Site icon prosnouttor

শকুন্তলার পতিগৃহে যাত্রা প্রশ্ন উত্তর

কার দৌড় কতদূর প্রশ্ন উত্তর

কার দৌড় কতদূর প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

শকুন্তলা প্রবন্ধ সারাংশ

উত্তর : কালিদাসের নাটকে শকুন্তলা কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র।তপোবনে মহর্ষি কণ্বের আশ্রমে পালিতা কন্যা। শান্তস্বভাব,মিষ্টভাষী, সেবাপরায়ণি শকুন্তলা যৌবনে পদার্পণ করলে মহর্ষি তাকে আশ্রম এর দায়িত্ব দিয়ে সোমতীর্থে গমন করেন। এই সময় হস্তিনাপুরের রাজা দুষ্মন্ত মৃগয়া করতে এসে আশ্রমে আতিথ্য গ্রহণ করেন এবং শকুন্তলার রূপ-গুণে আকৃষ্ট হয়ে গান্ধর্ব মতে তাঁকে বিবাহ করেন।

এরপর রাজ নামাঙ্কিত আংটিটি স্মারক হিসেবে প্রদান করে রাজা রাজধানীতে ফিরে যান। পতি চিন্তায় নিমগ্ন শকুন্তলা অতিথি দুর্বাসা মুনির সেবাকর্ম থেকে বিচলিত হয়ে অভিশপ্ত হন। যথাসময়ে মহর্ষি কণ্ব আশ্রম এ ফিরে শকুন্তলার পতিগৃহে যাত্রার ব্যবস্থা করেন। পথে শকুন্তলা রাজ প্রদত্ত আংটি হারিয়ে ফেলেন। দুর্বাসার অভিশাপ এর কারণে অভিজ্ঞান ছাড়া দুষ্মন্ত শকুন্তলা কে চিনতে না পেরে প্রত্যাখ্যান করেন। পরে এক ধীবরের কাছ থেকে আংটিটি প্রাপ্ত হয়ে দুষ্মন্ত পূর্বস্মৃতি ফিরে পান এবং ঘটনাক্রমে পুত্র ভরত এবং স্ত্রী শকুন্তলার সঙ্গে মিলন ঘটে।

শকুন্তলার লেখক কে?

উত্তর : মহাকবি কালিদাস শকুন্তলার পতিগৃহে যাত্রার মধ্য দিয়ে নায়িকা শকুন্তলার বিদায়ের ক্ষণটি শিল্পশৈলীতে এঁকেছেন।

শকুন্তলার নামকরণ

উত্তর : ঋষি কণ্ব বনে শিশুকন্যাটিকে “শকুন্ত” (সংস্কৃত: शकुन्त, śakuntagg) অর্থাৎ পক্ষীপরিবৃত অবস্থায় কুড়িয়ে পান। এই কারণে তিনি এর নামকরণ করেন “শকুন্তলা”। শব্দটির অর্থ “পক্ষীর দ্বারা সুরক্ষিতা”

শকুন্তলার জন্ম বৃত্তান্ত

উত্তর : ঋষি বিশ্বামিত্রের ঔরসে অপ্সরা মেনকার গর্ভে শকুন্তলার জন্ম হয়। দেবরাজ ইন্দ্র বিশ্বামিত্রের তপস্যা ভঙ্গ করতে মেনকাকে তার নিকট প্রেরণ করেন। মেনকা তার কাজে সফল হন।তার রূপ ও লাবণ্যের মোহে বিশ্বামিত্র বিচলিত হন। সংযম হারিয়ে তিনি মেনকার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। দীর্ঘকাল এইভাবে যৌনসংগম করার ফলে বিশ্বামিত্রর ঔরসে মেনকা গর্ভবতী হন। উভয়ের মিলনের ফলে একটি শিশুকন্যার জন্ম হয়। তপস্যার্জিত পুণ্যফল ক্ষয়ের জন্য ক্রুদ্ধ হয়ে বিশ্বামিত্র মেনকা ও তার কন্যাকে পরিত্যাগ করে চলে যান।

