Site icon prosnouttor

গঙ্গা নদীর উৎপত্তি কোথায়, গঙ্গা নদীর গতিপথ বর্ণনা করো

গঙ্গা নদীর উৎপত্তি কোথায়, গঙ্গা নদীর গতিপথ বর্ণনা করো

গঙ্গা নদীর উৎপত্তি কোথায়, গঙ্গা নদীর গতিপথ বর্ণনা করো

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

গঙ্গা নদীর উৎপত্তি কোথায়, গঙ্গা নদীর উৎস কোথায়, গঙ্গা নদীর উৎস কি

হিমালয় পর্বতমালার গঙ্গোত্রী হিমবাহের টার্মিনাস গোমুখ থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি। এই হিমবাহের বরফ গলে ভাগীরথী নদীর স্বচ্ছ পানিতে পরিণত হয়। ভাগীরথী নদী হিমালয় থেকে প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথে এটি অলকানন্দা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে, এবং আনুষ্ঠানিকভাবে গঙ্গা নদী গঠন করেছে।

পঞ্চ প্রয়াগ

দেশের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের গাড়ওয়াল অংশে বড় হিমবাহ পাওয়া যায়। উত্তরাখণ্ডেই বদ্রীনাথের সান্তো পথ নামক স্থান থেকে দুটি নদী বের হয়েছে। একদিক থেকে ধৌলিগঙ্গা আর অন্যদিকে বিষ্ণুগঙ্গা। এই দুটি নদীর মিলনস্থলকে বলা হয় বিষ্ণুপ্রয়াগ।

প্রয়াগ মানে যেখানে দুটি নদীর মিলন হয়। এ স্থানে উভয় নদীর গভীরতা সমান হয়ে যায়। এই কারণে বিষ্ণুপ্রয়াগের পরে এই নদী অলকানন্দা নামে পরিচিত। আর অলকানন্দা এগিয়ে গেলে নন্দকিনী নদী তার সাথে মিলিত হয়, সেই জায়গার নাম নন্দপ্রয়াগ।

এর পরে নদীটি আরও এগিয়ে যায়, তারপরে পিন্ডার নদী তার সাথে মিলিত হয়। সেই জায়গার নাম কর্ণপ্রয়াগ।

এখন কেদারনাথ থেকে একটি নদী বের হয়েছে, যার নাম মন্দাকিনী নদী। এখান থেকে মন্দাকিনী নদী এসে মিলিত হয়েছে অলকানন্দায়। আর যেখানে মিলিত হয়, সেই স্থানের নাম রুদ্রপ্রয়াগ।

এখন ভাগীরথী নদীর উৎপত্তি হয়েছে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার গঙ্গোত্রী (স্থান গোমুখ) থেকে। উত্তরাখণ্ডের মানুষ একে প্রধানত গঙ্গা বলে মনে করে। এখন ভাগীরথী নদী এগিয়ে গিয়ে অলকানন্দায় মিলিত হয়েছে। যেখানে মিলিত হয় তার নাম দেবপ্রয়াগ।

এখানে উভয়ের গভীরতা সমান হয়ে যায়। এ কারণে এই নদীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় গঙ্গা। দেবপ্রয়াগের পরে এটি গঙ্গা নদী নামে প্রবাহিত হয়। এইভাবে উত্তরাখণ্ডের বহু নদী মিলে গঙ্গা নদী তৈরি হয়। গঙ্গা নদীর তীরে পাঁচটি প্রয়াগ অবস্থিত।

বিষ্ণুপ্রয়াগ, নন্দপ্রয়াগ, কর্ণপ্রয়াগ, রুদ্রপ্রয়াগ এবং দেবপ্রয়াগ এই পাঁচটি ক্রিয়াকে পঞ্চপ্রয়াগও বলা হয়। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, এই পঞ্চপ্রয়াগ দর্শন অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়।

গঙ্গা নদীর গতিপথ বর্ণনা করো

গঙ্গা হলো ভারতের প্রধান ও পবিত্র নদী। উপনদী সহ গাঙ্গেয় অববাহিকার আয়তন প্রায় 8.6 লক্ষ বর্গ কিমি, যা ভারতের মোট আয়তনের প্রায় 26% স্থান অধিকার করে আছে।

উৎপত্তি

গঙ্গা নদী উত্তরাখণ্ড রাজ্যের কুমায়ুন হিমালয় গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা (7010 মিটার) উ থেকে লাভ করেছে।

