Site icon prosnouttor

শ্রেণিবিন্যাস কাকে বলে, শ্রেণিবিন্যাসের একক কী, শ্রেণিবিন্যাসের জনক কে

শ্রেণিবিন্যাস কাকে বলে, শ্রেণিবিন্যাসের একক কী, শ্রেণিবিন্যাসের জনক কে

শ্রেণিবিন্যাস কাকে বলে, শ্রেণিবিন্যাসের একক কী, শ্রেণিবিন্যাসের জনক কে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

শ্রেণিবিন্যাস কী, শ্রেণিবিন্যাস কাকে বলে

বিশাল জীবজগতকে চেনা বা জানার জন্য এদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভিন্ন স্তর বা ধাপে সাজানো হয়। জীবজগতকে ধাপে ধাপে বিন্যস্ত করার এ পদ্ধতিকেই শ্রেণীবিন্যাস বলে।

সহজে সুশৃঙ্খলভাবে বিশাল প্রাণিজগেক জানার জন্য এর বিন্যাস করার পদ্ধতিকে শ্রেণিবিন্যাস বলে।

প্রাণিজগতের বিভিন্ন প্রাণীর সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। প্রাণীর এরূপ সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বিভাগ, গোত্র, শ্রেণি, গণ, প্রজাতিতে বিভক্ত করার প্রক্রিয়াকে শ্রেণিবিন্যাস বলা হয়।

শ্রেণিবিন্যাসের জনক কে

প্রকৃতিবিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াসকে শ্রেণিবিন্যাসের জনক বলা হয়।

সুইডিশ প্রকৃতিবিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস (১৭০৭-১৭৭৯৮) বিজ্ঞানভিত্তিক ও সুসংবদ্ধ উপায়ে প্রাণিদের সর্বপ্রথম শ্রেণিবিন্যাস করেন। তিনি তার Systema Naturae নামক পুস্তকের দশম সংস্করণে (1758) দ্বিপদ নামকরণের পদ্ধতি সর্বপ্রথম প্রবর্তন ও সঙ্গতভাবে ব্যবহার করেন। তাই পরবর্তীতে শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতিতে বহু পরিবরতন সত্ত্বেও তাকে শ্রেণীবিনাস বিদ্যার জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। 

শ্রেণিবিন্যাসের ধাপ গুলো কি কি

শ্রেণীবিন্যাস সাধারণত সাতটি ধাপে ভাগ করা যায় । ধাপগুলো হলো জগৎ, পর্ব, শ্রেণি, বর্গ, গোত্র, গণ, ও প্রজাতি ।

জীবের শ্রেণিবিন্যাসের জন্য কতগুলো একক বা ধাপ আছে, সর্বোচ্চ হলো জগৎ ও সর্বনিন্ম একক হলো প্রজাতি। একটি জীবকে প্রজাতি পর্যন্ত বিন্যাসের ক্ষেত্রে মূলত ৭টি ধাপ আছে।

ধাপগুলো হলো :

আধুনিক শ্রেণিবিন্যাসে এই ধাপগুলোকে প্রয়োজনে আরও নির্দিষ্ট উপ-ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি

একটি জীবের বৈজ্ঞানিক নাম দুটি অংশ বা পদ নিয়ে গঠিত হয়। প্রথম অংশটি তার গণের নাম ও দ্বিতীয় অংশটি তার প্রজাতির নাম। যেমন গোলআলুর বৈজ্ঞানিক নাম Solanum tuberosum । এখানে Solanum গণ নাম tuberosum প্রজাতির নাম, এরুপ দুটি পদ নিয়ে গঠিত নামকে দ্বিপদ নাম এবং নামকরণের প্রক্রিয়াকে দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি বলে।

দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতির লক্ষ্য একটাই তা হচ্ছে এই বৈচিত্রম্যয় জীবজগতের প্রতিটি জীবকে আলাদা নামে সঠিকভাবে জানা। আন্তর্জাতিকভাবে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি মেনে জীবের বৈজ্ঞানিক নাম নির্ধারণ করা হয়।

উদ্ভিদের নাম International Code of Botanical Nomenclature (ICBN) কর্তৃক এবং প্রাণীর নাম International Code of Zoological Nomenclature (ICZN) কর্তৃক স্বীকৃত নিয়মানুসারে হতে হবে।

প্রকৃত পক্ষে এই code পুস্তকাকারে লিখিত দলিল। নামকরণ ল্যাটিন শব্দে হওয়ায় কোন জীবের বৈজ্ঞানিক নাম সারা বিশ্বে একই নামে পরিচিত হয়।

সুইডিস বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস তাঁর Systema Naturae গ্রন্থের ১০ম সংস্করণে দ্বিপদ নামকরণ নীতি প্রবর্তন করেন এবং গণ ও প্রজাতির সংজ্ঞা দেন। তিনিই ঐ গ্রন্থে জীবের শ্রেণি, বর্গ, গণ এবং প্রজাতি ধাপগুলো ব্যবহার করেন। লিনিয়াসের এই দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার আবিষ্কার। এ পদ্দতি অনুযায়ী প্রতিটি জীবের-

১. নামকরণে অবশ্যই ল্যাটিন শব্দ ব্যবহার করতে হবে।

২. বৈজ্ঞানিক নামের দুটি অংশ থাকবে, প্রথম অংশটি গণ নাম এব দ্বিতীয় অংশটি প্রজাতি নাম। যেমন : Labeo rohita । এটি রুই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম, এখানে Labeo rohita গন নাম এবং প্রজাতিক নাম।

৩. জীবজগতের প্রতিটি বৈজ্ঞানিক নামকে অনন্য (unique) হতে হয়। কারণ একই নাম দুটি পৃথক জীবের জন্য ব্যবহারের অনুমতি নেই।

