Site icon prosnouttor

মানব সম্পদ কাকে বলে, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কাকে বলে, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার জনক কে

মানব সম্পদ কাকে বলে, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কাকে বলে, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার জনক কে

মানব সম্পদ কাকে বলে, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কাকে বলে, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার জনক কে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

মানব সম্পদ কাকে বলে

মানব সম্পদ হল কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের দক্ষ জনবল। যাদের কর্মীরা যত দক্ষ তাদের তত দ্রুত উন্নতি হয়৷ সেজন্যই প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে থাকে। সোজা কথায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবলই মানব সম্পদ।

মানবসম্পদ বা মানব মূলধন বলতে কর্মীদের মধ্যে এমন জ্ঞান, দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা, প্রতিভা ও অন্যান্য অদৃশ্যমান গুণ বা যোগ্যতা থাকাকে বোঝায়, যার অর্থনৈতিক মূল্য আছে।

একটি দেশের শ্রমশক্তির উৎপাদনমুখী ক্ষমতার উন্নয়নই হচ্ছে মানব সম্পদ উন্নয়ন। অর্থাৎ উৎপাদনের বিভিন্নক্ষেত্রে মানুষের কর্মদক্ষতা সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে মানুষের অন্তর্নিহিত বিভিন্ন কর্মগুণ উন্নত ও বিকশিত করে তােলাই হচ্ছে মানব সম্পদ উন্নয়ন।

সাধারণভাবে মানবসম্পদ বলতে মানুষকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করাকে বোঝায় । বাস্তবিক পক্ষেই বর্তমান বিশ্বে মানুষকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় । একটি দেশের জনসংখ্যার কর্মঠ ও দক্ষ জনগোষ্ঠীই হলো সেদেশের মানবসম্পদ । অদক্ষ জনশক্তি একটি জাতির জন্য অভিশাপ। বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশে দক্ষ জনশক্তির বড়োই অভাব । এর কারণ হলো শিক্ষার অভাব। শিক্ষা মানুষকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করে। এর মধ্যে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা অতি সহজেই মানুষকে মানবসম্পদে পরিণত করতে পারে ।

মানব সম্পদ উন্নয়ন বলতে কি বুঝায়, মানব সম্পদ উন্নয়ন বলতে কি বুঝ

মানবসম্পদ উন্নয়ন বলতে বোঝায় মানুষকে প্রতিটি কাজের জন্য যথাযোগ্য করে গড়ে তোলা । অর্থাৎ মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণ করে তার সহজাত ও সুপ্ত ক্ষমতা বিকাশের অনুকূল পরিবেশ ও সুযোগ দিয়ে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলাই হলো মানবসম্পদ উন্নয়ন । জন্মগতভাবেই মানুষ কিছু সুপ্ত প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে । উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পরিবেশের মাধ্যমে মানুষের সেই সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটতে পারে । মানবসম্পদের উন্নয়ন ব্যতীত একটি দেশ উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতে পারে না। মানবসম্পদ যত কর্মঠ হয় জাতির উন্নয়ন তত ত্বরান্বিত হয়। শিক্ষাকে বর্তমান বিশ্বে মানবসম্পদ উন্নয়নের হাতিয়ার বলে বিবেচনা করা হয়।

মানবসম্পদ উন্নয়নের সংজ্ঞা

বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা মানবসম্পদ উন্নয়নকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেনー

ফ্রেডারিক হার্বিসন ও চার্লস এ মায়ার্স-এর মতে, “মানবসম্পদ উন্নয়ন বলতে এমন এক প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে কোনো সমাজের সকল মানুষের জ্ঞান, দক্ষতা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।”

বিশ্বব্যাংকের মতে, “মানবসম্পদ উন্নয়ন হলো কোনো রাষ্ট্রের মানুষের সামগ্রিক বিকাশ প্রক্রিয়ার একটি অংশ, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের জনশক্তি বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে ।”

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) মানবসম্পদ উন্নয়ন বলতে ব্যক্তিকে কর্মে নিযুক্ত করার সম্ভাবনা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বিবেচনা করেছে । 

মানব সম্পদ উন্নয়নের উপাদান কি কি

মানবসম্পদ উন্নয়ন যেসব বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল, সেসব বিষয় মানবসম্পদ উন্নয়নের উপাদান হিসেবে অভিহিত। এসব উপাদান কতিপয় সুযোগ-সুবিধার সমষ্টি। অর্থনীতিবিদ মিরডাল মানবসম্পদ উন্নয়নের আটটি উপাদানের কথা বলেছেন। যেগুলো নিম্নরূপ :

মানব সম্পদ উন্নয়নের উপায় গুলো কি কি

মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় একাধিক উপাদান কাজ করে।

অর্থনীতিবিদ গুনার মিরড্যাল মানবসম্পদ উন্নয়নের আটটি উপাদানের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলাো: ১. খাদ্য ও পুষ্টি ২. বস্ত্র ৩. বাসস্থান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ৪. স্বাস্থ্য সুবিধা ৫. শিক্ষা ৬. গণসংযোগ মাধ্যম ৭, শক্তি ভোগ ও ৮, পরিবহণ। এসব উপাদানের সহায়তায় মানুষের ভেতরের সুপ্ত গুণাবলির উন্নয়ন ও বিকাশই হলো মানবসম্পদ উন্নয়ন।

