Site icon prosnouttor

হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা, হরপ্পা সভ্যতার প্রশ্ন উত্তর

হরপ্পা সভ্যতার প্রশ্ন উত্তর

হরপ্পা সভ্যতার প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

হরপ্পা সভ্যতা কোথায় অবস্থিত

বিশ্বের সুপ্রাচীন সভ্যতাগুলির মধ্যে অন্যতম হল ভারতের সিন্ধু সভ্যতা। প্রায় ৫ হাজার বছরের প্রাচীন এই সভ্যতা সুমেরীয়, মেসোপটেমীয়,আসিরীয় প্রভৃতি সভ্যতার সমসাময়িক এবং উৎকর্ষতায়ও বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতাগুলির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

ভারতবর্ষের সিন্ধু নদীর তীরে খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ বৎসর বা তার আগে থেকে যে প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, তাকেই সিন্ধু সভ্যতা নামে অভিহিত করা হয়। হরপ্পা সভ্যতা এই সিন্ধু সভ্যতার অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

হরপ্পা হলো– বর্তমান পাকিস্তানের সাহিবাল (জেলা শহর) থেকে ৩৫ কিলোমিটার পশ্চিমে নদীর পুরনো খাদের কাছে অবস্থিত একটি স্থান। ব্রিটিশ শাসনামলে এখানে একটি রেলস্টেশন ছিল। বর্তমানে এটি একটি ছোট পাকিস্তানি শহর।

হরপ্পা সভ্যতা কে আবিষ্কার করেন

১৮২৬ সালের দিকে দয়ারাম সাহানি হরপ্পা সভ্যতার খনন কাজের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয়।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ মার্শালের তত্ত্বাবধানে ময়েঞ্জোদারো ও হরপ্পায় খনন কাজ শুরু হয়। এই অভিযানের সূত্রে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে প্রত্নতত্ত্ববিদ্ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সিন্ধুনদের পশ্চিম তীরে ময়েঞ্জোদাড়ো স্তূপকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থল হিসাবে সুনিশ্চিতভাবে ঘোষণা দেন। তিনি অবশ্য এই স্থানকে বৌদ্ধ বিহারের ধ্বসস্তূপ ভেবেছিলেন। একই বৎসরে রায়বাহাদুর দয়ারাম সাহানী হরপ্পাতে প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ বলে অনুমান করেন।

জন মার্শাল দয়ারাম সাহানি রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করে এই সভ্যতা গুলি আবিষ্কার করেন ।প্রথমে তারা জানতেন না যে এখানে কোন প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যেতে পারে । তারা সেখানে রেললাইন পাতর জন্য কিছু ইট পাথরের খোঁজ করছিলেন । স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে সন্ধান কি পেয়ে তারা এগুলি সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন ।

এরপর অনুমান করেন এখানে প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থাকতে পারে । এভাবে খনন কার্য চালাতে গিয়ে এই সভ্যতার সন্ধান পেয়ে ছিলেন । এই সভ্যতা প্রথম পাঞ্জাবের হরপ্পা নামক স্থানে পাওয়া গিয়েছিল বলে এই সভ্যতা কে হরপ্পা সভ্যতা বলা হয় । কিন্তু সিন্ধু নদের তীরে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল বলে একে সিন্ধু সভ্যতা ও বলা হয় বলা হয়ে থাকে । এই সভ্যতার সমসাময়িক আরো অনেক ধ্বংসাবশেষ আরো নানা জায়গায় পাওয়া গেছে। লোথাল কালিবঙ্গান রুপার ইত্যাদি বহু জায়গায় এই সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে ।ভারত এবং পাকিস্তানের রয়েছেবিভিন্ন জায়গায় এই ধ্বংসাবশেষ গুলি ছড়িয়ে- ছিটিয়ে রয়েছে।

হরপ্পা সভ্যতার সময়কাল

হরপ্পা সভ্যতার সময়কাল নির্ণয়ের কাজটি বেশ কঠিন। খননকার্যের ফলে বহু সীলমোহর আবিষ্কৃত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেগুলিতে খোদিত লিপিগুলির সঠিক পাঠোদ্ধার করা এখনো পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। এগুলির অর্থ উদ্ধার করতে পারলে হয়তো হরপ্পা-সভ্যতার কালনির্ণয় সম্ভব হবে।

আরো পড়তে: মেহেরগড় সভ্যতা, মেহেরগড় সভ্যতা কে আবিষ্কার করেন, মেহেরগড় সভ্যতা কোন যুগের সভ্যতা

সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা বলা হয় কেন

সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা’ নামেও অভিহিত করা হয়। এর কারণগুলি হল –

হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা, হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা বর্ণনা দাও

হরপ্পা নগরীর আয়তন ছিল প্রায় আড়াই বর্গমাইল। অন্যান্য নগরগুলোর আয়তনও কম বেশি একই রকম। হরপ্পার প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার সূত্রে যে শহরগুলোর সন্ধান পাওয়া গেছে, তা দেখে মনে হয়, হরপ্পাবাসীর একটি উন্নত নগর ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছিল। রাস্তাঘাট পয়ঃপ্রণালী এবং গৃহায়ন ইত্যাদি দেখে মনে হয়- কোনো দক্ষ পৌর-প্রশাসনের অধীনে এই কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। মূল নগরীকে ঘিরে ছিল কৃষিখামার, গোচারণভূমি।