৪. বৈজ্ঞানিক নামের প্রথম অংশের প্রথম অক্ষর বড় অক্ষর হবে বাকি অক্ষরগুলো ছোট অক্ষর হবে এবং দ্বিতীয় অংশটির নাম ছোট অক্ষর দিয়ে লিখতে হবে। যেমন -পিয়াজ- Allium cepa, সিংহ- Panthera leo।

৫. বৈজ্ঞানিক নাম মুদ্রণের সময় সর্বদা ইটালিক অক্ষরে লিখতে হবে। যেমন : ধান Oryza sativa, কাতল মাছ- Catla catla।

৬. হাতে লেখার সময় গণ ও প্রজাতিক নামের নিচে আলাদা দাগ দিতে হবে। যেমন : Oryza sativa, Catla catla|

৭. যদি কয়েকজন বিজ্ঞানী একই জীবকে বিভিন্ন নামকরণ করেন, তবে অগ্রাধিকার আইন অনুসারে প্রথম বিজ্ঞানী কর্তৃক প্রদত্ত নামটি গৃহীত হবে।

৮. যিনি প্রথম কোনো জীবের বিজ্ঞানসম্মত নাম দিবেন তাঁর নাম সনসহ উক্ত জীবের বৈজ্ঞানিক নামের শেষে সংক্ষেপে সংযোজন করতে হবে।

কয়েকটি জীবের দ্বিপদ নাম, সাধারণ নাম বৈজ্ঞানিক নাম

শ্রেণিবিন্যাসের উদ্দেশ্য কি

শ্রেণিবিন্যাসের উদ্দেশ্য হলো প্রতিটি জীবের দল ও উপদল সন্বন্ধে জ্ঞান আহরণ করা। জীবগতের ভিন্নতার প্রতি আলোকপাত করে আহরিত জ্ঞানকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা, পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানকে সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা এবং প্রতিটি জীবকে শনাক্ত করে তার নামকরণের ব্যবস্থা করা, সর্বোপরি জীবজগৎ ও মানব কল্যাণে প্রয়োজনীয় জীবসমূহকে শনাক্ত করে তাদের সংরক্ষণ অথবা প্রজাতিগত সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া।

জীবজগৎ

ক্যারোলাস লিনিয়াস-এর সময়কাল থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত জীবজগৎকে উদ্ভিদজগৎ ও প্রাণিজগৎ হিসেবে বিবেচনা করে দু’টি রাজ্যে (Kingdom) শ্রেণীবিন্যাস করা হতো।

বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় বর্তমানে কোষের ডি.এন.এ ও আর.এন. এ-এর প্রকারভেদ, জীবদেহে কোষের বৈশিষ্ট্য, কোষের সংখ্যা ও খাদ্যভ্যাসের তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে আর.এইচ. হুইট্টেকার (R.H.Whittaker) ১৯৬৯ সালে জীবজগৎকে পাঁচটি রাজ্য বা ফাইভ কিংডমে (Five Kingdom) ভাগ করার প্রস্তাব করেন।

পরবর্তীকালে মারগুলিস (Margulis) ১৯৭৪ সালে Whittaker -এর শ্রেণিবিন্যাসের পরিবর্তিত ও বিস্তারিত রুপ দেন। তিনি সমস্ত জীবজগৎকে দুটি সুপার কিংডম ভাগ করেন এবং পাঁচটি জগৎকে এই দুটি সুপার কিংডমে আওতাভুক্ত করেন।

শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা, শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর

শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা সমূহ নিম্নরূপ-

তাই, শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম

শ্রেণিবিন্যাস কত প্রকার

শ্রেণীবিভাগকে পরিচিত প্রজাতিকে বিভিন্ন গোষ্ঠী বা ট্যাক্সায় মিল এবং অসমতা অনুসারে স্থাপন এবং সাজানো হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

তিন ধরনের শ্রেণীবিভাগ হল কৃত্রিম শ্রেণীবিভাগ, প্রাকৃতিক শ্রেণীবিভাগ এবং ফাইলোজেনেটিক শ্রেণীবিভাগ।

উদ্ভিদ জগতের শ্রেণিবিন্যাস

বর্তমানে পৃথিবীতে উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ (অনেকের মতে এর চেয়েও বেশি)। এ পাঁচ লক্ষ প্রজাতির উদ্ভিদ একটি থেকে অন্যটি ভিন্নতর। বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে এদের প্রতিটি প্রজাতিকে শনাক্ত করা যায়। ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির উপস্থিতিকে বলা হয় প্রজাতিগত বৈচিত্র্য।

বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে যেমন গঠনগত বৈচিত্র্য রয়েছে, তেমনি কার্যগত বৈচিত্র্যও রয়েছে। সৃষ্টির প্রথমদিকে উদ্ভিদ ছিল সরল প্রকৃতির। সময়ের বিবর্তনে উদ্ভিদের গঠনগত কার্যগত ও সংখ্যাগত বিবর্তনও হয়েছে। একই প্রজাতির মধ্যে আবার প্রকরণগত ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন- ধান বা আম এর বিভিন্ন প্রকরণ এর একটি উদাহরণ। জিনগত পার্থক্যের কারণে এমনটি হয়। একে জিনগত বৈচিত্র্য বলা হয়।

বিভিন্ন ইকোসিস্টেমে নানা ধরনের উদ্ভিদ। একে পরিবেশগত বৈচিত্র্য বলা হয়।

তাই উদ্ভিদের জিনগত বৈচিত্র্য্য, প্রজাতিগত বৈচিত্র্য ও পরিবেশগত বৈচিত্র্যাকে একসাথে উদ্ভিদ বৈচিত্র্য বলা হয়।