মানব সম্পদ উন্নয়নের গুরুত্ব

যখন আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলি, মানব পুঁজি হল মানব পুঁজিতে বিনিয়োগ প্রদানকারী অনেক দেশের জন্য ত্বরান্বিত বৃদ্ধি এবং সম্প্রসারণের প্রধান কারণ। এটি কাজ এবং জীবনধারার জন্য সর্বোত্তম পরিস্থিতি প্রদানের জন্য এই দেশগুলিকে সর্বোত্তম সুবিধা দেয়৷

প্রবৃদ্ধির জন্য একটি স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হল যে দেশের স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো ক্ষেত্রগুলিতে প্রসারিত উচ্চ-মানের মানব পুঁজি রয়েছে। এখানে, মানব পুঁজির প্রধান উপাদানগুলি অবশ্যই মানুষ, কিন্তু বর্তমানে, প্রধান উপাদান হল একজন সৃজনশীল, শিক্ষিত, এবং উচ্চ স্তরের পেশাদারিত্বের সাথে উদ্যোগী ব্যক্তি।

অর্থনীতিতে মানব পুঁজি জাতীয় সম্পদের কেন্দ্রীয় অংশ পরিচালনা করে। তাই, সমস্ত গবেষকরা মনে করেন যে মানব পুঁজি হল সম্প্রদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, যা প্রকৃতি বা সম্পদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। বেশিরভাগ দেশে, মানব পুঁজি উন্নয়ন, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির হার নির্ধারণ করে।

মানব সম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড । একটি জাতিকে উন্নত করতে হলে সকল নাগরিকের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে । যেকোনো দেশের আর্থনীতিক ও সামাজিক উন্নয়নে দক্ষ মানবসম্পদের কোনো বিকল্প নেই । কোনো দেশের জাতীয় উন্নয়ন সুনিশ্চিত করার জন্য প্রথমে সেদেশের মানবসম্পদের উন্নয়ন করা অতীব জরুরি । আর এটা কেবল সম্ভব হবে মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আলো প্রজ্বলন করতে পারলে । শিক্ষা মানুষকে জ্ঞানশক্তির দ্বার খুলে দেয় । মানুষের সুপ্ত প্রতিভা ও আত্মশক্তির বিকাশ ঘটাতে পারে একমাত্র শিক্ষা । একজন শিক্ষিত লোক দেশের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারে । আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কর্মমুখী শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত । কেননা আমাদের দেশে এমন অনেক শিক্ষিত লোক আছে, যারা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে না । ফলে বেকার জীবনযাপন করছে । অর্জিত শিক্ষাকে জীবনমুখী করতে না পারলে মানবজাতিকে যথাযথভাবে মানবসম্পদে পরিণত করা যাবে না । আমাদের দেশে বাস্তবমুখী শিক্ষার সুযোগ না থাকায় বেকারত্বের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে । ইদানীং কিছু কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে । কিন্তু এদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর তুলনায় তা নিতান্তই সামান্য। তাই জাতীয় অগ্রগতি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার অবদান : মানুষকে মানবসম্পদে পরিণত করার জন্য কিছু উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন । এজন্য সঠিক কর্মসূচি গ্রহণ, সেই সাথে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলা ও যথাযথ প্রযুক্তি নির্দিষ্টকরণ এবং তা প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। আর দেশের জনসম্পদকে মানবসম্পদে রূপান্তর করতে হলে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। কারণ শিক্ষা মানবসম্পদ উন্নয়নে বিভিন্নভাবে অবদান রাখে। যেমন—

(ক) শিক্ষা মানুষের চিন্তা ও বিচার শক্তির বিকাশ ঘটায় : শিক্ষার আলো ব্যতীত মানুষের অন্তর আলোকিত হয় না। একমাত্র শিক্ষাই পারে মানুষের মেধা শক্তিকে জাগ্রত ও বিকশিত করতে। ফলে মানুষ সুপরিকল্পিত চিন্তা ও বিচার-বিবেচনার মধ্যদিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারে।

(খ) শিক্ষা পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে : শিক্ষা মানুষের আত্মসচেতনতা ও আত্মশক্তি বাড়িয়ে দেয়। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান লাভে সাহায্য করে । এর মাধ্যমে প্রত্যেকে তার প্রচলিত সমাজব্যবস্থার রীতিনীতি, জীবনব্যবস্থা, সামাজিক অবস্থা ও. ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে পারে । ফলে নিজেকে ও সমাজব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাদের মধ্যে জাগ্রত হয়।

(গ) শিক্ষা জ্ঞানার্জনের পথ সুগম করে : নিরক্ষর ব্যক্তিরা কখনো আত্মসচেতন ও নিজেদের অধিকার সচেতন নয় । এরা যেকোনো ভালো-মন্দ কাজে সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ফলে কুচক্রী লোকেরা অতি সহজেই তাদের বিভ্রান্ত ও প্রতারিত করতে পারে। কিন্তু তারা সাক্ষর হলে নিজের আগ্রহে সুবিধামতো বইপত্র, সংবাদপত্র প্রভৃতি পড়ে জ্ঞানার্জন করতে পারে। তখন নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে তারা পরিবারের ও দেশের কল্যাণ সাধনে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে।

