নারী দিবস
এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ৮ মার্চকে নারী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে সারাবিশ্বের মানুষ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সংক্ষেপে আইডব্লিউডি বলা হয়ে থাকে। শ্রমিক আন্দোলন থেকেই উদ্ভূত হয় নারী দিবসের ধারণা। পরবর্তীতে দিনটি জাতিসংঘের স্বীকৃত পায় এবং প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হতে থাকে।
১৯০৮ সালে কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, বেতন বৃদ্ধি এবং ভোটাধিকারের দাবিতে প্রায় ১৫,০০০ নারী নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছিল। মূলত এই আন্দোলনের মাঝেই লুকিয়ে ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে নারী দিবস পালনের বীজ। এই আন্দোলনের এক বছর পর আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি সর্বপ্রথম জাতীয় নারী দিবস ঘোষণা করে।
জাতীয় পর্যায় থেকে দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পরিণত করার প্রথম উদ্যোগটি নিয়েছিলেন কমিউনিস্ট ও নারী অধিকার কর্মী ক্লারা জেটকিন। ১৯১০ সালে তিনি কোপেনহেগেনে কর্মজীবী নারীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ ধারণার প্রস্তাব দেন। সেই সম্মেলনে উপস্থিত ১৭ দেশের ১০০ জন নারীর সকলেই তার প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করেন।
এরপরের বছর, অর্থাৎ ১৯১১ সালে অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো পালিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ২০১১ সালে পালিত হয় দিনটির শতবর্ষ। প্রতি বছর একটু একটু করে এগিয়ে ২০২৩ সালে আজ আমরা পালন করছি ১১২তম আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ( পূর্বনাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস) প্রতি বছর মার্চ মাসের ৮ তারিখে পালিত হয়। সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবস উদ্যাপন করে থাকেন। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদ্যাপনের প্রধান লক্ষ্য এক এক প্রকার হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদ্যাপনের মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাটি বেশি গুরুত্ব পায়।
নারী দিবস কবে পালিত হয়
আন্তর্জাতিক নারী দিবস (পূর্বনাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস) প্রতি বছর মার্চ মাসের ৮ তারিখে পালিত হয়। সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবস উদ্যাপন করে থাকেন। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদ্যাপনের প্রধান লক্ষ্য এক এক প্রকার হয়।
নারী দিবসে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্যসমূহ
বছর | জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য |
---|---|
১৯৯৬ | অতীত উদ্যাপন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা |
১৯৯৭ | নারী এবং শান্তি |
১৯৯৮ | নারী এবং মানবাধিকার |
১৯৯৯ | নারী প্রতি সহিংসতামুক্ত পৃথিবী |
২০০০ | শান্তি স্থাপনে একতাবদ্ধ নারী |
২০০১ | নারী ও শান্তি : সংঘাতের সময় নারীর অবস্থান |
২০০২ | আফগানিস্তানের নারীদের বাস্তব অবস্থা ও ভবিষ্যৎ |
২০০৩ | লিঙ্গ সমতা ও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা |
২০০৪ | নারী এবং এইহ আই ভি/ এইডস |
২০০৫ | লিঙ্গ সমতার মাধ্যমে নিরাপদ ভবিষ্যত |
২০০৬ | সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী |
২০০৭ | নারী ও নারী শিশুর ওপর সহিংসতার দায়মুক্তির সমাপ্তি |
২০০৮ | নারী ও কিশোরীদের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ |
২০০৯ | নারী ও কিশোরীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে নারী-পুরুষের একতা |
২০১০ | সমান অধিকার, সমান সুযোগ- সকলের অগ্রগতি |
২০১১ | শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ |
২০১২ | গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন- ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সমাপ্তি |
২০১৩ | নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময় |
২০১৪ | নারীর সমান অধিকার সকলের অগ্রগতির নিশ্চয়তা |
২০১৫ | নারীর ক্ষমতায়ন ও মাবতার উন্নয়ন |
২০১৬ | অধিকার মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান |
২০১৭ | নারী-পুরুষ সমতায় উন্নয়নের যাত্রা, বদলে যাবে বিশ্ব কর্মে নতুন মাত্রা। |
২০১৮ | সময় এখন নারীর: উন্নয়নে তারা, বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরের কর্ম-জীবনধারা |
২০১৯ | সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো |
২০২০ | প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারী অধিকার |
২০২১ | করোনাকালে নারী নেতৃত্ব গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব |
২০২২ | যত্নসই আগামীকালের জন্য আজ লিঙ্গ সমতা |
২০২৩ | ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন। (DG) |
নারী দিবসের ইতিহাস
এই দিবসটি উদ্যাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন।
১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন।
১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন।
সিদ্ধান্ত হয়ঃ –
- ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা।
- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল।
- বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে।
- অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।
এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে। সারা বিশ্বের সকল দেশে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য কী
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর সমঅধিকার, মর্যাদা এবং অসম শ্রম মজুরির প্রতিবাদের ক্ষেত্রে দিনটির তাৎপর্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
১৮৫৭ সালে কর্মজীবী নারীদের শিল্প-কারখানা শ্রম সময় কমানো, মানবিক আচরণ-বিধির প্রয়োগ, শ্রম মজুরির বৈষম্য দূরীকরণসহ আরও অন্যবিধ স্বাধীনতা প্রদানকে কেন্দ্র করে নারী শ্রমিকরা রাজপথে নেমে আসে।
আর এসবের সূচনা করা হয় নিউইয়র্কের সুতা কারখানার অসংখ্য নারী শ্রমিকের পক্ষ থেকে। অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এই ঐক্যবদ্ধ মিছিলে সরকারী বাহিনীর দমন-পীড়ন সারা বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সামনেও চলে আসে। নারীর প্রতি অমানবিক আচরণ এবং অধিকার হরণের করুণ আখ্যান। নারীর এই ন্যায্য দাবি এবং বঞ্চনার ইতিহাসে বিক্ষুব্ধ হয় বিভিন্ন দেশের নারী নেত্রীরাও।
সম্মিলিতভাবে সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে নারী নেত্রীরাও। সম্মিলিতভাবে সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে নারীর প্রতি এই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে সোচ্চার হতে থাকে বিশ্বের অসংখ্য নারী শ্রমিক।
ঘটনার পথপরিক্রমায় কেটে যায় আরও অর্ধশত বছর। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নারী শ্রমিকরা সংগঠিত হতে থাকে এবং একটি সুদৃঢ় আন্দোলনের কাঠামোও প্রস্তুত হয়ে যায়। এই বিরাট কালপর্বে নারীর প্রতি অসাম্য, বৈষম্যের মাত্রা তো কমেইনি বরং আরও বাড়তে থাকে।
