Site icon prosnouttor

বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার প্রশ্ন উত্তর

জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর

জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

বাড়ির কাছে আরশিনগর নামকরণের সার্থকতা

বাউল সাংসারিক মানুষ নয়। আখড়া বানিয়ে সংসার-বিবিশ্ব হয়ে সাধনসঙ্গী এবং সঙ্গিনী নিয়ে বাউল ঈশ্বর ভজনা করে। এই ঈশ্বর নিরাকার ঈশ্বর। দেহতত্ত্বের গান বেঁধে মরমিয়া সাধক বাউল দেহাতীতে যাত্রা করে। তার সাধনপথ রহস্যাবৃত। বহু সাধনায় বাউল ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হয়, কেউ কেউ আবার মিলিত হতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়। বাড়ির পাশেই ‘আরশিনগর’। আসলে এটা কোনো গ্রাম নয়, কবির ‘হৃদয়মন্দির’। ‘সরাসরি’ তাকে পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে সাধনায় নিশ্চয়ই কোনো ত্রুটি আছে। তাই নিজের সাধনা ঠিক হচ্ছে না ভুল-তা দেখার জন্য সামনে ‘আরশি’ অর্থাৎ আয়না ধরতে হবে, তাহলে আর ভুল হবে না। সেখানে এক ‘পড়শী’ থাকে। আসলে এই পড়শী কবির ‘ঈশ্বর’ তথা তাঁর ‘মনের মানুষ’। এই ঈশ্বর চারিদিকে জলবেষ্টিত স্থানে থাকেন, সেখানে যাবার সাঁকো নেই, নৌকোও নেই। ঈশ্বরকে পাওয়া সহজ নয়, অনেক কষ্টের পথ পেরোলে তাঁকে পাওয়া যায়। এই পড়শির হাত-পা-কাঁধ-মাথা নেই, অর্থাৎ কবির ঈশ্বর নিরাকার। এই পড়শি কবিকে একবার ছুঁলেই কবি ‘যমযন্ত্রণা’ ভুলতে পারবেন। অর্থাৎ কবি তাঁর হূৎ-কমলে মনের মানুষকে বসাতে পারছেন না, পারলে “মনবেড়িখান দিতাম তাহার পায়।” তাই বিচার শেষে বলা যায়, বাউলের সাধনধারা অনুসরণে কবিতাটির রূপকাশ্রয়ী নামকরণ সার্থক এবং সংগত।

বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার MCQ (বহু বিকল্প ভিত্তিক) প্রশ্ন উত্তর

লালন ও পড়শির মাঝে কতখানি ফাঁক ?

(A) কোটি মাইল

(B) লক্ষ যোজন

(C) লক্ষ মিটার

(D) হাজার যোজন

উত্তর: (B) লক্ষ যোজন

‘ পড়শী ’ কোথায় বাস করে ?

(A) রূপনগরে

(B) মায়াপুরীতে

(C) যক্ষপুরীতে

(D) আরশিনগরে

উত্তর: (D) আরশিনগরে

‘ পড়শী ’ ছুঁলে কী হবে ?

(A) যম – যাতনা দূরে যাবে

(B) ধন্য হবে

(C) আরোগ্য লাভ করবে

(D) জ্ঞানচক্ষু খুলবে

উত্তর: (A) যম – যাতনা দূরে যাবে

পড়শি কোথায় , কীভাবে বাস করে ?

(A) সে জলে থাকে

(B) সে মহাকাশে থাকে

(C) সে সমুদ্রপোকূলে থাকে

(D) সে শূন্যেও থাকে আবার জলেও থাকে

উত্তর: (D) সে শূন্যেও থাকে আবার জলেও থাকে

পড়শি দেখতে কেমন ?

(A) তার হাত , পা , কাঁধ , মাথা নাই

(B) তার চোখ নাই

(C) তার পা নাই

(D) তার চুল নাই

উত্তর: (A) তার হাত , পা , কাঁধ , মাথা নাই

“ গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি । ” এখানে ‘ বেড়িয়ে ’ শব্দের অর্থ হলো—

(A) পার হয়ে

(B) ঘুরে ঘুরে

(C) বেষ্টন করে

(D) মধ্যে

উত্তর: (C) বেষ্টন করে

“ আমি একদিনও না দেখিলাম তারে ; ” — কাকে ?