এরপর মেনকাও তার শিশুকন্যাকে একটি বনে পরিত্যাগ করে চলে যান। ঋষি কন্ব সেই কন্যাটিকে পক্ষীপরিবৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন। তিনি মেয়েটির নামকরণ করেন শকুন্তলা। এরপর শকুন্তলাকে নিজ আশ্রমে এনে লালন পালন করতে থাকেন।

শকুন্তলার দুষ্মন্তের সঙ্গে বিবাহ

উত্তর : রাজা দুষ্মন্ত মৃগয়ায় এসে একটি হরিণকে তাড়া করতে করতে কন্বের তপোবনে এসে উপস্থিত হন। এখানেই শকুন্তলার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। তারা পরস্পরের প্রেমে পড়েন ও আশ্রমেই তাদের গান্ধর্ব বিবাহ সম্পন্ন হয়, অর্থাৎ মালাবদল করে তারা মৈথুনে মিলিত হন। এরপর জরুরি কাজে দুষ্মন্তকে রাজধানীতে ফিরে যেতে হয়। যাওয়ার আগে দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে একটি রাজকীয় অঙ্গুরীয় দিয়ে যান এবং কথা দেন যে আবার ফিরে আসবেন। শকুন্তলার গর্ভবতী হয়ে পড়ে।

শকুন্তলার অভিশাপ

উত্তর : এরপর শকুন্তলা অহর্নিশি দুষ্মন্তের কথা ভাবতে লাগলেন। একদিন কোপনস্বভাব ঋষি দুর্বাসা কন্বের আশ্রমে এলে শকুন্তলা পতিচিন্তায় মগ্ন হয়ে ঋষিসেবায় অবহেলা করে। এতে দুর্বাসা ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে শাপ দেন যে, যাঁর কথা চিন্তা করতে করতে শকুন্তলা ঋষিসেবায় অবহেলা করেছে, সেই শকুন্তলাকে বিস্মৃত হবে। শকুন্তলার সখীরা তার হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে, দুর্বাসা শান্ত হয়ে তাকে ক্ষমা করেন এবং বলেন যদি সেই ব্যক্তির দেওয়া কোনো উপহারসামগ্রী শকুন্তলা তাকে দেখায়, তবে আবার তিনি শকুন্তলাকে চিনতে পারবেন।

এদিকে দুষ্মন্ত ফিরে আসছেন না দেখে শকুন্তলা নিজেই দুষ্মন্তের রাজধানীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পথে নদীতে স্নান করতে নেমে তিনি দুষ্মন্তের দেওয়া অঙ্গুরীয়টি হারিয়ে ফেলেন। এরপর অঙ্গুরীয় ছাড়াই দুষ্মন্তের রাজসভায় উপনীত হলে, দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে চিনতে পারেন না। অপমানিতা শকুন্তলা বনে চলে আসেন। সেখানে জন্ম দেন এক পুত্রসন্তানের। তার নাম হয় ভরত। শৈশবেই ভরত হয়ে ওঠেন অকুতোভয় ও প্রবল পরাক্রমী। ছেলেবেলায় তার খেলা ছিল সিংহকে হাঁ করিয়ে তার দাঁতকপাটি গোনা।

শকুন্তলার পুনর্মিলন

উত্তর : এক ধীবর মাছ ধরতে গিয়ে একটি মাছের পেট থেকে রাজার অঙ্গুরীয়টি উদ্ধার করে। সেটি দেখে দুষ্মন্তের শকুন্তলার কথা মনে পড়ে যায়। তিনি তাকে খুঁজতে বের হন। অনেক খুঁজে তিনি শেষে সিংহের সঙ্গে ক্রীড়ারত এক বালকের সন্ধান পান। নাম জিজ্ঞেস করতে ছেলেটি বলে সে দুষ্মন্তের পুত্র ভরত। এরপর ভরত দুষ্মন্তকে শকুন্তলার কাছে নিয়ে যায়। আবার সকলের মিলন ঘটে।

এরপর দুষ্মন্তর ঔরসে শকুন্তলার তিনটি পুত্রলাভ হয়।

“শকুন্তলার পতিগৃহে যাত্রা” গদ্যাংশটি কার রচনা? মূল গ্রন্থের নাম কি ?​

উত্তর :