শ্রেণী বিভক্ত সমাজে মালিকানার মূল শক্তিটা যাদের হাতে থাকে তারাই সামগ্রিক উৎপাদনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিবেচিত হয়। আবার এই আধিপত্য বিস্তারকারী মালিক পক্ষ সমাজের সংক্ষিপ্ত একটি গোষ্ঠী। আর সিংহভাগ হলো সাধারণ শ্রম বিনিয়োগ শ্রেণী যারা পুরো উৎপাদনের মূল চালিকাশক্তি। আর এই শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর প্রায়ই অর্ধাংশ নারী।
উৎপাদনের মূল কর্মক্ষম শক্তি হিসেবে শোষণ আর বঞ্চনার শিকার নারী-পুরুষ সবাই। কিন্তু সামাজিক অব্যবস্থার কারণে দুর্বল এবং পিছিয়ে পড়া অংশ হিসেবে নারীরা এক্ষেত্রে অনেকখানিই এগিয়ে। ফলে নামেমাত্র শ্রম মজুরির ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের বিভাজন দৃষ্টিকটূ এবং অমানবিক।
প্রযুক্তি বিদ্যাসহ পুঁজির অব্যাহত বিকাশ উৎপাদনশীলতায় যে গতি সঞ্চার করেছে তা অবশ্যই যুগান্তকারী। পাশাপাশি শ্রমবাজারে শ্রমিকদের মজুরিতে যে ধরনের অনিয়ম এবং অবিচারের মাত্রা যোগ করা হয়েছে সেটাও কোন মতেই চলমান গতি নির্ণয়ে সহায়ক হয়নি। কারণ শ্রম ঘণ্টা হিসাব করে যে মজুরি নির্ধারণ করা হয় শ্রমিকদের সে তুলনায় শ্রম বিনিয়োগ করতে হয় অনেক বেশি। ফলে বঞ্চনার শিকার হতে হয় অসংখ্য শ্রমিককে।
যান্ত্রিক সভ্যতার বদৌলতে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি পণ্য উৎপাদন সম্ভব হয়। কিন্তু শ্রমিকের শ্রম সময় সেই ১২ ঘণ্টাই। সুতরাং পণ্য উৎপাদন হচ্ছে আরও বেশি, কিন্তু সে তুলনায় মজুরির ন্যূনতম অংশও বাড়াতে চায় না মালিক পক্ষ। সেই প্রেক্ষাপটে শ্রম সময় ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা করার দাবিতে জোর আন্দোলনে শ্রমিকরা রাজপথে নেমে আসে। আর বৈষম্যপীড়িত নারী শ্রমিকরাও তাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিক্ষোভ আর প্রতিবাদের ঝড় তোলে।
বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরি করে তাদের এই দাবি আদায়ের লক্ষ্য ক্রমেই জোটবদ্ধ হতে থাকে। এরই জোরালো উদ্যোগ হিসেবে ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিরাট সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জার্মানির সমাজতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিক কর্মী ক্লারা জেটকিন। তিনি জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির একজন অন্যতম স্থপতি।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এই সমাবেশে সারা বিশ্ব থেকে প্রায়ই ১০০ জন নারী নেত্রী অংশ নিয়েছিলেন। সম্মেলন থেকে জোর দাবি জানানো হয় ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়ার।
পর্যায়ক্রমে ১৯১১ সালের ৮ মার্চ নারীদের সমঅধিকার দিবস পালন করা হয়। এরই অনিবার্য পরিণতিতে ১৯১৪ সালের ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মর্যাদা দেয়া হয়। আজ অবধি নারীর অধিকার এবং স্বাধীনতা আদায়ের দিন হিসেবে ৮ মার্চকে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে উদযাপন করা হয়।
বিশ্বের কয়েকটি দেশ এই ৮ মার্চকে সরকারী ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশও যথাযোগ্য মর্যাদায় ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে। তবে দিবসটির তাৎপর্য কোন নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
প্রতিদিনের কর্মযাত্রায় নারীরা যদি তাদের সম্মান, অধিকার এবং ন্যূনতম বাঁচার পথকে অবারিত করতে না পারে তাহলে দিনটির গুরুত্ব কতখানি হাল্কা হয়ে যায় তাও বিবেচনায় আনতে হবে। কর্মক্ষেত্রে বঞ্চিত নারীদের ন্যায্য দাবি হরণের যে করুণ আখ্যান তা থেকে যদি তারা বেরিয়ে আসতে না পারে সে দিনটির মূল বৈশিষ্ট্য কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটা ভাবাও বোধ হয় সময়ের দাবি।