সামগ্রিকভাবে জীবের জিনগত, প্রজাতিগত ও পরিবেশগত বৈচিত্র্য্যকে একসাথে জীববৈচিত্র্য বলা হয়।

উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাস কাকে বলে

অসংখ্য ও বিচিত্র উদ্ভিদরাজিকে কীভাবে তুলনামুলকভাবে কম সময়ে সহজে জানা যায় তার জন্য চাই সুচিন্তিত এবং সুবিন্যস্ত একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিকেই বলা হয় উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাস।

উদ্ভিদের আকার, আকৃতি ও বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যাবলীর পারস্পরিক সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের উপর ভিত্তি করে এদেরকে কিংডম, বিভাগ, শ্রেণী, বর্ণ, গোত্র, গণ ও প্রজাতি প্রভৃতি দল-উপদলে বিন্যস্ত করার পদ্ধতিকে বলা হয় উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাস।

উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাস কত প্রকার ও কি কি

উদ্ভিদজগতকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্ভিদবিদ বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিন্যাস করেছেন। এ সমস্ত শ্রেণিবিন্যাসকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. কৃত্রিম শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি,

২. প্রাকৃতিক শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি এবং

৩. জাতিজনি শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি।

এগুলো সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হয়েছে –

কৃত্রিম শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি

কোন একটি বা বিশেষ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে উদ্ভিদজগতের যে শ্রেণিবিন্যাস করা হয় তাকে কৃত্রিম শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি বলা হয়।

থিয়োফ্রাস্টাস এবং পিনিয়াসের শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি কৃত্রিম শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতির উদাহরণ।

প্রাকৃতিক শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি

বিভিন্ন উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ গোষ্ঠীর মধ্যে সামগ্রিক অঙ্গসংস্থানিক সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে যে শ্রেণিবিন্যাস করা হয় তাকে প্রাকৃতিক শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি বলা হয়।

বেনথাম- হুকার এর শ্রেণিবিন্যাস প্রাকৃতিক শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতির উদাহরণ।

জাতিজনি শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি

বিভিন্ন উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ গোষ্ঠীকে তাদের উৎপত্তিগত সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে বিবর্তন ধারা অনুযায়ী আদি হতে আধুনিক ক্রমধারায় সাজিয়ে যে শ্রেণিবিন্যাস করা হয় তাকে জাতিজনি শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি বলা হয়।

এসলার প্রান্টল, হাচিনসন, বেসি, এনকুইস্ট, তাতাইয়ান প্রমুখ বিজ্ঞানীর দেয়া শ্রেণিবিন্যাস জাতিজনি শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতির উদাহরণ।

উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা

উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাসের নানাবিধ প্রয়োজনীয়তার মধ্যে নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো

প্রাণিজগতের শ্রেণিবিন্যাস, প্রাণীর বিভিন্নতা ও শ্রেণিবিন্যাস

যেকোনো প্রাণী সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা পেতে প্রথমেই যেটি প্রয়োজন তা হলে শনাক্তকরণ। এর জন্যই চাই শ্রেণিকরণ বা প্রাণী শ্রেণিবিন্যাস। 

প্রাণীবিজ্ঞান চর্চার শুরু থেকে অনেক বিজ্ঞানী প্রানীদের শ্রেণীবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যে সর্বপ্রথম ছিলেন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল(৩৮৪-৩২২ খ্রিষ্টপূর্ব)। তাকে প্রাণীবিদ্যার জনক বলা হয়। তিনিই শ্রেণীবিন্যাসের ভিত্তি রচনার সুত্রপাত করেন।

অ্যারিস্টটল প্রাণীদের রক্তের রং ও মেরুদণ্ডের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে দুইটি শ্রেণীতে ভাগ করেন Enaima ও Anaima। তিনি লাল রক্তযুক্ত মেরুদন্ডী প্রাণীদের Enaima এবং লাল রক্তবিহীন অমেরুদন্ডী প্রাণীদের Anaima হিসেবে ভাগ করেন। তার পরবর্তীতে জন রে (১৬২৭-১৭০৫) একটি উন্নত মানের স্রেণীবিন্যাস প্রবর্তন করেন।

প্রাণী শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তি

যে সকল সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাস করা হয় তাকে প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাস বিষয়ক বৈশিষ্ট্য (Taxonomic characteristics) বলা হয়। বৈশিষ্টগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাণীর আকৃতি, দৈহিক গঠন, প্রতিসাম্যতা, দেহের খণ্ডায়ন, দেহ-গহ্বর, লিঙ্গ, জীবনচক্র প্রভৃতির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

বর্তমানে প্রচলিত প্রাণী শ্রেণীবিন্যাস যেসব বিষয়াবলীর উপর ভিত্তিকরে তৈরি করা হয়েছে সেগুলো নিচে দেয়া হল-

১। কোষের সংখ্যা:

কোষের সংখ্যার উপর ভিত্তিকরে সমগ্র প্রাণীজগতকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

যে সকল প্রাণী একটি মাত্র কোষ নিয়ে গঠিত তাদের এককোষী বা অকোষী (Unicellular or Acellular) প্রাণী বলে। এরা প্রোটোজোয়া (Protozoa) দলের বা পর্বের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- অ্যামিবা, ইউগ্লেনা ইত্যাদি। 

যেসকল প্রাণী একাধিক কোষ নিয়ে গঠিত তাদের বহুকোষী (Multicellular) প্রাণী বলে। এরা মেটাজোয়া (Metazoa) দলের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- মাছ, মানুষ ইত্যাদি।