(A) মনের মানুষকে

(B) পড়শিকে

(C) পড়শির আরশীনগরকে

(D) আরশীনগরের পড়শিকে

উত্তর: (D) আরশীনগরের পড়শিকে

“ ও তার হস্ত – পদ স্কন্ধ – মাথা নাই রে ! ” বলতে বোঝায়

(A) ঈশ্বর নিরাকার

(B) মহাশূন্য

(C) নিরাকার মানুষ

(D) কোনোটাই নয় ।

উত্তর: (A) ঈশ্বর নিরাকার

“ সে আর লালন একখানে রয় ” – সে কে ?

(A) কবির বন্ধু

(B) কেউ নন

(C) ভগবান

(D) মনের মানুষ

উত্তর: (D) মনের মানুষ

“ আমার বাড়ির কাছে আরশীনগর ” , ‘ আরশীনগর ’ শব্দের ভাব – অর্থ হলো—

(A) দেবভূমি

(B) শহর

(C) ছবির মতো নগর

(D) পরিষ্কার নগর

উত্তর: (A) দেবভূমি

বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার ছোট প্রশ্ন উত্তর

‘যম যাতনা’- বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ- মরমী সাধক কবি লালন ফকির ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতায় পার্থিব দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা ও অসহায়তাকে যম-যাতনা বলেছেন।

“ও তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে”-‘কিনারা’ নাই কেন?

উত্তরঃ- গভীর জীবন-জিজ্ঞাসা থেকে লালন ফকির বেশ কিছু প্রতিকী শব্দ ব্যবহার করেছেন । ‘কিনারা’- অর্থে মনের মানুষের সঙ্গে তার দূরত্ব বোঝাতে ‘কিনারা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন।

‘আরশিনগর’- বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ- বাউল সাধক লালন ফকির চিরকাল মনের মানুষের তথা ঈশ্বরের সন্ধান করে চলেছেন । যে মনের মানুষ অবস্থান করে আরশিনগরে ।অর্থাৎ ঈশ্বরের বাসস্থানকে আরশিনগর বলা হয়।

‘পড়শী’- শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ- ‘পড়শী’- শব্দের অর্থ হলো প্রতিবেশী। অবশ্য লালন ফকির ‘পড়শী’ বলতে তার মনের মানুষ বা সাঁইকে বুঝিয়েছেন।

“আমি একদিনও না দেখিলাম তারে”- বক্তা একদিনও দেখতে পাননি কেন মনের মানুষকে ?

উত্তরঃ- ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতায় বক্তা লালন ফকির বলেছেন- তার মনের মধ্যে বিষয়বাসনার প্রতি এখনো আকর্ষণ রয়েছে তাই তিনি মনের মানুষকে একদিনও দেখেননি।

“গ্রাম বেরিয়ে অগাধ পানি”- বক্তা কোন পানির কথা বলেছেন?

উত্তরঃ- “বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতায়”- বক্তা লালন ফকির ‘পানি’ বলতে সাধারণ জলকে উল্লেখ করেননি। পড়শীর সঙ্গে মিলনের জন্য যে সকল বাধা রয়েছে সেগুলিকে অতিক্রম করা দুষ্কর ।সেই বাঁধাগুলোকে তিনি পানি বলে উল্লেখ করেছেন।

“যম যাতনা সকল যেতো দূরে”- কিভাবে তা সম্ভব ?

উত্তরঃ- “বাড়ির কাছে আরশিনগর”- কবিতায় লালন ফকির জানিয়েছেন পড়শির সঙ্গে যদি সাধকের মিলন ঘটে, তাহলে তার সমস্ত পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর হয়ে যেত।

তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে কার সঙ্গে কার এরূপ লক্ষ যোজন দূরত্ব রয়েছে ?

উত্তরঃ-“বাড়ির কাছে আরশিনগর”- কবিতায় লালন ফকির জানিয়েছেন পড়শীর সঙ্গে মনের মানুষের দূরত্ব লক্ষ যোজন রয়েছে।

পড়শীর হস্ত-পদ-স্কন্দ-মাথা নাই কেন?

উত্তরঃ-পড়শী তথা ঈশ্বর তিনি নিরাকার, সর্বত্র বিরাজমান। তাই তার নির্দিষ্ট কোনো হাত,পা,স্কন্দ,মাথা নেই বলে লালন ফকির উল্লেখ করেছেন।

“ও সে ক্ষনের থাকে শূন্যের উপর”- ‘শূন্যের’ উপর বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

উত্তরঃ- লালন ফকির রচিত “বাড়ির কাছে আরশিনগর” কবিতায় শূন্যের উপর বলতে অসীম অনুভূতিকে বোঝানো হয়েছে।

বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

“ যম – যাতনা যেত দূরে ” – যম যাতনা কী ? কীভাবে দূর হবে ?