(ঘ) শিক্ষা মানুষের মধ্যে সমাজসচেতনতা ও ঐক্যবোধ জাগ্রত করে : শিক্ষা মানুষের মধ্যে সমাজসচেতনতা ও ঐক্যবোধ জাগ্রত করে। তারা বুঝতে শেখে নিজের স্বার্থ দেখলেই চলবে না, সকলের স্বার্থে কাজ করে যেতে হবে । তখন তারা সমাজের উন্নয়ন সাধনের জন্য নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসে।

(ঙ) শিক্ষা মানুষের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে : একজন নিরক্ষর কর্মীর চেয়ে একজন সাক্ষর কর্মী অধিক কর্মদক্ষ । কারণ একজন সাক্ষর কর্মীর চিন্তা, বিচার-বিশ্লেষণ ক্ষমতা, আত্মমূল্যায়ন, কর্মসূচি গ্রহণ ও কর্মসম্পাদনের ক্ষমতা নিরক্ষর কর্মী থেকে অনেক বেশি ।

(চ) জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে শিক্ষা : শিক্ষা মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে স্পৃহা জাগায়। ফলে সে সমাজের অন্যদের জীবনযাত্রার মানের সাথে তুলনা করে নিজের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টা করে ।

মানব সম্পদ উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা

ভারতে বা বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। এদেশের অধিকাংশ লোকই অশিক্ষিত। দেশের সার্বিক উন্নয়নে মানবসম্পদ উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই । অথচ আমাদের অধিকাংশ লোকই অদক্ষ ও অজ্ঞ । এই অদক্ষ লোকজন দেশের কোনো উন্নয়নে কাজে আসে না’। কেননা এসব অদক্ষ লোক কোনো কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারে না । একজন শিক্ষিত ও দক্ষ লোক একটা কাজে যতটা সাফল্য অর্জন করতে পারে একজন অশিক্ষিত ও অদক্ষ লোকের পক্ষে তার কিছুটাও সম্ভব নয় । অন্যদিকে, একটা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করে দক্ষ মানবসম্পদের ওপর। শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ না থাকলে দেশের সমুদয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। তাই মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কাকে বলে

প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মী তথা মানব সম্পর্কিত বিষয়াদি নিয়ে ব্যবস্থাপনার যে অংশ কাজ করে তা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা হিসেবে পরিচিত। এটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ, তাদের সংগ্রহ, নির্বাচন ও নিয়োগ, উন্নয়ন, কর্মীদের কাজে উদ্বুদ্ধকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সাথে সম্পর্কিত। মানব সম্পদ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের চালিকাশক্তি। তাই প্রতিষ্ঠানের এ সম্পদের বাছাই, নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন, বেতন ও মজুরি প্রদান, প্রেষণা ও সুযোগ-সুবিধা দান, কর্মীদের অভাব-অভিযোগ নিরসন, কর্মীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।

বিষয়সমূহ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পাদন করা হয় তাকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা হিসেবে অভিহিত করা যায়। এটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কর্মসম্পাদন, পরিচালনা নীতি ও পদ্ধতি, মানবীয় কর্মপ্রচেষ্টার নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ এবং উত্তম মানবীয় সম্পর্ক সৃষ্টির প্রয়াসের নীতি ও কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত।

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে নানাভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা প্রদান করা হলো:

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার জনক কে

জর্জ এল্টন মেয়ো মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার জনক বলা হয়।

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য

সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার অংশ হলেও এ ব্যবস্থাপনার বেশ কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। নিম্নে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার এ সকল বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো:

১. সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার অবিচ্ছেদ্য অংশ (Intregrated part of overall management):

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা হলো সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাংগঠনিক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সামগ্রিক ব্যবস্থাপনাকে যে সকল ভাগে ভাগ করা হয়, তাদের মধ্যে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা অন্যতম। ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় মানব সম্পদ সংগ্রহ, নির্বাচন, উন্নয়ন এবং সংরক্ষণের সাথে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা জড়িত থাকে। বর্তমানে সারা বিশ্বেই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা জ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে পরিগনিত হচ্ছে।

২. জনশক্তির ব্যবস্থাপনা (Management of manpower):

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে জনশক্তির ব্যবস্থাপনাও বলা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জনশক্তি সংগ্রহ, নির্বাচন, প্রশিক্ষণদান, উন্নয়ন, সংরক্ষণ, কর্মীদের পেশাগত মানোন্নয়ন ইত্যাদি কাজে এ ব্যবস্থাপনা নিজেকে জড়িয়ে রাখে। প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারি, তত্ত্বাবধায়ক, ব্যবস্থাপক, বিভাগীয় প্রধানসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের দক্ষতা ও পেশাগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যেই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

৩. ধারাবাহিক প্রক্রিয়া (Continuous process):

সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার ন্যায় মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাও কতকগুলো ধারাবাহিক কাজের সমষ্টি। কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচন, প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন, বদলি, প্রেষণাদান, পদোন্নতি, অবসর বা ছাঁটাই ইত্যাদি কাজের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত এ ব্যবস্থাপনার সকল কাজ ধারাবাহিকভাবে সম্পাদিত হয়। ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা তার লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হয়।

৪. গতিশীল কাজ (Dynamic functions):

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা একটি গতিশীল কাজ। এ ব্যবস্থাপনা কোনো সাময়িক কাজ নয়। কর্মীদের মানোন্নয়নে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কর্মীদের কার্য সম্পাদনে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম কাজ। তাছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-নীতি, পরিকল্পনা, কর্মসূচি ইত্যাদির সংশোধনও এ ব্যবস্থাপনার অন্যতম কাজ বা বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য হয়।

৫. সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি অনুসরণ (Follow of specific rules and regulation):

ব্যবস্থাপনার সুনির্দিষ্ট জ্ঞানের শাখা হিসেবে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে কতকগুলো সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে হয়। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার এ সকল নিয়ম-নীতি ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা নির্দিষ্ট করে দেয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত এ সকল নিয়ম-নীতির আওতায় থেকেই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার সকল কাজ সম্পাদন করতে হয়। তবে নিয়ম-নীতি প্রণয়নেও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৬. সার্বজনীন কাজ (Universal work):

যে কাজগুলো সকল প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ করা সম্ভব সে সকল কাজকে সার্বজনীন কাজ বলে। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা যে সকল কাজ সম্পাদন করে তা সকল প্রতিষ্ঠানেই প্রয়োগ সম্ভব। মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে এ ব্যবস্থাপনা যে কাজগুলো সম্পাদন করে তা সকল অবস্থায় ও সকল প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ করা যায়। তবে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি, নীতি, ঊর্ধ্বতনদের মনোভাব ইত্যাদির আলোকে এর কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।

৭. কৌশলগত ধারণা (Strategic approach):

কৌশলগত ধারণা থেকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার উৎপত্তি। সাংগঠনিক উন্নয়নের জন্য মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে একটি কৌশল হিসেবে গণ্য করা হয়। এরূপ কৌশলের অংশ হিসেবে মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য নীতি প্রণয়ন, কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের যাবতীয় কার্যক্রম এ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করে। আবার সাংগঠনিক কৌশল পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার যাবতীয় কাজকে পুনর্বিন্যাস করাও এ ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য হয়।

৮. ব্যক্তিক ও সাংগঠনিক লক্ষ্যের মধ্যে সমন্বয় (Coordination between person and organization):

ব্যক্তিক ও সাংগঠনিক লক্ষ্যের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য হয়। প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা আসে বেতন-ভাতা প্রাপ্তির প্রত্যাশায়, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হলো মুনাফা অর্জন। ব্যক্তিক ও প্রাতিষ্ঠানিক এ লক্ষ্য বিপরীতমুখী। তাই এ দু’টি লক্ষ্যকে অবশ্যই সমন্বয় করা প্রয়োজন। ব্যক্তিক ও সাংগঠনিক লক্ষ্যের মধ্যে সমন্বয় করে বৃহত্তর স্বার্থে তা একই জায়গায় নিয়ে আসাই হলো মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম উদ্দেশ্য।

৯. মানব সম্পদের উন্নয়ন (Development of human resource):

প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত মানব সম্পদের উন্নয়ন সাধন করা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম কাজ। মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য মানব সম্পদ পরিকল্পনা থেকে শুরু করে কর্মী উন্নয়ন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলি এ ব্যবস্থাপনাকে সম্পাদন করতে হয়। তাই বলা যায়, মানব সম্পদের উন্নয়ন করা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

১০. ভবিষ্যৎমুখী (Future oriented):

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- এটি একটি ভবিষ্যৎমুখী প্রক্রিয়া। অর্থাৎ ভবিষ্যতের প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের মানোন্নয়ন করা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম কাজ। এ লক্ষ্যেকে সামনে রেখে দক্ষ কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার জন্য মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ভবিষ্যতের যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করে। ভবিষ্যতে একটি সংগঠনে কি পরিমাণ কর্মীর প্রয়োজন হবে, তাদের দক্ষতা কিরূপ হবে, তাদের বেতন কাঠামো কিরূপ হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়েই মূলত মানব সম্পর্ক ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম আবর্তিত হয়।

পরিশেষে বলা যায়, সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো। লক্ষ করা যায়। এ সকল বৈশিষ্ট্যের আলোকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে অন্যান্য যে কোনো ব্যবস্থাপনা হতে সহজেই পৃথক করা সম্ভব হয়। সে কারণেই বর্তমানে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে জ্ঞানের একটি পৃথক শাখা। হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার নীতিমালা

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার নীতিসমূহ [ Principles of Human Resource Management] নীতি হলো সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এমন কোনো বিবৃতি যা কার্য সম্পাদনের নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে। (A principle can be defined as a fundamental statement or truth providing a guide to though or action) নীতির বৈশিষ্ট্য হলো স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এরূপ নির্দেশিকার সফল প্রয়োগে যথার্থ ফল প্রাপ্তির নিশ্চিত সম্ভাবনা থাকে। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা যেহেতু মৌলিক বিজ্ঞান নয়, তাই এর সফলতার জন্য বেশকিছু নীতিকে অনুসরণ করা হয়।