শকুন্তলার পালক পিতার নাম

উত্তর : শকুন্তলার পিতার নাম মহর্ষি বিশ্বামিত্র

মহর্ষি কন্ব কে ছিলেন

উত্তর : এক নিবিড় অরণ্য ছিল। তাতে তিন হাজার বৎসরের এক প্রকাণ্ড বটগাছের তলায় মহর্ষি কণ্বদেবের আশ্রম ছিল। সেই আশ্রমে জটাধারী তপন্বী কণ্ব আর মা-গৌতমী ছিলেন, তাঁদের পাতার কুটির ছিল,পরনে বাকল ছিল,গোয়াল-ভরা গাই ছিল, চঞ্চল বাছুর ছিল, আর ছিল বাকল-পরা কত্কগুলি ঋষিকুমার।

তা’রা কণ্বদেবের কাছে বেদ পড়ত, মালিনীর জলে তর্পণ করত, গাছের ফলে অতিথিসেবা করত, বনের ফুলে দেবতার অঞ্জলি দিত। আর কী করত?—বনে বনে হোমের কাঠ কুড়িয়ে বেড়াত, কালো গাই ধ’লো গাই মাঠে চরাতে যে’ত। সবুজ মাঠ ছিল তা’তে গাই বাছুর চরে বেড়াত, বনে ছায়া ছিল তা’তে রাখাল-ঋষিরা খেলে বেড়াত। তা’দের ঘর গড়বার বালি ছিল, ময়ূর গড়বার মাটী ছিল, বেণুবাঁশের বাঁশী ছিল, বটপাতার ভেলা ছিল; আর ছিল—খেলবার সাথী বনের হরিণ, গাছের ময়ূর; আর ছিল—মা-গৌতমীর মুখে দেবদানবের যুদ্ধকথা, তাত কণ্বের মুখে মধুর সামবেদ গান।

গৌতমী কে ছিলেন

উত্তর : শকুন্তলা সেই তপোবনে, সেই বটের ছায়ায় পাতার কুটীরে, মা-গৌতমীর কোলে-পিঠে মানুষ হতে লাগল।

শকুন্তলার বিদায় দৃশ্য

উত্তর : তপোবনে দুই সখী যখন শুনলে শকুন্তলা শ্বশুরবাড়ি চলল, তখন তাদের আর আহ্লাদের সীমা রইল না। প্রিয়ম্বদা কেশর ফুলের-হার নিলে অনসূয়া গন্ধ-ফুলের তেল নিলে; দুই সখীতে শকুন্তলাকে সাজাতে বসল। তারা মাথায় তেল দিলে, খোঁপায় ফুল দিলে কপালে সিদুঁর দিলে, পায়ে আলতা দিলে, নতুন বাকল দিলে; তবু তো মন উঠল না! সখীর এ কি বেশ করে দিলে? প্রিয়সখী শকুন্তলা পৃথিবীর রানী, তার কি এই সাজ?— হাতে মৃণালের বালা,গলায় কেশরের মালা, খোঁপায় মল্লিকার ফুল,পরনে বাকল? –হায়,হায়,মতির মালা কোথায়? হীরের বালা কোথায়? সোনার মল কোথায়? পরনে শাড়ি কোথায়?

বনের দেবতারা সখীদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করলে।

বনের গাছ থেকে সোনার শাড়ি উড়ে পড়ল, পায়ের মল বেজে পড়ল। বনদেবতারা পলকে বনবাসিনী শকুন্তলাকে রাজ্যেশ্বরী মহারানীর সাজে সাজিয়ে দিলেন।

তারপর যাবার সময় হল। হায়,যেতে কি পা সরে, মন কি চায় ? শকুন্তলা কোনদিকে যাবে—সোনার পুরীতে রানীর মতো রাজার কাছে চলে যাবে? –না, তিন সখীতে বনপথে আজন্মকালের তপোবনে ফিরে যাবে ?

এদিকে শুভলগ্ন বয়ে যায়, ওদিকে বিদায় আর শেষ হয় না। কুঞ্জবনে মল্লিকা মাধবী কচি-কচি পাতা নেড়ে ফিরে ডাকছে, মা-হারা হরিণশিশু সোনার আঁচল ধরে বনের দিকে টানছে, প্রাণের দুই প্রিয়সখী গলা ধরে কাঁদছে। এক দণ্ডে এত মায়া এত ভালোবাসা কাটানো কি সহজ?