হরপ্পা সভ্যতার আঞ্চলিক বিভাজন

হরপ্পা নগরটির দুটি অংশ ছিল একটি পশ্চিমের উঁচু দুর্গাঞ্চল, অপরটি পূর্বের নিম্নাঞ্চল। দুর্গাঞ্চলে শাসক শ্রেণির লােকেরা বসবাস করত। আর নিম্নাঞ্চলে সাধারণ শ্রেণির মানুষ বসবাস করত। দুর্গ এলাকা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকত।

হরপ্পা সভ্যতার রাস্তাঘাট

নগরের ভিতরের প্রধান সড়কগুলো ছিল ৩৫ ফুট চওড়া, আর অপ্রধান সড়কগুলো ছিল ১০ ফুট চওড়া। এছাড়া ৫ ফুট চওড়া গলিগুলো ছিল একেবারে ঘরের সামনে দিয়ে। রাস্তাগুলো ছিল সোজা এবং উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম বরাবর। ফলে নগরের সার্বিক চেহারা দাঁড়িয়েছিল সরল সড়ক দ্বারা বেষ্টিত ছোটো ছোটো চৌকো ব্লকের সমন্বিত রূপে।

সরল ও প্রশস্ত রাস্তাগুলি পূর্ব থেকে পশ্চিম ও উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে সমান্তরালভাবে বিস্তৃত ছিল। বেশিরভাগ রাস্তা একে অপরকে সমকোণে ছেদ করায় শহরগুলি বর্গাকার ও আয়তাকার ব্লকের রূপ নিয়েছিল। ৯ থেকে ৩৪ ফুট পর্যন্ত চওড়া রাস্তাগুলি ছিল চুন, সুরকি, পাথর ও পােড়া ইট দিয়ে তৈরি। রাস্তার দুধারে বাঁধানাে ফুটপাতে রাত্রে আলাের জন্য ল্যাম্পপােস্টের ব্যবস্থা ছিল। ফুটপাথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ছিল ডাস্টবিন।

হরপ্পা সভ্যতার ঘরবাড়ি

আগুনে পােড়ানাে বা রােদে শােকানাে দুই ধরনের ইট দিয়েই ঘরবাড়ি তৈরি করা হত। দুকামরাবিশিষ্ট ছােটো গৃহ থেকে ত্রিশ কামরাবিশিষ্ট একতলা, দোতলা বা তিনতলা বাড়ির অস্তিত্ব ছিল বলে মনে করা হয়। পাশাপাশি নিম্ন অঞ্চলের উপকণ্ঠে শ্রমিক তথা গরিব শ্রেণির বস্তি গড়ে উঠেছিল। প্রতিটি গৃহেই শােবার ঘর, বসার ঘর, রান্নাঘর, স্নানঘর ও শৌচাগারের ব্যবস্থা ছিল। অধিকাংশ বাড়িতে রাস্তার দিকে কোনাে জানলা বা দরজা না রেখে ভেতরের উঠানের দিকে দু একটি জানলা, দরজা রাখা হত।

হরপ্পাবাসীরা কৃষিক্ষেত্রে কেন্দ্রে নগরী গড়ে তুলেছিল। সেখানে অধিকাংশ ছিল সাধারণ মানুষ। ঘরবাড়ির নমুনা দেখে হরপ্পাবাসীর সামাজিক অবস্থান প্রত্নতাত্ত্বিকগণ অনুমান করেছেন, যে- হরপ্পায় তিন ধরনের মানুষ তিন ধরনের বাড়িতে বসবাস করতো।

বড় বড় বাড়িগুলোর সামনে পিছনে আঙিনা ছিল। বাড়িতে কক্ষ সংখ্যা ছিল দুইয়ের অধিক। কোনো কোনো বাড়ি ছিল ১২ কক্ষ বিশিষ্ট। এ সব বাড়ির রাস্তার দিকে দরজা এবং জানালা ছিল না। দেয়াল থাকার কারণে রাস্তার থেকে বাড়ির ভিতের অংশ দেখা যেত না। অভিজাত বাড়িগুলো বাড়ি হতো দোতলা বা তিনতলা।

নগরীর অধিকাংশ ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছিল কাদা মাটি বা অপোড়া ইট দিয়ে। বাড়ির দেয়ালে ব্যবহার করা হতো মাটির সাথে নলখাগড়া বা কাঠের টুকরো। ইটের দেওয়ালে ব্যবহৃত ইটগুলোর মাপ ছিল  জাতীয় ৭.৫x১৫x৩০ ঘন সেন্টিমিটার। দরজা জানালায় ব্যবহৃত হতো কাঠ বা শন জাতীয় উপকরণ দ্বারা তৈরিকৃত মাদুর। শক্ত মাটির ভিতের উপরে ঘন কাদার আস্তরণ দিয়ে মেঝে তৈরি করা হতো।  হরপ্পার ধ্বাংসাবশেষে কোনো বাড়ির ছাদ পাওয়া যায় নাই। তাই ধারণা করা হয়, বাড়ির ছাদ নির্মাণ করা হতো কাদা ও নলখাগড়ার মিশ্রণে পুরু করে আস্তরণ তৈরি করা হতো এবং এই আস্তরণের ভার রক্ষা করতো বড় বড় কাঠের আড়া।