দৈর্ঘ্য

গঙ্গা ভারতের দীর্ঘতম নদী এবং মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 2525 কিমি।

প্রবাহ পথ

উত্তর: গঙ্গা নদী হলো ভারতের একটি আদর্শ নদী। কারণ এই নদীর উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন-এই তিনটি গতিই সুস্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়। গঙ্গা নদীর প্রবাহপথ আলোচনা করতে হলে এই তিনটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করতে হবে।

উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহ

উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে উৎপত্তি লাভ করে গঙ্গা নদী ভাগীরথী নাম নিয়ে গভীর গিরিখাত সৃষ্টি করে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে এবং দেবপ্রয়াগের কাছে অলকানন্দার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। দেবপ্রয়াগের পর এই অলকানন্দা ও ভাগীরথী নদীর মিলিত প্রবাহ গঙ্গা নামে পরিচিত হয়েছে। এরপর গঙ্গা নদী আরো দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে হরিদ্বারের এর কাছে সমভূমিতে পড়েছে।এই গোমুখ গুহা থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গা নদীর উচ্চ গতি বা পার্বত্য প্রবাহ।

গঙ্গোত্রী থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত প্রায় 320 কিলোমিটার গঙ্গার উচ্চ বা পার্বত্য গতি। কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে প্রথমে পশ্চিমে এবং পরে দক্ষিণের সংকীর্ণ গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দেবপ্রয়াগে অলকানন্দার সঙ্গে মিলিত হয়েছে এবং এই দুই মিলিত স্রোত গঙ্গা নামে পরিচিত।

মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ

হরিদ্বার থেকে বিহারের রাজমহল পর্যন্ত গঙ্গা নদীর মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ। হরিদ্বার থেকে প্রথমে দক্ষিণ-পূর্বে এবং পরে পূর্বদিকে অসংখ্য বাঁক সৃষ্টি করে এই নদী উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গঙ্গা নদীর এই মধ্য গতিতে ডান ও বামদিক থেকে অসংখ্য উপনদী এসে মিলিত হয়েছে।

যমুনা ও শোন হল গঙ্গার ডান তীরের এবং গোমতী, ঘর্ঘরা, কোশী, গণ্ডক, বুড়িগন্ডক ইত্যাদি হল গঙ্গার বামতীরের উল্লেখযোগ্য উপনদী। এদের মধ্যে যমুনা হল গঙ্গার প্রধান উপনদী, যা কুমায়ুন হিমালয়ের যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপত্তি লাভ করে এলাহাবাদের কাছে গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। যমুনার সঙ্গে আবার চম্বল, বেতোয়া, কেন ইত্যাদি উপনদী এসে মিলিত হয়েছে।

গঙ্গা, দেবপ্রয়াগ থেকে প্রথমে পশ্চিমে এবং পরে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে নাগাটিব্বা ও শিবালিক পর্বতশ্রেণী অতিক্রম করে হরিদ্বারের কাছে সমভূমিতে অবতরণ করেছে এবং প্রথমে দক্ষিণে এবং পরে দক্ষিণ-পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত গঙ্গার মধ্যগতিতে বহু উপনদী এসে মিশেছে। তাদের মধ্যে রামগঙ্গা, গোমতী, ঘর্ঘরা, গণ্ডক, বুড়ীগণ্ডক, কোশী প্রভৃতি নদীগুলো হল গঙ্গার বাং তীরস্থ উপনদীগুলির মধ্যে যমুনা ও শোন উল্লেখযোগ্য।

নিম্নগতি বা ব-দ্বীপ প্রবাহ

উত্তর: রাজমহল পাহাড় থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনা পর্যন্ত গঙ্গার নিম্নগতি। বিহারের রাজমহল থেকে এই নদী দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের কাছে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে এবং একটি শাখা পদ্মা নাম নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ও অপর শাখাটি ভাগীরথী-হুগলি নাম নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।