উন্নয়নের গতিধারায় আজকের নারীরা যেভাবে উৎপাদনের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে নিজেদের সমর্পণ করেছে তা যেমন সমৃদ্ধির নিয়ামক একই অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রারও চালিকাশক্তি। কৃষি, শিল্প- কারখানা, অবকাঠামোগত নির্মাণ, অফিস-আদালতসহ সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেভাবে নারীর কর্মক্ষমতা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় তাতে নির্দ্বিধায় বলা যায় শ্রমবাজারে নারীরা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ এবং এগিয়ে।
সেটা যেমন স্বীকার্য একইভাবে আর্থিক অসঙ্গতির দুর্বিপাকে পড়ে বঞ্চিত হওয়ার দুঃসহ যন্ত্রণাও নারী-কর্মীদের নিত্য সঙ্গী। বঞ্চনার এই নির্মম অভিঘাতের আবর্তে পড়া শ্রমজীবী নারীরা আজও নারী দিবসের যথার্থ সুফল থেকে অনেকটাই দূরে। দেশের পোশাক শিল্প যা দেশের অর্থনীতির সম্ভাবনার নিয়ন্ত্রক সেখানে নারীদের যুগান্তকারী ভূমিকাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
সরকারী কিংবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য নেই বললেই চলে। বিভিন্ন আইনানুগ প্রতিষ্ঠা নিয়ম বিধিবহির্ভূত কোন ধরনের অনিয়ম কিংবা সুসংহত প্রথাকে ভেঙ্গে দেয়ার সুযোগও থাকে না। ফলে সেখানে আইন এবং বিধান অনুযায়ী শ্রমের মূল্য নির্ধারণ করা হয় বলে কাউকেই অনৈতক অবস্থার শিকার হতে হয় না।
কিন্তু ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি এবং শিল্পের উৎপাদনশীলতায় নারীরা যেভাবে বৈষম্যের দুর্বিপাকে পড়ে তা যেমন একজন সক্ষম কর্মজীবীর ওপর নগ্ন আক্রমণ একইভাবে আন্তর্জাতিক শ্রম আইনেরও চরম লঙ্ঘন। অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন রাস্তাঘাট, কালভার্ট, সেতু এবং বহুতল ভবন নির্মাণে নারী শ্রমিকের ন্যায্য পাওনাকে যেভাবে কমিয়ে দেয়া হয় পুরুষের তুলনায় তা যেমন দৃষ্টিকটূ একইভাবে নীতিবহির্ভূতও।
শ্রম সময় ও ধরনের বেলায় কোন ফারাক থাকে না। কিন্তু অর্থমূল্যে কেন এই বিভাজন! যে কোন নারী শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে তার মূল্যবান সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করে কিন্তু মজুরি আদায়ে তারা ভোগান্তির কবলে পড়ে। একইভাবে কৃষি জমিতেও নারী কৃষকের ভূমিকা কোন অংশে কম নয়। চারা রোপণ থেকে শুরু করে ধানের সার্বিক পরিচর্যা করে ঘরে তোলা পর্যন্ত নারীরা যেভাবে পায়ের ঘাম মাথায় ফেলে তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সেটা কোনভাবেই একজন পুরুষ কৃষকের চাইতে কম নয়। সেখানেও ভিন্ন শ্রম মজুরি।
নারীরা শুধু যে দেশের উৎপাদনশীলতায় উদয়াস্ত খাটা কাটনি করে তা নয় গৃহস্থালীয় যাবতীয় কাজকর্মও একজন গৃহিণীকেই সামলাতে হয়। সে শ্রমের মূল্য তো ধরাই হয় না। মনে করা হয় পারিবারিক এবং সাংসারিক কাজের দায় তো শুধুমাত্র মহিলাদের। উপার্জনক্ষম মহিলারা এই দায়বোধ থেকে নিজেকে বাঁচাতেও চায় না। অন্যদিকে কেউ এসে তার সহায়ক শক্তি হিসেবে পাশেও দাঁড়ায় না।
তাই শুধু ৮ মার্চের মধ্যে দিনটির গুরুত্ব আটকে রাখলে দিবসটি তার মর্যাদা হারাতে পারে। প্রতিদিনের কর্মযোগে নারীরা যতক্ষণ না তার যথার্থ অধিকার এবং মর্যাদা অর্জন করতে পারবে সেই অবধি দিবসটির তাৎপর্য সত্যিকার অর্থে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে।
নারী দিবসের কবিতা
সবচাইতে জনপ্রিয় নারী দিবসের কবিতা উল্লেখ করেছি।
আমি নারী
আমিই রাণী
আমি কণ্যা আমিই অনন্যা
আমি দেবী আমিই পৃথিবী।
আমি নারী
আমি জাত বৃদ্ধিতে আমিই অনন্যা..