প্রতি বাড়িতেই স্নানের ঘর ছিল। এছাড়া জনসাধারণের গণ-ব্যবহারের জন্য ছিল বড় বড় স্নানাগার। বাড়ি থেকে ব্যবহৃত পানি ও আবর্জনা নির্গমণের জন্য ছিল নর্দমা। নর্দমা যাতে টেকসই হয়, সে জন্য ব্যবহার করা হতো পাকা ইট বা পাথর। এই নর্দমা যুক্ত থাকতো নগরের প্রধান প্রধান নর্দমার সাথে। এই শহরের প্রধান প্রধান রাস্তার দুই পাশে দিয়ে প্রধান নর্দমাগুলো তৈরি করা হয়েছিল এবং সেগুলো যাতে শহরের জনস্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে, তার জন্য নর্দমাগুলো ঢাকার ব্যবস্থা ছিল। অধিকাংশ বাড়ির রান্নার ব্যবস্থা ছিল ঘরের ভিতরে । তাছাড়া প্রতিটি বাড়িতেই ছিল স্নানাগার। দোতালা বা তিনতলা বাড়ির দোতলায় ছিল স্নানাগার! অনেক বাড়ির ভিতরে প্রতিটি স্বতন্ত্র কূপ থেকে পানি তোলার ব্যবস্থা ছিল। আবার জনসাধারণের ব্যবহারের উপযোগী সার্বজনীন কূপও ছিল।

হরপ্পা সভ্যতার পয়ঃপ্রণালী

হরপ্পা সভ্যতার পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত আধুনিক। জলনিকাশের জন্য রাস্তার নীচে দিয়ে পাথরের ঢাকনা দেওয়া নর্দমা থাকত। নর্দমাগুলি পরিষ্কার করার জন্য ইটের তৈরি ঢাকা ম্যানহােলের ব্যবস্থা ছিল। বড়াে নদমার সঙ্গে যুক্ত ছােটো নর্দমা দিয়ে প্রতিটি বাড়ির নােংরা জল বের করা হত।

হরপ্পা সভ্যতার স্নানাগার

মহেন-জো-দারাের দুর্গাঞ্চলে সর্বসাধারণের ব্যবহারযােগ্য এক বিশাল বাঁধানাে স্নানাগারের অস্তিত্ব মিলেছে। এর আয়তন দৈর্ঘ্যে ১৮০ ফুট ও প্রস্থ ১০৮ ফুট। স্নানাগারটির চারিদিকে রয়েছে ৮ ফুট উঁচু ইটের দেওয়াল। ঋতুভেদে জল গরম অথবা ঠান্ডা করার ব্যবস্থা ছিল। কাছের এক কূপ থেকে স্নানাগারটিতে জল সরবরাহ এবং পয়ঃপ্রণালীর দ্বারা এখানকার ময়লা জল বের করার ব্যবস্থা ছিল। স্নানাগারটিতে নামা-ওঠার জন্য দুপাশে ইটের সিঁড়ি ছিল।

হরপ্পা সভ্যতার শস্যাগার

মহেন-জো-দারাে ও হরপ্পা দুই নগরে দুটি বিশাল আকারের শস্যাগার আবিষ্কৃত হয়েছে। হরপ্পার শস্যাগারটি রাভি নদীর প্রাচীন খাতের কাছে অবস্থিত ছিল। মহেন-জো-দারাের ধবংসাবশেষে প্রাপ্ত সর্ববৃহৎ দালানটিকে শস্যাগার বলেই অধিকাংশ পণ্ডিত মনে করেন।

হরপ্পা সভ্যতার নির্মাণশৈলী

হরপ্পার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং জলনিকাশি ব্যবস্থা সবকিছুতেই ছিল সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ছাপ, যা আধুনিক নগরের সঙ্গে তুলনীয়| নগরপুলিকে বিভিন্ন ধাপে একাধিকবার ভাঙাগড়ার মাধ্যমে নির্মাণ করা হয় বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন।

হরপ্পা সভ্যতার গৌরব্যবস্থা

নগরগুলিতে কেন্দ্রীভূত পৌরব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল। নগরগুলির দেখাশােনার দায়িত্ব পালন করত পৌর প্রতিষ্ঠান। পৌর শাসনব্যবস্থার মান ছিল উন্নত। অধ্যাপক সরসীকুমার সরস্বতী বলেছেন, “এখানে একই প্রকৃতির শক্তিশালী ও কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা ছিল যা জনগণের জীবনযাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করত৷”

উপসংহার

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা আধুনিক যুগের মতােই উন্নত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ছিল। সুষ্ঠু নাগরিক পরিকল্পনা নগরবাসীকে সুখস্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাত্রা উপহার দিয়েছিল। প্রাচীন যুগের এমন উন্নত নগর পরিকল্পনা শুধু প্রাচীন ভারত নয় সমগ্র বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতার এক অনন্য নজির।

হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্য, হরপ্পা সভ্যতা বৈশিষ্ট্য

হরপ্পা সভ্যতার সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের পরিচয় দাও

হরপ্পা সভ্যতার পশুপালন

হরপ্লাবাসীদের অর্থনীতিতে পশুপালনের বিশেষ ভূমিকা ছিল। হরপ্লাবাসীদের গৃহপালিত পশু ছিল গােরু মহিষ, ভেড়া, ছাগল, শূকর ও উট। প্রয়ােজনে তারা গৃহপালিত পশুদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। এ ছাড়াও তারা গােরু ও মহিষকে চাষে লাঙল টানার কাজে ব্যবহার করত।