গঙ্গা নদীর এই নিম্নগতিতে অজয়, দামোদর, রূপনারায়ন ইত্যাদি উপনদী এসে মিলিত হয়েছে। এছাড়া এই গতিতে ভাগীরথী-হুগলির নদীর মাথাভাঙ্গা, জলঙ্গি ইত্যাদি শাখানদী সৃষ্টি হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার গিরিয়ার কাছে গঙ্গা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ভাগীরথী ও পদ্মা নামে দক্ষিণ ও দক্ষিণ -পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে। এই অংশ থেকেই গঙ্গার নিম্নগতি ও ব-দ্বীপ প্রবাহের শুরু হয়েছে। ভাগীরথী ও পদ্মার মধ্যবর্তী ব-আকৃতির দ্বীপ পৃথিবীর সব থেকে বড় ব-দ্বীপ। যদিও এর অধিকাংশ অংশই স্থান বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত। মুর্শিদাবাদ শহর থেকে হুগলী শহর পর্যন্ত গঙ্গার নাম ভাগীরথী এবং হুগলী শহর থেকে মোহনা পর্যন্ত গঙ্গার নাম হুগলী নদী। ভাগীরথী ব-দ্বীপের দক্ষিণে হুগলী নাম প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।

গঙ্গা নদীর তীরবর্তী শহর

গঙ্গা নদীর তীরে ভারতের অনেকগুলি ছোট বড়ো শহর গড়ে উঠেছে।যেমন- হরিদ্বার, বারানসী, এলাহাবাদ, পাটনা, কানপুর, হাওড়া, কলকাতা (হুগলি নদী) ইত্যাদি।

গঙ্গা নদীর তীরবর্তী শহর গঙ্গা নদীর তীরে ভারতের অনেকগুলি ছোট বড়ো শহর গড়ে উঠেছে। উচ্চ, মধ্য ও নিম্নগতিতে সমগ্র অঞ্চল মিলিয়ে গঙ্গার মোট দৈর্ঘ্য 2510 কিলোমিটার এবং এর অববাহিকার আয়তন 951600 বর্গ কিলোমিটার। হরিদ্বার থেকে মোহনা পর্যন্ত বিশাল অববাহিকাংশ গঙ্গার পলিসঞ্চয়ের ফলে অতন্ত্য উর্বর এবং শস্য উৎপাদনে উল্লেখ্যযোগ্য। তাই গঙ্গার উভয় তীরে প্রাচীনকাল থেকে বহু জনপদ গড়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহর গুলি হল -হরিদ্বার, কানপুর, এলাহাবাদ, বারাণসী, পাটনা,মুঙ্গের, ভাগলপুর। যমুনা নদীর তীরের শহরগুলির মধ্যে দিল্লী, মথুরা ও আগ্রা উল্লেখযোগ্য শহর।

আরো পড়তে: জলপ্রপাত কাকে বলে, জলপ্রপাত কিভাবে সৃষ্টি হয়, ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত

ভারতের কোন রাজ্যে গঙ্গা নদীর নিম্ন গতি দেখা যায়

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় গঙ্গার দ্বিধাবিভক্ত হয়ে ভাগীরথী (পশ্চিমবঙ্গে) ও পদ্মা (বাংলাদেশে) নামে যথাক্রমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এখান থেকেই গঙ্গার নিম্নগতি ও বদ্বীপ প্রবাহের শুরু।

ভাগীরথী ও পদ্মার মধ্যবর্তী সুন্দরবন বদ্বীপ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ব-দ্বীপ। মুর্শিদাবাদ শহর থেকে হুগলি শহর পর্যন্ত গঙ্গার নাম ভাগীরথী এবং হুগলি শহর থেকে মোহনা পর্যন্ত গঙ্গার নাম হুগলি নদী।

গঙ্গার নিম্ন প্রবাহে পূর্ব ও পশ্চিম থেকে বহু নদী এসে মিলিত হয়েছে, যেমন – দ্বারকা, ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, রূপনারায়ণ, কংসাবতী, জলঙ্গী, মাথাভাঙ্গা প্রভৃতি।

গঙ্গা নদীর ছবি

গঙ্গা নদীর বৈশিষ্ট্য

গঙ্গা নদীর অপর নাম কি, গঙ্গার অপর নাম কি

গঙ্গা নদীর অপর নাম হলো জাহ্নবী, পদ্মা, ভাগীরথী, হুগলি, পুণ্যতোয়া।

গঙ্গা নদীকে ‘নিত্যবহ নদী’ বলা হয় কেন?