মা-হারা হরিণ শিশুকে তাত কণ্বের হাতে, প্রিয় তরুলতাদের প্রিয়সখীদের হাতে সঁপে দিতে কত বেলাই হয়ে গেল।

তপোবনের শেষে বটগাছ, সেইখান থেকে তাত কণ্ব ফিরলেন!

দুই সখী কেঁদে ফিরে এল । আসবার সময় শকুন্তলার আঁচলে রাজার সেই আংটি বেঁধে দিলে, বলে দিলে—‘ দেখিস, ভাই, যত্ন করে রাখিস।’

তারপর বনের দেবতাদের প্রণাম করে, তাত কণ্বকে প্রণাম করে শকুন্তলা রাজপুরীর দিকে চলে গেল।

পরের মেয়ে পর হয়ে পরের দেশে চলে গেল–বনখানা আঁধার করে গেল !

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

শকুন্তলার চরিত্র বিশ্লেষণ

উত্তর : দ্বিতীয় প্রজাপতি স্বরূপ কবির লেখনীতে সৃষ্ট অনেক উজ্জ্বল চরিত্রই বর্ণিত ঘটনার টানা-পোড়েনের মধ্যেই সাবলীল হয়ে উঠে, কিন্তু তাদের পদসঞ্চার বর্ণিত ঘটনার চৌহদ্দিতেই থাকে সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ চমৎকার, উজ্জ্বল ও সাবলীল হয়েও চরিত্রগুলি গ্রন্থের মাপে মাপে তৈরি। আর এক জাতীয় চরিত্র আছে, যা গ্রন্থের প্রয়োজনে সৃষ্ট হলেও গ্রন্থের চৌহদ্দিকে ছাড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। গ্রন্থে তার নির্দিষ্ট আসনের সঙ্গে সঙ্গে পাঠক-দর্শকের মনে সে চিরস্থায়ী আসন গ্রহণ করে। এমনকি মূল গ্রন্থের সঙ্গে কোনো পরিচয় না থাকলেও, গ্রন্থ নিরপেক্ষ হয়েও চরিত্রটি সাধারণ মানুষের মনের মন্দিরে দেদীপ্যমান হয়ে ওঠে। এই গ্রন্থ-সাপেক্ষ ও গ্রন্থ নিরপেক্ষ – দু’জাতীয় চরিত্রের মধ্যে দ্বিতীয়টি মহত্তর সৃষ্টি, এবং এই জাতীয় চরিত্রের স্রষ্টা কবিও বিরল প্রতিভার উত্তরাধিকারী। কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম্’ নাটকের শকুন্তলা চরিত্র এমনই এক মহত্তর সৃষ্টি। কালের কপোলতলে এক শুভ্র সমুজ্জ্বল অক্ষয় তিলক।

অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ নাটকের নায়িকা শকুন্তলা। এই-ই চরিত্রটির একমাত্র পরিচয় নয়। মহাভারতের আদি পর্বের সামান্য চরিত্রটিকে মহাকবি কালিদাস তাঁর মনের মাধুরী মিশিয়ে অসামান্য করে গড়ে তুলেছেন। তপোবনে ঋষি পালিতা সুন্দরী বনলতা শকুন্তলা। লতার সঙ্গে ফুলের যেরূপ সম্বন্ধ, তপোবনের সঙ্গে শকুন্তলার তেমনি স্বাভাবিক সম্বন্ধ, মহর্ষি কণ্ঠের মালিনী তীরবর্তী আশ্রমে বন্ধল পরিহিতা শকুন্তলা ক্ষুদ্র কলসী হস্তে জল সিঞ্চন করে দিনপাত করছে না। তপোবনের বনভূমি তাঁর কাছে জীবন্ত। শকুন্তলার কথোপকথন এই বনভূমির সঙ্গে। কোনো বৃক্ষের সঙ্গে ব্যঙ্গ, কোনো বৃক্ষকে আদর, কোনো লতার পরিণয় সম্পাদন করে শকুন্তলা সুখী। সীমিত আশ্রমে বালক, বালিকা নিয়েই তাঁর জগৎ। বৃহত্তর নগর জীবনের অভিজ্ঞতা ও জটিলতা তাঁর চরিত্রে নেই। কিন্তু সরলা হলেও শকুন্তলা অশিক্ষিতা নন। তাঁর শিক্ষার চিহ্ন তাঁর লজ্জা।