নিম্নে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার নীতিসমূহ আলোচনা করা হলো:

১. উত্তম পরিকল্পনার নীতি (Principle of unique plan):

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা যেহেতু কর্মীদের ভবিষ্যৎ চাহি, প্রত্যাশা, কর্মদক্ষতা, উন্নয়ন ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে, তাই এ ব্যবস্থাপনাকে মানব সম্পদের পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। পরিকল্পনা যত উত্তম ও বাস্তবসম্মত হবে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যও তত দ্রুত অর্জিত হবে। তাই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে উত্তম পরিকল্পনার নীতি অনুসরণ করা উচিত।

২. বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কর্মী নির্বাচনের নীতি (Principle of scientific selection):

কর্মী নির্বাচন মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম কাজ হিসেবে গণ্য হয়। তবে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগ্য কর্মী নির্বাচন অত সহজ বিষয় নয়। কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। কর্মী নির্বাচনের নীতি যত সুনির্দিষ্ট ও বিজ্ঞানসম্মত হবে নির্বাচন প্রক্রিয়া ততই সন্দেহমুক্ত ও সবার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে। তাই কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটানো উচিত।

৩. শ্রম মর্যাদার নীতি (Principle of dignity of labor):

শ্রম মর্যাদার নীতি মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার আরেকটি অন্যতম নীতি হিসেবে গণ্য হয়। এ নীতির আওতায় কোনো কর্মীর কাজকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ছোট-বড় সকল কর্মীর কাজের সামষ্টিক ফসলই হলো প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে সকল কর্মীর অবদান গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।

৪. উচ্চ মনোবলের নীতি (Principle of high morale):

মনোবল হলো মানসিক দৃঢ়তা। উচ্চ মনোবল সম্পন্ন কর্মীদের দিয়ে অতিসহজেই চ্যালেঞ্জমূলক কার্য সম্পাদন করা যায়। তাই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মীদের উচ্চ মনোবল সৃষ্টির জন্য চেষ্টা চালায়। এ নীতির আওতায় প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের মনোবল উচ্চ করার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মীদের মাঝে উচ্চ মনোবল সৃষ্টি করা গেলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

৫. ব্যক্তিগত উন্নয়নের নীতি (Principle of personal development):

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার আরেকটি অন্যতম নীতি হলো কর্মীদের ব্যক্তিগত উন্নয়নের নীতি। এ নীতির আওতায় মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কর্মীদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন একদিকে যেমন তাদেরকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের কর্মদক্ষতাও বৃদ্ধি পায়; যা প্রাতিষ্ঠানিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।

৬. কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের সমতা নীতি (Principle of balancing responsibility and authority):

কর্তৃত্ব হলো আদেশ প্রদানের অধিকার এবং দায়িত্ব হলো অর্পিত কার্য সম্পাদনের দায় বা কর্তব্য। মানব সম্পন ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে কর্তৃত্ব দেওয়া হয় এবং উক্ত কাজে তাদের দায়িত্বও অর্পণ করা হয়। তবে এরূপ কর্তৃত্ব এবং দায়িত্ব অবশ্যই সমপরিমাণ হওয়া উচিত। অসম কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব কার্য সম্পাদনে বাধা সৃষ্টি করে।

৭. পারিশ্রমিকের নীতি (Principle of remuneration):

কাঙ্ক্ষিত পারিশ্রমিকের আশায় কর্মীরা কাজ করতে আসে। তাই দক্ষ ও যোগ্য কর্মীদের প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখার জন্য কর্মীদেরকে অবশ্যই উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রদান করতে হবে। উপযুক্ত পারিশ্রমিক বঞ্চিত কর্মীরা নানান ধরনের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে এবং প্রতিষ্ঠানে শ্রম-ঘূর্ণায়মানতা বৃদ্ধি পায়। এ কারণে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রদানে মনোনিবেশ করা উচিত।

৮. দলগত প্রচেষ্টার নীতি (Principle of group efforts):

কোনো ব্যক্তির একক প্রচেষ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে দলগত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। এ কারণে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সকল সময় দলগত প্রচেষ্টাকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে। কোনো সংগঠনে দলগত প্রচেষ্টার পরিবেশ সৃষ্টি করা গেলে সেখানে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হয় এবং দলীয় উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন ত্বরান্বিত করে।

৯. নিয়মানুবর্তিতার নীতি (Principle of discipline):

প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত নিয়ম-নীতি এবং ঊর্ধ্বতনের প্রতি সকলের শ্রদ্ধাবোধ এবং মান্য করে চলার ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রয়াসের সঙ্গে নিয়মানুবর্তিতা সম্পর্কযুক্ত। প্রতিষ্ঠানের সবাই যদি নিয়ম-নীতি ও সেই সাথে ঊর্ধ্বতনদের মেনে চলে তবে কখনই প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে না। এ কারণে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুবর্তিতার দিকে বিশেষ। নজর দেয়।