যেসব নদী হিমবাহ বা ঝর্ণার জলে পুষ্ট, সে সব নদিতে সারাবছর জল থাকে, এইসব নদীকে নিত্যবহ নদী বলে । আমরা জানি হিমালয়ের বরফ গলা পানি মূলত গঙ্গার পানির উৎসস্থল । আর এই নদীতে সারাবছর পানি বিদ্যমান তাই আমার বলেতে পারি গঙ্গা একটি নিত্যবহ নদী ।

গঙ্গা নদীর দৈর্ঘ্য কত

গঙ্গা নদীর দৈর্ঘ্য হল 2510 কিলোমিটার, এর মধ্যে 2071 কিলোমিটার ভারতের অন্তর্গত। নদীটি কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে উৎপন্ন হয়েছে এবং বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এটি ভারতের দীর্ঘতম নদীগুলির মধ্যে একটি অন্যতম নদী।

গঙ্গা নদীর মানচিত্র

দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা কাকে বলা হয়, দক্ষিণের গঙ্গা কাকে বলে

গোদাবরী নদী ‘দক্ষিণা গঙ্গা’ অর্থাৎ “দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা নদী” নামে পরিচিত। গোদাবরী নদী হল দক্ষিণ ভারতের বৃহত্তম নদী। গোদাবরী নদী উত্তর-পশ্চিম মহারাষ্ট্র রাজ্যে থেকে দাক্ষিণাত্যের (উপদ্বীপ ভারত) বিস্তৃত মালভূমি জুড়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে।

গঙ্গা নদীর নাম হুগলি নদী হয়েছে কেন

ভাগীরথী নামটি পৌরাণিক। কিংবদন্তি অনুযায়ী, সগর রাজার বংশধর তথা সগরবংশীয় রাজা দিলীপের পুত্র রাজা ভগীরথ মর্ত্যলোকে গঙ্গা নদীর পথপ্রদর্শক ছিলেন বলে গঙ্গার অপর নাম ভাগীরথী। হুগলি নামটি অপেক্ষাকৃত প্রাচীন । ইংরেজ আমলেই সর্বপ্রথম ভাগীরথীর দক্ষিণভাগের প্রবাহকে হুগলি নামে অভিহিত হয়।

ভাগীরথী-হুগলি গঙ্গার মূল প্রবাহপথ নয়। গঙ্গা নদীর মূল প্রবাহটি পদ্মা নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবাহিত। লোকবিশ্বাসে ভাগীরথী-হুগলিও গঙ্গার মূল ধারা এবং সেই অর্থে পবিত্র ও পূজ্য।

গঙ্গা নদীর মোহনা কোথায়, গঙ্গা নদীর মোহনার নাম কি

গঙ্গা নদীর মোহনা বঙ্গোপসাগর গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ।

গঙ্গা নদীর উৎস কোন হিমবাহ

উত্তরাখণ্ডের পশ্চিম হিমালয় পর্বতশ্রেণীর গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি হয়েছে। গঙ্গোত্রী হিমবাহ তিব্বতের সীমান্তবর্তী একটি অঞ্চলে ভারতের উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় অবস্থিত। এই হিমবাহটি হল গঙ্গার প্রাথমিক উৎস এবং হিমালয়ের বৃহত্তম হিমবাহগুলির মধ্যে একটি, যার আনুমানিক আয়তন 27 ঘনকিলোমিটারেরও বেশি।

গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান, গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান কি

এটি ১৯৮৫ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছিল। এটিই প্রথম নদী কর্মপরিকল্পনা যা ঘরোয়া পয়ঃনিষ্কাশনকে বাধা, ডাইভারশন এবং শোধনের মাধ্যমে জলের গুণমানের উন্নতির জন্য চালু করা হয়েছিল। নদীতে বিষাক্ত ও শিল্প রাসায়নিক বর্জ্যের প্রবেশ রোধ করা এই পরিকল্পনার লক্ষ্য।

১৯৮৬ সালে বারানসীর ঘাট থেকে শুরু হয়েছে ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’-এর বহু শত কোটি টাকার যাত্রা। জনতা ও সেচ্ছাসেবী বেসরকারী সমীক্ষক সংস্থার মতে এর নিট ফল শূন্য। ভারতের

সনাতন নগরী, প্রাচীনতম তীর্থ, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ক্ষেত্র, সেই বারাণসীতে গঙ্গাদূষণের মাত্রা ১-২ million mpn/ml।

