানিয়ে গেলেন তের বছর পরে হবে কুরুবংশ ধ্বংস। নারদের ভবিষ্যৎ-বাণী শুনে ধৃতরাষ্ট্র খুব দুঃখিত হলেন। কিন্তু এখন আর করার কিছু নেই।

বনপর্ব পাণ্ডবগণ প্রথমে রইলেন কাম্যকবনে। তাঁদের সঙ্গে তাঁদের অনুগত ভৃত্য ছিল চৌদ্দজন ৷ অসংখ্য গুণমুগ্ধ প্রজাও ছিল তাঁদের সঙ্গে। চিন্তিত হলেন যুধিষ্ঠির—এত লোকের আহার জুটবে কেমন করে? ধৌম্য নামে এক ব্রাহ্মণের উপদেশমত যুধিষ্ঠির সূর্য্যের আরাধনা করলেন। সূর্য্যদেব খুশী হয়ে যুধিষ্ঠিরকে দিলেন এক স্বর্ণথালা। তার গুণ হল এই – যতক্ষণ না দ্রৌপদীর আহার শেষ হচ্ছে, ততক্ষণ সেই থালার কাছ থেকে যত খাবার চাইবে, সবই পাবে। আর কোন চিন্তা নাই।

অসংখ্য লোকের আহার সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। সবাইকে নিয়ে যুধিষ্ঠির আনন্দেই আছেন। কাম্যকবনে থাকাকালীন ভীম বক রাক্ষসের ভাই কির্মীকে বধ করলেন। সেই বনে থাকার সময় তাঁদের সঙ্গে প্রায়ই দেখা করতে আসতেন বহু মুনি-ঋষিরা। একদিন শ্রীকৃষ্ণও এলেন। তিনি পাণ্ডবদের সান্ত্বনা দিয়ে বললেন – তেরোটা বছর দেখতে দেখতেই কেটে যাবে। কৌরবরা তাদের দুষ্কর্মের ফলভোগ করবে। ধর্মের জয় একদিন হবেই।

কাম্যকবনে বেশ কিছুদিন বাস করার পর পাণ্ডবরা দ্বৈতবনে গিয়ে কুটির বাঁধলেন। একদিন ব্যাসদেব তাঁদের কুটিরে গিয়ে তাঁদেরকে ‘প্রতিস্মৃতি’ নামে একটি মন্ত্র শিখিয়ে দিলেন। অর্জুন সেই মন্ত্র জপ করে মহাদেবকে সন্তুষ্ট করে বহু অস্ত্র-শস্ত্র ও আশীর্বাদ লাভ করলেন তাঁর কাছ থেকে। তারপর অর্জুন স্বর্গে গিয়ে কুবের, যম, বরুণ, ইন্দ্রাদি দেবতাগণের কাছ থেকে বহু অস্ত্র লাভ করলেন।

অর্জুন যখন তপস্যার জন্য চলে গেলেন, সেই সময় লোমশ মুনির পরামর্শমত পাণ্ডবগণ দ্রৌপদীসহ নানা তীর্থ ভ্রমণ করে বদ্রীনাথে অবস্থান করছেন, অর্জুন স্বর্গলোক থেকে পুষ্পক রথে চড়ে সেখানে এলেন। তারপর তাঁরা দ্বৈতবন হয়ে পুনরায় কাম্যকবনে গিয়ে বাস করতে লাগলেন। পাণ্ডবদের বনে পাঠিয়ে কৌরবেরা খুব খুশী।

তাঁদের দুঃখের অবস্থা নিজেদের চোখে দেখবার জন্য নিজেদের ঐশ্বর্য্য দেখানোর উদ্দেশ্যে দুর্য্যোধন সপরিবারে কাম্যকবনের কাছে প্রভাসে আড়ম্বরের সঙ্গে স্নান করবার জন্য গেলে, চিত্ররথ গন্ধবের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাঁধে। শেষে সপরিবারে দুর্য্যোধন বন্দী হয় তাঁর কাছে। বেগতিক দেখে কর্ণ ভয়ে পালিয়ে গেল। যুধিষ্ঠির এই সংবাদ পেয়ে ভীম আর অর্জুনকে পাঠিয়ে চিত্ররথ গন্ধর্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে দুর্য্যোধনাদিকে মুক্ত করে দিলেন।

তখন দুর্য্যোধন সবার সঙ্গে যুধিষ্ঠিরের কাছে এলে, যুধিষ্ঠির তাকে বহু উপদেশ দিলেন। দ্রৌপদী কৌরব – মহিলাদের সাদরে আপ্যায়ন করলেন। পাণ্ডবদের এই মহানুভবতা সবাই জানতে পেরে খুব খুশী হল তাঁদের প্রতি। এই ব্যবহারে দুর্য্যোধনের মনে কিছুটা অনুশোচনা হল। তারপর ফিরে গেল তারা হস্তিনাপুরে। কিছুদিন পরে দুর্যোধনের সেই হিংসা জেগে উঠল পাণ্ডবদের প্রতি অসদ্ শকুনি, দুঃশাসন আর কর্ণের সঙ্গলাভের জন্য।

চিন্তা করতে লাগল – পাণ্ডবদের কেমন করে জব্দ করা যায়? যুক্তি স্থির করে ভগ্নীপতি জয়দ্রথকে পাঠিয়ে দিল কাম্যকবনে দ্রৌপদীকে হরণ করবার জন্য। কিন্তু ভীমসেনের হাতে বিশেষভাবে লাঞ্ছিত হল জয়দ্রথ সেই কাজে ধরা পড়ে। এই ঘটনার পর জয়দ্রথ পাণ্ডবনিধনে মরিয়া হয়ে মহাদেবের তপস্যা করে বর লাভ করল – অর্জুন ছাড়া চার পাণ্ডবকে পরাজিত করতে পারবে। আর তার সহায়তায় অর্জুনপুত্র অভিমন্যুর হবে বিনাশ।

একদিন দুর্বাসা মুনি তাঁর দশ হাজার শিষ্য নিয়ে দুর্যোধনের অতিথি হলে, দুৰ্য্যোধন খুব ভয় পেয়ে বহু পরিচালকের দ্বারা তাঁদের সেবা করে পরিতুষ্ট করল। মহারাগী মুনি দুর্বাসা তাকে তখন বর দিতে চাইলে, যুধিষ্ঠিরের কুটিরে তাঁর সকল শিষ্যদের নিয়ে অতিথি হওয়ার জন্য দুর্য্যোধন বর চাইল। তখন দুর্বাসা মুনি কাম্যকবনে গিয়ে যুধিষ্ঠিরের কুটিরে অতিথি হলেন। তখন অপরাহু কাল। দ্রৌপদীর আহার সমাপ্ত হয়েছে। বড় বিপদ বুঝলেন যুধিষ্ঠির। কিন্তু দ্রৌপদী বিপদহারী মধুসূদনের সহায়তায় দূর থেকেই সেই সকল অতিথিগণকে বিদায় করে দিলেন।