বনমধ্যে এই অরক্ষিত তপোবনে, তপোবন বাসিনী শকুন্তলাও অরক্ষিত হৃদয়। মৃগশিকারী রাজা দুষ্মন্ত এই অরক্ষিত অঞ্চল থেকেই শিকার করলেন শকুন্তলাকে। উভয়ের দৃষ্টি বিনিময় হল। দুষ্মন্ত মুগ্ধ, শকুন্তলা মোহিত। বনকলিকা শকুন্তলার জীবনে নতুন পর্ব সূচিত হল। দুষ্মন্তের উপস্থিতিতে সখী অনসূয়া-প্রিয়ম্বদার সাহচর্যে নব সঞ্জাত প্রেম শকুন্তলাকে প্রণয়ীরূপে রূপায়িত করল। কিন্তু শকুন্তলার বালিকাহৃদয় সম্পূর্ণ উন্মোচিত হল না। একে সে লজ্জাবনতমুখী, তারপর এ খেলা অসম খেলা। সসাগরা পৃথিবীপতি দুষ্মন্ত হচ্ছেন যেন এক মহাবৃক্ষ আর সেই মহাবৃক্ষের বৃহচ্ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেছে শকুন্তলা। ফুটি ফুটি করেও ফুটে উঠতে পারছে কই? শকুন্তলার মানসিক পরিবর্তনের এই মহেন্দ্র লগ্নটিকে কবি কালিদাস সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন।

শকুন্তলা তার মানসিক অবস্থা ভাষায় প্রকাশ করতে না পারলেও, তার প্রেমে, প্রেমের গভীরতায় কিন্তু কোনো খাদ ছিল না। রাজধানীতে দুষ্মন্তের প্রত্যাবর্তনের পর প্রত্যাশিত কাল পূর্ণ হলেও শকুন্তলাকে নিতে কোনো দূত না আসায় এবং দুষ্মত্তের বিরহে ও চিন্তায় তন্ময় শকুন্তলা তপোবনে সমাগত ঋষি দুর্বাসা কর্তৃক শাপগ্রস্ত হলেন। শকুন্তলার এই দুষ্মন্ত মন্ময়তা এবং ভারতন্ময়তাই প্রমাণ করে যে প্রথম আলাপের কৌতূহলী প্রেম প্রেম-তন্ময়তায় রূপান্তরিত হয়েছে। “Part of the life’ নয়, হয়ে উঠেছে ‘whole existence”। বালিকা শকুন্তলা হয়ে উঠেছে কিশোরী শকুন্তলা।

কিন্তু সুন্দরী, সরলা, কিশোরী, লজ্জাবনতমুখী, সংসার সম্বন্ধে প্রায় অনভিজ্ঞা শকুন্তলা চরিত্রটি ব্যক্তিত্বহীন নয়। লতা মণ্ডপের এই বালিকাই কয়মাস পরে যাত্রা করলেন স্বামীগৃহে। সঙ্গে আছেন মাতা গৌতমী এবং দুই আশ্রমিক। শকুন্তলা চরিত্রের নব-পর্বান্তর আরম্ভ হল। দুষ্মন্তের রাজসভায় রাজা দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে চিনতেই পারলেন না। স্ত্রীরূপে শকুন্তলাকে অস্বীকার করলেন। সেই সঙ্কটকালে, সেই প্রত্যাখ্যানের মুহূর্তে এই বালিকাই রাজসভাতলে দাঁড়িয়ে সবার সম্মুখে রাজা দুষ্মন্তকে তিরস্কার করতেও ছিলেন অকুণ্ঠ। আপন চরিত্রের প্রতি রাজার এই কটাক্ষপাতে দলিত ফণা সাপের মতো মস্তক উন্নত করে তিনি দুষ্মন্তকে ভর্ৎসনা করে বলেছিলেন, “অনার্য! আপন হৃদয়ের অনুমানে সকলকে দেখ?” এখানে শকুন্তলা আত্মসচেতন ব্যক্তিত্বে বিকশিতা রমণী।