আমি নারী
রাজায় রাজ্য চালায় আর আমি চালাই রাজাকে, নারী।
আমি নারী
আমিই মা
আমি পারি খোদার আরশের
জান্নাতি মেহমান পরিনত হতে।
নারী তুমি চাঁদ নয় যে জ্যোৎস্নার
প্রশংসা সবাই করবে
তুমি সূর্যের মতো দীপ্তি তোমার
দিকে চোখ পড়লে নিচে নামিয়ে নিতে হয়..
নারী তুমিই মা
তুমি স্বর্গ, তুমিই অর্ধাঙ্গিনী
তুমি একাকীত্বের সঙ্গী।
হে নারী, তুমি কখনও কন্যা, কখনও অর্ধাঙ্গনী,
কখনও বা মমতাময়ী “মা”,শত কষ্টের জননী।
নারী হয়েই এসেছো তাই বিশ্বভূবন আজি ধন্য।
শত শত সৃষ্টি,বিকিশিত শুধু তোমারি প্রেমের জন্য।
তোমার হাতে বিশ্ব সাজে,নানা সুর নিয়ে আর ছন্দ।
মনের গহীনের হাজার স্বপ্ন সাজিয়ে পেয়েছো আনন্দ।
তুমিতো কন্যা, প্রেমের বন্যা,আদরের জননী মাতা।
তুমি সঙ্গিনী,স্বপ্ন রমণী,গড়বে বিশ্ব,পাঠিয়েছে বিধাতা।
নারী দিবস নিয়ে উক্তি
সবচাইতে জনপ্রিয় নারী দিবসের উক্তি উল্লেখ করেছি।
তোমাদের সব স্বপ্ন সফল হোক,
উচ্চাশা হোক পূরণ…
তোমরা হয়ে উঠো পাহাড় প্রমান উঁচু..
হ্যাপি ওমেনস ডে।
নিজের আত্মবিশ্বাসের ওপর
নির্ভর করে এগিয়ে চলো নারী….
বিশ্বের প্রত্যেকটি নারীকে
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের
শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা
জগতে যে জাতি নারীর
অসম্মান করবে,
সেই জাতির পতন নিশ্চিত…
নারীদের সম্মানকরো…
শুভ নারী দিবস
তুমি ঈশ্বরের অনবদ্য এক সৃষ্টি,
তোমাকে ছাড়া আমার
অস্তিত্ব থাকতো না,
ধন্যবাদ আমাকে জন্ম
দেওয়ার জন্য এবং
সবসময় আমার পাশে
থেকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য
শুভ নারী দিবসের শুভেচ্ছা
আরো অন্যান্য প্রশ্নোত্তরের সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | বিশ্ব নারী দিবস
Q1. আন্তর্জাতিক নারী দিবস কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়
Ans – ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
Q2. প্রথম নারী দিবস কবে পালিত হয়
Ans – প্রথম ১৯০৯ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। ওই বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আমেরিকায় নারী দিবস (National Woman’s Day) উদযাপন করা হয়েছিল। সোশ্যালিস্ট পার্টি অফ আমেরিকা নিউ ইয়র্কে ১৯০৮ সালে বস্ত্রশ্রমিকরা তাঁদের কাজের সম্মান আদায়ের লক্ষ্যে ধর্মঘট শুরু করেন। নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী কাজ আর সমমানের বেতনের দাবিতে চলে বনধ।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।