২। কোষের সংগঠন:

পৃথিবীতে যেমন অ্যামিবার মত এককোষী প্রাণী রয়েছে তেমনই তিমির মত বৃহদাকার বহুকোষী প্রাণীও বর্তমান। তবে সকল বহুকোষী প্রাণীই কলা বা অঙ্গ বা অঙ্গতন্ত্র গঠন করে না।  বহুকোষী প্রাণীদের কোষসমূহের কলা, অঙ্গ বা অঙ্গতন্ত্র গঠন করার মাত্রার উপর ভিত্তি করে এদেরকে কয়েকটি স্তরে ভাগ করা যায়। যথা-

এই স্তরের প্রাণীগুলো একটি মাত্র কোষ নিয়ে গঠিত যার মাধ্যমে এরা এদের সকল জৈবিক কার্যাবলী সম্পন্ন করে থাকে। প্রোটোজোয়া (Protozoa) পর্বের প্রাণীসমূহ এ স্তরের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- অ্যামিবা, ইউগ্লেনা ইত্যাদি।                   

এই স্তরের প্রাণীগুলো একাধিক কোষ নিয়ে গঠিত হলেও এদের দেহে কোন প্রকার কলা দেখতে পাওয়া যায় না। তবে অনেক প্রাণীতে একাধিক কোষের মাঝে বিভিন্ন মাত্রায় শ্রম বণ্টন দেখতে পাওয়া যায়। পরিফেরা (Porifera) পর্বের প্রাণীসমূহ এ স্তরের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- স্কাইফা, স্পঞ্জিলা ইত্যাদি।

এই স্তরের প্রাণীরা বহুকোষী এবং এদের কোষসমূহ একত্রিত গুচ্ছে বিভক্ত হয়ে কলা গঠন করে বিভিন্ন জৈবিক কার্যাবলী সম্পন্ন করে থাকে। তবে এই কলাগুলো কোন অঙ্গ বা অঙ্গতন্ত্র গঠন করে না। নিডোরিয়া (Cnidaria) পর্বের প্রাণীসমূহ এ স্তরের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- হাইড্রা, ওবেলিয়া ইত্যাদি।

এই স্তরের প্রাণীদের বিভিন্ন ধরণের কলা বর্তমান এবং কলাসমূহ একত্রিত হয়ে প্রবোসিস, জননাঙ্গ ইত্যাদি অঙ্গ গঠন করে প্রয়োজনীয় জৈবিক কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে। তবে এই অঙ্গ বা অঙ্গসমূহ কোন অঙ্গতন্ত্র গঠন করে না। প্লাটিহেলমিনথিস (Platyhelminthes) পর্বের প্রাণীসমূহ এ স্তরের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- Planaria ইত্যাদি।

প্লেনেরিয়া

এই স্তরের প্রাণীদের অঙ্গসমূহ একত্রিত হয়ে অঙ্গতন্ত্র গঠন করে প্রয়োজনীয় জৈবিক কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে। প্রতিটি অঙ্গতন্ত্র সুনির্দিষ্ট কাজের সাথে জড়িত। নেমাটোডা, অ্যানিলিডা, আর্থ্রোপোডা, মোলাস্কা, একাইনোডার্মাটা ও কর্ডাটা পর্বের প্রাণীদের বিভিন্ন ধরণের অঙ্গতন্ত্র দেখতে পাওয়া যায়।

৩। জীবন পদ্ধতি(Way of living):

প্রাণীরা কিভাবে জীবন জাপন করে সেই পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে প্রাণীকূলকে দুইভাগে ভাগ করা হয়। 

এই ধরনের প্রাণীরা মুক্তভাবে জীবন যাপন করে। বেঁচে থাকার জন্য কারো উপর নির্ভরশীল নয়। এদের মধ্যে রয়েছে কবুতর । 

কবুতর 

এইসব প্রাণী প্রধানত খাদ্যের জন্য অন্য প্রাণীর উপর নির্ভর করে এবং আশ্রয় গ্রহণ করে। এরা  আশ্রয়দাতা জীবেরদেহ থেকে খাদ্য শোষণ করে।   এদের মধ্যে অন্যতম কৃমি যা মানুষের অন্ত্রে পরজীবী হিসিবে বাস করে। 

 কৃমি

৪। ভ্রূণস্তর (Germ/Germinal layers):

পরিণত প্রাণীর বিভিন্ন কলা ও অঙ্গ ভ্রূণের যে কোষস্তর থেকে তৈরি হয় তাকে ভ্রূণস্তর বলে। ভ্রূণের কোষ প্রাণী ভেদে দুই বা তিন স্তরে সজ্জিত থাকে।

যাদের ভ্রূণে দুটি কোষস্তর থাকে তাকে দ্বিস্তরবিশিষ্ট (Diploblastic) প্রাণী বলে। স্তরগুলো হচ্ছে- বহিঃস্তর বা এক্টোডার্ম (Ectoderm) এবং অন্তঃস্তর বা এন্ডোডার্ম (Endoderm)। নিডোরিয়া (Cnidaria) পর্বের প্রাণীসমূহের ভ্রূণে দুটি কোষস্তর থাকে তাই এরা দ্বিস্তরবিশিষ্ট প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। যেমন- হাইড্রা, ওবেলিয়া ইত্যাদি।

যাদের ভ্রূণে তিনটি কোষস্তর থাকে তাদের ত্রিস্তরবিশিষ্ট (Triploblastic) প্রাণী বলে। স্তরগুলো হচ্ছে- বহিঃস্তর বা এক্টোডার্ম (Ectoderm), অন্তঃস্তর বা এন্ডোডার্ম (Endoderm) এবং মধ্যস্তর বা মেসোডার্ম (Mesoderm)। 