দ্রৌপদীর সেই সূৰ্য্য প্রদত্ত সোনার থালা থেকে একটু শাকের কণা খেয়ে কৃষ্ণ পরম তৃপ্তি লাভ করলেন। তার ফলে স্নানরত দুর্বাসা মুনি তাঁর শিষ্যগণের সঙ্গে এইবোধ করলেন যে, তারা এইমাত্র ভরপেটে খেয়েছেন। আর সামান্য খাবারও খাওয়া যাবে না। তাই তাঁরা পাণ্ডবদের কুটিরে না গিয়ে, নিজ স্থানে ফিরে গেলেন।

এক এক করে বারোটা বছর কেটে গেল। আর মাত্র ছ’দিন বাকী। পরবর্তী এক বছর থাকতে হবে অজ্ঞাতে। কেউ যেন না জানতে পারে কোথায় আছে, ধরা পড়লেই রক্ষা নাই। আবার বারো বছর বনবাসে থাকতে হবে। পাণ্ডবগণ ঠিক করলেন— মৎস্যরাজ বিরাটের প্রাসাদেই কাটিয়ে দেবেন ছদ্মবেশে। তখন তাঁরা তাদের অস্ত্র-শস্ত্র মৎস্যদেশের মধ্যে এক দুর্গম প্রান্তরে একটি শমী বৃক্ষের উপর রেখে গমন করলেন বিরাটের রাজসভায়।

আরও পড়ুন: নতুন বিশ্ব কাকে বলে, নতুন বিশ্ব বলতে কী বোঝো

মহাভারত বাংলা বিরাট পর্ব

পরম ধার্মিক মৎস্যরাজ বিরাট। দ্রৌপদী সহ পঞ্চপাণ্ডব তাঁর কাছে গিয়ে কর্মপ্রার্থী হলেন। তাঁদের কথায় রাজা খুব খুশী হয়ে সবাইকেই নিয়োগ করলেন যোগ্যতা অনুযায়ী নানান কাজে।

রাণী সুদেষ্ণার ভাই কীচক, অতীব দুর্দ্ধর্ষ সে। সুন্দরী দ্রৌপদীকে দেখে তার কাম প্রবৃত্তি জাগলে, ভীম জানতে পেরে একদিন রাতে তাকে বধ করলেন, সেই সঙ্গে তার নিরানব্বইটি ভাইদেরও। বিরাট রাজার প্রচুর গোধন ছিল। দুর্যোধনের খুব লোভ ছিল সেগুলির প্রতি। কিন্তু কীচকের ভয়ে এতদিন সেগুলি চুরি করে নিয়ে যেতে পারেনি। এখন সুযোগ এসেছে। ত্রিগর্ত সুশর্মা বহু গোধন হরণ করলে, বিরাট রাজার সৈন্য-সামন্তদের নিয়ে সেনাপতিরা চলে গেল তার সঙ্গে যুদ্ধ করতে।

এই সুযোগে দুর্য্যোধনও করল গোধন চুরি। গোয়ালারা খবর দিল রাজাকে। রাজা পড়লেন বিপদে। কঙ্করূপী যুধিষ্ঠির রাজপুত্র উত্তরের সঙ্গে পাঠালেন বৃহন্নলারূপী অর্জুনকে। অর্জুন একাই যুদ্ধ করে সমগ্র কৌরবকুলকে পরাজিত করে ফিরে এলেন। তখন উত্তর জানতে পারল বৃহন্নলার আসল পরিচয়। সেই সঙ্গে সকল পাণ্ডবদের।

রাঁধুনি ভীম সুশর্মার সঙ্গে যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত করে দূর করে দিলে বিরাটরাজ অবাক হয়ে গেলেন। তারপর তিনি পুত্রের মুখে ছদ্মবেশধারী পাণ্ডবদের পরিচয় জেনে খুব আনন্দ লাভ করলেন। এক বছর অজ্ঞাতবাসের সেদিনই ছিল শেষ দিন। তারপর অর্জুন ও সুভদ্রার পুত্র অভিমন্যুর সঙ্গে বিয়ে হল বিরাট রাজকন্যা উত্তরার।

মহাভারত বাংলা উদ্যোগ পর্ব

বারো বছর বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাতবাসের মেয়াদ শেষ হল, এবার পাণ্ডবরা ফিরে যাবেন ইন্দ্রপ্রস্থে। দূতের দ্বারায় খবর পাঠালেন হস্তিনাপুরে। দুর্য্যোধন কিন্তু রাজী হল না। বিদুর রাজা ধৃতরাষ্ট্রকে অনেক বোঝালেন। কিন্তু পুত্রস্নেহে অন্ধ রাজা দুর্য্যোধনের বিরুদ্ধে কিছুই বলতে ইচ্ছা করলেন না। ভীষ্ম, দ্রোণাদিও অনেক বোঝালেন কিন্তু দুর্য্যোধন কারও কথায় কর্ণপাত না করে বলল – বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী ।

তারপর শুরু হল উভয়পক্ষের আয়োজন। বহু রাজা যোগ দিল উভয় পক্ষে। কৃষ্ণ কিন্তু তাঁর নারায়ণী সেনাকে দিলেন কৌরবপক্ষে আর নিজে রইলেন পাণ্ডবপক্ষে তাও আবার তিনি এই যুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন না। যুদ্ধ নিবারণের শেষ চেষ্টার জন্য শ্রীকৃষ্ণ হস্তিনাপুরে গিয়ে দুৰ্য্যোধনকে কত বোঝালেন। কিন্তু দুর্যোধন অনড়। তারপর শ্রীকৃষ্ণ কর্ণকে গোপনে ডেকে তাঁর আসল পরিচয় জানিয়ে তাঁকে পাণ্ডবপক্ষে যোগ দেওয়ার জন্য বললে, কর্ণ মিত্রদ্রোহী না হয়ে কৌরবপক্ষেই রইলেন।

কৌরবপক্ষে রইলেন পিতামহ ভীষ্ম, গুরুদেব দ্রোণাচার্য্য, কৃপাচার্য্য, কর্ণ প্রমুখ মহাবীরগণ। আর পাণ্ডবপক্ষে রইলেন—বিরাট, সাত্যকি, ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রভৃতি বীরগণ। কৌরবপক্ষে এগার অক্ষৌহিণী সেনা। আর পাণ্ডবপক্ষে সাত অক্ষৌহিণী সেনা।

মহাভারত বাংলা ভীষ্ম পর্ব

উভয় পক্ষ ঠিক করলেন – যুদ্ধ হবে কুরুক্ষেত্রের বিশাল প্রান্তরে। পূর্বে কুরুরাজ এইখানে যজ্ঞ করে বরলাভ করছেন – এখানে যে মরবে তার হবে মুক্তি। যুদ্ধের আগে নিয়ম-কানুন স্থির করে নিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে যে অস্ত্রত্যাগ করে আত্মসমর্পণ করবে, যে যুদ্ধ ছেড়ে চলে যাবে, কোন যোদ্ধা অন্যের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থাকলে সেই সুযোগে আর তাকে অস্ত্রাঘাত করা চলবে না।

রথীর সঙ্গে রথী, অশ্বারোহীর সঙ্গে অশ্বারোহী, গজারোহীর সঙ্গে গজারোহী আর পদাতিকের সঙ্গে পদাতিক যুদ্ধ করবে। সারথী, রণবাদ্যবাদক ও অস্ত্রবহনকারীদের আঘাত করা যাবে না।