উত্তরঃ- বাড়ির কাছে আরশীনগর ‘ গানটি লালন ফকিরের ‘ লালন গীতিকা ‘ সংকলনের অন্তর্গত ।

মরমিয়া সাধক লালনের কাছে ‘ পড়শী ’ হলেন মানুষের অন্তরাত্মা বা মনের মানুষ । এই মনের মানুষের সন্ধান না পেলে ‘ যম যাতনা ‘ অর্থাৎ জাগতিক মৃত্যুভয় থেকে রেহাই পাবে না মানুষ । কবি মনে করেন , এই পড়শি হলেন মানুষের মুক্তির অগ্রদূত । তিনি মনের ‘ আরশীনগর ’ – এ থাকেন । তিনি প্রতিটি মানুষের পড়শি । তবে সাংসারিক মোহ – মায়া আর পার্থিব কামনা – বাসনার জালে মানুষ এমনভাবে ফেঁসে যায় যে মনের মানুষকে খুঁজেই পায় না । এজন্যই মানুষের জীবনে এতদুঃখ এত যন্ত্রণা । লালন চান , পার্থিব বাসনারূপ অগাধ পানি ’ পেরিয়ে পড়শিকে ছুঁতে । কারণ তাহলেই যম – যাতনা দূর হবে । পার্থিব যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হয়ে আত্মশুদ্ধিতে মনোনিবেশ করতে পারবে । অবশ্য সাধনা ছাড়া এটা সম্ভবও নয় । তবে মনের মানুষকে খুঁজে চলার এই চেষ্টা চক্রাকারে চলতেই থাকে ।

“ বলবো কী সেই পড়শীর কথা ” – পড়শি কে ? পড়শির স্বরূপ ব্যাখ্যা করো ।

উত্তরঃ- বাড়ির কাছে আরশীনগর ‘ কবিতার রচয়িতা স্বয়ং লালন ফকির উক্তিটির বক্তা । এখানে পড়শি বলতে অলৌকিক বা পার্থিব কোনো সত্তাকে বোঝানো হয়নি । পড়শি হলেন প্রত্যেকের মনে অবস্থানকারী আর এক মানুষ বা মনের মানুষ । তাঁকে উপলব্ধি করতে হয় হৃদয় দিয়ে ।

স্বরূপ : লালন বলেছেন , এই পড়শির কোনো আকার নেই । তাঁর হাত – পা নেই , না আছে কাধ – মাথা । তিনি নিরাকার । কখনো সাধনার উচ্চস্তরে তিনি বিরাজমান , কখনো বস্তুকে আশ্রয় করে তার প্রকাশ ঘটে । লালন তাঁর জীবনে কখনো এই মনের মানুষের দেখা পাননি । তাই বলেছেন , “ কেমনে সে গাঁয় যাই রে । ” পড়শি অন্তরে অবস্থান করেন কিন্তু লালন তার নাগাল পান না । লালনের মনে হয়েছে বিষয়ভাবনার জন্যই পড়শির সঙ্গে তাঁর “ লক্ষ যোজন ফাক ” ঘুচল না ।

“ আমি একদিন না দেখিলাম তারে ” – কে , কাকে দেখেননি ? আক্ষেপের কারণ কী ?

উত্তরঃ- বাংলার মরমি সাধক লালন ফকির ‘ বাড়ির কাছে আরশীনগর ‘ কবিতায় উদ্ধৃত মন্তব্য করেছেন । এখানে বাউলকবি তার মনের মানুষকে না দেখার কথা বলেছেন । লালন জানেন , ঈশ্বরের অবস্থান মানুষের মনের নিবিড় জায়গায় । তিনি বাস করেন হৃদয়ের গহন অভ্যন্তরে লালন কোনোদিন তাঁর দেখা পাননি । এজন্য লালন নিজের অজ্ঞতাকেই দায়ী করেন । মানুষের লোভ – লালসা আর বিষয়ভাবনাই তাকে পরমপুরুষের সঙ্গে মিলিত হতে দেয় না । তাই লালন ইচ্ছে করলেই সাধনার পড়শিকে কাছে পান না । তার প্রবল ‘ বাঞ্ছা ‘ পড়শিকে দেখার । এর কারণ পড়শির দর্শন পেলে কবির ‘ যম – যাতনা ’ দূর হয়ে যেত । সংসারের প্রতি মোহ দূর হলে লালন নিশ্চিন্তে পড়শির সঙ্গে মিলিত হতে পারতেন । অনেক চেষ্টা করেও পার্থিব মায়া – বাসনা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেন না বলেই লালনের আক্ষেপ । এটাই পড়শির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে ।

বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

‘বাড়ির কাছে অৱশিনগৱ’ বাউল গানটৱ উৎস নির্ণয় করে মর্মার্থ বিশ্লেষণ করাে।

উত্তর : উৎস : সাধক বাউল লালন ফকিরের বাড়ির কাছে আরশিনগর বাউল গানটি লালনশিষ্য ‘ভােলাই’-এর গানের খাতা (প্রথম পর্ব থেকে সংকলিত।

মর্মার্থ : বাউল সাধনার প্রস্তুতিস্তরে লালন তখন ভাব তন্ময়। তাঁর আরাধ্য ‘মনের মানুষ’-এর খোঁজে তিনি তখনব্যাকুল। তাঁকে একদিনও দেখতে না পাওয়ার খেদ রয়েছে তাঁর মনে। অথচ বাড়ির কাছে আরশিনগরে তাঁর বাস। সেই সূত্রেলালনের মনের মানুষ তাঁর নিকটতম প্রতিবেশী। প্রকৃতপক্ষে বাউল সাধক লালনের বােধবুদ্ধির মধ্যে তাঁর মনের মানুষ ‘চিৎ বা ‘আত্মা রূপে অবস্থান করছেন। এই উপলব্ধি সত্ত্বেও তাঁর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ মনের মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের পথে বিশাল বাধা। কূলকিনারাহীন অথই জলরাশি লালনের মনের মানুষের অধিষ্ঠিত স্থানটিকে ঘিরে আছে। এই সীমাহীন জলরাশি বাধার প্রতীক। নৌকা হল বাধা অতিক্রমের উপকরণ।সাধনার প্রস্তুতি ও ঐকান্তিকতার অভাব আছে। সাধকেরমনােবাচ্ছা তাই পূর্ণ হচ্ছে না। তার পড়শির পরিচয়ের কথা লালন কী আর বলবেন। তাঁর হাত-পা-মাথা-ঘাড় কিছু নেই। তিনি দেহহীন নিরাকার। সাধকের পড়শি ক্ষণেকের জন্য শূন্যে থাকেন, আবার ক্ষণেকের জন্য থাকেন জলে ভাসমান। মনের মানুষ ও ভক্তবাউল সাধকের মধ্যেমান-অভিমানের লুকোচুরির• ফলে এই বিভ্রান্তি। লালনের আক্ষেপ হল, পড়শি যদি তাঁকে স্পর্শ করত, তাহলে যমযন্ত্রণার কষ্ট তাঁকে পেতে হত না। অথচ পড়শি আর লালন একত্রে থাকেন। কিন্তু তাঁদের উভয়ের মধ্যে লক্ষ যােজন ব্যবধানের কারণ হল, সাধকের ভাবাধিক্যের ফলে। দেহ আর চেতনার মধ্যে গড়ে উঠেছে এই বিশাল ফারাক।‘বাড়ির কাছে আরশিনগর বাউল গানটির নামকরণের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ কল্লো।

ভূমিকা : বাউল সাধক লালন ফকিরের গানের পদগুলি সংখ্যার দ্বারা চিহ্নিত। তিনি কোনাে পদেরই নাম দেননি। পাঠ্য হিসেবে গৃহীত ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ পদটির নামকরণ করেছেন পাঠ্যপুস্তকের সংকলকগণ। তাঁরা গানের প্রথম স্তবকের দ্বিতীয় চরণ বা পঙক্তিটিকে নামকরণ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। গানের ভাববস্তুর সঙ্গে নামকরণের সংগতি রক্ষা যথাযথ ও সার্থক হয়েছে কি না, তা বিচার্য বিষয়।