প্লাটিহেলমিনথিস (Platyhelminthes) থেকে কর্ডাটা (Chordata) পর্বের প্রাণীসমূহের ভ্রূণে তিনটি কোষস্তর থাকে অর্থাৎ ত্রিস্তরবিশিষ্ট প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। যেমন- Planaria, গোলকৃমি, চিংড়ি, ব্যাঙ, মাছ, কুমির, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী ইত্যাদি।

৫। সিলোম (Coelom):

প্রাণীদেহের দেহ প্রাচীরের প্যারাইটাল আবরণী ও পৌষ্টিকনালির ভিসেরাল আবরণীর মধ্যবর্তী স্থানের তরলে পূর্ণ গহ্বরকে সিলোম বলে। এটি ভ্রূণীয় মেসোডার্ম থেকে উদ্ভূত হয়। সিলোম দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহ ধারণ করা ছাড়াও সংবহন, বর্জ্য পদার্থ ধারণ ও নিষ্কাশন ইত্যাদি কাজে সহায়তা করে। সিলোমের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে প্রাণীদের কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

যেসব প্রাণীর দেহাভ্যন্তরে তরলে পূর্ণ গহ্বরের পরিবর্তে অন্ত্র ও অন্যান্য অঙ্গ এবং বিভিন্ন ধরনের কোষ বা কলায় পরিপূর্ণ থাকে তাদেরকে সিলোমবিহীন বা অ্যাসিলোমেট প্রাণী বলে। অর্থাৎ এদের সিলোম অনুপস্থিত। যেমন- জেলিফিশ, ফিতাকৃমি ইত্যাদি।

অপ্রকৃত সিলোম বিশিষ্ট বা সিউডোসিলোমেট (Pseudocoelomate) প্রাণী:

যেসব প্রাণীর দেহাভ্যন্তরে তরলে পূর্ণ গহ্বর উপস্থিত কিন্তু তা প্যারাইটাল আবরণী ও ভিসেরাল আবরণী দ্বারা আবৃত নয় তাদেরকে অপ্রকৃত সিলোম বিশিষ্ট প্রাণী বা সিউডোসিলোমেট প্রাণী বলে। এজাতীয় সিলোমে মেসোডার্মাল আবরণ (প্যারাইটাল আবরণী ও ভিসেরাল আবরণী) অনুপস্থিত থাকায় একে প্রকৃত সিলোম হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। নিমাটোডা (Nematoda) পর্বের প্রাণীসমূহে অপ্রকৃত সিলোম দেখতে পাওয়া যায়। যেমন- গোল কৃমি ইত্যাদি।

যেসব প্রাণীর দেহাভ্যন্তরে দেহ প্রাচীরের প্যারাইটাল আবরণী ও পৌষ্টিকনালির ভিসেরাল আবরণীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে তরলে পূর্ণ গহ্বর তথা প্রকৃত সিলোম বিদ্যমান তাদেরকে প্রকৃত সিলোম বিশিষ্ট প্রাণী বা ইউসিলোমেট প্রাণী বলে। অ্যানিলিডা (Annelida) থেকে কর্ডাটা (Chordata) পর্বের প্রাণীসমূহে প্রকৃত সিলোম দেখতে পাওয়া যায়। যেমন- মাছ, মানুষ ইত্যাদি।

৬। প্রতিসাম্যতা (Symmetry):

প্রাণীদেহের কেন্দ্রীয় অক্ষের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত এক বা একাধিক তল বরাবর এক বা একাধিক বার ছেদ করে প্রাণীদেহকে সমভাবে ভাগ করার বিষয়টিই হচ্ছে প্রতিসাম্যতা। অধিকাংশ প্রাণীদেহে এরূপ সমবণ্টন দেখতে পাওয়া গেলেও তা একই ধরণের নয়। প্রধানত চার ধরণের প্রতিসাম্যতা দেখতে পাওয়া যায়। যথা-

যখন কোন প্রাণীদেহের কেন্দ্রীয় অক্ষের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত একাধিক তল বরাবর একাধিক বার প্রাণীদেহকে সমভাবে ভাগ করা যায় তখন তাকে গোলীয় প্রতিসাম্যতা বলে। যেমন- ভলভক্স।

যখন কোন প্রাণীদেহের কেন্দ্রীয় অক্ষের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত একটি তল বরাবর ছেদ করে দুই বা ততোধিক বার প্রাণীদেহকে সমভাবে ভাগ করা যায় তখন তাকে অরীয় প্রতিসাম্যতা বলে। যেমন- হাইড্রা।

যখন কোন প্রাণীদেহের কেন্দ্রীয় অক্ষের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত একটি তল বরাবর ছেদ করে কেবলমাত্র একবার প্রাণীদেহকে সমভাবে দুই ভাগ করা যায় তখন তাকে দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসাম্যতা বলে। যেমন- মাছ, মানুষ ইত্যাদি।

কোনো প্রাণীদেহে যখন কোন অঙ্গের সংখ্যা একটি কিংবা একজোড়া হওয়ায় অনুদৈর্ঘ্য অক্ষ বরাবর শুধু দুটি তল পরস্পর সমকোণে অতিক্রম করতে পারে। ফলে ওই প্রাণীদেহ চারটি সমান অংশে বিভক্ত হয়।এ ধরনের প্রতিসাম্যকে দ্বিঅরীয়  প্রতিসাম্য বলে। Ctenophora (টিনোফোরা) জাতীয় প্রাণীর দেহ

যখন কোন প্রাণীদেহের কেন্দ্রীয় অক্ষের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত তল বরাবর ছেদ করে প্রাণীদেহকে একবারও সমভাবে ভাগ করা যায় না তখন তাকে অপ্রতিসাম্যতা বলে। যেমন- অ্যামিবা, শামুক ইত্যাদি।