যুদ্ধের পূর্বে যুধিষ্ঠির কৌরবপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বললেন – ধর্মপথে থেকে আমরা যুদ্ধ করব, কেউ যদি এখনও আমার পক্ষে আসতে চায়, আমি তাকে সাদরে গ্রহণ করব। এই কথা শুনে দুর্যোধনের এক ভাই—নাম যুজুৎসু, পাণ্ডবপক্ষে যোগ দিল। অর্জুন তাঁর রথে চড়ে সারথি কৃষ্ণকে তাঁর রথ দুই দলের মাঝখানে নিয়ে যেতে বললে, কৃষ্ণ রথখানি সেই মত রাখলেন। অর্জুন কৌরবপক্ষে পিতামহ ভীষ্ম, গুরুদেব দ্রোণাচার্য্য প্রমুখ গুরুজন, আত্মীয়-স্বজনদের দেখে বিষাদগ্রস্ত হয়ে যুদ্ধ করবেন না বলে ঠিক করলেন।

তখন শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে গীতাজ্ঞান দান করে তাঁর মনটিকে চাঙ্গা করে তুললেন। তারপর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে উভয় পক্ষীয় চরণে প্রণাম জানিয়ে শঙ্খধ্বনি করে শুরু করলেন কুরুক্ষেত্রের মহাসমর।

প্রথমদিন : যুদ্ধ হল ভীষ্মের সঙ্গে অর্জুনের, দ্রোণাচার্য্যের সঙ্গে দ্রুপদরাজের পুত্র ধৃষ্টদ্যুম্নের। পূর্বে ভীষ্ম কাশীরাজ কন্যা অম্বাকে রথে তুলে নিয়ে আসেন বিচিত্রবীর্য্যের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু অম্বা তাকে বিয়ে করতে রাজী না হয়ে ভীষ্মকেই বিয়ে করতে চেয়েছিল। ভীষ্মের প্রতিজ্ঞানুযায়ী, তিনি তাকে বিয়ে করলেন না। তাই অম্বা ভীষ্মের মৃত্যুর জন্য পরের জন্মে দ্রুপদরাজের ঘরে নপুংসক হয়ে জন্মাল। তখন তার নাম শিখণ্ডী।

ভীষ্ম জানতেন শিখণ্ডীই অম্বা। তাই ভীষ্ম যুদ্ধের আগেই বলে দিয়েছেন – রণক্ষত্রে শিখণ্ডীকে দেখলেই অস্ত্র ত্যাগ করবেন। অর্জুনের সঙ্গে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ করছেন। অর্জুনেরও শিক্ষা কম নয়। সমানে সমানে যুদ্ধ চলতে লাগল। কিন্তু ভীষ্ম, তাঁকে রুখবে কে? তাঁর হাতে বহুতর সৈন্য প্রাণ হারাল । নকুল এর মামা মদ্ররাজ, তথাপি তিনি কৌরবপক্ষেই যোগ দিলেন। ভীষ্মের সঙ্গে অর্জুন পুত্র অভিমন্যু কিছুক্ষণের জন্য যুদ্ধ করলেন। তার রণকৌশল দেখে ভীষ্ম স্তম্ভিত হয়ে বহু প্রশংসা করলেন।

দুর্য্যোধন ও যুধিষ্ঠিরের যুদ্ধ হল অনেকক্ষণ। যুধিষ্ঠির যুদ্ধে স্থির হতে পারছেন না, দেখে অর্জুন দুৰ্য্যোধনকে বাণে বাণে জর্জরিত করে দূর করে দিলেন রণক্ষেত্র থেকে। এইভাবে প্রথমদিনের যুদ্ধে উভয় পক্ষের বহু হতাহত হল। সূর্যাস্তে যুদ্ধ বন্ধ।

দ্বিতীয় দিন : শুরু হল আবার যুদ্ধ। বহু সৈন্য মরল। তবে পাণ্ডবদের থেকে কৌরবদের সৈন্য বেশী মরল। অনেক বড় বড় রাজারাও যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিলেন । কৌরবদের সেনাপতি ভীষ্ম। কিন্তু তাদেরই বেশী সৈন্য মরছে দেখে দুৰ্য্যোধন ভীষ্মকে বহু তিরস্কার করল। দুর্য্যোধনের কথায় ভীষ্ম অর্জুনের বহু প্রশংসা ও কৃষ্ণ সারথির কথা বললেন। আর কর্ণের বহু নিন্দাবাদ করলেন । তারপর থেকে ভীষ্ম ভীষণভাবে যুদ্ধ করে পাণ্ডবপক্ষকে একেবারে নাস্তানাবুদ করে তুললেন।

অর্জুন তাঁর সামনে দাঁড়াতে পারলেন না। তখন কৃষ্ণ সখাকে রক্ষার জন্য নিজের প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে গিয়ে সুদর্শন চক্রকে আহ্বান করলেন। এই দেখে ভীষ্মের মনে খুব আনন্দ। কারণ তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন – কৃষ্ণকে কুরুক্ষেত্রের রণে অস্ত্র ধরাবেন। তাই ভক্তের প্রতিজ্ঞা রক্ষার জন্য ভগবান নিজ প্রতিজ্ঞায় জলাঞ্জলি দিলেন। কিন্তু অর্জুন রথ থেকে নেমে শ্রীকৃষ্ণের হাত চেপে ধরে তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিলেন তাঁর প্রতিজ্ঞার কথা। নিরস্ত্র করলেন তাঁকে।

তারপর অর্জুন ভীষণভাবে যুদ্ধ করলেন, শত্রুপক্ষ বিধ্বস্ত। কিন্তু ভীষ্মকে কিছুতেই দমাতে পারছেন না। এইভাবে ন’দিনের যুদ্ধ শেষ হল। কিন্তু ভীষ্মকে না সরাতে পারলে পাণ্ডবপক্ষের জয় হবে কেমন করে? তাই কৃষ্ণ কপটতার আশ্রয় নিয়ে দ্রুপদরাজার পুত্র শিখণ্ডীকে দাঁড় করালেন ভীষ্মের সামনে। তাকে দেখে ভীষ্ম অস্ত্রত্যাগ করলেন।

সেই সুযোগে অর্জুন অসংখ্য বাণ দিয়ে তাঁর দেহটাকে বিদ্ধ করলেন। পিতামহ ভীষ্ম শরাদি অবস্থায় রথ থেকে পড়ে গেলেন। কিন্তু পৃষ্ঠদেশে প্রচুর তীর থাকার জন্য ভূমি স্পর্শ করলেন না। শরাশয্যায় শায়িত হলেন। তাঁর মাথাটা নুয়ে পড়ছে দেখে অর্জুন বাণের দ্বারা বালিশ করে দিলেন। পাতাল থেকে জল তুলে দিলেন বাণের দ্বারায় তাঁর পানের জন্য। ইচ্ছামৃত্যু তাঁর। তাই কষ্ট সহ্য করেও বেঁচে রইলেন। সেই অবস্থায় দুৰ্য্যোধনকে ডেকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বললেন। কিন্তু দুর্য্যোধন সে কথায় কান দিল না।