১০. আদেশের ঐক্যের নীতি (Principle of unity of command):

এ নীতির মূলকথা হলো একজন কর্মী প্রত্যক্ষভাবে একজন মাত্র ঊর্ধ্বর্তনের অধীনে থাকবে। অর্থাৎ একজন কর্মী যার প্রত্যক্ষ অধীনে থাকবে তার নিকট থেকেই নির্দেশ লাভ করবে এবং কাজের রিপোর্ট ঐ ঊর্ধ্বর্তনের নিকটই প্রদান করতে বাধ্য থাকবে। এ নীতির আলোকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা এমনভাবে সংগঠন কাঠামো দাঁড় করায় যাতে একজন কর্মী শুধুমাত্র একজন ঊর্ধ্বতনের অধীনেই কাজ করে।

১১. বিশেষায়নের নীতি (Principle of specialization):

প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীরা যাতে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করতে পারে সে বিষয়টি বিবেচনা করে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করেন। এ নীতির আওতায় প্রতিষ্ঠানের সকল কাজকে সম বৈশিষ্ট্যের আলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ওপর অর্পণ করা হয়। এর ফলে উক্ত ব্যক্তি একই কাজ বার বার সম্পাদন করতে করতে বিশেষজ্ঞতা অর্জন
করে।

১২. কার্যকর যোগাযোগের নীতি (Principle of effective communication):

বর্তমান যুগ যোগাযোগের যুগ। অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও যোগাযোগের গুরুত্ব অনেক বেশি। এ নীতির আওতায় সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে নিয়োজিত কর্মীদের সাথে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। কার্যকর যোগাযোগের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত নীতি থাকা জরুরি; যাতে প্রতিটি কর্মী ও কর্মকর্তার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হয়।

১৩. কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণের নীতি (Principle of centralization and decentralization):

যে ব্যবস্থা ঊর্ধ্বতনের গুরুত্ব বৃদ্ধি করে তাই হলো কেন্দ্রীকরণ এবং যে ব্যবস্থা অধস্তনদের গুরুত্ব বৃদ্ধি করে তাই হলো বিকেন্দ্রীকরণ। এ নীতির আওতায় মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিজের নিকট রেখে দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অধস্তনদের নিকট হস্তান্তর করে। এতে একদিকে যেমন তাদের কর্মভার লাঘব হয়, অন্যদিকে তেমনি অধস্তনদেরও অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়।

১৪. শৃঙ্খলার নীতি (Principle of order):

এ নীতির লক্ষ্য হলো যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য স্থানে এবং উপযুক্ত বস্তুকে স্থানে স্থাপন করা যাতে প্রতিষ্ঠানে মানব শৃঙ্খলা ও বস্তুগত শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়। এছাড়াও এ নীতির আওতায় সকল বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদান যাতে প্রতিষ্ঠানে সঠিক নিয়ম-শৃঙ্খলার সাথে কার্য সম্পাদন করতে সক্ষম হয় তারও ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এ নীতির মাধ্যমে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে প্রতিটি কর্মীর যোগ্যতা, পদ মূল্যায়ন এবং কর্মী নিয়োগে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করতে হয়।

১৫. উদ্যোগ গ্রহণের নীতি (Principle of initiative):

প্রতিষ্ঠানের যে কোনো স্তরে কর্মরত কর্মীরা যাতে তার আওতাধীন কাজ নিয়ে যাতে ভাবতে পারে, কাজের উন্নয়ন সাধন করতে পারে ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে সে ধরনের কার্য পরিবেশ সৃষ্টি করাই এরূপ নীতির উদ্দেশ্য। এ নীতির আওতায় মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনে এরূপ পরিবেশ সৃষ্টি করে, যাতে প্রতিটি কর্মী নিজ নিজ অবস্থানে থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য উপরোক্ত নীতিগুলো অনুসরণ করা উচিত। এ নীতিগুলো অনেকটাই সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার অংশ হওয়ায় এ ব্যবস্থাপনাকে এ নীতিগুলো সম্পর্কে সাম্যক ধারণা রাখা প্রয়োজন। আলোচিত নীতিগুলোর স্বার্থক বাস্তবায়নের উপরই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে।

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব আলোচনা কর

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে Lawrence A. Apply বলেছেন, “ব্যবস্থাপনা যদি স্বীকার করে যে, ব্যবস্থাপনা মানেই কর্মীদের উন্নয়ন এবং মানব সম্পদের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেয়া, তাহলে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অনেক সমস্যাই সহজভাবে সমাধান হয়ে যাবে।” তাঁর মতে ব্যবস্থাপনা মানেই কর্মী বা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা। ব্যবস্থাপনা ও কর্মী বা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা এক ও অভিন্ন। 

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে মানবিক উপাদান। কেননা মানবিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার ছাড়া উন্নত প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির যথার্থ ব্যবহার সম্ভব নয়। আর এ কারণেই আজকাল বিশ্বায়নের প্রবল প্রতিযোগিতা মোকাবিলায় মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। নিম্নে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:

১) প্রতিষ্ঠানের স্নায়ুতন্ত্র হিসেবে কাজ করে

মানব সম্পদকে প্রতিষ্ঠানের স্নায়ুতন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। কারণ মানবদেহেরে প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার জন্য যেমন সুস্থ ও সক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র প্রয়োজন, তেমনি সংগঠনের প্রতিটি বিভাগের সঠিক ও কার্যকর কার্যপ্রক্রিয়া অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার ভূমিকা অপরিহার্য। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অনুপস্থিতিতে সংগঠনের কার্যপ্রক্রিয়া সুচারুরুপে সম্পন্ন করা সম্ভব নয় বলেই একে মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রের সাথে তুলনা করা হয়েছে।

২) উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি

প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনের উপকরণসমূহকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। এটি কর্মীর কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে তাদের কর্মে আত্মনিয়োগ ও প্রতিষ্ঠানে টিকিয়ে রাখার সকল কার্যক্রম গ্রহণ করে।

৩) অব্যাহত উৎপাদন বজায় রাখা

উৎপাদনের চাকাকে সচল রেখে প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনের গতি অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যাপক ব্যবহারের ফলে ব্যবসায় ক্ষেত্রে নানাবিধ প্রতিযোগিতা ও জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় এইচআরএম সঠিক কর্মী বাছাই করে তাদের প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন ও প্রণোদনাদানের মাধ্যমে কার্যক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে কর্মীদের উৎপাদন কর্মকাণ্ডে সর্বোত্তম অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। এর ফলে শিল্পে উৎপাদনের গতি অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়।

৪) প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন

প্রতিষ্ঠানের মানবিক সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহার দ্বারা লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। মানব সম্পদের সর্বাধিক উৎকর্ষ সাধন করে এর কাম্য ব্যবহার এবং শ্রমিক-কর্মী ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সচল রাখা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ কার্য। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মীদের কার্যপন্থা, কার্যপরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে কর্মীদের কাজে আত্মনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করে এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৫) সম্পদের সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও ব্যবহার

প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সম্পদসমূহের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ, তত্ত্বাবধান ও কাম্য ব্যবহারের জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী প্রয়োজন। দক্ষ কর্মীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও সামগ্রীর উন্নত ব্যবহার ও সংরক্ষণ সম্ভব। আর এরুপ দক্ষ কর্মীবাহিনী গঠনে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

৬) আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার

আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিয়ত উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি ও কলাকৌশল। বর্ধিত উৎপাদনের চাহিদা পূরণে এসব প্রযুক্তি ও কৌশলের ব্যবহার অপরিহার্য। এসব উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও কলাকৌশলের সাথে পরিচিত করে তুলে কর্মীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজ।

৭) আধুনিক প্রতিযোগিতা মোকাবেলা

বিশ্বায়ন আর মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রভাবে উৎপাদন ক্ষেত্রে নানা বৈচিত্র্যতা দেখা দেয়ায় ব্যবসায় জগতে প্রতিষ্ঠানকে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। স্বল্পমূল্যে উন্নতমানের পণ্য ও সেবা সরবরাহ আজকের প্রতিষ্ঠানের সর্বাপেক্ষা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ, এদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন এবং সংরক্ষণ করা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অপরিহার্য। এসব কার্যাদি সুসম্পন্নের জন্যও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে।

৮) দক্ষ জনশক্তি বৃদ্ধি

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের নীতি, কর্মসূচি ও পরিকল্পনার সাথে সংগতি রেখে কর্মীদের নানাবিধ প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মীবাহিনী হিসেবে গড়ে তোলে। এভাবে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার সাথে নিয়োগ, প্রেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে সারা দেশে দক্ষ কর্মশক্তি গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৯) কর্মী সংক্রান্ত কার্যসম্পাদন

প্রতিষ্ঠানের কর্মী সংক্রান্ত যাবতীয় কার্য তথা কর্মী নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন, সংরক্ষণ, প্রণোদনাদান, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ইত্যাদি মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা দক্ষতার সাথে সম্পাদন করে থাকে। এটি কর্মী সংক্রান্ত সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপযুক্ত কর্মীকে উপযুক্ত পদে ও উপযুক্ত সময়ে নিয়োগ করে থাকে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানে কর্মীর কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

১০) শ্রম ও উৎপাদন খরচ নিয়ন্ত্রণ

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ‍প্রতিষ্ঠানে কর্মীর কাজের দক্ষতা ও মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠানের জনশক্তির কাম্য ব্যবহার নিশ্চত করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সর্বাধিক শ্রম খরচ হ্রাস করে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।

১১) সৌহার্দ্যপূর্ণ শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক সৃষ্টি

প্রতিষ্ঠানে অব্যাহত উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য উত্তম শিল্প সম্পর্ক অত্যাবশ্যক। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা শ্রমিকদের ন্যায্য ও যথোপযুক্ত পারিশ্রমিকসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিকের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ব্যবস্থাপনার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতামূলক মনোভাব সৃষ্টি এবং শ্রমিক-কর্মীর অসহযোগিতামূলক মনোভাব দূরীকরণে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