৭। প্রান্তিকতা ও সেফালাইজেশন (Cephalization):

প্রাণী চলার সময় তার দেহের বিভিন্ন প্রান্ত বিভিন্ন দিকে সুনির্দিষ্ট থাকার বিষয়টি হচ্ছে প্রান্তিকতা। অন্যদিকে প্রাণীদেহের সম্মুখ প্রান্তে মস্তক গঠিত হবার বিষয়টিই হচ্ছে সেফালাইজেশন।

প্রাণী চলার সময় যে প্রান্তটি সামনের দিকে থাকে তাকে সম্মুখ (Anterior) প্রান্ত বলে।

প্রাণী চলার সময় যে প্রান্তটি পেছনের দিকে থাকে তাকে পশ্চাৎ (Posterior) প্রান্ত বলে।

প্রাণী চলার সময় সে প্রান্তটি ভূমির বিপরীত দিকে থাকে তাকে পৃষ্ঠীয় (Dorsal) প্রান্ত বলে।

প্রাণী চলার সময় সে প্রান্তটি ভূমির দিকে থাকে তাকে অঙ্কীয় (Ventral) প্রান্ত বলে।

প্রাণী চলার সময় সে প্রান্তটি পৃষ্ঠ-অঙ্কীয় রেখার সাথে ৯০ ডিগ্রী কৌণিক অবস্থানে তথা পাশে থাকে তাকে পার্শ্বীয় (Lateral) প্রান্ত বলে।

প্রাণীর অগ্রপদের অবলম্বন প্রদানকারী অঞ্চলকে বক্ষীয় (Pectoral) অঞ্চল বলে

পশ্চাৎপদের অবলম্বন প্রদানকারী অঞ্চলকে শ্রোণীয় (Pelvic) অঞ্চল বলে।

৮। তল (Planes):

প্রতিসম প্রাণীতে দৈহিক তল শ্রেণীবিন্যাসের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। যে অঞ্চল বরাবর প্রাণীর দেহকে সমান দুই ভাগে ভাগ করা যায় তাকে তল বলে।

প্রাণীদেহের কেন্দ্রীয় অক্ষ বরাবর যে কাল্পনিক তল প্রাণীদেহকে ডান ও বাম অংশে বিভক্ত করে তাকে মধ্যরেখীয় বা স্যাজিটাল (Sagittal) তল বলে।

প্রাণীদেহের কেন্দ্রীয় অক্ষ বরাবর যে কাল্পনিক তল প্রাণীদেহকে পৃষ্ঠীয় (Dorsal) ও অঙ্কীয় (Ventral) অংশে বিভক্ত করে তাকে ফ্রন্টাল (Frontal) তল বলে।

প্রাণীদেহের কেন্দ্রীয় অক্ষ বরাবর যে কাল্পনিক তল প্রাণীদেহকে সম্মুখ (Anterior) ও পশ্চাৎ (Posterior) অংশে বিভক্ত করে তাকে অনুপ্রস্থ বা ট্রান্সভার্স (Transverse) তল বলে।

৯। খণ্ডায়ন বা খণ্ডকায়ন (Metamerism):

অনুদৈর্ঘ্য বরাবর প্রাণীদেহের একই রকম খণ্ডাংশ নিয়ে গঠিত হবার বিষয়টিই হচ্ছে খণ্ডায়ন বা খণ্ডকায়ন।

সমখন্ডকায়ন হলো যেসব প্রাণীর দেহ খন্ডকগুলো সমান বা একই ধরনের হয়।

যেসব প্রাণীর দেহ খন্ডকগুলো অসম বা ভিন্ন ধরনের হয় তাদেরকে অসমখন্ডকায়ন বলে।

যেসব প্রাণীতে কোন খণ্ডকায়ন নেই  তাদের খন্ডকায়নবিহীন প্রাণী বলে।

১০। ভ্রূণের রূপান্তর (Embryonic Development):

এদের পরিণত প্রাণীর মুখছিদ্র ভ্রূণীয় ব্লাস্টোপোর (Blastopore) থেকে অথবা এর নিকটেই সৃষ্টি হয়। পায়ুছিদ্র নতুনভাবে সৃষ্টি হয়। প্লাটিহেলমিনথিস থেকে মোলাস্কা পর্বের প্রাণীরা এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

এদের পরিণত প্রাণীর পায়ুছিদ্র ভ্রূণীয় ব্লাস্টোপোর (Blastopore) থেকে অথবা এর নিকটেই সৃষ্টি হয়। মুখছিদ্র নতুনভাবে সৃষ্টি হয়। একাইনোডার্মাটা ও কর্ডাটা পর্বের প্রাণীরা এদের অন্তর্ভুক্ত।

১১। পরিস্ফুটন ধাপ ও জীবনচক্র (Developmental stage and Life cycle)

প্রাণীর পরিস্ফুটনের পর্যায়কে বৃহৎ পরিসরে দুটি দশায় ভাগ করা যায়। সকল প্রাণীতে এই দুটি দশা একই সময় দেখা যায় না আবার অনেকে প্রাণীতে এইসব দশা কোনো একটি অনুপস্থিত থাকে। যেমন মানুষে লার্ভা ও পোষ্ট-লার্ভা দশা অনুপস্থিত। অন্যদিকে মাছের ডিম পোনা (Sac fry) লার্ভা দশা হিসেবে বিবেচিত হয়।

জাইগোট থেকে শুরু করে মরুলা (Morula) , ব্লাস্টুলা (Blastula), গ্যাস্ট্রুলা (Gastrula) ইত্যাদি পর্যায়ক্রমিক ধাপ অতিক্রম করে প্রাণী ভ্রূণে পরিণত হয়।