মহাভারত বাংলা দ্রোণ পর্ব

দশম দিনের যুদ্ধে ভীষ্মের পতন হল। দুর্য্যোধন কৃপাচার্য্যের পরামর্শে দ্রোণাচাৰ্য্যকে সেনাপতি করলেন। এতদিন কর্ণ যুদ্ধে যোগ দেন নি। এবার যোগ দিলেন। দ্রোণাচার্য্যও কর্ণকে সহ্য করতে পারেন না, তাই তিনি কর্ণকে দূরে দূরে থাকতে বললেন। দ্রোণাচার্য্য যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে বহু পাণ্ডবসেনা নিধন করলেন। তখন অর্জুন সংশপ্তক সেনাদের পরাজিত করে দ্রোণাচার্য্যের কাছে এসে ভীষণভাবে যুদ্ধ করলেন। প্রচুর কৌরবসেনা হতাহত হল।

শিবিরে দুর্য্যোধন দ্রোণাচার্য্যের কাছে খুব দুঃখ প্রকাশ করলে তিনি পরদিন এক চক্রব্যূহ রচনা করলেন। চক্রব্যূহ ভেদ করা আর বেরিয়ে আসা – একমাত্র অর্জুনই জানতেন। কিন্তু তিনি তখন নারায়ণী সেনার সঙ্গে যুদ্ধে ব্যাপৃত থাকায় যুধিষ্ঠির ফাঁপড়ে পড়লেন। এখন উপায় কি? অভিমন্যুর ব্যূহের ভিতরে যাওয়ার কৌশল জানে কিন্তু বেরোবার কৌশল জানে না । বাধ্য হয়ে তাকেই পাঠালেন যুধিষ্ঠির। তবে ভীম তাকে সাহায্য করবেন।

অভিমন্যু সকলের আশীর্বাদ নিয়ে ব্যূহের মধ্যে ঢুকল। পিছনে পিছনে চললেন ভীমাদি বহু রথী, কিন্তু শিব বরে বলীয়ান জয়দ্রথ সবাইকে রুখে দিল। ব্যূহের মধ্যে বীরদর্পে অভিমন্যু একাকী সপ্তরথীর সঙ্গে ভীষণভাবে যুদ্ধ করল। অসংখ্য কৌরবসেনা প্রাণ হারাল তার হাতে। দুর্য্যোধন, কর্ণ, দ্রোণাদি সবাই বিস্মিত হলেন এই বালকের রণবীরত্ব দেখে। অগত্যা কোন উপায় না দেখে কৌরবপক্ষ অন্যায়ভাবে সাতজন রথী একযোগে তাকে বিনাশ করল।

পুত্রের মৃত্যু-সংবাদ শুনলেন অর্জুন, এও জানলেন জয়দ্রথের জন্য অন্য কেউই অভিমন্যুকে সাহায্য করতে পারে নি। তাই প্রতিজ্ঞা করলেন— আগামী কাল সূর্যাস্তের মধ্যেই জয়দ্রথকে বধ করবেন। অর্জুনের প্রতিজ্ঞায় কৌরবপক্ষের সবাই ভয় পেয়ে জয়দ্রথকে গোপনে রেখে যুদ্ধ করল। সূর্যাস্তের আর বিলম্ব নাই।

শ্রীকৃষ্ণ কৌশলে সুদর্শন চক্র দিয়ে সূৰ্য্যকে আড়াল করলে, অন্ধকার দেখে গোপন স্থান থেকে জয়দ্রথ আনন্দে বেরিয়ে পড়ল, শ্রীকৃষ্ণ চক্র সরিয়ে নিলেন। অর্জুন তাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করলেন। প্রতিদিনের যুদ্ধে ভীমের হাতে দুর্য্যোধনের ভাইরা মরতেই লাগল। আর মাত্র বাকী দুৰ্য্যোধন আর দুঃশাসন।

পরের দিন যুদ্ধ শুরু হল। পাণ্ডবপক্ষে যোগ দিল ভীম ও হিড়িম্বার পুত্র ঘটোৎকচ। তার দাপটে কৌরবসেনা প্রচুর পরিমাণে ধ্বংস হল। আর রক্ষা নাই দেখে দুর্য্যোধন কর্ণের শরণাপন্ন হল। কর্ণের জন্ম থেকেই তার গায়ে ছিল এক কবচকুণ্ডল। সেটি তাঁর কাছে থাকলে কেউ তাঁকে বধ করতে পারবে না। তাই ইন্দ্র ব্রাহ্মণের বেশে কর্ণের কাছ থেকে সেটি ভিক্ষা স্বরূপ চেয়ে নিলেন। বিনিময়ে তিনি কর্ণকে একটি একাঘ্নী বাণ দান করলেন। সেই বাণ যার উদ্দেশ্যে ক্ষেপণ করা হবে, সে মরবেই। কর্ণের ইচ্ছা সেটি প্রয়োগ করবে অর্জুনের বিরুদ্ধে। কিন্তু আজ ঘটোৎকচের যুদ্ধে রক্ষা পেলে তবে ত।

দুর্যোধনের অনুরোধে সেই একাঘ্নী বাণ দিয়ে ঘটোৎকচকে বিনাশ করলেন কর্ণ। দ্রোণাচার্য্য বৃদ্ধ হলেও তাঁকে জয় করা প্রায় দুঃসাধ্য। দ্রোণাচার্য্যকে বধ না করলে, পাণ্ডবদের জয় সুদূর পরাহত। তাই শ্রীকৃষ্ণ এক কৌশল করলেন। রাজা ইন্দ্রবর্মা একটি হাতীর পিঠে চড়ে যুদ্ধ করছিলেন পাণ্ডবপক্ষের হয়ে, তার হাতীটির নাম অশ্বত্থামা। ভীম গদার আঘাতে তাকে বধ করে, ‘অশ্বত্থামা হত’ বলে চিৎকার করলে, দ্রোণাচার্য্য ভাবলেন—তাঁর পুত্র অশ্বত্থামা মরেছে।

কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতে পারলেন না, কারণ তাঁর পুত্র চারযুগ অমর। তখন শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শে যুধিষ্ঠির ‘অশ্বত্থামা রণে হত’ এই কথাটি জোরে উচ্চারণ করে নিম্নস্বরে বললেন—‘হাতী’। যুধিষ্ঠির সত্য কথা বলেন – তাই দ্রোণাচার্য্য তাঁর কথায় বিশ্বাস করে পুত্রের মৃত্যুর জন্য দুঃখিত হয়ে কণ্ঠতলে ধনুক রেখে কাঁদতে লাগলেন।

ধনুকের ছিলা বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়তে লাগল। তখন কৃষ্ণের ইচ্ছায় অর্জুন সেই অশ্রুকে সর্পভ্রমে বাণ দিয়ে ধনুকের গুণ ছেদন করার ফলে, সেই ধনুকের অগ্রভাগ দ্রোণাচার্য্যের কণ্ঠতালু ভেদ করল। রথের উপর লুটিয়ে পড়লেন তিনি। সেই অবস্থায় ধৃষ্টদ্যুম্ন খড়া দিয়ে তাঁর মাথাটা কেটে ফেলল। অন্যায়ভাবে পিতাকে বধ করার জন্য অশ্বত্থামা খুব দুঃখ করে নারায়ণাস্ত্র ছুঁড়ল। শ্রীকৃষ্ণ তা ব্যর্থ করে দিলে, নিজেই প্রাণ বাঁচাতে রণক্ষেত্র ছেড়ে চলে গেল।