সিন্ধুরঅধিবাসীরা গৃহপালিত পশুকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। এ ছাড়া গোরু ও মহিষকে চাষে লাগুল টানার কাজে ব্যবহার করত।

হরপ্পা সভ্যতার কৃষি

এই সভ্যতার বাসিন্দাদের প্রধান কৃষিজাত ফসল ছিল গম, যব, তিল, মটর, রাই, বাদাম প্রভৃতি। সিন্ধু নদীর জল তারা জমিতে সেচের কাজে লাগাত। এ ছাড়া বিভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে জলাশয় তৈরি করা হত। নিড়ানি, লাঙল, কাস্তে প্রভৃতি যন্ত্রপাতি তারা কৃষিকাজে ব্যবহার করত।

হরপ্পা সভ্যতার শিল্প

সিন্ধু সভ্যতায় ধাতুশিল্প, মৃৎশিল্প, অলংকারশিল্প ও বস্ত্রবয়নশিল্পের প্রচলন ছিল। সিন্ধু সভ্যতায় ধাতুশিল্প, মৃৎশিল্প, অলংকার শিল্প, বস্ত্রবয়ন শিল্প প্রভৃতির প্রচলন ছিল। তামা ও ব্রোঞ্জের সাহায্যে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, সোনা ও রুপো দিয়ে অলংকার প্রভৃতি তৈরি হত। মৃৎপাত্র খেলনাগুলিতে বিভিন্ন নকশা করা হত।

হরপ্পা সভ্যতার বাণিজ্য

সিন্ধু সভ্যতার বাসিন্দারা অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক বানিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল) নিকটবর্তী বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে পশুটান গাড়ি বা জলযানের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ স্থানীয় বাণিজ্যের পণ্যসামগ্রির লেনদেন চলত। বেলুচিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান মিশর, মেসোপটেমিয়া প্রভৃতি দেশের সঙ্গে এই সভ্যতার বৈদেশিক বাণিজ্য চলত।

হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন

ভারতের সনাতন হিন্দু ধর্মের একটি অংশ হরপ্পা সভ্যতার সূত্রে এসেছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের দিকে আর্যরা ভারতবর্ষে প্রবেশের পর সিন্ধু নদীর অববাহিকায় বসতি স্থাপন করেছিল। আর্যদের দেবতার সাথে হরপ্পার আদি দেবদেবীর সংমিশ্রণে পৌরাণিক কথকথার সৃষ্টি হয়েছিল। বেদে দেবদেবীর সংখ্যা খুব বেশি নেই। ভারতের প্রাকৃতজনের দেবদেবীর সাথে হরপ্পা-আর্যদের দেবদেবী মিলেমিশে কালক্রমে ৩৩ কোটিতে পরিণত হয়েছিল।

আর্যদের স্বস্তিকা চিহ্ন, ভারতে প্রবেশ করেছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে। কিন্তু খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে হরপ্পাতে তার প্রচলন ছিল। সেক্ষেত্রে স্বস্তিকা আর্যরা হরপ্পাবাসীদের কাছ থেকে পেয়েছিল কিনা প্রশ্ন উঠতে পারে। আবার একথাও বলা যায়, হরপ্পাবাসীদের সাথে ইরানি-আর্যদের সম্পর্ক ছিল, সেই সূত্রে ভারতে আর্যদের বহু আগে স্বস্তিকা চিহ্ন ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিল হরপ্পবাসীদের মাধ্যমে।

হরপ্পায় যে রাজমূর্তিটি পাওয়া গেছে, তাকে অনেকে পুরোহিত বলেও দাবি করেন। যদিও প্রাচীন যুগে পুরোহিত এবং রাজা উভয়ে সমাজকে শাসন করতো। তবে এর থেকে অন্তত এটুকু উপলব্ধি করা যায় যে, হরপ্পায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা চালু ছিল।

তবে সে সমাজে মাতৃদেবীর কদর ছিল। হরপ্পার মাতৃমূর্তি ছিল রঙহীন পক্ষান্তরে ময়েঞ্জোদারো-র মাতৃমূর্তি গুলোর বেশির ভাগই রঙ ছিল ছিল লাল। হরপ্পার মাতৃদেবীদের মাথায় আবরণ ছিল পিছন দিক থেকে বা মাথার উপর থেকে। এই দেবীর কোমরে আবরণ থাকলেও উপরের অংশ প্রায় নগ্ন। শরীরে প্রচুর অলঙ্কার দেখা যায়। মূর্তিগুলো পূর্ণ বা আবক্ষ উভয়ই রয়েছে।

হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় বিশ্বাস

হরপ্লাবাসী বহুত্ববাদ অর্থাৎ বহু দেবতায় নাকি একেশ্বরবাদ বা এক দেবতার পূজায় বিশ্বাসী ছিল তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এই সভ্যতার প্রাপ্ত দেবদেবীর মূর্তিগুলি থেকে অনুমান করা হয় যে এসময়ে মাতৃমূর্তির পূজা করা হত। বিভিন্ন সিলে হাতি, বাঘ, মহিষ, ষাঁড়ের ছবি দেখে মনে করা হয় যে সেসময় পশুকেও পূজা করা হত। এ ছাড়াও হরপ্লাবাসীরা লিঙ্গ ও বৃক্ষ উপাসনায় বিশ্বাসী ছিল।