লার্ভা (larva), পোষ্ট-লার্ভা (post larva), অপত্য (baby), তরুণ/যুব (juvenile), পরিণত বা প্রাপ্তবয়স্ক (mature or adult) ইত্যাদি পর্যায়ক্রমিক দশা দেখতে পাওয়া যায়।

১২। পৌষ্টিকনালী (Alimentary canal):

মুখ থেকে পায়ু পর্যন্ত কোথাও সরু আবার কোথাও প্রশস্ত নালিপথকে পৌষ্টিকনালি বলে। পৌষ্টিক নালীর উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে প্রাণীদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ প্যারাজোয়া, এন্টেরোজোয়া। 

প্যারাজোয়া হলো যে সকল প্রাণীর দেহে কোন পৌষ্টিক নালী থাকে না। যেমনঃ পরিফেরা পর্বভুক্ত প্রাণী।

যেসকল প্রাণীর দেহে পৌষ্টিক নালী থাকে তাদেরকে এন্টেরোজোয়া বলে।যেমনঃ নিডারিয়া থেকে কর্ডাটা পর্ব পর্যন্ত সকল প্রাণী। 

১৩। সম্ভেদ বা ক্লিভেজ (Cleavage):

যে প্রক্রিয়ায় জাইগোট (zygote) ক্রমাগত মাইটোটিক কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে বহুকোষী ভ্রূণে পরিণত হয় তাকে সম্ভেদ বা ক্লিভেজ (cleavage) বলে।

জাইগোটে উপস্থিত কুসুমের পরিমাণের উপর নির্ভরকরে ক্লিভেজ সম্পূর্ণ হতে পারে আবার অসম্পূর্ণ হতে পারে। যেমন-

সম্পূর্ণ ক্লিভেজ আবার দু’ধরনের যথা- সমান ও অসমান। সমান ধরনের ক্লিভেজে জাইগোট বিভাজিত হয়ে সমান আকৃতির ব্লাস্টোমিয়ার উৎপন্ন করে। ইউরোকর্ডেট, মারসুপিয়াল ও অমরাবাহী স্তন্যপায়ীদের এজাতীয় ক্লিভেজ হয়ে থাকে।

অন্যদিকে অসমান ধরনের ক্লিভেজে জাইগোট বিভাজিত হয়ে অসমান আকৃতির ব্লাস্টোমিয়ার উৎপন্ন করে। ব্যাঙে এজাতীয় ক্লিভেজ দেখতে পাওয়া যায়।

এ ধরনের ক্লিভেজের মাধ্যমে জাইগোটটি সম্পূর্ণভাবে বিভক্ত না হয়ে শুধুমাত্র ব্লাস্টোডিস্ক অংশটি বিভক্ত হয়। এর ফলে সমান আকৃতির কিন্তু অসম্পূর্ণ ব্লাস্টোমেয়ার সৃষ্টি হয়। এলাসমোব্রাঙ্ক, অস্থিময় মাছ, সরীসৃপ ও পাখিতে এজাতীয় ক্লিভেজ দেখতে পাওয়া যায়।

ক্লিভেজের সমতার উপর ভিত্তি করে এটি দুই প্রকার:

জাইগোটের দ্বিতীয় বিভাজনের পর তৃতীয় বিভাজনের সময় থেকেই অ্যানিম্যাল পোল (Animal pole) এর ব্লাস্টোমিয়ারগুলো ভেজিটাল পোলের (Vegetal) ব্লাস্টোমিয়ারের সাথে চক্রাকারে সামান্য স্থান পরিবর্তন করে। যেমন- নেরিসের (Nereis) ক্লিভেজ।

জাইগোটের পুনঃপুনঃ বিভাজনের সময় অ্যানিম্যাল পোল (Animal pole) এর ব্লাস্টোমিয়ারগুলো ভেজিটাল পোলের (Vegetal) ব্লাস্টোমিয়ারের সাথে চক্রাকারে সামান্য স্থান পরিবর্তন না করে উভয় পোলের কোষগুলো লম্বভাবে একই স্থানে অবস্থান করে। যেমন- আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণীদের ক্লিভেজ।

প্রাথমিক ব্লাস্টোমিয়ারের পরিণতির উপর ভিত্তি করে ক্লিভেজ দুই প্রকার:

প্রাথমিক ব্লাস্টোমিয়ার ভ্রূণের কোন অংশ গঠন করবে তা পূর্ব থেকেই নির্ধারিত থাকে। যেমন- Ascaris, ইত্যাদি প্রাণীর ক্লিভেজ।

প্রাথমিক ব্লাস্টোমিয়ার ভ্রূণের কোন অংশ গঠন করবে তা পূর্ব থেকেই নির্ধারিত থাকে না এমন ব্লাস্টোমিয়ারগুলো কোন কারণে আলাদা হয়ে গেলেও প্রতিটি ব্লাস্টোমিয়ার একটি ভ্রূণে পরিণত হতে সক্ষম। যেমন- সকল মেরুদণ্ডী প্রাণীতে এজাতীয় ক্লিভেজ দেখতে পাওয়া যায়।

১৪। অঞ্চলায়ন (Tagmatization):

প্রাণীদেহ দুই বা ততোধিক বৃহৎ অংশে তথা অঞ্চলে বিভক্ত হওয়ার বিষয়টিই হচ্ছে অঞ্চলায়ন (Tagmatization)। আর্থ্রোপোডাসহ অনেক পর্বে এরকম বিভাজন সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিটি অংশকে আলাদাভাবে একবচনে টাগমাটা (Tagmata) এবং একত্রে বহুবচনে টাগমা (Tagma) বলে।