মহাভারত বাংলা কৰ্ণ পৰ্ব

দ্রোণের পর কৌরবপক্ষে সেনাপতি হল কর্ণ। ভয়ঙ্কর যুদ্ধ করল। পাণ্ডবসৈন্যদের প্রায় নিঃশেষ করে ফেললেন। তাঁর বাণের কাছে কেউই দাঁড়াতে পারছে না । ভীম দুঃশাসনকে গদার আঘাতে ধরাশায়ী করে তার বুকের উপর বসে তার বুক চিরে রক্তপান করে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করলেন। অর্জুনের বাণে কর্ণপুত্র বৃষসেনের মৃত্যু হল। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে কর্ণ অর্জুনকে আক্রমণ করলেন। তাঁর সঙ্গে অর্জুন এঁটে উঠতে পারছেন না।

এমন সময় ব্রহ্মশাপের ফলে তাঁর রথের চাকা | মাটিতে বসে গেল। আর তাঁর অস্ত্র গুরু পরশুরামের অভিশাপে অস্ত্র ছোঁড়ার কথা ভুলে গিয়ে রথ থেকে নেমে চাকাটি তুলবার চেষ্টা করতে করতে অর্জুনকে লক্ষ্য করে বললেন – অর্জুন, আমাকে একটু সময় দাও, নিরস্ত্রকে হত্যা করা উচিত নয়। তাঁর কথার জবাবে কৃষ্ণ বললেন—ওহে কর্ণ, যখন সাতজন একসঙ্গে এক বালককে হত্যা করলে, তখন তোমার যুদ্ধনীতি কোথায় ছিল? কৃষ্ণের ঈশারায় অর্জুনের বাণে ধরাশায়ী হলেন কর্ণ।

মহাভারত বাংলা শল্য পর্ব

কর্ণের পর কৌরবপক্ষের সেনাপতি হলেন মদ্ররাজ শল্য। ইতিমধ্যে দুর্য্যোধনের নিরানব্বইটি ভাই ভীমের হাতে নিহত। ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণাদি মহামহা রথিগণ এখন কেউ নেই। ইতিমধ্যে সতের দিনের যুদ্ধ শেষ হয়েছে। সৈন্যসংখ্যা এখন একেবারে দুর্বল। না, আর একা একা যুদ্ধ করে হবে না। একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে পাণ্ডবদের উপর। শুরু হল সেই মত যুদ্ধ। কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যে শল্য ধরাশায়ী হল যুধিষ্ঠিরের বাণে।

তা দেখে অশ্বত্থামা, কৃপাচার্য্য আর কৃতবর্মা যুধিষ্ঠিরকে একসঙ্গে আক্রমণ করল। দাদাকে সাহায্য করতে এলেন ভীম গদা হাতে। তাঁকে দেখে কুরুসেনাগণ যে যেদিকে পারল ছুটে পালাল। শাল্বরাজ হাতির পিঠে চড়ে যুদ্ধ করছিলেন। ধৃষ্টদ্যুম্ন গদার আঘাত করল তার হাতির মাথায়। চূর্ণ হল তার মাথা, শাল্ব পড়ল মাটিতে।

সাত্যকি খড়্গা দিয়ে তার মাথাটি কেটে ফেললেন। সহদেবের সঙ্গে শকুনি যুদ্ধ করছে। শকুনি একসময় মাটিতে পড়ে গেলে সহদেব ধারাল অস্ত্র দিয়ে শকুনির সর্বাঙ্গ টুকরো টুকরো করে কেটে ফেললেন। দুর্য্যোধনের প্রধান কূটমন্ত্রণাদাতা শেষ হল। এখন কৌরবপক্ষে রইল মাত্র দুৰ্য্যোধন, অশ্বত্থামা আর কৃপাচার্য্য। ক্ষতবিক্ষত দুৰ্য্যোধন লজ্জায় দুঃখে দ্বৈপায়ন হ্রদে গিয়ে লুকিয়ে রইল।

মহাভারত বাংলা গদা পর্ব

দ্বৈপায়ন হ্রদে দুৰ্য্যোধন লুকিয়ে। যুধিষ্ঠির সংবাদ পেয়ে চার ভাই আর কৃষ্ণকে নিয়ে সেখানে গেলেন। ভীম দুর্য্যোধনের উদ্দেশ্যে কটুবাক্যে বহু তিরস্কার করলে, তা সহ্য করতে না পেরে দুৰ্য্যোধন জল থেকে বেরিয়ে এসে ভীমের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। এমন সময় দ্বারকা থেকে এলেন বলরাম। দুৰ্য্যোধনকে বহু উপদেশ দিয়ে এখনও যুদ্ধ বন্ধ করতে বললেন। কিন্তু দুৰ্য্যোধন শুনল না কোন কথা। শুরু হল ভীমের সঙ্গে ভয়ঙ্কর গদাযুদ্ধ। কেউই কম নয়। দু’জনেই প্রবল শক্তিমান।

পূর্বে দুর্যোধন তার ঊরু দেখিয়ে দ্রৌপদীকে কুৎসিত ইঙ্গিত করেছিল। তখন ভীম প্রতিজ্ঞা করেছিলেন গদা দিয়ে সেই ঊরু ভাঙবেন। স্মরণে আসতেই ভীমসেন মারলেন সেই গদা দুর্য্যোধনের ঊরুতে। উরুর হাড় ভেঙে গেল তার। মাটিতে পড়ে গেল, আর দাঁড়াতে পারল না। তথাপিও ভীমের ক্রোধ শান্ত হল না। মারলেন পদাঘাত দুর্য্যোধনের মাথায়।

মহাভারত বাংলা সৌপ্তিক পর্ব

পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে অশ্বত্থামা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পৃথিবীকে পাণ্ডবশূন্য করতে চায়। শয্যাশায়ী দুর্য্যোধনের কাছে গিয়ে জানাল তার মনের কথা। তখন দুর্য্যোধন তাকে সেনাপতির পদে বরণ করল। রাতের অন্ধকারে পাণ্ডব-শিবিরে গিয়ে ঘুমন্ত দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্রকে অস্ত্রের দ্বারা বিনাশ করল অশ্বত্থামা। মনের আনন্দে কাটা মাথাগুলো নিয়ে দুর্য্যোধনকে উপহার দিয়ে বলল – দেখুন মহারাজ, আমি পঞ্চপাণ্ডবের মাথা কেটে এনেছি। দুৰ্য্যোধন সেই মাথাগুলো পরীক্ষা করে দেখল, আর বুঝতে পারল – সেগুলো দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্রের মাথা। তখন অশ্বত্থামাকে বলল – তুমি পাণ্ডব নিধন করতে পারনি। তুমি আমাদের নির্বংশ করলে।

তখন কৌরব আর পাণ্ডবকুলে কোনো বংশধর আর জীবিত রইল না। এই শোকে দুৰ্য্যোধন অতি দুঃখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল।