সংকটমোচন ফাউনন্ডেশন নামক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষায় প্রকাশ

পুণ্যস্নান কি পাপস্নানে রূপান্তরিত? পাঁচ-দশ হাজার বছর আগে গঙ্গা সত্যই প্রাণদায়ী কলুষনাশিনী ছিল। এতদিনকার অজস্র পাপের ভারে জর্জরিত গঙ্গা আজ মৃতপ্রায়। তার চিকিৎসা প্রয়োজন। অথচ গঙ্গার পার বাঁধানো ও গঙ্গাপারের সৌন্দর্য্যায়নের অন্যান্য ব্যবস্থা যা গঙ্গা পরিকল্পনার নামে কলকাতায় বা বারাণসীতে নেওয়া হয়েছিল গত তিরিশ বছরে তা অত্যন্ত হাস্যকর। মুমূর্ষু দেহে অলঙ্কার পরিয়ে সেবা করার মতোই নিষ্ঠুর অপব্যয়।

দূষণ বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে

সম্প্রতি গঙ্গাকে বাণিজ্যিক যাতায়াতের জলপথে রূপান্তরিত করা ও বারাণসী থেকে হুগলি পর্যন্ত ১৬০০ কিমি পথে গঙ্গা ও তার উপনদীর উপর ১৬টি বাঁধ নির্মাণ করার কথা বলা হচ্ছে সরকারপক্ষ থেকে। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত নৌ চলাচলে নদীর দূষণ বাড়বে এবং ১৬টি বাঁধ নদীস্রোত রুদ্ধ করে ১৬টি বড় পুকুর তৈরি করবে। এই উদ্যোগ গঙ্গার স্বচ্ছতা ও পবিত্রতা পুনরুদ্ধারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী।

যা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত

গঙ্গার উচ্চপ্রবাহে রয়েছে অলকানন্দা নদীতন্ত্র। সম্প্রতি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী নির্মীয়মান ২৪টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ত্যাগ করতে হবে গঙ্গা ও তার দুই তীরের জীবজগৎ বাঁচাতে। ভারতের বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞরাই এটা চেয়েছেন। নেপালের নদীগুলি যেমন মহাকালী, কর্নালী, গণ্ডক, কোশী, গঙ্গানদীর মোট জলের ৪০ শতাংশ এবং শুখা মরশুমে গঙ্গার জলের ৭০ শতাংশ দেয়। এদের উপরে যত বাঁধ নির্মিত হয় গঙ্গার জলের বেগ ও পরিমাণ তত কমে। কিন্তু প্রধানত ভারত সরকারের পরিচালনায় ভারত-নেপাল যৌথ উদ্যোগে বাঁধগুলি করা হচ্ছে ও হবে।

মূর্তি বিসর্জন ইত্যাদির বিকল্প উপায়

নিত্যপূজার উপচার বাসি ফুল, ফল, পাতা, ছাই, ধূপকাঠির শেষাংশ নদীতে ফেলা বন্ধ করতে হবে, বদলে মাটিতে পুঁতে দেওয়া যেতে পারে। ঔপচারিক পূজার বদলে নামজপ, গায়ত্রী জপ, সূর্যপ্রণাম, আসন, মনঃসংযোগ, ধ্যান, প্রাণায়াম বা ব্যবহারিক কর্মের নিষ্কাম যোগে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। চতুর্বর্গপুরুষার্থ ও কর্মযোগের আদর্শ সকল যুগের উপযোগী।

দুর্গাপূজা ইত্যাদি সম্মিলিত পূজা এবং সমবেত যাগযজ্ঞের শেযে বর্জ্য উপচার এবং মূর্তি নদী বা পুকুরে না ফেলে জৈব ও অজৈব রাসায়নিক উপাদানগুলির প্রতিটির নিজ নিজ পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে শাস্ত্রীয় নিষেধ নেই, কেবল আচারে অনুমোদন দিতে হবে সকলকে, প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করতে হবে।

মিউনিসিপ্যালিটি ও পঞ্চায়েতগুলিকে নিশ্চিত করতে হবে যে পয়ঃপ্রণালীর জল নদীতে না যায়। মানুষ ও গৃহপালিত পশুর মৃতদেহ যেন নদীতে ফেলা না হয়। পশুর মৃতদেহ কবর দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।