হরপ্পা সভ্যতার টোটেম পূজা

হরপ্লাবাসীরা টোটেম অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাণী, প্রকৃতি ও জড় বস্তুকে দেবতা জ্ঞানে পূজা করত।

হরপ্পা সভ্যতার যােগী মূর্তির উপাসনা

হরপ্পায় একটি সিলমােহরে পশুবেষ্টিত পদ্মাসনে উপবিষ্ট, তিন মুখ ও তিনটি শিং বিশিষ্ট একটি দেবমূর্তি পাওয়া গেছে। জন মার্শাল হিন্দু দেবতা পশুপতি শিবের সঙ্গে এই দেবতার অনেক মিল খুঁজে পেয়েছেন। তবে ব্যাসাম একে সরাসরি শিব না বলে আদি শিব বলেছেন।

হরপ্পা সভ্যতার মাতৃমূর্তির পূজা:

হরপ্পা সভ্যতার কেন্দ্রগুলি থেকে অসংখ্য নারীমূর্তি আবিষ্কৃত হওয়ায় ঐতিহাসিকদের অনুমান সেসময়ে, এখানে মাতৃদেবীর পূজা খুব জনপ্রিয় ছিল। কোনাে কোনাে মূর্তির গায়ে ধোঁয়ার স্পষ্ট চিহ্ন দেখে মনে হয়, দেবীকে প্রসন্ন করতে অধিবাসীরা ধূপ ও প্রদীপ জ্বালাত।

হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় প্রতীকসমূহ

হরপ্লাবাসীর ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে পদ্ম, স্বস্তিকা, চক্র, স্তম্ভ ও ত্রিশূল প্রভৃতি প্রতীক বা চিহ্ন জড়িত ছিল। মহেনজোদারাে ও হরপ্পায় প্রাপ্ত বেশ কয়েকটি স্বস্তিকাচিহিত সিলে শিংবিশিষ্ট মাথার ছবি মিলেছে। এ ছাড়াও বেলুচিস্তানে কেজ উপত্যকায় স্বস্তিকাচিহ্ন বা চক্রচিহ্নবিশিষ্ট কিছু মাটির পাত্র মিলেছে।

হরপ্পা সভ্যতার পারলৌকিক বিশ্বাস

হরপ্পা সভ্যতা পতনের কারণ, হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ, হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ কি, হরপ্পা সভ্যতা ধ্বংসের কারণ

এই সভ্যতার ধ্বংসের কারণ সম্পর্কে পুরাতত্ত্ববিদ, ভূ-তত্ত্ববিদ, আবহাওয়া তত্ত্ববিদ এবং বিভিন্ন ইতিহাসবিদ বিভিন্ন মত প্রকাশ প্রকাশ করেছেন । এঁরা সকলেই বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী তাঁরা বিভিন্ন মতকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন । তবে আজ পর্যন্ত এমন কোনো তত্ত্ব আবিষ্কৃত হয়নি যার ওপর ভিত্তি করে বলা যেতে পারে যে, কোন একটি বিশেষ কারণে এই সুমহান সভ্যতার পতন ঘটেছিল ।

হরপ্পা এবং তৎসংলগ্ন বিশাল অঞ্চলজুড়ে যে সভ্যতা ধ্বংস কেন হয়েছিল, তার কোনো সুস্পষ্ট কারণ জানা যায় নি। তবে এই বিষয়ে কিছু কল্পকথা প্রচলিত আছে। যেমন-

হরপ্পা সভ্যতায় ভূপ্রকৃতির পরিবর্তন

একদা সিন্ধু অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হত। কিন্তু ভূপ্রকৃতির পরিবর্তনের ফলে ক্রমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায়। ফলে সিন্ধু অঞ্চলে মরুভূমির সূচনা ঘটে। ভূস্তরের নীচের জল ক্রমশ নিঃশেষ হয়ে পড়লে কৃষি-উৎপাদন অত্যন্ত কমে যায় এবং খাদ্যাভাব তীব্রতর হয়।

আবহাওয়াগত পরিবর্তন বা নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে আবাদী ভূমি অনুর্বর হয়ে পড়েছিল। এর ফলে এদের কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ফলে খাদ্যাভাবের কারণে এই এলাকাবাসীরা এই স্থান ত্যাগ করেছিল। কিন্তু এই সভ্যতার সকল অঞ্চলে একই রকম ঘটনা ঘটেছিল, এমনটা বিশ্বাস করা মুসকিল।

হরপ্পা সভ্যতায় ভূমিকম্প

গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, সিন্ধু উপত্যকার নিকটবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল। খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত, সৎকারের নমুনা না থাকা ক্ষতবিক্ষত নরকঙ্কালগুলি থেকে এই ধারণা করা হয় যে, ভূমিকম্পের ফলে এই সভ্যতার বিনাশ ঘটে।

কঙ্কালের গায়ে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে এবং সেগুলির সৎকার করা হয়নি । অনেকে মনে করেন যে, ভূমিকম্পের ফলে ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ার ফলেই কঙ্কালে ক্ষতচিহ্নগুলি ছিল এবং সেগুলির সৎকার করাও সম্ভব হয়নি ।