এইভাবে নাট্যকার কোরকের এক একটা দল উন্মোচিত করে চরিত্রটিকে প্রস্ফুটিত করে তুলেছেন। নানা বর্ণের আলিম্পনে চরিত্রটি করেছেন পরিণততর।

দুষ্মন্তের রাজসভা থেকে প্রত্যাখ্যাত শকুন্তলা ফিরলেন। কখমুনির আশ্রম থেকে দুষ্মন্তের রাজসভা হয়ে চলতে চলতে উপনীত হলেন মহামুনি মারীচের আশ্রমে। শকুন্তলা জীবনের তৃতীয় অধ্যায়ে প্রবেশ করলেন। আশ্রম বালিকা রাজবধূ হতে গিয়ে হয়ে উঠলেন তপস্বিনী শকুন্তলা। জীবনের কণ্টকময় পথে তাঁর পদচারণা আরম্ভ হল। বাল্য ও কৈশোরের অনভিজ্ঞা বালিকা এখন সংসার অভিজ্ঞা রমণী। মহামুনি মারীচের দিব্য আশ্রমে মদনের মাদকতা গ্লানিকে দুঃখ তাপে দগ্ধ করে কল্যাণী তাপসীর বেশে সার্থক প্রেমের প্রতীক্ষা তাঁর আরম্ভ হল। এই আশ্রমে তিনি জন্ম দিলেন দুষ্মন্ত পুত্র ভরতের। শকুন্তলা হলেন ভরত-জননী।

শকুন্তলা নাটকে প্রথম অঙ্কে প্রেয়সী শকুন্তলার সঙ্গে দুষ্মন্তের ব্যর্থ প্রণয় এবং শেষ অঙ্কে ভরত-জননীর সঙ্গে দুষ্মন্তের সার্থক মিলন কবি অঙ্কিত করেছেন। জননী রূপ নিয়েই শকুন্তলা সম্পূর্ণ হয়ে উঠেছেন। দেবতাদের যুদ্ধে সহায়তা করে রাজধানীতে প্রত্যাবর্তনের পথে মহামুনি মারীচের আশ্রমে এই পরিপূর্ণা শকুন্তলার সঙ্গেই দুষ্মন্তের নব-পরিচয় হল। এই মিলন কামনাপুরিত দৈহিক মিলন নয়, ভরত-জননী শকুন্তলার সঙ্গে দুষ্মন্তের এই মিলন ভাব-সম্মিলন। রতির আরতিতে যথার্থ প্রেমের উদ্ঘাটন। দুষ্মন্ত শকুন্তলার বাইরের মিলনকে কবি দুঃখে কণ্টকিত পথ দিয়ে নিয়ে গিয়ে অন্তরের মিলনে সার্থক করে তুলেছেন। এইভাবেই প্রথম প্রণয়ের পূর্ব মেঘকে কবি কালিদাস মঙ্গলের আলোকে দীপ্ত অলকাপুরীর পথে চালিত করে উত্তর মেঘে পরিণতি দান করেছেন। ‘তরুণ বৎসরের ফুল ও পরিণত বৎসরের ফল, মর্ত্য এবং স্বর্গী একাধারে আশ্রয় গ্রহণ করেছে শকুন্তলা নাটকে। আর শকুন্তলা হয়ে উঠেছে মহাকবির এই মহাভাবের যথার্থ অবলম্বন-বিভাব।

শকুন্তলার পতিগৃহে যাত্রা প্রশ্ন উত্তর Pdf

অভিজ্ঞান শকুন্তলা নাটক pdf

বাংলা ভাষায় বাংলা সাহিত্য পরিচয় ক্লাস ৮ম (আট)

বাংলা ভাষায় বাংলা সাহিত্য পরিচয় ক্লাস ৮ম (আট)

শকুন্তলার পতিগৃহে যাত্রা প্রশ্ন উত্তর

শকুন্তলার লেখক কে?
উত্তর : মহাকবি কালিদাস শকুন্তলার পতিগৃহে যাত্রার মধ্য দিয়ে নায়িকা শকুন্তলার বিদায়ের ক্ষণটি শিল্পশৈলীতে এঁকেছেন।


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version