মহাভারত বাংলা ঐষীক পৰ্ব

পাণ্ডবগণ জানতে পারলেন অশ্বত্থামার দ্বারায় তাঁদের পাঁচ পুত্র নিহত, মহা দুঃখে পড়লেন। দ্রৌপদী মূর্ছিতপ্রায় হলেন। ভীম ক্রোধে অশ্বত্থামাকে মারবার জন্য ছুটলেন। অশ্বত্থামা তখন ব্রহ্মশির নামে এক মারাত্মক বাণ ছুঁড়ল। কৃষ্ণের নির্দেশে অর্জুনও ছুঁড়ল সেই বাণ। উভয় বাণের দ্বারা প্রলয়ের সৃষ্টি হতে পারে। ব্যাসদেব ও দেবর্ষিপাদ নারদ ঠাকুর সেখানে এসে উভয়ের বাণ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। অর্জুন বাণ ফিরিয়ে নিলেন। কিন্তু অশ্বত্থামা সেই ব্রহ্মাশির বাণ ফিরিয়ে নিল না। সেই বাণ উত্তরার গর্ভে অভিমন্যুর পুত্র পরীক্ষিতকে বিনাশ করল।

তখন শ্রীকৃষ্ণ সেই গর্ভের মধ্যে সেই মৃত সন্তানকে বাঁচিয়ে দিলেন। তারপর দ্রৌপদীর ইচ্ছানুসারে অর্জুন অশ্বত্থামার মাথার মণিটি কেটে নিলেন।

মহাভারত বাংলা স্ত্রী পর্ব

কুরুক্ষেত্রের মহারণ শেষ হল। আঠার দিনে আঠার অক্ষৌহিণী সৈন্য নির্মূল হল। হস্তিনাপুরে বসে ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়ের মুখে দুঃখের বার্তা শুনে মহাশোকে মগ্ন। তখন সঞ্জয় দুর্য্যোধনের দুরাচারের কথা স্মরণ করিয়ে পাণ্ডবদের যত কষ্ট দিয়েছে, তার প্রতিফল ভোগ করেছে, কাজেই দুঃখ করে কোন লাভ হবে না – এইসব কথা বলে ধৃতরাষ্ট্রকে কিছুটা শান্ত করলেন। তারপর কুরুরমণীগণ কুরুক্ষেত্রে গিয়ে নিজ নিজ স্বামীর ও আত্মীয়বর্গের মৃতদেহ দেখে খুবই আকুল হয়ে কাঁদতে লাগল।

একা ভীমই ধৃতরাষ্ট্রের শত পুত্রকে বিনাশ করেছেন। তাই ধৃতরাষ্ট্র কিছুতেই ভীমকে সহ্য করতে পারছেন না। কাছে ডাকলেন ‘ভীমকে, শ্রীকৃষ্ণ তাঁর মনোভাব বুঝে এক লৌহমূর্তি তাঁর কাছে এগিয়ে দিলেন, ধৃতরাষ্ট্র সেই লৌহমূর্তিকে আলিঙ্গন করার ছলে এমন নিষ্পেষণ করলেন যে, সেই লৌহমূর্তি চুর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ল। শ্রীকৃষ্ণের প্রসাদে ভীম রক্ষা পেলেন।

পঞ্চপাণ্ডব ধৃতরাষ্ট্রকে প্রণাম করে গান্ধারীকে প্রণাম করে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। তিনি কিন্তু তখনও কাঁদছেন। কিছুতেই শান্ত হতে পারছেন না। তখন ব্যাসদেব নানা উপদেশ দিয়ে “যথা ধর্ম, তথা জয়” ইত্যাদি বাক্যে শান্ত করবার চেষ্টা করলেও, স্থির হতে পারলেন না তিনি। সহসা কৃষ্ণকে সামনে দেখে অভিশাপ দিলেন – তোমার জন্যই আমার বংশ নাশ হয়েছে, তাই আমি অভিশাপ দিচ্ছি – যদু বংশও ধ্বংস হবে।

তারপর পঞ্চপাণ্ডব মৃত আত্মীয়-স্বজনদের বিধিমত সৎকার করে হস্তিনায় ফিরে এলেন । হস্তিনার রাজসিংহাসনে বসলেন যুধিষ্ঠির।

মহাভারত বাংলা শান্তি পর্ব

রাজসিংহাসনে বসে যুধিষ্ঠিরের মনে শান্তি নাই। সব সময়ই চিন্তা – সামান্য রাজ্যের জন্য এত প্রজাক্ষয় করলাম। শ্রীকৃষ্ণ ও ব্যাসদেব তাঁকে বোঝাবার বহু চেষ্টা করলেও তিনি শান্ত হতে পারলেন না। তারপর শ্রীকৃষ্ণ সবাইকে নিয়ে গেলেন শরশয্যায় শায়িত পিতামহ ভীষ্মের কাছে। তখন ভীষ্মদেব দুঃখিত যুধিষ্ঠিরকে শান্ত করবার জন্য নানান শাস্তি-উপদেশ করলেন। তারপর তিনি চোখ বুজে শ্রীকৃষ্ণের স্তব করলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী চতুর্ভুজ মূর্তি দেখালেন। তারপর ভীষ্ম স্বেচ্ছায় নিত্যধামে ফিরে গেলেন। তাঁর মরদেহের উপর দেবতাগণ পুষ্পবৃষ্টি করলেন আকাশ থেকে। পঞ্চপাণ্ডব যথাবিধি তাঁর সৎকার করলেন।

মহাভারত বাংলা আশ্বমেধিক পর্ব

কুরুক্ষেত্রের মহাসমরে অগণিত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের হত্যা করে যুধিষ্ঠির নিজেকে মহাপাপী বলে মনে করছেন। তাই ব্যাসদেবের কাছে এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবার জন্য উপদেশ চাইলে, তিনি তাঁকে অশ্বমেধ যজ্ঞ করবার পরামর্শ দিলেন। সেই যজ্ঞে যে অশ্বের প্রয়োজন – তা আছে রাজা যুবনাশ্বের প্রাসাদে। সেই অশ্বের দেহ শ্যামবর্ণ, পুচ্ছ পীতবর্ণ। ভীম শক্তিমান, তাই তাঁকেই পাঠান হল অশ্ব আনবার জন্য।

যুদ্ধ হল কিছুক্ষণ, যুবনাশ্ব ভীমের সঙ্গে বেশীক্ষণ টিকতে পারল না। পরাজিত হয়ে যজ্ঞের উপযুক্ত অশ্বটিকে দিতে বাধ্য হল। অশ্বমেধ যজ্ঞের নিয়ম অনুসারে যজ্ঞের অশ্ব ছেড়ে দেওয়া হবে। আপন ইচ্ছায় ঘুরে বেড়াবে। কেউ যদি সেই অশ্বকে আটক করে, তাহলে যুদ্ধে তাকে পরাজিত করে ফিরিয়ে আনতে হবে।

ছেড়ে দেওয়া হল অশ্ব। অশ্বের সঙ্গে চললেন ভীম, অর্জুন, কৃষ্ণপুত্র প্রদ্যুম্ন, সাত্যকি, কৃতবর্মা প্রভৃতি অনেক বীর। সেই ঘোড়াকে প্রথম আটকালেন মাহিষ্মতীপুরের রাজা নীলধ্বজের পুত্র প্রবীর। অর্জুনের অস্ত্রে হল তাঁর মৃত্যু। রাজা নীলধ্বজ ক্ষমা চেয়ে যজ্ঞাশ্ব ফিরিয়ে দিলেন। কিন্তু রাণী পুত্রশোকে প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার সময় অভিশাপ দিলেন অর্জুনকে – রণক্ষেত্রে নিজের পুত্রের হাতেই হবে তার মৃত্যু।