হরপ্পা সভ্যতায় বন্যা

অনেকের মতে বন্যা ও প্লাবন সিন্ধু সভ্যতার বিনাশ ঘটিয়েছিল। সিল্ধুবাসীরা নদীতে বাঁধ দিয়ে চাষাবাদ করত। এর ফলে সিন্ধু নদের জল অবরুদ্ধ হয়ে পলি জমে নদীগর্ভের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রতি বর্ষাতেই নদীর জল দু- কূল ছাপিয়ে নগরগুলিকে প্লাবিত করে| এম. আর. সাহানির মতে, প্লাবন সিন্ধু সংস্কৃতিকে ভাসিয়ে দেয়।

হরপ্পা সভ্যতায় সিন্ধু নদের গতিপথ পরিবর্তন

সিন্ধু নদের গতিপথ পরিবর্তনের ফলে মহেনজোদারাের বাণিজ্যিক গুরুত্ব নষ্ট হয়। পাশাপাশি তীব্র জলাভাবে এই অঞ্চলের কৃষিব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। শুধুমাত্র সিন্ধু নদ নয়, শতদ্রু ও যমুনা নদীও গতিপথ পরিবর্তন করায় সমগ্র সভ্যতাটি অবলুপ্তির পথে এগিয়ে যায়।

হরপ্পা সভ্যতায় রক্ষণশীলতা

হরপ্পা, মহেনজোদারাের ক্রমিক অবক্ষয়ের আর-একটি কারণ ছিল স্থবিরতা। জীবনযাত্রার কোনাে ক্ষেত্রেই উন্নত রীতির প্রয়ােগ ঘটাতে নাগরিকরা আগ্রহী ছিল না। এই রক্ষণশীল মনােভাব তাদের জনজীবনকে পঙ্গু করে তুলেছিল।

হরপ্পা সভ্যতায় খাদ্যাভাব

অসহনীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে খাদ্যাভাব-সহ নানাবিধ অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে জনসাধারণ অন্যত্র চলে গিয়েছিল। এই দাবিটিও গ্রহণ করা যায় না। কারণ, অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে একটি বিশালসংখ্যক মানুষ অন্যত্র চলে গেলেও কিছু লোক থেকেই যেতো।

হরপ্পা সভ্যতায় বনাঞ্চল ধ্বংস

সিন্ধুবাসী গৃহ নির্মাণের প্রয়ােজনীয় ইট‌ পােড়ানাের জন্য তারা যথেচ্ছভাবে বনজঙ্গল ধ্বংস করে। ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দ্রুত কমে যায়। প্রত্নতত্ত্ববিদ প্রজেল- এর মতে, বনাঞ্চল ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে বন্যজন্তুর সংখ্যাও হ্রাস পায়। অথচ একটি সভ্যতার টিকে থাকার জন্য এগুলি ছিল অপরিহার্য।

হরপ্পা সভ্যতায় অন্তর্বিপ্লব বা গৃহযুদ্ধ

সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসের কারণ হিসেবে অধিকাংশ পণ্ডিত সংঘাত ও রক্তপাতকে নির্দিষ্ট করেছেন|তবে এই সংঘাত ও রক্তপাত কেন ঘটেছিল সে-বিষয়ে দ্বিমত আছে। কারও মতে, অন্তর্বিপ্লব বা গৃহযুদ্ধ থেকেই এই রক্তপাত ঘটেছে।

হরপ্পা সভ্যতায় নাগরিক জীবনের অবক্ষয়

হরপ্পা সভ্যতার নীচের স্তরগুলিতে যে উন্নত নাগরিক সভ্যতার ছাপ পাওয়া যায় তার তুলনায় ওপরের স্তরগুলিতে নাগরিক জীবনের অবক্ষয়ের চিত্রটি উল্লেখযোগ্যভাবে চোখে পড়ে । তুলনা করলে দেখা যায় –

তাই হুইলার মন্তব্য করেছেন যে, পরবর্তীকালে মহেন-জো-দারো ও হরপ্পা ছিল তাদের পূর্ববর্তী যুগের ছায়ামাত্র ।

হরপ্পা সভ্যতায় অভিনিস্ক্রমণ

কোনাে কোনাে ঐতিহাসিকের মতে প্রাকৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি কারণে সিন্ধুর অধিবাসীরা একসময় তাদের মাতৃভূমি ত্যাগ করে। তাই বলা যায় সিন্ধু উপত্যকার বাসিন্দারা আরও উন্নত জীবন ও নিরাপত্তার আশায় অভিনিক্রমণ (Exodus) করলে হরপ্পা সভ্যতা জনশূন্য হয়ে পড়ে।

হরপ্পা সভ্যতায় বহিরাক্রমণ

অনেকে ধারণা বহিরাগত শত্রুর আক্রমণকে, প্রধানত বৈদিক আর্যদের আক্রমণকে হরপ্পার পতনের জন্য দায়ী করেছেন৷ ধবংসন্ভূপে আবিষ্কৃত মৃতদেহের কঙ্কালে ভারী বস্তুর আঘাতের চিহ্ন প্রাপ্তি এবং আর্যদের ভারী অস্ত্রের ব্যবহারের সপক্ষে ঐতিহাসিকদের মত যুক্তিটিকে গ্রহণযােগ্য করেছে। পাশাপাশি বৈদিক দেবতা ইন্দ্রকে পুরন্দর বা নগর ধ্বংসকারী উপাধি প্রদান আর্যদের দ্বারা হরপ্পা সভ্যতা ধ্বংসের যুক্তিটিকে আরও জোরালো করেছে।