জলপ্রবাহ বাড়ানো যায় কী ভাবে

মোট জলপ্রবাহ ও স্রোতের বেগ বাড়াতে নদীর বুকের বাঁধগুলি তুলে দিতে হবে। নদীতে বাঁধ দিলে নদীর অপমৃত্যু হয়। নদী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বর্তমানে ৩৪টি নদীবাঁধ সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। মোট জলপ্রবাহ বেশি থাকলে আগত বিষ দ্রুত লঘু হয়ে যায়, স্রোতের বেগ বেশি থাকলে বিষ দ্রুত দূরে অপসারিত হয়।

গঙ্গার উৎস থেকে প্রবাহ বরাবর সর্বত্র গঙ্গায় নোংরা জল ফেলা বন্ধ না করলে এবং গঙ্গার কোনও নদী-উপনদীতে নতুন করে বাঁধ দিয়ে গঙ্গার জলপ্রবাহ কমিয়ে দেওয়া বন্ধ না করলে, নদীতে মৃতদেহ ফেলা বন্ধ না করলে, শহরগুলিতে গঙ্গার দুইপারে কঠিন আবর্জনা জমানো বন্ধ না করলে, কলকারখানা ও শহরের পয়ঃপ্রণালীর শেষ-মুখ শোধনাগারে না গেলে এবং সারা দেশে বারো মাসে তের পার্বণের অজস্র (কয়েক কোটি) মূর্তি নিমজ্জন বন্ধ না করলে, গঙ্গায় প্রাতঃকৃত্য বন্ধ না করলে কিছুতেই কোনও এলাকায় গঙ্গাদূষণ কমানো যাবে না। ছোট ছোট এলাকাভিত্তিক চেষ্টা কোনও সুফল দেয়নি, দেবে না।

সুপ্রিম কোর্ট বলতে বাধ্য হয়েছেন, ২০০ বছরেও গঙ্গাশোধন হবে না। আমরা মঙ্গল গ্রহে যেতে সফল, কিন্তু গঙ্গাদূষণ নিয়ন্ত্রণে ? যা ৫০ কোটি ভারতীয়ের জীবনরেখা ? গঙ্গাদূষণ নিয়ন্ত্রণ আর কত দিন রাজনীতিক বা রাষ্ট্রনায়কদের মুখের বুলি হয়ে থাকবে ? বৃথাই হিন্দুরা বলে গঙ্গা আমাদের মা!

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | গঙ্গা নদী

Q1. গঙ্গা নদীর শাখা নদীর নাম কি, গঙ্গার প্রধান শাখা নদীর নাম কি

Ans – গঙ্গা নদীর দুটি ধারা বা শাখা একটি ফারাক্কা বাঁধ থেকে এসে ভাগীরথী ও হুগলী নদী নামে মূলত দক্ষিণে প্রায় 260 কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে, অপরটি উৎপত্তিস্থল হতে 2200 কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দে যমুনা নদীর সাথে মিলিত হয়ে মিলিত প্রবাহ পদ্মা নামে আরও পূর্ব দিকে চাঁদপুর জেলায় মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। সবশেষে পদ্মা-মেঘনার মিলিত প্রবাহ মেঘনা নাম ধারণ করে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়। পদ্মাকে মূলত গঙ্গার প্রধান শাখানদী বলা হয়।

Q2. গঙ্গার প্রধান উপনদীর নাম কি

Ans – গঙ্গার উপনদী গুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় যথা- বাম তীরের উপনদী ও ডান তীরের উপনদী। বাম তীরের উপনদী – রামগঙ্গা, গোমতী, কালি, গণ্ডক, কোশি ও ঘর্ঘরা। ডান তীরের উপনদী – যমুনা ও শোন।

Q3. গঙ্গা নদীর নাম হুগলি নদী হয়েছে কোথায়

Ans – নবদ্বীপ পর্যন্ত গঙ্গার নাম ভাগীরথী ও নবদ্বীপ থেকে গঙ্গাসাগর অবধি এই নদী হুগলি নামে প্রবাহিত।

Q10. গঙ্গা নদীর প্রবাহের কোন অংশে সর্বাধিক দূষণ দেখা যায়

Ans – গঙ্গা নদীর প্রবাহের কোন অংশে সর্বাধিক দূষণ দেখা যায় মধ্য অংশে উত্তরপ্রদেশের কানপুর।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version