অশ্ব চলছে আপন মনে, পরমবৈষ্ণব হংসধ্বজ রাজা, তিনি আটকালেন যুধিষ্ঠিরের যজ্ঞের ঘোড়া। দুই পুত্র তাঁর, সুধন্বা ও সুরথ। বহু যুদ্ধ করে তারা দুই ভাই দিব্যলোক লাভ করল, তারপর যুদ্ধক্ষেত্রে এলেন স্বয়ং হংসধ্বজ। শ্রীকৃষ্ণ চতুর্ভুজ মূর্তিতে দেখা দিলেন তাঁকে। বহু স্তব-স্তুতি করে রাজা যজ্ঞের অশ্ব ফিরিয়ে দিলেন।

তারপর অশ্ব গেল প্রমীলার রাজ্যে, সেখানে সবাই নারী। অর্জুন বিস্মিত, সেই সঙ্গে চিন্তাগ্রস্তও হলেন। কেমন করে যজ্ঞাশ্ব ফিরে পাবেন যুদ্ধ ছাড়া? নারীর সঙ্গে যুদ্ধ। সে তো অসম্ভব। নারী হত্যা মহাপাপ। তাই তিনি অশ্ব ফিরে পাবার জন্য দূতের দ্বারায় অনুরোধ করলেন। প্রমীলা বললেন – তাকে যদি অর্জুন বিয়ে করে, তবে বিনাযুদ্ধেই অশ্ব ফেরৎ পাবে। অর্জুন বিবাহে সম্মতি দিলেন। প্রমীলা অশ্ব ছেড়ে দিলেন।

তারপর অশ্ব গেল মণিপুরে। রাজা বজ্রবাহন সেই অশ্ব ধরে মা চিত্রাঙ্গদার কাছে নিয়ে গিয়ে বলল – পাণ্ডবদের যজ্ঞের অশ্ব ধরেছি। চিত্রাঙ্গদা বললেন – তোমার পিতা তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন। তুমি নিজে গিয়ে পরিচয় দিয়ে ঘোড়া ফিরিয়ে দাও। মায়ের আদেশে বজ্রবাহন ঘোড়া ফেরৎ দিতে গিয়ে নিজের পরিচয় দিতেই, অর্জুন ভীষণ চটে গিয়ে বললেন – আমি কাপুরুষের পিতা হতে পারি না। অর্জুনের এই বাক্য বজ্রবাহনের অসহ্য হল। ঘোড়া নিয়ে ফিরে গেলেন প্রাসাদে। চতুরঙ্গ সেনা সাজিয়ে যুদ্ধে এলেন বীরদর্পে। ভয়ঙ্কর হল সেই যুদ্ধ। অর্জুনের সঙ্গে যত সেনা ছিল, সকলেই পরাজিত, রণে ভঙ্গ দিল।

অবশেষে শুরু হল পিতা-পুত্রের যুদ্ধ। বজ্রবাহনের কাছে অর্জুন এঁটে উঠতে পারছেন না। সব অস্ত্র ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। অবশেষে বজ্রবাহন ছুঁড়ল গঙ্গা নামে এক অস্ত্র। প্রতিরোধ করতে পারলেন না অর্জুন। ছিন্নশির হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। আনন্দে বক্রবাহন ফিরে গেলেন মায়ের কাছে। বললেন সব কথা। গভীর দুঃখে চিত্রাঙ্গদা পুত্রের দ্বারায় পাতাল থেকে অনন্তনাগের অমৃতমণি এনে অর্জুনকে বাঁচিয়ে তুললেন।

তারপর বিনাবাধায় যজ্ঞাশ্ব বহু দেশ ঘুরে ফিরে এল হস্তিনায়। মহাসাড়ম্বরে যুধিষ্ঠির অশ্বমেধ যজ্ঞ সমাপ্ত করলেন।

মহাভারত বাংলা আশ্রমিক পর্ব

শত পুত্রের পিতা ধৃতরাষ্ট্র আজ অন্যের অন্নে প্রতিপালিত। নিজেকে মনে মনে ধিক্কার দিয়ে বনে চলে যেতে চাইছেন। গান্ধারীও তাঁর সঙ্গী হতে চান। কুন্তীদেবীরও সেই ইচ্ছা। পঞ্চপাণ্ডব তাঁদেরকে নানাভাবে বুঝিয়েও আটকে রাখতে পারলেন না। একদিন বেরিয়ে পড়লেন তাঁরা। সঙ্গে চলল বিদুর আর সঞ্জয়। গঙ্গার পশ্চিম তীরে দ্বৈপায়ন বনে আশ্রমে বাস করতে লাগলেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা সেই স্থানে তাঁরা পরম শান্তিতে ভগবৎ চিন্তাতেই কালাতিপাত করলেন।

একদিন যুধিষ্ঠির সকলকে নিয়ে দ্বৈপায়ন বনে এলেন, তাঁদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী ও কুন্তীর চরণে প্রণাম করে কুশল জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু বিদুর সেখানে নাই, তিনি গঙ্গাতীরে ধ্যানাসনে বসে আছেন। সেই সময় তাঁর প্রাণহীন দেহ। যিনি পঞ্চপাণ্ডবকে সবসময় পুত্রের মত আগলে রাখতেন, সেই বিদুরকে হারিয়ে সবাই শেকাহত।

দ্বৈপায়ন বনে দ্বৈপায়ন মুনির বাস। গান্ধারীর ইচ্ছায় তিনি তাঁর মৃত পুত্রদের সঙ্গে ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণাদিকে আহ্বান করলেন। ধৃতরাষ্ট্র অন্ধত্বের জন্য কোনদিন কোন কিছুই দেখতে পান না, কিন্তু দ্বৈপায়ন মুনির প্রসাদে সেই সময়টুকুর জন্য দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন। অভিমন্যু, ঘটোৎকচ প্রভৃতিও সেখানে এলেন। অল্পসময়ের জন্য পরষ্পর কুশলাদি জিজ্ঞাসার পর ফিরে গেল সেই সব মৃতজন।

মহাভারত বাংলা মৌষল পর্ব

কুরুবংশ ধ্বংস হল, এবার শ্রীকৃষ্ণ যদুবংশের ধ্বংসের কথা চিন্তা করছেন। পৃথিবীর ভার হরণ করবার জন্যই তো তিনি ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছেন। কৃষ্ণের এক পুত্র শাম্বকে অন্য যদু-বালকরা নারী সাজিয়ে তার কৃত্রিম গর্ভ তৈরী করে দিল। কয়েকজন মুনি-ঋষিদের সামনে দেখে প্রশ্ন করল – এই মেয়েটির গর্ভে ছেলে হবে, না মেয়ে ? বালকদের তামাসা দেখে মুনিরা খুব ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দিলেন—এই গর্ভে একটি মুষল জন্মাবে, সেই মুষলের দ্বারা হবে যদুবংশ ধ্বংস।