ইরানিদের হামলা-আক্রমণকে অনেকে অন্যতম কারণ হিসাবে বলে মনে করেন। ইতিহাসের পাতায় তাকালে দেখা যায় আর্য খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের দিকে ভারতে এসেছিল। কিন্তু হরপ্পা সভ্যতা টিকে ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ বৎসর পর্যন্ত। এমন হতে পারে হালাকু খানদের মতো কোনো আক্রমণকারী নগরীর সমস্ত লোককে হত্যা করেছিল। এবং ভাগ্যবান কিছু লোক পালিয়ে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পেলেও এই অঞ্চলে আর ফিরে আসে নি।

সিন্ধু উপত্যকায় খনন কার্যের ফলে রান্নাঘর, সিঁড়ি, কুয়োর ধার, রাস্তা প্রভৃতি স্থানে ইতস্তত ছড়ানো কঙ্কালের স্তুপ পাওয়া গেছে । এই বিষয়টি থেকে নানা পন্ডিতরা ব্যাখ্যা দেন যে, নানা কারণে যখন হরপ্পা সভ্যতা দুর্বল হয়ে পড়েছিল তখন বৈদেশিক আক্রমণ এই সভ্যতার পতনে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল । আক্রমণ তত্ত্বকে জোরালো করার জন্য তাঁরা বলেন যে— 

হরপ্পা সভ্যতা সাম্প্রতিক গবেষণা

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতা কীভাবে ধ্বংস হল তা নিয়ে আজও গবেষণা চলছে। অধুনা উপগ্রহের মাধ্যমে ভূত্বকের ছবি তুলে এই সভ্যতার বিলুপ্তির প্রকৃত কারণ সম্বন্ধে অনুসন্ধান চলছে। ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ বৈনই পৈসার-এর মতে, সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চলে মহাজাগতিক বিস্ফোরণে অথবা ধুমকেতুর ধাক্কায় জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছিল।

হরপ্পা সভ্যতার উপসংহার

সিন্ধু সভ্যতার অবলুপ্তির কারণ হিসেবে বিভিন্ন তত্ত্বের উপস্থাপনের পর এ কথাই বলা যায় যে, উল্লিখিত কোনো অভিমতই সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নয়, তাই সর্বজনগ্রাহ্যও নয় । যদি কখনও সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়, তাহলে এবিষয়ে হয়তো আরও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে । এখন শুধু এ কথাই বলা যায় যে, ইতিহাসের নিয়মেই একদিন হরপ্পা সভ্যতার যেমন উত্থান ঘটেছিল তেমনি ইতিহাসের নিয়মেই এই সভ্যতার পতনও ঘটেছিল । এ বিষয়ে মহাভারতের স্ত্রী পর্বে উল্লিখিত বাণীই মনে হয় হরপ্পা সভ্যতার পতনের ইতিহাসসম্মত উত্তর হতে পারে—”সকল সঞ্চয়ই পরিশেষে ক্ষয় পায়, উন্নতির অন্তে পতন হয়, মিলনের অন্তে বিচ্ছেদ হয়, জীবনের অন্তে মরণ হয়” ।

হরপ্পা সভ্যতার প্রশ্ন উত্তর

হরপ্পা সভ্যতায় জাহাজঘাটার কোথায় অস্তিত্ব পাওয়া গেছে?

উত্তর: হরপ্পা সভ্যতার লোখালে জাহাজঘাটার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

হরপ্পা সভ্যতার নীচু এলাকায় কী ছিল ?

উত্তর: হরপ্পা সভ্যতার নীচু এলাকায় ছিল মূল বসতি ।

হরপ্পা সভ্যতার নগরজীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি কীকী ?

উত্তর: হরপ্পা সভ্যতার নগরজীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি হল উন্নত প্রয়ঃপ্রণালী ও বাণিজ্য-ব্যবস্থা। 

হরপ্পা সভ্যতার কারিগরি উন্নতির নজির কীসেরমধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় ?

উত্তর: হরপ্পা সভ্যতার কারিগরি উন্নতির নজির খুঁজে পাওয়া যায় তার নানারকম মাটির পাত্রের মধ্যে।

হরপ্পা সভ্যতার কোন্ প্রত্নস্থলে লাঙলের হদিসপাওয়া যায়?

উত্তর: হরপ্পা সভ্যতার কালিবঙ্গানে লাঙলের হদিস পাওয়া যায়।

হরপ্পার অধিবাসীরা কোন্ পশুর ব্যবহার জানত?

উত্তর: হরপ্পার অধিবাসীরা ঘোড়ার ব্যবহার জানত না।

হরপ্পা সভ্যতার মানুষ কীসের পুজো করত ?

উত্তর: হরপ্পা সভ্যতার মানুষ জীবজন্তু ও গাছপালার পুজো করত।

কবে নাগাদ হরপ্পার সঙ্গে মেসোপটেমিয়ার বাণিজ্যে ভাটা পড়ে ?

উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব ১৯০০ অব্দের পর থেকে হরপ্পার সঙ্গে মেসোপটেমিয়ার বাণিজ্যে ভাটা পড়ে।

ঋগবেদের ভাষায় কোন্ ভাষার প্রভাব দেখা যায়?

উত্তর: ঋগবেদের ভাষায় দ্রাবিড় ভাষার প্রভাব দেখা যায়।

হরপ্পা সভ্যতাকে কেন তামা-ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা বলাহয় ?

উত্তর: বিভিন্ন প্রত্নবস্তুর ওপর ভিত্তি করে জানা যায় যে, হরপ্পা সভ্যতার মানুষ তামা ও ব্রোঞ্জ উভয় ধাতুরই ব্যবহার জানত। যেহেতু তারা তামা ও ব্রোঞ্জ ব্যবহার করত, সেই কারণে এই সভ্যতাকে তামা-ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা বলা হয়। 

হরপ্পা সভ্যতার স্নানাগারের পরিচয় দাও

উত্তর: হরপ্পা সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র মহেনজোদাড়োয় একটি স্নানাগারের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এই স্নানাগারটি ছিল দৈর্ঘ্যে ১৮০ ফুট ও প্রস্থে ১০৮ ফুট । এই স্নানাগারের চারিদিকে রয়েছে ৮ ফুট উঁচু ইটের দেয়াল। এর মাঝখানে ছিল একটি জলাশয়। আবার এই স্নানাগারে অতিরিক্ত ও অপরিশুদ্ধ জল বার করে দেওয়ার ব্যবস্থাও ছিল। 

লাল-কালো মাটির পাত্র কী

উত্তর: হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা মাটির পাত্রের গায়ে চকচকে লাল পালিশ করে, তার ওপর উজ্জ্বল কালো রঙের নকশা আঁকতেন। ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে এই পাত্রগুলি লাল-কালো মাটির পাত্র নামে পরিচিত।

হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীদের বৃক্ষপূজার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

উত্তর: হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন সিলমোহর ও মাটির পাত্রে অশ্বত্থ গাছ ও পাতার ছবি দেখা যায়। তা থেকে অনুমান করা যায় যে, হরপ্পায় জীবজন্তু ও মাতৃপুজোর পাশাপাশি বৃক্ষপূজাও করা হত। এইসময় সম্ভবত অশ্বত্থ গাছকে দেবতা হিসেবে পুজো করা হত। 

হরপ্পা সভ্যতার লিপির বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী

উত্তর: হরপ্পা সভ্যতায় প্রাপ্ত সিলমোহরে উৎকীর্ণ লিপি পাওয়া গেলেও, সেগুলি এখনও পড়া যায়নি। এই লিপিগুলি সাংকেতিক। এগুলিতে ৩৭৫ থেকে ৪০০টি চিহ্ন পাওয়া গেছে। এইসব লিপি সম্ভবত ডান দিক থেকে বাম দিকে লেখা হত।

সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা বলা হয় কেন?

উত্তর: সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা বলা হয়, কারণ—

হরপ্পা সভ্যতাকে প্রায়-ঐতিহাসিক যুগের সভ্যতা বলা হয় কেন ?

উত্তর: ইতিহাসে প্রায়-ঐতিহাসিক যুগ বলতে সেই সময়কে বোঝায়, যে সময় ইতিহাসের লিখিত উপাদান পাওয়া গেলেও তা আজও পড়া যায়নি। হরপ্পা সভ্যতাও প্রায় ঐতিহাসিক যুগের একটি সভ্যতা কেন-না এখনও হরপ্পার লিপি পড়া সম্ভব হয়নি 

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | হরপ্পা সভ্যতা

Q1. হরপ্পা সভ্যতা কত খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কৃত হয়

Ans – স্যার জন মার্শাল এর তত্ত্বাবধানে দয়ারাম সাহানি ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের মন্টোগোমারি জেলায় ইরাবতী বা রাভি নদীর তীরে হরপ্পা আবিষ্কার করেন।

Q2. রাজস্থানে অবস্থিত হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন কোনটি

Ans – রাজস্থানে অবস্থিত হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন ‘কালিবাগান’।

Q3. হরপ্পা সভ্যতা কোন যুগের সভ্যতা

Ans – হরপ্পা সভ্যতা’ তাম্র প্রস্তর যুগের।

Q4. হরপ্পা সভ্যতার শস্যাগার টি কোথায় আবিষ্কৃত হয়েছে

Ans – শস্যাগার আবিষ্কৃত হয়েছে হরপ্পায়।

Q5. হরপ্পা সভ্যতা কোন নদীর তীরে অবস্থিত

Ans – হরপ্পা সভ্যতা রাভি নদীর তীরে অবস্থিত ছিল।

Q6. হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা কে আবিষ্কার করেন

Ans – ১৯২১-২২ খৃষ্টাব্দে রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, ও দয়া রম সাহানি।

Q7. হরপ্পা শব্দের অর্থ কি

Ans – হরপ্পা কথার অর্থ হল – পশুপতির খাদ্য।

Q8. হরপ্পাতে কি পাওয়া গেছে

Ans – হরপ্পা সভ্যতায় মহেনজোদাড়ো ও হরপ্পা উভয় স্থানেই শস্যাগার, স্নানাগার, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং জলনিকাশি ব্যবস্থা পাওয়া গেছে।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version