চিংড়িকে দুটি বৃহৎ অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়, যথা- টাগমাটা-১ বা শিরবক্ষ (Cephalothorax) ও টাগমাটা-২ বা উদর (Abdomen)। একইভাবে মাকড়সাকেও দুটি অঞ্চলে আলাদা করা যায়। 

১৫। নটোকর্ড (Notochord):

ভ্রূণাবস্থায় অথবা আজীবন প্রানীর দেহের পৃষ্ঠ- মধ্যরেখা বরাবর অবস্থিত নমনীয়, স্থিতিস্থাপক ও ছিদ্রযুক্ত টিস্যুর দণ্ডকে নটোকর্ড বলে। এর উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে প্রাণীজগতের সকল প্রাণীকে দুইভাগে ভাগ করা হয়। 

এই ধরনের প্রাণীদেহে জীবনের ভ্রূণ অবস্থায় কোন একসময় অথবা সারাজীবন নটোকর্ড উপস্থিত থাকে। মানুষ, ব্যাঙ ইত্যাদি কর্ডেট প্রাণীর উধারণ।

এদীর দেহে কখনোই নটোকর্ড উপস্থিত থাকে না।  কেঁচো, মাকড়শা ননকর্ডেট  প্রাণীর উদাহরণ। 

১৬। লিঙ্গ (Sex):

পৃথিবীতে অনেক প্রাণী রয়েছে যাদের মাঝে লিঙ্গ সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত আবার অনেক প্রাণীর একই দেহে পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গের বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়। সবকিছু মিলিয়ে লিঙ্গের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে প্রাণীদের চার ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

এরা অযৌন জনন প্রদর্শন করে। অ্যামিবাসহ অধিকাংশ প্রোটোজোয়ানরা লিঙ্গহীন হয়ে থাকে।

এদের একই প্রাণীদেহে পুরুষ ও স্ত্রী উভয় বৈশিষ্ট্যই উপস্থিত থাকে। উভয় বৈশিষ্ট্য একই সময়ে প্রকাশিত হতে পারে আবার ভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হতে পারে। প্লাটিহেলমিনথিস পর্বের অনেক প্রাণী ও কেঁচোসহ অনেক অ্যানিলিডস উভলিঙ্গ হয়ে থাকে। 

এদের ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীদেহে পুরুষ ও স্ত্রী বৈশিষ্ট্য আলাদাভাবে উপস্থিত থাকে। অর্থাৎ এদের পুরুষ ও স্ত্রী একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন সদস্য।

এই প্রাণীরা অকার্যকর প্রজনন অঙ্গ বিশিষ্ট পুরুষ হতে পারে আবার নারীরাও হতে পারে। পুরুষ বা নারী যে বৈশিষ্ট্যই উপস্থিত থাক না কেন এদের প্রজনন অঙ্গ ক্ষয়িষ্ণু তথা অক্ষম বা অকার্যকর।

শ্রেণিবিন্যাসের একক কী

শ্রেণিবিনাসের প্রতিটি ধাপই শ্রেণিবিন্যাসের একক।যেমন-জগৎ,পর্ব,শ্রেণি,বর্গ ইত্যাদি।তবে শ্রেণিবিন্যাসের মূল বা ভিত্তি একক হচ্ছে প্রজাতি।

শ্রেণিবিন্যাসের একককে ট্যাক্সন বলে,বহুবচনে ট্যাক্সা।জগৎ, পর্ব,শ্রেণি,বর্গ,গোত্র,গণ, প্রজাতি এরা সবাই এক একটি ট্যাক্সন।

প্রত্যেকটি জীবের বৈজ্ঞানিক নামের দুইটি অংশ থাকে। তার প্রথমটি গণ এবং দ্বিতীয়টি প্রজাতি।

যেমন মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম homo sapiens

এখানে Homo গণ ও sapiens প্রজাতি

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | শ্রেণিবিন্যাস

Q1. শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা কাকে বলে

Ans – বিজ্ঞানের যে শাখায় শ্রেণিবিন্যাসের তত্ত্বসমূহ, মূলনীতি, নামকরণের নিয়মাবলি, প্রথা ও তাদের ব্যবহার সম্বন্ধে আলোচনা করা হয় তাকে শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা (Taxonomy) বলে।

Q2. আধুনিক শ্রেণিবিন্যাসের জনক কে

Ans – আধুনিক শ্রেণিবিন্যাসের জনক হচ্ছে: ক্যারোলাস লিনিয়াস।

Q3. প্রাণী শ্রেণিবিন্যাসের সর্বজনীন স্তর কোনটি

Ans – কিংডম সর্বোচ্চ স্তর, ৭টি স্তর এর মধ্যে।
Kingdom, Phylum, Class, Order, Family, Genus, and Species.

Q4. শ্রেণিবিন্যাসের লক্ষ্য কি

Ans – শ্রেণিবিন্যাসের মূল লক্ষ্য মূলত একটাই। তা হচ্ছে: এই বিশাল ও বৈচিত্র‍্যময় জীবজগৎকে সহজভাবে অল্প পরিশ্রমে এবং অল্প সময়ে সঠিকভাবে জানা।

Q5. শ্রেণিবিন্যাসের সর্বনিম্ন একক কি

Ans – বর্গ সর্বনিম্ন স্তর। শ্রেণিবিনাসের প্রতিটি ধাপই শ্রেণিবিন্যাসের একক। যেমন-জগৎ,পর্ব,শ্রেণি,বর্গ ইত্যাদি। 

Q6. শ্রেণিবিন্যাসের মৌলিক একক কোনটি

Ans – শ্রেণিবিন্যাসের মৌলিক একক প্রজাতি।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version