বিষয়-সংক্ষেপ : ভাবতন্ময় সাধক লালন তখন ‘মনের মানুষ’-এর খোঁজে বড়ােই ব্যাকুল। কিন্তু তাঁর মনের মানুষকে একদিনের জন্যও দেখতে না পাওয়ার খেদ ছিল তাঁর অভিমানী সাধকমনে। অথচ তাঁর মনের মানুষ তাঁর বাড়ির কাছে। আরশিনগরের বাসিন্দা। সেই অর্থে খুব কাছের পড়শি। কিন্তু তাঁর দর্শন লাভের পথে বাধা হল সীমাহীন অথই জলরাশি। তা পার হওয়ার জন্য নৌকা নেই। তাঁর আরাধ্য মনের মানুষ নিরাকার। সাধক আর তাঁর আরাধ্যের মধ্যে মান-অভিমানের লুকোচুরি চলছে বলে সাধক লালন তাঁর আরাধ্যকে কখনও শূন্যে, কখন বা জলে ভাসমান দেখছেন। তাঁর আরাধ্য পড়শি যদি তাঁকে একবার স্পর্শ করতেন, তাহলে যমযন্ত্রণা থেকে তিনি অব্যাহতি পেতেন। সাধক ও আরাধ্য উভয়ে একত্রে থাকলেও তাঁদের মধ্যে লক্ষ যােজন ফারাক। নামকরণের যৌক্তিকতা : কাজেই দেখা গেল, লালনের বাড়ির কাছে আরশিনগরকে ঘিরে গানের ভাববস্তু আবর্তিতআরশিনগরের পড়শি হলেন ভাববস্তুর বীজ। কেন্দ্রীয় বিন্দু। ভাববস্তুর সঙ্গে নামকরণের সংগতি এখানেই। কাজেই কবিতার। নামকরণ শুধু যুক্তিযুক্ত নয়, যথাযথ ও সার্থক।

“তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে”—কার সঙ্গে এই ব্যবধান? একত্র থেকেও এই ব্যবধানের তাৎপর্য কী?

উত্তর:- লালন ফকির রচিত ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতায় যে ব্যবধানের কথা বলা হয়েছে তা কবির সঙ্গে আরশিনগরে থাকা কবির ‘পড়শি’র মধ্যেকার ব্যবধান। কবির এক ‘পড়শি’ আছেন। যিনি আরশিনগরে বাস করেন, কিন্তু কবির সঙ্গে তাঁর কোনোদিন দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। কবির প্রচণ্ড মনোবাসনা থাকলেও সেই পড়শির চারধার জলবেষ্টিত হওয়ায় এবং সেই স্থানে যাওয়ার জন্য কোনো সাঁকো বা নৌকা না থাকায় সেখানে পৌঁছানো কবির পক্ষে সম্ভব হয়নি। সেই পড়শিও অদ্ভুত। তার হাত-পা-কাঁধ-মাথা নেই, কখনও শূন্যে, আবার কখনও জলে ভাসমান থাকেন। সেই পড়শি অত্যন্ত গুণবান। তিনি কবিকে একবার ছুঁলে কবির যমযন্ত্রণা দূর হয়ে যেত। এই সরলার্থের পেছনে রয়েছে মরমিয়া সাধক বাউলের ঈশ্বরপ্রাপ্তির গূঢ় সাধনতত্ত্ব। ভক্ত-কবির পড়শি হলেন ভগবান। আরশিনগর কোনো গ্রাম নয়, ভক্ত-কবির হৃদয়কমল, পড়শি হলেন সেই ‘কমলের’, ‘মনের মানুষ’। তিনি ক্ষিতি, অপ, মরুৎ, তেজ, ব্যোম–বিশ্বচরাচরে তাঁর অবস্থান।এই ভগবান নিরাকার, তাঁর হাত-পা-কাঁধ-মাথা কিছুই নেই, তিনি “অচক্ষু সর্ব্বত্র চান/অকর্ণ শুনিতে পান/অপদ সর্ব্বত্র গতাগতি।” এই পৃথিবীতে খুব কষ্ট করেই বেঁচে থাকতে হয়। এই ভবযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে যন্ত্রণামুক্ত হতে চাইলে সেই পড়শি তথা পরমাত্মার স্পর্শ পেতে হবে। কিন্তু তা পাওয়া

সহজ নয়, রিপু দমনের মাধ্যমে অনেক কৃচ্ছ্রসাধনা ও ভগবৎ অনুশীলন করতে হবে, তবেই জীবাত্মা-পরমাত্মার মিলন ঘটবে। কিন্তু কবির ক্ষেত্রে এরকম কিছুই ঘটছে না। তাই কবি

বলেছেন : “আবার সে আর লালন একখানে রয় তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে।”

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার প্রশ্ন উত্তর, বাড়ির কাছে আরশিনগর প্রশ্ন উত্তর Pdf

সরল উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সহায়িকা – শ্রেণী – একাদশ





সরল উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সহায়িকা – শ্রেণী – একাদশ



বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার প্রশ্ন উত্তর

“ও তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে”-‘কিনারা’ নাই কেন?
উত্তরঃ- গভীর জীবন-জিজ্ঞাসা থেকে লালন ফকির বেশ কিছু প্রতিকী শব্দ ব্যবহার করেছেন । ‘কিনারা’- অর্থে মনের মানুষের সঙ্গে তার দূরত্ব বোঝাতে ‘কিনারা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন।


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version