সামান্য মজা করতে গিয়ে যে এমন বিপদ হবে, তা যদু-বালকরা আগে বুঝতে পারে নি। শাম্ব তখনই মুষল প্রসব করল। মুনি-ঋষিদের বাক্য কখনই মিথ্যা হয় না। বালকরা কাঁদতে কাঁদতে কৃষ্ণের কাছে গিয়ে জানালে, কৃষ্ণ সেই মুষলটিকে প্রভাসের তীরে পাথরের উপর ঘসে ঘসে নষ্ট করে দিতে বললেন । তেমনিই করা হল। শেষের ক্ষুদ্র অংশটি প্রভাসের জলে ফেলে দেওয়া হল। সেই সব মুষলের কণায় নলখাগড়ার বন সৃষ্টি হল। আর ফেলে দেওয়া টুকরোটাকে খেল এক মাছ। মাছটি ধরা পড়ল এক জেলের জালে।

জরা নামে এক ব্যাধ সেই টুকরোটা পেয়ে, তা দিয়ে ফলা তৈরি করল। তারপর একদিন কৃষ্ণ-বলরাম যদু-বালকদের নিয়ে প্রভাস তীর্থে গেলেন আনন্দ উপভোগ করবার জন্য। সেখানে সবাই আনন্দে ভোজনাদি—এমনকি আসবও পান করল। তারপর কৃষ্ণের ইচ্ছায় নিজেদের মধ্যে বিবাদ শুরু করল। শেষ পর্য্যন্ত মারামারি, প্রভাসের তীর থেকে সেই নলখাগড়ার বন ভেঙ্গে নিজেদের মধ্যে প্রহারাদি করে প্রাণ ত্যাগ করতে লাগল।

কৃষ্ণ-বলরাম তাদের এই অবস্থায় দেখে নির্ধারণ করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সফল হলেন না। তারা তখন তাঁদেরকেই মারতে উদ্যত। তখন বলরাম ধ্যানযোগে দেহত্যাগ করলেন। বদুবংশ ধ্বংস হল। কৃষ্ণ এক অশ্বত্থ তলায় বসেছেন। সেই জরা ব্যাধ দুর থেকে শ্রীকৃষ্ণকে রাঙাচরণে হরিণ জ্ঞানে তীর মারণ। জরা কাছে এসে কৃষ্ণকে দেখে খুব ভীত হয়ে কাঁদতে লাগল। কৃষ্ণ তাঁকে স্বর্গে পাঠিয়ে দিলেন। নিজেও দিব্যরথে চড়ে নিত্যধামে ফিরে গেলেন।

মহাভারত বাংলা স্বর্গারোহণ পর্ব

সর্ব বিপদ ভঞ্জনকারী শ্রীকৃষ্ণ এখন নাই। পাণ্ডবগণের রাজ্য পালনে আর ইচ্ছা নাই। অভিমন্যু পুত্র পরীক্ষিতকে রাজ্য দিয়ে মহাপ্রস্থানের পথে চললেন দ্রৌপদীকে সঙ্গে নিয়ে। বহু দূর যাওয়ার পর হরি পর্বতে ভীষণ ঠাণ্ডার জন্য দ্রৌপদী দেহত্যাগ করলেন। ভীমের প্রশ্নের উত্তরে যুধিষ্ঠির বললেন – দ্রৌপদী পঞ্চ স্বামীর মধ্যে অর্জুনকেই বেশী ভালবাসত, সেই পাপেই তার মৃত্যু হল।

বদরিকাশ্রমে সহদেবের মৃত্যু হলে, ভীমের প্রশ্নে যুধিষ্ঠির বললেন – সহদেব জ্যোতিষ বিদ্যায় পারদর্শী হয়েও, পাণ্ডবদের বিপদের সঙ্কেত আগে থেকে জেনেও সে কাউকে বলেনি, সেই পাপে মৃত্যু তার।

চন্দ্রকেশী পর্বতে নকুলের মৃত্যুতে যুধিষ্ঠির বললেন – কর্ণের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থাকার সময় আমি অসহায় বোধ করলে নকুল কাছে থেকেও কোন সাহায্য করেনি আমাকে, সেই পাপে পতন তার।

নন্দীঘোষ পর্বতে অর্জুনের মৃত্যুর কারণ হিসাবে যুধিষ্ঠির বললেন – বীরত্বের অহঙ্কারে সব কিছুকে হেয় জ্ঞান করত ।

সোমেশ্বর পর্বতে ভীমসেন পরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন মৃত্যুর তার কারণ, উত্তরে যুধিষ্ঠির বললেন – অতিরিক্ত লোভ বিশেষ করে খাদ্যবস্তুর উপর। তাই অকাল মৃত্যু।

একা চলছেন যুধিষ্ঠির। পথে বহু মুনি-ঋষিদের আশ্রম। সবাইকে প্রণাম জানালেন। ক্রমে ক্রমে স্বর্গদ্বারে উপস্থিত। ধর্মরাজ একটি কুকুরের বেশে আর দেবরাজ ইন্দ্র এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের বেশে পরীক্ষা করলেন তাঁকে। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন যুধিষ্ঠির। ইন্দ্র ও ধর্মরাজ নিজ নিজ দিব্য মূর্তি দেখিয়ে আলিঙ্গন করে স্বর্গালোকের বাকী পথ রথে চড়িয়ে নিয়ে গেলেন তাঁকে।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | মহাভারত, মহাভারতের প্রশ্ন উত্তর

Q1. মহাভারত কি

Ans – মহামুনি ব্যাসদেব বেদ বিভাগ করে শিষ্যদের শিখিয়ে দিয়ে প্রচার করবার জন্য পাঠিয়ে দিলেন। প্রচার চলছে কিন্তু মুনিবর মনে মনে ভাবছেন—বেদের তত্ত্ব মূর্খ মানুষেরা বুঝতে পারবে না। তখন তিনি পুরাণ রচনা করলেন। আবারও মনে ভাবলেন একই সমস্যা। তখন তিনি রচনা করলেন ‘মহাভারত’। যাকে ‘পঞ্চম বেদ’ বলা হয়।

Q2. গীতা মহাভারতের কোন পর্বের অন্তর্গত

Ans – শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা মহাভারতের ৬ষ্ঠ পর্ব তথা ভীষ্ম পর্বের অধ্যায় ২৫ হতে অধ্যায় ৪২ পর্যন্ত মোট ১৮ টি অধ্যায়ের সমষ্টি। সেই হিসেবে এটি মহাভারতেরই অভিন্ন অংশ।

Q3. মহাভারত কে পঞ্চম বেদ বলে কেন

Ans – ভাগবতে বলা আছে যে অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যারা বেদ সহজে বুঝতে পারে না তাদের জন্য ব্যাসদেব মহাভারত রচনা করেছেন ৷ তাই মহাভারতকে পঞ্চম বেদ বলা যায় ৷

মহাভারতে গীতা জ্ঞান , বিদুর নীতি ও পিতামহ ভীষ্মের উপদেশ ইত্যাদি আছে বলে মহাভারত কে পঞ্চম বেদ বলা হয়। স্বয়ং মহর্ষি বেদব্যাস বলেছেন,” য়দিহাস্তি তদনয়ত্র য়ন্নেহাস্তি ন তত্ ক্বচিত্ ” অর্থাৎ যা এখানে আছে তাই সর্বত্র পাওয়া যায় কিন্তু যা এখানে নেই তা কোথাও নেই।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version