১২) মানব সম্পদ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন

প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় মানব সম্পদের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানব সম্পদ পরিকল্পনার মাধ্যমে কাম্য মানব সম্পদের নির্বাচন, নিয়োগ, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। সঠিক কর্মীকে সঠিক স্থানে নিয়োগকল্পে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

১৩) মানব আচরণ ও মানব সম্পর্কের উন্নয়ন

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের মানব আচরণের পরিবর্তন সাধন করে উত্তম মানব সম্পর্ক সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উত্তম মনোভাব গঠন ও আচার-আচরণ এবং মনোবল ইত্যাদির উন্নয়ন সাধন করে উত্তম মানব সৃষ্টির সহায়ক ভূমিকা পালনে এটি তৎপর থাকে। উত্তম মানবীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের সহায়ক। এটি কার্যসম্পাদনে কর্মীর একাগ্রতা ও আত্মনিয়োগে সহায়তা করে। উচ্চ মনোবল কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রতিষ্ঠানে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক উন্নয়ন সহায়তা করে।

১৪) কর্মী প্রেষণা ও কর্মীর স্বতঃস্ফূর্ততা নিশ্চিতকরণ

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের আর্থিক ও অনার্থিক প্রেষণাদানের ব্যবস্থা করে। ফলে কর্মীদের কার্যসম্পাদনের স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। প্রেষণা এমন একটি কৌশল যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের কাজে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করা হয়। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মরত কর্মীদের নানাভাবে প্রেষণাদানের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে কাজ আদায়করণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

১৫) কার্যসন্তুষ্টি অর্জন

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে কর্মীর দক্ষতার উন্নয়ন ঘটিয়ে কর্মক্ষেত্রে উন্নতি ও যথাযথ পুরস্কার প্রদান এবং কল্যাণকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানে কাজের উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি, যথাযথ প্রণোদনা দান এবং কর্মোদ্যোগ সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মীর কার্যসন্তুষ্টি অর্জনপূর্বক কর্মীকে কার্যসম্পাদনের স্বতঃস্ফূর্ত আত্মনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করে।

১৬) মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বিশ্বায়নের প্রভাব

আধুনিক মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রভাবে ব্যবসায় ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত তীব্র প্রতিযোগিতা এবং নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যবসায় ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাব মোকাবিলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারসহ অধিক দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। এমতাবস্থায় আজ উন্নত বিশ্বের প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া বা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রয়োজনে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কার্যকর ও সফল প্রয়োগের গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলেছে। 

পরিশেষে বলা যায়, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের সুষ্ঠু কার্যপরিবেশ সৃষ্টি, শ্রম কল্যাণমূলক ব্যবস্থা, কাজের শৃঙ্খলা ও উত্তম শিল্প সম্পর্ক স্থাপন করে। কর্মী নির্বাচন, নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও সুষ্ঠু পারিশ্রমিক প্রদানের ব্যবস্থা করে কর্মীদের কার্যসন্তুষ্টি আনয়ন করে; মনোবল উন্নত করে, স্বতঃস্ফুর্ত আত্মনিয়োগ নিশ্চিত করে। 

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বই pdf

হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজনীয়তা

এই বইটি পাঠকদের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গাইড করে এবং সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য টুল সরবরাহ করে। এটি সহ ক্ষেত্রগুলির একটি বোঝার প্রদান করে:

এইচআরএম ধারণা | কর্মক্ষমতা ব্যবস্থাপনা কৌশল | আইনি এবং নিয়ন্ত্রক সম্মতি | সাংগঠনিক উন্নয়ন | দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনা | বেতন এবং ক্ষতিপূরণ | এইচআরএম-এ তথ্য প্রযুক্তি | স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা | কর্মী উন্নয়ন

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | মানব সম্পদ

Q1. মানব সম্পদ উন্নয়ন কি

Ans – মানবসম্পদ উন্নয়ন একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের জনগোষ্ঠী একটি বিশাল সম্পদে পরিণত হতে পারে।মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে একটি মানবগোষ্ঠীর সুপ্ত প্রতিভা,প্রচ্ছন্ন শক্তি, লুকায়িত সামর্থ্য,যোগ্যতার প্রসার ঘটে। মানব সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের আশা-আকংখা পূর্ণ হয়।মানুষকে যেখানে সম্পদ হিসেবে ধরা হয় সেখানে তার অর্থনৈতিক উন্নয়নে মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটে অন্যথায় তা ব্যর্থ হবে।মানুষের অর্থনৈতিক দায়বদ্বতা থেকে মুক্ত করা হল অর্থনীতির অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য।

Q2. মানব সম্পদ উন্নয়নের মূল উপাদান কি

Ans – উন্নয়নের জন্য মানবসম্পদ হচ্ছে প্রত্যক্ষ উপাদান (Active Agencies), দ্বিতীয়ত প্রাকৃতিক সম্পদ এবং পুঁজি হচ্ছে পরোক্ষ উপাদান (Passive Factors)। মানবসম্পদই পুঁজি বিনিয়োগ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি করে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এবং এগুলো নিশ্চিত করে জাতীয় উন্নয়নে অগ্রসর হয়।

Q3. মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রথম কাজ কি

Ans – মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রথম কাজ মানব সম্পদ পরিকল্পনা।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version